হলুদ পোড়া (গল্প) দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর

HS Class 12 Bengali Holud Pora Question and Answer

হলুদ পোড়া (গল্প) দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | HS Class 12 Bengali Holud Pora Question and Answer : হলুদ পোড়া (গল্প) দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | HS Class 12 Bengali Holud Pora Question and Answer নিচে দেওয়া হলো। এই West Bengal WBCHSE HS Class 12th Bengali Holud Pora Question and Answer, Suggestion, Notes | দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – হলুদ পোড়া (গল্প) থেকে রোচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর (Descriptive Question and Answer) গুলি আগামী West Bengal HS Class 12th Twelve XII Bengali 4th Semest Examination – পশ্চিমবঙ্গ দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা চতুর্থ সেমিস্টার পরীক্ষার জন্য খুব ইম্পর্টেন্ট। দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা পরীক্ষা তে এই সাজেশন বা কোশ্চেন (হলুদ পোড়া (গল্প) দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | HS Class 12 Bengali Holud Pora Question and Answer) গুলো আসার সম্ভাবনা খুব বেশি।

তোমরা যারা হলুদ পোড়া (গল্প) দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | HS Class 12 Bengali Holud Pora Question and Answer খুঁজে চলেছ, তারা এই প্রশ্ন ও উত্তর গুলো ভালো করে পড়ো এবং নীচে দেওয়া লিঙ্ক থেকে ডাউনলোড করে নাও।

রাজ্য (State) পশ্চিমবঙ্গ (West Bengal)
বোর্ড (Board) WBCHSE, West Bengal
শ্রেণী (Class) দ্বাদশ শ্রেণী (WB HS Class 12th)
বিষয় (Subject) দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা (HS Class 12 Bengali)
গল্প (Golpo) হলুদ পোড়া (Holud Pora)
লেখক (Writer) মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় (Manik Bandopadhyay)

[দ্বাদশ শ্রেণীর সমস্ত বিষয়ের প্রশ্নউত্তর Click Here]

হলুদ পোড়া (গল্প) দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | West Bengal WBCHSE HS Class 12th Bengali Holud Pora Question and Answer 

রচনাধর্মী | হলুদ পোড়া (গল্প) দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | WB HS Class 12 Bengali Holud Pora Descriptive Question and Answer:

1. হলুদ পোড়া গল্পে গ্রামবাংলার সমাজচিত্র কীভাবে ফুটে উঠেছে, তা আলোচনা করো।

অথবা, “একটুখানি বাস্তব সত্যের, খাদের অভাবে নানা জনের কল্পনা ও অনুমানগুলি গুজব হয়ে উঠতে উঠতে মুষড়ে যায়।- এই বক্তব্য থেকে গ্রাম সমাজের কোন্ জীবনসত্যের প্রকাশ ঘটেছে, বুঝিয়ে দাও। 

Ans: প্রাককথন: মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাহিত্যদর্শনের নেপথ্যে বারংবার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে ফ্রয়েডীয় চেতনা ও মার্কসের দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ। নির্মোহ বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গিতে তিনি তাঁর বহু রচনায় মানবজীবনকে, সমাজপটকে তীব্র, তীক্ষ্ণভাবে বিশ্লেষণ করেছেন। পাঠ্য ‘হলুদ পোড়া’ গল্পটিও তার ব্যতিক্রম নয়।

সমাজচিত্রের বিশ্লেষণ: গ্রামে ঘটে যাওয়া দু-দুটি অপঘাতে মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে গ্রামীণ মানুষের অধবিশ্বাস, তাদের কুসংস্কারাচ্ছন্ন চরিত্রায়নই আলোচ্য গল্পের মূল বিষয়বস্তু।

বলাই চক্রবর্তী ও শুভ্রার অপমৃত্যুতে গ্রামবাসীরা হতবাক হলেও বলাই চক্রবর্তীর মতো চরিত্রহীন ও কলঙ্কিত পুরুষের মৃত্যুই যে কাম্য ছিল > তা পাঠকের বুঝতে অসুবিধে হয় না অথচ শুভ্রা শান্তশিষ্ট সংস্কারী নাবালিকা হওয়া সত্ত্বেও তার মৃত্যুর পিছনে মুখোরোচক কারণ অনুসন্ধানে ব্রতী থাকে গ্রামের মানুষ। এক বয়স্ক পুরুষ ও এক নব্যবিবাহিতা, অন্তঃসত্ত্বা ঘরোয়া কিশোরীর খুনের মধ্যে অন্তর্নিহিত সম্পর্ক নির্ণয় করতে না পেরে ছটফট করতে থাকেন কৌতূহলী গ্রামবাসীরা। অন্যদিকে কাকার সম্পত্তির মালিকানাভোগে গ্রামে অবতীর্ণ নবীনের স্ত্রী দামিনীর ভর সন্ধ্যাবেলায় হঠাৎই অস্বাভাবিক আচরণকে ভূতে ধরা জ্ঞান করে পুরো গ্রাম ভেঙে পড়ে তাদের উঠোনে। আর এই অংশে গ্রামবাংলার সন্দেহবাতিক ও কৌতূহলী সমাজের পরের হাঁড়ির খবর সংগ্রহের কুশ্রী চরিত্রটি এই গল্পে নগ্নভাবে প্রকাশ পেয়েছে। দামিনীর অসুখ সারাতে যখন ধীরেন, নবীনকে ডাক্তার ডাকার পরামর্শ দেয়, তখনও অধিকাংশ গ্রামবাসী ওঝা ডাকার প্রস্তাবেই সহমত হয়। ভূত তাড়ানোর মতো ভয় মেশানো কৌতূহলোদ্দীপক ঘটনা দেখার লোভ সংবরণ করা অশিক্ষিত কুসংস্কারাচ্ছন্ন মানুষগুলোর পক্ষে সম্ভব হয় না অথচ এই গ্রামবাসীরাই আবার ছোঁয়াচ লাগার, নজর লাগার ভয়ও পায়। মেয়েদের উপর নানাধরনের বিধিনিষেধ চাপিয়ে তাদের দমিত করে রাখা হয় গৃহকোণে। যে কারণে এই মেয়েরা হিস্টিরিয়ার শিকার হয় ঘন ঘন আর তখন তাকে দামিনীর মতোই ভূতে ধরা বলে কুঞ্জর মতো কুসংস্কার-ব্যবসায়ীদের জীবন চলে। পাড়ার বৃদ্ধ পঙ্কজ ঘোষালের ন্যায় কিছু মানুষ ধীরেনের মতো বিজ্ঞানমনস্ক মানুষকে হারিয়ে দেয় জনমতের সমর্থনে। নিস্তরঙ্গ জীবনে খুনজখম, গার্হস্থ্য বিবাদ, ভূতে ধরা, ভূত ছাড়ানোর মতো অর্থহীন বুজরুকি এই মানুষগুলোর মনে উত্তেজনা জাগায়। কুঞ্জ ওঝার সুনিপুণ কৌশলে দামিনীর শরীরে ভর করা প্রেতাত্মা শুভ্রা যখন স্বীকার করে, বলাই চক্রবর্তীর অশরীরী আত্মা তাকে খুন করেছে তখন কোনো এক অদেখা, অজানা রসালো কাহিনিই যে এর পিছনে থাকাটা সম্ভব, সেকথা ধীরেনের কানে পৌঁছে দিয়ে স্বর্গীয় আনন্দ লাভ করে গ্রামবাংলার তথাকথিত ‘সাধাসিধে’ মানুষের দল।

আসলে ‘হলুদ পোড়া’ গল্পের পরতে পরতে সাজানো রয়েছে গ্রামীণ সমাজে প্রচলিত আদিম সংস্কার, ঘৃণ্য প্রবৃত্তি, নিষ্ঠুরতা ও অবদমন। সেই সমাজে বাস করা মানুষদের অতি পরিচিত অন্তঃসারশূন্য বিবেকহীন মানসিকতার উপর মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখনী চাবুকের মতো আছড়ে পড়েছে।

2. মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘হলুদ পোড়া’ গল্প অবলম্বনে ধীরেন চরিত্রটি বিশ্লেষণ করো। 

Ans: ভৌতিক আবহ, একের পর এক রহস্যমৃত্যু, রোমহর্ষক ঘটনার ঘনঘটা, অশরীরীর নিঃশব্দ পদচারণা, গুনিনের সুনিপুণ কৌশলে প্রেতাত্মার আর্তনাদ-‘হলুদ পোড়া’ গল্পের আঙ্গিকের এই বৈশিষ্ট্যগুলি আদতে মুখ্য নয়। কেবল অনুষঙ্গ হিসেবে এগুলিকে ব্যবহার করে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় গল্পের প্রাণভ্রমরটিকে স্থাপন করতে চেয়েছেন মানবমনের অন্ধকার কোণটিতে। এ গল্পের ধীরেন চরিত্রটি সেই সারসত্যরই প্রতিরূপ। শেকসপিয়র বলেছেন যে, সাহিত্যের সেই চরিত্রগুলিই শ্রেষ্ঠ বলে বিবেচিত, যেগুলি হঠাৎই আমাদের বিস্মিত করে। অদ্ভুতভাবে কাহিনির শুরুতে হয়তো আমরা এসব চরিত্রের যে ক্রমপরিণতি প্রত্যাশা করি, দেখা যায়, তা না হয়ে এক অপ্রত্যাশিত পরিণতি আমাদের চমকিত করে দেয়।

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথাসাহিত্যে ধীরেনও তেমনই একটি নির্মাণ। গল্পে তার ক্রমবিবর্তিত মনস্তত্ত্বটি যেভাবে ধাপে ধাপে গল্পটিকে এক অনন্য পরিণতির দিকে নিয়ে গিয়েছে তা নিম্নরূপ-

অসংগতিপূর্ণ চরিত্র: ধীরেন চরিত্রটিতে প্রথম থেকেই অসংগতি এবং ভারসাম্যহীনতা বর্তমান। নিহত শুভ্রার দাদা হল ধীরেন। সে ফিজিক্সে অনার্স নিয়ে স্নাতক অথচ স্কুলে সে ভূগোল পড়ায়। প্রথম যৌবনে সমাজগঠনে ব্রতী হয়ে লাইব্রেরি, তরুণ সমিতি, দাতব্য চিকিৎসা- নানাবিধ সমাজ কল্যাণমূলক কর্মে নিয়োজিত হয়েছিল সে। কিন্তু বিবাহ, সন্তানাদি হওয়ার পর তাকে দেখা যায় উদ্যমহীন হয়ে পড়তে। এমনকি যখন তার নিতান্ত নাবালিকা বোন শুভ্রার বিয়ে হয়, তখনও তার প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর গর্জে উঠেছিল বলে মনে হয় না। অচিরেই শুভ্রা আর পাঁচজন গ্রাম্যবধূর মতো মাত্র ষোলো-সতেরো বছর বয়সে সন্তানসম্ভবা হয়ে বাপের বাড়ি আসে – সন্তান প্রসবের কারণে এবং সাতমাসের গর্ভবতী শুভ্রার সঙ্গে ঘটে এক মর্মান্তিক ঘটনা। যদিও তার খুনের কিনারা করার জন্যও ধীরেনকে বিশেষ উদ্যোগী হতে দেখা যায়নি। আসলে সংসারবৃত্তি অজুহাতমাত্র, তার পরিশ্রমবিমুখতা, দুর্বলচিত্ততা-ই এর মুখ্য কারণ। এমনকি বন্ধু নবীনের স্ত্রী দামিনীর অসুস্থতায় যে ধীরেন সর্বসমক্ষে গ্রামীণ সংস্কারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়, গল্পের পরিণতিতে সে-ই মনোবিকলনের শিকার হয়ে আত্মবিস্মৃত, প্রেতগ্রস্ত হয়ে পড়ে। তার বিজ্ঞানমনস্ক, যুক্তিবাদী আধুনিক মন অজ্ঞতা, লোকবিশ্বাসের কাছে নতি স্বীকার করে পরিশেষে নিজের ভ্রান্ত মুখোশটিকে টেনে খুলে ফেলে দেয়।

যুক্তিবাদী মনোভাব : প্রথম পরিচয়ে দেখা যায়, ধীরেন শিক্ষিত ও যুক্তিবাদী। নবীনের স্ত্রী দামিনীর হঠাৎ অসুস্থতায় ধীরেনকে ডেকে পাঠানো হলে, সে চিন্তিত মুখে নবীনকে জানায় শা’পুরের কৈলাস ডাক্তারকে একবার ডাকা দরকার। গ্রামবাসী কুঞ্জ ওঝার গুণপনায় বিভ্রান্ত হলে যুক্তিবাদী মন নিয়ে সে সংস্কারের বিরোধিতা করে। শুভ্রার মৃত্যু নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা শোনা গেলেও সে তার যুক্তির দ্বারা সব সমাধান করতে চায়।

সমাজসংস্কারক: সমাজে থাকতে গেলে শিক্ষিত মানুষের উচিত সমাজসংস্কারে উদ্যোগী হওয়া। শিক্ষিত ধীরেন সে উদ্দেশ্যে প্রথম দিকে প্রবল উৎসাহের সঙ্গে সাতচল্লিশখানা বই নিয়ে লাইব্রেরি, সাতজন ছেলেকে নিয়ে তরুণ সমিতি, বই পড়ে পড়ে সাধারণ রোগের বিনামূল্যে ডাক্তারি- ইত্যাদি কল্যাণমূলক কাজে নিজেকে সমর্পণ করেছিল।

সত্যবাদী: ধীরেন সত্যবাদীও বটে। পুথিগত শিক্ষা তাকে মানুষ ঠকাতে বাধা দেয়। তাই দামিনীর অসুস্থতায় তাকে ডাকা হলে সে অকপটে স্বীকার করে- ‘আমি তো পাশ করা ডাক্তার নই, দায়িত্ব নিতে ভরসা হচ্ছে না।’

কর্তব্যপরায়ণতা: ধীরেন কর্তব্যনিষ্ঠ। অন্তঃসত্ত্বা বোন শুভ্রার প্রতি দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সে মানবিকতা হেতু তালগাছের টুকরো দিয়ে বাড়ির পিছনের ডোবাতে ঘাট বানিয়ে দিয়েছিল, যাতে শুভ্রা উঠতে নামতে গিয়ে পিছলে না পড়ে যায়।

অবসাদগ্রস্ততা: শুভ্রার মৃত্যু, মৃত্যুকে কেন্দ্র করে নানা গুজব ধীরেনকে ক্রমশ অন্যমনস্ক করে দিয়েছিল। তাই স্কুলে গিয়ে সে পড়াতে পারে না। আবার বাড়িতে থেকেও অন্যমনস্কতা হেতু একা হয়ে যায়।

ভৌতিক রোমহর্ষক বৃত্তান্ত দিয়ে যে গল্পের শুরু তার পরিণতির চমক পাঠককে জানান দেয়, দুর্বলচিত্ত মানুষের অন্ধবিশ্বাসের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়া মানুষদের প্রতি, তীব্র বিদ্রূপবর্ষণই লেখকের উদ্দেশ্য। আর তখনই মনে হয় এ গল্পে ভৌতিক রসসঞ্চার আসলে মানবমনের জটিল মনস্তত্বকেই রূপদান করতে প্রযুক্ত হয়েছে- বলা বাহুল্য, সেই মনস্তত্ত্বের প্রকাশ ধীরেন চরিত্রকে ঘিরেই, আর এখানেই ‘হলুদ পোড়া’ গল্পের ‘Soul’ হয়ে উঠেছে ধীরেন।

3. চারিদিকে হৈ চৈ পড়ে গেল-প্রসঙ্গ উল্লেখ করে চারিদিকে হইচই পড়ে যাওয়ার কারণ গল্প অনুসরণে লেখো।

Ans: প্রসঙ্গ: কথাশিল্পী মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা ‘হলুদ পোড়া’ গল্পের সূচনা কার্তিক মাসের মাঝামাঝি সময়ে, যখন প্রকৃতিতে সবুজ আর শীতের মিষ্টি আমেজ মিশে থাকে। ধানের শীষে দেখা যায় শিশিরবিন্দু, সোনালি রঙের প্রতিফলন। এমনই প্রকৃতিসজ্জার আনন্দঘন পরিবেশে গাঁয়ে হঠাৎ নেমে আসে বিষাদের ছায়া। মাসের মাঝামাঝি তিনদিন আগে পরে দু’দুটো খুনের ঘটনা ঘটে যায়, যা ছিল একেবারেই অপ্রত্যাশিত। প্রথমে খুন হয় একজন জোয়ান মদ্দ পুরুষ বলাই চক্রবর্তী এবং তার ঠিক তিনদিন পর ষোলো-সতেরো বছরের রোগা, ভীরু, সাত মাসের গর্ভবতী এক নাবালিকা শুভ্রা। বনজঙ্গলহীন ফাঁকা স্থানে গাঁয়ের দক্ষিণে ঘোষেদের মজা পুকুরের ধারে একটা মরা গজারি গাছের নীচে একদিন বলাই চক্রবর্তীকে মরে পড়ে থাকতে দেখা যায়। তার মাথায় আঘাত চিহ্ন দেখে মনে হয়, খুব সম্ভবত অনেকগুলি লাঠির আঘাতে মাথাটা আটচির হয়ে ক্ষতবিক্ষত হয়ে যাওয়াতেই তার মৃত্যু ঘটেছে। এমন ভয়ংকর ঘটনায় গাঁয়ের- ‘চারিদিকে হৈ চৈ পড়ে গেল বটে কিন্তু লোকে খুব বিস্মিত হল না।’

হইচই পড়ার কারণ: গল্পের আবহ বুঝিয়ে দেয় বলাই চক্রবর্তী সৎ, মানবিক মানুষ ছিল না। তাই তার এরকম অপমৃত্যুই আশেপাশের দশটা গাঁয়ের লোক প্রত্যাশা করেছিল; অনেকে কামনাও করেছিল হয়তো। কিন্তু এমন ভয়ংকরভাবে তার মৃত্যু ঘটবে এটা গ্রামের কোনো মানুষই ধারণা করতে পারেনি। তাই সাদাসরল নিস্তরঙ্গ পল্লিজীবনে হঠাৎই আলোড়ন সৃষ্টি হয়। যে গ্রামে বিশ-ত্রিশ বছরের মধ্যে কেউ তেমনভাবে জখম পর্যন্ত হয়নি, সেখানে ভয়ংকরভাবে ঘটে যাওয়া জোড়া খুন মানুষকে হতবাক করে দিয়েছিল। তাই চারিদিকে হইচই পড়ে গিয়েছিল।

4. “শা পুরের কৈলাস ডাক্তারকে একবার ডাকা দরকার।” – কৈলাস ডাক্তারকে ডাকার প্রয়োজন পড়েছিল কেন? 

Ans: দামিনীর অস্বাভাবিক আচরণ: কথাসাহিত্যিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় বিরচিত ‘হলুদ পোড়া’ গল্পের শুরু থেকেই অস্বাভাবিক কিছু ঘটনার উল্লেখ রয়েছে, যেগুলো কার্যকারণ সম্পর্কহীন। গল্পের শুরুতেই দু-দুটো অপ্রত্যাশিত খুনের ঘটনা পাঠককে চমকিত করে। বলাই চক্রবর্তী ও শুভ্রা তিনদিন আগে-পরে খুন হয়ে গেলে গাঁয়ের মানুষেরা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে। বলাইয়ের মৃত্যুর পর তার ভাইপো নবীন শহরের চল্লিশ টাকা মাইনের চাকরি ছেড়ে সপরিবারের গাঁয়ে চলে আসে। থমথমে পরিবেশে ঠিক একুশ দিন গাঁয়ে বাস করার পর নবীনের স্ত্রী দামিনী কোনো এক সন্ধেবেলা লণ্ঠন হাতে রান্নাঘর থেকে উঠোন পার হয়ে শোওয়ার ঘরে যাওয়ার পথে ‘খাপছাড়া’ এক অসুখে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। দামিনীর হাতের লণ্ঠন ছিটকে গিয়ে পড়ে দক্ষিণের ঘরের দাওয়ায় আর দামিনী উঠোনে আছড়ে পড়ে হাত-পা ছুঁড়তে ছুঁড়তে মূর্ছা যায়। এরপর গল্পকারের বর্ণনায় উঠে আসে ‘দালানের আনাচে কানাচে ঝড়ো হাওয়া যেমন গুমরে গুমরে কাঁদে’, দামিনীর গলা থেকে বেরোনো সেইরূপ আওয়াজের ভয়ঙ্করতা।

কৈলাস ডাক্তারের প্রয়োজনীয়তা: উক্ত খুনের ঘটনার অন্যতম শিকার নিহত শুভ্রার দাদা ধীরেন ছিল গাঁয়ের একমাত্র পাশ না করা ডাক্তার। চার আনা, আট আনা ফি নিয়ে সে ডাক্তারি করত, কিছু ওষুধও বিক্রি করত। – দামিনীর শুশ্রুষার জন্য তাই তাকেই প্রথমে ডাকা হয়। ধীরেন যখন এসে উপস্থিত হয় তখন কলসি কলসি জল ঢেলে দামিনীর জ্ঞান ফেরানো হয়েছে। কিন্তু সে চারিদিকে তাকাচ্ছে অর্থহীন দৃষ্টিতে। আপনমনে কখনও হাসছে, কখনও কাঁদছে আর যারা তাকে ধরে রেখেছে তাদের আঁচড়ে কামড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। দামিনীর এমন অবস্থা ধীরেনকে চিন্তিত করে। পাশ-না করা ডাক্তার হওয়ার কারণে অনভিজ্ঞতা হেতু সে কোনো ওষুধ প্রয়োগ করতে চায় না। ধীরেনের বিজ্ঞানমনস্কতা, উপস্থিত বুদ্ধি তাকে দামিনীর শারীরিক এবং মানসিক অবস্থার জটিলতা নিয়ে ভাবায়। একজন কর্তব্যনিষ্ঠ, সৎ মানুষের ন্যায় সে নবীনকে জানায় ‘আমি তো পাশ করা ডাক্তার নই, দায়িত্ব নিতে ভরসা হচ্ছে না।’ এবং শেষপর্যন্ত দামিনীর চিকিৎসার জন্য নবীনকে সে চিন্তিত মুখে পরামর্শ দেয় ‘শা’ পুরের পাশ করা কৈলাস ডাক্তারকে একবার ডাকা দরকার’।

5. দামিনীর রোগ নিরাময়কে কেন্দ্র করে দুই বাল্যবন্ধু ধীরেন ও নবীনের মধ্যে যে মতপার্থক্য দেখা গিয়েছিল, তা গল্প অনুসরণে লেখো। 

Ans: দ্বন্দ্বের উৎস: রবীন্দ্র-শরৎ উত্তর পর্বের বিখ্যাত ছোটোগল্পকার মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় বিরচিত ‘হলুদ পোড়া’ গল্পের সূচনা হয় দু-দুটো খুনের খবর দিয়ে। একজন বলাই চক্রবর্তী, অপরজন শুভ্রা নামের এক ষোলো-সতেরো বছরের সন্তানসম্ভবা গৃহবধূ। বলাইয়ের মৃত্যুর পর তার সমস্ত সম্পত্তির অধিকারী ভাইপো নবীন চল্লিশ টাকা মাইনের চাকরি ছেড়ে, শহর ছেড়ে সপরিবারে গ্রামে চলে আসে। এরপর ঠিক একুশ দিনের মাথায় নবীনের স্ত্রী দামিনী আক্রান্ত হয় এক অজানা অসুখে। উঠানে আছড়ে পড়ে হাত-পা ছুঁড়তে ছুঁড়তে তার দাঁতে দাঁত লেগে যায়, সঙ্গে সে অদ্ভুত স্বরে আর্তনাদও করতে থাকে।

ধীরেনের ও নবীনের মতপার্থক্য, দ্বন্দ্ব: গাঁয়ের একমাত্র পাশ-না-করা ডাক্তার ধীরেন। সে নবীনের বাল্যবন্ধুও বটে। বয়সে নবীন ধীরেনের চেয়ে তিন-চার বছরের বড়ো। কিন্তু এককালে দু’জনে একসঙ্গে স্কুলে একই ক্লাসে পাশাপাশি বসে লেখাপড়া করত। তাই নবীনের স্ত্রীয়ের অসুখ সারাতে সর্বাগ্রে ধীরেনেরই ডাক পড়ে। ধীরেনকে যখন দামিনীর চিকিৎসার জন্য ডেকে আনা হয়, তখন কলসি কলসি জল ঢেলে তার অজ্ঞানাবস্থা কাটানো হয়েছে, কিন্তু তার আচরণ অস্বাভাবিক। “সে তাকাচ্ছে অর্থহীন দৃষ্টিতে, আপন মনে হাসছে আর কাঁদছে…” ধীরেন এই অবস্থা দেখে চিন্তিত মুখে নবীনের উদ্দেশে বলে- ‘শা’পুরের কৈলাস ডাক্তারকে একবার ডাকা দরকার।’ কিন্তু গ্রাম্য বৃদ্ধ পঙ্কজ ঘোষাল যুক্তিবাদী ধীরেনের যুক্তিকে অগ্রাহ্য করে নবীনকে উপদেশ দেয়- “তুমি আমার কথা শোন বাবা নবীন, কুস্তুকে অবিলম্বে ডেকে পাঠাও।”

ধীরেন একথা শোনার পর তীব্র প্রতিবাদ জানায়, কারণ সে নিজে – বিজ্ঞান বুদ্ধিসম্পন্ন, যুক্তিবাদী তাই সে নবীনকে এসব ‘দুবুদ্ধি’ করতে বাধা দান করে। তার যুক্তি “লেখা পড়া শিখেছ, জ্ঞান বুদ্ধি আছে, তুমিও কি বলে কুঞ্জকে চিকিৎসার জন্য ডেকে পাঠাবে?”

একদিকে বন্ধু ধীরেন, অন্যদিকে গ্রামের বয়স্যজন। নবীন কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ে। যদিও সে নিজেও ছিল সংস্কারাচ্ছন্ন, দুর্বলচিত্ত, ভূতসংস্কারে বিশ্বাসী। তার মতে, এসব অসুখে গুণপনাই ভালো ফল দেয়। আবার শহর থেকে এসে গ্রামে বসে মৃত কাকার সম্পত্তি ভোগ করছে সে তাই গ্রামের লোকের বিশ্বাসেও আঘাত হানতে ভয় ছিল তার। নবীন তাই আমতা আমতা করে বুড়ো পঙ্কজ ঘোষালের পক্ষ্যেই কথা বলে। আবার, ধীরেনও তার বন্ধুস্থানীয় তাই শেষ পর্যন্ত কী করবে বুঝতে না পেরে কৈলাস ডাক্তার ও কুঞ্জ- দুজনকেই আনতে লোক পাঠায় নবীন। প্রথমে কুঞ্জ এসে তার অদ্ভুত কৌশল প্রয়োগ করে দামিনীর উপর এক অর্থে অত্যাচার শুরু করলে ধীরেন আর ধৈর্য রাখতে পারে না, প্রতিবাদ করে। কিন্তু নবীন, কুঞ্জের গুণপনায় তুষ্ট হয়। তাই সে বলে- ‘তুমি চুপ কর, ভাই।’ এভাবে দুই বন্ধু ধীরেন ও নবীনের দ্বন্দ্ব চরমে ওঠে দামিনীর চিকিৎসাকে কেন্দ্র করে।

6. “আমায় মেরো না।”- কে, কখন এমন আর্তি প্রকাশ করেছিল? তার এমন আর্তির কারণ কী?

Ans: আর্তি প্রকাশ: মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় বিরচিত ‘হলুদ পোড়া’ গল্পটি শুরু হয়েছে দুটি খুন হওয়ার ঘটনার প্রসঙ্গ উত্থাপন করে যা পাঠকহৃদয়ে শিহরণ সৃষ্টি করেছে শুরুতেই। প্রথমে খুন হয় বলাই চক্রবর্তী ঘোষেদের মজা পুকুরের ধারে গজারি গাছের তলায়, এর ঠিক তিন দিন পর খুন হয় অন্তঃসত্ত্বা নাবালিকা গৃহবধূ শুভ্রা। শুভ্রা মারা যাওয়ার পর নবীনের স্ত্রী দামিনী এক অজানা অসুখে আক্রান্ত হলে গ্রামবাসীরা ভেবে বসে কোনো অশরীরী আত্মাই দামিনীর উপর ভর করেছে। সেই অশরীরী আত্মাকে বিতাড়নের উদ্দেশ্যে কুঞ্জ ওঝা নানান আয়োজন ও কৌশল অবলম্বন করলে যন্ত্রণাবিদ্ধ দামিনীর কণ্ঠে প্রেতাত্মা শুভ্রার এরূপ করুণ আর্তি শোনা যায়।

কুঞ্জের কৌশল প্রয়োগ: নবীনের স্ত্রী দামিনীর অসুস্থতার নিরাময়ে বন্ধু ধীরেন ও পাড়ার অন্যান্যদের পরামর্শে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে নবীন, কৈলাস ডাক্তার ও কুঞ্জ গুণী-উভয়কেই ডেকে পাঠায়। নামকরা গুণী কুঞ্জই প্রথম উপস্থিত হয়। লোক পৌঁছানোর আগেই সে খবর পেয়েছিল যে নবীনের স্ত্রী দামিনীকে নাকি অশরীরী শক্তি ভর করেছে। সে পৌঁছেই উপস্থিত সকলকে ভয় দেখিয়ে বলে- “ভর সাঁঝে ভর করেছেন সহজে ছাড়বেন না।” এরপর সবাইকে অভয় দিয়ে দাওয়া থেকে উঠোনে নামিয়ে দিয়ে বিড় বিড় করে মন্ত্র পড়ে দাওয়ায় জল ছিটিয়ে দেয়। দামিনীর খোলা চুলকে কুঞ্জ শক্ত করে বেঁধে দেয় দাওয়ার একটা খুঁটির সঙ্গে। দামিনীর আর ওঠা-বসার বা পালানোর ক্ষমতা থাকে না। নড়তে গিয়ে চুলে টান পড়লে দামিনী আর্তনাদ করে ওঠে। এরপর কুঞ্জ সামনে পিছনে দুলে দুলে দুর্বোধ্য মন্ত্র পড়ার পর একটি মালসাতে আগুন করে তাতে দু-একটি শুকনো পাতা আর শিকড় পুড়িয়ে উৎকট গন্ধের সৃষ্টি করে।

দামিনীর কাতর অনুরোধ: এরূপ নারকীয় নির্যাতনে দামিনীর আর্তনাদ ও ছটফটানি ক্রমে কমে আসতে থাকে। এক সময় খুঁটিতে পিঠ ঠেকিয়ে কাঠ হয়ে দাঁড়িয়ে সে নিমীলিত চোখে কুঞ্জের দিকে নিস্পন্দ হয়ে তাকিয়ে থাকে কেবল। তখন কুঞ্জ একটা কাঁচা হলুদ পুড়িয়ে তার নাকের কাছে ধরলে দামিনীর চোখ বিস্ফারিত হয়ে ওঠে, সর্বাঙ্গে বয়ে যেতে থাকে ঘন ঘন শিহরণ। কুঞ্জ তখন তার পরিচয় জানতে চাইলে দামিনীর কণ্ঠে শোনা যায় কাতর আর্তি “আমি শুভ্রা, গো শুভ্রা। আমায় মেরো না।” আসলে রহস্যখুনের আবহে হঠাৎই শহর থেকে গ্রামে এসে উপস্থিত হওয়া, – অপঘাতে মৃত স্বভাবদুষ্ট কাকাশ্বশুরের বাড়িতে বসবাস, বাতাসে কান – পাতলেই বলাই এবং শুভ্রার রহস্যখুনের জল্পনা- এইসব মিলিয়ে গাঁয়ে নবাগতা দামিনী হয়তো লোকচক্ষুর আড়ালে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে – পড়েছিল। সারা গ্রাম জুড়ে জোড়া খুনের একই বৃত্তান্তের অনুরণন তাকে বিকারগ্রস্ত করে তুলেছিল। যার চরম পর্যায়ে দামিনী আক্রান্ত হয় ডিসোসিয়েটিভ আইডেনটিটি ডিসঅর্ডারে। অর্থাৎ সে আত্মপরিচয় ভুলে নিজেকে শুভ্রা ভাবতে শুরু করে। কিন্তু গ্রামীণ সংস্কার এত জটিলতা বোঝে না। তাই গুনিন কুঞ্জও তার গুণপনা দ্বারা সহজেই প্রমাণ করে ফেলে মৃত শুভ্রার আত্মা ভর করেছে দামিনীকে। দামিনীর কাতর আর্তি শুভ্রার প্রেতাত্মার আর্তনাদ হয়ে শিহরিত করে উপস্থিত জনসাধারণকে।

7. “ব্যাপার বুঝলেন কর্তা”-কে, কাকে উদ্দেশ্য করে একথা বলেছে? ব্যাপারটা কী বোঝা গিয়েছিল?

Ans: বক্তা: কথাসাহিত্যিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘হলুদ পোড়া’ ছোটোগল্প থেকে উক্তিটি আহৃত। এর বক্তা গ্রাম্যসমাজের মানী গুনিন কুঞ্জ ওঝা।

শ্রোতা: রহস্যখুনের শিকার গ্রামের জোয়ান মদ্দ পুরুষ বলাই চক্রবর্তীর একমাত্র উত্তরাধিকারী অর্থাৎ, তার ভাইপো নবীনকে উদ্দেশ্য করে সে একথা বলেছে।

আলোচ্য বিষয়: কোনো এক ভর সন্ধ্যাবেলা হঠাৎই নবীনের স্ত্রী দামিনী অসুস্থ হলে সংস্কারাচ্ছন্ন গ্রামবাসীর ধারণা হয় সে প্রেতাত্মার প্রভাবে পড়েছে। পাশ করা ডাক্তারের গুরুত্ব উপেক্ষা করে গুনিন কুঞ্জ ওঝাকেই তারা বেছে নেয়। কুঞ্জ এসেই বিধান দেয়-চক্রবর্তীদের বউকে অন্ধকারের অশরীরী শক্তি ভর করেছে। তার গুণপনা দেখতে জমে ওঠা ভিড়কে সে বলে- “ভর সাঁঝে ভর করেছেন সহজে ছাড়বেন না”

এরপর কুঞ্জর নাটকীয় চিকিৎসায় শেষ পর্যন্ত দামিনী বলে ওঠে- সে শুভ্রা। কুঞ্জ আবার প্রশ্ন করে “চাটুয্যে বাড়ির শুভ্রা? যে খুন হয়েছে?”

আত্মবিস্তৃত দামিনী উত্তর দেয়- “হ্যাঁ গো হ্যাঁ। আমায় মেরো না।”

গ্রামসমক্ষে সুদক্ষ গুনিনের সুনিপুণ কৌশলে প্রেতাত্মার সাড়া মেলে। কুঞ্জুর অভীষ্ট সিদ্ধ হয়। তাই নবীনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে সে বোঝাতে চায়, ‘ব্যাপার’ অর্থাৎ দামিনীর অসুস্থতার মূল কারণ অন্য কিছুই নয়, অশরীরী শক্তি। নিজগুণে সে প্রমাণ করেই ছেড়েছে, দামিনীকে ভর করেছে শুভ্রার প্রেতাত্মা এবং তার দক্ষ কৌশলে তাকে, সে জব্দও করেছে। আসলে শিক্ষিত চাকুরিজীবী একদা শহরবাসী নবীনের মনকে মিথ্যা সংস্কারের কাছে বশীভূত রাখতেই কুঞ্জের কথনভঙ্গির এইরূপ নাটুকে উপস্থাপনা লক্ষ করা যায়।

8. “দামিনী নিজে থেকেই ফিস ফিস করে জানিয়ে দিল…”- দামিনী কী জানিয়ে দেয়? এই জানানোর ফল কী হয়?

Ans: ভূমিকা: প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘হলুদ পোড়া’ ছোটোগল্পে অপঘাতে মৃত বলাই চক্রবর্তীর ভাইপো-বউ নবীনের স্ত্রী দামিনী। কাকাশ্বশুরের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তিলাভে শহর থেকে গ্রামে এসে শ্বশুরেরই বসতবাটিতে স্বামী, পরিবারের সঙ্গে বসবাস করছিল সে। হঠাৎই এক সন্ধ্যায় আকস্মিক অসুস্থতাবোধে মূর্ছা যায় দামিনী। সে অসুস্থ হওয়ায় স্বামী এবং গ্রামবাসীরা ভাবে অন্ধকারের অশরীরী তাকে বশীভূত করেছে।

যা জানায়: দামিনীর নিরাময়ে উপস্থিত হয়েছিল কুঞ্জ ওঝা। তার জাদু > চিকিৎসায় দামিনী একসময় জানায়- “আমি শুভ্রা গো, শুভ্রা। আমায় মেরো না।” কুঞ্জ ওঝা আরো জানতে চায় সে কি “চাটুয্যে বাড়ীর শুভ্রা? যে খুন হয়েছে?” দামিনীর কাতর কণ্ঠে আবারও উত্তর আসে-

“হ্যাঁ গো হ্যাঁ। আমায় মেরো না।”

এরপর নিজে থেকেই সে জানায় তাকে বলাই খুড়ো খুন করেছে।

জানানোর ফল: দামিনীর উত্তরে গ্রামবাসীর কণ্ঠে একাধারে কুঞ্জ গুনিনের দক্ষতার জয়গান ওঠে, অন্যদিকে বলাই চক্রবর্তীই শুভ্রার খুনের জন্য দায়ী এ বিশ্বাসও বদ্ধমূল হয়। কিন্তু মৃত্যুর এক বছরের মধ্যে শ্রাদ্ধশান্তি হলে সোজাসুজি কাউকে মৃত আত্মা বা প্রেতাত্মা হত্যা করতে পারে না। তাই সিদ্ধান্ত হয় বলাই চক্রবর্তী একজনকে জীবিত মানুষকে ভর করে তার হাত দিয়ে শুভ্রাকে খুন করেছে এবং স্বাভাবিকভাবে সেই প্রেতাত্মা ঐ নির্দিষ্ট মানুষটিকে ছেড়ে গেলে সে তা ভুলে গিয়েছে। সভ্যতার আলোর বিপরীতে অন্ধবিশ্বাসে আচ্ছন্ন পল্লিবাংলার সমাজসত্যকে এভাবেই লেখক তুলে ধরতে চেয়েছেন আলোচ্য গল্পে।

9. “বুড়ো ঘোষালের ব্যাখ্যা শুনে সেটা কেটে গেল।”- বুড়ো ঘোষাল কী ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন? সেই ব্যাখ্যার ফল কী হয়েছিল? অথবা, “ব্যাখ্যাটা দেওয়া উচিত ছিল কুঞ্জ গুণীর।”- কোন্ ব্যাখ্যার কথা বলা হয়েছে? সেটা কুঞ্জ গুণীর দেওয়া উচিত ছিল কেন?

Ans: আলোচ্য ব্যাখ্যা: মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় বিরচিত ‘হলুদ পোড়া’ গল্পে রহস্যজনকভাবে খুন হওয়া বলাই খুড়োর ভাইপো নবীনের স্ত্রী দামিনী কোনো এক সন্ধ্যায় অকস্মাৎ অদ্ভুত আচরণ প্রদর্শন শুরু করলে গ্রামবাসী ধরে নেয় তার উপর প্রেতাত্মার ভর হয়েছে। সেই সন্দেহে সিলমোহর পড়ে যখন গুনিন কুঞ্জের কৌশলে সে স্বয়ং ঘোষণা করে যে, তার দেহে বসবাসকারী আত্মা হল সদ্য খুন হওয়া গর্ভবতী শুভ্রা। শুধু তাই নয়, দামিনীর মুখ দিয়ে যেন স্বয়ং শুভ্রার আত্মাই জানান দেয় তার খুনির নাম হল অপঘাতে মৃত বলাই চক্রবর্তী। কিন্তু খটকা ছিল এখানেই- বলাই চক্রবর্তী শুভ্রার মারা যাওয়ার তিনদিন আগেই খুন হয়েছিল। তাহলে সে কীভাবে শুভ্রার হত্যাকারী হতে পারে? এই ধাঁধার একটা বিশ্বাসযোগ্য সমাধান দেয় গ্রামের বৃদ্ধ পঙ্কজ ঘোষাল। সে বলে যে, শুধু জ্যান্ত মানুষই গলা টিপে খুন করতে পারে বা করে থাকে তা নয়, প্রেতাত্মাও এ কাজ করতে পারে। গ্রামবাসীর সংশয়ের এই বিশ্বাসযোগ্য ব্যাখ্যাটি দেওয়া উচিত ছিল কুঞ্জ ওঝার, কিন্তু সময়মতো তার মাথায় এই ব্যাখ্যা না আসায় বৃদ্ধ ঘোষাল এই কথা সকলকে বলে সহজেই সংস্কারাচ্ছন্ন অজ্ঞ পল্লিবাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ফলত, আপন মর্যাদা রক্ষার্থে কুঞ্জ তৎক্ষণাৎ বৃদ্ধ ঘোষালের কথায় সায় দেয়।

কারণ: কুঞ্জ একজন গুনিন, যারা প্রেতে ভর করা রোগীর প্রেত ছাড়ানোর কাজ করে। চলতি কথায় এদের ওঝা-ও বলা হয়। এদের কাজটি মূলত সাধারণ মানুষের মনে ভয় ও সংস্কার প্রবেশ করিয়ে তাদের মনের জোর ভেঙে নিজেদের বিশ্বাসযোগ্যতা বৃদ্ধি করা। এ কাজ সঠিকভাবে করতে পারলে ওঝার উপর মানুষের নির্ভরতা বাড়ে। সমাজে তাদের প্রতিপত্তিও বৃদ্ধি পায়। দামিনীর ঘটনায় শুভ্রার মৃত্যুর সঠিক ব্যাখ্যা কুঞ্জ ওঝা যদি সর্বপ্রথম দিতে পারত তবে গ্রামবাসীর কাছে তার আরও খ্যাতিবৃদ্ধি হত। কিন্তু বৃদ্ধ ঘোষাল গুনিন না হয়েও অভিজ্ঞতার বশে ব্যাখ্যাটি পূর্বেই করে ফেলায় সর্বসমক্ষে কুঞ্জর যেন কিছুটা মর্যাদাহানি ঘটে গুনিন হিসেবে কুঞ্জ ওঝার কাছ থেকেই সর্বাগ্রে এই ব্যাখ্যাপ্রাপ্তির প্রত্যাশা যুক্তিসংগত।

10. “এক রাত্রে অনেক কান ঘুরে পরদিন সকালে এই কথাগুলি ধীরেনের কানে গেল।”- কোন্ কথাগুলি ধীরেনের কানে গেল? কথাগুলি শোনার পর ধীরেনের মধ্যে কী কী প্রতিক্রিয়া দেখা গেল?

Ans: যে কথাগুলি: কল্লোল যুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ছোটোগল্পকার মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় বিরচিত ‘হলুদ পোড়া’ গল্পের কাহিনিতে দেখা যায় কার্তিকের মাঝামাঝি সময়ে গাঁয়ে তিনদিনের তফাতে দু-দুটো খুনের ঘটনাবৃত্তান্ত-একজন বলাই চক্রবর্তী, অন্যজন শুভ্রা। এই দুটি খুনের সম্পর্ক আবিষ্কারের জন্য গাঁয়ের লোক যখন মরিয়া, ঠিক সেই মুহূর্তে নিহত বলাই খুড়োর ভাইপো নবীনের স্ত্রী দামিনীর শরীরে আশ্রয় নেওয়া আত্মা কুঞ্জ ওঝার গুণপনায় জানিয়ে দেয়-

“আমি শুভ্রা গো, শুভ্রা।… বলাই খুড়ো আমায় খুন করেছে।”

উপস্থিত অনেকে একথা বিশ্বাস না করলেও বুড়ো পঙ্কজ ঘোষাল এবং কুঞ্জ গুণীর অকাট্য যুক্তিতে সকলেই তা বিশ্বাস করে নেয়। তাদের কথায় বলাই চক্রবর্তী একজনকে ভর করে তার মধ্যস্থতায় শুভ্রাকে খুন করেছে, তার রক্তমাংসের হাত দিয়ে। এই কথাগুলিই অনেক কান ঘুরে অতিরঞ্জিত হয়ে ধীরেনের কানে যায়।

প্রতিক্রিয়া: দামিনীর শরীরে শুভ্রার প্রেতাত্মার অধিষ্ঠান, শুভ্রার স্বীকারোক্তিতেই তার খুনের রহস্য উন্মোচন গাঁয়ের অন্যান্য সকলের মতো অনেক কান ঘুরে শুভ্রার দাদা ধীরেনের কানেও এলে তার মধ্যে যে যে প্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত হয়েছিল, তা নিম্নরূপ-

পুরোনো ভাবনার সঞ্চার: বোন শুভ্রার মৃত্যুতে পাড়ার মানুষ বাড়ি বয়ে নানাবিধ গুজব শুনিয়ে গেলেও ডোবার কোন দিক থেকে কীভাবে কে সেদিন সন্ধ্যায় ঘাটে এসেছিল, কেন এসেছিল এইসব পুরোনো ভাবনা সে ভাবতে ভাবতে অন্যমনস্ক হয়ে যায়।

ক্ষোভ ও বিষাদের মাত্রাবৃদ্ধি: গাঁয়ের মানুষদের কথায় ধীরেনের মধ্যে একরাশ ক্ষোভ ও বিষাদের সৃষ্টি হয়, অথচ সে কাউকে কিছু বলতে পারে না, চুপচাপ থাকে, অন্য কোনো বিষয়ে তার মন বসে না।

অন্যমনস্কতা: পাড়ার মানুষেরা বাড়ি বয়ে গুজব রটিয়ে গেলে পাড়া প্রতিবেশীর বক্তব্যের সত্যতা যাচাই করতে গিয়ে ধীরেন মাঝে মাঝে অন্যমনস্ক হয়ে যায়। স্কুলে পড়ানোর ক্ষেত্রেও তার আর মন লাগে না।

রাগের বহিঃপ্রকাশ: পাড়ার মানুষের কথাগুলোকে স্ত্রী শান্তি মেনে নিয়ে “আমার কিন্তু মনে হয় তাই হবে” বললে ধীরেন ক্রুদ্ধ হয়ে কটমট করে তাকিয়ে স্ত্রীকে ধমক দেয়।

নিজেকে বহিরাগত ভাবা: স্কুলে গিয়ে ধীরেনের নিজেকে বহিরাগত মনে হতে থাকে, কারো দিকে সে তাকাতে পারে না, নিজেকে যেন তার ‘জীবন্ত ব্যঙ্গের’ মতো মনে হয়।

এইসব প্রতিক্রিয়া পুঞ্জীভূত হয়েই পরবর্তীকালে ধীরেনের মানসিক ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়। তাই ধীরেন চরিত্রের ক্রমবিবর্তনে এসব প্রতিক্রিয়াই যে মুখ্য ভূমিকা নিয়েছে তা বলা বাহুল্য।

11. “আমায় কিছু বলবে না। খপর্দার”– কে, কাকে, কেন একথা বলেছে? 

Ans: যে, যাকে বলেছে: কথাসাহিত্যিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত ‘হলুদ পোড়া’ গল্পে মানসিক দ্বিধা, যন্ত্রণায় দীর্ণ গাঁয়ের স্কুলমাস্টার ধীরেন তার স্ত্রী শান্তির উদ্দেশে ক্ষুব্ধ কণ্ঠে উদ্ধৃত সাবধানবাণীটি শুনিয়েছে।

উক্তির কারণ: ষোলো-সতেরো বছরের রোগা, ভীরু মেয়ে চাটুজ্জে বাড়ির শুভ্রা, বছর দেড়েক আগে বিয়ে হয়ে মাস খানেক আগে বাপের ঘরে এসেছিল সন্তান প্রসবের জন্য। অন্তঃসত্ত্বা শুভ্রা পাছে পিছলে পড়ে যায়, দাদা ধীরেন তাই আদরের বোনটির জন্য বাড়ির পিছনের ডোবার ঘাটটি বাঁধিয়ে দিয়েছিল যত্ন করে। ঘরোয়া গেরস্ত কন্যাটির জীবনে খাপছাড়া এমন কিছু কোনোদিনই ছিল না, যা পাড়াপড়শির সমালোচনার কারণ হতে পারে। অথচ কার্তিক মাসের মাঝামাঝি কোনো এক ভর সন্ধ্যারাত্রে শ্বাসরোধ করে খুন করা হল তাকে। শুভ্রার এই মর্মান্তিক পরিণতি দিয়েই গল্পের শুরু। শুধু শুভ্রাই নয়। এই ঘটনার দিন তিনেক আগে খুন হয় স্বভাষদোষে দুষ্ট গাঁয়ের বলাই খুড়ো। ফলে এই দুই নারী-পুরুষের রহস্য-খুন মুখরোচক বৃত্তান্তৰূপে ছড়িয়ে পড়ে জনমনে। সেই কুৎসায় ইন্ধন জোগায় বলাই খুড়োর ভাইপো-বউ দামিনীর আকস্মিক অসুস্থতা এবং কুন্তু ওঝার জাদুচিকিৎসায় দামিনীর দেহে ভর করা অপশক্তির স্বীকারোক্তি- সে শুভ্রা এবং বলাই খুড়োই তার হত্যাকারী। হাওয়ার বেগে ছড়িয়ে পড়ে এই কেচ্ছাকাহন এবং তা পৌঁছোয় শুভ্রার দাদা ধীরেনের কানেও। বিজ্ঞানের ছাত্র, স্কুলশিক্ষক ধীরেন গ্রামের একমাত্র হাতুড়ে ডাক্তার বলে দামিনীর অসুস্থতায় ডাক পড়েছিল তারও। গুনিনের অত্যাচারের যোগ্য জবাবও সে দিয়েছিল সেদিন। সে জানত দামিনীর অসুখ মানসিক সমস্যা ছাড়া আর কিছুই নয়। কিন্তু গ্রামীণ সংস্কার গল্পের মোড় দিয়েছিল ঘুরিয়ে। হতভাগ্য ধীরেন ও তার পরিবার পথেঘাটে হাজারও প্রশ্ন-পরামর্শ-কৌতূহলী চাহনির ঘেরাটোপে বাঁধা পড়তে লাগল। গ্রামের পুরোহিত বিধান দিলেন বোনের অপমৃত্যুর দোষ কাটানো, ক্রিয়াকর্ম-অনুষ্ঠান, মাদুলি ধারণের। স্কুলে ধীরেনের অবস্থা হয়ে দাঁড়াল জীবন্ত ব্যঙ্গের মতো। সেক্রেটারির নির্দেশে প্রধান শিক্ষক তাকে ডেকে একমাস ছুটিও দিলেন। হেমন্তের বিষণ্ণতা ধীরেনকে গ্রাস করতে লাগল ধীরে ধীরে -একদিকে তার শিক্ষা, বৈজ্ঞানিক যুক্তিবোধ অন্যদিকে প্রাণপ্রিয় শুভ্রার শোক, মৃত্যুরহস্য, কেচ্ছা-কেলেঙ্কারি ধীরেনের আর মন বসল না কিছুতেই। ধীরেনের গ্রাম্য, সংস্কারী স্ত্রী শান্তিও পঙ্কজ ঘোষাল-কুঞ্জ ওঝার ব্যাখ্যা শুনে বললে-“আমার কিন্তু মনে হয় তাই হবে।” ঘরে-বাইরে প্রতি মুহূর্তে অপদস্থ হয়েও, সংস্কারের কাছে ক্রমাগত যুক্তি-বুদ্ধিকে বিকিয়ে এসেও নিশ্চুপ থাকতে বাধ্য হওয়া ধীরেনের অবদমিত ক্ষোভ স্ত্রীর মন্তব্যে তাই ফেটে পড়েছে আলোচ্য উদ্ধৃতিতে। চেতনার যে ক্ষীণ রেখাটুকু তখনও বজায় ছিল ধীরেনের, যে মন ছিল সংস্কার-লোকবিশ্বাসের বিরুদ্ধে- তাকে প্রাণপণে টিকিয়ে রাখার যে লড়াই চলছিল তার মধ্যে-তারই প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত পাওয়া যায় উক্তিটিতে।

12. “নিজেকে জীবন্ত ব্যঙ্গের মত মনে হচ্ছিল।”- উদ্ধৃত উক্তিটির আলোকে ধীরেনের চরিত্রটি বিশ্লেষণ করো।

Ans: আলোচ্য উক্তির আলোকে ধীরেনের চরিত্র: মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় – রচিত ‘হলুদ পোড়া’ গল্পটি অলৌকিক গল্প, না মনস্তাত্ত্বিক গল্প তা নিয়েই যাবতীয় বিতর্কের সূত্রপাত। তবে হ্যাঁ, গল্পে ধীরেন চরিত্রটি না থাকলে হয়তো এ বিতর্কের অবকাশ মিলত না। কারণ, মনস্তাত্ত্বিক টানাপোড়েন গল্পের এই চরিত্রটির মধ্যেই সর্বাধিক। ধীরেন শিক্ষিত, বিজ্ঞানমনস্ক। সে পেশায় শিক্ষক, নেশায় হাতুড়ে ডাক্তার। কম বয়সের উৎসাহে লাইব্রেরি, সমিতি ও দাতব্য চিকিৎসা ইত্যাদি করে থাকলেও এই মুহূর্তে সে পুরোদস্তুর সংসারী। নবীনের স্ত্রী দামিনীর অসুস্থতা যে অলৌকিক কিছু নয়, তা নেহাতই মানসিক সমস্যা- একথা ধীরেনই প্রথম বুঝতে পারে ও নবীনকে বোঝানোর চেষ্টা করে। অথচ সেই ধীরেনকেই গল্পের মধ্যভাগ থেকে আস্তে আস্তে পাল্টে যেতে দেখা যায়। দামিনীর কণ্ঠস্বরে প্রেতাত্মা শুভ্রার স্বীকারোক্তি, খুনের রহস্যভেদে বলাই চক্রবর্তীর নাম ঘোষণা ইত্যাদি ঘটনার পর কুঞ্জ ওঝা যখন জানাল যে, বলাই চক্রবর্তীর আত্মা স্বহস্তে নয়, কোনো জীবিত মানুষের মাধ্যমেই শুভ্রাকে হত্যা করেছে; সেই মুহূর্ত থেকেই গোটা গ্রামের সন্দেহের দৃষ্টি ঘুরে যেতে থাকে ধীরেনের পরিবারের দিকে। কারণ ধীরেন শুভ্রার দাদা এবং শুভ্রার হত্যাকাণ্ড ঘটেছে তাদেরই বাড়ির পিছনের ডোবার ধারে। আর স্বভাবদুষ্ট বলাই খুড়ো শুভ্রাকে খুন করল কেন! এর নেপথ্যে কি লুকিয়ে ছিল কোনো নোংরা প্রবৃত্তি? গ্রামবাসীরা এতদিন ধরে যা কিছু অনুমান করছিল, প্রেতাত্মা শুভ্রার স্বীকারোক্তি যেন সেগুলিকেই স্বীকৃতি দিয়ে দিল এবং সেই কারণেই আরও মুষড়ে পড়ে ধীরেন। পাশাপাশি অজ্ঞ গ্রামবাসীর হাবভাব, সন্দেহদৃষ্টি ধীরেনের মনে এ প্রশ্নেরও জন্ম দেয় যে, তাহলে কি ধীরেন বা তার পরিবারের কাউকেই ভর করে বলাইয়ের প্রেতাত্মা এমন কাজ করে থাকতে পারে? চক্রবর্তী বাড়িতে ঘটা সেদিনকার ঘটনাবৃত্তান্ত ধীরেনের স্কুলের পরিবেশকেও তার পক্ষে অসহনীয় করে তোলে। ক্লাসেও ছাত্রদের সন্দিগ্ধ দৃষ্টি, গুজগুজ, ফিসফাস – নিজেকে ‘জীবন্ত ব্যঙ্গ’ বলে মনে হয় তার। সর্বত্রই যেন তাকে ঘিরে গোপন আলাপ, হাসাহাসি চলছে। তার দমবন্ধ হয়ে আসে। নিজেরই মনে তৈরি করা হাজারও প্রশ্নবাণে প্রতিমুহূর্তে ক্ষতবিক্ষত হতে হতে ধীরেন অবসন্ন হয়ে আসে।

13. স্কুলের সেক্রেটারি মথুরবাবুর বাড়ি যেতে ধীরেন কুণ্ঠাবোধ করছিল কেন? 

Ans: ধীরেনের কুণ্ঠাবোধ: গল্পকার মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর ‘হলুদ পোড়া’ গল্পে নায়ক চরিত্র ধীরেনের মানসিক অবস্থার পরিবর্তনের পাশাপাশি দীর্ঘদিনের চেনা দৈনন্দিন জগৎ পরিবর্তনের ছবিও অঙ্কন করেছেন। ধীরেন ফিজিক্সে অনার্স নিয়ে বিএসসি পাশ করে সাত বছর গাঁয়ের একটি স্কুলে জিওগ্রাফি পড়াচ্ছে, ফল স্বরূপ ছাত্রছাত্রী ও সহকর্মীদের সঙ্গে তার দীর্ঘদিনের সুসম্পর্ক। কিন্তু তার বোন শুভ্রা হঠাৎ খুন হয়ে গেলে নবীনের স্ত্রী দামিনীর উপর শুভ্রার প্রেতাত্মা ভর করার ঘটনা গাঁয়ে কাল্পনিক কেলেঙ্কারি ছড়িয়ে দেয়। ফলে ধীরেন ক্রমশ সংকুচিত হয়ে যায়, অন্যমনস্কতা তাকে ধীরে ধীরে গ্রাস করতে থাকে। ক্লাসে পড়াতে গিয়ে নিজেকে তার ‘জীবন্ত ব্যঙ্গের’ মতো মনে হয়, বইয়ের পাতা থেকে চোখ তুলে সে ছেলেদের দিকে তাকাতে পারে না। তার এই অন্যমনস্কতা, তাকে ঘিরে সর্বত্র নানাবিধ প্রশ্নের উৎপাত, হয়তো স্কুলের পরিবেশকে বিঘ্নিত করছে বলেই, ক্লাসের ঘণ্টা পড়ার পূর্বেই মথুরবাবুর নির্দেশ মতো প্রধানশিক্ষক তাকে জানিয়ে দেন-

“তুমি একমাসের ছুটি নাও ধীরেন।”

মথুরবাবু স্কুলের সেক্রেটারি। মাইল খানেক পথ হাঁটলেই তাঁর বাড়ি। কিন্তু তাঁর বাড়ি যেতে ধীরেন কুণ্ঠাবোধ করেছিল। কারণ-

মথুরবাবুর বিশ্রামের কথা ভাবা: স্কুল থেকে বেরিয়ে ধীরেন ভাবে মথুরবাবুর বাড়ি যাওয়ার কথা। কিন্তু ক্লান্ত, অসুস্থ ধীরেন গাছতলায় একটু বিশ্রাম করে বাড়ির দিকেই পা বাড়ায়। সে ভাবে মথুরবাবু হয়তো ভরদুপুরে খাওয়াদাওয়া করে বিশ্রাম নিচ্ছেন, তাই তাঁকে বিরক্ত করা উচিত হবে না।

পরে দেখা করার ভাবনা: ধীরেন নিজেকে বোঝায়, স্কুল থেকে তাকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়নি। তার অত্যন্ত অন্যমনস্কতা, তার বর্তমান পরিস্থিতি দেখে একমাসের ছুটি দেওয়া হয়েছে মাত্র। তাই ধীরেন ভাবে একমাসের মধ্যে মথুরবাবুর সঙ্গে দেখা করার অনেক সুযোগ সে পাবে। ওই দিন তাই আর মথুরবাবুর বাড়ি গিয়ে সে তার হাত-পা ধরতে চায়নি।

জনসমক্ষে যাওয়ার ভয়: ধীরেন ভাবে, তার বোন শুভ্রার খুনকে কেন্দ্র করে দামিনী অসুখের ঘোরে যে কথা বলেছে, সেই কাল্পনিক কেলেঙ্কারির জন্য মথুরবাবু যদি ধীরেনকে দোষী সাব্যস্ত না করে, তার ছুটি বাতিল করে কাজে যাওয়ার অনুমতি দেন, তবেই সমস্যা। কারণ ধীরেন এখন বুঝতে পেরেছে, নিয়মিতভাবে প্রতিদিন স্কুলে গিয়ে ছেলেদের পড়ানোর ক্ষমতা তার আর নেই।

ধীরেন আসলে পরিস্থিতির চাপে পড়ে সামাজিক উদ্বেগমূলক ব্যাধির শিকার হয়েছিল তাই সে ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে চোখ মেলাতে পারেনি, প্রধান শিক্ষকের আদেশ বিনা বাক্যে মেনে নিয়েছে এবং পরিশেষে তাই। তাকে মথুরবাবুর বাড়ি না গিয়ে, চেনা মানুষের সঙ্গে দেখা হয়ে যাওয়ার ভয়ে, মাঠের পথ ধরে বাড়ি চলে যেতে দেখা যায়।

14. ধীরেনের স্ত্রী শান্তি অশরীরী আত্মার থেকে নিজের পরিবারকে রক্ষা করতে কী কী সতর্কতা অবলম্বন করেছিল, তা গল্প অনুসরণে লেখো।

Ans: সতর্কতাসমূহ: গল্পকার মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা ‘হলুদ পোড়া’ গল্পটি ভৌতিক গল্প নয়, ভূত-সংস্কারের গল্প। এই গল্পে বাঙালি গৃহবধূ শান্তির পরিচয় হল সে যুক্তিবাদী, শিক্ষিত ধীরেনের স্ত্রী। বাঙালি গৃহবধূ বলেই বাঙালি সংস্কার সে প্রাণপণে মেনে চলার চেষ্টা করে। গল্পের কাহিনি অনুযায়ী নবীনের স্ত্রী দামিনীর উপর ভর করা, নিহত শুভ্রার প্রেতাত্মা নিজমুখে ঘোষণা করেছে তাকে খুন করেছে বলাই চক্রবর্তী। এমন অস্বাভাবিক সংবাদ মুখে মুখে ছড়িয়ে গেলে পুরুতঠাকুর-সহ অনেকে ধীরেনকে যেমন নানা উপদেশ বা সংস্কারবাণী শুনিয়েছে, তেমনি শান্তিকেও পাড়াপ্রতিবেশীরা কিছু সংস্কার মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছে। বাঙালি গৃহবধূ শান্তি তাই পরিবারের মঙ্গলকামনায় কিছু সতর্কতা অবলম্বন করেছিল।

সন্ধ্যার আগে রান্না-খাওয়া সমাপ্ত করা: বাড়ির চতুর্দিকে ভৌতিক পরিবেশের কারণে শান্তি সন্ধ্যার আগেই রান্নাবান্না আর ঘরকন্নার সব কাজ শেষ করে রাখত। আলো জ্বালার আগেই ছেলেমেয়েদের খেতে বসিয়ে। দিয়ে, নিজেও খেয়ে নিত সে। তার বিশ্বাস ছিল এতে অশরীরী আত্মার কুপ্রভাব তার পরিবারের উপর পড়বে না।

আমিষ রান্না বন্ধ করা: শান্তি বিকেল-সন্ধ্যাতে মাছ রান্না করা বন্ধ করে দেয়। তার বিশ্বাস এঁটোকাঁটা অশরীরী আত্মাকে আকর্ষণ করে। তাই এমন ব্যবস্থা নেয় সে।

ঘরের বাইরে সন্ধ্যায় না বেরোনো: শান্তি অন্ধকার ঘনিয়ে আসার পর ধীরেনকে সঙ্গে না নিয়ে বড় ঘরের চৌকাঠ পেরোতে আর সাহস পায় না। অশরীরী আত্মার হাত থেকে রক্ষা পেতে ছেলেমেয়েদেরও ঘরের মধ্যে আটকে রাখা শুরু করে।

ঘাটের পথে বাঁশ পেতে রাখা: পরিবারের মঙ্গল কামনায় সতর্কতাহেতু গ্রামের অভিজ্ঞ ক্ষেন্তি পিসির পরামর্শ অনুযায়ী শান্তি কাঁচা বাঁশের দুই প্রান্ত খানিকটা পুড়িয়ে শোওয়ার ঘর আর রান্নাঘরের ভিটের সঙ্গে দুটি প্রান্ত ঠেকিয়ে পেতে দেয়। তার বিশ্বাস অশরীরী কোনো কিছু এ বাঁশ ডিঙোতে পারবে না। সে মনে মনে ভেবে নেয়-

“ঘাট থেকে শুভ্রা যদি বাড়ির উঠানে আসতে চায়, এই বাঁশ পর্যন্ত এসে ঠেকে যাবে।”

স্বামী ও সন্তানের অমঙ্গল সে কল্পনাও করতে পারে না, তাই তাদের রক্ষা করতে সে এমনই সতর্কতা অবলম্বন করেছিল।

15. মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘হলুদ পোড়া’ গল্পে প্রকৃতির যে চিত্ররূপময়তা রয়েছে, তা বর্ণনা করো। 

Ans: প্রাককথন: মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত ‘হলুদ পোড়া’ গল্পটি আপাদমস্তক একটি মনস্তাত্ত্বিক ময়নাতদন্ত হলেও মানবমনের গভীরে প্রতিনিয়ত যে পটপরিবর্তন, যে ওঠা-পড়া চলে- তাকে চিত্রায়িত করতেই যেন লেখক সচেতনভাবেই গল্পের বহিরঙ্গে রচনা করেছেন একটি রোমহর্ষক ভৌতিক আবহ। আর, অতিপ্রাকৃত এই রসসঞ্চারে সহায়ক হয়ে উঠেছে গল্পের চিত্ররূপময় প্রকৃতির সুগভীর ব্যঞ্জনা।

দৃষ্টান্তসমূহ: ‘হলুদ পোড়া’ গল্পে প্রকৃতির যে অনুষঙ্গ বারবার ফিরে আসে- তা বিষণ্ণ, ম্লান হেমন্তের। কার্তিক মাস নাগাদই নিস্তরঙ্গ গ্রামজীবনে সাড়া ফেলেছে উদ্দেশ্যহীন দু-দুটি খুনের ঘটনা। প্রথম খুনের বর্ণনাকে আরও রহস্যপূর্ণ করেছে গাঁয়ের দক্ষিণে ঘোষেদের মজা পুকুরের ধারে মরা গজারি গাছ, বনজঙ্গলের আববুহীন ফাঁকা ধু-ধু একটি গা-ছমছমে স্থান। পাশাপাশি দ্বিতীয় খুনটির বর্ণনায় প্রকৃতির বিবরণ খুব বেশি সুস্পষ্ট না হলেও সাঁঝবেলা বা বাড়ির পিছনে ডোবার ঘাটের ইঙ্গিত সহজেই পাঠকমনে একটা আলো-আঁধারি পরিবেশ এঁকে দিয়ে যায়।

গল্পের পরবর্তী ধাপে আসে অপঘাতে মৃত বলাই চক্রবর্তীর ভাইপো-বউ দামিনীর প্রেতগ্রস্ত হওয়ার প্রসঙ্গ। সন্ধ্যাকাল, অতি মৃদু দমকা বাতাসে বাড়ির পূর্ব কোণের তেঁতুল গাছের পাতার মর্মর যেন অস্বাভাবিক, অপ্রত্যাশিত কিছু ঘটার ইঙ্গিত বহন করে।

কার্তিক পেরিয়ে আসে অগ্রহায়ণ। লেখকের বর্ণনায় উঠে আসে উজ্জ্বল মিঠে রোদ, বর্ষার জলে পরিপুষ্ট সবুজের সমারোহ, কচুরিপানায় আবৃত ডোবা, গাঢ় সবুজ রসালো পাতার দল, ফুলে ফুলে কোমল রঙের ছড়াছড়ি। এই অংশে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য যে বর্ণনাটি, তা হল অঘ্রান পড়তে না পড়তেই বষর্ণপুষ্ট ডোবার জল কমতে থাকায় তালের গুঁড়ির ঘাটটির ক্রমশ বেআবরু হতে থাকা। এ যে আসলে বিজ্ঞানমনস্ক ধীরেনেরই মানস বিবর্তনকে সূচিত করে-তা বলাই বাহুল্য। প্রকৃতির এই অপরূপ রূপের অভ্যন্তরে যেমন অবক্ষয়ের খেলা- লেখক সেই বৈপরীত্যকেই যেন এরপর চিত্রায়িত করলেন আপাতদৃষ্টিতে সুশিক্ষিত, বিজ্ঞানমনস্ক, যুক্তিবাদী ধীরেনের মানসপটের পরিবর্তনে। বোন শুভ্রার মৃত্যু, তাকে ঘিরে নানা গুজব-প্রতিনিয়ত এই ভাবনায় আত্মমগ্ন থাকতে থাকতে হেমন্তের বিকেলের ম্লান আলোর ন্যায় তার চেতনার শেষ রেখাটুকুও ঘোর আঁধারে ডুবে যেতে থাকল।

গল্পের পরিশেষে প্রকৃতির চিত্ররূপময়তার যে শেষ দৃষ্টান্তটি পাওয়া যায়, তা যেন প্রকৃতির রূপ মাত্র নয়, তা ধীরেনেরই প্রতিবিম্ব ‘তখনো আকাশ থেকে আলোর শেষ আভাসটুকু মুছে যায়নি। দুতিনটি তারা দেখা দিয়েছে, আরও, কয়েকটি দেখা দিতে দিতে আবার হারিয়ে যাচ্ছে আর এক মিনিট দুমিনিটের মধ্যে রাত্রি শুরু হয়ে যাবে।’

যেন রাত্রির গভীরে বিলুপ্ত দিনের আলোর ন্যায় ধীরেনের সচেতন মনটিও সত্যই এরপর ভয়াবহ মনোবিকলনের শিকার হয়। ফিজিক্স অনার্স, স্কুলশিক্ষক ধীরেন আত্মবিস্মৃত হয়ে প্রেতগ্রস্ত হয়ে আপনার পরিচয় দেয়-‘আমি বলাই চক্রবর্তী’।

16. ছোটোগল্প হিসেবে হলুদ পোড়া’ গল্পটি কতদূর সার্থক তা নিজের ভাষায় আলোচনা করো।

Ans: ছোটোগল্পের সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্য: আয়তনের দিক থেকে সংক্ষিপ্ত, ভাবের দিক থেকে অখণ্ড, অনুভূতির দিক থেকে বৈচিত্র্য সম্পাদনকারী গদ্যে রচিত কাহিনি ছোটোগল্প নামে পরিচিত। সংক্ষিপ্ততাই ছোটোগল্পের প্রাণ। সমালোচক ছোটোগল্পকে বলেছেন ‘Peculiar product of the 19th century.’। ছোটোগল্পে চরিত্র সংখ্যা থাকে স্বল্প, ঘটনার ঘনঘটা কম, বিষয় একমুখী এবং কাহিনির শেষে থাকে একটা চমক। ছোটোগল্পে আরম্ভের তির্যকতা ও সমাপ্তির চমৎকারিত্ব পরিলক্ষিত হয়।

আমরা আলোচনা করে দেখব, গল্পকার মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় বিরচিত ‘হলুদ পোড়া’ রচনাটি ছোটোগল্প হিসেবে কতখানি সার্থক।

সূচনা ও সমাপ্তি: ছোটোগল্পের সূচনা হয় বিদ্যুৎ চমকের মতো হঠাৎ করেই। জীবনের একটি অংশকে আলোকিত করাই এর মূল লক্ষ্য। ‘হলুদ পোড়া’ গল্পের সূচনাতেই দু-দুটো মৃত্যুসংবাদ পাঠককে চমকিত করে, আবার প্রেতগ্রস্ত ধীরেনের দেহ অধিগ্রহণকারী প্রেতাত্মা বলাই চক্রবর্তীর স্বীকারোক্তির মধ্য দিয়ে গল্পের সমাপ্তিও ঘটেছে হঠাৎ করেই।

সংক্ষিপ্ততা: ছোটোগল্প আকৃতি বা চেহারায় ছোটো হয়। আলোচ্য ‘হলুদ পোড়া’ গল্পের গঠনগত ও কাহিনিগত সংক্ষিপ্ততা পাঠকবর্গকে পরিপূর্ণভাবেই গল্পের রস আস্বাদনে সাহায্য করে।

একমুখী আঙ্গিক: ছোটোগল্পের কাহিনি হয় একমুখী। ‘হলুদ পোড়া’ গল্পের মধ্যেও এ বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত। কোনো ভূত নয়, একমাত্র অধ সংস্কারই যুক্তিহীন করে মানুষকে, অবলীলায় বিকারগ্রস্ত করে, সেই কারণেই গল্পের শেষে শিক্ষিত, যুক্তিবাদী ধীরেন মানসিক বিকৃতির ঘোরে নিজেই বিস্মৃত হয়। গল্পে তার শেষতম সিদ্ধান্ত ‘আমি বলাই চক্রবর্তী। শুভ্রাকে আমি খুন করেছি।’-যা গল্পের একমুখী লক্ষ্যকেই পূর্ণ করে।

স্বল্প চরিত্র: ছোটোগল্পে চরিত্র সংখ্যা হয় হাতে গোনা। আলোচ্য ‘হলুদ পোড়া’ গল্পের মূল চরিত্র ধীরেন, নবীন, দামিনী ও শান্তি। অন্যান্য অপ্রধান চরিত্রগুলি গল্প সমাপ্তির ক্ষেত্রে সহায়তা করেছে মাত্র।

Climax বা চরম মুহূর্ত: ছোটোগল্পের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো Climax, যা গল্পে ‘Rising action’ এর পরেই থাকে, এটাই চূড়ান্ত পর্যায়। আলোচ্য গল্পের শুরু থেকে পাঠক কখনও ভাবতেই পারবে না যুক্তিবাদী শিক্ষিত ধীরেনকে ধীরে ধীরে কুসংস্কার গ্রাস করে নিচ্ছে, এবং পরিশেষে প্রেতগ্রস্ত ধীরেনের উক্তি প্রত্যুক্তি কার্যতই স্তম্ভিত করে পাঠকবর্গকে।

অতৃপ্তিবোধ: অতৃপ্তিবোধ ছোটোগল্পের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। কবিগুরুর ভাষায়-

‘অন্তরে অতৃপ্তি রবে সাঙ্গ করি’ মনে হবে

শেষ হয়ে হইল না শেষ।’

ধীরেন কর্তৃক গল্পের শেষতম উক্তি ‘আমি বলাই চক্রবর্তী। শুভ্রাকে আমি খুন করেছি।’- পাঠকের মনে নানান প্রশ্নের জন্ম দিয়ে হঠাৎ গল্পটির পরিসমাপ্তি ঘটিয়েছে। বলা বাহুল্য, এই পরিণতি স্বাভাবিকভাবেই অতৃপ্তির রেশ রেখে যায় পাঠকমনে।

সুতরাং, সার্থক ছোটোগল্পের সবরকম বৈশিষ্ট্যগুণে ‘হলুদ পোড়া’ গল্পটি সার্থক ছোটোগল্পরূপে পাঠকের অন্তরে স্থায়ী আসন লাভ করেছে। একথা বলার অপেক্ষা রাখে না।

17. “সে বছর কার্তিক মাসের মাঝামাঝি তিন দিন আগে পরে গাঁয়ে দু’দুটো খুন হয়ে গেল।”- কারা খুন হল? কীভাবে তাদের মৃত্যু ঘটেছিল?

Ans: যারা খুন হল: কথাশিল্পী মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় বিরচিত ‘হলুদ পোড়া’ গল্পের উদ্ধৃতাংশে যাদের খুনের প্রসঙ্গ রয়েছে, তাদের একজন হল মাঝবয়সী জোয়ান মদ্দ পুরুষ বলাই চক্রবর্তী ও গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র ধীরেনের বোন শুভ্রা, যে ছিল সন্তানসম্ভবা, রোগা, ভীরু প্রকৃতির ষোলো-সতেরো বছরের এক নাবালিকা।

বলাই খুড়োর মৃত্যু: কোনো এক বছর কার্তিকের মাঝামাঝি সময়, প্রকৃতি যখন সোনালি ধানের গন্ধে মাতোয়ারা, চতুর্দিকে নবান্নের আয়োজন- সেই আবহেরই বিপরীতে তিনদিন আগে পরে খুন হয়ে যায় গ্রামের বলাই চক্রবর্তী এবং শুভ্রা। গাঁয়ের দক্ষিণে ঘোষেদের মজা পুকুরের – ধারে মরা গজারি গাছের নীচে বনজঙ্গলের আবরুবিহীন এক নিরিবিলি স্থানে একদিন হঠাৎ বলাই চক্রবর্তীকে মরে পড়ে থাকতে দেখা যায়। তার আটচির হয়ে ফেটে যাওয়া মাথাটি দেখে মনে হয় অনেকগুলি লাঠির আঘাতে এই অবস্থা হয়েছে। বলাইয়ের মৃত্যুতে সারা গাঁয়ে হইচই পড়ে গেলেও গাঁয়ের লোকেরা কেউ তেমন বিস্মিত হয় না। গল্পকার এই প্রসঙ্গে বলেছেন- ‘বলাই চক্রবর্তীর এই রকম অপমৃত্যুই আশেপাশের দশটা গাঁয়ের লোক প্রত্যাশা করেছিল’, কারণ সে ছিল স্বভাবদোষে দুষ্ট।

শুভ্রার মৃত্যু: অপরদিকে ষোলো-সতেরো বছরের রোগা ভীরু উপরন্তু সন্তানসম্ভবা শুভ্রার মৃত্যুতে গাঁয়ে হইচই হল কম কিন্তু বিস্ময় ও কৌতূহলের সীমা রইল না। সাধারণ গৃহস্থ ঘরের মেয়ে শুভ্রা, গাঁয়ের আর দশটা মেয়ের মতো সাধারণভাবেই বড়ো হয়েছিল। বিয়ের পর প্রথম সন্তান প্রসবের জন্য সে মাসখানেক আগে তার বাপের বাড়ি এসেছিল। তার জীবনের এমন কোনো ঘটনা কেউ খুঁজে বের করতে পারেনি, যে কারণে সে খুন হতে পারে। অথচ কার্তিকের এক সন্ধ্যায় বাড়ির পিছনে ডোবার ঘাটে শুভ্রার মতো নিরীহ মেয়েকে কে বা কারা গলা টিপে খুন করে গিয়েছিল, তা কেউ বুঝে উঠতে পারেনি। এমন নির্দয় এক ঘটনার সাক্ষী হয়ে এবং এর কারণ অনুসন্ধান করতে না পেরে ‘গাঁ শুদ্ধ লোক যেন অপ্রস্তুত হয়ে রইল।’

18. মানিক বন্দ্যেপাধ্যায়ের ‘হলুদ পোড়া’ গল্প অবলম্বনে গুনিন কুঞ্ঝ ওঝার চরিত্রটি বিশ্লেষণ করো।

Ans: প্রাককথন: গল্পকার মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় বিরচিত ‘হলুদ পোড়া’ গল্পে স্বল্প পরিসরে যে কয়েকটি চরিত্র কাহিনিবস্তুকে ক্রমশ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ করেছে, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি চরিত্র কুঞ্জ ওঝা, যে নামকরা গুনিন হিসেবে গল্পে আবির্ভূত হয়েছে। সমালোচক চার্লস ডিকেন্স (Charles Dickens) বলেছিলেন- ‘The Character is the vehicle that carries the story.’। কুঞ্জ মাঝি গল্পে সেই ‘Vehicle’-এর কাজ করেছে। তার চরিত্রের যে দিকগুলি পাঠকের চোখে সুচারুভাবে ধরা পড়েছে, তা নিম্নরূপ-

নামকরা গুনিন: কুঞ্জ ওঝা ছিল একজন নামকরা গুনিন। তার গুণপনার খবর চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছিল বলে সবাই একডাকে তাকে চিনত। একদিন নবীনের স্ত্রী দামিনী হঠাৎ অজানা রোগে আক্রান্ত হলে বুড়ো পঙ্কজ ঘোষাল তাই কুঞ্জের কথাই মনে করেছে। ডাক্তারের থেকেও যেন কুঞ্জ অনেক বেশি শক্তিশালী- অন্ধ সংস্কারে বিশ্বাসী গ্রামবাসী তাই কুঞ্জর গুণপনাতেই আস্থা রেখেছিল।

ভীতির মায়াজাল স্রষ্টা: ‘হলুদ পোড়া’ সংস্কারবদ্ধ মানুষের জীবনচিত্র। লোকসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাসের প্রভাবে মানুষ কীভাবে প্রভাবিত হয়, এ গল্পে সেই প্রতিচ্ছবিই ফুটে উঠেছে। কুঞ্জ ওঝা সেই আদিম সংস্কারেরই ধ্বজাধারী। মানুষের অজ্ঞতা, ভীতিই তার বুটিবুজির উৎস। চক্রবর্তী বাড়িতে কুঞ্জের গুণপনা দেখার লোভে গাঁয়ের মানুষেরা ভিড় জমাতে শুরু করলে কুঞ্জ প্রথমেই সকলের মনে ভীতির উদ্রেক ঘটাতে বলে-

‘ভর সাঁঝে ভর করেছেন সহজে ছাড়বেন না।’

তবে পরে সবাইকে অভয় দিয়ে বলে, অশরীরী আত্মাকে শেষ পর্যন্ত ছাড়তেই হবে, কারণ কুঞ্জ মাঝির সঙ্গে চালাকি করা ভূতেরও অসাধ্য। অর্থাৎ, মানুষের মনে ভয়ের উদ্রেক ঘটিয়েই নিজের পসার জমিয়েছে কুঞ্জ।

কৌশল প্রয়োগে দক্ষতা: কুঞ্জ কৌশল প্রয়োগে অত্যন্ত পারদর্শী ছিল। দামিনীর রোগ সারাতে প্রথমেই উপস্থিত সকলকে ঘরের দাওয়া থেকে নামিয়ে বিড়বিড় করে মন্ত্রপাঠ শেষে দাওয়ায় জল ছিটিয়ে দামিনীর এলোচুল শক্ত করে খুঁটিতে বেঁধে দেয় সে। এরপর পুনরায় মন্ত্র পড়ে মালসার আগুনে নানা উপকরণ পুড়িয়ে তার গন্ধে দামিনীকে বশীভূত করে ফেলে। সবশেষে কাঁচা হলুদ পুড়িয়ে তার নাকের কাছে ধরে আত্মার পরিচয় জেনে নেয়। অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে এসব কারসাজি করেই সে মানুষের বিশ্বাস জিতে নেয়।

ভীরু: কুঞ্জ বাহ্যিক সাহসিকতার পরিচয় দিলেও আসলে সে ছিল ভীরু স্বভাবের। ভীরুতার কারণেই সে কৈলাস ডাক্তারের তর্জনগর্জনের ভয়ে স্থান পরিত্যাগ করতে বাধ্য হয়।

অত্যন্ত চালাক: কুঞ্জ সমাজ মানসিকতা বোঝে। তাই শুভ্রা ও বলাই চক্রবর্তীর অপমৃত্যু ঘিরে জনতার আলোচিত এতদিনের গুঞ্জনকেই সে দামিনী বা ধীরেনের মুখ দিয়ে উচ্চারণ করিয়ে গুজবকেই বাস্তব ভিত্তি দিতে চায়। কারণ সে জানে রটনাকে সত্যি হতে দেখলে প্রবোধ পাওয়া বা পরিতৃপ্ত হওয়াই মানুষের সাধারণ প্রবৃত্তি। আসলে সবটাই তার ছলনা। নিহত বলাই চক্রবর্তীর ভাইপো-বউ বা নিহত শুভ্রার দাদা ধীরেন – উভয়ই ছিল দুর্বলচিত্ত, অবসাদগ্রস্ত- আর এই মানসিক বিকারগ্রস্ততারই সদ্ব্যবহার করেছিল সুচতুর কুঞ্জ। আবার অন্যদিকে, দামিনী যখন জানায় সে শুভ্রা, বলাই চক্রবর্তী তাকে খুন করেছে- তখন প্রশ্ন তৈরি হয়, তিনদিন আগে যে মৃত, সে খুন করবে কীভাবে? এই প্রশ্নের উত্তর পঙ্কজ ঘোষাল মিথ্যে যুক্তি দিয়ে উপস্থিত সকলকে বোঝাতে থাকলে, নিজের মর্যাদা রক্ষার তাগিদে ধূর্ত কুঞ্জ বুড়ো পঙ্কজ ঘোষালের যুক্তিকে সমর্থন করে তাতে নিজস্ব রং চড়ায়।

‘হলুদ পোড়া’ গল্পে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় যে সমাজসত্য এবং মনস্তাত্ত্বিক ভাবনাকে উপস্থাপন করতে চেয়েছেন, এভাবেই তার সহায়ক হয়ে উঠেছে কুঞ্জ ওঝা।

19. হলুদ পোড়া’ গল্প অবলম্বনে নবীন চরিত্রটির পরিচয় দাও।

Ans: প্রাককথন: কল্লোল যুগের বিখ্যাত গল্পকার মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা ‘হলুদ পোড়া’ গল্পটি ভৌতিক নয়, ভূত সংস্কারের গল্প। গল্পের এক একটি চরিত্রকে গল্পকার ধাপে ধাপে পাঠকের সম্মুখে এনেছেন, আবার সরিয়েও নিয়েছেন। গল্পের এরকমই এক চরিত্র নবীন।

তার চরিত্রের বিশেষ কয়েকটি দিক নিম্নরূপ-

শিক্ষিত যুবক: পরিচয়ে মৃত বলাই চক্রবর্তীর ভাইপো নবীন, বন্ধু ধীরেনের সঙ্গে একই স্কুলে একই ক্লাসে পড়াশোনা করত। পরবর্তীকালে শিক্ষালাভহেতু সে শহরে চল্লিশ টাকা মাইনের চাকরি পেয়ে শহরেই বসবাস করতে শুরু করে- যা তার শিক্ষাগত যোগ্যতারই পরিচয় বহন করে। তবে বাস্তবে সেই শিক্ষার প্রয়োগ সে কতটুকু ঘটাতে পেরেছিল তা নিয়ে বারংবার প্রশ্ন তুলেছেন গল্পকার।

ছলনাময়: বলাই চক্রবর্তীর কেউ না থাকায় উত্তরাধিকার সূত্রে তার সমস্ত সম্পত্তি পায় নবীন। চাকরি সূত্রে বহুদিন যাবৎ শহরবাসী নবীন সম্পত্তির মালিকানা গ্রহণে চাকরি ছেড়ে গ্রামে ফিরে আসে। কাকার রহস্যমৃত্যু নয়, কাকার সম্পত্তির প্রতি লোভ-লালসাই যে তাকে গ্রামে ফিরিয়ে এনেছে-পাছে এ সন্দেহ গ্রামবাসীর মনে জাগে, তাই লোক দেখানোর জন্য তাকে ছলনার আশ্রয় নিতে হয়। উপস্থিত গ্রামবাসীদের সামনে বারবার তাই সে কোঁচার খুটে কখনও চশমার কাচ কখনও নিজের চোখ মুছতে থাকে। কিন্তু এ যে তার শোক নয়, শোকের অভিনয়মাত্র, কেউ-ই তা বুঝতে পারে না। শুধু তাই নয়, ছলনাকে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলার জন্য নবীন তার কাকার খুনিকে যে ধরতে পারবে, তার জন্য পঞ্চাশ টাকা ‘রিওয়ার্ড’ ঘোষণা করে। এমনকি সে তার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা হেতু পাড়ার লোককে জানিয়ে দেয় যে, কাকাকে যারা ওইরকম নৃশংসভাবে হত্যা করেছে, তাদের সে ফাঁসিকাঠে ঝোলাবেই।

দায়িত্ববান স্বামী: ছলনাকারী হলেও গল্পপাঠে বোঝা যায়, নবীন তার স্ত্রীর প্রতি ছিল বেশ দায়িত্ববান। তাই স্ত্রী হঠাৎই অজানা রোগে আক্রান্ত হলে সে শশব্যস্ত হয়ে উঠেছে। সকলের পরামর্শ নিয়ে একদিকে সে যেমন ডাক্তারকে ডেকে পাঠিয়েছে, অপরদিকে কুঞ্জ গুনিনকেও খবর দিয়েছে। মোটকথা স্ত্রীর আকস্মিক অসুস্থতায় নবীন দিশেহারা। তার উদ্দেশ্য ছিল স্ত্রী দামিনীকে যে-কোনো প্রকারে সুস্থ করে তোলা।

কুসংস্কারে বিশ্বাসী: ধীরেনের মতো নবীনের আচরণেও দ্বিচারিতা অর্থাৎ পরস্পরবিরোধিতা দেখা গিয়েছে। নবীন শহুরে চাকুরিরত শিক্ষিত যুবক হয়েও কুসংস্কারকে মন থেকে মুছে ফেলতে পারেনি। স্ত্রীর অসুখ সারাতে সে ভরসা করেছে ডাক্তার নয়, ওঝার উপর। ‘এসব খাপছাড়া অসুখে ওদের চিকিৎসাই ভাল ফল দেয়’ এই ছিল নবীনের বিশ্বাস। তার স্ত্রীকে সুস্থ করতে কুঞ্জ গুণী শুরুতেই নানা বুজরুকিপূর্ণ কাজ করলে যুক্তিবাদী বন্ধু ধীরেন যখন প্রতিবাদ করে, তখন নবীন ধীরেনকে ‘তুমি চুপ কর, ভাই।’-একথা বলে কুসংস্কারেরই পক্ষ নিয়েছে।

এইভাবে গল্পের স্বল্প পরিসরে উপস্থিত থেকেও চরিত্রটি গল্পকাহিনিকে ক্লাইম্যাক্সের দিকে ক্রমশ এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছে। আসলে লেখক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় আলোচ্য গল্পে, শিক্ষিতের মুখোশধারী অথচ অন্তঃসারশূন্য, দুর্বলচিত্ত, ভীরু অধসংস্কারের কাছে নতি স্বীকারকারী যে যুব সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্রুপের বাণ হানতে চেয়েছেন, নবীন সেই শ্রেণিরই যথার্থ প্রতিনিধি হয়ে উঠেছে।

20. হলুদ পোড়া’ গল্প অবলম্বনে শান্তি চরিত্রটির পরিচয় দাও। 

Ans: শান্তি চরিত্র: ‘গেঁয়ো একটি মেয়েকে বিয়ে করে দু’বছরে চারটি ছেলে-মেয়ের জন্ম হওয়ায় এখন অনেকটা ঝিমিয়ে গেছে।’- কথাসাহিত্যিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর ‘হলুদ পোড়া’ গল্পে কেন্দ্রীয় চরিত্র ধীরেনের পরিচয় দিতে গিয়ে গল্পের সূচনাতে এভাবেই পরোক্ষভাবে চিত্রিত করেছেন – ধীরেনের স্ত্রী শান্তিকে। আর গেঁয়ো এই মেয়েটির সশরীরে আর্বিভাব ঘটেছে গল্পের প্রায় শেষাংশে। স্বল্প পরিসরে হলেও তার উপস্থিতি গল্পের Climax কে তাৎপর্যমণ্ডিত করে তুলেছে। সমালোচক বলেছেন ‘Character is the soul of the story’। শান্তি চরিত্র রূপায়ণে এটি সর্বাংশে সত্য। শান্তি চরিত্রের বিশেষ দিকগুলি নিম্নরূপ-

পতিব্রতা নারী: গ্রাম্য মেয়ে শান্তি, ধীরেনের মতো শিক্ষিত, কুসংস্কারমুক্ত, মানবিক, যুক্তিবাদী স্বামীর আদেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করার চেষ্টা করে। গাঁয়ে শুভ্রার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ‘কাল্পনিক কেলেঙ্কারি’ রটে গেলেও সে স্বামীর পাশে থেকে স্বামীকে ভরসা দিয়েছে। তার অধসংস্কারাচ্ছন্ন মানসিকতাকে যথাসম্ভব সংযত করে বিজ্ঞানমনস্ক, যুক্তিবাদী স্বামীর সঙ্গে সে চিরকালই শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান করেছে।

সংসারের মঙ্গলাকাঙ্ক্ষী: স্বামী, চার ছেলেমেয়েকে নিয়ে তার সংসার। সংসারের মঙ্গল কামনা করা তার প্রধান কর্তব্য বলে সে মনে করে। তাই অশরীরী আত্মার হাত থেকে সংসারকে বাঁচাতে সে অভিজ্ঞ ক্ষেন্তি পিসির পরামর্শ অনুযায়ী একটি কাঁচা বাঁশের দুই প্রান্ত পুড়িয়ে শোওয়ার ঘর ও রান্নাঘরের ভিটের সঙ্গে দুটি প্রান্ত ঠেকিয়ে পেতে রেখেছে। সংসারের অমঙ্গল হওয়ার ভয়ই তার মনে সংস্কারের জন্ম দিয়েছে একথা বলা যায়।

কর্মপটু: শান্তি অত্যন্ত কর্মপটুও বটে। ভৌতিক পরিবেশে এখন সে সন্ধ্যার আগেই রান্নাবান্না শেষ করে ছেলেমেয়েদের খাইয়ে দেয়। ভালো করে সন্ধ্যা হওয়ার আগেই সে তাড়াতাড়ি সন্ধ্যাদীপ জ্বেলে ঘরে ঘরে দেখিয়ে শাঁখে ফুঁ দেয়। অতি দ্রুত নিজে খেয়ে ধীরেনের ভাত বেড়ে দিয়ে রান্নাঘরে তালা বন্ধ করে- যা তার কর্মদক্ষতার পরিচয় বহন করে। প্রাণে ভয় থাকলেও সংসারের কাজে ফাঁকি দিতে দেখা যায়নি শান্তিকে।

ভীরু: অত্যন্ত ভীরু স্বভাবের গৃহবধূ শান্তি। ‘কে ওখানে? কে?’- ধীরেনের এমন আর্তনাদে ভয়ে তার হাত থেকে বাসন পড়ে যায়। ঘরের মধ্যে কারণে-অকারণে সে ভয় পেয়ে আঁতকে ওঠে। প্যাঁচার ডাক শুনে ভয়ে সে ধীরেনকে আঁকড়ে ধরে গোঙাতে গোঙাতে বমি করে ফ্যালে। এইসব আচরণ তার ভীরুতা ও দুর্বলচিত্তেরই প্রতীক।

সংস্কারে বিশ্বাসী: কাঁচা বাঁশের দু’প্রান্ত পুড়িয়ে পেতে রাখা, সন্ধ্যার আগে রান্না-খাওয়া শেষ করা, প্রেতাত্মা আমিষ দ্রব্যে আসক্ত বলে বিকেলে মাছ রান্না বন্ধ করা- এইসব আচারের মধ্যে তার সংস্কারী মনোভাবেরই পরিচয় মেলে।

উপস্থিত বুদ্ধিসম্পন্ন: গল্পের একেবারে শেষে, পেতে রাখা বাঁশ ডিঙিয়ে যখন ধীরেন ঘরে আসতে পারে না, তখন তার রক্ত মাখা ঠোঁট, কাদা মাখা জামাকাপড় দেখেই শান্তি বুঝে নেয় ধীরেনকে অশরীরী আত্মা ভর করেছে। প্রেতাত্মার আক্রমণ প্রতিরোধে সে সঙ্গে সঙ্গেই আর্তনাদ করে গ্রামের লোক জড়ো করে ফ্যালে। এভাবেই একজন ঘরকুনো, অন্ধসংস্কারাচ্ছন্ন, নিজকাজে সদা তৎপর, স্বামী-সন্তানের মঙ্গলকামনায় নিবেদিতপ্রাণ এক সাধারণ পল্লি-গৃহবধূ হিসেবে ধীরেনের স্ত্রী শান্তি চরিত্রটি লেখকের কলমে জীবন্ত হয়ে ফুটে উঠেছে।

HS Class 12 3rd Semester (Third Unit Test) Question and Answer :

  • HS Class 12 Bengali 3rd Semester Question Click here
  • HS Class 12 English 3rd Semester Question Click here
  • HS Class 12 Geography 3rd Semester Question Click here
  • HS Class 12 History 3rd Semester Question Click here
  • HS Class 12 Education 3rd Semester Question Click here
  • HS Class 12 Political Science 3rd Semester Question Click here
  • HS Class 12 Philosophy 3rd Semester Question Click here
  • HS Class 12 Sociology 3rd Semester Question Click here
  • HS Class 12 Sanskrit 3rd Semester Question Click here
  • HS Class 12 All Subjects First Semester Question Click here

HS Class 12 4th Semester (Forth Unit Test) Question and Answer :

  • HS Class 12 Bengali 4th Semester Question Click here
  • HS Class 12 English 4th Semester Question Click here
  • HS Class 12 Geography 4th Semester Question Click here
  • HS Class 12 History 4th Semester Question Click here
  • HS Class 12 Education 4th Semester Question Click here
  • HS Class 12 Political Science 4th Semester Question Click here
  • HS Class 12 Philosophy 4th Semester Question Click here
  • HS Class 12 Sociology 4th Semester Question Click here
  • HS Class 12 Sanskrit 4th Semester Question Click here
  • HS Class 12 All Subjects 4th Semester Question Click here

Class 12 All Subject Suggestion | উচ্চমাধ্যমিক সমস্ত বিষয়ের সাজেশন

আরোও দেখুন:-

HS Bengali Suggestion Click here

আরোও দেখুন:-

Class 12 English Suggestion Click here

আরোও দেখুন:-

Class 12 Geography Suggestion Click here

আরোও দেখুন:-

Class 12 History Suggestion Click here

আরোও দেখুন:-

Class 12 Political Science Suggestion Click here

আরোও দেখুন:-

Class 12 Education Suggestion Click here

আরোও দেখুন:-

Class 12 Philosophy Suggestion Click here

আরোও দেখুন:-

Class 12 Sociology Suggestion Click here

আরোও দেখুন:-

Class 12 Sanskrit Suggestion Click here

আরোও দেখুন:-

Class 12 All Subjects Suggestion Click here

◆ উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার প্রস্তুতি, বিনামূল্যে নোটস, সাজেশন, PDF ও সমস্ত আপডেটের জন্য আমাদের WhatsApp Group এ Join হয়ে যাও।

Class 12 WhatsApp Groups Click Here to Join

দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | West Bengal HS Class 12th Bengali Question and Answer / Suggestion / Notes Book

আরোও দেখুন :-

দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা সমস্ত অধ্যায়ের প্রশ্নউত্তর Click Here

FILE INFO : হলুদ পোড়া (গল্প) দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | HS Class 12 Bengali Holud Pora Question and Answer with FREE PDF Download Link

PDF File Name হলুদ পোড়া (গল্প) দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | HS Class 12 Bengali Holud Pora Question and Answer PDF
Prepared by Experienced Teachers
Price FREE
Download Link  Click Here To Download
Download PDF Click Here To Download

হলুদ পোড়া (গল্প) অধ্যায় থেকে আরোও বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর দেখুন :

Update

[আরও দেখুন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবন রচনা – Rabindranath Tagore Biography in Bengali]

[আমাদের YouTube চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন Subscribe Now]

Info : হলুদ পোড়া (গল্প) দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা সাজেশন বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর

 HS Class 12 Bengali Suggestion | West Bengal WBCHSE Class Twelve XII (HS Class 12th) Bengali Question and Answer Suggestion 

” হলুদ পোড়া (গল্প) দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা প্রশ্ন উত্তর “ একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ টপিক দ্বাদশ শ্রেণীর পরীক্ষা (West Bengal Class Twelve XII / WB HS Class 12 / WBCHSE / HS Class 12 Exam / West Bengal Council of Higher Secondary Education – WB HS Class 12 Exam / HS Class 12th / WB HS Class 12 / HS Class 12 Pariksha ) এখান থেকে প্রশ্ন অবশ্যম্ভাবী । সে কথা মাথায় রেখে Bhugol Shiksha .com এর পক্ষ থেকে দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা পরীক্ষা প্রস্তুতিমূলক সাজেশন এবং বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর ( দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা সাজেশন / দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা প্রশ্ও উত্তর । Class-11 Bengali Suggestion / HS Class 12 Bengali Holud Pora Question and Answer / HS Class 12 Bengali Suggestion / Class-11 Pariksha Bengali Suggestion / Bengali HS Class 12 Exam Guide / MCQ , Short , Descriptive Type Question and Answer / HS Class 12 Bengali Suggestion FREE PDF Download) উপস্থাপনের প্রচেষ্টা করা হলাে। ছাত্রছাত্রী, পরীক্ষার্থীদের উপকারে লাগলে, আমাদের প্রয়াস দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা পরীক্ষা প্রস্তুতিমূলক সাজেশন এবং বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর (HS Class 12 Bengali Suggestion / West Bengal Twelve XII Question and Answer, Suggestion / WBCHSE HS Class 12th Bengali Suggestion / HS Class 12 Bengali Holud Pora Question and Answer / HS Class 12 Bengali Suggestion / HS Class 12 Pariksha Suggestion / HS Class 12 Bengali Exam Guide / HS Class 12 Bengali Suggestion 2024, 2025, 2026, 2027, 2028, 2029, 2030 / HS Class 12 Bengali Suggestion MCQ , Short , Descriptive Type Question and Answer. / Class-11 Bengali Suggestion FREE PDF Download) সফল হবে।

হলুদ পোড়া (গল্প) বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর 

হলুদ পোড়া (গল্প) বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | হলুদ পোড়া (গল্প) HS Class 12 Bengali Holud Pora Question and Answer Suggestion দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – হলুদ পোড়া (গল্প) বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর।

হলুদ পোড়া (গল্প) SAQ সংক্ষিপ্ত বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা 

হলুদ পোড়া (গল্প) SAQ সংক্ষিপ্ত বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | হলুদ পোড়া (গল্প) HS Class 12 Bengali Holud Pora Question and Answer Suggestion দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – হলুদ পোড়া (গল্প) SAQ সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর।

উচ্চমাধ্যমিক বাংলা বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – হলুদ পোড়া (গল্প) প্রশ্ন উত্তর | HS Class 12 Bengali Holud Pora Question and Answer Question and Answer, Suggestion 

উচ্চমাধ্যমিক বাংলা বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – হলুদ পোড়া (গল্প) | দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – হলুদ পোড়া (গল্প) | পশ্চিমবঙ্গ দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – হলুদ পোড়া (গল্প) | দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা সহায়ক – হলুদ পোড়া (গল্প) বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর । HS Class 12 Bengali Holud Pora Question and Answer, Suggestion | HS Class 12 Bengali Holud Pora Question and Answer Suggestion | HS Class 12 Bengali Holud Pora Question and Answer Notes | West Bengal HS Class 12th Bengali Question and Answer Suggestion.

দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – হলুদ পোড়া (গল্প) প্রশ্ন উত্তর | WBCHSE HS Class 12 Bengali Question and Answer, Suggestion 

দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – হলুদ পোড়া (গল্প) প্রশ্ন উত্তর বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | হলুদ পোড়া (গল্প) । HS Class 12 Bengali Holud Pora Question and Answer Suggestion.

WBCHSE HS Class 12th Bengali Holud Pora Suggestion | দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – হলুদ পোড়া (গল্প)

WBCHSE HS Class 12 Bengali Holud Pora Suggestion দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – হলুদ পোড়া (গল্প) প্রশ্ন উত্তর বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর । হলুদ পোড়া (গল্প) | HS Class 12 Bengali Holud Pora Suggestion দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – হলুদ পোড়া (গল্প) প্রশ্ন উত্তর বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর ।

HS Class 12 Bengali Holud Pora 4th Semester Question and Answer Suggestions | দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – হলুদ পোড়া (গল্প) | দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর 

HS Class 12 Bengali Holud Pora 4th Semester Question and Answer দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – হলুদ পোড়া (গল্প) দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর HS Class 12 Bengali Holud Pora Question and Answer দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – হলুদ পোড়া (গল্প) সংক্ষিপ্ত, রোচনাধর্মী বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর ।

WB HS Class 12 Bengali Holud Pora Suggestion | দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – হলুদ পোড়া (গল্প) সাজেশন 

HS Class 12 Bengali Holud Pora Question and Answer Suggestion দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – হলুদ পোড়া (গল্প) সাজেশন । HS Class 12 Bengali Holud Pora Question and Answer Suggestion দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর।

West Bengal HS Class 12 Bengali Suggestion Download WBCHSE HS Class 12th Bengali short question suggestion . HS Class 12 Bengali Holud Pora Suggestion download HS Class 12th Question Paper Bengali. WB HS Class 12 Bengali suggestion and important question and answer. HS Class 12 Suggestion pdf.পশ্চিমবঙ্গ দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা পরীক্ষার সম্ভাব্য সাজেশন ও শেষ মুহূর্তের বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর ডাউনলোড। দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা পরীক্ষার জন্য সমস্ত রকম গুরুত্বপূর্ণ বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর।

Get the HS Class 12 Bengali Holud Pora Question and Answer by Bhugol Shiksha .com

HS Class 12 Bengali Holud Pora Question and Answer prepared by expert subject teachers. WB HS Class 12 Bengali Suggestion with 100% Common in the Examination .

Class Twelve XII Bengali Holud Pora Suggestion | West Bengal Council of Higher Secondary Education (WBCHSE) HS Class 12 Exam 

HS Class 12 Bengali Holud Pora Question and Answer, Suggestion Download PDF: West Bengal Council of Higher Secondary Education (WBCHSE) HS Class 12 Twelve XII Bengali Suggestion is provided here. HS Class 12 Bengali Holud Pora Question and Answer Suggestion Questions Answers PDF Download Link in Free here.

হলুদ পোড়া (গল্প) দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | HS Class 12 Bengali Holud Pora Question and Answer 

অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই ” হলুদ পোড়া (গল্প) দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | HS Class 12 Bengali Holud Pora Question and Answer ” পােস্টটি পড়ার জন্য। এই ভাবেই Bhugol Shiksha ওয়েবসাইটের পাশে থাকো যেকোনো প্ৰশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলাে করো এবং নিজেকে তথ্য সমৃদ্ধ করে তোলো , ধন্যবাদ।

WhatsApp Channel Follow Now
Telegram Channel Follow Now