ঐতিহ্যের পরিবর্তন (পঞ্চম অধ্যায়) একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর
Class 11 History Oitijher Parivartan Question and Answer
ঐতিহ্যের পরিবর্তন (পঞ্চম অধ্যায়) একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | Class 11 History Oitijher Parivartan Question and Answer : ঐতিহ্যের পরিবর্তন (পঞ্চম অধ্যায়) একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | Class 11 History Oitijher Parivartan Question and Answer নিচে দেওয়া হলো। এই West Bengal WBCHSE Class 11th History Oitijher Parivartan Question and Answer, Suggestion, Notes | একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – ঐতিহ্যের পরিবর্তন (পঞ্চম অধ্যায়) থেকে বহুবিকল্পভিত্তিক, সংক্ষিপ্ত, অতিসংক্ষিপ্ত এবং রোচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর (MCQ, Very Short, Short, Descriptive Question and Answer) গুলি আগামী West Bengal Class 11th Eleven XI History Examination – পশ্চিমবঙ্গ একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস পরীক্ষার জন্য খুব ইম্পর্টেন্ট। একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস পরীক্ষা তে এই সাজেশন বা কোশ্চেন (ঐতিহ্যের পরিবর্তন (পঞ্চম অধ্যায়) একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | Class 11 History Oitijher Parivartan Question and Answer) গুলো আসার সম্ভাবনা খুব বেশি।
তোমরা যারা ঐতিহ্যের পরিবর্তন (পঞ্চম অধ্যায়) একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | Class 11 History Oitijher Parivartan Question and Answer খুঁজে চলেছ, তারা নিচে দেওয়া প্রশ্ন ও উত্তর গুলো ভালো করে পড়তে পারো।
রাজ্য (State) | পশ্চিমবঙ্গ (West Bengal) |
বোর্ড (Board) | WBCHSE, West Bengal |
শ্রেণী (Class) | একাদশ শ্রেণী (WB Class 11th) |
বিষয় (Subject) | একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস (Class 11 History) |
পঞ্চম অধ্যায় (Chapter 5 / Unit-5) | ঐতিহ্যের পরিবর্তন (Oitijher Parivartan) |
[Class 11 All Unit Test Question and Answer (1st 2nd) Click here]
ঐতিহ্যের পরিবর্তন (পঞ্চম অধ্যায়) একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | West Bengal WBCHSE Class 11th History Oitijher Parivartan Question and Answer
ব্যাখামূলক | ঐতিহ্যের পরিবর্তন (পঞ্চম অধ্যায়) একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | WB Class 11 History Oitijher Parivartan Question and Answer:
- ভক্তিবাদী আন্দোলনে শ্রীচৈতন্যদেবের অবদান লেখো।
Ans: ভূমিকা: মধ্যযুগে বাংলা তথা পূর্ব ভারতে ভক্তিবাদী আন্দোলনের শ্রেষ্ঠ প্রবক্তা ছিলেন শ্রীচৈতন্যদেব। ষোড়শ শতকে প্রায় সমগ্র বাংলাদেশ তাঁর ভক্তিবাদী আদর্শে প্লাবিত হয়েছিল।
[১] পূর্ব পরিচয়: ১৪৮৬ খ্রিস্টাব্দে নবদ্বীপের এক শিক্ষিত ব্রাহ্মণ পরিবারে শ্রীচৈতন্যদেব জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাল্য নাম ছিল ‘নিমাই’। তিনি অতি অল্প বয়সেই বিভিন্ন শাস্ত্র ও দর্শনে পাণ্ডিত্য অর্জন করেন। বৈয়ব ধর্মগুরু ঈশ্বরপুরীর কাছে তিনি দীক্ষা গ্রহণ করেন। পরে তিনি পরিচিত হন শ্রীচৈতন্যদেব নামে। কৃষ্ণমন্ত্র-এ দীক্ষা লাভের পর তিনি মাত্র চব্বিশ বছর বয়সে সংসার ত্যাগ করে সন্ন্যাসগ্রহণ এবং বৈয়ব মতাদর্শ প্রচার করেন।
[২] মতাদর্শ: শ্রীচৈতন্যদেব বৈয়ব ধর্মের মূলমন্ত্র বৈরাগ্য, জীবে দয়া, শ্রীকৃষ্ণের প্রতি প্রেম ও ভক্তির আদর্শ প্রচার করেন। তিনি বিশ্বাস করতেন সকল মানুষই আধ্যাত্মিক শক্তির অধিকারী। তাই তিনি সকলের মধ্যে শ্রীকৃষ্ণের প্রতি ভক্তিভাব জাগরণের জন্য ‘নামসংকীর্তন’ বা সমবেত সংগীতের ওপর জোর দেন। তাঁর মতে, কৃষ্ণের প্রতি প্রেম ও ভক্তি নিবেদন ছাড়া জীবের মুক্তি সম্ভব নয়। তাঁর কৃষ্ণনাম সংকীর্তন বা ভক্তিবাদী আদর্শে আপ্লুত হয়ে সমাজের উচ্চনীচ এবং বিভিন্ন বর্ণ ও ধর্ম সম্প্রদায়ের মানুষ তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন।
[৩] ব্রাহ্মণ্যবাদ ও জাতিভেদের বিরোধিতা: শ্রীচৈতন্যদেব নিজে ব্রাহ্মণ হয়েও হিন্দুধর্মের ব্রাহ্মণ্যবাদ ও জাতপাতের ঘোর বিরোধিতা করেন। এজন্য তিনি উচ্চবর্ণের তীব্র বিরোধিতার সম্মুখীন হয়েছিলেন।
[৪] ভক্তিবাদের প্রসার: শ্রীচৈতন্যদেব তাঁর ভক্তিবাদী আদর্শ প্রচার করেন বাংলা, উড়িষ্যা, বারাণসী ও বৃন্দাবন সহ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে।
অবদান: শ্রীচৈতন্যদেব ছিলেন বাংলা তথা পূর্ব ভারতের বৈয়ব ভক্তি আন্দোলনের শ্রেষ্ঠ সাধক। সমাজের অবহেলিত, নিপীড়িত মানুষরা তাঁর ভক্তিবাদী আদর্শে গভীরভাবে আকৃষ্ট হয়েছিলেন। নিত্যানন্দ, যবন হরিদাস ছিলেন তাঁর উল্লেখযোগ্য শিষ্য পরবর্তীকালে তাঁর অনুগামীরা – গৌড়ীয় বৈষুব নামে একটি স্বতন্ত্র সম্প্রদায় গঠন করেন। তাঁর জীবন ও আদর্শের ওপর ভিত্তি করে বৈয়ব পদাবলি সাহিত্যের বিকাশ ঘটে। ড. সুকুমার সেন চৈতন্যদেবের ভক্তি আন্দোলনকে বাঙালি জাতির প্রথম জাগরণ বলে ব্যাখ্যা করেছেন।
- সুফিবাদ বলতে কী বোঝ?
অথবা, সুফিবাদের মতাদর্শগুলি উল্লেখ করো।
Ans: ভূমিকা: খ্রিস্টীয় নবম-দশম শতকে ইসলাম ধর্মে এক সংস্কারকামী উদারনৈতিক মতবাদের উদ্ভব ও প্রসার ঘটে। এটি সুফিবাদ নামে পরিচিত। ইসলামের মধ্য থেকে সুফিবাদের উদ্ভব হয়। অধ্যাপক ইউসুফ হুসেন বলেছেন- “ইসলামের বক্ষদেশ থেকেই সুফিবাদের জন্ম।”
[১] সুফি কথার অর্থ: সুফি কথাটির অর্থ সম্পর্কে একাধিক মত প্রচলিত আছে। যথা- (i) কেউ কেউ মনে করেন, সাফা অর্থাৎ পবিত্রতা থেকে ‘সুফি’ কথাটি এসেছে। দেহ, মন ও আচরণের পবিত্রতার ওপর সুফিরা জোর দিতেন বলে তাঁরা সুফি নামে পরিচিত। (ii) অনেকের মতে, সাফ বা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ানো শব্দটি থেকে ‘সুফি’ শব্দটি এসেছে। (iii) আবার কেউ কেউ মনে করেন, আরবি সুফ শব্দের অর্থ হল পশম বা উল। তাঁদের মতে, সুফিসন্ত বা সাধকরা মোটা পশমের বস্ত্র পরিধান করতেন বলে তাঁরা ‘সুফি’ নামে পরিচিত।
[২] মূলকথা বা আদর্শ: সুফিবাদের মূলকথা হল আল্লাহ বা ঈশ্বর এক ও অভিন্ন এবং ত্যাগ ও ভক্তির মাধ্যমেই একমাত্র ঈশ্বর লাভ সম্ভব। ঈশ্বরের প্রতি আত্মসমর্পণ, বৈরাগ্য, অন্তরের পবিত্রতা, উপবাস, উদারতা ইত্যাদি ছিল সুফিবাদের মূল আদর্শ। ফিলিপ হিট্রির ভাষায়-“সুফিবাদ হল ইসলামের অতীন্দ্রিয়বাদী রূপ।”
মূল্যায়ন: ভারতে ত্রয়োদশ থেকে পঞ্চদশ শতকের মধ্যে ইসলাম ধর্মে যে উদারনৈতিক সংস্কার আন্দোলন হয়েছিল, তা সুফি আন্দোলন নামে পরিচিত। সুফিগুরুকে বলা হয় ‘পির’ বা ‘খাজা’। সুফিগুরুদের কর্মকেন্দ্রকে বলা হয় ‘দরগা’ বা ‘খানকা’।
- ‘সুফিবাদ’ বলতে কী বোঝ? সুফিবাদের মূল বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করো।
Ans: খ্রিস্টীয় নবম থেকে দশম শতকে ইসলাম ধর্মে যে এক উদারনৈতিক সংস্কারকামী মতবাদের উদ্ভব ঘটে, তা সাধারণভাবে সুফিবাদ নামে পরিচিত। সুফিবাদীরা ধর্মের রক্ষণশীলতা ও বাহ্যিক আচার-আচরণের ঘোরবিরোধী ছিলেন।
ভূমিকা: সুফিবাদ বিশ্লেষণ করে এর কতকগুলি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করা যায়।
[১] একেশ্বরবাদে বিশ্বাসী: সুফিবাদীরা একেশ্বরবাদে বিশ্বাসী ছিলেন। তাঁরা বিশ্বাস করতেন, আল্লাহ বা ঈশ্বর এক ও অদ্বিতীয় এবং নিরাকার।
[২] ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান বিরোধী: সুফিবাদে ধর্মের বাহ্যিক আচার-অনুষ্ঠানের বিরোধিতা করা হয়েছে।
[৩] কোরানের আদর্শ অনুসরণ: সুফিবাদীরা বাহ্যিক আচার-অনুষ্ঠান বা আড়ম্বরতার পরিবর্তে কোরানের মর্মবাণীকেই আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করার কথা বলেছেন। কোরান তাঁদের কাছে ছিল পবিত্র ধর্মগ্রন্থ এবং পয়গম্বর ছিলেন হজরত মহম্মদ।
[৪] অন্তরের পবিত্রতা: সুফিবাদে সর্বশক্তিমান আল্লাহ বা ঈশ্বরের করুণা লাভের জন্য অন্তরের পবিত্রতার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। অধ্যাপক ইউসুফ হুসেন বলেন, “সুফিরা গুরুত্ব দেন অন্তরের শুদ্ধতাকে।”
[৫] প্রেম ও ভক্তির আদর্শ: সুফিবাদীগণ বিশ্বাস করতেন যে, বাহ্যিক আচার-অনুষ্ঠান নয়, বরং প্রেম ও ভক্তির দ্বারাই একমাত্র আল্লাহ বা ঈশ্বরের সান্নিধ্যলাভ সম্ভব। তাঁরা আল্লাহর নিকট পূর্ণ আত্মসমর্পণের কথা বলেন।
[৬] অনাড়ম্বর জীবনযাপন: সুফিবাদে সহজ, সরল ও অনাড়ম্বর জীবনযাপনের কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়াও ত্যাগ, বৈরাগ্য, উপবাস প্রভৃতি ছিল সুফিবাদীদের মূল আদর্শ।
[৭] পির বা গুরুর ভূমিকা: সুফিগুরুকে বলা হয় পির বা খাজা। সুফিদর্শনে ‘পির’ বা গুরুর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। শিষ্যকে সঠিক পথ ও পদ্ধতির সন্ধান দেন ‘পির’ বা গুরু। ‘পির’ বা গুরুর কর্মকেন্দ্র বা আশ্রমকে বলা হয় দরগা বা খানকা।
[৮] ধর্মীয় সাধনা স্তর: একটি মত অনুযায়ী, ঈশ্বর বা আল্লহর সান্নিধ্যলাভের জন্য একজন ব্যক্তিকে সুফি সাধনার দশটি স্তর অতিক্রম করতে হয়। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল-তত্তবা (অনুশোচনা), জুহুদ (ধার্মিকতা), রিজা (আল্লাহর কাছে সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণ), ওয়ারা (লোভ দমন), ফকর (দারিদ্রতা) ইত্যাদি।
মূল্যায়ন: পরিশেষে বলা যায় যে, ইসলামের ধর্ম ও আদর্শের ওপর ভিত্তি করেই সুফিবাদের উদ্ভব ঘটেছিল। এককথায়, সুফিবাদ হল ইসলাম ধর্মেরই পরিশীলিত রূপ।
- ‘ক্রুসেড’ বা ধর্মযুদ্ধ বলতে কী বোঝ?
Ans: ভূমিকা: খ্রিস্টীয় একাদশ থেকে ত্রয়োদশ শতক ব্যাপী খ্রিস্টান ও ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ বা যুদ্ধ হয়েছিল, তা ‘ক্রুসেড’ বা ধর্মযুদ্ধ নামে পরিচিত। ঐতিহাসিক পি হিট্টি বলেছেন, “রুসেড ছিল মুসলিম প্রাচ্যের বিরুদ্ধে খ্রিস্টান প্রতীচ্যের তীব্র প্রতিক্রিয়া ও ঘৃণার বহিঃপ্রকাশ।” প্রায় দুশো বছর (১০৯৬-১২৯১ খ্রিস্টাব্দ) ধরে মোট আটটি ক্রুসেড হয়েছিল।
‘ব্রুসেড’ নামকরণ: রোমান ক্যাথোলিক চার্চের প্রধান মহামান্য পোপের উদ্যোগে এই ধর্মযুদ্ধ সংগঠিত হয়েছিল। এই ধর্মযোদ্ধারা বুকে ব্রুস চিহ্ন এঁকে যুদ্ধে অংশ নিতেন। এই ‘ক্রস’ ছিল খ্রিস্টান যোদ্ধাদের পতাকা। খ্রিস্টানদের কাছে ক্রস ছিল পরম পবিত্রতার প্রতীক। ক্রস চিহ্নবাহী এই যোদ্ধাদের সংগ্রাম তাই ক্রুসেড নামে অভিহিত হয়।
ব্রুসেডের প্রেক্ষাপট: খ্রিস্টান ধর্মের প্রবর্তক যিশুখ্রিস্টের জন্মস্থান ও লালনভূমি ছিল প্যালেস্টাইনের অন্তর্ভুক্ত জেরুজালেম। তাই প্রতিটি খ্রিস্টানের কাছে জেরুজালেম পবিত্রভূমি হিসেবে গণ্য হত। যিশুখ্রিস্টের জন্মদিনে প্রতিবছর অসংখ্য খ্রিস্টভক্ত জেরুজালেম পরিদর্শনে যেতেন। এটি ছিল তাঁদের কাছে পরম পবিত্র তীর্থস্থান। সপ্তম শতকে ইসলাম ধর্মের উদ্ভব ও প্রসার ইউরোপে জটিলতা তৈরি করে। মুসলমানরা অতি দ্রুত তাঁদের ধর্ম ও প্রতিপত্তি বিস্তার করতে সক্ষম হন। ইসলামের সম্প্রসারণ কর্মসূচির অঙ্গ হিসেবে আমির ইবনে আল্ আখ জেরুজালেম – দখল করে মুসলিম শাসন কায়েম করেন।
খ্রিস্টানদের প্রতিক্রিয়া: খ্রিস্টান পবিত্রভূমি মুসলমান কর্তৃক দখল হলে খ্রিস্টানদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। উল্লেখ্য যে, জেরুজালেম মুসলমানদের কাছেও পবিত্রভূমি স্বরূপ ছিল। কারণ পয়গম্বর হজরত মহম্মদ জেরুজালেমে মিরাজ যাত্রা করেছিলেন। তবে মুসলমানরা খ্রিস্টানদের বাৎসরিক ধর্মযাত্রায় বাঁধা দেননি। আবার মুসলমানরা তাঁদের ধর্মসহিষ্ণু আচরণ দ্বারা খ্রিস্টানদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। কিন্তু একাদশ শতকে সেলজুক তুর্কিরা জেরুজালেম দখল করলে জটিলতা সৃষ্টি হয়। এই বিধর্মী ও গোঁড়া সেলজুক তুর্কিরা খ্রিস্টানদের পবিত্রভূমি পরিদর্শনে নানাভাবে বাধা সৃষ্টি করে। খ্রিস্টান তীর্থযাত্রীদের কাছে অতিরিক্ত অর্থ আদায়, তীর্থভ্রমণে বাধাদান ইত্যাদি নানাভাবে খ্রিস্টানদের হেনস্থা করা চলতে থাকে।
ধর্মযুদ্ধের ডাক: পবিত্রভূমি পুনরুদ্ধারের জন্য খ্রিস্টান ধর্মগুরু পোপ ক্রুসেড সংগঠনের সিদ্ধান্ত নেন। পোপ খ্রিস্টানদের ইসলাম বিরোধী সংগ্রামে লিপ্ত হওয়ার আহ্বান জানান। পোপের ডাকে সাড়া দেন রোমান সম্রাট, রাজন্যবর্গ সহ বহু সাধারণ মানুষ।
- চিত্রশিল্পের ওপর রেনেসাঁ বা নবজাগরণের প্রভাব লেখো।
অথবা, রেনেসাঁ যুগের চিত্রশিল্পের ওপর টীকা লেখো।
Ans: ভূমিকা: ইউরোপের নবজাগরণের অন্যতম প্রধান অবদান হল তার শিল্পস্থাপত্য, ভাস্কর্য ও চিত্রকলা। চিত্রশিল্পের ক্ষেত্রে রেনেসাঁ ধ্রুপদি যুগকেও অতিক্রম করে বহুদূরে অগ্রসর হয়ে যায়। মানবতাবাদ ও প্রগতিবাদী চেতনা রেনেসাঁ চিত্রশিল্পকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করেছিল। চিত্রশিল্পে এসেছিল এক নতুন আঙ্গিক। চতুর্দশ শতাব্দী থেকেই ইটালিতে বিশেষ করে ফ্লোরেন্সে চিত্রশিল্পের ব্যাপক চর্চা শুরু হয়েছিল।
[১] ধর্মীয় প্রভাবমুক্ত চিত্রকলা: মধ্যযুগীয় কঠোর ধর্মকেন্দ্রিকতাকে দূরে সরিয়ে রেখে রেনেসাঁ যুগের চিত্রকলার শিল্পীরা তাদের মানবতাবাদী আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে মনন দ্বারা চিত্রকলাকে করে তোলেন আধুনিক। মানবশরীর, তার জীবনচর্চা, প্রকৃতি সবই শিল্পীদের রংতুলির স্পর্শে হয়ে ওঠে জীবন্ত। লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির ভাষায়-“মানুষের চোখ হল আত্মার জানালা।” এ যুগে চিত্রকরদের চোখ আর আত্মার সম্মিলন চিত্রশিল্পে বিপ্লব ঘটায়।
[২] রেনেসাঁর প্রাথমিক পর্যায়ের চিত্রকলা: ঐতিহাসিক জর্জিও ভাসারি তাঁর Lives of the Artists গ্রন্থে ত্রয়োদশ শতকের চিত্রকর গিয়োট্টো বনডানোকে আধুনিক শিল্পরীতির অগ্রদূত বলেছেন। যদিও সাম্প্রতিক চিত্রকলার ঐতিহাসিকরা গিয়োট্টোকে রেনেসাঁ চিত্রকলার জনক মানতে রাজি নন, কারণ তিনি মধ্যযুগীয় রীতিতেই এঁকেছেন এবং তিনি কোনো Perspective ব্যবহার করেননি; তথাপি গিয়োট্রোর আঁকা মানব প্রতিকৃতিতে যে বাস্তবতার ছাপ ছিল তা নতুন শিল্পরীতির সুচনাই বলা যেতে পারে।
গিয়োট্রোর উত্তরসূরি ম্যাসাচ্চিত্ত ছবিতে Space বা পারিপার্শ্বিকের সঙ্গে ছবির মূল বিষয়ের সম্পর্কস্থাপন করে চিত্রশিল্পে ভিন্নমাত্রা আনেন। ছবিতে ত্রিমাত্রিকতার ব্যবহারও শুরু করেন ম্যাসাচ্চিও। শাপভ্রষ্ট হয়ে স্বর্গ থেকে বিদায়ের মুহূর্তে অ্যাডাম ও ইভের যে নগ্ন প্রতিকৃতি ম্যাসাচ্চিত্ত এঁকেছেন, তার প্রতিটি ভঙ্গি ছিল হতাশার অভিব্যক্তি, যন্ত্রণার বাস্তব প্রতিবিম্ব।
পঞ্চদশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে ফ্লোরেন্সের চিত্রকরদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন বত্তিচেল্লি। তাঁর ‘বার্থ অফ ভেনাস’ (Birth of Venus)-এ তিনি এক অতিপ্রাকৃত দৃষ্টিনন্দন কল্পনার জগৎ তৈরি করেছেন। ভেনাস-এর চিত্র সে যুগে চার্চের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ স্বরূপ ছিল। এ ছাড়া বার্তালোমেও, ভেরোচ্চি ও পেরুজিনো প্রমুখ রেনেসাঁ যুগের শুরুর দিকের শিল্পী হিসেবে নিজেদের স্বাক্ষর রেখেছেন।
[৩] পরিণত রেনেসাঁ যুগের চিত্রকলা: পঞ্চদশ শতকের শেষ দিকে যাকে ‘High Renaissance Art’ বলা হয়; তার প্রধান চরিত্র- লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি, মাইকেল এঞ্জেলো ও রাফায়েল টিশিয়ান।
লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি শবব্যবচ্ছেদ করে মানবদেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সঠিক জ্ঞান অর্জন করে তা চিত্রে প্রয়োগ করেন। ‘মোনালিসা’, ‘দ্য লাস্ট সাপার’, ‘ভার্জিন অফ দ্য রক্স’ তাঁর অমর সৃষ্টি। ভিঞ্চির প্রতিটি ছবি আলো-আঁধারির পরিমিত ব্যবহারে অনন্য হয়ে উঠেছে। দূরের ও কাছের জিনিস আঁকার ক্ষেত্রে তাঁর গাণিতিক বোধের ব্যবহার রেনেসাঁ চিত্রশিল্পের অন্যতম আবিষ্কার।
মাইকেল এঞ্জেলো ‘সিস্টিন চ্যাপেলে’ (Creation of Adam) নামে যে দেয়াল চিত্র এঁকেছেন তাতে, পৃথিবীর প্রথম মানবের দেহসৌষ্ঠবের মধ্যে তাঁর জীবনী শক্তির চিত্রায়ন ঘটিয়েছেন।
রাফায়েলের চিত্রশিল্পের প্রধান বিষয় ছিল মাতৃমূর্তি। ভিন্ন ধরনের দীর্ঘদেহ, লম্বাটে মুখমণ্ডল ও সুন্দর নাক, মুখ, চোখের সমাবেশ তাঁর মাতৃমূর্তিকে (‘ম্যাডোনা’ ও ‘সন্ত ক্যাথারিন’) বিশিষ্ট করে তুলেছে।
[৪] নতুন অঙ্কন পদ্ধতি: মধ্যযুগীয় টেম্পেরা রঙের পরিবর্তে তিসির তেল বা জলপাই-এর তেল মিশিয়ে তেল-রঙের ব্যবহার শুরু হয়। প্লাস্টার করা দেয়ালের ওপর সরাসরি আঁকার (ফ্রেসকো) বদলে কাঠের ফ্রেমে মোটা কাগজ (easel), ক্যানভাস, কাঠের পাতলা টুকরো ইত্যাদির ওপর ছবি আঁকা শুরু হয়।
মূল্যায়ন: সবশেষে বলা যায়, চিত্রশিল্প রেনেসাঁর এক অবিস্মরণীয় অবদান। এ যুগের শিল্পীরা নিসর্গ চিত্রের ব্যবহার, আলোর ব্যবহার এবং মানবশরীরকে যথাযথভাবে চিত্রায়িত করেছেন। এইভাবে ত্রয়োদশ শতকের শেষ থেকে ষোড়শ শতক পর্যন্ত ইউরোপে এক নতুন চিত্রশৈলীর উদ্ভব ও বিকাশ ঘটে।
- ক্রুসেড কী? এর ফলাফলগুলি লেখো।
অথবা, ব্রুসেডের প্রভাব বা তাৎপর্য আলোচনা করো।
Ans: খ্রিস্টীয় একাদশ থেকে ত্রয়োদশ শতক পর্যন্ত প্রায় দুশো বছর ব্যপী খ্রিস্টান ও ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে জেরুজালেম দখলকে কেন্দ্র করে যে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হয়েছিল, তা ইতিহাসে ব্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধ নামে পরিচিত।
ব্রুসেডের ফলাফল বা প্রভাব: প্রায় দুশো বছর ব্যাপী খ্রিস্টানরা তাদের পবিত্রভূমি জেরুজালেম পুনরুদ্ধারের উদ্দেশ্যে মুসলমানদের বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী আটটি ব্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিল। কিন্তু খ্রিস্টান ধর্মযোদ্ধারা শেষপর্যন্ত জেরুজালেম পুনরুদ্ধার করতে পারেনি। তা সত্ত্বেও মধ্যযুগের ইউরোপের ধর্মীয়, আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে ক্রুসেডের ফলাফল বা প্রভাব ছিল সুদুরপ্রসারী।
[১] পোপের প্রভাব ও মর্যাদা বৃদ্ধি: খ্রিস্টানরা ধর্মযুদ্ধের দ্বারা জেরুজালেম পুনরুদ্ধার করতে না-পারলেও পোপের প্রভাব ও মর্যাদা কিন্তু বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছিল। কারণ পোপের আহ্বান ও উদ্যোগেই লাখ লাখ ধর্মযোদ্ধারা ব্রুসেডে অংশগ্রহণ করেছিল। তাই ধর্মযুদ্ধের সূত্রে পোপ হয়ে উঠেছিলেন খ্রিস্টান জগতের প্রধান নেতা।
[২] চার্চের সম্পদ বৃদ্ধি: কুরুসেডের ফলে চার্চের সম্পত্তির পরিমাণ আগের তুলনায় বহুলাংশে বৃদ্ধি পায়। কারণ ব্রুসেডে যোগদানকারী বহু ধনী ও সাধারণ ধর্মযোদ্ধারা সামান্য অর্থের বিনিময়ে চার্চকে তাঁদের সম্পত্তি বিক্রি করে দিয়েছিলেন। আবার ব্রুসেডে অংশগ্রহণকারী সামন্তপ্রভু বা ভূস্বামীদের অনেকেই ঈশ্বরের আর্শীবাদ লাভের কামনায় তাঁদের বহু সম্পত্তি দান করে দিয়েছিলেন।
[৩] ব্যাবসাবাণিজ্য ও নগরের বিকাশ: ক্রুসেডের ফলে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মধ্যে বাণিজ্যিক যোগাযোগ বৃদ্ধি পায়। রুসেডের সময় থেকেই ভেনিস, পিসা, বার্সেলোনা, মার্সেই প্রভৃতি ভূমধ্যসাগর তীরবর্তী বন্দরগুলির সমৃদ্ধি ঘটে। শিল্প ও ব্যাবসাবাণিজ্যের কেন্দ্র হিসেবে ইউরোপে বহু শহর বা নগরের প্রতিষ্ঠা হয়।
[৪] সামন্ততন্ত্রের ভাঙন: ক্রুসেডের ফলে সামন্ততন্ত্রের কাঠামোয় ভাঙন ধরে। ক্রুসেড যাত্রার আগে অর্থ সংগ্রহের জন্য বহু সামন্তপ্রভু তাদের সম্পত্তি বিক্রি কিংবা বন্ধক দিয়ে দিয়েছিলেন। ধর্মযুদ্ধে যেমন বহু সামন্তপ্রভুর মৃত্যু হয়েছিল, পাশাপাশি অনেকেই সর্বস্বান্ত হয়ে স্বদেশে ফিরে এসেছিলেন। এইভাবে সামন্ততন্ত্রের ভাঙন শুরু হয়।
[৫] সামাজিক জীবনে প্রভাব: ইউরোপের সমাজজীবনেও ব্রুসেডের প্রভাব ছিল অপরিসীম। ক্রুসেডের সূত্রে বহু সার্ফ বা ভূমিদাস মুক্তিলাভ করেছিল। ইউরোপে ব্যাবসাবাণিজ্য ও শিল্পের বিকাশের ফলে নতুন বণিক ও শ্রমিক শ্রেণির উত্থান ঘটে। সমাজে নারীর মর্যাদা বৃদ্ধি পায়।
[৬] প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মধ্যে সম্পর্কস্থাপন: ক্রুসেডের সর্বাপেক্ষা ইতিবাচক ফল হল প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মধ্যে সম্পর্কস্থাপন। ইউরোপীয়রা দীর্ঘকাল ইসলামের সংস্পর্শে থাকার ফলে তাদের মধ্যে ইসলামীয় জ্ঞান-বিজ্ঞান, যুদ্ধ ও কারিগরি কৌশল এবং ভৌগোলিক জ্ঞানের প্রসার ঘটে। তাই ঐতিহাসিক টয়েনবি বলেছেন-“ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধের ফলেই আধুনিক ইউরোপ জন্মলাভ করেছে।”
মূল্যায়ন: ক্রুসেডের বিভিন্ন ইতিবাচক ফলাফলের পাশাপাশি সর্বাপেক্ষা নেতিবাচক ফলাফল হল হাজার হাজার ধর্মযোদ্ধার মৃত্যু ও ব্যাপক ধ্বংসলীলা। এজন্যই ব্রিটিশ লেখক উইলসন ক্রুসেডগুলিকে মধ্যযুগের ধর্মান্ধতা ও নির্বুদ্ধিতার প্রতিফলন বলে ব্যাখ্যা করেছেন।
রচনাধর্মী | ঐতিহ্যের পরিবর্তন (পঞ্চম অধ্যায়) একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | WB Class 11 History Oitijher Parivartan Descriptive Question and Answer:
1. রেনেসাঁ যুগের শিল্পকলার ক্ষেত্রে লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির অবদান আলোচনা করো।
Ans: ভূমিকা: রেনেসাঁ যুগের একজন কালজয়ী শিল্পী এবং বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ছিলেন লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি। চিত্রকলা, স্থাপত্য, ভাস্কর্য, বিজ্ঞান, নৌবিদ্যা, শারীরতত্ত্ব ইত্যাদি ক্ষেত্রে তিনি অসাধারণ প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে গেছেন। তিনি সমগ্র বিশ্বকে উপহার দিয়ে গেছেন অবিস্মরণীয় কিছু শিল্পকীর্তি।
[১] চিত্রশিল্পে অবদান: মানুষের দুঃখ, আনন্দ, যন্ত্রণা, অভিমান, রোমান্টিকতা মুখমণ্ডলের ওপর যে প্রভাব ফেলে, তাকে চিত্রের সাহায্যে অনন্যভাবে ফুটিয়ে তোলেন লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি। মানবদেহের সঠিক গঠনের অনুপাত, অভিব্যক্তি ও পারিপার্শ্বিকের বিষয়ের ওপর গুরুত্বদান-তাঁর চিত্রের মূল বৈশিষ্ট্য।
দ্য লাস্ট সাপার (The Last Supper): ১৪৯৫ খ্রিস্টাব্দে মিলানের সান্তা মারিয়া দেল্লা গির্জার ভোজনশালার দেয়ালে তিনি এই ছবিটি আঁকেন। উচ্চ বা পরিণত রেনেসাঁ (High Renaissance) যুগের প্রথম ‘figure composition’ এটি। যিশু তাঁর শিষ্যদের সঙ্গে শেষ সায়মাশ-এর কাহিনির ওপর ভিত্তি করে আঁকা এই ছবিতে ১৩টি চরিত্রের অভিব্যক্তি অত্যন্ত নিখুঁতভাবে ফুটে উঠেছে এবং আলোছায়ার বিন্যাস ও শিল্পীর তুলির জাদুময়তায় জীবন্ত হয়ে উঠেছে।
ভার্জিন অফ দ্য রক্স: ১৪৮৫ খ্রিস্টাব্দে অঙ্কিত এই ছবিটিতে মাতা মেরি ও শিশু যিশু গুহার ভিতরে বসে আছে। মাতা মেরির স্নিগ্ধতা ও আশীর্বাদী ভঙ্গি ছবিটিকে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ পবিত্র মাতৃমূর্তিতে পরিণত করেছে।
মোনালিসা: ১৫০৩ খ্রিস্টাব্দে অঙ্কিত এই লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির সর্বাধিক চর্চিত ও কালজয়ী চিত্র হল ‘মোনালিসা’। জীবন্ত নারী শরীরের সমস্ত পরিপূর্ণতা নিয়ে, ঠোঁটে স্ফিত হাসিসহ এক রমণী যেন দর্শকদের দিকে তাকিয়ে আছেন। মোনালিসা চিত্রটিতে শিল্পীর অসামান্য প্রতিভার পরিচয় পাওয়া যায়।
[২] স্থাপত্যশিল্পে অবদান: কোনো বিশেষ সম্পূর্ণ স্থাপত্য দ্য ভিঞ্চির সৃষ্টি বলে অভিহিত করা যায় না, কারণ তিনি স্থপতি হিসেবে কাজ করার চেয়ে নকশা (design) ও পরিকল্পনা (planning) বা লুপ্রিন্ট করতে বেশি মনোযোগী ছিলেন। তিনি সমকালীন ইটালির বিভিন্ন শহরের প্রাসাদ, গির্জা প্রভৃতির নির্মাণে পরামর্শ ও নকশা রচনা করেছিলেন।
[৩] ভাস্কর্যে অবদান: ব্রোঞ্জের তৈরি অশ্বারোহী মূর্তি ‘ফ্রান্সেসকো ফোর্জা’ (Francesco Sforza) নির্মাণে লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি ৫ বছর ব্যস্ত থাকেন। কিন্তু তিনি এটি সমাপ্ত করেননি।
[৪] বিজ্ঞান জগতে অবদান: এক্ষেত্রে তাঁর সর্বাধিক অবদান হল অ্যানাটমি বা শারীরবিদ্যা চর্চা। মানব-মানবীর চিত্র অঙ্কন ও ভাস্কর্য সৃষ্টিতে বাস্তবতা ফুটিয়ে তোলার জন্য তিনি শারীরবিদ্যা চর্চার অনুশীলন করতেন। সামরিক প্রযুক্তির ক্ষেত্রেও তিনি গবেষণা করেছেন। পাখির উড়ান থেকে তিনি যন্ত্রচালিত আকাশযানের কল্পনা ও নকশা করেছিলেন।
মূল্যায়ন: মানবজীবন ও সভ্যতার এমন কম দিকই আছে, যেখানে লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির কোনো গবেষণা বা সৃষ্টি নেই। রেনেসাঁ যুগের অতুলনীয় সম্পদ এই মহান ব্যক্তিত্ব নিঃসন্দেহে সমকালীন সময়ের থেকে মানসিকতায় ও দূরদর্শীতায় অনেক গুণ এগিয়েছিলেন। পরবর্তীকালের স্থপতি, ভাস্কর, চিত্রকর, বিজ্ঞানীরা তাঁর দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন।
2. মধ্যযুগে ইউরোপে সামন্ততন্ত্রের মূল বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করো।
Ans: ভূমিকা: খ্রিস্টীয় নবম থেকে ত্রয়োদশ শতক পর্যন্ত পশ্চিম ইউরোপে যে আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল, তা সাধারণভাবে সামন্ততন্ত্র (Feudalism) নামে পরিচিত। তবে ইউরোপের সর্বত্র সামন্ততন্ত্রের উদ্ভব, বিকাশ বা প্রকৃতি একইরকম ছিল না। তা সত্ত্বেও বিভিন্ন দেশে প্রচলিত সামন্ততন্ত্রের মধ্যে কতকগুলি সাধারণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়। এগুলি হল-
[১] স্তরবিন্যস্ত প্রথা বা ব্যবস্থা: ইউরোপের সামন্ততান্ত্রিক কাঠামোয় একটি ক্রমোচ্চ স্তরবিন্যাস লক্ষ করা যায়। সামন্ততান্ত্রিক স্তরবিন্যাসের শীর্ষে ছিলেন রাজা এবং তার নীচে ছিলেন ডিউক, আর্ল, ব্যারন, নাইট প্রমুখ বিভিন্ন স্তরের ভূস্বামী বা সামন্তপ্রভুরা। আর সর্বনিম্ন স্তরে ছিলেন দরিদ্র কৃষক ও স্বাধীনতাহীন ভূমিদাস। সামন্ততন্ত্রের স্তরবিন্যস্ত কাঠামোটি দেখতে অনেকটা পিরামিডের মতো।
[২] কেন্দ্রীয় শক্তির দুর্বলতা: সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থায় ভূমিবণ্টনের মাধ্যমে ক্ষমতা বিকেন্দ্রীভূত হওয়ায় কেন্দ্রীয় শক্তি দুর্বল হয়ে পড়েছিল।
[৩] ভূস্বামী বা সামন্তপ্রভুদের আধিপত্য: সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থায় দেশে রাজার পরিবর্তে স্থানীয় ভূস্বামী বা সামন্তপ্রভুদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। অর্থাৎ রাজা রাষ্ট্রের সকল ক্ষমতার উৎস হলেও প্রকৃত শাসনক্ষমতা আঞ্চলিক সামন্তপ্রভুদের হাতেই কুক্ষিগত ছিল।
[৪] ম্যানর ব্যবস্থা: কার্ল মার্কস ম্যানর ব্যবস্থাকে সামন্ততন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য বলে উল্লেখ করেন। সামন্তপ্রভুর অধীনস্থ গ্রামগুলিকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠত ম্যানর ব্যবস্থা। ম্যানর বা খামারবাড়িতে উৎপাদিত শস্য ও পণ্যসামগ্রী ভোগদখল করতেন সামন্তপ্রভুরা। ম্যানর ছিল সামন্তপ্রভুদের অধীনস্ত কৃষক ও ভূমিদাসদের শোষণের মূলক্ষেত্র।
[৫] ফিফ ও ভ্যাসালেজ: সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল ফিফ ও ভ্যাসালেজ প্রথা। প্রত্যেক ঊর্ধ্বতন সামন্তপ্রভু তাঁর অধস্তন সামন্ত (ভ্যাসাল)-কে ফিফ (Fief) বা জমি দান করতেন। এর বিনিময়ে ভ্যাসালরা লর্ডের প্রতি আনুগত্য, সেবা ও বিশ্বস্ততার শপথগ্রহণ করতেন। সামন্তপ্রভু ও ভ্যাসালের মধ্যে আনুগত্য ও নিরাপত্তা রক্ষার এই ধরনকে ঐতিহাসিক মার্ক ব্লখ ‘ভ্যাসালেজ’ বলেছেন।
[৬] যোদ্ধা শ্রেণির অস্তিত্ব: সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থায় বীর যোদ্ধা শ্রেণি হিসেবে নাইট-দের অস্তিত্ব লক্ষ করা যায়। প্রভু ও তাঁর অধীনস্ত প্রজাদের সুরক্ষা এবং অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলা দমন করাই ছিল নাইটদের প্রধান দায়িত্ব।
[৭] আনুগত্যের সম্পর্ক: সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থার অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল ঊর্ধ্বতন প্রভুর কাছে অধস্তনের অকৃত্রিম আনুগত্য প্রদর্শন। এভাবে বিভিন্ন স্তরের সামন্তপ্রভু ও তাঁর অধস্তনদের মধ্যে আনুগত্যের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল।
[৮] কৃষক ও ভূমিদাস শোষণ: মার্ক ব্লখ-এর মতে, সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থায় প্রভুরা তাঁর অধীনস্ত কৃষক ও ভূমিদাসদের নানাভাবে শোষণ করতেন। মরিস ডব সহ অনেকেই ভূমিদাসত্ব-কে সামন্ততন্ত্রের মূলভিত্তি বলে উল্লেখ করেছেন।
মূল্যায়ন: সবশেষে বলা যায় যে, ভূমি বা জমি বণ্টনের ভিত্তিতেই পশ্চিম ইউরোপে সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থা বিকশিত হয়েছিল। এই ব্যবস্থায় কেন্দ্রীয় রাজশক্তি দুর্বল হয়ে পড়ে এবং ভূস্বামী বা সামন্তপ্রভুদের ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব বৃদ্ধি পায়।
3. সামন্ততন্ত্রের অবক্ষয় বা পতনের কারণগুলি উল্লেখ করো।
Ans: ভূমিকা: খ্রিস্টীয় নবম থেকে ত্রয়োদশ শতকের মধ্যে পশ্চিম ইউরোপে সামন্ততন্ত্রের উদ্ভব ও চূড়ান্ত বিকাশ ঘটেছিল। কিন্তু চতুর্দশ শতক থেকেই সামন্ততন্ত্রের অবক্ষয় ও পতনের লক্ষণগুলি ফুটে ওঠে।। মরিস ডব, পল সুইজি, হেনরি পিরেন, মাইকেল পোস্তান প্রমুখ ঐতিহাসিকরা সামন্ততন্ত্রের অবক্ষয় ও পতনের কারণগুলি বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা করেছেন।
[১] উৎপাদন পদ্ধতির দুর্বলতা: মরিস ডব সামন্ততন্ত্রের পতনের জন্য উৎপাদন ব্যবস্থার গতিহীনতাকে দায়ী করেছেন। তাঁর মতে, দশম শতক থেকে ইউরোপের জনসংখ্যা যেভাবে বেড়েছিল, ম্যানর গুলিতে উৎপাদন সেভাবে বাড়েনি। এমনকি বহু কৃষক ও ভূমিদাস প্রভুদের অত্যাচার ও অতিরিক্ত করের চাপে ম্যানর ছেড়ে পালিয়ে যেতে থাকে। ফলে উৎপাদন ব্যবস্থা ব্যাহত হয়, যা সামন্ততন্ত্রের পতনকে ডেকে আনে।
[২] ব্যাবসাবাণিজ্যের উন্নতি: ঐতিহাসিক হেনরি পিরেন, পল সুইজির মতে, একাদশ শতকের শেষ দিকে ইউরোপে ব্যাবসাবাণিজ্যের উন্নতির ফলে নতুন শহর গড়ে উঠতে থাকে। গ্রামের শোষিত ও নির্যাতিত বহু কৃষক ও ভূমিদাস নতুন জীবিকার সন্ধানে গ্রামের ম্যানর ছেড়ে শহরে পালিয়ে আসে। ফলে ম্যানরগুলিতে উৎপাদন ব্যাহত হয়। তা ছাড়া ম্যানরগুলি বাণিজ্যিক পণ্যের চাহিদাও মেটাতে ব্যর্থ হয়। অর্থাৎ ব্যাবসাবাণিজ্যের উন্নতি সামন্ততন্ত্রের পতনকে ত্বরান্বিত করে।
[৩] জনসংখ্যা হ্রাস: ঐতিহাসিক পোস্তান, লাদুরী প্রমুখের মতে, চতুর্দশ শতক থেকেই ভয়াবহ প্লেগ, দুর্ভিক্ষ, মহামারির কারণে ইউরোপের জনসংখ্যা ভীষণভাবে হ্রাস পায়। কৃষকের অভাবে কৃষি উৎপাদন ভীষণভাবে ব্যাহত হলে সামন্ততন্ত্রের কৃষি-অর্থনীতি ভেঙে পড়ে।
[৪] কৃষক ও ভূমিদাস বিদ্রোহ: সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থায় কৃষকরা ছিল শোষিতশ্রেণি। করের চাপে তাদের অনেক সময় অর্ধাহারে, অনাহারে দিন কাটাতে হত। এর পাশাপাশি প্রভুরা অনেক সময় মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনও চালাত। ফলে অনেক সময়ই তারা প্রভুদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করত। এই বিদ্রোহে শামিল হত বহু কারিগর ও দিনমজুরও।
[৫] ভূমিদাস বিদ্রোহ: সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থায় পরাধীন ভূমিদাসদের জীবন ছিল সবচেয়ে দুর্বিষহ। প্রভুরা তাদের ওপর শোষণ ও অমানুষিক অত্যাচার চালাত। তাই তারা বাধ্য হয়ে প্রভুর জমি ছেড়ে পালাত, নতুবা বিদ্রোহে শামিল হত। ভূমিদাস বিদ্রোহগুলি ইউরোপে সামন্ততন্ত্রের ভিতকে আলগা করে দিয়েছিল।
মূল্যায়ন: সবশেষে বলা যায় যে, পশ্চিম ইউরোপে সামন্ততন্ত্রের পতনের জন্য কোনো একটিমাত্র কারণ দায়ী ছিল না। সামন্ততান্ত্রিক উৎপাদন ব্যবস্থার দুর্বলতা, ব্যাবসাবাণিজ্যের প্রসার, নগরের বিকাশ, জনসংখ্যার হ্রাসবৃদ্ধি, কৃষক ও ভূমিদাস বিদ্রোহ প্রভৃতি নানা কারণের সমন্বয়ে ইউরোপে সামন্ততন্ত্রের পতন ঘটেছিল।
4. রেনেসাঁ বা নবজাগরণ বলতে কী বোঝ?
Ans: ভূমিকা: ‘রেনেসাঁ’ (Renaissance)-র বাংলা প্রতিশব্দ হল ‘নবজাগরণ’। পঞ্চদশ-ষোড়শ শতকে ইউরোপে সাহিত্য, শিল্প, ধর্ম-সংস্কৃতি জ্ঞান-বিজ্ঞান ও জীবনবোধের ক্ষেত্রে যে অভাবনীয় পরিবর্তন ও অগ্রগতি ঘটেছিল, তা সাধারণভাবে ‘রেনেসাঁ’ বা নবজাগরণ নামে পরিচিত। ইটালিতেই প্রথম রেনেসাঁ বা নবজাগরণের সূত্রপাত ঘটে।
[১] সংজ্ঞা ও অর্থ: রেনেসাঁ বা নবজাগরণ শব্দের আক্ষরিক অর্থ হল ‘পুনর্জন্ম’ বা ‘পুনর্জাগরণ’। ফরাসি ঐতিহাসিক মিশলে উনিশ শতকে তাঁর ফ্রান্সের ইতিহাস গ্রন্থে সর্বপ্রথম ‘রেনেসাঁ’ শব্দটি ব্যবহার করেন। পরবর্তীকালে জ্যাকব বুখার্ড এর বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেন। পঞ্চদশ-ষোড়শ শতকে প্রাচীন গ্রিক ও লাতিন জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার পুনরুজ্জীবনের ফলে ইউরোপে সাহিত্য, শিল্প, সমাজ ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে যে বৈপ্লবিক রূপান্তর ঘটে, তা রেনেসাঁ বা নবজাগরণ নামে পরিচিত।
[২] প্রেক্ষাপট: ১৪৫৩ খ্রিস্টাব্দে অটোমান তুর্কিদের দ্বারা কনস্ট্যান্টিনোপলের পতন ঘটলে সেখানকার একদল গ্রিক ও রোমান পণ্ডিত প্রাচীন পুথিপত্র সমেত ইটালির ফ্লোরেন্সসহ বিভিন্ন নগরে আশ্রয় নেন। তাঁরাই প্রাচীন বা ধ্রুপদি গ্রিক ও লাতিন জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার পুনরুজ্জীবন ঘটান। ফলে ইউরোপে মধ্যযুগের ধর্মান্ধতা ও কুসংস্কারের পরিবর্তে নতুন করে জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার সূত্রপাত ঘটে। এইভাবে ইটালি তথা ইউরোপে নবজাগরণের সূচনা হয়।
[ ৩] মধ্যযুগ থেকে আধুনিক যুগে উত্তরণ: পঞ্চদশ শতকের রেনেসাঁর মাধ্যমে ইউরোপের মধ্যযুগ থেকে আধুনিক যুগে উত্তরণ ঘটে। রেনেসাঁর ফলে ইউরোপে মধ্যযুগের বৈশিষ্ট্যগুলি বিলুপ্ত হতে থাকে, অপরদিকে আধুনিক যুগের বৈশিষ্ট্যসমূহ সুস্পষ্ট রূপ লাভ করতে থাকে। মধ্যযুগের ধর্মান্ধতা, সামাজিক প্রথা, কূপমণ্ডুকতা, রক্ষণশীলতা ইত্যাদির বদলে বিবেক, যুক্তিবাদ, স্বচ্ছদৃষ্টি, উদারতা ইত্যাদির আবহ তৈরি হয়।
মূল্যায়ন: সবশেষে বলা যায় যে, ইউরোপের মধ্যযুগ ছিল মূলত ধর্মনির্ভর। মধ্যযুগে পোপ ধর্মযাজকদের ধর্মান্ধ নীতির ফলে জ্ঞান-বিজ্ঞান জগতের বিকাশ রুদ্ধ হয়েছিল। চতুর্দশ শতক থেকেই বিভিন্ন মনীষীগণ তাঁদের প্রগতিশীল চিন্তাধারা সূচনা করেছিলেন। পঞ্চদশ-ষোড়শ শতকে ইউরোপে নতুন করে জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার সূত্রপাত রেনেসাঁ বা নবজাগরণের সূচনা করে। রেনেসাঁ মানুষের মধ্যে মানবতাবাদ ও যুক্তিবাদের বিকাশ ঘটায়। এইভাবে রেনেসাঁর হাত ধরে ইউরোপে এক নতুন যুগের সূত্রপাত ঘটে।
5. ইটালীয় রেনেসাঁ বা নবজাগরণের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো।
Ans: ভূমিকা: খ্রিস্টীয় পঞ্চদশ-ষোড়শ শতকে ইটালি তথা ইউরোপে প্রথম রেনেসাঁ বা নবজাগরণের সূচনা হয়। রেনেসাঁ মধ্যযুগের কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাসের পরিবর্তে যুক্তিবাদ ও আধুনিক চিন্তার বিকাশ ঘটায়। এই নবজাগরণ বা রেনেসাঁকে প্রাচীন জ্ঞান-বিজ্ঞানের পুনরুদ্ধারের সঙ্গে নতুন আবিষ্কারের যুগ হিসেবেও গণ্য করা হয়।
[১] যুক্তিবাদের প্রতিষ্ঠা: মধ্যযুগে ইউরোপের সব কিছুই ছিল ধর্মভিত্তিক। গির্জা, পোপ ও ধর্মযাজকরাই ছিলেন সমাজ ও সভ্যতার ভাগ্যনিয়ন্তা। রেনেসাঁসের ফলে এই অন্ধবিশ্বাস, কুসংস্কার ও আনুগত্য ক্রমশই অবলুপ্ত হতে থাকে। তার বদলে যুক্তিবাদের বিকাশ ঘটে।
[২] মানবতাবাদের প্রসার: ‘নবজাগরণের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল মানবতাবাদ (humanism) | মানবতাবাদের মূলকথা হল ঈশ্বরকেন্দ্রিক ভাবনার পরিবর্তে মানবকেন্দ্রিক ভাবনার বিকাশ। মানবকেন্দ্রিক এই মতবাদের ধারক ও বাহকগণ মধ্যযুগীয় পরকাল ও পাপপুণ্যের হিসাবের -পরিবর্তে ইহজীবনে মানুষের পার্থিব সুখস্বাচ্ছন্দ্য প্রতিষ্ঠার ওপর জোর দেন। মানবতাবাদে মানুষের জয়গান করা হয়েছে। প্রতিটি মানুষের পরিপূর্ণ বিকাশ, তার কৃতিত্ব এবং ক্ষমতার সঠিক মূল্যায়ন এবং তার চাওয়াপাওয়ার মূল্য দেওয়ার মানসিকতা এ যুগে প্রতিষ্ঠিত হয়।
[৩] ব্যক্তিস্বাধীনতার স্বীকৃতি: মধ্যযুগে মানুষের ধর্মীয় স্বাধীনতা ও ব্যক্তিস্বাধীনতা বলে কিছু ছিল না। পোপতন্ত্র যেভাবে মানুষের ওপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছিল, এ যুগে ধীরে ধীরে তার অবসান ঘটতে থাকে। যুক্তিবাদী ও মানবতাবাদীদের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে মানুষ আত্মনিগ্রহের বদলে আত্মমর্যাদার গুরুত্ব বুঝতে শেখে। ফলে মানুষের মধ্যে ধর্ম ও ব্যক্তিস্বাধীনতার চেতনা জাগ্রত হয়।
[৪] অনুসন্ধিৎসা: রেনেসাঁ মানুষের মধ্যে যুক্তিবাদ ও জ্ঞান-বিজ্ঞান চেতনার প্রসার ঘটায়। ফলে মানুষের মনে অজানাকে জানার ও অচেনাকে চেনার আগ্রহ সৃষ্টি হয়। সাহিত্য, দর্শন, ইতিহাস, ধর্ম-সব বিষয়েই নতুন জ্ঞানলাভের প্রচেষ্টা শুরু হয়। এই প্রচেষ্টা সত্যকে উন্মুক্ত করে এবং চার্চ, পোপ ও যাজক সম্প্রদায়ের কর্তৃত্বের প্রতি মানুষের মনে নানা প্রশ্ন জাগতে থাকে।
[৫] বৈজ্ঞানিক চেতনার বিকাশ: রেনেসাঁ মানুষের যুক্তিবাদী মনকে ধর্মের কঠোর বেড়াজাল থেকে মুক্ত করে বিজ্ঞান চেতনায় উদ্বুদ্ধ করেছিল। মহাবিশ্ব ও ধর্ম সম্পর্কিত নানা প্রাচীন কুসংস্কারাচ্ছন্ন ধ্যানধারণার বদলে এসময় প্রমাণসাপেক্ষ বিজ্ঞানচর্চার সূত্রপাত ঘটে। এইসকল বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার মানবসভ্যতার অগ্রগতির সূচনা করে।
[৬] দীর্ঘ বিবর্তনের ফলশ্রুতি: অনেক ঐতিহাসিকের মতে, নবজাগরণ কোনো আকস্মিক ঘটনা নয়। এটি ছিল দীর্ঘ বিবর্তনের ফলশ্রুতি। কনস্ট্যান্টিনোপলে পণ্ডিতগণ প্রাচীন গ্রিক-রোমান সাহিত্য, সংস্কৃতি, দর্শনের চর্চা অব্যাহত রেখেছিলেন। দ্বাদশ শতক থেকে ইউরোপের নানা স্থানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হতে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা ইটালি তথা ইউরোপে নবচেতনার সৃষ্টি করে। এসবেরই ধারাবাহিক ফলশ্রুতি হল নবজাগরণ।
[৭] সাংস্কৃতিক পরিবর্তন: মধ্যযুগের ধর্মনির্ভর সাহিত্য ও শিল্প চর্চার পরিবর্তে নতুন ধর্মনিরপেক্ষ সংস্কৃতিচর্চা রেনেসাঁ যুগের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। এ যুগে ধর্মের প্রভাবমুক্ত মানবতাবাদী সাহিত্য ও শিল্পচর্চা সার্বিক সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলের পরিবর্তন ঘটায় যা, আধুনিকতার দিনির্দেশ করে।
মূল্যায়ন: এইভাবে নবজাগরণ মানুষের জীবনচর্চার ক্ষেত্রে এক অভাবনীয় পরিবর্তন নিয়ে আসে। অন্ধকারাচ্ছন্ন মধ্যযুগ থেকে নতুন যুগের সূচনা করে।
6. ধর্মসংস্কার আন্দোলনে মার্টিন লুথারের অবদান আলোচনা করো।
Ans: ভূমিকা: ইউরোপে ধর্মসংস্কার আন্দোলনের পথিকৃৎ ও প্রাণপুরুষ ছিলেন মার্টিন লুথার। তিনি জার্মানির এক সাধারণ কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। পরবর্তীকালে জার্মানির উইটেনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ধর্মতত্ত্বের অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত হন। তিনি ক্যাথোলিক চার্চ তথা পোপ ও যাজকদের অনাচার ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ শুরু করেন। ১৫১০ খ্রিস্টাব্দে রোম ভ্রমণ করতে গিয়ে তিনি পোপ ও কার্ডিনালদের দুর্নীতি দেখে হতাশ হন। জার্মানিতে ফিরে এসে রোমান চার্চের অন্যায়ের সমালোচনা ও তীব্র প্রতিবাদ শুরু করেন।
[১] ইনডালজেন্স বিক্রির প্রতিবাদ: রোমে সেন্ট পিটার্স গির্জা সংস্কারের কাজ শুরু হলে প্রয়োজনীয় অর্থ জোগাড়ের উদ্দেশ্যে পোপ দশম লিও-র প্রতিনিধি টেটজোল জার্মানিতে আসেন। তিনি প্রচার করেন পোপের স্বাক্ষরিত ‘ইনডালজেন্স’ বা ক্ষমাপত্র কিনলে মানুষ সব পাপ থেকে মুক্ত হবে। এই মিথ্যা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে মার্টিন লুথার রুখে দাঁড়ান।
[২] ৯৫ থিসিস: মার্টিন লুথার প্রকাশ্যে ঘোষণা করেন যে, ইনডালজেন্স বা মার্জনাপত্র বিক্রি আসলে পোপের মানুষ ঠকানোর একটা কৌশলমাত্র। তিনি বলেন, অনুতপ্ত চিত্তে ঈশ্বরের কাছে ক্ষমাপ্রার্থনার মাধ্যমেই পাপমুক্ত হওয়া যায়। তার জন্য চার্চের দ্বারস্থ হওয়া কিংবা মার্জনাপত্র ক্রয়ের কোনো প্রয়োজন নেই। তিনি ১৫১৭ খ্রিস্টাব্দে ধর্মের নামে চার্চের অনাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ স্বরূপ জার্মানির উইটেনবার্গ চার্চের দরজায় একটি অভিযোগপত্র টাঙিয়ে দেন। এর মধ্যে ক্যাথোলিক চার্চবিরোধী ৯৫টি অভিযোগ ছিল। এটি লুথারের ৯৫ থিসিস নামে পরিচিত। লুথারের এই ৯৫ দফা অভিযোগ বা দাবিগুলি ক্যাথোলিক ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করে।
[৩] গ্রন্থরচনা: মার্টিন লুথার বিভিন্ন গ্রন্থরচনার মাধ্যমে পোপের সর্বময় প্রাধান্য ও ক্যাথোলিক চার্চের দুর্নীতির তীব্র বিরোধিতা করেন। এগুলির মধ্যে সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য হল- ‘On the Babylonian Captivity of the Church’ এবং ‘On the Freedom of a Christian’
[৪] মতবাদ: মার্টিন লুথার ক্যাথোলিক ধর্মের অনাচার ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ করেন। তিনি বলেন, ঈশ্বর ও ভক্তের মধ্যে সম্পর্ক- স্থাপনের ক্ষেত্রে পোপ-যাজকদের কোনো ভূমিকাই নেই। তাঁর মতবাদ ‘প্রোটেস্ট্যান্টবাদ’ নামে পরিচিত।
[৫] ওয়ার্মস-এর ধর্মসভা: প্রচলিত ধর্মীয় ব্যবস্থার বিরুদ্ধে লুথারের প্রতিবাদের ফলে রুদ্ধ পোপ দশম চার্লস লুথারকে ধর্মচ্যুত বলে ঘোষণা করেন। ‘ওয়ার্মস’ নামক ধর্মসভায় তাঁর বিচারের ব্যবস্থা হয়। এই সভায় লুথারকে তাঁর ‘ধর্মবিরোধী’ বক্তব্য প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন পোপ। কিন্তু লুথার তা অস্বীকার করলে পোপের নির্দেশে সম্রাট পঞ্চম চার্লস লুথারের প্রাণদণ্ডের আদেশ দেন। কিন্তু তাঁর বিপুল জনসমর্থনের ফলে সে আদেশ কার্যকর করা সম্ভব হয়নি।
[৬] বিদ্রোহ: লুথারের সমর্থক স্যাক্সনির শাসক ফ্রেডরিক লুথারকে উদ্ধার করে তাঁর অঞ্চলে আশ্রয় দেন। সাধারণ মানুষ বিশেষ করে কৃষক শ্রেণি লুথারের সমর্থনে বিদ্রোহ শুরু করে। লুথার ও পোপের দ্বন্দুের প্রশ্নে জার্মানিতে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। এর মধ্যেই ১৫৪৬ খ্রিস্টাব্দের ১৮ ফেব্রুয়ারি মার্টিন লুথার মৃত্যুবরণ করেন।
মূল্যায়ন: শেষপর্যন্ত ১৫৫৫ খ্রিস্টাব্দে অগসবার্গের সন্ধি-র দ্বারা জার্মানির গৃহযুদ্ধের অবসান ঘটে। এই সন্ধি দ্বারা ‘রাজার ধর্মই প্রজার ধর্ম’ বলে স্বীকার করে নেওয়া হয়। লুথারের মতবাদে পৃথক চার্চ প্রতিষ্ঠিত হয়, যেগুলি প্রতিবাদী বা প্রোটেস্ট্যান্ট চার্চ নামে পরিচিত হয়। এইভাবে খ্রিস্টান জগৎ ক্যাথোলিক ও প্রোটেস্ট্যান্ট এই দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। লুথার প্রবর্তিত খ্রিস্টান মতবাদ ‘প্রোটেস্ট্যান্টবাদ’ নামে পরিচিত হয় এবং তাঁর অনুগামীরা ‘প্রোটেস্ট্যান্ট’ নামে পরিচিত হন।
7. ইউরোপে ধর্মসংস্কার আন্দোলনে জন ক্যালভিনের অবদান আলোচনা করো।
Ans: ভূমিকা: মার্টিন লুথারের ক্যাথোলিক চার্চ ও পোপতন্ত্র বিরোধী ধর্মসংস্কার আন্দোলন জার্মানির সীমানা ছাড়িয়ে ইউরোপের অন্যান্য দেশেও ছড়িয়ে পড়ে। সুইজারল্যান্ডে এই ধর্মসংস্কার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন জন ক্যালভিন। তিনি ছিলেন মার্টিন লুথারের প্রোটেস্ট্যান্ট মতবাদের অন্যতম সমর্থক ও প্রচারক। তাঁর নেতৃত্বেই সুইজারল্যান্ডে ধর্মসংস্কার আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করে।
পূর্ব পরিচয়: জন ক্যালভিন জন্মসূত্রে ছিলেন একজন ফরাসি। ১৫০৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি ফ্রান্সে জন্মগ্রহণ করেন। পরবর্তীকালে তিনি লুথারের প্রোটেস্ট্যান্টবাদের প্রতি আকৃষ্ট হন এবং পোপতন্ত্রের দুর্নীতির বিরোধিতা করতে থাকেন। এরপর ফ্রান্সে প্রোটেস্ট্যান্টবাদীদের ওপর অত্যাচার শুরু হলে তিনি সুইজারল্যান্ডে চলে আসেন।
[১] গ্রন্থরচনা: ক্যাথোলিক খ্রিস্টান ধর্মের কলুষতা দূর করতে এবং মানুষকে সচেতন করতে ক্যালভিন ‘The Institutes of the Christian Religion’ নামে একটি গ্রন্থরচনা করেন। এর মাধ্যমে তিনি প্রচার করেন যে, ঈশ্বর সর্বশক্তিমান, তিনিই মানবজীবনকে পরিচালনা করেন। পোপ, চার্চ, যাজক কেউ তা পরিবর্তন করতে পারে না।
[২] ধর্মীয় পবিত্রতা প্রতিষ্ঠা: কঠোর যুক্তিবাদী, সরল ও অনাড়ম্বর জীবনাদর্শে বিশ্বাসী ক্যালভিন, চার্চ ও যাজকতন্ত্রের অনাচারের বিরোধিতা করে খ্রিস্টান ধর্মকে আদি পবিত্রতার যুগে ফিরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে, মানুষের ব্যক্তিজীবন পবিত্র না-হলে সমাজজীবন পবিত্র হবে না। এইজন্য তিনি তাঁর অনুগামীদের সৎ ও পবিত্র জীবনযাপনের পরামর্শ দেন।
[৩] বাইবেলের গুরুত্ব প্রচার: জন ক্যালভিনের মতানুযায়ী, বাইবেল হল সমাজ ও রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন। রাষ্ট্র হল বাইবেলের অধীন। আরও কয়েকজনের সহযোগিতায় ক্যালভিন Ordinances Ecclesiestiques নামে একটি সংবিধান রচনা করে সাধারণ মানুষ, যাজক ও রাষ্ট্রের আচরণ ও কর্তব্য সুনির্দিষ্ট করে দেন।
মূল্যায়ন: ক্যালভিনের নৈতিক আচরণ ও গণতান্ত্রিক আদর্শের শিক্ষা, তাঁর মতবাদকে সকলের মধ্যে আকর্ষণীয় করে তোলে। সুইজারল্যান্ড ছাড়িয়ে ইংল্যান্ড, হল্যান্ড, স্কটল্যান্ড ও ফ্রান্সে ক্যালভিনবাদ ছড়িয়ে পড়ে। ক্যালভিনবাদের এই সমর্থকরা ফ্রান্সে হিউগেনটস, ইংল্যান্ডে পিউরিটান এবং স্কটল্যান্ডে প্রেসবিটেরিয়ান নামে পরিচিত। ঐতিহাসিক ফিশারের মতে, “প্রোটেস্ট্যান্ট ধর্মসম্প্রদায়গুলির মধ্যে ক্যালভিনবাদের বিস্তার ও প্রভাব ছিল সর্বাধিক গভীর।”
8. ভক্তিবাদ বলতে কী বোঝ? অথবা, ভক্তিবাদ সম্পর্কে টীকা লেখো।
Ans: ভূমিকা: ‘ভজ’ ধাতু থেকে ‘ভক্তি’ শব্দের উৎপত্তি। প্রাচীন হিন্দু ধর্মশাস্ত্রে ভক্তিবাদী আদর্শের উল্লেখ পাওয়া যায়। এই ‘ভক্তি’ আদর্শের ওপর ভিত্তি করেই মধ্যযুগে ভারতে হিন্দুধর্মের নানা কুসংস্কার ও রক্ষণশীলতার বিরুদ্ধে যে সংস্কার আন্দোলন হয়েছিল, তা সাধারণভাবে ‘ভক্তিবাদ’ বা ভক্তি আন্দোলন নামে পরিচিত।
[১] উদ্ভব: ভক্তিবাদের উদ্ভব সম্পর্কে নানা মতবাদ আছে। ঐতিহাসিক গ্রিয়ারসন, ওয়েবার প্রমুখরা মনে করেন, খ্রিস্টধর্ম থেকেই ভক্তিবাদী আদর্শের উদ্ভব ঘটেছে। অন্যদিকে অধ্যাপক ইউসুফ হুসেন, ড. কুরেশি প্রমুখের মতে, ইসলামের সাম্যবাদ ও একেশ্বরবাদী আদর্শ থেকেই ভক্তিবাদের জন্ম। তবে অধিকাংশ পণ্ডিতরা মনে করেন বেদ, উপনিষদ প্রভৃতি প্রাচীন ধর্মশাস্ত্রগুলি হল ভক্তিবাদী আদর্শের মূল উৎস। সপ্তম থেকে দ্বাদশ শতকের মধ্যে দক্ষিণ ভারতের শৈব ‘নায়নার’ এবং বৈঘ্নব ‘আলওয়ার’ সম্প্রদায় ভক্তিবাদী আন্দোলনের সূচনা করেন।
[২] মূলকথা: ভক্তিবাদের মূলকথা হল আত্মার সঙ্গে পরমাত্মার মিলন অর্থাৎ ভক্তের সঙ্গে ভগবানের মিলন। ভক্তিবাদী সাধকদের মতে, একমাত্র প্রেম ও ভক্তির মাধ্যমেই ঈশ্বরের সান্নিধ্যলাভ সম্ভব হয়। তাঁরা মনে করতেন ঈশ্বর এক ও অদ্বিতীয়।
[৩] ভক্তিবাদের প্রবক্তাগণ: ভক্তিবাদী প্রবক্তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন রামানুজ, রামানন্দ, কবীর, নানক, শ্রীচৈতন্যদেব, মীরাবাঈ প্রমুখ। এঁদের অনেকেই ছিলেন সমাজের নিম্নবর্ণের মানুষ। ভক্তিবাদী সাধকদের মত ও আদর্শের ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের উদ্ভব ঘটেছিল।
মূল্যায়ন: সবশেষে বলা যায় যে, মধ্যযুগে ভারতের ভক্তিবাদী আন্দোলনের মূল লক্ষ্য ছিল হিন্দুধর্মের নানা ধর্মীয় কুসংস্কার ও সামাজিক ভেদাভেদ দূর করা। ভক্তিবাদ হিন্দুধর্মের জাতিভেদের কঠোরতা হ্রাস এবং হিন্দুসমাজের ভাঙনকে অনেকটাই রোধ করতে পেরেছিল বলা যায়। তা ছাড়া হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের বাতাবরণ রচনায় ভক্তিবাদী সাধকদের ভূমিকাও ছিল অনস্বীকার্য।
9. ভক্তিবাদের মূল আদর্শগুলি কী ছিল? অথবা, ভক্তিবাদের মূলকথা বা নীতিগুলি উল্লেখ করো।
Ans: ভূমিকা: ভক্তি হল একটি আদর্শ। বেদ, উপনিষদ, পুরাণ প্রভৃতি প্রাচীন হিন্দু ধর্মশাস্ত্রসমূহে ভক্তিবাদী আদর্শের উল্লেখ পাওয়া যায়। এই ভক্তির আদর্শের ওপর ভিত্তি করে মধ্যযুগে ভারতে হিন্দুধর্মে জাতপাত, কুসংস্কার ও রক্ষণশীলতার বিরুদ্ধে ভক্তিবাদ বা এক ধর্ম ও সমাজসংস্কার আন্দোলন বিকশিত হয়। এটি সাধারণভাবে ভক্তিবাদ বা ভক্তিবাদী আন্দোলন নামে পরিচিত।
ভক্তিবাদের মূলনীতি বা আদর্শ:
[১] মূলকথা: ‘ভক্তি’ শব্দটির উৎপত্তি ‘ভজ’ ধাতু থেকে। ‘ভক্তি’ বলতে বোঝায় প্রেম ও ভক্তির মাধ্যমে ঈশ্বরের কাছে ভক্তের সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণ। এই ভক্তি আদর্শের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে ভক্তিবাদ। আক্ষরিক অর্থে ভক্তিবাদের মূলকথা হল, ভক্তের সঙ্গে ভগবানের অতীন্দ্রিয় মিলন।
[২] মূল আদর্শ: ভক্তিবাদ বিকশিত হয়েছিল ঈশ্বরের প্রতি প্রেম ও ভক্তি আদর্শের ওপর ভিত্তি করে। ভক্তিবাদীদের মূল আদর্শগুলি হল-
(i) প্রেম ও ভক্তি: ভক্তিবাদীরা বিশ্বাস করতেন একমাত্র প্রেম, ভক্তি ও আত্মনিবেদনের মাধ্যমে ঈশ্বর লাভ সম্ভব।
(ii) একেশ্বরবাদ: ভক্তিবাদী সাধকরা মনে করতেন ঈশ্বর এক ও নিরাকার। অর্থাৎ তাঁরা একেশ্বরবাদে বিশ্বাসী ছিলেন।
(iii) জাতিভেদ বিরোধিতা: ভক্তিবাদী সাধকরা ছিলেন জাতিভেদ বা বর্ণভেদ প্রথার ঘোরবিরোধী। কবীর, নানক, শ্রীচৈতন্যদেব প্রমুখ ভক্তিবাদী সাধকরা জাতি বা বর্ণভেদ প্রথার তীব্র বিরোধিতা করে তাঁদের ভক্তিবাদী আদর্শ প্রচার করেছিলেন। ভক্তিবাদী সাধকদের অনেকেই ছিলেন নিম্নবর্ণের মানুষ।
(iv) মূর্তিপূজার বিরোধিতা: ভক্তিবাদী সাধকরা ছিলেন মূর্তিপূজার ঘোরবিরোধী। ভক্তিবাদী সাধক নামদেব বলতেন- “তুর্কিরা পাথরের দেবদেবীকে সমুদ্রে নিক্ষেপ করলেও তাদের আর্তনাদ শোনা যায়নি।”
মূল্যায়ন: সবশেষে বলা যায় যে, ভক্তিবাদের মূল বক্তব্যই হল ঈশ্বরের প্রতি প্রেম ও ভক্তি নিবেদনের মাধ্যমেই তাঁর সান্নিধ্য বা করুণালাভ সম্ভব। ভক্তিবাদীরা তাই ধর্মের বাহ্যিক আচার-অনুষ্ঠানের ঘোরবিরোধী ছিলেন।
10. ভক্তিবাদী আন্দোলনে কবীরের অবদান লেখো।
Ans: ভূমিকা: ভারতের মধ্যযুগে ভক্তিবাদী আন্দোলনের বিকাশ ঘটে। এই ভক্তিবাদী আন্দোলনের অন্যতম প্রবক্তা হলেন কবীর।
[১] পূর্ব পরিচয়: কবীরের জন্মগত বৃত্তান্ত সম্পর্কে নিশ্চিতভাবে কিছু জানা যায়নি। কথিত আছে, জন্মসূত্রে তিনি ছিলেন একজন ব্রাহ্মণ সন্তান। কিন্তু পালিত হন এক মুসলমান জোলা বা তাঁতি পরিবারে। তিনি প্রথম জীবনে রামানন্দের ভক্ত ছিলেন। তিনি গুরু রামানন্দের কাছে প্রেম ও ভক্তিমন্ত্রে দীক্ষিত হওয়ার পর ভক্তিবাদী আদর্শ প্রচার করেন।
[২] মতাদর্শ: কবীরের মতাদর্শের মূলভিত্তিই ছিল প্রেম ও ভক্তি। তিনি মনে করতেন নিছক বাহ্যিক আচার-অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ঈশ্বরকে পাওয়া যায় না। এর জন্য চাই আন্তরিক ভক্তি ও প্রেম। তিনি বলতেন ঈশ্বর এক এবং অদ্বিতীয়। তাঁর মতে, আল্লাহ ও রাম একই ঈশ্বরের পৃথক নাম। তিনি ছিলেন মূর্তিপূজার ঘোরবিরোধী। তিনি বলেছেন, “পাথরের মূর্তির মধ্যেই যদি থাকে ঈশ্বরের অধিষ্ঠান, তাহলে আমি সুবিশাল পর্বতকেই দেবতা হিসেবে পূজা করার পক্ষপাতী।” তিনি ধর্মের বাহ্যিক আচার-অনুষ্ঠানের বিরোধিতা করে বলতেন, “ঈশ্বর মসজিদে নেই, মন্দিরেও নেই, কাবাতেও অনুষ্ঠা নেই, কৈলাসেও নেই; আচারেও নেই, অনুষ্ঠানেও নেই…।” তাঁর মতে, ঈশ্বরের অধিষ্ঠান মানুষের হৃদয়ের মধ্যে। তিনি জাতিভেদ প্রথার ঘোরবিরোধী ছিলেন।
অবদান: মধ্যযুগে ভারতের একজন অন্যতম ভক্তিবাদী সাধক হলেন কবীর। তাঁর ভক্তিবাদের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে অসংখ্য হিন্দু-মুসলমান তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। তাঁর শিষ্যরা কবীরপন্থী নামে পরিচিত। তাঁর বাণী ও উপদেশগুলি হিন্দি ভাষায় দু-লাইনের ছড়া বা শ্লোক আকারে লিখিত যা, দোহা নামে পরিচিত। এগুলি হিন্দি সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ। ঐতিহাসিক তাঁরাচাঁদের মতে, “সর্বধর্ম-বর্ণ-সমন্বয়ী প্রেমের ধর্মপ্রচার করাই ছিল কবীরের লক্ষ্য।”
11. ভক্তি আন্দোলনে নানকের অবদান লেখো।
Ans: ভূমিকা: মধ্যযুগে ভারতে ভক্তিবাদী আন্দোলনের একজন অন্যতম প্রবক্তা হলেন গুরু নানক। তিনি ছিলেন পঞ্চদশ-ষোড়শ শতকে উত্তর ভারতের ভক্তি আন্দোলনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রচারক।
[১] পূর্ব পরিচয়: ১৪৬৯ খ্রিস্টাব্দে নানক পাঞ্জাবের তালবন্দি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাল্যকাল থেকেই ঈশ্বর ভাবনা তাঁর মনকে আচ্ছন্ন করে রাখত। অল্প বয়সেই তিনি সংসার ত্যাগ করে ভারতের নানা স্থানে পরিভ্রমণ করেন। কথিত আছে, তিনি সত্যানুসন্ধানের জন্য সুদূর সিংহল এমনকি মক্কা ও মদিনাতেও ভ্রমণ করেন। এরপর তিনি সত্যানুসন্ধান বা দিব্যজ্ঞান লাভ করেন এবং উত্তর-পশ্চিম ভারতে ভক্তিবাদ প্রচার করেন।
[২] মতাদর্শ: কবীরের মতোই নানকও ছিলেন একেশ্বরবাদী এবং মূর্তিপূজার ঘোরবিরোধী। তিনি সকল ধর্মের বাহ্যিক আচার-অনুষ্ঠানের তীব্র বিরোধিতা করেন। তিনি বলতেন যে, জাতিধর্মবর্ণনির্বিশেষে যে কেউ প্রেম ও ভক্তি সহকারে ঈশ্বরের নামজপ করলে মোক্ষ বা মুক্তি লাভকরবে। তিনি বলতেন- “মানুষ পুরস্কার ও তিরস্কার দুই-ই লাভ করে ঈশ্বরের ইচ্ছানুযায়ী।” তাঁর মতাদর্শের তিনটি প্রধান সূত্র হল-এক ঈশ্বর, গুরু এবং নামজপ। তিনি বলতেন যে, নাম অর্থাৎ ‘ঈশ্বরের গুণকীর্তন’, দান অর্থাৎ ‘জীবে সেবা’, ও স্নান অর্থাৎ দেহের পরিচ্ছন্নতা বা শুদ্ধির মাধ্যমেই মানুষের আধ্যাত্মিক উন্নতি সম্ভব। তিনি মনে করতেন ভক্তি সহযোগে ঈশ্বরের নামজপ করলে গার্হস্থ্য জীবনেও মানুষের মোক্ষ বা মুক্তিলাভ সম্ভব।
[৩] জাতিভেদ বিরোধিতা: নানক অন্যান্য ভক্তিবাদীদের ন্যায় জাতিভেদ প্রথার ঘোর বিরোধিতা করেন। তিনি অস্পৃশ্যতারও তীব্র নিন্দা করতেন।
অবদান: মধ্যযুগে উত্তর-পশ্চিম ভারতের ভক্তিবাদ প্রচার ও প্রসারে নানকের অবদান চিরস্মরণীয়। তিনি ধর্মীয় সহনশীলতার বাণী প্রচার করে হিন্দু ও মুসলমানের মধ্যে মিলনের চেষ্টা করেন। অগণিত হিন্দু এমনকি মুসলমানও তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। তাঁর শিষ্যরা বর্তমানে ‘শিখ’ নামে পরিচিত। তাঁর বাণী ও উপদেশগুলি অবলম্বন করেই পরবর্তীকালে রচিত হয় শিখদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ গ্রন্থসাহেব।
Class 11 First (1st) Unit Test Question and Answer :
- Class 11 Bengali 1st Semester Question Click here
- Class 11 English 1st Semester Question Click here
- Class 11 Geography 1st Semester Question Click here
- Class 11 History 1st Semester Question Click here
- Class 11 Education 1st Semester Question Click here
- Class 11 Political Science 1st Semester Question Click here
- Class 11 Philosophy 1st Semester Question Click here
- Class 11 Sociology 1st Semester Question Click here
- Class 11 Sanskrit 1st Semester Question Click here
- Class 11 All Subjects First Semester Question Click here
Class 11 Second (2nd) Unit Test Question and Answer :
- Class 11 Bengali 2nd Semester Question Click here
- Class 11 English 2nd Semester Question Click here
- Class 11 Geography 2nd Semester Question Click here
- Class 11 History 2nd Semester Question Click here
- Class 11 Education 2nd Semester Question Click here
- Class 11 Political Science 2nd Semester Question Click here
- Class 11 Philosophy 2nd Semester Question Click here
- Class 11 Sociology 2nd Semester Question Click here
- Class 11 Sanskrit 2nd Semester Question Click here
- Class 11 All Subjects 2nd Semester Question Click here
Class 11 Suggestion – একাদশ শ্রেণীর সাজেশন
আরোও দেখুন:-
Class 11 Bengali Suggestion Click here
আরোও দেখুন:-
Class 11 English Suggestion Click here
আরোও দেখুন:-
Class 11 Geography Suggestion Click here
আরোও দেখুন:-
Class 11 History Suggestion Click here
আরোও দেখুন:-
Class 11 Political Science Suggestion Click here
আরোও দেখুন:-
Class 11 Education Suggestion Click here
আরোও দেখুন:-
Class 11 Philosophy Suggestion Click here
আরোও দেখুন:-
Class 11 Sociology Suggestion Click here
আরোও দেখুন:-
Class 11 Sanskrit Suggestion Click here
আরোও দেখুন:-
Class 11 All Subjects Suggestion Click here
◆ একাদশ শ্রেণীর পরীক্ষার প্রস্তুতি, বিনামূল্যে নোটস, সাজেশন, PDF ও সমস্ত আপডেটের জন্য আমাদের WhatsApp Group এ Join হয়ে যাও।
Class 11 WhatsApp Groups | Click Here to Join |
একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | West Bengal Class 11th History Question and Answer / Suggestion / Notes Book
আরোও দেখুন :-
একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস সমস্ত অধ্যায়ের প্রশ্নউত্তর Click Here
FILE INFO : ঐতিহ্যের পরিবর্তন (পঞ্চম অধ্যায়) একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | Class 11 History Oitijher Parivartan Question and Answer with FREE PDF Download Link
PDF File Name | ঐতিহ্যের পরিবর্তন (পঞ্চম অধ্যায়) একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | Class 11 History Oitijher Parivartan Question and Answer PDF |
Prepared by | Experienced Teachers |
Price | FREE |
Download Link | Click Here To Download |
Download PDF | Click Here To Download |
ঐতিহ্যের পরিবর্তন (পঞ্চম অধ্যায়) অধ্যায় থেকে আরোও প্রশ্ন ও উত্তর দেখুন :
- ঐতিহ্যের পরিবর্তন – একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর Click here
[আরও দেখুন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবন রচনা – Rabindranath Tagore Biography in Bengali]
[আমাদের YouTube চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন Subscribe Now]
Info : ঐতিহ্যের পরিবর্তন (পঞ্চম অধ্যায়) একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস সাজেশন প্রশ্ন ও উত্তর
Class 11 History Suggestion | West Bengal WBCHSE Class Eleven XI (Class 11th) History Question and Answer Suggestion
” ঐতিহ্যের পরিবর্তন (পঞ্চম অধ্যায়) একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস প্রশ্ন উত্তর “ একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ টপিক একাদশ শ্রেণীর পরীক্ষা (West Bengal Class Eleven XI / WB Class 11 / WBCHSE / Class 11 Exam / West Bengal Council of Higher Secondary Education – WB Class 11 Exam / Class 11th / WB Class 11 / Class 11 Pariksha ) এখান থেকে প্রশ্ন অবশ্যম্ভাবী । সে কথা মাথায় রেখে Bhugol Shiksha .com এর পক্ষ থেকে একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস পরীক্ষা প্রস্তুতিমূলক সাজেশন এবং প্রশ্ন ও উত্তর ( একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস সাজেশন / একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস প্রশ্ও উত্তর । Class-11 History Suggestion / Class 11 History Oitijher Parivartan Question and Answer / Class 11 History Suggestion / Class-11 Pariksha History Suggestion / History Class 11 Exam Guide / MCQ , Short , Descriptive Type Question and Answer / Class 11 History Suggestion FREE PDF Download) উপস্থাপনের প্রচেষ্টা করা হলাে। ছাত্রছাত্রী, পরীক্ষার্থীদের উপকারে লাগলে, আমাদের প্রয়াস একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস পরীক্ষা প্রস্তুতিমূলক সাজেশন এবং প্রশ্ন ও উত্তর (Class 11 History Suggestion / West Bengal Eleven XI Question and Answer, Suggestion / WBCHSE Class 11th History Suggestion / Class 11 History Oitijher Parivartan Question and Answer / Class 11 History Suggestion / Class 11 Pariksha Suggestion / Class 11 History Exam Guide / Class 11 History Suggestion 2025, 2026, 2027, 2028, 2029, 2030 / Class 11 History Suggestion MCQ , Short , Descriptive Type Question and Answer. / Class-11 History Suggestion FREE PDF Download) সফল হবে।
ঐতিহ্যের পরিবর্তন (পঞ্চম অধ্যায়) প্রশ্ন ও উত্তর
ঐতিহ্যের পরিবর্তন (পঞ্চম অধ্যায়) প্রশ্ন ও উত্তর | ঐতিহ্যের পরিবর্তন (পঞ্চম অধ্যায়) Class 11 History Oitijher Parivartan Question and Answer Suggestion একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – ঐতিহ্যের পরিবর্তন (পঞ্চম অধ্যায়) প্রশ্ন ও উত্তর।
ঐতিহ্যের পরিবর্তন (পঞ্চম অধ্যায়) MCQ প্রশ্ন ও উত্তর | একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস
ঐতিহ্যের পরিবর্তন (পঞ্চম অধ্যায়) MCQ প্রশ্ন ও উত্তর | ঐতিহ্যের পরিবর্তন (পঞ্চম অধ্যায়) Class 11 History Oitijher Parivartan Question and Answer Suggestion একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – ঐতিহ্যের পরিবর্তন (পঞ্চম অধ্যায়) MCQ প্রশ্ন উত্তর।
ঐতিহ্যের পরিবর্তন (পঞ্চম অধ্যায়) SAQ সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর | একাদশ শ্রেণির ইতিহাস
ঐতিহ্যের পরিবর্তন (পঞ্চম অধ্যায়) SAQ সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর | ঐতিহ্যের পরিবর্তন (পঞ্চম অধ্যায়) Class 11 History Oitijher Parivartan Question and Answer Suggestion একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – ঐতিহ্যের পরিবর্তন (পঞ্চম অধ্যায়) SAQ সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর।
ঐতিহ্যের পরিবর্তন (পঞ্চম অধ্যায়) MCQ প্রশ্ন উত্তর – একাদশ শ্রেণি ইতিহাস | Class 11 History Oitijher Parivartan
একাদশ শ্রেণি ইতিহাস (Class 11 History Oitijher Parivartan) – ঐতিহ্যের পরিবর্তন (পঞ্চম অধ্যায়) প্রশ্ন ও উত্তর | ঐতিহ্যের পরিবর্তন (পঞ্চম অধ্যায়) | Class 11 History Oitijher Parivartan Suggestion একাদশ শ্রেণি ইতিহাস – ঐতিহ্যের পরিবর্তন (পঞ্চম অধ্যায়) প্রশ্ন উত্তর।
একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | একাদশ শ্রেণির ইতিহাস প্রশ্ন ও উত্তর – ঐতিহ্যের পরিবর্তন (পঞ্চম অধ্যায়) প্রশ্ন উত্তর | Class 11 History Oitijher Parivartan Question and Answer Question and Answer, Suggestion
একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – ঐতিহ্যের পরিবর্তন (পঞ্চম অধ্যায়) | একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – ঐতিহ্যের পরিবর্তন (পঞ্চম অধ্যায়) | পশ্চিমবঙ্গ একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – ঐতিহ্যের পরিবর্তন (পঞ্চম অধ্যায়) | একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস সহায়ক – ঐতিহ্যের পরিবর্তন (পঞ্চম অধ্যায়) প্রশ্ন ও উত্তর । Class 11 History Oitijher Parivartan Question and Answer, Suggestion | Class 11 History Oitijher Parivartan Question and Answer Suggestion | Class 11 History Oitijher Parivartan Question and Answer Notes | West Bengal Class 11th History Question and Answer Suggestion.
একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – ঐতিহ্যের পরিবর্তন (পঞ্চম অধ্যায়) MCQ প্রশ্ন উত্তর | WBCHSE Class 11 History Question and Answer, Suggestion
একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – ঐতিহ্যের পরিবর্তন (পঞ্চম অধ্যায়) প্রশ্ন উত্তর প্রশ্ন ও উত্তর | ঐতিহ্যের পরিবর্তন (পঞ্চম অধ্যায়) । Class 11 History Oitijher Parivartan Question and Answer Suggestion.
WBCHSE Class 11th History Oitijher Parivartan Suggestion | একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – ঐতিহ্যের পরিবর্তন (পঞ্চম অধ্যায়)
WBCHSE Class 11 History Oitijher Parivartan Suggestion একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – ঐতিহ্যের পরিবর্তন (পঞ্চম অধ্যায়) প্রশ্ন উত্তর প্রশ্ন ও উত্তর । ঐতিহ্যের পরিবর্তন (পঞ্চম অধ্যায়) | Class 11 History Oitijher Parivartan Suggestion একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – ঐতিহ্যের পরিবর্তন (পঞ্চম অধ্যায়) প্রশ্ন উত্তর প্রশ্ন ও উত্তর ।
Class 11 History Oitijher Parivartan Question and Answer Suggestions | একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – ঐতিহ্যের পরিবর্তন (পঞ্চম অধ্যায়) | একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর
Class 11 History Oitijher Parivartan Question and Answer একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – ঐতিহ্যের পরিবর্তন (পঞ্চম অধ্যায়) একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর Class 11 History Oitijher Parivartan Question and Answer একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর প্রশ্ন ও উত্তর – ঐতিহ্যের পরিবর্তন (পঞ্চম অধ্যায়) MCQ, সংক্ষিপ্ত, রোচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর ।
WB Class 11 History Oitijher Parivartan Suggestion | একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – ঐতিহ্যের পরিবর্তন (পঞ্চম অধ্যায়) MCQ প্রশ্ন উত্তর প্রশ্ন ও উত্তর
Class 11 History Oitijher Parivartan Question and Answer Suggestion একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – ঐতিহ্যের পরিবর্তন (পঞ্চম অধ্যায়) MCQ প্রশ্ন ও উত্তর । Class 11 History Oitijher Parivartan Question and Answer Suggestion একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর।
West Bengal Class 11 History Suggestion Download WBCHSE Class 11th History short question suggestion . Class 11 History Oitijher Parivartan Suggestion download Class 11th Question Paper History. WB Class 11 History suggestion and important question and answer. Class 11 Suggestion pdf.পশ্চিমবঙ্গ একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস পরীক্ষার সম্ভাব্য সাজেশন ও শেষ মুহূর্তের প্রশ্ন ও উত্তর ডাউনলোড। একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস পরীক্ষার জন্য সমস্ত রকম গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তর।
Get the Class 11 History Oitijher Parivartan Question and Answer by Bhugol Shiksha .com
Class 11 History Oitijher Parivartan Question and Answer prepared by expert subject teachers. WB Class 11 History Suggestion with 100% Common in the Examination .
Class Eleven XI History Oitijher Parivartan Suggestion | West Bengal Council of Higher Secondary Education (WBCHSE) Class 11 Exam
Class 11 History Oitijher Parivartan Question and Answer, Suggestion Download PDF: West Bengal Council of Higher Secondary Education (WBCHSE) Class 11 Eleven XI History Suggestion is provided here. Class 11 History Oitijher Parivartan Question and Answer Suggestion Questions Answers PDF Download Link in Free here.
ঐতিহ্যের পরিবর্তন (পঞ্চম অধ্যায়) একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | Class 11 History Oitijher Parivartan Question and Answer
অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই ” ঐতিহ্যের পরিবর্তন (পঞ্চম অধ্যায়) একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | Class 11 History Oitijher Parivartan Question and Answer ” পােস্টটি পড়ার জন্য। এই ভাবেই Bhugol Shiksha ওয়েবসাইটের পাশে থাকো যেকোনো প্ৰশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলাে করো এবং নিজেকে তথ্য সমৃদ্ধ করে তোলো , ধন্যবাদ।