
বাঙালির চিত্রকলার ইতিহাস (বাংলা শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতির ইতিহাস) দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর
HS Class 12 Bengali Bangalir Chitrokolar Itihas Question and Answer
বাঙালির চিত্রকলার ইতিহাস (বাংলা শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতির ইতিহাস) দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | HS Class 12 Bengali Bangalir Chitrokolar Itihas Question and Answer : বাঙালির চিত্রকলার ইতিহাস (বাংলা শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতির ইতিহাস) দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | HS Class 12 Bengali Bangalir Chitrokolar Itihas Question and Answer নিচে দেওয়া হলো। এই West Bengal WBCHSE HS Class 12th Bengali Bangalir Chitrokolar Itihas Question and Answer, Suggestion, Notes | দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – বাঙালির চিত্রকলার ইতিহাস (বাংলা শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতির ইতিহাস) থেকে রোচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর (Descriptive Question and Answer) গুলি আগামী West Bengal HS Class 12th Twelve XII Bengali 4th Semester Examination – পশ্চিমবঙ্গ দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা চতুর্থ সেমিস্টার পরীক্ষার জন্য খুব ইম্পর্টেন্ট। দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা পরীক্ষা তে এই সাজেশন বা কোশ্চেন বাঙালির চিত্রকলার ইতিহাস (বাংলা শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতির ইতিহাস) দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | HS Class 12 Bengali Bangalir Chitrokolar Itihas Question and Answer গুলো আসার সম্ভাবনা খুব বেশি।
তোমরা যারা বাঙালির চিত্রকলার ইতিহাস (বাংলা শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতির ইতিহাস) দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | HS Class 12 Bengali Bangalir Chitrokolar Itihas Question and Answer খুঁজে চলেছ, তারা এই প্রশ্ন ও উত্তর গুলো ভালো করে পড়ো এবং নীচে দেওয়া লিঙ্ক থেকে ডাউনলোড করে নাও।
| রাজ্য (State) | পশ্চিমবঙ্গ (West Bengal) |
| বোর্ড (Board) | WBCHSE, West Bengal |
| শ্রেণী (Class) | দ্বাদশ শ্রেণী (WB HS Class 12th) |
| বিষয় (Subject) | দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা (HS Class 12 Bengali) |
| বাংলা শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতির ইতিহাস (Bangla Shilpo Sahitya o Sanskriti) | বাঙালির চিত্রকলার ইতিহাস (Bangalir Chitrokolar Itihas) |
[দ্বাদশ শ্রেণীর সমস্ত বিষয়ের প্রশ্নউত্তর Click Here]
বাঙালির চিত্রকলার ইতিহাস (বাংলা শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতির ইতিহাস) দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | West Bengal WBCHSE HS Class 12th Bengali Bangalir Chitrokolar Itihas – Bangla Shilpo Sahitya o Sanskriti Question and Answer
সংক্ষিপ্ত | বাঙালির চিত্রকলার ইতিহাস (বাংলা শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতির ইতিহাস) দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | WB HS Class 12 Bengali Bangalir Chitrokolar Itihas – Bangla Shilpo Sahitya o Sanskriti SAQ Question and Answer:
- রবীন্দ্রনাথের পরামর্শ অনুসারে অবনীন্দ্রনাথ কোন বিষয়ে চিত্ররচনা করেছেন?
Ans: আইরিশ ইল্যুমিনেশন এবং মুঘল মিনিয়েচার-এর প্রভাবে দিশেহারা অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে তাঁর কাকা রবীন্দ্রনাথ উপদেশ দিয়েছিলেন বৈঘ্নব পদাবলীকে বিষয় করে চিত্রচর্চা করতে। সেই পরামর্শ অনুসারে তিনি আঁকেন ‘শ্বেতঅভিসারিকা’, ‘কৃষ্ণলীলা’ প্রভৃতি ছবি।
- গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর কার কার কাছে ছবি আঁকার পাঠ নেন ? তাঁর আঁকা একটি বিখ্যাত অ্যালবামের নাম লেখো।
Ans: ঠাকুর পরিবারের অন্যতম একজন শিল্পী গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর ছবি আঁকার প্রথম পাঠ নেন হরিচরণ বসুর কাছে। পরবর্তীকালে প্রখ্যাত জাপানি শিল্পী টাইকান আর হিসিদার কাছে পাঠ নেন জাপানি কালি-তুলি আর ওয়াশের কাজের।
◆ গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের আঁকা বারোটি কাকের ছবি নিয়ে বিখ্যাত অ্যালবামটি হল-টুয়েলভ ইংক স্কেচেস’ (১৯০১)।
- ব্যঙ্গচিত্রকর বা কার্টুনিস্ট হিসেবে একজন চিত্রশিল্পীর নাম ও তাঁর ছবির বিশেষত্ব লেখো।
Ans: বাংলা চিত্রকলার ইতিহাসে ব্যঙ্গচিত্রকর কার্টুনিস্ট হিসেবে সুপরিচিত চিত্রশিল্পী হলেন গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর।
◆ ছবির বিশেষত্ব: (১) তাঁর ছবিতে কৌণিকতার ধরন লক্ষ করা যায়। (২) আলোছায়ার রহস্যঘন বিষয়টিও তাঁর ছবিতে সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ পেয়েছে। (৩) তিনি ছবিতে স্পেসকে জ্যামিতিক ছকে ভেঙে বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করেছেন।
- শিল্পী গগন ঠাকুরের চিত্রচর্চার বিষয় কী ছিল?
Ans: প্রখ্যাত ব্যঙ্গচিত্রকর গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের চিত্রচর্চার বিষয় ছিল-ইঙ্গ-বঙ্গ সমাজ, ব্যারিস্টারদের স্বদেশি আনা, চরকা বনাম পৃথিবীর সভ্যতা প্রভৃতি।
- বাংলা চিত্রকলার ইতিহাসে সুনয়নী দেবী বিখ্যাত কেন?
Ans: ঠাকুর পরিবারের স্বশিক্ষিতা শিল্পী সুনয়নী দেবী হলেন বাংলার লৌকিক শিল্পের চিত্রকর। তাঁর ছবিতে স্বদেশিয়ানা ও স্বাজাত্যভিমানের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। মুখ্যত জলরঙের মাধ্যমে কৃষ্ণলীলা ও রামায়ণ মহাভারতের চরিত্র অবলম্বন করেই তাঁর চিত্র রচনা প্রসার লাভ করে। তাঁর আঁকা চিত্রগুলির মধ্যে অন্যতম ‘রাধা’, ‘মা যশোদা’, ‘বাউল’, ‘নেপথ্যে’ প্রভৃতি। তাঁর প্রকৃতি চিত্র দেখলে মনে হয় যেন আলোকিত উজ্জ্বল আকাশ দর্শকদের এক আশ্চর্য উদ্ভাসিত জগতের সন্ধান দিয়েছে। বাংলা চিত্রশিল্পকলার জগতে স্বশৈলীতে অপরূপ চিত্র সৃজনে চিত্রকলার ইতিহাসে তিনি প্রসিদ্ধি লাভ করেন।
- চিত্রশিল্পী যামিনী রায় সম্পর্কে লেখো।
Ans: লোকশিল্পী যামিনী রায় চিত্র শিল্পচর্চার সূচনা করেছিলেন ব্রিটিশ অ্যাকাডেমিক স্বাভাবিকতাবাদী রীতিকে আশ্রয় করে। চিত্রশিল্পী সুনয়নী দেবীর মতোই তাঁর লোক শিল্পভাবনায়ও স্বাজাত্যভিমান ফুটে উঠেছে পটচিত্রে। বাংলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পট সংগ্রহ করে তিনি নিজস্ব চিত্রভাষা রচনা করেছেন। তাঁর ছবির বিষয় রামায়ণ ও মহাভারতের নারী ও পুরুষ, যীশুখ্রিস্ট, আদিবাসী সমাজ, পশুপাখি ইত্যাদি। তাঁর সৃজনে সমতল রঙে চিত্রিত মানুষজন, পশুপাখিবিস্তীর্ণ পট জুড়ে অবস্থান করেছে। নিজস্ব ঘরানায় যশস্বী পটচিত্রকর হিসেবে বাংলার চিত্রকলায় স্বনামধন্য শিল্পী যামিনী রায়।
- নন্দলাল বসুর চিত্রকলার বিশেষত্ব কী?
Ans: শিল্পাচার্য নন্দলাল বসুর চিত্রকলার বিশেষত্ব হল-বহমান জীবনকে আশ্রয় করে তাঁর ছবিগুলি প্রাণময়তায় চঞ্চল হয়ে উঠেছে। কলাভবনের আচার্য তথা শিল্পগুরু হিসেবে মৌলিক রচনা, প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ ও পরম্পরার অপূর্ব মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন। স্বচ্ছ জলরঙের ওয়াশ পদ্ধতির ছবির পাশাপাশি ঘন জলরঙের টেম্পোরার কাজ তাঁর ছবিকে অন্যতর মাত্রা দান করেছে। প্রকৃতি পর্যবেক্ষণমূলক ছবিতে তাঁর অসামান্য দক্ষতা ও বিচক্ষণতা তাঁকে বিশেষত্ব দিয়েছে।
- রবীন্দ্রনাথের সহজপাঠ গ্রন্থের অলংকরণ শিল্পীর নাম লেখো এবং সেই শিল্পীর কয়েকটি ছবির নাম উল্লেখ করো।
Ans: রবীন্দ্রনাথের ‘সহজপাঠ’ গ্রন্থের অলংকরণ শিল্পী হলেন শিল্পাচার্য নন্দলাল বসু।
◆ তাঁর আঁকা বিখ্যাত ছবিগুলি হল-‘সতী’, ‘পার্থসারথি’, ‘হলকর্ষণ’, ‘রাঙামাটির পথ’ প্রভৃতি।
- শিল্পী রামকিঙ্কর বেইজ সম্পর্কে লেখো।
Ans: বাংলার চিত্রকলার ইতিহাসে রামকিঙ্কর বেইজ শুধু ভাস্কর্যে নয়, চিত্রশিল্পেও তাঁর সমান দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। তাঁর ছবিগুলি প্রধানত প্রকৃতিকেন্দ্রিক ও গ্রামীণ জীবন। সিমেন্ট আর বোলপুরের কাঁকর-মাটি মিশিয়ে শান্তিনিকেতনের উন্মুক্ত প্রান্তরে নির্মাণ করেছেন বহু বিশালাকার ভাস্কর্য। তাঁর ভাস্কর্যের প্রকৃতি ও গ্রামীণ সমাজচিত্র জীবন্ত হয়ে উঠেছে। তাঁর ভাস্কর্যগুলির মধ্যে অন্যতম দৃষ্টান্ত হল-‘সাঁওতাল দম্পতি, ‘সুজাতা’, ‘কচ ও দেবযানী’, ‘হাটের পথে’, ‘যক্ষ ও যক্ষীর মূর্তি’ প্রভৃতি।
- শিল্পী চিত্তপ্রসাদ ভট্টাচার্যের চিত্র সম্পর্কে লেখো।
Ans: বাংলার চিত্রকলা সংস্কৃতির ইতিহাসে অন্যতম একজন বাস্তববাদী ব লিষ্ঠ শিল্পী হলেন চিত্তপ্রসাদ ভট্টাচার্য। কালো কালির ব্যবহার ও প্রয়োগে তিনি ছিলেন সিদ্ধহস্ত। তাঁর ছবির আলোছায়ার দ্বন্দুে দুর্যোগের মর্মান্তিক মুহূর্তগুলি প্রাণবন্তভাবে ফুটে উঠেছে। দুর্ভিক্ষের পরবর্তী বছরগুলিতে শ্রমিক ধর্মঘট, হ্যাংরিবেঙ্গল ও ছাত্র আন্দোলনের ছবিতে প্রায়শই কেন্দ্রীয়ভাবে অবস্থান করতে দেখা যায় এক জোরালো প্রতিবাদের আবহ।
- পট কী ? কীভাবে অঙ্কিত হত ?
Ans: লৌকিক সাহিত্যে লোকশিল্পের একটি অতিপ্রাচীন মাধ্যম পট। ‘পট’ কথাটির অর্থ চিত্র।
◆ কাপড়ের ওপর কাদামাটি বা গোবর মিশ্রিত প্রলেপের সঙ্গে আঠা মিশিয়ে জমিন তৈরি করে পট অঙ্কন করা হত।
- পটুয়াদের কথা কোথায় জানা যায় ? পটশিল্পের বিস্তারকাল লেখো।
Ans:
@ সপ্তম শতকের গোড়ার দিকে রচিত ‘হর্ষচরিত’-এ পটুয়াদের কথা আছে।
◆ দ্বাদশ ও ত্রয়োদশ শতকে পটশিল্প বিস্তার লাভ করে। ষোড়শ শতকে চৈতন্যদেবের বাণী প্রচারের জন্যও পট ব্যবহৃত হত। এই শতকের কবি মুকুন্দরামের কাব্যে পটের উল্লেখ আছে। চিত্রকলা বিশেষজ্ঞদের অভিমতানুসারে বলা চলে পটশিল্পের বিস্তারকাল দ্বাদশ শতক থেকে ষোড়শ শতক।
- পটের গান কী ? পটের উপাদান ও বৈচিত্র্য লেখো।
Ans: পৌরাণিক বা লোকগাথা ভিত্তিক বিভিন্ন কাহিনি ছিল পটের উপজীব্য বিষয়। আমাদের দেশে মূলত বেদে সম্প্রদায়ের লোকেরা গ্রামে গ্রামে ঘুরে গানের সুরে এইসব পটের কাহিনি বর্ণনা করতেন। এইসব গানকেই পটের গান নামে চিহ্নিত করা হয়।
◆ বিভিন্ন ধর্মীয় এবং সামাজিক অনুষ্ঠানে এই গান বাংলার মানুষের কাছে বিনোদনের অন্যতম উপাদান হয়ে ওঠে। গায়েনরা বিভিন্ন বিষয়ে বিচিত্র সুরে গান গাইতেন। তন্মধ্যে পূর্ববঙ্গের গাজীর পট বা সত্যপীরের পট ছিল অনবদ্য।
- কালীঘাটের পট সম্পর্কে লেখো।
Ans: উনিশ শতকে বাংলায় প্রসিদ্ধি পেয়েছিল কালীঘাটের পট। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের চিত্রশৈলী মিশিয়ে এই পট তৈরি হত। এই পটে হিন্দু দেবদেবীর ছবি চিত্রিত হত। সমালোচকেরা কালীঘাটের পটকে বিশেষ সামাজিক স্বীকৃতি দিয়েছে। প্যারিসে বিক্রিত কালিঘাটের পট কিনেছিলেন চিত্রশিল্পী পাবলো পিকাসো। চিত্রকর ফার্নান্দ লেজের চিত্রশিল্পে কালীঘাটের পটের ছায়া পড়েছে। ‘মোহন্ত এলোকেশী’ এই পটশিল্পের উজ্জ্বল উদাহরণ। কালীঘাটের পট তৎকালীন সময়ে এককড়ি মূল্যে বিক্রীত হওয়ায় প্রচুর মানুষ ক্রয় করার জন্য ভিড় জমায়। কালীঘাটের পট বৈচিত্র্যগুণে দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল।
- ‘সোসাইটি ফর দ্য প্রোমোশন অফ ইন্ডাস্ট্রিয়াল আর্ট’ কবে গঠিত হয় ? এই সোসাইটির কয়েকজন সদস্যের নাম লেখো।
Ans: লন্ডনে গ্রেট এগজিবিশনে ভারতীয় চিত্রকলা প্রদর্শনের ফলশ্রুতি হিসেবে এই দেশের মাটিতে গড়ে ওঠে ১৮৫৪ খ্রিস্টাব্দে ‘সোসাইটি ফর দ্য প্রোমোশান অফ ইন্ডাস্ট্রিয়াল আর্ট’।
◆ এই সোসাইটির প্রাণপুরুষ ছিলেন-হজসন প্রাট, রাজেন্দ্রলাল মিত্র প্রমুখ।
- বাংলায় হেনরি হোভার লক স্মরণীয় কেন?
Ans: বাংলায় আধুনিক শিল্প-শিক্ষার প্রসারে হেনরি হোভার লক প্রাতঃস্মরণীয় ব্যক্তি। তিনি অধ্যক্ষ হিসেবে ১৮৬৪ থেকে ১৮৮২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ‘গভর্নমেন্ট কলেজ অফ আর্ট অ্যান্ড ক্রাফট’ প্রতিষ্ঠানটি নিষ্ঠার সাথে পরিচালনা করেছেন। তাঁরই প্রচেষ্টায় বহু ছাত্র পাশ্চাত্য শিল্পরীতির অনুরাগে আসক্ত হন। তাঁর সুযোগ্য ছাত্রদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন অন্নদাপ্রসাদ বাগচী, শ্যামাচরণ শ্রীমানী প্রমুখ।
- হেনরি হোভার লক আর্ট স্কুল সংলগ্ন বাড়িতে আর্ট গ্যালারি কবে প্রতিষ্ঠা করেন ? তাঁর ওই আর্ট স্কুলের কয়েকজন ছাত্রের নাম লেখো।
Ans: ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দে হেনরি হোভার লক আর্ট স্কুল সংলগ্ন বাড়িতে আর্ট গ্যালারি প্রতিষ্ঠা করেন।
◆ তাঁর পরবর্তীকালে নাম করা ছাত্রদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন শশী কুমার হেশ, রোহিণীকান্ত নাগ ও ফণীন্দ্রনাথ বসু, গঙ্গাধর দে, প্রমথনাথ মিত্র, অন্নদাপ্রসাদ বাগচী, বামাপদ বন্দ্যোপাধায় প্রমুখ।
- জুবিলি আর্ট অ্যাকাডেমি সম্পর্কে লেখো।
Ans: ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দে রণদাপ্রসাদ গুপ্ত প্রতিষ্ঠিত শিল্প শিক্ষাঙ্গন কেন্দ্র হল জুবিলি আর্ট অ্যাকাডেমি। হ্যাভেল সমকালীন সময়ে প্রতিষ্ঠিত এই প্রতিষ্ঠান মূলত ব্রিটিশদের অনুসরণে ছবিতে দৃশ্যসত্যের হুবহু অনুসরণ করে চিত্রচর্চা করেছেন। এই প্রতিষ্ঠানে জন্ম হয়েছে বহু প্রতিভাবান শিল্পীর। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন-হেমেন্দ্রনাথ মজুমদার, অতুল বসু, বসন্ত গঙ্গোপাধ্যায়, প্রহ্লাদ কর্মকার প্রমুখ।
- ‘দি ইন্ডিয়ান স্কুল অফ আর্ট’ কে কবে প্রতিষ্ঠা করেন ? এই প্রতিষ্ঠানের বর্তমান নাম ও প্রখ্যাত ছাত্রদের নাম লেখো।
অথবা ‘দি ইন্ডিয়ান স্কুল অফ আর্ট’-সম্পর্কে লেখো।
Ans: বিখ্যাত আলোক চিত্রকর মন্মথনাথ চক্রবর্তী ১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দে ‘দি ইন্ডিয়ান স্কুল অফ আর্ট’ স্থাপন করেন।বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি সুপরিচিত ‘দি ইন্ডিয়ান কলেজ অফ আর্ট অ্যান্ড ড্রাফটম্যানসিপ’ নামে।
◆ এই প্রতিষ্ঠানের ছাত্রদের মধ্যে শিল্পচর্চায় প্রসিদ্ধি লাভ করেছিলেন রবীন মন্ডল, সুহাস রায়, বিকাশ ভট্টাচার্য প্রমুখ।
- ‘ইন্ডিয়ান সোসাইটি অফ ওরিয়েন্টাল আর্ট’-কে, কবে প্রতিষ্ঠা করেন ? এই প্রতিষ্ঠানটির উদ্দেশ্য কী ছিল?
Ans: ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিশিষ্ট বাঙালি ও ইংরেজি শিল্পমনস্ক মানুষদের নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ‘ইন্ডিয়ান সোসাইটি অফ ওরিয়েন্টাল আর্ট’।
◆ এই প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য ছিল জনগণের মধ্যে প্রাচ্য শিল্পকলা বিষয়ে জ্ঞান সঞ্চার ও আগ্রহ সৃষ্টি করা।
রচনাধর্মী | বাঙালির চিত্রকলার ইতিহাস (বাংলা শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতির ইতিহাস) দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | WB HS Class 12 Bengali Bangalir Chitrokolar Itihas Bangla Shilpo Sahitya o Sanskriti Descriptive Question and Answer:
1. বঙ্গদেশের চিত্রকলার ইতিহাসে ভাস্কর ও চিত্রকর রামকিঙ্কর বেইজের অবদান ও স্বকীয়তা বিষয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করো।
Ans: রামকিঙ্কর বেইজের অবদান: নন্দলাল বসুর সাহচর্যে প্রশিক্ষিত ভাস্কর ও চিত্রকর রামকিঙ্কর বেইজ তাঁর অসামান্য শিল্পচর্চার মাধ্যমে সর্বপ্রথম আধুনিক পাশ্চাত্য শিল্পকে নিজের ভাস্কর্যে প্রয়োগ করেছিলেন।
শৈশব থেকেই দেবদেবীর চিত্রাঙ্কনে, পুতুল গড়ায়, পোস্টার লেখায়, থিয়েটারের মঞ্চসজ্জায় তাঁর সহজাত প্রতিভার প্রকাশ লক্ষ করা যায়। ‘প্রবাসী’ পত্রিকার সম্পাদক রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়ের সাহচর্যে তিনি শান্তিনিকেতনে এলে নন্দলাল বসুর সান্নিধ্যে চিত্রকলায় প্রথাগত শিক্ষালাভে ব্রতী হন।
চিত্রকলাচর্চা ও স্বকীয়তা: রামকিঙ্করের শিল্পীসত্তার যথার্থ মুক্তি ঘটে শান্তিনিকেতনে এসে। তাঁর মাথার উপর ছিলেন রবীন্দ্রনাথ, সহায়ক ছিলেন গুরু নন্দলাল বসু ও অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তিনি আধুনিক ইউরোপীয় শিল্পের প্রতি আগ্রহী ছিলেন। তাঁর শান্তিনিকেতন জীবনের প্রথম পর্বের ছবিগুলিতে ওয়াশ এবং টেম্পেরা পদ্ধতির প্রয়োগ দেখা যায়। তাঁর ছবিগুলি মূলত প্রকৃতিকেন্দ্রিক এবং তাদের কিছু কিছু কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তির প্রতিকৃতি। এ ছাড়াও তাঁর বেশ কিছু ছবিতে চিত্রকল্পের আধিক্য লক্ষ করা যায়। তাঁর অঙ্কিত কয়েকটি বিখ্যাত ছবি হল- ‘পিকনিক’, ‘সোমা’, ‘যোশী’, ‘সামার নুন’, ‘শিলং ল্যান্ডস্কেপ’ প্রভৃতি।
উল্লেখযোগ্য ভাস্কর্য: রামকিঙ্করের ছবি অপেক্ষা তাঁর ভাস্কর্য আরও বেশি স্বতন্ত্র ও বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। তিনি সিমেন্টের সঙ্গে কাঁকড় মিশিয়ে শান্তিনিকতনে উন্মুক্ত প্রকৃতির কোলে অসাধারণ কিছু ভাস্কর্য নির্মাণ করেন। রামকিঙ্করের ”সুজাতা’ দেখে রবীন্দ্রনাথ মুগ্ধ হয়েছিলেন। এ ছাড়া ‘সাঁওতাল পরিবার’, ‘বাতিদান’, ‘ধান ঝাড়া’, ‘কলের বাঁশি’ প্রভৃতি ভাস্কর্যগুলি তাঁর উল্লেখযোগ্য সৃষ্টি। ভারতের নানাস্থানে তাঁর ছবি ও মূর্তির প্রদর্শনী হয়েছে। বিভিন্ন সংগ্রহশালায় তাঁর কাজ সংরক্ষিত আছে। ১৯৭০ সালে রামকিঙ্কর ‘পদ্মভূষণ’ উপাধিতে ভূষিত হন।
2. শিল্পী বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায়ের শিল্পকলাচর্চা সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো।
Ans: বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায়ের কৃতিত্ব: প্রখ্যাত ভাস্কর ও চিত্রকর রামকিঙ্কর বেইজের শান্তিনিকেতনের সতীর্থ চিত্রকর বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায় ছিলেন অবনীন্দ্রনাথ-নন্দলালের প্রিয় ছাত্র। দৃষ্টিশক্তি বিষয়ক প্রতিকূলতা থাকা সত্ত্বেও নিজগুণে তিনি হয়ে উঠেছিলেন অনন্য।
সৃজিত চিত্র: শিল্পসৃষ্টিতে তিনি ইতালীয় ও জাপানি প্রভাবপুষ্ট মননকে গভীর প্রজ্ঞায় কাজে লাগিয়েছিলেন। ইতালির মুরাল পরম্পরা ও জাপানি চিত্রকলার প্রভাব ভারতীয় ঘরানার সঙ্গে মিশ্রণে তাঁর চিত্রকে যুগোত্তীর্ণ করেছিল। টেম্পেরা তাঁর প্রিয় শিল্পমাধ্যম হলেও, মুরাল ও তেলরঙে তিনি সমান দক্ষতা দেখিয়েছেন। তাঁর শেষ ভিত্তিচিত্রটি হল বিশ্বভারতীর হিন্দি ভবনের দেওয়ালে আঁকা ৭৭ ফুট বিস্তৃত, ৮ ফুট দীর্ঘ ‘মধ্যযুগের সন্তগণ’ নামে বিরাটাকার ছবিটি। নির্জনতার রূপরাগ তাঁর ছবিকে বিশিষ্টতা দিয়েছে। এক আশ্চর্য নির্লিপ্ততায় তাঁর ছবিগুলিকে বাত্ময় হয়ে উঠতে দেখা যায়।
শিল্পপ্রতিভা: ১৯২৫ সালে তিনি কলাভবনের শিক্ষক এবং সেখানকার মিউজিয়ামের কিউরেটার ও লাইব্রেরিয়ান হন। তাঁর শিল্পপ্রতিভার অসামান্য নিদর্শন ছড়িয়ে আছে শান্তিনিকেতনের কলাভবন ও হিন্দিভবনের ‘ফ্রেস্কো’গুলিতে। ১৯৪৯ সালে তিনি নেপাল সরকারের আহ্বানে গমন করে বিভিন্ন গঠনমূলক শিল্পকর্মে ব্যস্ত থাকেন। ১৯৫৬ সালে তিনি দৃষ্টি সম্পূর্ণ হারিয়ে ফেলেন। ১৯৭৩ সালে তিনি এমেরিটাস অধ্যাপক হয়ে কলাভবনের সঙ্গে যুক্ত থাকেন। দৃষ্টি হারিয়েও তাঁর শিল্পকর্ম ব্যাহত হয়নি। ভাস্কর্য, কাগজ কেটে ছবি, টালি দিয়ে মুরালের কাজ তিনি করেছেন। ১৯৭৪ সালে তিনি ভারত সরকারের ‘পদ্মবিভূষণ’ ও পরে বিশ্বভারতীর ‘দেশিকোত্তম’ লাভকরেন।
3. বাংলা শিল্পকলার ইতিহাসে দেবীপ্রসাদ রায়চৌধুরীর কৃতিত্ব আলোচনা করো।
Ans: দেবীপ্রসাদ রায়চৌধুরীর কৃতিত্ব: অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সুযোগ্য ছাত্র দেবীপ্রসাদ রায়চৌধুরী একাধারে চিত্রকর ও ভাস্কর হলেও, তাঁর প্রবল খ্যাতি একজন ভাস্কর্যশিল্পী হিসেবেই।
শিল্পচর্চা: পরাধীন দেশের মানুষ হিসেবে নিজ কর্মনৈপুণ্যে দেবীপ্রসাদ ইউরোপের ভাস্করদের একচেটিয়া আধিপত্যকে খর্ব করেছিলেন। ব্রোঞ্জ মূর্তিনির্মাণে তিনি দক্ষ হলেও সব মাধ্যমে ভাস্কর্য নির্মাণেই তিনি স্বচ্ছন্দ ছিলেন। তাঁর ভাস্কর্যগুলির অন্তর্গত শক্তির বিচ্ছুরণ তাঁর প্রতিটি শিল্পকর্মকে খ্যাতিমান করেছিল। মূলত হিরণ্ময় রায়চৌধুরী ও এক ইতালীয় সাহেবের কাছে তাঁর শিক্ষা হলেও, ছবি আঁকার হাতেখড়ি হয় শিল্পগুরু অবনীন্দ্রনাথের কাছে। অবনীন্দ্রনাথ প্রবর্তিত ‘বেঙ্গল স্কুল’-এর প্রভাব ছিন্ন করে একসময় তিনি পাশ্চাত্যধর্মী শিল্পকর্মের পথসন্ধানী হওয়ায় তাঁর ভাস্কর্যে ‘রিয়ালিজম’-এর প্রবল প্রভাব প্রকাশিত হয়। ১৩০৫-এর মন্বন্তরের কালে অন্নহীন, অনাহারক্লিষ্ট কঙ্কালসার মানুষের ছবি ধরা পড়েছিল দেবীপ্রসাদের চিত্রকলায়।
শিল্পপ্রতিভা: ‘মাদ্রাজ আর্ট কলেজ’-এ তিনি দীর্ঘ ২৮ বছর অধ্যক্ষপদে আসীন থাকার পর দিল্লির ‘ললিতকলা অ্যাকাডেমি’র চেয়ারম্যান ছিলেন ৭ বছর। তাঁর কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ভাস্কর্য সংরক্ষিত আছে যথাক্রমে- পাটনায় ‘শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ’, মাদ্রাজে ‘ট্রায়াম্ফ অব লেবার’ বা ‘শ্রমের জয়যাত্রা’, ত্রিবান্দ্রমে ‘টেম্পল এনট্রি প্রোক্লামেশন’ এবং কলকাতায় ‘মহাত্মা গান্ধি’ ও ‘আশুতোষ মুখোপাধ্যায়’-এর মূর্তি সংরক্ষিত। ‘মাই ফাদার’, ‘যখন শীত আসে’ তাঁর আরও দুটি সাড়া জাগানো ভাস্কর্য। শেষ বয়সে তাঁর সৃষ্ট ভারতের বিভিন্ন জাতি ও ধর্মের প্রতীক ‘একাদশ মূর্তি’ বিরল প্রতিভার সাক্ষ্য। তাঁর বিখ্যাত শিল্পকর্ম ‘সুমাত্রা দ্বীপের পাখি’ রানি মেরি প্রভূত অর্থে ক্রয় করেন। দেবীপ্রসাদ কার্টুন আঁকাতেও দক্ষ ছিলেন। ১৯৫৮ সালে তিনি ভারত সরকারের ‘পদ্মভূষণ’ সম্মান লাভ করেন।
4. শিল্পী জয়নুল আবেদিনের শিল্পকলা অন্য এক বাস্তবকে তুলে ধরে- মন্তব্যটি আলোচনা করো।
Ans: জয়নুল আবেদিনের শিল্পকলার পরিচয়: ‘দুর্ভিক্ষ’ চিত্রমালার স্রষ্টা শিল্পী জয়নুল আবেদিন অধুনা বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলার কিশোরগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি কলকাতায় ‘গভর্নমেন্ট আর্ট স্কুল’ থেকে ১৯৩৩ সালে অঙ্কনশিক্ষা শেষ করেন। তাঁর প্রাথমিক চিত্রচর্চায় মূলত কল্যাণপ্রসূত নিসর্গচিত্র ও উপজাতির মানুষজনই উঠে আসে।
চিত্রভাবনার দ্বিতীয় পর্যায়: জয়নুলের চিত্রভাবনার দ্বিতীয় পর্যায়ে এক সামাজিক ঘূর্ণাবর্ত কাজ করেছিল। ১৯৪৩ সালের মর্মান্তিক দুর্ভিক্ষ ও মন্বন্তর তাঁর চেতনাকে প্রবলভাবে নাড়িয়ে দেয়।
কঠোর বাস্তব চিত্র: জয়নুলের অতি বিখ্যাত ‘দুর্ভিক্ষ’ চিত্রমালার বিখ্যাত ছবি ‘ম্যাডোনা ১৯৪৩’, যাতে তিনি কালি আর শুকনো তুলির স্কেচে ফুটিয়ে তোলেন- মৃত্যুপথযাত্রী, দুর্ভিক্ষের শিকার, কঙ্কালসার সন্তানের দ্বারা সদ্যমৃত মায়ের বুক থেকে জীবনসুধা টেনে নেওয়ার অপচেষ্টার দৃশ্য। এই সিরিজের প্রতিটি ছবিই পঞ্চাশের মন্বন্তরের সময়ের ঐতিহাসিক দলিল যা কঠোর বাস্তবের মুখোমুখি করে মানুষকে। ছবিগুলি রঙের প্রলেপ এবং মননের দীপ্তিতে উজ্জ্বল।
কর্মজীবন: ১৯৪৭ সালে ‘আর্ট ও ক্রাফট কলেজ’ প্রতিষ্ঠিত হয়, পরবর্তীতে ১৯৪৯ সালে তিনি সেই শিল্পশিক্ষালয়ের অধ্যক্ষ হন। ১৯৬৩ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ফ্যাকাল্টি অব ফাইন আর্ট’-এর ডিন নির্বাচিত হন। – ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম হলে, কলকাতায় তাঁর একটি একক প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। পরে লন্ডনের একটি প্রদর্শনীতে ‘দুর্ভিক্ষ’ সিরিজের ছবিগুলি প্রদর্শিত হলে বিদেশে তাঁর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে।
5. শিল্পী চিত্তপ্রসাদ ভট্টাচার্যের শিল্পকলার বৈশিষ্ট্যসমূহ সংক্ষেপে আলোচনা করো।
Ans: চিত্তপ্রসাদ ভট্টাচার্যের শিল্পকলা: শিল্পী চিত্তপ্রসাদ ভট্টাচার্য আর্ট স্কুলের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাকাঠামোর মধ্যে শিক্ষা অর্জনের সুযোগ পাননি। তবে তাঁর মধ্যে সহজাত শিল্পীসত্তা ছিল। ছাত্রজীবনে কমিউনিস্ট পার্টির সংস্পর্শে আসার ফলে তাঁর আঁকা ছবিগুলি তাঁর মতাদর্শের দ্বারা প্রভাবিত হয়। ১৯৪২-৪৩ সালে আগস্ট আন্দোলন ও দুর্ভিক্ষের প্রেক্ষাপটে অঙ্কিত তাঁর ছবিগুলি শিল্পজগৎকে আলোড়িত করে। দুর্ভিক্ষের সময় তিনি বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে ঘুরে দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষের জীবনযন্ত্রণার ছবি এঁকেছেন বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশের জন্য। পরবর্তীকালে ১৯৪৬ সালের নৌবিদ্রোহ এবং ১৯৪৭ সালের তেলেঙ্গানার কৃষক বিদ্রোহের উপরেও তিনি চিত্রসিরিজ রচনা করে খ্যাতি অর্জন করেন। ১৯৪৩ সালে মেদিনীপুরের দুর্ভিক্ষচিত্রগুলি শিল্পরসিকদের মনকে গভীরভাবে নাড়া দেয়।
শিল্পকলার বৈশিষ্ট্য: ১৯৪৫ সালে চিত্তপ্রসাদ মুম্বইয়ে পার্টির মুখপত্র ‘পিপলস্ ওয়ার’-এ যোগ দেন। মুম্বই, কলকাতা, দিল্লি প্রভৃতি স্থানে আয়োজিত তাঁর চিত্রপ্রদর্শনীর ছবিগুলি মানুষের মন জয় করতে সমর্থ হয়। শিল্পীর চিত্রকলার বিষয় হিসেবে গ্রামবাংলার শ্রমজীবী, দুঃখী সাধারণ সংগ্রামী মানুষজনই উঠে আসে। শিল্পাচার্য অবনীন্দ্রনাথ ও পাশ্চাত্যের আধুনিক চিত্ররীতি তাঁকে কমবেশি প্রভাবিত করে। চিত্ররীতিতে স্কেচ ও উডকাট পদ্ধতির প্রয়োগই তাঁর সৃষ্টিতে প্রাধান্য পেয়েছে। ছবিতে অধিক পরিমাণে কালো কালির ব্যবহার ও আলো-ছায়ার দ্বন্দ্বে তৈরি একপ্রকার বলিষ্ঠ অঙ্কনভঙ্গির বিশিষ্টতা, জোড়ালো প্রতিবাদের আবহ তাঁর চিত্রকে প্রাণময় করেছে। জীবনের ৩৩টি বছর তিনি জীবিকার্জনের জন্য মুম্বইয়ের আন্ধেরিতে অতিবাহিত করলেও তাঁর উপার্জন অনিয়মিত ছিল। ১৯৭৮ সালে কলকাতায় তাঁর মৃত্যু হয়।
6. বাংলার শিল্পচর্চার ধারায় সোমনাথ হোরের কৃতিত্ব আলোচনা করো।
Ans: সোমনাথ হোরের কৃতিত্ব: প্রখ্যাত ভাস্কর ও চিত্রকর সোমনাথ হোর ১৯২১ সালে অবিভক্ত বাংলার চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। যৌবনেই তিনি কমিউনিস্ট পার্টির সংস্পর্শে আসেন, যা তাঁর শিল্পসত্তার উপর প্রভাব ফেলেছিল। তিনি কলকাতার ‘গভর্নমেন্ট আর্ট কলেজ’-এর ছাত্র ছিলেন। সেখানে গ্রাফিক্স বিভাগের প্রধান হরেন দাসের সান্নিধ্য ও শিক্ষা তাঁর শিল্পশিক্ষাকে জোরালো হতে সাহায্য করেছিল। কমিউনিস্ট পার্টির ‘জনযুদ্ধ’ পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত থাকার কারণে ‘তেভাগা আন্দোলন’-এর বাস্তব অভিজ্ঞতা তাঁর শিক্ষাজীবনে অনিবার্য ছাপ ফেলে। সোমনাথ যত্নের সঙ্গে লিথোগ্রাফ ও খোদাইকর্ম শিক্ষা করেন। তিনি চিত্র, ভাস্কর্যে এমন কিছু নতুন কৌশলের পত্তন করেন, যা তাঁর নিজস্ব আবিষ্কার। দিনকর কৌশিকের আহ্বানে তিনি শান্তিনিকেতনে আসেন ও কলাভবনে শিক্ষকতা করেন। এখানে চিত্রকর কে জি সুব্রহ্মণ্যন ও ভাস্কর রামকিঙ্কর বেইজের সান্নিধ্য তাঁর আত্মপ্রতিষ্ঠা ও কর্মজগৎকে সমৃদ্ধ করে। ১৯৭০ সাল থেকে এই শিল্পী অত্যধিক যত্নের সঙ্গে ভাস্কর্য সৃষ্টিতে মনোনিবেশ করেন। চিত্রচর্চায় তাঁর অধিকার সুপ্রতিষ্ঠিত হলেও, ভাস্কর্যই তাঁর সুকৃতির প্রধান সহায়।
চিত্রশিল্প চর্চা: তবে ভাস্কর্যের পাশাপাশি তিনি দক্ষতার সঙ্গে ছবির চর্চাও করে যেতে থাকেন। অল্পবয়সে চিত্তপ্রসাদ ভট্টাচার্যের সঙ্গে মন্বন্তরপীড়িত গ্রাম বাংলায় ঘুরে ঘুরে সোমনাথ নিরন্ন ও ক্ষুধার্ত মানুষদের যে চিত্র অঙ্কন করেছিলেন, পরবর্তীকালে বিভিন্ন ভাস্কর্যে তার প্রভাব লক্ষণীয়; বিশেষত ব্রোঞ্জের ভাস্কর্যগুলিতে। তিনি তাঁর ‘উন্ডস’ সিরিজের জন্য বিখ্যাত। সাদার উপর সাদা গ্রাফিক্স-এর এই কাজগুলিতে সমাজযন্ত্রণার নানা ছাপ ও ক্ষত বাঙ্ময় হয়ে রয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে লালের আভাসে তিনি যন্ত্রণার মধ্যে রক্তাক্ততা বা আগ্রাসনের ধারণাকে চিত্রে প্রতীয়মান করেছেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য কয়েকটি ভাস্কর্য হল- ‘মাদার উইথ চাইল্ড’, ‘ক্ষুধা’, ‘পথে পাঁচালি’ ইত্যাদি।
7. বাংলার শিল্পচর্চার ইতিহাসে ভাস্কর চিন্তামণি করের অবদান আলোচনা করো।
Ans: ভাস্কর চিন্তামণি করের অবদান: চিন্তামণি কর পশ্চিমবঙ্গের খড়গপুরে ১৯১৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন। ‘ইন্ডিয়ান সোসাইটি অফ ওরিয়েন্টাল আর্ট’-এ কলাবিদ্যায় তিনি শিক্ষাগ্রহণ করেন। ১৯৩৪ সালে তিনি ভাস্কর্য শিক্ষার জন্য ফ্রান্সের প্যারিসে যান। চিন্তামণি নব্যবঙ্গীয় ঘরানায় জলরঙের ‘ওয়াশ’ পদ্ধতিতে ভারতীয় পুরাণকেন্দ্রিক বেশ কিছু ছবি আঁকলেও, তাঁর সিদ্ধি ও খ্যাতি ভাস্কর্যের জন্য। তিনি কাঠ, পাথর, ধাতু-সহ ভাস্কর্যের সব উপাদান নিয়েই কাজ করেছেন। টেরাকোটার কাজেও তিনি দক্ষ ছিলেন। তিনি প্রাথমিকভাবে অ্যাকাডেমিক ও উপস্থাপনযোগ্য কাজ করলেও, ক্রমে তাঁর ভাস্কর্যে স্থান পায় প্রাকৃতিক বিমূর্ততা। ১৯৪৬ সালে তিনি লন্ডন যান ‘রয়াল সোসাইটি অফ ব্রিটিশ স্কাল্পচার’-এর মনোনীত সদস্য হয়ে। ১৯৫৬ সালে তিনি ‘গভর্নমেন্ট কলেজ অফ আর্ট অ্যান্ড ক্রাফ্ট’-এর অধ্যক্ষপদ গ্রহণ করেন।
চিন্তামণি কর তাঁর ভাস্কর্যে মূলত ইউরোপ ও এশিয়ার শিল্প আঙ্গিকের সমন্বয় সাধন করেছিলেন। তাঁর ভাস্কর্যে আলোর প্রতিফলনে রঙের আভাস আনার চেষ্টা ছিল, যা তাঁর স্বাতন্ত্রের একটি দিক। প্রচুর সফল ভাস্কর্যের স্রষ্টা চিন্তামণি করের কাজ দেশ-বিদেশের বিভিন্ন সংগ্রহশালাতে সংরক্ষিত। ১৯৭৪ সালে তিনি ভারত সরকারের ‘পদ্মভূষণ’ উপাধি লাভ করেন। ২০০০ সালে তিনি ফ্রান্সের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান লাভ করেন। ২০০৫ সালে এই মহান ভাস্করের জীবনাবসান হয়।
8. বাংলার লোকচিত্রের জগতে দেয়ালচিত্রের গুরুত্ব কী তা আলোচনা করো।
Ans: দেয়ালচিত্রের গুরুত্ব: প্রাচীনকাল থেকেই দেয়ালচিত্র মানব সমাজের দৈনন্দিন কার্যকলাপ ও সংস্কৃতির সাক্ষ্য বহন করেছে। কখনও দেবদেবীর প্রতি বিশ্বাস, কখনও ঐতিহাসিক ঘটনার কথা এই দেয়ালচিত্র থেকেই বহু সময় জানা গিয়েছে। তেমনই বাংলার লোকচিত্রকলার এক অনবদ্য নিদর্শন হল দেয়ালচিত্র। বিভিন্ন আদিবাসী সম্প্রদায় যেমন- সাঁওতাল, ডোম, বাউরি, মাহাতো প্রভৃতি জনগোষ্ঠীর মধ্যে মাটির বাড়িতে রঙিন ছবি বা নকশা আঁকার রীতি প্রচলিত। এই ছবি বা নকশার সঙ্গে জড়িয়ে থাকে দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন লোকবিশ্বাস, শুভ-অশুভের বোধ (যেমন-ভালো শিকারলাভ, ভালো ফসলের ফলন ইত্যাদি)। তবে বর্তমান দিনে শুধু লোকবিশ্বাস নয়, আধুনিকতার স্পর্শে দেয়ালচিত্রের মধ্যে এসেছে, নান্দনিকতা ও সৌন্দর্যবোধের ছোঁয়া।
সাধারণত দেয়ালচিত্র নির্মাণের আগে আদিবাসী সম্প্রদায়ের পুরুষরা বাড়ির একেবারে নীচের অংশের দেয়ালকে মোটা গোবরের প্রলেপ দিয়ে শক্ত করে নেয়, যাতে বৃষ্টির জলে তা নষ্ট না হয়ে যায়। তারপর তাতে কালো রঙের প্রলেপ দিয়ে বানানো হয় পিন্ডা- যার উপর মানুষ বসতে পারে। দেয়ালের উপরের অংশকে কাঁকরমাটি, নীলমাটি ও তারপর সাদামাটির প্রলেপ দিয়ে ক্যানভাসের মতো গড়ে তোলা হয়। যার মধ্যে সহজেই ছবি ফুটে উঠতে পারে। আদিবাসী রমণীরা তাতে কখনও কাঁচা অবস্থাতেই আঙুলের সাহায্যে ফুটিয়ে তোলেন বিভিন্ন লতা, ফুল, পশুপাখির ছবি। কখনও বা নকশা। পরে এই নকশাগুলি শুকিয়ে গেলে দেওয়ালের গায়ে স্পষ্ট ছবি ফুটে ওঠে। ছবি আঁকার এই পদ্ধতি ফ্রেসকো নামে পরিচিত।
আবার, অনেকে বাড়ি তৈরি করার সময়ে পুরোনো ঘরের ফাঁকা দেয়ালে নতুন মাটি লাগিয়ে বর্গাকার বা আয়তাকার বর্ডারের মধ্যে আঙ্গুল বা পাতার ছিলকে দিয়ে কেটে ছবি ফুটিয়ে তোলে। দেয়াল অঙ্কনের এই পদ্ধতিকে রিলিফ বলে। এই পদ্ধতিতে দেয়ালে আঁকার জন্য লালমাটি, নীল, পোড়ামাটি, সিঁদুর ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়। রিলিফ দেয়ালচিত্রেও বিভিন্ন লতাপাতা, ফুল, পশুপাখির ছবি ফুটিয়ে তোলা হয়।
যদিও কালের নিয়মে দেয়ালচিত্র আঁকার আটপৌড়ে এই রীতি ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে আসছে। তবু আধুনিকতার ছোঁয়ার দেয়াল লিখন, গ্রাফিতি ইত্যাদি ফর্মে দেয়ালচিত্রের শিল্প ধারাবাহিকতা বজায় রেখে চলেছে।
9. বাঙালির চিত্রকলার ধারায় ঠাকুরবাড়ির অবদান আলোচনা করো।
Ans: ঠাকুরবাড়ির অবদান: বাংলার শিল্পকলার ইতিহাসে জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি এক বিশিষ্ট স্থান অধিকার করে আছে। শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির চর্চায় এই পরিবারের অবদান অনস্বীকার্য। এই ঠাকুরবাড়ির বিচিত্রা স্টুডিও ও দক্ষিণের বারান্দার চিত্রচর্চা একসময় সমগ্র দেশকে শিল্পচর্চার অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল। এই পরিবারের একাধিক সদস্য নানাভাবে চিত্রকলা চর্চায় নিজ নিজ কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে গিয়েছেন। সেই বিষয়ে এখানে অতি স্বল্প পরিসরে আলোচনা করা হল-
অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর: অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চিত্রচর্চায় ‘নব্যবঙ্গীয় চিত্ররীতি’ আধুনিক ভারতীয় চিত্রকলার প্রেক্ষাপটে তাঁকে এক অনন্য স্থান দিয়েছিল। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যরীতির মিশ্রণে তাঁর নিজস্ব ‘ওয়াশ’ পদ্ধতির প্রচলন চিত্রশিল্পের জগতে নতুন দিগন্তের সূচনা করে। তাঁর সৃষ্ট ‘কৃষ্ণলীলা’ সিরিজের হাত ধরেই ভারতীয় আধুনিক চিত্রকলার জয়যাত্রা শুরু হয়েছিল। ‘ভারতমাতা’, ‘শ্বেত অভিসারিকা’, ‘কচ ও দেবযানী’ প্রভৃতি চিত্রকলাসমূহ তাঁর অসামান্য কীর্তি। গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর: গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর জাপানি কালি ও ওয়াশের অনবদ্য ব্যবহারে ‘টুয়েলভ ইংক স্কেচেস’ নামক বারোটি কাকের ছবির অ্যালবাম দিয়ে চিত্রশিল্পী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। সিল্যুট, পশ্চিমি কৌণিকতা, জ্যামিতিক ধরন ইত্যাদির প্রভাব তাঁর ছবিতে দেখা যায়। তবে মূলত ব্যঙ্গচিত্রশিল্পী হিসেবেই তিনি খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। ইঙ্গ-বঙ্গ সমাজ, ব্যারিস্টারদের স্বদেশিয়ানা ইত্যাদি বিষয়ে করা গগনেন্দ্রনাথের ব্যঙ্গচিত্র ভারতীয় চিত্রকলায় বিশিষ্ট স্থান অধিকার করে আছে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর: ‘পূরবী’ কাব্যগ্রন্থ রচনার সময় পান্ডুলিপিতে কাটাকুটি করতে করতে প্রায় খেলার ছলেই রবীন্দ্রনাথের চিত্রশিল্প জগতে পদার্পণ। ক্রমে বিভিন্ন প্রকারের রঙের ও কালির ব্যবহারে অভিনবত্ব এসেছিল তাঁর আঁকা ছবিতে। আংশিক বর্ণান্ধতা থাকা সত্ত্বেও উজ্জ্বল রঙের ব্যবহার তাঁর ছবিকে করে তুলেছিল সমৃদ্ধ। পরবর্তী সময়ে ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর উৎসাহে প্যারিসে তাঁর আঁকা ছবির একক প্রদর্শনী ভারতীয় চিত্রশিল্পের জগতে এক অলংকৃত অধ্যায়ের সূচনা করেছিল।
সুনয়নী দেবী: ঠাকুর পরিবারের কন্যা সুনয়নী দেবীর হাতে লৌকিক চিত্রকলা এক অনন্য মাত্রা পেয়েছিল। জলরঙের মাধ্যমে পুরাণের বিভিন্ন চরিত্রকে ফুটিয়ে তোলাই ছিল তাঁর বিশেষত্ব। সুনয়নী দেবীর ‘মা যশোদা’, ‘রাধা’, ‘নেপথ্যে’ ইত্যাদি শিল্পকর্ম চিত্রকলার জগৎকে সমৃদ্ধ করেছিল।
বলা বাহুল্য, ঠাকুর পরিবারের চিত্রশিল্পীরা প্রত্যেকেই ছিলেন স্বকীয়তায় উজ্জ্বল। শুধু চিত্র অঙ্কনে পারদর্শিতাই নয়, সকল গণ্যমান্য বাঙালি ও বিদেশি শিল্পরসিক ব্যক্তিত্বদের একত্রিত করে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের শিল্পকলার মেলবন্ধন ঘটানোও ছিল এই পরিবারের উদ্দেশ্য। তার ফল স্বরূপ ‘ইন্ডিয়ান সোসাইটি অফ ওরিয়েন্টাল আর্ট’, ‘কলাভবন’ প্রভৃতি প্রতিষ্ঠান চিত্রকলার জগতে পরবর্তী সময়ে পথ দেখিয়েছে।
10. ‘পট’ বলতে কী বোঝানো হয়? এই শিল্পধারাটির একটি পরিচয় মূলক বিবৃতি প্রস্তুত করো।
Ans: পট: দ্বাদশ ও ত্রয়োদশ শতকে বাংলায় পটচিত্র প্রসার লাভ করে। ‘পট’ শব্দটির আভিধানিক অর্থ চিত্র। কাগজ আবিষ্কৃত না হওয়া পর্যন্ত পট হিসেবে কাপড়ই ব্যবহৃত হত। পট কাপড় বা কাগজের যারই তৈরি হোক না কেন, তার উপর অঙ্কিত চিত্রই পটচিত্র। সুপ্রাচীন কাল থেকে এই পট ও পটশিল্পীদের উল্লেখ পাওয়া যায়। বৌদ্ধ ভিক্ষুরা বুদ্ধের জীবনী ও জাতকের গল্প অবলম্বনে পট-প্রদর্শন করত বলে জানা যায়। এ ছাড়াও সপ্তম শতকের গোড়ায় রচিত ‘হর্ষচরিত’-এ এই পটুয়াদের উল্লেখ পাওয়া যায়।
লোকশিল্পের উপকরণ: পট তৈরি হত কাপড়ের উপর আঠামিশ্রিত কাদাগোলা কিংবা গোবরমিশ্রিত কাদাগোলা লেপনের মাধ্যমে, তারপর সেটি শুকিয়ে গেলে তাতে খড়িমাটি লেপনের মাধ্যমে চিত্রাঙ্কনের উপযুক্ত করে রং দিয়ে এর উপর কাজ করা হত। পটশিল্পীরা পটুয়া, চিত্রকর প্রভৃতি নামে লোকসমাজে পরিচিত। লোকসংস্কৃতির এই বিশেষ রীতি ধর্মনিরপেক্ষ এক সংস্কৃতিবোধের পরিচয়বাহী।
পটশিল্পের ধারা: পটুয়ারা যে পটচিত্র নির্মাণ করতেন তাতে উপস্থাপিত হত লোককাহিনি কিংবা পুরাণাশ্রিত কাহিনি। আমাদের দেশে মূলত বেদে সম্প্রদায়ের লোকেরা গ্রামে গ্রামে ঘুরে গান গেয়ে সেই কাহিনি বর্ণনা করত। ধর্মীয়, সামাজিক অনুষ্ঠানের বিনোদন ছিল এই ‘পটের গান’। গায়েনরা গানগাইতেন চণ্ডীলীলা, রামায়ণ, মহাভারত, পদ্মাপুরাণ, গাজীর পট, সত্যপীরের কথা প্রভৃতি অবলম্বন করে। ভারতের বহুস্থানে এই পটচিত্রের অস্তিত্ব থাকলেও অবিভক্ত বাংলায় এর যে নিজস্ব শিল্পসুষমা তা অন্যত্র ছিল না। পূর্ববঙ্গের গাজীর পট ও সত্যপীরের পট, এপার বাংলার কালীঘাটের পট প্রভৃতি বিশেষ উল্লেখযোগ্য।
11. বাংলার চিত্রকলার ইতিহাসে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান আলোচনা করো। অথবা, বাঙালির চিত্রকলা চর্চার ধারায় অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান আলোচনা করো।
Ans: অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভ্রাতুষ্পুত্র অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন নব্যবঙ্গীয় চিত্ররীতির জনক তথা আধুনিক ভারতীয় চিত্রকলার পথপ্রদর্শক।
চিত্ররীতির প্রচার ও প্রসার: পাশ্চাত্য চিত্ররীতির প্রতি আকর্ষণে অবনীন্দ্রনাথ ইতালীয় শিল্পী গিলার্ডি, ইংরেজ শিল্পী পামার এবং জাপানি শিল্পী টাইকানের কাছে প্রথাগত ও নিয়মানুগ চিত্ররীতির শিক্ষা গ্রহণ করেন। শিল্পচর্চার প্রথম পর্যায়ে ড্রয়িং, প্যাস্টেল, অয়েল পেন্টিং, জলরং বিবিধ মাধ্যমে চিত্রাঙ্কন করেন। এরপর আইরিশ ইল্যুমিনেশন ও মোগল মিনিয়েচারের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার ফলে তাঁর শিল্পীসত্তায় দোলাচলতা দেখা দেয়। রবীন্দ্রনাথের পরামর্শে বৈঘ্নব পদাবলিকে বিষয় হিসেবে গ্রহণ করে তিনি আত্মবিকাশের পথ খুঁজে পান। চিত্রকলার জগতে প্রাচ্য শিল্পরীতিকে প্রাসঙ্গিক করে তুলেছিলেন অবনীন্দ্রনাথ। শুধু চিত্র অঙ্কনই নয় শিল্পকলার বিষয়ে যথাযথ জ্ঞান ও আগ্রহ বৃদ্ধি করার জন্য, তার যথাযথ প্রচারের জন্য কয়েকজন গণ্যমান্য বাঙালি ও ইংরেজ শিল্পরসিককে একত্রিত করে তিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ‘ইন্ডিয়ান সোসাইটি অফ ওরিয়েন্টাল আর্ট’।
শিল্পরীতির বৈশিষ্ট্য: জলরঙে ‘ওয়াশ’ পদ্ধতিতে ছবি আঁকার মাধ্যমে প্রকাশ ছবিকে বারবার ধুয়ে নতুন রূপ দিতেন অবনীন্দ্রনাথ। এ ছাড়া তাঁর ছবিতে পায় তাঁর শিল্পচর্চার দক্ষতা। যা জাপানি ‘ওয়াশ’ পদ্ধতির থেকে আলাদা। মোগল মিনিয়েচারের প্রভাবও ছিল। তাঁর ছবির মূল প্রাণশক্তি ছিল অনুভূতি গ্রাহ্যতা, যা রঙের পেলব ব্যবহারে বাত্ময় হয়ে উঠত।
শ্রেষ্ঠ চিত্রকলা: বৈঘ্নব পদাবলিকেন্দ্রিক বিখ্যাত চিত্র ‘শ্বেত অভিসারিকা’-র পাশাপাশি ‘কৃষ্ণলীলা সিরিজ’, ‘কচ ও দেবযানী’, ‘ভারতমাতা’, ‘অশোকের রানি’, ‘দেবদাসী’, ‘অন্তিম শয্যায় শাহজাহান’ প্রভৃতি চিত্রগুলিও তাঁর উল্লেখযোগ্য সৃষ্টি।
12. বাংলার চিত্রকলার ধারাপথে শিল্পী গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান আলোচনা করো।
Ans: গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভ্রাতুষ্পুত্র গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের চিত্রাঙ্কন শিক্ষাগ্রহণের সূচনা আর্ট স্কুলের শিক্ষক হরিচরণ বসুর কাছে হলেও সেই শিক্ষার সার্বিক বিকাশ ঘটে তাঁর পরিণত বয়সে। পাশ্চাত্য রীতির জলরং চিত্রাঙ্কনে তাঁর প্রভূত দক্ষতা থাকলেও পরে তিনি কালি, তুলি ও ওয়াশের কাজেও পরিণত হয়ে ওঠেন। এই ব্যাপারে তাঁর শিক্ষাগুরু ছিলেন জাপানি চিত্রকর টাইকান আর হিসিদা। এই পদ্ধতিতে তাঁর বারোটি কাকের ছবি নিয়ে টুয়েলভ ইংক স্কেচেস’ নামে একটি অ্যালবাম প্রকাশিত হয় ১৯০১ সালে। সিল্যুটে ছবি আঁকার মাধ্যমে আলো-ছায়ার রহস্যময়তা ফুটিয়ে তোলা ছিল গগনেন্দ্রনাথের ছবির আরেকটি বিশেষত্ব। এ ছাড়া তাঁর ছবিতে পশ্চিমি কৌণিকতা, ছবির স্পেসকে জ্যামিতিক রীতিতে ভেঙে নেওয়া ইত্যাদি স্বতন্ত্র বিষয়ের সুদক্ষ প্রয়োগ দেখা যেত। তাঁর চিত্র বাস্তবধর্মী হওয়ায় ফরাসি শিল্পপদ্ধতি ও উপাদানকে তিনি বঙ্গশিল্পে প্রয়োগ করতে উদ্যোগী হন।
তৎকালীন কলকাতার দুই শ্রেষ্ঠ সাময়িক পত্রিকা ‘প্রবাসী’ ও ‘মডার্ন রিভিউ’-তে ব্যঙ্গচিত্র এঁকে গগনেন্দ্রনাথ সুনাম অর্জন করেন। ‘নবহুল্লোড়’, ‘অদ্ভুতলোক’ প্রভৃতি গ্রন্থে তাঁর বহু ব্যঙ্গচিত্র মুদ্রিত হয়। তাঁর ওয়াশ পদ্ধতিতে আঁকা ছবিগুলি চিত্ররসিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। তিনি ‘বেঙ্গল আর্ট স্কুল’-এর প্রতিভাধর চিত্রকর। ইঙ্গ-বঙ্গ সমাজ, ব্যারিস্টারদের স্বদেশিয়ানা, চরকা বনাম পৃথিবীর সভ্যতা প্রভৃতি বিষয়ে আঁকা ব্যঙ্গচিত্রের জন্য একজন কার্টুন চিত্রকর হিসেবেও তিনি খ্যাত ছিলেন। বলা বাহুল্য, গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর আধুনিক ভারতীয় শিল্পের অন্যতম পথিকৃৎ।
13. বাংলা শিল্পকলার ইতিহাসে সুনয়নী দেবীর কৃতিত্ব আলোচনা করো।
Ans: সুনয়নী দেবীর কৃতিত্ব: বাংলার শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির পুরোধা ব্যক্তিত্ব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পরিবারে জন্মগ্রহণ এবং অসামান্য সাংস্কৃতিক পরিবেশ ঠাকুরবাড়ির কন্যা সুনয়নী দেবীকে রবীন্দ্রনাথের মতোই স্বশিক্ষিত শিল্পী করে তুলেছিল। তাঁর পিতা গুণেন্দ্রনাথ ঠাকুর, মাতা সৌদামিনী দেবী। সুনয়নী ছোটোবেলা থেকেই নিজেকে চিত্রচর্চায় নিযুক্ত করেন এবং প্রথাগতভাবে আঁকা না শিখেও চিত্রাঙ্কন শিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন। তিনিই প্রথম ভারতীয় নারী চিত্রশিল্পী। নব্যবঙ্গীয় শিল্পচর্চার খুব কাছাকাছি থেকেও সেই শিল্পরীতিকে অনুসরণ না করে সুনয়নী তাঁর অনুপ্রেরণা খুঁজে নিয়েছিলেন বাংলার চিরায়ত লৌকিক শিল্পের মধ্যে। তাই তাঁর ছবিতে দেখা যায় দৃঢ় স্বাজাত্যবোধ ও স্বদেশিয়ানা।
চিত্রকলাসমূহ: সুনয়নী দেবীর কোনো ছবিতেই রঙের নীচে পেনসিলের দাগ পাওয়া যায়নি। শুধু রংতুলির অভাবনীয় প্রয়োগে তিনি চিত্রাঙ্কন করেছেন। তিরিশ বছর বয়সে তিনি পাকাপাকিভাবে চিত্রাঙ্কনচর্চা শুরু করেন। অবনীন্দ্রনাথ তাঁকে কেবল প্রাথমিক দুই-একটি বিষয়ে শিক্ষা দেন, যেমন- মাপজোখ ও কাগজ ভিজিয়ে ছবি আঁকা। মূলত জলরং-এর মাধ্যমে কৃষ্ণলীলা ও বলরাম এবং ‘মহাভারত’-এর বিষয়ানুগ চিত্রচর্চাতেই তিনি মনোনিবেশ করেন। তাই তাঁর চিত্রের প্রধান বিষয় দেবদেবীর চিত্ররূপায়ণ। ‘ওরিয়েন্টাল সোসাইটি’র প্রদর্শনীতে কয়েকবার তাঁর ছবি প্রদর্শিত হয়। পুত্রের মাধ্যমে ইংল্যান্ডে তাঁর কয়েকটি ছবি প্রদর্শিত হলে ‘ভগবতী’ ছবিটি সেখানে বিক্রি হয়। মাদ্রাজ, ত্রিবাঙ্কুর ও লখনউ আর্ট গ্যালারিতে তাঁর কয়েকটি ছবি রক্ষিত আছে। ‘মা যশোদা’, ‘বাউল’, ‘নেপথ্যে’, ‘রাধা’, ‘অর্ধনারীশ্বর’, ‘দান’ তাঁর কয়েকটি বিখ্যাত চিত্র। পটশিল্পের ক্ষেত্রে কল্পনা ও বাস্তবতার সমন্বয়সাধন তাঁর শিল্পীজীবনের অনন্যকীর্তি।
14. বাংলা চিত্রকলার ইতিহাসে যামিনী রায়ের অবদান সম্পর্কে যা জানো লেখো।
Ans: যামিনী রায়ের অবদান: বাঁকুড়া জেলার বেলিয়াতোড় গ্রামে জন্মগ্রহণ করায় গ্রাম্য পরিবেশ, প্রকৃতি ও মৃৎশিল্পীদের সংস্পর্শ যামিনী রায়কে প্রভাবিত করে।
চিত্রশিল্প শিক্ষা: কলকাতা আর্ট কলেজে পড়াশোনার সময় ব্রিটিশ অ্যাকাডেমির স্বাভাবিকতাবিরোধী রীতি, ফরাসি ইমপ্রেশনিস্ট শিল্পচর্চা শুরু করলেও মৌলিকতার জন্য পটচিত্রে আকৃষ্ট হন।
চিত্রশিল্পচর্চা: বাংলার লোকশিল্পের প্রতি গভীর আকর্ষণে যামিনী রায় মেদিনীপুর, বেলিয়াতোড়, কালীঘাট প্রভৃতি স্থান থেকে পট সংগ্রহ করে চিত্রভাষা অর্জন করেন। ভারতীয় চিত্রকলায় তাঁর ছবির ভাব-বিষয়-অঙ্কনরীতি সমকালীন অন্যান্য শিল্পীদের থেকে স্বতন্ত্র ছিল।
চিত্রবৈশিষ্ট্য: যামিনী রায়ের ছবির বিশেষত্ব হল তা, সমতল জলরঙে আঁকা। তাঁর চিত্রিত ছবিতে মানুষজন, পশুপাখির অবস্থান পূর্ণ পট জুড়ে। এ ছাড়া চরিত্রদের আঁকার ক্ষেত্রে বর্ডারের ব্যবহার করতেন তিনি।
ছবির বিষয়: যামিনী রায়ের ছবির বিষয় ছিল রামায়ণ-মহাভারতের নারী ও পুরুষ, জিশু, আদিবাসী সমাজ, বাউল-বৈষ্ণব, পশুপাখি ইত্যাদি।
১৯৫৫ সালে চিত্রকলায় অসামান্য অবদানের জন্য যামিনী রায় ‘পদ্মবিভূষণ’ উপাধিতে সম্মানিত হন।
15. চিত্রকলাচর্চায় শিল্পাচার্য নন্দলাল বসুর স্থান নিরুপণ করো।
Ans: চিত্র কলাচর্চায় নন্দলাল বসুর অবদান: প্রথমে দ্বারভাঙায় ও পরে কলকাতার সেন্ট্রাল কলেজিয়েট স্কুলে নন্দলাল বসুর বিদ্যার্জন। শিশুকালে কুমোরদের দেখে মূর্তি গড়ে চিত্রকলায় তাঁর হাতেখড়ি। পরবর্তী সময়ে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও হ্যাভেল সাহেবের সহায়তায় আর্ট স্কুলে ভরতি হন।
চিত্রচর্চা ও কর্মজীবন: রবীন্দ্রনাথের আহ্বানে ১৯২০ সালে তিনি শান্তিনিকেতনের কলাভবনে যোগ দেওয়ার পর থেকেই এই প্রতিষ্ঠান শিল্পশিক্ষায় সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে। ভারতীয় শিল্পশিক্ষায় আউটডোর স্টাডি বা নেচার স্টাডির সূচনা তাঁর হাত ধরেই। গুরু অবনীন্দ্রনাথের স্বচ্ছ জলরঙের ওয়াশ পদ্ধতির পাশাপাশি ঘন জলরঙের টেম্পেরার কাজও তিনি শুরু করেন। ছবি আঁকার ক্ষেত্রে তিনি চারপাশের বহমান বিষয়কে অধিক গুরুত্ব দিতেন। নন্দলাল বসুর ছবিতে গ্রামীণ প্রকৃতি, সাধারণ দরিদ্র মানুষের জীবন সুনিপুণ দক্ষতার সঙ্গে চিত্রায়িত হয়েছে।
চিত্রসম্ভার: শান্তিনিকেতনে যোগ দেওয়ার আগে তিনি ‘সিদ্ধিদাতা গণেশ’, ‘সিদ্ধার্থ’, ‘সতী’, ‘কর্ণ’ ইত্যাদি ছবি আঁকেন। কলাভবনে যোগ দেওয়ার পরে দিগন্তবিস্তৃত প্রান্তর, খোয়াই, মাঠে বিচরণরত মোষ ইত্যাদি ছিল তাঁর ছবির বিষয়। তাঁর উল্লেখযোগ্য কীর্তি ‘সহজপাঠ’-এর অলংকরণ, ‘গান্ধিজি’ ইত্যাদি। ভারতীয় সংবিধানের অলংকরণ, ভারতরত্ন ও পদ্মশ্রী পুরস্কারের নকশা তাঁর অনবদ্য কীর্তি। তিনি ১৯০৯ সালে অজন্তা গুহাচিত্রের নকল করার উল্লেখযোগ্য কাজ করেন। ‘শিল্পচর্চা’ ও ‘রূপাবলী’ তাঁর দুটি উল্লেখযোগ্য শিল্পগ্রন্থ।
শুধু নিজস্ব শিল্পচর্চাই নয় নন্দলাল শিক্ষক হিসেবেও ছিলেন অনন্য। তাঁর ছাত্রদেরই তিনি উৎসাহ দিতেন সাধারণ মানুষের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের জন্য, যা পরবর্তীতে তাদের শিল্পগুণকে সমৃদ্ধ করে।
16. বাংলা শিল্পকলার ইতিহাসে শিল্পী অতুল বসুর কৃতিত্ব আলোচনা করো।
Ans: শিল্পকলায় অতুল বসুর কৃতিত্ব: চিত্রকর অতুল বসু ময়মনসিংহে জন্মগ্রহণ করেন। ভারতীয় শিল্পীমহলে তিনি এক অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রতিকৃতি শিল্পী। মাত্র বারো বছর বয়সে তিনি কলকাতার টেকনিক্যাল স্কুলে আঁকা শিখতে আসেন। পরে ‘জুবিলি আর্ট অ্যাকাডেমি’ ও ‘গভর্নমেন্ট স্কুল অফ আর্টস্’-এর ছাত্র হিসেবে তিনি অবনীন্দ্রনাথ ও পারসি ব্রাউনের সান্নিধ্য লাভকরেন। মাত্র ২০ বছর বয়সে স্নাতক হয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘গুরুপ্রসন্ন বৃত্তি’ লাভ করে লন্ডনের ‘রয়াল অ্যাকাডেমি’র শিক্ষার্থী হন। সেখানে তাঁর বিরল কৃতিত্ব ‘আইভরি’ পুরস্কার লাভ। লন্ডনে তিনি ছিলেন ‘সিকার্ট’-এর শিষ্য। ১৯৩৩ সালে দেশে ফিরে তিনি ‘অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টস্’ প্রতিষ্ঠার মূল উদ্যোক্তা হন। তিনি পাশ্চাত্যরীতিতে ছবি আঁকতেন। প্রতিকৃতি শিল্পী হিসেবেই তিনি অধিক খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। তাঁর অজস্র শিল্পসম্ভারের মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি হল স্কেচ-এ অঙ্কিত স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়-এর আবক্ষ প্রতিমূর্তি ‘রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার’। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পটভূমিকায় নোয়াখালি অভিযানের প্রেক্ষিতে ‘গান্ধিমূর্তি’ রচনাও তাঁর একটি উল্লেখযোগ্য শিল্পনির্মাণ। কলকাতার ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল ও লন্ডনের বাকিংহাম প্যালেসে তাঁর আঁকা বহু প্রতিকৃতি রক্ষিত আছে। ১৯৪৩ সালে দুর্ভিক্ষের প্রেক্ষাপটে আঁকা চিত্রগুলি তাঁর মূল্যবান কাজ। নিসর্গচিত্রেও তাঁর সমান দক্ষতা ছিল। চিত্রকর্মই ছিল তাঁর একমাত্র জীবিকা। তাঁর রচিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হল ‘Verified Perspective’, যার প্রকাশক কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়।
17. পটের প্রকার ও বিষয়বৈচিত্র্য লেখো।
Ans: ‘পট’ বাংলা লোকশিল্পের মূল্যবান সম্পদ। ‘পট’ শব্দের অর্থ চিত্র। সপ্তম শতকের গোড়ায় রচিত বাণভট্টের ‘হর্ষচরিত’ গ্রন্থে পটুয়াদের কথা আছে। ষোড়শ শতকের মঙ্গল কাব্যধারার খ্যাতিমান কবি মুকুন্দরামের কাব্যে পটের উল্লেখ আছে। বেদে সম্প্রদায়ের লোকেরা পট পরিবেশন করত। পূর্ববঙ্গে গাজীর পট ছিল অনবদ্য। উনিশ শতকে বাংলায় প্রসিদ্ধি পেয়েছিল প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য চিত্রশৈলীতে সমৃদ্ধ কালীঘাটের পট।
বিষয়বৈচিত্র্য অনুসারে সংগৃহীত পটগুলিকে ভাগ করা হয়ে থাকে যমপট, গাজীপট, সত্যপীরের পট, চকসূদন পট, পাবুজী পট, কালীঘাট পট, সাহেব পট, হিন্দুপ্রাণ পট ইত্যাদি। এ ছাড়াও লোকসংস্কৃতি বিশারদরা পটকে ছয় ভাগে ভাগ করেছেন। সেগুলি হল-(ক) রাজনৈতিক পট, (খ) বিষয় নিরপেক্ষ পট, (গ) ধর্মীয় পট, (ঘ) সামাজিক পট, (ঙ) ঐতিহাসিক পট এবং (চ) পৌরাণিক পট।
(ক) রাজনৈতিক পট: রাজনৈতিক বিষয়কে আশ্রয় করে এই ধরনের পট গড়ে উঠেছে। এই পটে দেশ ও কালচেতনার প্রবাহ লক্ষ করা যায়।
(খ) বিষয় নিরপেক্ষ পট: নর ও নারীর ছবি ও শিল্পচিত্র দেখা যায় এই শ্রেণির পটে। বিভিন্ন বিষয় আশ্রয় করে এই ধরনের পট গড়ে উঠেছে।
(গ) ধর্মীয় পট: বিভিন্ন ধর্মের মাহাত্ম্য, অলৌকিক ঘটনা, ধর্মগুরুদের বীরত্বের কথা এই পটে প্রকাশ পেয়েছে। গাজীপট এই শ্রেণির পটের উজ্জ্বল উদাহরণ।
(ঘ) সামাজিক পট: সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য এই ধরনেরপট চিত্রিত হয়েছে। পোলিও টীকাকরণ, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, বৃক্ষরোপণ সম্পর্কিত বিষয় হল এই ধরনের পট।
(ঙ) ঐতিহাসিক পট: ঐতিহাসিক ঘটনাবলি এই ধরনের পটের উপজীব্যবিষয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, আজাদ-হিন্দ-বাহিনি ও নেতাজী সুভাষচন্দ্র সম্পর্কিত উল্লেখযোগ্য ঐতিহাসিক পট।
(চ) পৌরাণিক পট: পৌরাণিক গল্প ও গাথা এই শ্রেণির পটের বিষয়। রাবণ বধ, রাজা হরিশচন্দ্র, সাবিত্রী ও সত্যবান, মনসামঙ্গল, চণ্ডীমঙ্গল প্রভৃতি পট পৌরাণিক পট হিসেবে পরিচিত।
18. ভারতীয় তথা বাংলা চিত্রকলার ইতিহাসে ‘ইন্ডিয়ান সোসাইটি অফ ওরিয়েন্টাল আর্ট’ কী ভূমিকা পালন করেছিল?
Ans: ভারতীয় তথা বাংলা চিত্রকলার ইতিহাসে ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রতিষ্ঠিত ‘ইন্ডিয়ান সোসাইটি অফ ওরিয়েন্টাল আর্ট’ ছিল একটি উল্লেখযোগ্য চিত্র শিল্প-শিক্ষাঙ্গন। শহর কলকাতার বিদগ্ধ বাঙালি ও ইংরেজি শিল্পরসিককে সংঘবদ্ধ করে যে শিল্পসভার আয়োজন করেছিল তা পরবর্তীতে ‘ইন্ডিয়ান সোসাইটি অফ ওরিয়েন্টাল আর্ট’ হিসেবে স্বীকৃতি লাভকরেছিল।
প্রধান মুখ: এই শিল্পাঙ্গনের প্রধান বাঙালি মুখ ছিল অবনীন্দ্রনাথঠাকুর, গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্যারীমোহন মুখোপাধ্যায়, বর্ধমানের রাজা বিজয়চাঁদ মেহেতাব, নাটোরের মহারাজা জগদীন্দ্রনাথ রায় প্রমুখ। পাশ্চাত্য শিল্পসংস্কৃতির বাহক লর্ড কিচেনার ও নর্ম্যান ব্রান্ট এই প্রতিষ্ঠানে মুখ্য কর্মসঞ্চালক হিসেবে ভূমিকা পালন করেছেন। শিল্পাচার্য নন্দলাল বসু, গিরিধারী মহাপাত্র, শৈলেন্দ্র দে, ক্ষিতীন্দ্রনাথ মজুমদার প্রমুখ ছিলেন এই প্রতিষ্ঠানের চিত্রশিল্পকলা গুরু।
উদ্দেশ্য: (১) এই শিল্প-শিক্ষা সংগঠনের মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল এ দেশীয় জনগণের মধ্যে প্রাচ্য শিল্পকলা বিষয়ে জ্ঞান সঞ্চার ও আগ্রহ সৃষ্টি করা। (২) শিল্পভাবনাকে সমন্বয় করে আধুনিক শৈলী সৃজনে অনুপ্রাণিত করতে উৎসাহিত করেছিল এই শিল্পাঙ্গন।
মূল্যায়ন: বাঙালির চিত্রকলার বিকাশ ও সমৃদ্ধি পর্বের তাৎপর্যবহ শিল্প-শিক্ষাঙ্গন ছিল ‘ইন্ডিয়ান সোসাইটি অফ ওরিয়েন্টাল আর্ট’। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের শিল্প আঙ্গিকে স্বতন্ত্র ঘরানার প্রতিষ্ঠা করেন মূল্যবোধ ও দৃঢ় প্রত্যয়ের সাথে। ভাস্কর দেবীপ্রসাদ রায়চৌধুরী এই শিক্ষাঙ্গনের পড়ুয়া হিসেবে প্রথিতযশা হয়ে উঠেছিলেন পরবর্তীতে।
19. বাঙালির চিত্রকলাচর্চার ধারায় অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান আলোচনা করো।
Ans: অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর-চিত্রশিল্পে অবদান: বাঙালির চিত্রকলাচর্চার ধারায় অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্থান সমকালীন শিল্পীদের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তিনি ড্রয়িং, প্যাস্টেল, অয়েল পেন্টিং ও জলরঙের কাজ শেখেন উনিশ শতকের শেষ দশকে। তাঁর শিক্ষক হিসেবে প্রথম দিকে ছিলেন গিলার্ডি ও পরে ব্রিটিশ চিত্রকর চার্লস পামার।
প্রশংসিত চিত্রকলা: তাঁর প্রথম দিকের শিল্পকলা ‘ঋতুসংহার’, ‘সুজাতা’, ‘বুদ্ধ’, ‘বজ্রমুকুট’, ‘কৃষ্ণলীলা’ প্রভৃতি বিষয়ের ছবিতে ভারতীয় রীতি ও আঙ্গিকের অনুসরণের চেষ্টা লক্ষ করা যায়। তাঁর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ও বুদ্ধিদীপ্ত কাজ হল ‘নির্বাসিত যক্ষ’, ‘ভারতমাতা’, ‘শাজাহানের মৃত্যু’, ‘কবিকঙ্কণ চন্ডী’, ‘সাহাজাদপুরের দৃশ্যাবলি’, ‘আরব্যোপন্যাসের গল্প’, ‘ওমর খৈয়াম চিত্রাবলি’, ‘শ্বেত অভিসারিকা’ ইত্যাদি। তাঁর ছবি প্রদর্শিত হয় লন্ডন, প্যারিস এবং জাপানে। তিনি আর্ট কলেজের অধ্যক্ষ হন ১৮৯৮ খ্রিস্টাব্দে। ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে তিনি কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন বাগীশ্বরী অধ্যাপক হিসেবে, শেষজীবনে হন বিশ্বভারতীর আচার্য।
গ্রন্থ রচনা: তাঁর ‘বাগীশ্বরী শিল্প প্রবন্ধাবলী’ এবং ছোটো ও বড়োদের জন্য বহু গ্রন্থ অত্যন্ত আদৃত হয়েছে। অবনীন্দ্রনাথকে কেন্দ্র করেই ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে ‘ইন্ডিয়ান সোসাইটি অব ওরিয়েন্টাল আর্ট’ প্রতিষ্ঠিত হয়। হ্যাভেলের সঙ্গে মিলিত হয়ে তিনি আধুনিক ভারতীয় রূপকলার চর্চাকে পাশ্চাত্যের বন্ধন থেকে মুক্ত করে প্রাচ্যধারায় সমৃদ্ধ করেন।
20. বাঙালির চিত্রকলায় জোড়াসাঁকো ঠাকুর পরিবারের অবদান সংক্ষেপে আলোচনা করো।
Ans: জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির চিত্রকলা: বাঙালির চিত্রকলায় ঠাকুরবাড়ির চিত্রকলা এক বিশিষ্ট আসন দাবি করে। এই পরিবারের অন্তত তিনজন প্রবাদপ্রতিম ব্যক্তিত্ব-গগনেন্দ্রনাথ, অবনীন্দ্রনাথ ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাঙালির চিত্রকলার ইতিহাসে চিরস্থায়ী কীর্তি রেখেছেন।
অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর: তাঁর ‘কৃষ্ণলীলা’, ‘ঋতুসংহার’, ‘বুথ’, ‘সুজাতা’ প্রভৃতি সিরিজের ছবিতে ভারতীয় আঙ্গিক দেখা যায়। জাপানি শিল্পী টাইকানের প্রভাবে তিনি ‘ওমর খৈয়াম’ চিত্রাবলি আঁকেন। শেষজীবনে ‘কাটম-কুটুম’ নামে বিখ্যাত অঙ্কনরূপ সৃষ্টি করেন।
গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর: গুণেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছেলে গগনেন্দ্রনাথ জাপানি চিত্রকর টাইকান ও হিসিদার কাছে জাপানি চিত্রপদ্ধতি শেখেন। ফরাসি চিত্রধর্মিতা প্রয়োগ তাঁর বিশেষ কীর্তি। প্রবাসী ও মডার্ন রিভিউ পত্রিকায় তিনি প্রচুর কার্টুন ও ব্যঙ্গচিত্র আঁকেন। বারোটি কাকের ছবি নিয়ে ‘Twelve Ink Sketches’ তাঁর জীবনের স্মরণীয় কীর্তি। এ ছাড়াও তিনি কার্টুন বা ব্যঙ্গচিত্র অঙ্কন করেছেন।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর: রবীন্দ্রনাথের আঁকা আড়াই হাজারের। অধিক চিত্র ভারতীয় তথা বাঙালির চিত্রকলার সম্পদ। প্যাস্টেল, রঙিন খড়ি, জলরং, ফুল-লতাপাতা-গাছের রস থেকে তিনি রং সংগ্রহ করতেন। তাঁর অনেক ছবির মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য হল ‘সে’, ‘খাপছাড়া’ বইয়ের ছবি, ‘অহল্যা হল পাষাণী’, আবু হোসেন’ প্রভৃতি। প্রাত্যহিক জীবন তার রেখায় বারবার জীবন্ত হয়েছে।
তাই বলা যায়, বাঙালির চিত্রকলায় জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির প্রভাব তাই অনস্বীকার্য।
21. বাংলায় চিত্রকলাচর্চার প্রসারে ‘দি ইন্ডিয়ান সোসাইটি অব ওরিয়েন্টাল আর্ট’-এর ভূমিকা আলোচনা করো।
Ans: ‘দি ইন্ডিয়ান সোসাইটি অব ওরিয়েন্টাল আর্ট’: বিংশ শতকে ইউরোপিয়ানদের শিল্পচর্চা দেখে উৎসাহিত হয়ে ভারতীয় পদ্ধতিতে শিল্পশিক্ষার জন্য একটি মহতী উদ্যোগ দেখা যায়। এর ফলস্বরূপ ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে ‘প্রাচ্যসভা’ প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তীকালে এটিই ‘দি ইন্ডিয়ান সোসাইটি অব ওরিয়েন্টাল আর্ট’ নামে পরিচিতি লাভ করে।
‘দি ইন্ডিয়ান সোসাইটি অব ওরিয়েন্টাল আর্ট’-এর ভূমিকা: এই সোসাইটির প্রথম সভাপতি ছিলেন লর্ড কিচেনার এবং যুগ্মসচিব ছিলেন অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর। সোসাইটির বার্ষিক প্রদর্শনীতে গগনেন্দ্রনাথ, অবনীন্দ্রনাথ প্রমুখের আঁকা ছবি ও দেশজ শিল্পসম্ভার প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হত। ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে এটি সরকারের অধীনে আসে এবং সুরেন্দ্রনাথ ঠাকুরের উদ্যোগে সোসাইটির একটি আর্ট স্কুল খোলা হয়। সেই স্কুলে নন্দলাল বসু, শৈলেন্দ্রনাথ দে, ক্ষিতীন্দ্রনাথ মজুমদার প্রমুখ প্রথিতযশা শিল্পী ছবি আঁকা ও মূর্তি বানানোর শিক্ষাদান করতে থাকেন। জেমস কাজিনস, উডরক, ভগিনী নিবেদিতা, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রমুখের পৃষ্ঠপোষকতায় এই সোসাইটি ভারতীয় চিত্ররচনা পদ্ধতির প্রকাশ ও বিকাশ ঘটায়। বাংলার চিত্রকলাচর্চার প্রসারে ‘দ্য ইন্ডিয়ান সোসাইটি অব ওরিয়েন্টাল আর্ট’-এর ভূমিকা যে অত্যন্ত ব্যাপক এবং সুদূরপ্রসারী হয়েছিল তা নিঃসন্দেহে বলা চলে।
22. বাংলা চিত্রকলার ইতিহাসে শিল্পী গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান আলোচনা করো।
Ans: গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর: বেঙ্গল আর্ট স্কুলের বিখ্যাত চিত্রকর ও কার্টুনিস্ট হিসেবে গগনেন্দ্রনাথের পরিচিতি সর্বাধিক। তিনি বাঙালি শৈলীতে ছবি আঁকার ইতিহাসে কিউবিজমের প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যঙ্গচিত্র অঙ্কনে প্রথিতযশা শিল্পী। গগনেন্দ্রনাথ ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত ‘ইন্ডিয়ান সোসাইটি ফর ওরিয়েন্টাল আর্ট’-এর তিনি প্রতিষ্ঠাতা-সদস্য।
চিত্রকলায় স্বাতন্ত্র্য: গগনেন্দ্রনাথ হরিচরণ বসু, জাপানি শিল্পী টাইকান এবং হিসিদার কাছে ছবি আঁকার পাঠ নেন। এঁদের কাছ থেকে তিনি ইউরোপীয় পদ্ধতিতে জলরং, জাপানি তুলি-কালি ও ওয়াশ পেইন্টিং শিখেছিলেন। ছবিগুলি ছিল অপরূপ প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলি, কালো রঙের পটভূমে সোনার জলের রেখায় হিমালয় ও কাঞ্চনজঙ্ঘার ছবি, নানা টেকনিকের মিশ্রণে ব্যবহৃত নানা ছবি আর অসংখ্য কার্টুন। তাঁর আঁকা ব্যঙ্গচিত্রের সংকলন তিনটি। তার মধ্যে দুটি তাঁর নিজের উদ্যোগে নিজের লিথোপ্রেস থেকে মুদ্রিত (১৯১৭)। সেগুলি হল ‘বিরূপ বজ্র’ ও ‘অদ্ভুত লোক’। পরে আর-একটি সংকলন ‘নব হুল্লোড়’ বেরোয় থ্যাকার স্পিঙ্ক থেকে। ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি ‘ইন্ডিয়ান সোসাইটি ফর ওরিয়েন্টাল আর্ট’-এর সম্পাদক হন। এ ছাড়াও বাংলার কারুশিল্প প্রসারের উদ্দেশ্যে স্থাপিত ‘বেঙ্গল হোম ইন্ডাস্ট্রিস্ অ্যাসোসিয়েশন’-এর সম্পাদক হন তিনি।
23. রবীন্দ্রনাথের চিত্রকলা সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।
অথবা, বাঙালির চিত্রকলার ইতিহাসে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিশিষ্টতা নির্ণয় করো।
Ans: সূচনা: বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চিত্রকর হয়ে-ওঠা বিচিত্র হলেও, বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়। আড়াই হাজার ছবির স্রষ্টা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাল্যে বা যৌবনে ছবি এঁকেছেন অনেকটা নেশার বশেই। সেই আঁকার মধ্যে ধারাবাহিকতা, সৃজনের বেগ কিংবা প্রকাশের জন্য কোনো আকুলতা ছিল না।
চিত্রকলায় বিশিষ্টতা: ১৯২০-১৯২১ খ্রিস্টাব্দ প্যারিসে ডাডাপন্থী, স্যুররিয়ালিস্টিক এবং আরও নানা ধরনের ছবির প্রদর্শনী দেখেছেন তিনি। এমনকি এর পরের বছর কলকাতায় পাউল ক্লে, ক্যান্ডিনস্কি, ফাইনিঙ্গার প্রমুখ পাশ্চাত্য আধুনিক শিল্পীদের ছবির প্রদর্শনীর উদ্যোক্তা ছিলেন রবীন্দ্রনাথ। পল ভালেরি ও আঁদ্রে জিদ-এর ভাষায় আর্ট আন্দোলনের ভিতরে নতুনকে পাওয়ার যে চেষ্টা, তাকে সহজেই উদ্ঘাটন করেছেন রবীন্দ্রনাথ। নানা ধরনের ছবি এঁকেছেন রবীন্দ্রনাথ-নরনারী, জীবজন্তু, সরীসৃপ আর দ্বিতীয়টিতে পাখির ঠোঁট, ডানা, জন্তুর থাবা ইত্যাদি। পেনসিল, প্যাস্টেল বা রঙিন খড়ি, ব্লটিং পেপার, জলের ভেষজ রং, তেলরং, ড্রাই পেস্ট, এইচিং ইত্যাদির কাজে তিনি দক্ষতা অর্জন করেছিলেন। শুধুমাত্র কলম দিয়েও তিনি নিপুণতার সঙ্গে ছবি এঁকেছেন।
প্রশংসিত চিত্রকর্ম: তাঁর বিখ্যাত ছবিগুলির মধ্যে ‘আত্মপ্রকৃতি, ‘কচ ও দেবযানী’, ‘বৌদ্ধভিক্ষু’, ‘অহল্যা হল পাষাণী’, ‘শেষ নিশ্বাস’ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। বাংলা কবিতা, গান, নাটক ইত্যাদি বাংলা সংস্কৃতির বিভিন্ন ধারার মতোই বাংলা চিত্রকলাতেও তিনি নবতম মাত্রা যোগ করেছেন।
24. চিত্রশিল্পী বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায়ের চিত্রকলাচর্চা সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো।
Ans: সূচনা: বিখ্যাত ভাস্কর ও চিত্রশিল্পী রামকিঙ্কর বেইজের শান্তিনিকেতনের সহপাঠী ছিলেন বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায়। জন্ম কলকাতার বেহালায়, ৭ ফেব্রুয়ারি ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দে। শৈশবে তিনি যেমন রুগ্ধ ছিলেন, তেমনই তাঁর দৃষ্টিশক্তিতেও প্রতিবন্ধকতা ছিল। চিত্রকলায় তাঁর অবদান হল-
অনুপ্রেরণা: শিল্পসৃষ্টিতে তিনি কাজে লাগিয়েছিলেন শিল্প ইতিহাস সম্পর্কিত তাঁর গভীর প্রজ্ঞাকে। তাঁর প্রিয় শিল্পী ছিলেন জিয়োতো, ম্যাসাচিও প্রমুখ। এ ছাড়া তাঁর পছন্দ ছিল চিন-জাপানের চিত্রকলাও। তিনি অবনীন্দ্রনাথ-নন্দলালের প্রিয় শিষ্য ছিলেন।
প্রশংসিত চিত্রশিল্প: তাঁর ছবির উল্লেখযোগ্য বিষয় হল ‘নির্জনতা’, যা ছড়িয়ে আছে তাঁর অসংখ্য ছবিতে। তাঁর ‘হাসি’, ‘বীরভূমের গ্রীষ্ম দৃশ্য’, ‘Artist In Studio’, ‘নারী’, ‘The Tree Lover’। এ ছাড়া তাঁর শ্রেষ্ঠ ভিত্তিচিত্রটি (মুরাল) হল বিশ্বভারতীর হিন্দি ভবনের দেয়ালে আঁকা ৭৭ ফুট বিস্তৃত, ৮ ফুট দীর্ঘ বিরাট ছবিটি। ছবিটি ‘মধ্যযুগের সন্তগণ’ নামে পরিচিত।
সাহিত্যসৃষ্টি: বিনোদবিহারীর লেখা বিখ্যাত গ্রন্থ হল ‘ চিত্রকর’, ‘কর্তাবাবা’ (আত্মজীবনীমূলক)।
মূল্যায়ন: তাঁর ছবির বিষয়বৈচিত্র্য, অঙ্কন পদ্ধতি, মাধ্যম সকলের থেকে আলাদা। বাংলার চিত্রকলাচর্চার ইতিহাসে বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায় তাঁর অসামান্য কাজের নিরিখেই চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায় তাঁর গুরু বিনোদবিহারীকে নিয়ে নির্মাণ করেছেন ‘The Inner Eye’ নামে একটি তথ্যচিত্র।
25. ‘কালীঘাট পট’ বলতে কী বোঝ ? এগুলির বিষয় ও শৈলী সম্পর্কে পরিচয় দাও।
অথবা, বাংলা পটচিত্রের ইতিহাসে ‘কালীঘাট-এর পট’-এর গুরুত্ব ও অবস্থান সম্পর্কে আলোচনা করো।
Ans: ভূমিকা: কলকাতার কালীঘাট মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয় ১৭৯৮ খ্রিস্টাব্দে। এই উপলক্ষ্যে সেখানে শুরু হয় ভক্তবৃন্দের যাতায়াত। ক্রমে ক্রমে সেখানে আগমন ঘটে নিম্নবর্গের কিছু হিন্দু আর মিশ্রজীবী মানুষের, যাঁরা পটুয়ারূপে গণ্য হন। তাঁদের শিল্পচর্চায় মুখাবয়ব, মূর্তির স্থানে প্রাধান্য পায় অঙ্কন। এভাবেই জন্ম নেয় কালীঘাটের পট।
কালীঘাটের পটশৈলী: কালীঘাটের পট একসময়ে নিকৃষ্ট চিত্রকর্ম বলে বিবেচিত হত, পরে অবশ্য এই দৃষ্টিভঙ্গি পালটায়। কালক্রমে কালীঘাটের পটচিত্রে বদলে যায় বিষয়; তাতে চিত্রিত হতে থাকে সমকালীন জীবনও। কালীঘাট পটে কোনো কোনো বিদেশি চিত্রসমালোচক ব্রিটিশ চিত্ররীতির বহুল প্রভাব লক্ষ করেছেন। তবে ভিন্ন মত অনুসারে, অনেকেই ভারতীয় চিত্রকলার প্রাচীনত্ব উল্লেখ করে কালীঘাট পটকে মৌলিক বলেই মনে করেন।
পটের বিষয়: এই পটের বিষয় মূলত ধর্মকেন্দ্রিক, যেমন কালী ছাড়াও দুর্গা, জগদ্ধাত্রী, গণেশজননী, শিব, পার্বতী, গণেশ প্রভৃতি দেবদেবীর ছবি এতে দেখা যায়। এ ছাড়া ছিল বাবু কালচারের নানা নমুনা, যার উল্লেখ পাওয়া যায় টেকচাঁদ ঠাকুরের ‘আলালের ঘরের দুলাল’ কিংবা কালীপ্রসন্ন সিংহের ‘হুতোম প্যাঁচার নকশা’-তে। আর ‘বারবণিতা’, ‘গোলাপসুন্দরী’ প্রভৃতির উজ্জ্বল ছবিও লক্ষ করা যায়। কালীঘাটের পটচিত্রের শিল্পীদের মধ্যে ইন্দ্রমোহন ঘোষ, বলরাম দাস, কার্তিক চিত্রকরের নাম উল্লেখযোগ্য। এঁরাই কালীঘাটের পটচিত্রের তিনটি ধারার জন্মদাতা।
(১২) বাংলা চিত্রকলার ইতিহাসে সুনয়নী দেবী স্মরণীয় কেন? তাঁর কয়েকটি চিত্রের নাম লেখো। ৩+২=৫
উত্তর: বাংলা চিত্রকলার ইতিহাসে সুনয়নী দেবীর প্রভাব: স্বশিক্ষিতা স্বশৈলীতে অনবদ্য চিত্রভাষার রূপকার হলেন জোড়াসাঁকো ঠাকুর পরিবারের গগন ঠাকুর ও অবন ঠাকুরের বোন সুনয়নী দেবী। প্রথম ভারতীয় মহিলা চিত্রশিল্পী হিসেবে তিনি স্বনামধন্যা শিল্পী। তাঁর চিত্রচর্চার অনুপ্রেরণা ছিল দাদা গগনেন্দ্রনাথ ও অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তিনি নব্যবঙ্গীয় চিত্ররীতিতে দাদার অনুসারী না হয়ে নিজস্ব ঘরানায় লোকশিল্পকে আশ্রয় করে ফুটিয়ে তুলেছেন তাঁর শিল্পশৈলী। তাঁর শিল্পে প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে স্বদেশিয়ানা ও স্বাজাত্যভিমান।প্রধানত জলরঙের মাধ্যমে অপূর্ব ভঙ্গিমায় কৃষ্ণলীলা ও রামায়ণ মহাভারতের চরিত্র অবলম্বন করেই তিনি অনবদ্য চিত্রভাষা রচনা করেছেন। প্রথাগত ছকের বাঁধ ভেঙে শিল্পকলায় অভিনবত্ব প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে চিত্রকলা জগতে বিপ্লব ঘটানোর জন্যই তিনি আজও স্মরণীয়। তাঁর চিত্র-চিত্রণের বিশেষত্বের মধ্যে প্রধান রূপে প্রতীয়মান হয়ে উঠেছে রং, তুলি ও রেখার অপূর্ব বন্ধন। মূলত জলরঙে তাঁর শিল্পভাবনার বৈচিত্র্যকে তিনি প্রকাশ করেছেন।
সুনয়নী দেবীর আঁকা উল্লেখযোগ্য চিত্র: তাঁর আঁকা উল্লেখযোগ্য চিত্রগুলির মধ্যে অন্যতম হল-‘মা-যশোদা’, ‘বাউল’, ‘নেপথ্যে’, ‘রাধা’, ‘অর্ধনারীশ্বর’, ‘দান’, ‘ভগবতী’ প্রভৃতি।
HS Class 12 3rd Semester (Third Unit Test) Question and Answer :
- HS Class 12 Bengali 3rd Semester Question Click here
- HS Class 12 English 3rd Semester Question Click here
- HS Class 12 Geography 3rd Semester Question Click here
- HS Class 12 History 3rd Semester Question Click here
- HS Class 12 Education 3rd Semester Question Click here
- HS Class 12 Political Science 3rd Semester Question Click here
- HS Class 12 Philosophy 3rd Semester Question Click here
- HS Class 12 Sociology 3rd Semester Question Click here
- HS Class 12 Sanskrit 3rd Semester Question Click here
- HS Class 12 All Subjects First Semester Question Click here
HS Class 12 4th Semester (Forth Unit Test) Question and Answer :
- HS Class 12 Bengali 4th Semester Question Click here
- HS Class 12 English 4th Semester Question Click here
- HS Class 12 Geography 4th Semester Question Click here
- HS Class 12 History 4th Semester Question Click here
- HS Class 12 Education 4th Semester Question Click here
- HS Class 12 Political Science 4th Semester Question Click here
- HS Class 12 Philosophy 4th Semester Question Click here
- HS Class 12 Sociology 4th Semester Question Click here
- HS Class 12 Sanskrit 4th Semester Question Click here
- HS Class 12 All Subjects 4th Semester Question Click here
Class 12 All Subject Suggestion – উচ্চমাধ্যমিক সমস্ত বিষয়ের সাজেশন
আরোও দেখুন:-
HS Bengali Suggestion Click here
আরোও দেখুন:-
Class 12 English Suggestion Click here
আরোও দেখুন:-
Class 12 Geography Suggestion Click here
আরোও দেখুন:-
Class 12 History Suggestion Click here
আরোও দেখুন:-
Class 12 Political Science Suggestion Click here
আরোও দেখুন:-
Class 12 Education Suggestion Click here
আরোও দেখুন:-
Class 12 Philosophy Suggestion Click here
আরোও দেখুন:-
Class 12 Sociology Suggestion Click here
আরোও দেখুন:-
Class 12 Sanskrit Suggestion Click here
আরোও দেখুন:-
Class 12 All Subjects Suggestion Click here
◆ উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার প্রস্তুতি, বিনামূল্যে নোটস, সাজেশন, PDF ও সমস্ত আপডেটের জন্য আমাদের WhatsApp Group এ Join হয়ে যাও।
| Class 12 WhatsApp Groups | Click Here to Join |
দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | West Bengal HS Class 12th Bengali Question and Answer / Suggestion / Notes Book
আরও দেখুন, দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা সমস্ত অধ্যায়ের প্রশ্নউত্তর
আরও দেখুন, হলুদ পোড়া (গল্প) দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর
আরও দেখুন, হারুন সালেমের মাসি (গল্প) দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর
আরও দেখুন, প্রার্থনা (কবিতা) দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর
আরও দেখুন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবন রচনা – Rabindranath Tagore Biography in Bengali
FILE INFO : বাঙালির চিত্রকলার ইতিহাস (বাংলা শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতির ইতিহাস) দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | HS Class 12 Bengali Bangalir Chitrokolar Itihas Question and Answer with FREE PDF Download Link
| PDF File Name | বাঙালির চিত্রকলার ইতিহাস (বাংলা শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতির ইতিহাস) দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | HS Class 12 Bengali Bangalir Chitrokolar Itihas Question and Answer PDF |
| Prepared by | Experienced Teachers |
| Price | FREE |
| Download Link | Click Here To Download |
| Download PDF | Click Here To Download |
বাঙালির চিত্রকলার ইতিহাস (বাংলা শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতির ইতিহাস) অধ্যায় থেকে আরোও বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর দেখুন :
Update Soon…
[আমাদের YouTube চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন Subscribe Now]
Info : বাঙালির চিত্রকলার ইতিহাস (বাংলা শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতির ইতিহাস) দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা সাজেশন বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর
HS Class 12 Bengali Suggestion | West Bengal WBCHSE Class Twelve XII (HS Class 12th) Bengali Question and Answer Suggestion
” বাঙালির চিত্রকলার ইতিহাস (বাংলা শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতির ইতিহাস) দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা প্রশ্ন উত্তর “ একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ টপিক দ্বাদশ শ্রেণীর পরীক্ষা (West Bengal Class Twelve XII / WB HS Class 12 / WBCHSE / HS Class 12 Exam / West Bengal Council of Higher Secondary Education – WB HS Class 12 Exam / HS Class 12th / WB HS Class 12 / HS Class 12 Pariksha ) এখান থেকে প্রশ্ন অবশ্যম্ভাবী । সে কথা মাথায় রেখে Bhugol Shiksha .com এর পক্ষ থেকে দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা পরীক্ষা প্রস্তুতিমূলক সাজেশন এবং বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর ( দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা সাজেশন / দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা প্রশ্ও উত্তর । Class-11 Bengali Suggestion / HS Class 12 Bengali Bangalir Chitrokolar Itihas Question and Answer / HS Class 12 Bengali Suggestion / Class-11 Pariksha Bengali Suggestion / Bengali HS Class 12 Exam Guide / MCQ , Short , Descriptive Type Question and Answer / HS Class 12 Bengali Suggestion FREE PDF Download) উপস্থাপনের প্রচেষ্টা করা হলাে। ছাত্রছাত্রী, পরীক্ষার্থীদের উপকারে লাগলে, আমাদের প্রয়াস দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা পরীক্ষা প্রস্তুতিমূলক সাজেশন এবং বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর (HS Class 12 Bengali Suggestion / West Bengal Twelve XII Question and Answer, Suggestion / WBCHSE HS Class 12th Bengali Suggestion / HS Class 12 Bengali Bangalir Chitrokolar Itihas Question and Answer / HS Class 12 Bengali Suggestion / HS Class 12 Pariksha Suggestion / HS Class 12 Bengali Exam Guide / HS Class 12 Bengali Suggestion 2024, 2025, 2026, 2027, 2028, 2029, 2030 / HS Class 12 Bengali Suggestion MCQ , Short , Descriptive Type Question and Answer. / Class-11 Bengali Suggestion FREE PDF Download) সফল হবে।
বাঙালির চিত্রকলার ইতিহাস (বাংলা শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতির ইতিহাস) বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর
বাঙালির চিত্রকলার ইতিহাস (বাংলা শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতির ইতিহাস) বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | বাঙালির চিত্রকলার ইতিহাস (বাংলা শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতির ইতিহাস) HS Class 12 Bengali Bangalir Chitrokolar Itihas Question and Answer Suggestion দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – বাঙালির চিত্রকলার ইতিহাস (বাংলা শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতির ইতিহাস) বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর।
বাঙালির চিত্রকলার ইতিহাস (বাংলা শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতির ইতিহাস) SAQ সংক্ষিপ্ত বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা
বাঙালির চিত্রকলার ইতিহাস (বাংলা শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতির ইতিহাস) SAQ সংক্ষিপ্ত বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | বাঙালির চিত্রকলার ইতিহাস (বাংলা শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতির ইতিহাস) HS Class 12 Bengali Bangalir Chitrokolar Itihas Question and Answer Suggestion দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – বাঙালির চিত্রকলার ইতিহাস (বাংলা শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতির ইতিহাস) SAQ সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর।
উচ্চমাধ্যমিক বাংলা বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – বাঙালির চিত্রকলার ইতিহাস (বাংলা শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতির ইতিহাস) প্রশ্ন উত্তর | HS Class 12 Bengali Bangalir Chitrokolar Itihas Question and Answer Question and Answer, Suggestion
উচ্চমাধ্যমিক বাংলা বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – বাঙালির চিত্রকলার ইতিহাস (বাংলা শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতির ইতিহাস) | দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – বাঙালির চিত্রকলার ইতিহাস (বাংলা শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতির ইতিহাস) | পশ্চিমবঙ্গ দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – বাঙালির চিত্রকলার ইতিহাস (বাংলা শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতির ইতিহাস) | দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা সহায়ক – বাঙালির চিত্রকলার ইতিহাস (বাংলা শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতির ইতিহাস) বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর । HS Class 12 Bengali Bangalir Chitrokolar Itihas Question and Answer, Suggestion | HS Class 12 Bengali Bangalir Chitrokolar Itihas Question and Answer Suggestion | HS Class 12 Bengali Bangalir Chitrokolar Itihas Question and Answer Notes | West Bengal HS Class 12th Bengali Question and Answer Suggestion.
দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – বাঙালির চিত্রকলার ইতিহাস (বাংলা শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতির ইতিহাস) প্রশ্ন উত্তর | WBCHSE HS Class 12 Bengali Question and Answer, Suggestion
দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – বাঙালির চিত্রকলার ইতিহাস (বাংলা শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতির ইতিহাস) প্রশ্ন উত্তর বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | বাঙালির চিত্রকলার ইতিহাস (বাংলা শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতির ইতিহাস) । HS Class 12 Bengali Bangalir Chitrokolar Itihas Question and Answer Suggestion.
WBCHSE HS Class 12th Bengali Bangalir Chitrokolar Itihas Suggestion | দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – বাঙালির চিত্রকলার ইতিহাস (বাংলা শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতির ইতিহাস)
WBCHSE HS Class 12 Bengali Bangalir Chitrokolar Itihas Suggestion দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – বাঙালির চিত্রকলার ইতিহাস (বাংলা শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতির ইতিহাস) প্রশ্ন উত্তর বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর । বাঙালির চিত্রকলার ইতিহাস (বাংলা শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতির ইতিহাস) | HS Class 12 Bengali Bangalir Chitrokolar Itihas Suggestion দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – বাঙালির চিত্রকলার ইতিহাস (বাংলা শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতির ইতিহাস) প্রশ্ন উত্তর বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর ।
HS Class 12 Bengali Bangalir Chitrokolar Itihas 4th Semester Question and Answer Suggestions | দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – বাঙালির চিত্রকলার ইতিহাস (বাংলা শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতির ইতিহাস) | দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর
HS Class 12 Bengali Bangalir Chitrokolar Itihas 4th Semester Question and Answer দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – বাঙালির চিত্রকলার ইতিহাস (বাংলা শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতির ইতিহাস) দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর HS Class 12 Bengali Bangalir Chitrokolar Itihas Question and Answer দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – বাঙালির চিত্রকলার ইতিহাস (বাংলা শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতির ইতিহাস) সংক্ষিপ্ত, রোচনাধর্মী বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর ।
WB HS Class 12 Bengali Bangalir Chitrokolar Itihas Suggestion | দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – বাঙালির চিত্রকলার ইতিহাস (বাংলা শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতির ইতিহাস) সাজেশন
HS Class 12 Bengali Bangalir Chitrokolar Itihas Question and Answer Suggestion দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – বাঙালির চিত্রকলার ইতিহাস (বাংলা শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতির ইতিহাস) সাজেশন । HS Class 12 Bengali Bangalir Chitrokolar Itihas Question and Answer Suggestion দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর।
West Bengal HS Class 12 Bengali Suggestion Download WBCHSE HS Class 12th Bengali short question suggestion . HS Class 12 Bengali Bangalir Chitrokolar Itihas Suggestion download HS Class 12th Question Paper Bengali. WB HS Class 12 Bengali suggestion and important question and answer. HS Class 12 Suggestion pdf.পশ্চিমবঙ্গ দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা পরীক্ষার সম্ভাব্য সাজেশন ও শেষ মুহূর্তের বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর ডাউনলোড। দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা পরীক্ষার জন্য সমস্ত রকম গুরুত্বপূর্ণ বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর।
Get the HS Class 12 Bengali Bangalir Chitrokolar Itihas Question and Answer by Bhugol Shiksha .com
HS Class 12 Bengali Bangalir Chitrokolar Itihas Question and Answer prepared by expert subject teachers. WB HS Class 12 Bengali Suggestion with 100% Common in the Examination .
Class Twelve XII Bengali Bangalir Chitrokolar Itihas Suggestion | West Bengal Council of Higher Secondary Education (WBCHSE) HS Class 12 Exam
HS Class 12 Bengali Bangalir Chitrokolar Itihas Question and Answer, Suggestion Download PDF: West Bengal Council of Higher Secondary Education (WBCHSE) HS Class 12 Twelve XII Bengali Suggestion is provided here. HS Class 12 Bengali Bangalir Chitrokolar Itihas Question and Answer Suggestion Questions Answers PDF Download Link in Free here.
বাঙালির চিত্রকলার ইতিহাস (বাংলা শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতির ইতিহাস) দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | HS Class 12 Bengali Bangalir Chitrokolar Itihas Question and Answer
অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই ” বাঙালির চিত্রকলার ইতিহাস (বাংলা শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতির ইতিহাস) দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | HS Class 12 Bengali Bangalir Chitrokolar Itihas Question and Answer ” পােস্টটি পড়ার জন্য। এই ভাবেই Bhugol Shiksha ওয়েবসাইটের পাশে থাকো যেকোনো প্ৰশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলাে করো এবং নিজেকে তথ্য সমৃদ্ধ করে তোলো , ধন্যবাদ।





















