বিদ্রোহ এবং ব্রিটিশরাজ (প্রথম অধ্যায়) দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর

HS Class 12 History Bidroho & British Raj Question and Answer

বিদ্রোহ এবং ব্রিটিশরাজ (প্রথম অধ্যায়) দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | HS Class 12 History Bidroho & British Raj Question and Answer : বিদ্রোহ এবং ব্রিটিশরাজ (প্রথম অধ্যায়) দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | HS Class 12 History Bidroho & British Raj Question and Answer নিচে দেওয়া হলো। এই West Bengal WBCHSE HS Class 12th History Bidroho & British Raj Question and Answer, Suggestion, Notes | দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – বিদ্রোহ এবং ব্রিটিশরাজ (প্রথম অধ্যায়) থেকে রোচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর (Descriptive Question and Answer) গুলি আগামী West Bengal HS Class 12th Twelve XII History 4th Semester Examination – পশ্চিমবঙ্গ উচ্চমাধ্যমিক দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস চতুর্থ সেমিস্টার পরীক্ষার জন্য খুব ইম্পর্টেন্ট। দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস পরীক্ষা তে এই সাজেশন বা কোশ্চেন বিদ্রোহ এবং ব্রিটিশরাজ (প্রথম অধ্যায়) দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | HS Class 12 History Bidroho & British Raj Question and Answer গুলো আসার সম্ভাবনা খুব বেশি।

তোমরা যারা বিদ্রোহ এবং ব্রিটিশরাজ (প্রথম অধ্যায়) দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | HS Class 12 History Bidroho & British Raj Question and Answer খুঁজে চলেছ, তারা এই প্রশ্ন ও উত্তর গুলো ভালো করে পড়ো এবং নীচে দেওয়া লিঙ্ক থেকে ডাউনলোড করে নাও।

রাজ্য (State) পশ্চিমবঙ্গ (West Bengal)
বোর্ড (Board) WBCHSE, West Bengal
শ্রেণী (Class) উচ্চমাধ্যমিক দ্বাদশ শ্রেণী (WB HS Class 12th)
বিষয় (Subject) দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস (HS Class 12 History)
প্রথম অধ্যায় (1st Chapter) বিদ্রোহ এবং ব্রিটিশরাজ (Bidroho & British Raj)

[দ্বাদশ শ্রেণীর সমস্ত বিষয়ের প্রশ্নউত্তর Click Here]

বিদ্রোহ এবং ব্রিটিশরাজ (প্রথম অধ্যায়) দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | West Bengal WBCHSE HS Class 12th History Bidroho & British Raj 1st Chapter Question and Answer 

রচনাধর্মী | বিদ্রোহ এবং ব্রিটিশরাজ (প্রথম অধ্যায়) দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | WB HS Class 12 History Bidroho & British Raj Descriptive Question and Answer:

1. ঝাঁসির রানি লক্ষ্মীবাঈ স্মরণীয় কেন?

অথবা, রানি লক্ষ্মীবাঈ-এর বীরত্ব বুঝিয়ে দাও।

Ans: ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহের অন্যতম নেত্রী ছিলেন ঝাঁসির রানি লক্ষ্মীবাঈ। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে লক্ষ্মীবাঈ তাঁর অসাধারণ দক্ষতা, সাহসিকতা ও দেশপ্রেমের জন্য স্মরণীয় হয়ে আছেন।

রানি লক্ষ্মীবাঈ এর স্মরণীয় হওয়ার কারণ:

মনিকর্ণিকা তাম্বে বেনারসে এক মারাঠি ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ছোটোবেলা থেকেই লেখাপড়ার পাশাপাশি অস্ত্রবিদ্যা, অশ্বারোহণ, তরবারি চালানো ইত্যাদিতে তিনি দক্ষ ছিলেন। ১৪ বছর বয়সে ঝাঁসির রাজা গঙ্গাধর রাও নেওয়ালকর-লক্ষ্মীবাঈ। রাজা গঙ্গাধর রাও ও লক্ষ্মীবাঈ-এর এর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হলে তাঁর নাম হয় সন্তান জন্মের পর অল্প বয়সে মারা গেলে তাঁরা এক আত্মীয়ের সন্তানকে দত্তক হিসেবে গ্রহণ করে নাম রাখেন দামোদর রাও।

ব্রিটিশদের সঙ্গে দ্বন্দ্ব : ১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দে ঝাঁসির নিজ কাঁধে তুলে নেন লক্ষ্মীবাঈ। কোম্পানি সরকার মহারাজা গঙ্গাধর রাও-এর মৃত্যুর পর ঝাঁসির দায়িত্ব স্বত্ববিলোপ নীতি দ্বারা গঙ্গাধর রাওয়ের উত্তরাধিকারী হিসেবে দত্তকপুত্রের অধিকারকে অস্বীকার করলে তিনি ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করেন। ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহ শুরু হলে নানাসাহেব ও তাঁতিয়া তোপির সঙ্গে লক্ষ্মীবাঈও এই বিদ্রোহে অবতীর্ণ হন।

আত্মত্যাগ: পুরুষের বেশে যুদ্ধক্ষেত্রে রানি লক্ষ্মীবাঈ অসম সাহসিকতা ও বীরত্বের পরিচয় দেন। ৩ এপ্রিল স্যার হিউ রোজ ঝাঁসি দখল করলে রানি কুলপিতে আশ্রয় নেন। তাঁর সাহস ও বীরত্বে অবাক হন সেনাপতি হিউ রোজ। ১৭ জুন ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে কোটা-কি-সরাই-এর যুদ্ধে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে রানি পরাস্ত হন এবং মৃত্যুবরণ করেন (১৮ জুন)।

রানি লক্ষ্মীবাঈ-এর এই আত্মত্যাগ ও বীরত্ব তাঁকে ইতিহাসে স্মরণীয় করে রেখেছে। রানির সমাধিতে তাঁরই প্রতিপক্ষ হিউ রোজের একটি উক্তি খোদিত আছে- ‘এখানে শায়িত আছেন এমন একজন নারী, যিনি ছিলেন বিদ্রোহীদের মধ্যে একমাত্র পুরুষ।’

2. টীকা লেখো: ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহের সময় হিন্দু-মুসলিম ঐক্য।

Ans: ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য ছিল- হিন্দু-মুসলিম ঐক্য। সব স্তরের হিন্দু-মুসলমান ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই বিদ্রোহে সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছিলেন। শশীভূষণ চৌধুরি, বুদ্রাংশু মুখার্জি প্রমুখ বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ ১৮৫৭খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্রের বিশেষভাবে প্রশংসা করেছেন।

১৮০৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহের সময় হিন্দু মুসলিম ঐক্য:

১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহের কালে বিভিন্ন দিক থেকে হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে ঐক্যের বিষয়টি পরিলক্ষিত হয়-

(i) দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ কে নেতারূপে ঘোষণা : ১৮৫৭খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহে হিন্দু ও মুসলিমরা সব ভেদাভেদ ভুলে মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ-কে নেতা হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। অর্থাৎ, বাহাদুর শাহ ছিলেন ঐক্য ও আন্দোলনের প্রতীকস্বরূপ।

(ii) পরষ্পরের ধর্মের প্রতি সহনশীলতা : বিদ্রোহীরা পরস্পরের ধর্মের প্রতি সহনশীলতার নজির স্থাপন করেছিলেন। দিল্লিতে হিন্দু-মুসলিম ঐক্য অটুট রাখার জন্য সম্রাট দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ বিভিন্ন 11 পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। আবার অধ্যাপক রুদ্রাংশু মুখার্জি দেখিয়েছেন যে, অযোধ্যায় বিদ্রোহীরা মুসলিম রাজকুমার বিরজিস কাদির-কে সাক্ষাৎ ভগবান কৃষ্ণ বলে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন।

(iii) ঘোষণাপত্রে হিন্দু মুসলিম ঐক্যের প্রকাশ: বিদ্রোহীদের প্রচার করা বিভিন্ন ঘোষণাপত্রে (ইস্তাহার) জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সকল ভারতবাসীকে তাদের দীন (বিশ্বাস) ও ধরম (ধর্ম) রক্ষার জন্য আন্দোলনে যোগ দিতে আহ্বান জানানো হয়। আলোচ্য পর্বে দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ-র আজমগড় ঘোষণাপত্র এবং অযোধ্যার যুবরাজ ফিরুজ শাহ-র ঘোষণাপত্রে হিন্দু-মুসলমান সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার ডাক দেওয়া হয়। এগুলিতে বলা হয় যে-‘এটি হল বিদেশিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ, হিন্দু-মুসলমানের ঐক্যবদ্ধ যুদ্ধ। হিন্দু-মুসলমানের ঐক্যই আমাদের সাফল্যের ভিত্তি।’

(iv) সক্রিয় হিন্দু মুসলিম নেতৃত্ব : আলোচ্য পর্বে নেতৃত্ব প্রদানের ক্ষেত্রে বিভিন্ন অঞ্চলে হিন্দু ও মুসলিম নেতারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। ঝাঁসিতে লক্ষ্মীবাঈ, বিহারে কুনওয়ার সিং, কানপুরে “নানাসাহেব, তাঁতিয়া তোপি প্রমুখ নেতানেত্রী যেমন নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, তেমনই অযোধ্যায় বেগম হজরত মহল, দিল্লিতে বখৎ খান প্রমুখ ছিলেন নেতৃত্বের অগ্রভাগে।

(v) ব্রিটিশ কর্তাদের আচরণ ও বক্তব্য: ব্রিটিশ কর্তাব্যক্তিদের আচরণ ও বক্তব্য থেকেও হিন্দু-মুসলমান ঐক্যের গভীরতার বিষয়টি বোঝা যায়। স্যার হেনরি লরেন্স বড়োলাট লর্ড ক্যানিং-রে এসময় লেখেন যে- ‘আমি দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে। অনৈক্যের আশায় তাকিয়ে আছি।’ কিন্তু সেই আশা অপূর্ণই থেকে যায়।

পরিশেষে বলা যায়, ১৮৫৭-র বিদ্রোহে ইংরেজ বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধের সময় বিদ্রো হিন্দু-মুসলমান সিপাহিরা যেমন একসঙ্গে কাঁদে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করেন, তেমনই সাধারণ হিন্ মুসলিম প্রজারাও ভ্রাতৃভাব বজায় রাখেন, তৎকালীন সময়ের প্রেক্ষিতে ছিল এক উল্লেখযোগ ঘটনা।

3. ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের ঘটনাকে কি সিপাহি বিদ্রোহ বলা যায়?

অথবা, ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহকে ‘সামরিক বিদ্রোহ’ বলা হয় কেন?

Ans: ঘটনার সূত্রপাত, অংশগ্রহণ, নেতৃত্ব ও পরিণতির দিক থেকে বিচার করে অনেকেই ১৮৫৭খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহকে সামরিক বা সিপাহি বিদ্রোহ বলে অভিহিত করেছেন। ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের ২১ মার্চ ব্যারাকপুরে বিদ্রোহের আগুন প্রথম জ্বলে উঠলেও, ১০ মে মিরাটের সেনানিবাসেই প্রকৃতপক্ষে বিদ্রোহের সূচনা ঘটে।

১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহ কে সিপাহিসামরিক বিদ্রোহ বলা যায় কিনা ব্যাখ্যা:

১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহের প্রকৃতি বা চরিত্রের ব্যাখ্যায় উঠে এসেছে নানান দৃষ্টিভঙ্গি। তার মধ্যে একটি হল এই বিদ্রোহকে নিছক সিপাহি বিদ্রোহ বলা যায় কি না।

সিপাহি বিদ্রোহ বলার পক্ষে ঐতিহাসিক বা বিশিষ্টজনের মতামত: ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহ প্রসঙ্গে তদানীন্তন ভারত-সচিব আর্ল স্ট্যানলি তাঁর প্রতিবেদনে ‘সিপাহি বিদ্রোহ’ কথাটি প্রয়োগ করেন। বিদ্রোহের ঠিক পরেই ইংরেজ ঐতিহাসিক চার্লস রেকস তাঁর Notes on the Revolt in the North Western Provinces of India নামক গ্রন্থে ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের এই বিদ্রোহকে উচ্চাকাঙ্ক্ষী ও লোভী সিপাহিদের বেআইনি অভ্যুত্থান বলে মন্তব্য করেছেন। টি আর হোমস এই বিদ্রোহকে আধুনিক সভ্যতার সঙ্গে মধ্যযুগীয় বর্বরতার সংঘাত বলে নিন্দা করেছেন।

পাশাপাশি স্যার জন লরেন্স, চার্লস রবার্টস, স্যার জন সিলি প্রমুখ ব্রিটিশ লেখক ও ঐতিহাসিকেরাও একে নিছকই একটি সামরিক বিদ্রোহ বা সিপাহিদের বিদ্রোহ ছাড়া কিছুই ভাবতে পারেননি। অন্যদিকে, সমকালীন বিশিষ্ট ভারতীয় ব্যক্তিত্ব অক্ষয়কুমার দত্ত, ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত, কিশোরীচাঁদ মিত্র, হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়, দাদাভাই নৌরজি, সৈয়দ আহমেদ খান, রাজনারায়ণ বসু, দুর্গাদাস বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখও এই ঘটনাকে সামরিক বিদ্রোহ বলেছেন।

সিপাহি বিদ্রোহ বলার পক্ষে যুক্তিসমূহ :

১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহকে সিপাহি বিদ্রোহ বা সামরিক বিদ্রোহ বলার পিছনে লেখক, ঐতিহাসিক ও বিশিষ্টজনেরা যেসমস্ত যুক্তি দেখিয়েছেন, তা হল-

(i) সূচনা: ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে ভারতবাসীর দীর্ঘদিনের ক্ষোভ জমা থাকলেও ইতিপূর্বে ১৮৫৭খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহের মতো এত বড়ো বিদ্রোহ কখনোই হয়নি। তাছাড়া ভারতীয় সিপাহিরাই এই বিদ্রোহের সূচনা করেন।

(ii) বিদ্রোহের কারণ ও অংশগ্রহণ: মূলত ১৮৫৭খ্রিস্টাব্দের ঘটনায় যারা যোগ দিয়েছিলেন, তাদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ছিল দেশীয় সিপাহিরা। সিপাহিদের বেতন, পদমর্যাদা, পদোন্নতি সবকিছুই ইউরোপীয় সৈনিকদের থেকে কম ছিল। উপরন্তু ইংরেজদের দুর্ব্যবহারও ছিল অত্যন্ত সাধারণ ঘটনা। অবশেষে সেনাবাহিনীতে এনফিল্ড রাইফেলের কার্তুজ সংক্রান্ত বিষয়কে কেন্দ্র করে সিপাহিরা বিদ্রোহে যোগ দেন।

(iii) নেতৃত্ব: ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহের প্রধান নেতানেত্রীরা বেসামরিক ব্যক্তি হলেও তাঁরা সিপাহিদের সমর্থন পেয়েছিলেন। সেনাছাউনি থেকে বিদ্রোহকে জনগণের মধ্যে সিপাহিরাই ছড়িয়ে দেন ও সরকারি সৈন্যদের সঙ্গে লড়াই করেন।

(iv) বিস্তার: ব্রিটিশ ভারতের যেসব সেনাছাউনিতে বিদ্রোহ দেখা দিয়েছিল, সেই সকল অঞ্চলের জনগণের মধ্যেও বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়েছিল। যেসব সেনাছাউনিতে বিদ্রোহ হয়নি সেখানকার অবস্থা ছিল স্বাভাবিক।

(v) শাস্তিভোগ: বিদ্রোহের সূচনায়, অংশগ্রহণে এবং নেতৃত্বে যেহেতু সিপাহিদের প্রধান ভূমিকা ছিল, তাই বিদ্রোহ শেষে সিপাহিদেরই বেশি শাস্তি ভোগ করতে হয়। এমনকি কামানের গোলা, বন্দুকের গুলি বা ফাঁসির দড়িতে তাদের প্রাণ দিতে হয়।

সিপাহী বিদ্রোহ বলার বিপক্ষে ঐতিহাসিক ও বিশিষ্টজলের মত এবং যুক্তিসমূহ :

১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহে দেশীয় সিপাহিদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল- এ কথা অনস্বীকার্য। কিন্তু এ কথাও ঠিক যে, সব দেশীয় সিপাহি বিদ্রোহে যোগদান করেননি।
ই এম এস নাম্বুদ্রিপাদ দেখিয়েছেন, যত সংখ্যক সিপাহি বিদ্রোহ করেছিলেন তার বেশি সংখ্যক সিপাহি বিদ্রোহ দমনে অংশ নিয়েছিলেন। তাছাড়া সিপাহিদের দ্বারা এই বিদ্রোহের সূচনা হলেও কালক্রমে তা দেশীয় রাজন্যবর্গ, সাধারণ কৃষক, কারিগর, দিনমজুর শ্রেণির মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে।

মূল্যায়ন: যুক্তি, তথ্য ও বিরুদ্ধ মত বিশ্লেষণ করে একথা বলতেই হয় যে, ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের ঘটনা ছিল অনেকাংশে সিপাহি বিদ্রোহ। তবে কোথাও কোথাও এর পিছনে সক্রিয় বা নিষ্ক্রিয় জনসমর্থন ছিল।

4. ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহকে জাতীয় সংগ্রাম বলা যুক্তিযুক্ত কি না আলোচনা করো।

অথবা, ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহকে কি ‘জাতীয় অভ্যুত্থান’ বলা যায়?

Ans: ভারতের ইতিহাসে ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহের স্বরূপ বা প্রকৃতিকে বিশিষ্ট পণ্ডিতবর্গ ও ঐতিহাসিকগণ বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। এঁদের মধ্যে কেউ কেউ নির্দিষ্ট যুক্তি ও তথ্যের ভিত্তিতে এই বিদ্রোহকে জাতীয় সংগ্রাম বা জাতীয় অভ্যুত্থান হিসেবে দেখেছেন।

১৮০৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহকে জাতীয় সংগ্রাম বা জাতীয় অভ্যুত্থান বলা যুক্তিযুক্ত কি না ব্যাখ্যা:

১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহকে জাতীয় সংগ্রাম বলা যায় কি না তা নিয়ে পক্ষে ও বিপক্ষে রয়েছে একাধিক মতামত।

জাতীয় সংগ্রাম বলার পক্ষে ঐতিহাসিক ও বিশিষ্টজনের মতামত: ইংল্যান্ডের টোরি দলের নেতা ডিজরেইলি ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহকে জাতীয় বিদ্রোহ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি ব্রিটিশ পার্লামেন্টে বলেছিলেন যে, ‘এটি কোনও সিপাহিদের সাধারণ অভ্যুত্থান নয়, এটি আসলে একটি জাতীয় আন্দোলন, যেখানে সিপাহিরা হাতিয়ারমাত্র।’ পাশাপাশি কার্ল মার্কস New York Tribune পত্রিকায় ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহকে ভারতের প্রথম জাতীয় বিদ্রোহ বলে উল্লেখ করেছেন। ফ্রেডরিক এঙ্গেলস-ও এই বক্তব্যে সহমত পোষণ করেছেন।

জাতীয় সংগ্রাম বলার পক্ষে মুক্তিসমূহ: ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহকে জাতীয় সংগ্রাম বা জাতীয় অভ্যুত্থান বলার সপক্ষে বিভিন্ন কারণ ও যুক্তিগুলি হল-

(i) গণ অভ্যুত্থান: ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে সিপাহিরা যে বিদ্রোহ শুরু করে, তা জনসমর্থন লাভ করে গণ অভ্যুত্থানে পরিণত হয়েছিল। জনগণ বিদ্রোহী সিপাহিদের সমর্থন করেন। তারা চিরাচরিত অস্ত্র (লাঠি, বল্লম, তরবারি, তিরধনুক, কুঠার ইত্যাদি) নিয়ে ইংরেজদের আবাসিক এলাকা, সরকারি ভবন ও সরকারি কার্যালয় আক্রমণ করেন, সেখানে আগুন ধরিয়ে দেন এবং লুঠপাট ও হত্যাকান্ড চালান। বেশিরভাগ সাধারণ মানুষ তখন ইংরেজবিরোধী হয়ে উঠেছিলেন।

(ii) জনগণের অংশগ্রহণ: অধ্যাপক সুশোভন সরকার বিভিন্ন যুক্তি দিয়ে বলেছেন যে, কোনও দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে কখনও সেই দেশের আপামর জনগণ অংশগ্রহণ করেন না, উদ্দেশ্যের নিরিখে সেই ঘটনাকে বিচার করতে হয়। তাই ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের ঘটনাকে তিনি জাতীয় সংগ্রাম বলে অভিহিত করেছেন। অন্যদিকে আবার অধ্যাপক সুপ্রকাশ রায় দেখিয়েছেন, কংগ্রেসের অহিংস-অসহযোগ আন্দোলনের চেয়ে ১৮৫৭খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহে কৃষকদের যোগদান ছিল বেশি। তাই একে জাতীয় বিদ্রোহ না বলার কোনও যুক্তি নেই।

(iii) নিম্নবর্গের মানুষের যোগদান :অধ্যাপক রণজিৎ গুহ বিদ্রোহে নিম্নবর্গের মানুষদের স্বতঃস্ফূর্ত যোগদানের কথা বলেছেন। ড. শশীভূষণ চৌধুরি বিদ্রোহে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণের কথা উল্লেখ করেছেন। তাঁর মতে, স্থায়িত্বে, ব্যাপকতায়। অভিনবত্বে এই বিদ্রোহ আগের বিদ্রোহগুলিকে অতিক্রম করে যায়।

(iv) ঘোষণাসমূহ: সম্রাট দ্বিতীয় বাহাদুর শাহের দিল্লি ঘোষণা ও আজমগড় ঘোষণায় হিন্দু-মুসলিম ঐক্য এবং ইংরেজদের বিতাড়নের আহ্বান জানানে হয়। অন্যদিকে বিরজিস কাদির-এর ইস্তাহারে ইংরেজমুক্ত ভারত গঠনের কথা বলা হয়।

জাতীয় সংগ্রাম বলার বিপক্ষে ঐতিহাসিক বা বিশিষ্টজনের মতামত:

ঐতিহাসিক টমাস মেটক্যায় (Thomas R Metcalf) তাঁর The Aftermath of Revolt: India, 1857-1870 গ্রন্থটিতে দেখান যে এই বিদ্রোহ কোনো কোনো সময় সিপাহি বিদ্রোহরে ছাপিয়ে গেছে, কিন্তু জাতীয় বিদ্রোহের পর্যায়ে পৌঁছায়নি। পাশাপাশি ঐতিহাসিক রমেশচন্দ্র মজুমদার, ড. সুরেন্দ্রনাথ সেনও ১৮৫৭-৭বিদ্রোহকে জাতীয় চরিত্রদানে অসম্মত হয়েছেন। এ ছাড়া অধ্যাপক সি এ বেইলি বলেছেন যে বিদ্রোহে গ্রাম-শহরের নানা স্তরের মানুষ যোগ দিয়েছিলেন একথা ঠিক, কিন্তু তাদের উদ্দেশ্য ছিল স্বতন্ত্র। এমনকি তারা নিজেদের মধ্যে অন্তর্বিরোধেও লিপ্ত ছিলেন।

জাতীয় সংগ্রাম/অভ্যুঙ্খান বলার বিপয়ে মুক্তিসমূহ। গবেষক ও ঐতিহাসিকগণ জাতীয় সংগ্রাম বলার বিপক্ষে কতগুলি যুক্তি তুলে ধরেছেন-

(i) কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের অভাব: ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহ ভারতবর্ষে কোনও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের অধীনে সংঘটিত হয়নি। এই বিদ্রোহের নেতানেত্রীগণ ছিলেন স্থানীয় এবং একে অপরের থেকে বিচ্ছিন্ন।

(ii) ভৌগোলিক সীমাবদ্ধতা: বিদ্রোহটি মূলত উত্তর ও মধ্য ভারতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। দক্ষিণ ভারত, পূর্ব ভারত, পাঞ্জাব, রাজপুতানা প্রভৃতি অঞ্চলে এই বিদ্রোহের তেমন কোনও প্রভাব পড়েনি।

(iii) সীমিত অংশগ্রহণ: ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহে কিছু সংখ্যক সিপাহি, জমিদার ও দেশীয় রাজন্যবর্গই অংশগ্রহণ করেছিলেন। গোর্খা ও শিখ সিপাহিরা সিন্ধিয়া, হোলকার, নিজাম প্রমুখ রাজন্যবর্গ এবং সর্বোপরি একদল শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণি এই বিদ্রোহ থেকে হয় দূরে সরে ছিলেন নতুবা তা দমনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। ফলে এই বিদ্রোহকে গণবিদ্রোহ বলা যথাযথ নয়।

মূল্যায়ন: উপরোক্ত আলোচনার ভিত্তিতে বলা যায় যে, ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহের মধ্যে জাতীয়তাবোধ খুঁজে না পাওয়া প্রকৃতপক্ষে সত্যকে অস্বীকার করা। ড. সুশোভন সরকার যথার্থই লিখেছেন যে, ‘যাঁরা মারাঠা জাতীয়তাবাদ ও রাজপুত জাতীয়তাবাদ প্রভৃতির কথা বলে গর্ব অনুভব করেন, তাঁরা ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহকে জাতীয় বিদ্রোহ বলতে দ্বিধাগ্রস্ত কেন, তা প্রকৃতই বুদ্ধির অগম্য।’

5. ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহকে কি প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধ বলা যায়?

অথবা, ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহকে প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধ বলা যায় কি? এ প্রসঙ্গে ড. রমেশচন্দ্র মজুমদারের অভিমত কী ছিল?

Ans: বিশিষ্ট স্বাধীনতা সংগ্রামী বিনায়ক দামোদর সাভারকর তাঁর The Indian War of Independence, 1857 গ্রন্থে ১৮৫৭-র বিদ্রোহকে ভারতের প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধ বলে উল্লেখ করেছেন। তবে ১৮৫৭খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহকে ভারতের প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধ বলা যায় কি না. তা নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে বিতর্ক রয়েছে।

১৮০৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহকে প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধ বলা যায় কি না ব্যাখ্যা:

১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহকে প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধ বলা যায় কি না, তার পক্ষে-বিপক্ষে রয়েছে একাধিক মতামত ও যুক্তি।

‘প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধ’ বলার পক্ষে ঐতিহাসিক ও বিশিষ্টজনের মতামত:

অধ্যাপক হীরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহে হিন্দু-মুসলমানের মিলিত অভ্যুত্থানের মধ্যে স্বাধীনতার যুদ্ধের ছবি প্রত্যক্ষ করেন। অধ্যাপক সুশোভন সরকার এই যুক্তি দিয়েছেন যে, ইটালির কার্বোনারি এবং নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে স্পেনীয় জুন্টা আন্দোলনকে যদি মুক্তিযুদ্ধ বলা যায়, তাহলে ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহকেও ভারতের মুক্তিযুদ্ধ বা জাতীয় আন্দোলন বলা যাবে। পি সি যোশীও তাঁর 1857 in Our History প্রবন্ধে ১৮৫৭-র বিদ্রোহকে প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধ বলেছেন। অন্যদিকে, ঐতিহাসিক জাস্টিন ম্যাকার্থি তাঁর A History of Our Own Times গ্রন্থে লিখেছেন যে, একসময় সিপাহিদের বিদ্রোহ জাতীয় ও ধর্মযুদ্ধে রূপান্তরিত হয়েছিল। ইতিহাসবিদ এস ডি হোয়াইট তাঁর Complete History of the Indian Mutiny (১৮৮০ খ্রি.) বইয়ে ১৮৫৭-র বিদ্রোহে অযোধ্যার তালুকদারদের যোগদানকে স্বরাজ ও স্বদেশের জন্য লড়াই বলেছেন।

‘প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধ বলার পক্ষে যুক্তিসমূহ:
বিনায়ক দামোদর সাভারকর দেখিয়েছেন যে, ১৮৫৭-র বিদ্রোহে হিন্দু-মুসলিম ভারতবাসী ঐক্যবদ্ধ হয়ে স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে শামিল হয়েছিলেন। এটি কোনও আকস্মিক ঘটনা ছিল না. বরং তা ছিল সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা, গোপন বৈঠক এবং নানা অঞ্চলের মানুষের মধ্যেকার সমন্বয়ের ফল। প্রায় সমগ্র ভারতব্যাপী ব্রিটিশবিরোধী এই বিদ্রোহে ব্যাপকভাবে জনসাধারণের অংশগ্রহণ লক্ষ করে ঐতিহাসিকদের অনেকেই একে স্বাধীনতার যুদ্ধ বলে আখ্যা দিয়েছেন।

‘প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধ’ বলার বিপক্ষে ঐতিহাসিক ও বিশিষ্টজনের মতামত:

ড. সুরেন্দ্রনাথ সেন, ড. রমেশচন্দ্র মজুমদার-সহ বেশকিছু ঐতিহাসিক ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহকে ভারতের স্বাধীনতার যুদ্ধ বলতে রাজি নন। ঐতিহাসিক রমেশচন্দ্র মজুমদার তাঁর History of the Freedom Movement in India (Vol. 1) গ্রখে বলেছেন যে, ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে সংঘটিত তথাকথিত প্রথম জাতীয় স্বাধীনতার যুদ্ধ-না তো প্রথম, না জাতীয়, এমনকি স্বাধীনতা সংগ্রামও নয়।

‘প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধ’ বলার বিপক্ষে যুক্তিসমূহ:

ঐতিহাসিক রমেশচন্দ্র মজুমদার তাঁর বক্তব্যের সপক্ষে বেশকিছু যুক্তি দিয়েছেন, যথা-

  • (i) এই বিদ্রোহে ভারতের সকল জনগণ যোগ দেননি। কেবলমাত্র কয়েকটি ক্ষুদ্র অঞ্চলের মধ্যে বিদ্রোহ সীমাবন্ধ ছিল।
  • (ii) ১৮৫৭-র বিদ্রোহ দমনে ভারতের বেশ কয়েকজন নৃপতি ইংরেজদের সাহায্য করেছিলেন। এমনকি গোর্খা ও শিখ সৈনিকেরাও ইংরেজদের পক্ষে ছিলেন। পাঞ্জাব, সিন্ধু প্রদেশ এবং রাজপুতানায় এই বিদ্রোহের একেবারেই ক্ষুরণ ঘটেনি। দাক্ষিণাত্য ও বাংলার শিক্ষিত জনসমাজও বিদ্রোহ থেকে দূরেই ছিল। বলা যেতে পারে, শুধুমাত্র অযোধ্যাতেই বিদ্রোহ জাতীয় রূপ ধারণ করে।
  • (iii) দ্বিতীয় বাহাদুর শাহের সম্রাট হিসেবে স্বীকৃতিলাভ শিখ, রাজপুত ও মারাঠাদের ক্ষুব্ধ করে। ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহীদের উদ্দেশ্য স্থির ছিল না। দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ, রানি লক্ষ্মীবাঈ, নানাসাহেব প্রমুখ নেতৃবর্গ নিজ নিজ স্বার্থ দ্বারাই অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন।
  • (v) সর্বোপরি, ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে ভারতীয় জাতীয়তাবাদের উন্মেষ ঘটেনি। কাজেই এই বিদ্রোহকে যদি ভারতের প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধ বলা হয়, তাহলে পূর্ববর্তী সাঁওতাল বিদ্রোহ, ওয়াহাবি আন্দোলনকেও সমমর্যাদা দান করা উচিত।

মূল্যায়ন: উপরোক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে ১৮৫৭-র বিদ্রোহকে প্রথম স্বাধীনতার যুদ্ধ না বলা গেলেও স্বাধীনতা আন্দোলনের পটভূমি তৈরিতে এই বিদ্রোহ যে সহায়তা করেছিল, এ কথা কোনোভাবেই অস্বীকার করা যায় না।

6. মহারানির ঘোষণাপত্র (১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দ) কী ছিল?

অথবা, মহারানির ঘোষণাপত্র সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো।

মহারানির ঘোষণাপত্র: ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহের পর ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মতো একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের হাতে ভারতের শাসনভার রাখতে চায়নি। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনের পরিবর্তে প্রত্যক্ষভাবে ব্রিটিশ সরকারের হাতে শাসনক্ষমতা তুলে দেওয়া তথা কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য ব্রিটিশ পার্লামেন্ট Act for the Better Government of India, 1858 বা সংক্ষেপে ভারত শাসন আইন পাস করে। এই আইনে ভারতের শাসনভার ইংল্যান্ডেশ্বরী মহারানি ভিক্টোরিয়া (Queen Victoria)-র হাতে তুলে দেওয়া হয়।

ঘোষণাপত্র প্রকাশ: বিদ্রোহের উত্তাপ প্রশমিত করার জন্য ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দের ১ নভেম্বর মহারানি ভিক্টোরিয়া এক ঘোষণাপত্র প্রকাশ করেন, যা
মহারানির ঘোষণাপত্র (Queen’s Proclamation) নামে পরিচিত। ভাইসরয় লর্ড ক্যানিং এলাহাবাদে একটি দরবারের আয়োজন করে আনুষ্ঠানিকভাবে মহারানির ঘোষণাপত্রটি প্রকাশ করেন। রানি ভিক্টোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী ডারবি (Lord Derby) এই ঘোষণাপত্র রচনা করেছিলেন। উল্লেখ্য, কলকাতায় অবস্থিত ভিক্টোরিয়া স্মৃতিসৌধ (Victoria) Memorial)-এর গায়ে মর্মরফলকে এর অঙ্গীকারগুলি খোদিত রয়েছে।

মূল বক্তব্য: মহারানির ঘোষণাপত্রে বলা হয়–

(i) ভারতবাসীর ধর্মীয় ও সামাজিক ব্যাপারে ব্রিটিশ সরকার কোনোরকম হস্তক্ষেপ করবে না।
(ii) জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে যোগ্যতাসম্পন্ন সকল ভারতবাসী সরকারি চাকুরিতে নিযুক্ত হতে পারবে।
(iii) স্বত্ববিলোপ নীতি (Doctrine of Lapse প্রত্যাহার করা হবে এবং দেশীয় রাজারা দত্তকপুত্র গ্রহণ করতে পারবেন।
(iv) সরকার ভারতে সাম্রাজ্যবিস্তারের নীতি ত্যাগ করবে।
(v) দেশীয় রাজাদের আশ্বস্ত করে ঘোষণা করা হয় যে, কোম্পানির সঙ্গে তাঁদের স্বাক্ষরিত সব চুক্তি মেনে চলা হবে।

মূল্যায়ন: দীর্ঘ ১০০ বছর (১৭৫৭-১৮৫৭ খ্রি.) ধরে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতে যে অপশাসন চালিয়েছিল, মহারানির ঘোষণাপত্র সেই অপশাসনের মধুর প্রলেপ দিয়েছিল। তবে মহারানি ভারতীয়দের যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তার কোনোটিই সঠিকভাবে পালিত হয়নি। তাই ঐতিহাসিক ড. রমেশচন্দ্র মজুমদার মহারানির ঘোষণাপত্রকে ‘প্রতিশ্রুতিভঙ্গের অধ্যায়ের সূচনাকাল’ বলে অভিহিত করেছেন।

7. ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহের রাজনৈতিক কারণ উল্লেখ করো।

অথবা, ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহে দেশীয় রাজন্যবর্গের যোগদানের কারণ কী ছিল?

অথবা, ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট কীরূপ ছিল?

Ans: ভারতের ইতিহাসে ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহ ছিল একটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। লর্ড ক্যানিং-এর শাসনকালে ভারতবর্ষের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে সংঘটিত এই বিদ্রোহে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ অংশ নিয়েছিলেন। এঁদের মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য ছিলেন দেশীয় রাজন্যবর্গ, যাঁরা এই বিদ্রোহে নেতৃত্বদানকারীর ভূমিকা পালন করেছিলেন।

১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহের রাজনৈতিক কারণসমূহ/দেশীয় রাজন্যবর্গের যোগদানের কারণসমূহ:

নানাবিধ রাজনৈতিক কারণবশত দেশের রাজশক্তির মনে ব্যাপক ক্ষোভের সঞ্চার হয়। ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহের রাজনৈতিক কারণগুলি হল-

কোম্পানির সাম্রাজ্যবাদী কার্যকলাপ: ১৭৫৭-১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দ-এই কালপর্বে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে সাম্রাজ্য স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছিল। রবার্ট ক্লাইভ, ওয়ারেন হেস্টিংস-এর সুযোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে লর্ড কর্নওয়ালিস, লর্ড ওয়েলেসলি ও লর্ড ডালহৌসি -এর ঘোরতর সাম্রাজ্যবাদী নীতির কবলে পড়ে একের পর এক দেশীয় রাজ্যগুলি ব্রিটিশদের দখলে চলে যাওয়ায় তা ভারতীয় রাজন্যবর্গকে ক্ষুদ্ধ করে তুলেছিল।

অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি: অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি (১৭৯৮ খ্রি.) প্রয়োগ করে লর্ড ওয়েলেসলি দেশীয় রাজাদের ইংরেজদের অধীনস্থ প্রজায় পরিণত করতে উদ্যোগী হন-যা শাসকদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের জন্ম দেয়।

স্বত্নবিলোপ নীতি: ভারতবাসীর ব্রিটিশ শাসনের প্রতি অসন্তোষের অন্যতম কারণ ছিল লর্ড ডালহৌসি-র স্বত্ববিলোপ নীতির প্রয়োগ। (a) এই নীতি দ্বারা ব্রিটিশ-সৃষ্ট রাজ্যগুলিতে অপুত্রক রাজাদের মৃত্যুর পর তাঁদের রাজ্য ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত হবে বলে উল্লেখ করা হয়। (b) পাশাপাশি কোম্পানির করদ বা আশ্রিত রাজ্যের অপুত্রক কোনও শাসক যদি দত্তক গ্রহণ করতে চান, তাহলে তাঁকে অতি অবশ্যই কোম্পানির পূর্ব অনুমতি নিতে হবে। (c) এই নীতির মাধ্যমে সাতারা, ঝাঁসি, তাঞ্জোর, নাগপুর, সম্বলপুর, উদয়পুর প্রভৃতি দেশীয় রাজ্য ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত হয়। (d) ফলস্বরূপ, রাজ্যচ্যুত ও বঞ্চিত রাজন্যবর্গ নিজেদের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার আশায় ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটাতে আগ্রহী হন।

ভাতাবন্ধ ও পদমর্যাদা লোপ: (a) লর্ড ডালহৌসি ‘পেশওয়া’ দ্বিতীয় বাজিরাও-এর দত্তকপুত্র নানাসাহেবের ‘পেশওয়া’ পদ লোপ করেন। তাঁর বার্ষিক ৮ লক্ষ টাকা বৃত্তিও বন্ধ করে দেন। (b) এ ছাড়া মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ-র উপাধি বাতিল করে তাঁকে রাজপ্রাসাদ থেকে বহিষ্কার করে কুতুবে স্থানান্তরিত করা হয়। ইংরেজদের রাজ্যগ্রাসের ফলে বহু রাজা তাঁদের রাজ্য হারান। ফলে রাজপরিবার ও রাজপরিবারের উপর নির্ভরশীল ব্যক্তি, কর্মচারী, সৈনিক, সুবিধাভোগী শ্রেণি (জমিদার, তালুকদার) জীবিকাহীন হয়ে ইংরেজবিরোধী হয়ে ওঠেন।

কুশাসনের অজুহাতে রাজ্যগ্রাস: গভর্নর জেনারেল লর্ড ডালহৌসি কুশাসনের অভিযোগে অযোধ্যা রাজ্যটি দখল করেন (১৮৫৬ খ্রি.)। বস্তুত, অযোধ্যা ছিল একান্তভাবে ব্রিটিশ অনুগত একটি রাজ্য। কোম্পানির বেঙ্গল আর্মির অধিকাংশ সিপাহি ছিলেন অযোধ্যার অধিবাসী। তাঁরা ইংরেজদের অযোধ্যা দখলের সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হন। ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ অযোধ্যার শেষ নবাব ওয়াজিদ আলি শাহকে কলকাতায় প্রেরণ করা হয়, অন্যদিকে অযোধ্যার তালুকদারদের অস্ত্রহীন করে দুর্গগুলিও ধ্বংস করা হয়। এই সকল ঘটনা জনমানসে ব্যাপক অসন্তোষের জন্ম দিয়েছিল।

রাজপ্রাসাদ লুণ্ঠন: লর্ড ডালহৌসির শাসনকালে অযোধ্যা ও নাগপুরের রাজপ্রাসাদ নির্বিচারে লুণ্ঠন করা হয়। এই ঘটনা অন্যান্য ভারতীয় রাজাদের মনে ব্রিটিশ শাসনের প্রতি প্রবল আতঙ্ক ও অসন্তোষের জন্ম দেয়।

সমসাময়িক নানান সাম্রাজ্যবাদী নীতিসমূহের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ায় দেশীয় রাজন্যবর্গের কাছে এই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যায় যে, কোম্পানির অনুগত থেকে সর্বস্ব হারানোর চেয়ে লড়াই করে মর্যাদা ও স্বাধীনতা রক্ষার চেষ্টা করা অনেক বেশি ভালো। তাই তাঁরা ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহে যোগদান করেন।

8. ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহের অর্থনৈতিক কারণ বা প্রেক্ষাপট কী ছিল?

অথবা, ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অর্থনৈতিক শোষণ কীভাবে ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহের ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছিল?

Ans: ভারতে ইংরেজদের অর্থনৈতিক শোষণ তথা কোম্পানির অর্থনীতির বিরুদ্ধে সর্বস্তরের মানুষের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ-ই ছিল ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহের অন্যতম প্রধান কারণ।

১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহের অর্থনৈতিক কারণসমূহ/প্রেক্ষাপট:

১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহের বিভিন্ন অর্থনৈতিক কারণগুলি হল-
(i) সম্পদের নির্গমন: ১৭৫৭ থেকে ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দ এই ১০০ বছরে ব্রিটিশদের শোষণমূলক অর্থনীতি ভারতীয় জনসাধারণের মনে ক্ষোভ ও অসন্তোষের জন্ম দিয়েছিল। কার্ল মার্কস তাঁর দাস ক্যাপিটাল গ্রন্থের প্রথম খন্ডে উল্লেখ করেছেন যে, ১৭৫৭-১৭৬৬ খ্রিস্টাব্দের মধ্যবর্তী সময়ে শুধুমাত্র উপহার বাবদ ৬ মিলিয়ন পাউন্ড ভারত থেকে বাইরে চালান করে দেওয়া হয়। উপঢৌকন ও উৎকোচের মাধ্যমে এই জলের মতো অর্থের নির্গমনকেই দাদাভাই নৌরজি এবং রমেশচন্দ্র দত্ত Drain of Wealth বলে উল্লেখ করেছেন।

(ii) অসম বানিজ্য নীতি: কোম্পানির বাণিজ্যনীতি দেশীয় বণিক ও কারিগরদের ধ্বংসের মুখে নিয়ে যায়। দেশীয় শিল্পপণ্যের (প্রধানত সুতিবস্ত্র) রফতানি কমিয়ে এবং ব্রিটেনের কারখানায় প্রস্তুত পণ্যের আমদানি বাড়িয়ে সরকার বিদেশি পণ্যে ভারতের বাজার ভরিয়ে দেয়। উপরন্তু ভারতের রফতানি কর পণ্যের উপর ব্রিটিশ সরকার চড়া হারে আমদানি শুল্ক চাপায়। ক্রমেই ভারতের শিল্পপণ্য অসম প্রতিযোগিতার মুখে পড়ে নিঃশেষ হতে থাকে। ভারতবর্ষ মূলত পরিণত হয় ইংল্যান্ডের ম্যাঞ্চেস্টার ফলে, ভারতে দেশীয় শিল্পী-কারিগরেরা অনাহারে ও ল্যাঙ্কাশায়ারের কাঁচামাল সরবরাহকারী দেশে। মৃত্যুমুখে পতিত হন। দারিদ্র্যপীড়িত এই সকল মানুষেরা পরবর্তীকালে ইংরেজবিরোধী আন্দোলনে যোগদান করেন।

(iii) কোম্পানির ভূমিরাজস্ব নীতি: ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে বেশি পরিমাণে রাজস্ব আদায়ের জন্য বিভিন্ন প্রকার ভূমিরাজস্ব নীতি চালু করে। চিরস্থায়ী, রায়তওয়ারি বা মহলওয়ারি প্রতিটি ব্যবস্থাতেই বিপুল পরিমাণে খাজনার হার বৃদ্ধি, কোম্পানি-সৃষ্ট জমিদার শ্রেণির শাসন-শোষণ। কৃষকদের জীবন করে তোলে দুর্বিষহ।

(iv) মহাজন ও নীলকরদের শোষণ: কোম্পানির রাজস্বব্যবস্থার ফলে মহাজন শ্রেণির উদ্ভব হয়। চড়া হারে রাজস্ব দিতে ব্যর্থ হয়ে কৃষকেরা জমি বন্ধক দিয়ে মহাজনের কাছে চড়া সুদে ঋণ নিতে বাধ্য হতেন। ঋণের জালে তাদের আর্থিক অবস্থা শোচনীয় হয়ে ওঠে। এ ছাড়া কৃষকেরা নীলকর সাহেবদের দ্বারাও নির্যাতিত হতেন।

উপরোক্ত অর্থনৈতিক কারণগুলিই ১৮৫৭খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহের ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছিল।

9. ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহের সামাজিক কারণ বা প্রেক্ষাপট কী ছিল?

অথবা, সামাজিক বৈষম্য কীভাবে ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহের ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছিল?

Ans: ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে বড়োলাট লর্ড ক্যানিং-এর শাসনকালে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিরুদ্ধে সিপাহি, দেশীয় রাজা ও সাধারণ মানুষ বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন। এই বিদ্রোহ ইতিহাসে ১৮৫৭খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহ নামে পরিচিত।

১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহের সামাজিক কারণসমূহ / প্রেক্ষাপট:

বিভিন্ন সামাজিক কারণে ভারতীয়দের মধ্যে ইংরেজদের বিরুদ্ধে অসন্তোষ ঘনীভূত হয়ে উঠেছিল, যথা-

(i) সামাজিক বৈষম্য: ভারতবাসীর প্রতি ইংরেজদেরবিন্দুমাত্র সহানুভূতি ছিল না। শ্বেতাঙ্গ ইংরেজগণ ব্যঙ্গ করে ভারতীয়দের নিগার, নেটিভ, অসভ্য-বর্বর ইত্যাদি ভাষায় সম্বোধন করতেন। সিয়ার-উল-মুতাখরিন (আনুমানিক ১৭৮০ খ্রি.) গ্রন্থে রয়েছে যে, ইংরেজরা ইচ্ছে করে ভারতীয়দের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতেন। ব্রিটিশদের রেস্তোরাঁ, পার্ক, হোটেল, ক্লাব প্রভৃতি স্থানে ভারতীয়দের প্রবেশ ছিল নিষিদ্ধ। বিভিন্ন জায়গায় (ইউরোপীয় ক্লাবে) বোর্ডে লেখা থাকত যে, কুকুর ও ভারতীয়দের প্রবেশ নিষেধ। ফলস্বরূপ, শাসক ও শাসিতের মধ্যে একটা সামাজিক ব্যবধান গড়ে ওঠে।

(ii) ইংরেজ রাজকর্মচারীদের মনোভাব: ইংরেজরা নিজেদের শ্রেষ্ঠ জাতি এবং ভারতবাসীকে বর্বর বলে মনে করতেন। গভর্নর জেনারেল লর্ড কর্নওয়ালিসের ধারণা ছিল যে, সকল ভারতীয় দুর্নীতিগ্রস্ত। এজন্য তিনি সরকারি উচ্চপদে ভারতীয়দের নিয়োগ নিষিদ্ধ করেছিলেন। এই নীতি লর্ড বেন্টিষ্কের সময় পর্যন্ত কার্যকর ছিল। তাছাড়া জানা যায়, আগ্রা শহরের জনৈক ইংরেজ ম্যাজিস্ট্রেটও আইন জারি করে বলেছিলেন যে, রাস্তায় কোনও ইংরেজকে দেখতে পেলেই ভারতীয়দের সেই ইংরেজকে সেলাম (অভিবাদন) জানাতে হবে। ইংরেজ কর্মচারীদের এরূপ ঔদ্ধত্য এবং তাচ্ছিল্যপূর্ণ আচরণ ভারতীয়দের ব্যথিত করে।

(iii) ইংরেজদের সমাজসংস্কার ও উন্নয়নমূলক কর্মসূচি: ইংরেজরা যেহেতু ভারতীয়দের শোষণ করতেন, তাই ভারতীয়রাও ইংরেজদের সংস্কারমূলক কার্যাবলিকে সন্দেহের চোখে দেখতেন। সতীদাহ ও বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে এবং বিধবাবিবাহ, অসবর্ণ বিবাহ ও ধর্মান্তরিত পুত্রের পৈতৃক সম্পত্তির দাবির পক্ষে ইংরেজ সরকার আইন পাস করলে ভারতীয়দের মনে অসন্তোষ জমে ওঠে। এমনকি ইংরেজদের উন্নয়নমূলক কাজকর্মগুলিও (যেমন-টেলিগ্রাফ ব্যবস্থার প্রবর্তন, রেলপথ স্থাপন, গঙ্গা নদীতে সেচব্যবস্থার প্রবর্তন প্রভৃতি) ভারতীয়দের কাছে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হিসেবে বিবেচিত না হয়ে, ব্রিটিশ দমননীতির সহায়ক অস্ত্র হিসেবে গণ্য হতে থাকে। প্রকৃতপক্ষে ভারতীয়রা ইংরেজদের সকল উন্নয়নমূলক ও সমাজসংস্কারমূলক কর্মসূচিকে ভারতীয় সমাজ ও সংস্কৃতিকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র হিসেবে গ্রহণ করেন।

(iv) ধর্মনাশের গুজব: গণ অভ্যুত্থানের পিছনে গুজবেরও একটা ভূমিকা ছিল। ১৮৫৭-র গোড়ার দিকে উত্তর ভারতে গুজব রটে যে, ইংরেজ সরকার হিন্দু ও মুসলমানদের ধর্মনাশের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। এই লক্ষ্যে আটার সঙ্গে গোরু ও শূকরের হাড়ের গুঁড়ো মিশিয়ে দিয়ে তা সেনানিবাস ও শহরের বাজারগুলিতে বিক্রি করা হচ্ছে। এই দুটি প্রাণী খাদ্যদ্রব্য হিসেবে যথাক্রমে হিন্দু ও মুসলমানদের ধর্মে নিষিদ্ধ ছিল। এই পরিস্থিতিতে ধর্মনাশের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষ বিদ্রোহে যোগ দেন।

(v) মিশনারিদের ভূমিকা: খ্রিস্টান মিশনারিরা ধর্মপ্রচারের সময় হিন্দু ও ইসলাম ধর্মের সমালোচনা করতেন। এর ফলে হিন্দু-মুসলিমদের সঙ্গে ইংরেজদের সামাজিক ব্যবধান বৃদ্ধি পায়।

এইভাবে বিভিন্ন সামাজিক বৈষম্য ইংরেজ ও ভারতবাসীর মনে বিদ্বেষ সৃষ্টি করে, যা ১৮৫৭খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহের ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছিল।

10. ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহের সামরিক কারণ বা প্রেক্ষাপট কী ছিল?

অথবা, ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহের সময় কোম্পানির ভারতীয় সিপাহিদের অসন্তোষের কী কী কারণ ছিল?

Ans: ভারতে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির রাজনৈতিক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার মূল রূপকার ছিলেন ভারতীয় সিপাহিরা। তবে নানা কারণে তাদের মধ্যে পেশাগত ক্ষোভের সঞ্চার ঘটে এবং ব্রিটিশবিরোধী মনোভাব তীব্র হয়ে ওঠে। ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহ ছিল দীর্ঘদিনের এই পুঞ্জীভূত ক্ষোভেরই বহিঃপ্রকাশ ১৮০৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহের সামরিক কারণসমূহ/কোম্পানির ভারতীয় সিপাহিদের অসন্তোষের কারণসমূহ: ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহের সামরিক কারণগুলি হল-

(i) ভারতীয় সৈন্যদের স্বল্প বেতন: ভারতীয় সিপাহিদের বেতন ব্রিটিশ সেনাদের তুলনায় অনেকটাই কম ছিল। একটি পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, ভারতে নিযুক্ত কোম্পানির সৈন্যসংখ্যা ছিল ৩ লক্ষ ১৫ হাজার ৫২০ জন এবং এদের জন্য মোট বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ৯৮ লক্ষ ২২ হাজার ২৩৫ পাউন্ড। উল্লেখ্য যে, এই বিশাল বাহিনীর মাত্র ১৬.২ শতাংশ ছিল ইউরোপীয়, অথচ সামরিক খাতে বরাদ্দকৃত অর্থের ৫৭.৮ শতাংশই ব্যয় করা হত শ্বেতাঙ্গদের জন্য। একজন ভারতীয় পদাতিক সিপাহির মাসিক বেতন ছিল ৭ টাকা এবং একজন অশ্বারোহী সেনা পেতেন ২৭ টাকা। খাবার, উর্দি ও ঘোড়া প্রতিপালনের খরচ বাদ দিয়ে তার হাতে বাঁচত ১ বা ২ টাকা। এরূপ বঞ্চনা ভারতীয় সিপাহিরা মেনে নিতে পারেননি।

(ii) পদোন্নতির ক্ষেত্রে বৈষম্য: শুধু বেতনের ক্ষেত্রেই নয় পদমর্যাদা, পদোন্নতি ও অন্যান্য সুযোগসুবিধার ক্ষেত্রেও ভারতীয় সিপাহিরা বৈষম্যের শিকার হতেন। টমাস মনরো-র লেখা থেকে জানা যায় যে, একজন ভারতীয় সিপাহি তার চাকুরি জীবনের সর্বোচ্চ সুবাদার পদ পর্যন্ত উন্নীত হতে পারতেন। লক্ষণীয় যে, এই পদের স্থান ছিল সর্বনিম্ন পদের ইউরোপীয় অফিসারের অনেক নীচে।

(iii) ভারতীয় সিপাহিদের প্রতি দুর্ব্যবহার: ভারতীয় সিপাহিদের প্রতি ইংরেজ কর্মচারীদের দুর্ব্যবহার ছিল খুবই সাধারণ ঘটনা। ভারতীয়দের বিভিন্ন অপমানজনক অভিধা, যেমন-কালা আদমি (নিগার), অসভ্য (আনকালচারড) ইত্যাদি সম্বোধন করে কথা বলা হত। তাদের বাসস্থানও ছিল নিম্নমানের। পাশাপাশি সিপাহিদের পরিবারের উপরেও ইংরেজদের দুর্ব্যবহার চরমমাত্রায় পৌঁছেছিল।

(iv) অতিরিক্ত ভাতাবন্ধ: যুদ্ধের জন্য সিপাহিদের যেতে হত দূরদেশে। এসময় ভারতীয় সৈন্যদের বেতন ছাড়াও অতিরিক্ত ভাতা বা বাট্টা দেওয়া হত। কিন্তু ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহ শুরুর কিছু সময় আগে সামরিক দফতর থেকে ঘোষণা করা হয় সিনুপ্রদেশ বা পাঞ্জাবে যুদ্ধে লিপ্ত ভারতীয় সিপাহিদের এরূপ কোনও ভাতা দেওয়া হবে না ফলে তারা ক্ষুবধ হন।

(v) ধর্মীয় অসন্তোষ: ইংরেজ সামরিক কর্তৃপক্ষ ভারতীয় সিপাহিদের তিলক কাটা, দাড়ি ও টিকি রাখা নিষিদ্ধ ঘোষণা করায় তারা অসন্তুষ্ট হন। তাছাড়া সেনাবাহিনীতে চামড়ার টুপি পড়া বাধ্যতামূলক করা হলে, তা ভারতীয় সিপাহিদের ধর্মবিশ্বাসে আঘাত করে।

(vi) কার্তুজের ব্যবহার (প্রত্যজ্ঞ কারণ): এনফিল্ড রাইফেলের কার্তুজ (টোটা) একটি মোড়কের মধ্যে থাকত। মোড়কটি দাঁত দিয়ে কেটে বন্দুকের মধ্যে ভরতে হত। মোড়কটিকে নরম রাখার জন্য চর্বি লাগানো থাকত। গুজব রটেছিল যে, ওই মোড়কটিতে। গোরু ও শূকরের চর্বি মাখানো থাকে। ফলে ধর্মচ্যুত হওয়ার ভয়ে হিন্দু ও মুসলমান সিপাহিরা এই কার্তুজ ব্যবহার করতে অসম্মত হন। ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহে এই ঘটনাটি প্রত্যক্ষভাবে ইন্ধন দিয়েছিল।

11. ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহের তাৎক্ষণিক কারণ কী ছিল?

অথবা, ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহের প্রত্যক্ষ কারণ কী ছিল?

অথবা, ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহে এনফিল্ড রাইফেল ব্যবহারের প্রতিক্রিয়া কী হয়েছিল?

Ans: লর্ড ক্যানিং-এর আমলে ব্রিটিশ শোষণ ও পীড়নের কারণে সিপাহি, দেশীয় রাজা-মহারাজা ও জনগণের মধ্যে অসন্তোষ পুঞ্জীভূত হয়েছিল। আর সেই ক্ষোভকে প্রত্যক্ষভাবে ইন্ধন দিয়েছিল সিপাহিদের মধ্যে এনফিল্ড রাইফেল-এর কার্তুজের ব্যবহার সংক্রান্ত অসন্তোষ।

১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহের তাৎক্ষণিক/প্রত্যক্ষ কারণ:

১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের গোড়ার দিকে পুরোনো ব্রাউনবেস গাদা বন্দুকের পরিবর্তে এনফিল্ড রাইফেল (Enfield Rifle) নামক একধরনের বন্দুকের কার্তুজ ব্যবহারকে কেন্দ্র করে বিদ্রোহের সূচনা হয়।

(i) কার্তুজের ব্যবহার সংক্রান্ত বিক্ষোভ: এনফিল্ড রাইফেলের কার্তুজ (টোটা) একটি মোড়কের মধ্যে থাকত। মোড়কটি দাঁত দিয়ে কেটে বন্দুকের মধ্যে ভরতে হত। মোড়কটিকে নরম রাখার জন্য চর্বি লাগানো থাকত। এসময় গুজব রটে যে, ওই মোড়কটিতে গোরু ও শূকরের চর্বি মাখানো থাকে। ফলস্বরূপ, ধর্মচ্যুত হওয়ার ভয়ে হিন্দু-মুসলমান সিপাহিরা এই কার্তুজ ব্যবহারে অসম্মত হন।

(ii) বিদ্রোহের সূচনা: ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের ২৩ মার্চ ব্রিটিশ সেনাপতি অ্যানসন বড়োলাট ক্যানিং-কে সিপাহিদের আপত্তির কথা এক পত্রে জানান। সম্ভবত তখনই এই কার্তুজের উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিন্তু সিপাহিদের সন্দেহ ও আতঙ্ক থেকেই যায়। ধর্মনাশের গভীর ও গোপন ষড়যন্ত্র ধ্বংস করার জন্য মরিয়া হয়ে সিপাহিরা বিদ্রোহের সূচনা করেন।

  • ব্যারাকপুরে মঙ্গল পান্ডের বিদ্রোহ: বাংলার ব্যারাকপুর সেনাছাউনিতে এনফিল্ড কার্তুজ সংক্রান্ত ঘটনায় ৩৪নং নেটিভ ইনফ্যান্ট্রির সৈনিক মঙ্গল পাণ্ডে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। যদিও শেষপর্যন্ত বিচারে তাঁর ফাঁসি হয়।
  • মিরাটে বিদ্রোহ: ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের ২৪ এপ্রিল মিরাট সেনানিবাসের ৩নং নেটিভ ক্যাভালরির ৯০ জন সিপাহি এনফিল্ড রাইফেলের চর্বি মাখানো কার্তুজ ব্যবহার করতে অস্বীকার করেন। ৯ মে তাদের ৮৫ জনকে ১০ বছরের কারাদন্ড দেওয়া হয়। এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে মিরাটের সিপাহিরা ১০ মে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন।

পরিশেষে বলা যায় যে, বিভিন্ন কারণে সিপাহিদের মধ্যে যে অসন্তোষ ছিল, কার্তুজের ব্যবহারকে কেন্দ্র করে তার চরম প্রকাশ ঘটে। অধিকাংশ ঐতিহাসিকের মতানুযায়ী, এই ঘটনা ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহের প্রত্যক্ষ কারণরূপে বিবেচিত হয়।

12. ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহে বিদ্রোহীরা কী চেয়েছিলেন? এই বিদ্রোহ বিষয়ে বিভিন্ন সামাজিক শ্রেণির কী দৃষ্টিভঙ্গি ছিল?

অথবা, ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহে যোগদানকারী বিভিন্ন সামাজিক শ্রেণির উদ্দেশ্য কী ছিল?

Ans: ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহে যোগদানকারী বিভিন্ন সামাজিক শ্রেণির দৃষ্টিভঙ্গি / উদ্দেশ্যসমূহ:

সিপাহিদের হাত ধরে ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহের সূচনা ঘটলেও কালক্রমে দেশীয় রাজন্যবর্গ, জমিদার, তালুকদার, কৃষক, কারিগর-সহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ এই বিদ্রোহে যোগ দেন। বস্তুত, এক্ষেত্রে প্রত্যেক সামাজিক শ্রেণিই নিজ নিজ স্বার্থ, সমস্যা ও ক্ষোভ দ্বারা চালিত হয়েছিল।

(i) সিপাহি: সিপাহিরা ধর্মীয়, সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক নানা কারণে ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহে যোগদান করেন। বেতন, পদোন্নতি-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বৈষম্য, ভারতীয় সেনাদের প্রতি ইংরেজদের দুর্ব্যবহার প্রভৃতি বিষয়গুলি এক্ষেত্রে কার্যকরী ভূমিকা নিয়েছিল। এই পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনীতে এনফিল্ড রাইফেলের ব্যবহার চালু হয়। ফলে হিন্দু-মুসলিম সিপাহিরা ধর্মনাশের আশঙ্কা করলে সূচনা ঘটে ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহের।

(ii) দেশীয় রাজন্যবর্গ: ১৭৫৭ ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দ রাইফেলের-এই কালপর্বে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে সাম্রাজ্য স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছিল। অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি, স্বত্ববিলোপ নীতি, পদমর্যাদা লোপ, কুশাসনের অজুহাত এমনকি যুদ্ধনীতির মাধ্যমে ইংরেজরা বহু ভারতীয় রাজ্য গ্রাস করলে দেশীয় রাজন্যবর্গ ক্ষুব্ধ হন। অতঃপর নিজ নিজ রাজ্য পুনরুদ্ধার ও পদমর্যাদা ফিরে পাওয়ার আশায় এবং ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটানোর লক্ষ্যে তাঁরা এই বিদ্রোহে যোগ দেন।

(iii) জমিদার ও তালুকদার: ব্রিটিশদের উচ্চহারে ভূমিরাজস্ব আদায় এবং তা পরিশোধ করতে না পারলে জমি বাজেয়াপ্তকরণ-এর বিষয়টি জমিদারদের ক্ষুব্ধ করেছিল। অন্যদিকে, কুশাসনের অজুহাতে অযোধ্যা দখলের পর ব্রিটিশ সরকার নানাভাবে সেখানকার তালুকদারদের ক্ষমতা ও পদমর্যাদা হ্রাস করে। এমতাবস্থায় জমিদার ও তালুকদারগণ পূর্বেকার মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে এই বিদ্রোহে যোগ দেন।

(iv) কৃষক শ্রেণি: উচ্চহারে কর ও অতিরিক্ত কর আদায় হ্রাস, মহাজন ও জমিদারদের শোষণের অবসান ঘটানো ইত্যাদি নানাবিধ অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিষয়ের প্রেক্ষিতে ভারতীয় কৃষকেরা ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহে যোগদান করেন।

13. মঙ্গল পান্ডে কে ছিলেন?

Ans: ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহের প্রথম শহীদ মঙ্গল পান্ডে ছিলেন ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একজন সিপাহি।

মঙ্গল পাণ্ডের পরিচয়: সম্ভবত বেঙ্গল আর্মির সিপাহি মঙ্গল পান্ডের জন্ম হয়েছিল উত্তরপ্রদেশের বালিয়া জেলার নগওয়া গ্রামে (১৯ জুলাই, ১৮২৭ খ্রি.)। সেনা হিসেবে যোগদান করার পর তাঁর পরিচয় ছিল- সিপাহি নং ১৪৪৬, ৫নং কোম্পানি, ৩৪নং দেশীয় পদাতিক বাহিনী, ব্যারাকপুর রেজিমেন্ট। বস্তুত, মঙ্গল পাণ্ডের হাত ধরেই প্রথম ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহের সূচনা হয়।

মঙ্গল পান্ডের বিদ্রোহ ঘোষণা : জানা যায়, ২৯ মার্চ তিনি খবর পেয়েছিলেন যে, ব্যারাকপুর ফ্ল্যাগস্টাফ ঘাটে সিপাহিদের বলপূর্বক খ্রিস্টান করা হবে। এর প্রতিবাদে মঙ্গল পাণ্ডে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। এরপর ওই দিন বিকেল নাগাদ তিনি তাঁর ঊর্ধ্বতন ইউরোপীয় সেনা আধিকারিকের উপর গুলি চালান। মঙ্গল পান্ডের আক্রমণে সার্জেন্ট মেজর হিউসন এবং লেফটেন্যান্ট বগ আহত হন। শেষপর্যন্ত মঙ্গল পান্ডেকে বন্দি করা হয়।

মঙ্গল পাণ্ডের বিচার ও পরিণতি: অতঃপর পূর্ববর্তী ঘটনার অনুসন্ধানের জন্য ৩০ মার্চ প্রথম স্পেশাল কোর্ট বসে। এপ্রিলের ৪ তারিখ থেকে শুরু হয় মঙ্গল পাণ্ডের বিচার। মূলত ২টি অভিযোগে মঙ্গল পান্ডেকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল, যথা- (a) ২৯ মার্চ তরবারি ও মাস্কেট নিয়ে প্যারেড গ্রাউন্ডে বিদ্রোহ ঘটানো ও রেজিমেন্টের অন্যান্য সিপাহিদের বিদ্রোহে উত্তেজিত করা। (b) ঊর্ধ্বতন অফিসারদের দিকে গুলি চালানো ও তাঁদের তরবারি দিয়ে আহত করা। বিচারে তাঁকে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়। এরপর ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের ৮ এপ্রিল ব্যারাকপুর ব্রিগেড প্যারেডে ভোর সাড়ে পাঁচটায় বিদ্রোহী মঙ্গল পান্ডের ফাঁসি হয়।

মঙ্গল পান্ডের ফাঁসির পর ৩৪ নং রেজিমেন্ট ভেঙে দেওয়া হয় (৬ মে, ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দ)। এইভাবে ব্যারাকপুরে সংঘটিত ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহের আগুনকে নিভিয়ে দেওয়া হয়। তবে ব্যর্থ হলেও ভারতে ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রামের ইতিহাসে সাহস, প্রতিবাদ ও আত্মত্যাগের প্রতীকরূপে মঙ্গল পাণ্ডে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন।

14. ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহের বিদ্রোহী নেতানেত্রীদের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

Ans: ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহের সূচনা সিপাহিরা করলেও এই বিদ্রোহের নেতানেত্রী হিসেবে ভারতীয় রাজন্যবর্গ তথা অন্যান্য বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। তাঁদের সুযোগ্য নেতৃত্বে এই বিদ্রোহের আগুন দিল্লি, কানপুর, লখনউ, অযোধ্যা, বেরিলি, ঝাঁসি-সহ বিভিন্ন প্রান্তে দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে।

১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহের বিদ্রোহী নেতানেত্রীগণ:

১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহের কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতানেত্রী হলেন-

(i) দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ: মুঘল শাসনের উত্তরাধিকারী এবং অখন্ড ভারতবর্ষের প্রতীক হিসেবে দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ (১৭৭৫ ১৮৬২ খ্রি.)-এর নামে ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহ পরিচালিত হয়েছিল। তবে প্রকৃতপক্ষে তিনি ছিলেন নামসর্বস্ব নেতা। বিদ্রোহের শেষে তাঁকে রেঙ্গুনে নির্বাসিত করা হয়।
(ii) বেগম হজরত মঙ্গল: অযোধ্যার শেষ নবাব ওয়াজিদ আলি শাহ-এর দ্বিতীয় পত্নী ছিলেন বেগম হজরত মহল (১৮২০-১৮৭৯ খ্রি.)। তিনি নাবালক পুত্র বিরজিস কাদির-কে সিংহাসনে বসিয়ে লখনউ থেকে বিদ্রোহ চালিয়ে যান। ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ বিদ্রোহে হজরত মহল ব্রিটিশদের কাছে পরাজিত হয়ে পালিয়ে যান নেপালে।

(iii) নানাসাহেব: পেশওয়া দ্বিতীয় বাজিরাও-এর দত্তকপুত্র নানাসাহেব (১৮২৪ ১৮৫৯ খ্রি.) ভাতা বন্ধের প্রতিবাদে ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের ৪ জুন কানপুরে বিদ্রোহ শুরু করেন। তাঁতিয়া তোপির সঙ্গে একত্রে তিনি কানপুর জয় করেন বলে জানা যায়। পরে অবশ্য ব্রিটিশরা কানপুর পুনর্দখল করলে নানাসাহেব পালিয়ে যান (সম্ভবত নেপাল)।

(iv) তাঁতিয়া টোপি: ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহে কানপুর, মধ্যভারত ও বুন্দেলখণ্ড প্রভৃতি কেন্দ্রসমূহের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা ছিলেন তাঁতিয়া তোপি (১৮১৪-১৮৫৯ খ্রি.)। কানপুরে তিনি আজিমুল্লাহ-র সঙ্গে একজোট হয়ে নানাসাহেবের নেতৃত্বে যুদ্ধ করেন। তাছাড়া তাঁতিয়া তোপি রানি লক্ষ্মীবাঈ-এর বাহিনীর সঙ্গেঙ্গও যুক্ত হন। শিকার-এর যুদ্ধে পরাজয়ের পর ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে তাঁর ফাঁসি হয়।

(v) রানি লক্ষ্মীবাঈ : ঝাঁসির রাজা গঙ্গাধর রাও-এর মৃত্যুর পর সিংহাসনের উত্তরাধিকারী হিসেবে দত্তকপুত্রের অধিকার ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি মেনে নেয়নি। এমতাবস্থায় লর্ড ডালহৌসি স্বত্ববিলোপ নীতি প্রয়োগ করে ঝাঁসি রাজ্য গ্রাস করতে চাইলে ঝাঁসির রানি লক্ষ্মীবাঈ (১৮২৮/৩৫ ১৮৫৮ খ্রি.) ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করেন। কোটা-কি-সরাই-এর যুদ্ধে (১৮৫৮ খ্রি.) বীরবিক্রমে লড়াই করে রানি পরাস্ত হন এবং ১৮ জুন মৃত্যুবরণ করেন।

(vi) কুনওয়ার সিং: বিহারের বিদ্রোহী নেতা ছিলেন কুনওয়ার সিং (১৭৭৭-১৮৫৮ খ্রি.)। নানা সাহেবের সেনাবাহিনীর সঙ্গে হাত মিলিয়ে তিনি বিদ্রোহ পরিচালনা করেছিলেন। ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দের ২৩ এপ্রিল ব্রিটিশ বাহিনীর গুলিতে আহত হওয়া সত্ত্বেও মৃত্যুর পূর্বে ক্যাপটেন লে গ্রান্ড-এর বাহিনীকে পরাস্ত করেন কুনওয়ার সিং।

পরিশেষে বলা যায়, ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহে ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে উঠে আসা নেতানেত্রীরা তাঁদের সাহস, আত্মত্যাগ, নেতৃত্বদানে বিচক্ষণতা প্রভৃতির গুণাবলির জন্য ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন।

HS Class 12 3rd Semester (Third Unit Test) Question and Answer :

  • HS Class 12 Bengali 3rd Semester Question Click here
  • HS Class 12 English 3rd Semester Question Click here
  • HS Class 12 Geography 3rd Semester Question Click here
  • HS Class 12 History 3rd Semester Question Click here
  • HS Class 12 Education 3rd Semester Question Click here
  • HS Class 12 Political Science 3rd Semester Question Click here
  • HS Class 12 Philosophy 3rd Semester Question Click here
  • HS Class 12 Sociology 3rd Semester Question Click here
  • HS Class 12 Sanskrit 3rd Semester Question Click here
  • HS Class 12 All Subjects First Semester Question Click here

HS Class 12 4th Semester (Forth Unit Test) Question and Answer :

  • HS Class 12 Bengali 4th Semester Question Click here
  • HS Class 12 English 4th Semester Question Click here
  • HS Class 12 Geography 4th Semester Question Click here
  • HS Class 12 History 4th Semester Question Click here
  • HS Class 12 Education 4th Semester Question Click here
  • HS Class 12 Political Science 4th Semester Question Click here
  • HS Class 12 Philosophy 4th Semester Question Click here
  • HS Class 12 Sociology 4th Semester Question Click here
  • HS Class 12 Sanskrit 4th Semester Question Click here
  • HS Class 12 All Subjects 4th Semester Question Click here

Higher Secondary All Subject Suggestion – উচ্চমাধ্যমিক সমস্ত বিষয়ের সাজেশন

আরোও দেখুন:-

HS Bengali Suggestion Click here

আরোও দেখুন:-

Class 12 English Suggestion Click here

আরোও দেখুন:-

Class 12 Geography Suggestion Click here

আরোও দেখুন:-

Class 12 History Suggestion Click here

আরোও দেখুন:-

Class 12 Political Science Suggestion Click here

আরোও দেখুন:-

Class 12 Education Suggestion Click here

আরোও দেখুন:-

Class 12 Philosophy Suggestion Click here

আরোও দেখুন:-

Class 12 Sociology Suggestion Click here

আরোও দেখুন:-

Class 12 Sanskrit Suggestion Click here

আরোও দেখুন:-

Class 12 All Subjects Suggestion Click here

◆ উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার প্রস্তুতি: বিনামূল্যে নোটস, সাজেশন, PDF ও সমস্ত আপডেটের জন্য আমাদের WhatsApp Group এ Join হয়ে যাও।

Class 12 WhatsApp Groups Click Here to Join

দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | West Bengal HS Class 12th History Question and Answer / Suggestion / Notes Book

আরোও দেখুন :-

দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস সমস্ত অধ্যায়ের প্রশ্নউত্তর Click Here

FILE INFO : বিদ্রোহ এবং ব্রিটিশরাজ (প্রথম অধ্যায়) দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | HS Class 12 History Bidroho & British Raj Question and Answer with FREE PDF Download Link

PDF File Name বিদ্রোহ এবং ব্রিটিশরাজ (প্রথম অধ্যায়) দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | HS Class 12 History Bidroho & British Raj Question and Answer PDF
Prepared by Experienced Teachers
Price FREE
Download Link  Click Here To Download
Download PDF Click Here To Download

বিদ্রোহ এবং ব্রিটিশরাজ (প্রথম অধ্যায়) অধ্যায় থেকে আরোও বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর দেখুন :

Update

[আরও দেখুন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবন রচনা – Rabindranath Tagore Biography in Bengali]

[আমাদের YouTube চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন Subscribe Now]

Info : বিদ্রোহ এবং ব্রিটিশরাজ (প্রথম অধ্যায়) দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস সাজেশন বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর

 HS Class 12 History Suggestion | West Bengal WBCHSE Class Twelve XII (HS Class 12th) History Question and Answer Suggestion 

” বিদ্রোহ এবং ব্রিটিশরাজ (প্রথম অধ্যায়) দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস প্রশ্ন উত্তর “ একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ টপিক দ্বাদশ শ্রেণীর পরীক্ষা (West Bengal Class Twelve XII / WB HS Class 12 / WBCHSE / HS Class 12 Exam / West Bengal Council of Higher Secondary Education – WB HS Class 12 Exam / HS Class 12th / WB HS Class 12 / HS Class 12 Pariksha ) এখান থেকে প্রশ্ন অবশ্যম্ভাবী । সে কথা মাথায় রেখে Bhugol Shiksha .com এর পক্ষ থেকে দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস পরীক্ষা প্রস্তুতিমূলক সাজেশন এবং বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর ( দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস সাজেশন / দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস প্রশ্ও উত্তর । Class-11 History Suggestion / HS Class 12 History Bidroho & British Raj Question and Answer / HS Class 12 History Suggestion / Class-11 Pariksha History Suggestion / History HS Class 12 Exam Guide / MCQ , Short , Descriptive Type Question and Answer / HS Class 12 History Suggestion FREE PDF Download) উপস্থাপনের প্রচেষ্টা করা হলাে। ছাত্রছাত্রী, পরীক্ষার্থীদের উপকারে লাগলে, আমাদের প্রয়াস দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস পরীক্ষা প্রস্তুতিমূলক সাজেশন এবং বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর (HS Class 12 History Suggestion / West Bengal Twelve XII Question and Answer, Suggestion / WBCHSE HS Class 12th History Suggestion / HS Class 12 History Bidroho & British Raj Question and Answer / HS Class 12 History Suggestion / HS Class 12 Pariksha Suggestion / HS Class 12 History Exam Guide / HS Class 12 History Suggestion 2024, 2025, 2026, 2027, 2028, 2029, 2030 / HS Class 12 History Suggestion MCQ , Short , Descriptive Type Question and Answer. / Class-11 History Suggestion FREE PDF Download) সফল হবে।

বিদ্রোহ এবং ব্রিটিশরাজ (প্রথম অধ্যায়) বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর 

বিদ্রোহ এবং ব্রিটিশরাজ (প্রথম অধ্যায়) বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | বিদ্রোহ এবং ব্রিটিশরাজ (প্রথম অধ্যায়) HS Class 12 History Bidroho & British Raj Question and Answer Suggestion দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – বিদ্রোহ এবং ব্রিটিশরাজ (প্রথম অধ্যায়) বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর।

বিদ্রোহ এবং ব্রিটিশরাজ (প্রথম অধ্যায়) SAQ সংক্ষিপ্ত বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস 

বিদ্রোহ এবং ব্রিটিশরাজ (প্রথম অধ্যায়) SAQ সংক্ষিপ্ত বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | বিদ্রোহ এবং ব্রিটিশরাজ (প্রথম অধ্যায়) HS Class 12 History Bidroho & British Raj Question and Answer Suggestion দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – বিদ্রোহ এবং ব্রিটিশরাজ (প্রথম অধ্যায়) SAQ সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর।

উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – বিদ্রোহ এবং ব্রিটিশরাজ (প্রথম অধ্যায়) প্রশ্ন উত্তর | HS Class 12 History Bidroho & British Raj Question and Answer Question and Answer, Suggestion 

উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – বিদ্রোহ এবং ব্রিটিশরাজ (প্রথম অধ্যায়) | দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – বিদ্রোহ এবং ব্রিটিশরাজ (প্রথম অধ্যায়) | পশ্চিমবঙ্গ দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – বিদ্রোহ এবং ব্রিটিশরাজ (প্রথম অধ্যায়) | দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস সহায়ক – বিদ্রোহ এবং ব্রিটিশরাজ (প্রথম অধ্যায়) বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর । HS Class 12 History Bidroho & British Raj Question and Answer, Suggestion | HS Class 12 History Bidroho & British Raj Question and Answer Suggestion | HS Class 12 History Bidroho & British Raj Question and Answer Notes | West Bengal HS Class 12th History Question and Answer Suggestion.

উচ্চমাধ্যমিক দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – বিদ্রোহ এবং ব্রিটিশরাজ (প্রথম অধ্যায়) প্রশ্ন উত্তর | Higher Secondary Class 12 History Question and Answer, Suggestion 

দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – বিদ্রোহ এবং ব্রিটিশরাজ (প্রথম অধ্যায়) প্রশ্ন উত্তর বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | বিদ্রোহ এবং ব্রিটিশরাজ (প্রথম অধ্যায়) । HS Class 12 History Bidroho & British Raj Question and Answer Suggestion.

WBCHSE HS Class 12th History Bidroho & British Raj Suggestion | দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – বিদ্রোহ এবং ব্রিটিশরাজ (প্রথম অধ্যায়)

WBCHSE HS Class 12 History Bidroho & British Raj Suggestion দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – বিদ্রোহ এবং ব্রিটিশরাজ (প্রথম অধ্যায়) প্রশ্ন উত্তর বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর । বিদ্রোহ এবং ব্রিটিশরাজ (প্রথম অধ্যায়) | HS Class 12 History Bidroho & British Raj Suggestion দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – বিদ্রোহ এবং ব্রিটিশরাজ (প্রথম অধ্যায়) প্রশ্ন উত্তর বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর ।

HS Class 12 History Bidroho & British Raj 4th Semester Question and Answer Suggestions | দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – বিদ্রোহ এবং ব্রিটিশরাজ (প্রথম অধ্যায়) | দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর 

HS Class 12 History Bidroho & British Raj 4th Semester Question and Answer দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – বিদ্রোহ এবং ব্রিটিশরাজ (প্রথম অধ্যায়) দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর HS Class 12 History Bidroho & British Raj Question and Answer দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – বিদ্রোহ এবং ব্রিটিশরাজ (প্রথম অধ্যায়) সংক্ষিপ্ত, রোচনাধর্মী বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর ।

WB HS Class 12 History Bidroho & British Raj Suggestion | দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – বিদ্রোহ এবং ব্রিটিশরাজ (প্রথম অধ্যায়) সাজেশন 

HS Class 12 History Bidroho & British Raj Question and Answer Suggestion দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – বিদ্রোহ এবং ব্রিটিশরাজ (প্রথম অধ্যায়) সাজেশন । HS Class 12 History Bidroho & British Raj Question and Answer Suggestion দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর।

West Bengal HS Class 12 History Suggestion Download WBCHSE HS Class 12th History short question suggestion . HS Class 12 History Bidroho & British Raj Suggestion download HS Class 12th Question Paper History. WB HS Class 12 History suggestion and important question and answer. HS Class 12 Suggestion pdf.পশ্চিমবঙ্গ দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস পরীক্ষার সম্ভাব্য সাজেশন ও শেষ মুহূর্তের বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর ডাউনলোড। দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস পরীক্ষার জন্য সমস্ত রকম গুরুত্বপূর্ণ বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর।

Get the HS Class 12 History Bidroho & British Raj Question and Answer by Bhugol Shiksha .com

HS Class 12 History Bidroho & British Raj Question and Answer prepared by expert subject teachers. WB HS Class 12 History Suggestion with 100% Common in the Examination .

Class Twelve XII History Bidroho & British Raj Suggestion | West Bengal Council of Higher Secondary Education (WBCHSE) HS Class 12 Exam 

HS Class 12 History Bidroho & British Raj Question and Answer, Suggestion Download PDF: West Bengal Council of Higher Secondary Education (WBCHSE) HS Class 12 Twelve XII History Suggestion is provided here. HS Class 12 History Bidroho & British Raj Question and Answer Suggestion Questions Answers PDF Download Link in Free here.

বিদ্রোহ এবং ব্রিটিশরাজ (প্রথম অধ্যায়) দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | HS Class 12 History Bidroho & British Raj Question and Answer 

অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই ” বিদ্রোহ এবং ব্রিটিশরাজ (প্রথম অধ্যায়) দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | HS Class 12 History Bidroho & British Raj Question and Answer ” পােস্টটি পড়ার জন্য। এই ভাবেই Bhugol Shiksha ওয়েবসাইটের পাশে থাকো যেকোনো প্ৰশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলাে করো এবং নিজেকে তথ্য সমৃদ্ধ করে তোলো , ধন্যবাদ।

WhatsApp Channel Follow Now
Telegram Channel Follow Now