একাদশ শ্রেণী রাষ্ট্রবিজ্ঞান - রাষ্ট্র : সংঘা, বৈশিষ্ট্য ও উৎপত্তি (দ্বিতীয় অধ্যায়) প্রশ্ন ও উত্তর | Class 11 Political Science Question and Answer
একাদশ শ্রেণী রাষ্ট্রবিজ্ঞান - রাষ্ট্র : সংঘা, বৈশিষ্ট্য ও উৎপত্তি (দ্বিতীয় অধ্যায়) প্রশ্ন ও উত্তর | Class 11 Political Science Question and Answer

একাদশ শ্রেণী রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রশ্ন ও উত্তর

রাষ্ট্র : সংঘা, বৈশিষ্ট্য ও উৎপত্তি (দ্বিতীয় অধ্যায়) | Class 11 Political Science Rastro Question and Answer

একাদশ শ্রেণী রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রশ্ন ও উত্তর : রাষ্ট্র : সংঘা, বৈশিষ্ট্য ও উৎপত্তি (দ্বিতীয় অধ্যায়) Class 11 Political Science Rastro Question and Answer : একাদশ শ্রেণী রাষ্ট্রবিজ্ঞান – রাষ্ট্র : সংঘা, বৈশিষ্ট্য ও উৎপত্তি (দ্বিতীয় অধ্যায়) প্রশ্ন ও উত্তর | Class 11 Political Science Question and Answer নিচে দেওয়া হলো। এই একাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রশ্ন ও উত্তর – WBCHSE Class 11 Political Science Rastro Question and Answer, Suggestion, Notes – রাষ্ট্র : সংঘা, বৈশিষ্ট্য ও উৎপত্তি (দ্বিতীয় অধ্যায়) থেকে বহুবিকল্পভিত্তিক, সংক্ষিপ্ত, অতিসংক্ষিপ্ত এবং রোচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর (MCQ, Very Short, Short,  Descriptive Question and Answer) গুলি আগামী West Bengal Class 11th Eleven XI Political Science Examination – পশ্চিমবঙ্গ একাদশ শ্রেণী রাষ্ট্রবিজ্ঞান পরীক্ষার জন্য খুব ইম্পর্টেন্ট।

 তোমরা যারা রাষ্ট্র : সংঘা, বৈশিষ্ট্য ও উৎপত্তি (দ্বিতীয় অধ্যায়) – একাদশ শ্রেণী রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রশ্ন ও উত্তর | Class 11 Political Science Rastro Question and Answer Question and Answer খুঁজে চলেছ, তারা নিচে দেওয়া প্রশ্ন ও উত্তর গুলো ভালো করে পড়তে পারো। 

রাষ্ট্র : সংঘা, বৈশিষ্ট্য ও উৎপত্তি (দ্বিতীয় অধ্যায়) – পশ্চিমবঙ্গ একাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রশ্ন ও উত্তর | West Bengal Class 11th Political Science Rastro Question and Answer

অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর | একাদশ শ্রেণী রাষ্ট্রবিজ্ঞান – রাষ্ট্র : সংঘা, বৈশিষ্ট্য ও উৎপত্তি (দ্বিতীয় অধ্যায়) প্রশ্ন ও উত্তর | Class 11 Political Science Rastro SAQ Short Question and Answer : 

  1. প্রাচীন কালের দু’টি নগররাষ্ট্রের নাম লেখো ।

Ans: স্পার্টা ও এথেন্স । 

  1. সিভিটাস কী ? 

Ans: প্রাচীন কালে রোমান দার্শনিকগণ রাষ্ট্র অর্থে সিভিটাস শব্দটি ব্যবহার করেন । 

  1. ‘ The Prince ‘ গ্রন্থটির রচয়িতা কে ?

Ans: গুর নিকলো ম্যাকিয়াভেলি । 

  1. রাষ্ট্রের দু’টি মুখ্য উপাদানের নাম লেখো । 

Ans: নির্দিষ্ট ভূখণ্ড , ও সার্বভৌমিকতা । 

  1. কারা রাষ্ট্রের ভূমিগত সার্বভৌমত্বকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেন ?

Ans: ব্লুন্টলি এবং গেটেল । 

  1. ‘ সার্বভৌমিকতা ’ শব্দের অর্থ কী ? 

Ans: ‘ সার্বভৌমিকতা ‘ শব্দের অর্থ হলো রাষ্ট্রের চরম , চূড়ান্ত , অসীম ও অপ্রতিহত ক্ষমতা । ‘ 

  1. জনগণের সার্বভৌমত্ব ‘ নীতির প্রবক্তা কে ? 

Ans: ‘ জনগণের সার্বভৌমত্ব ‘ নীতির প্রবক্তা হলেন জা জ্যাক রুশো । 

  1. রাষ্ট্রের উৎপত্তি সম্পর্কে সর্বাপেক্ষা প্রাচীন মতবাদ কোনটি ? 

Ans: রাষ্ট্রের উৎপত্তি সম্পর্কে সর্বাপেক্ষা প্রাচীন মতবাদ হলো ঐশ্বরিক মতবাদ । 

  1. “ রাষ্ট্র হলো মানবসমাজের বিরতিহীন ক্রমবিকাশের ফল । ” উক্তিটি কার ? 

Ans: বার্জেস – এর । 

  1. সামাজিক চুক্তি মতবাদের দু’জন প্রবক্তার নাম লেখো । 

Ans: জন লক , জ্যা জ্যাক রুশো । 

  1. বলপ্রয়োগ মতবাদের একজন প্রবক্তার নাম লেখো । 

Ans: বলপ্রয়োগ মতবাদের প্রবক্তা হলেন লিকক । 

  1. সরকার কী ? 

Ans: গার্নারের মতে , রাষ্ট্রের প্রতিনিধি হলো সরকার , যার মাধ্যমে রাষ্ট্র তার ইচ্ছাগুলোকে বাস্তবায়িত করে । 

  1. রাষ্ট্রের দু’টি গৌণ বৈশিষ্ট্য লেখো । 

Ans: স্থায়িত্ব এবং আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি । 

  1. Might is Right ‘ কোন তত্ত্বের সারকথা ? 

Ans: ‘ Might is Right ‘ বলপ্রয়োগ তত্ত্বের সারকথা । 

  1. State শব্দটি কোন শব্দ থেকে এসেছে ? স্টার লাতিন শব্দ স্ট্যাটাস ( Status ) থেকে । 
  2. সেন্ট অগাস্টিনের রাষ্ট্র বিষয়ক গ্রন্থটির নাম কী ? 

Ans: সিটি অব গড ( City of God ) । 

  1. কারা রাষ্ট্রের তিরোধানের / অবদানের তত্ত্বে বিশ্বাসী ? 

Ans: মার্কসবাদীরা রাষ্ট্রের তিরোধানের / অবদানের তত্ত্বে বিশ্বাসী । 

  1. স্টার উত্তর কারা রাষ্ট্রের ক্ষুদ্রত্বকে ‘ পাপের প্রতীক ‘ বলে বর্ণনা করেছেন ? 

Ans: আদর্শবাদী জার্মান দার্শনিকরা রাষ্ট্রের ক্ষুদ্রত্বকে ‘ পাপের প্রতীক ’ বলে বর্ণনা করেছেন । 

  1. হস কোন সার্বভৌমিকতার ধারণার জন্ম দিয়েছিলেন ? 

Ans: হব্‌স আইনগত সার্বভৌমিকতার ধারণার জন্ম দিয়েছিলেন । 

  1. বার্ক কোন মতবাদকে ‘ অরাজকতার সারসংক্ষেপ ‘ বলেছেন ? 

Ans: সামাজিক চুক্তি মতবাদকে বার্ক ‘ অরাজকতার সারসংক্ষেপ ‘ বলেছেন । 

  1. “ Man is born free , but everywhere he is in chains ” – কার উত্তি ? 

Ans: উক্তিটির বক্তা হলেন জা জ্যাক রুশো । 

  1. ভারতের কোন গ্রন্থে ঐশ্বরিক উৎপত্তিবাদের সন্ধান পাওয়া যায় ?

Ans: ‘ মহাভারত ‘ মহাকাব্যের শান্তিপর্বে ঐশ্বরিক উৎপত্তিবাদের সন্ধান পাওয়া যায় ।

  1. মধ্যযুগে কোন আন্দোলনের ফলে পোপের প্রাধান্য হ্রাস পায় ?

Ans: মধ্যযুগে প্রোটেস্টান আন্দোলনের ফলে পোপের প্রাধান্য হ্রাস পায় । 

  1. প্রত্যক্ষ গণতন্ত্রের সমর্থক কে ছিলেন ?

Ans: প্রত্যক্ষ গণতন্ত্রের সমর্থক ছিলেন রুশো । 

  1. সমাজের মূল একক বা আদিস্তর কোনটি ?

Ans: সমাজের মূল একক বা আদিস্তর হলো পরিবার । 

  1. ডেভিড ইস্টনের দেওয়া তথ্যানুযায়ী রাষ্ট্রের কতগুলি সংজ্ঞা আছে ? 

Ans: 145 টি সংজ্ঞা আছে । 

  1. সিকিম বা বিহার রাষ্ট্র নয় কেন ? 

Ans: কারণ এদের সার্বভৌমিকতা নেই । 

  1. আচরণবাদীরা রাষ্ট্রকে ‘ রাষ্ট্র ‘ – এর বদলে কী বলতে চান ?

Ans: টাকা আচরণবাদীরা রাষ্ট্রকে ‘ রাষ্ট্র ‘ – এর বদলে ‘ রাজনৈতিক ব্যবস্থা ‘ বলতে চান । 

  1. রাষ্ট্রগঠনের মূল উপাদান কয়টি ? 

Ans: পাঁচটি । 

  1. কত সালে লেভিয়াথান গ্রন্থটি রচিত হয় ?

Ans: 1651 সালে । 

  1. ‘ সোশ্যাল কন্ট্রাক্ট ‘ গ্রন্থটির রচয়িতা কে ?

Ans: রুশো । 

  1. প্রাকৃতিক অবস্থাকে কে মর্ত্যের স্বর্গ বলেন ?

Ans: রুশো । 

  1. টু ট্রিটিজেস অন সিভিল গভর্নমেন্ট ‘ গ্রন্থের রচয়িতা কে ?

Ans: লক । 

  1. কাকে কৃত্রিম প্রতিষ্ঠান বলা হয় ? 

Ans: রাষ্ট্রকে ।

  1. “ চুক্তিবাদ ন্যায় ও স্বাধীনতা এই দু’টি গণতান্ত্রিক আদর্শের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছে ” —উক্তিটির প্রবক্তা কে ? 

Ans: বার্কার । 

  1. ” Society is federal by nature ” – উত্তিটি কার ?

Ans: ল্যাস্কি – এর উক্তি । 

  1. “ আমিই রাষ্ট্র ” —কে বলেছেন ? 

Ans: সম্রাট চতুর্দশ লুই । 

  1. প্রথম জেমস কোন বংশের রাজা ছিলেন ? Ans: ইংল্যান্ডের স্টুয়ার্ট বংশের । 
  2. “ অপর যে বৈশিষ্ট্যটি রাষ্ট্রের ওপর আরোপ করা হয় তা হলো স্থায়িত্ব ” —উক্তিটি কে করেন ?

Ans: গার্নার । 

  1. “ সরকার হলো রাষ্ট্রের একটি সংস্থা বা যন্ত্র ” —উক্তিটি কে করেন ? 

Ans: ভতর গেটেল । 

  1. গৌরবময় বিপ্লব সংগঠিত হয়েছিল কোথায় ? 

Ans: ইংল্যান্ডে । 

  1. “ রাজারা হলেন পৃথিবীতে ঈশ্বরের মানবীয় প্রতিবিম্ব ” —কে এই দাবি করেন ? 

Ans: প্রথম জেমস । 

  1. রাষ্ট্রের আদর্শবাদী সংজ্ঞা কে দিয়েছেন ?

Ans: কান্ট । 

  1. রাষ্ট্রের উৎপত্তি সমাজের উৎপত্তির আগে না পরে ?

Ans: পরে । 

  1. বলপ্রয়োগ মতবাদের প্রবক্তা ( প্রথম ) কে ছিলেন ? 

Ans: হেরোক্লিটাস । 

  1. ফরাসি বিপ্লবের সমসাময়িক একজন রাষ্ট্রবিজ্ঞানীর নাম লেখো ।

Ans: রুশো । 

রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর | একাদশ শ্রেণী রাষ্ট্রবিজ্ঞান – রাষ্ট্র : সংঘা, বৈশিষ্ট্য ও উৎপত্তি (দ্বিতীয় অধ্যায়) প্রশ্ন ও উত্তর | Class 11 Political Science Rastro Broad Question and Answer : 

  1. রাষ্ট্র ও সরকারের মধ্যে পার্থক্যগুলি উল্লেখ করো । 

Ans: রাষ্ট্র ও সরকারের পার্থক্য : সুদূর অতীতে একসময় রাষ্ট্র ও সরকারকে সমার্থক ভাবা হতো । সপ্তদশ শতাব্দীতে ফরাসি সম্রাট চতুর্দশ লুই বলেছিলেন “ আমিই রাষ্ট্র । ” হব্স – এর ‘ লেভিয়াথান ’ গ্রন্থেও রাষ্ট্র ও সরকারের মধ্যে কোনো ধরনের পার্থক্য স্বীকার করা হয়নি । কিন্তু রাষ্ট্র ও সরকারের মধ্যে কয়েকটি মৌলিক পার্থক্য রয়েছে । সেগুলি হলো— 

প্রকৃতিগত পার্থক্য : রাষ্ট্র একটি তত্ত্বগত ধারণা । রাষ্ট্রকে চোখে দেখা যায় না । রাষ্ট্রের রূপ বিমূর্ত । অন্যদিকে সরকার হলো রাষ্ট্রের বাস্তব রূপ । তাই রাষ্ট্র বলতে অনেকে সরকারকে বুঝে থাকেন । কিন্তু সরকার হলো রাষ্ট্রীয় ধ্যানধারণার বাস্তব চেহারামাত্র । 

আদর্শগত পার্থক্য : রাষ্ট্রের আদর্শকে বাস্তবায়িত করে সরকার । উইলোবির মতে , সরকার হলো এমন এক প্রতিষ্ঠান যার মাধ্যমে রাষ্ট্র তার ইচ্ছাকে কার্যকরী করে । এজন্য সরকারের কোনো কাজকর্ম সঠিকভাবে না হলে জনগণ তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে পারে , গড়ে তুলতে পারে সম্মিলিত প্রতিরোধ । প্রসঙ্গত বলা যায় , সরকারের প্রতি বিরোধিতা মানেই রাষ্ট্রদ্রোহিতা নয় । সরকারবিরোধী ও রাষ্ট্রবিরোধী কথা দু’টি সম্পূর্ণ ভিন্ন অর্থ বহন করে । 

সদস্যসংখ্যাগত পার্থক্য : রাষ্ট্রের একটি নির্দিষ্ট ভূখণ্ড রয়েছে । সেই ভূখণ্ডের সমস্ত অধিবাসী রাষ্ট্রের সদস্য । অন্যদিকে সরকার হলো সমগ্র রাষ্ট্রের জনগণের একটি ক্ষুদ্র অংশ নিয়ে গঠিত প্রতিনিধিত্বমূলক প্রতিষ্ঠান । যেমন — আমাদের দেশের সমস্ত নাগরিককে নিয়ে ভারত রাষ্ট্র গঠিত । অন্যদিকে মুষ্টিমেয় নাগরিককে নিয়ে ভারত সরকার গঠিত হয় । 

গঠনগত পার্থক্য : রাষ্ট্র ও সরকারের মধ্যে গঠনগত দিক থেকে একটি মৌলিক পার্থক্য রয়েছে । গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে জনগণ ভোটাধিকার প্রয়োগ করে সরকার গঠন করে , কিন্তু এইভাবে ভোটাধিকারের মাধ্যমে রাষ্ট্র গঠন করা যায় না । 

স্থায়িত্ব সংক্রান্ত পার্থক্য : স্থায়িত্বের প্রশ্নে রাষ্ট্র ও সরকারের মধ্যে বিশেষ পার্থক্য রয়েছে । সরকার ক্ষণস্থায়ী । আজ যে সরকার ক্ষমতায় আছে কাল সেই সরকার ক্ষমতায় নাও থাকতে পারে । কিন্তু রাষ্ট্র চিরস্থায়ী । তার একটা সুষ্ঠু ধারাবাহিকতা আছে । 

বৈশিষ্ট্যগত পার্থক্য : রাষ্ট্র ও সরকারের মধ্যে বৈশিষ্ট্যগত দিক থেকেও পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়েছে । রষ্ট্রের অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য চারটি । যথা — জনসমষ্টি , নির্দিষ্ট ভূখণ্ড , সরকার ও সার্বভৌমত্ব । ছোটো – বড়ো নির্বিশেষে সব রাষ্ট্রের ক্ষেত্রেই এগুলি বর্তমান । অন্যদিকে সরকারের ক্ষেত্রে এমন কোনো অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য নেই । বিভিন্ন রাষ্ট্রে সরকারের বৈশিষ্ট্য বিভিন্ন কোথাও গণতান্ত্রিক সরকার , কোথাও একনায়কতন্ত্রী ৷ কোথাও ফ্যাসিবাদী , আবার কোথাও বা সমাজতন্ত্রী সরকার । আবার সরকারের কাঠামো কোথাও এককেন্দ্রিক , কোথাও যুক্তরাষ্ট্রীয় কোথাও রাষ্ট্রপতি শাসিত অথবা সংসদীয় প্রকৃতির হতে পারে । 

সার্বভৌম ক্ষমতা সংক্রান্ত পার্থক্য : সার্বভৌম ক্ষমতার প্রকৃত অধিকারী হলো রাষ্ট্র , সরকার নয় । রাষ্ট্রের প্রতিনিধি স্বরূপ সরকার এই রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ভোগ ও প্রয়োগ করে মাত্র । : © অস্তিত্ব সংক্রান্ত পার্থক্য অধ্যাপক গার্নার জীবদেহের সঙ্গে রাষ্ট্রের তুলনা করে বলেছেন , সরকার হলো রাষ্ট্রের মস্তিষ্কস্বরূপ । জীবদেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হলে মস্তিষ্কের । যেমন কোনো গুরুত্ব থাকে না । তেমনি রাষ্ট্র থেকে বিচ্ছিন্ন হলে সরকারেরও কোনো অস্তিত্ব থাকে না । 

প্রতিষ্ঠান ও পরিচালকগত পার্থক্য : অনেক রাষ্ট্রবিজ্ঞানী রাষ্ট্রকে একটি যৌথ মূলধনি কারবারের সঙ্গে তুলনা করেছেন , যার পরিচালক হলো সরকার । কাজেই পরিচালকমণ্ডলী যেমন একটি যৌথ কারবারের অংশমাত্র তেমন সরকারও রাষ্ট্রের একটি অংশমাত্র । এদিক থেকে দেখলে সরকার কখনো রাষ্ট্রের সমার্থক হতে পারে না । উপসংহার উপরের আলোচনা থেকে এ বিষয়টি সুস্পষ্ট যে , রাষ্ট্র ও সরকার কখনোই এক নয় । রাষ্ট্র ও সরকারের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য বিদ্যমান । বস্তুত রাষ্ট্র হলো একটি তত্ত্বগত ধারণা । রাষ্ট্রের তত্ত্বগত ধারণার বাস্তব প্রতিনিধি হলো সরকার । 

  1. রাষ্ট্রের উৎপত্তি সংক্রান্ত ঐশ্বরিক মতবাদটি বিশ্লেষণ করো ।

Ans: মূলবক্তব্য : রাষ্ট্রের উৎপত্তি সংক্রান্ত যেসব কাল্পনিক মতবাদ প্রচলিত রয়েছে তার মধ্যে প্রাচীনতম হলো ঐশ্বরিক উৎপত্তিবাদ । সেন্ট অগাস্টাইন , সেন্ট পল রবার্ট ফিলমার হলেন এই মতবাদের প্রচারক । এই মতবাদের মূলবক্তব্য হলো— 

1) ঈশ্বর নিজে রাষ্ট্র সৃষ্টি করেছেন । ঈশ্বরের ইচ্ছা অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালিত হয় । 

2) পৃথিবীতে ঈশ্বরের মনোনীত প্রতিনিধি হলেন রাজা , ঈশ্বরের যাবতীয় ইচ্ছা – অনিচ্ছা রাজার মাধ্যমে কার্যকরী হয় । 

3) রাজার আদেশ যা আইন রূপে পরিচিত তা আসলে ঈশ্বরের আদেশমাত্র । কাজেই রাজার আদেশ অমান্য করার অর্থ হলো ঈশ্বরের আদেশ অমান্য করা । 

4) রাজা যেহেতু ঈশ্বরের নির্দেশ ছাড়া অন্য কারও নির্দেশে কাজ করেন না , তাই রাজা কোনোরকম অন্যায় করতে পারেন না । 

5) রাজা তার যাবতীয় কাজকর্মের জন্য শুধুমাত্র ঈশ্বরের কাছে দায়বদ্ধ থাকেন । রাজার কাজকর্মের জন্য জনগণ কোনোভাবেই কৈফিয়ত চাইতে পারেন না। 

6) রাজা যেমন ঈশ্বরের অধীন প্রজারাও তেমনি রাজার অধীন । 

7) সেন্ট পল – এর মতে , রাজার প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন হলো ঈশ্বর কর্তৃক আরোপিত কর্তব্য । 

8) রাজা উত্তরাধিকার সূত্রে রাজপদে আসীন হন — এই বিধানটিও ঈশ্বর কর্তৃক সৃষ্ট । এইভাবে ঐশ্বরিক উৎপত্তিবাদ রাজতন্ত্রকে ঈশ্বর সৃষ্ট একমাত্র সুশাসন হিসাবে উত্থাপন করেছে । 

চরম রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা : ইউরোপে মধ্যযুগে ষোড়শ শতাব্দীতে ও সপ্তদশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে ধর্মগুরু পোপ ও রাজার মধ্যে ঈশ্বরের প্রতিনিধিত্বের প্রশ্নে প্রবল বিরোধিতার সূত্রপাত ঘটে । পোপ নিজেকে ঈশ্বরের প্রতিনিধি রূপে পরিচয় দিয়ে জনগণের অখণ্ড আনুগত্য দাবি করেন । সেন্ট টমাস অ্যাকুইনাস রাষ্ট্রের পরিবর্তে চার্চকে সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ বলে মনে করেছেন । মধ্যযুগের শেষ পর্বে প্রোটেস্টান্ট আন্দোলনের ফলে পোপের প্রাধান্য খর্ব হয় । মার্টিন লুথার , ক্যালভিন প্রমুখ প্রোটেস্টান্ট নেতৃবৃন্দ রাজাকে ঈশ্বরের একমাত্র প্রতিনিধি হিসাবে তুলে ধরে জোরালো আন্দোলন করেন । ইংল্যান্ডের রাজা প্রথম জেম্‌স ষোড়শ শতাব্দীর শেষদিকে রাজার অধীন রাষ্ট্রকে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ স্থান হিসাবে ঘোষণা করেন । তাঁর মতে , পৃথিবীতে ঈশ্বরের জীবন্ত প্রতিমূর্তি হলেন রাজা । এইভাবে ঐশ্বরিক উৎপত্তিবাদও চরম রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করে । ষোড়শ শতাব্দীর পরবর্তীকালের পরিবর্তিত পরিস্থিতি ঐশ্বরিক উৎপত্তিবাদের অবসানের পথ প্রশস্ত করে । এক্ষেত্রে যেসব ঘটনা ঐশ্বরিক উৎপত্তিবাদের অনুকূল সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবেশের পরিবর্তন ঘটায় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ইউরোপের ধর্মসংস্কার আন্দোলন , ইউরোপের নবজাগরণ , সামাজিক চুক্তিবাদের প্রসার এবং সর্বোপরি ইংল্যান্ডের গৌরবময় বিপ্লব ( 1688 ) 

সমালোচনা : রাষ্ট্রের উৎপত্তি সম্পর্কে ঐশ্বরিক উৎপত্তিবাদের ব্যাখ্যাকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে সমালোচনা করা হয় ৷ 

অবাস্তব : সমালোচকদের মতে , ঐশ্বরিক কোনো শক্তির দ্বারা রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়েছে — এই ধারণা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন । রাষ্ট্রের উৎপত্তি সংক্রান্ত বাস্তবভিত্তিক যুক্তিগ্রাহ্য ধারণা এই মতবাদে উপেক্ষিত । রাষ্ট্রের মতো একটি মানবীয় প্রতিষ্ঠান কীভাবে ঈশ্বর কর্তৃক সৃষ্ট হতে পারে তার কোনো যুক্তিগ্রাহ্য ব্যাখ্যা ঐশ্বরিক উৎপত্তিবাদ দিতে পারেনি । 

অনৈতিহাসিক : রাষ্ট্র ঈশ্বর কর্তৃক সৃষ্ট এবং রাষ্ট্রের কর্ণধার রাজা হলেন ঈশ্বরের প্রতিনিধি । ঐশ্বরিক উৎপত্তিবাদের এই মূলবক্তব্যের সমর্থন ইতিহাসে কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি । সুতরাং ঈশ্বরের ইচ্ছার ফলে রাষ্ট্রের উদ্ভব ঘটেছে এরকম ধারণা পুরোপুরি অনৈতিহাসিক । 

অযৌক্তিক : সমালোচকদের মতে , ঈশ্বর করুণাময় , মানুষের কল্যাণে তিনি সদাজাগ্রত । তাই তাঁর প্রতিনিধি রাজা সর্বদা প্রজাদের কল্যাণে নিয়োজিত থাকবেন — এটা ধরে নেওয়া যেতে পারে । বাস্তবে কিন্তু বহু অত্যাচারী ও প্রজানিপীড়নকারী রাজার পরিচয় পাওয়া যায় । তাই এই মতবাদ অযৌক্তিক । 

অসম্পূর্ণ : শুধুমাত্র রাজতন্ত্রের ক্ষেত্রেই এই মতবাদ প্রযোজ্য ; গণতন্ত্র , সমাজতন্ত্র বা অন্য কোনো ব্যবস্থার উৎপত্তি প্রসঙ্গে এই মতবাদের আলোচনা গ্রহণযোগ্য নয় । তাই এই মতবাদ অসম্পূর্ণ । 

অগণতান্ত্রিক ও স্বৈরাচারী : রাজা যেহেতু ঈশ্বরের একমাত্র প্রতিনিধি তাই রাজার আদেশ সমস্ত সমালোচনার ঊর্ধ্বে । এই ধরনের যুক্তি স্বৈরাচারের জন্ম দেয় । তাছাড়া এই মতবাদে রাজাকে তাঁর কাজকর্মের জন্য শুধুমাত্র ঈশ্বরের কাছে দায়বদ্ধ থাকতে বলা হয়েছে । তিনি আর কারও কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য নন । এই মতবাদ রাজাকে আইনের ঊর্ধ্বে স্থাপন করে অগণতান্ত্রিকতা ও স্বৈরাচারিতাকে প্রশ্রয় দিয়েছে । 

রক্ষণশীল : ঐশ্বরিক উৎপত্তিবাদ একটি রক্ষণশীল মতবাদ । রাজা যদি অন্যায় আচরণ করেন সেক্ষেত্রে প্রজাদের কোনো বিরোধিতার অধিকার এই মতবাদে স্বীকার করা হয়নি । 

নাস্তিকদের আনুগত্যহীনতা : যারা ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাসী তারা রাষ্ট্রকে ঈশ্বর সৃষ্ট প্রতিষ্ঠান এবং রাজাকে ঈশ্বরের প্রতিনিধি হিসাবে মেনে নিয়ে রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য দেখাতে পারে । কিন্তু যারা নাস্তিক তারা ঐশ্বরিক প্রতিষ্ঠান স্বরূপ রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য দেখাবে না । ফলে জনগণের এক অংশ রাষ্ট্রের আনুগত্য না দেখালে রাষ্ট্রের ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়বে । 

উপসংহার : অধ্যাপক গেটেলের মতে , ঐশ্বরিক উৎপত্তিবাদের উপরিউক্ত কঠোর সমালোচনা সত্ত্বেও তত্ত্বটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব কোনোভাবেই অস্বীকার করা যায় না । 

  1. রাষ্ট্রের উদ্ভব সংক্রান্ত সামাজিক চুক্তি মতবাদ ব্যাখ্যা করো । 

Ans: রাষ্ট্রের উৎপত্তি সংক্রান্ত প্রচলিত কাল্পনিক মতবাদগুলির মধ্যে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ও আলোচিত মতবাদ হলো সামাজিক চুক্তি মতবাদ । এই মতবাদ রাষ্ট্র সৃষ্টির পেছনে মানুষের সচেতন প্রয়াসকে গুরুত্ব দিয়েছে । এই মতবাদ শাসক – শাসিতের সম্পর্ক এবং রাষ্ট্রের প্রকৃতি সম্পর্কে আলোকপাত করেছে । 

মূলবক্তব্য : সুদূর অতীতে মানবসমাজে রাষ্ট্র ও সরকারের কোনো অস্তিত্ব ছিল না । সেইসময় মানুষের মধ্যে কোনো রাজনৈতিক চেতনার সৃষ্টি হয়নি । রাষ্ট্রহীন সেই অবস্থাকে প্রাকৃতিক অবস্থা বা State of Nature বলে অভিহিত করা হয় । চুক্তিবাদী রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মধ্যে কয়েক জনের মতে , প্রাকৃতিক অবস্থায় সমাজের সৃষ্টি হয়নি । এই অবস্থা ছিল প্রাক্‌সামাজিক বা Pre – social . চুক্তিবাদী রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের অন্য একদল মনে করেন , এই অবস্থায় সমাজের অস্তিত্ব থাকলেও রাষ্ট্রের কোনো অস্তিত্ব ছিল না । একে তাঁরা প্রাক্রাষ্ট্রীয় বা Pre – state বলে অ্যাখ্যায়িত করেন । যাই হোক , এই প্রাকৃতিক অবস্থায় মানুষের জীবনযাপন প্রাকৃতিক আইন দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত হতো । ক্রমশ প্রাকৃতিক অবস্থায় মানুষের জীবন দুর্বিষহ এবং অসহনীয় হয়ে ওঠে । এই অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়ার লক্ষ্যে আদিম মানুষ স্বেচ্ছায় পারস্পরিক চুক্তির মাধ্যমে গড়ে তোলে রাষ্ট্র । 

  চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্র সৃষ্টির ধারণা নতুন নয় । মহাভারতের শান্তিপর্বে , কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে সোফিস্টদের বক্তব্যে , বাইবেলের ওল্ডটেস্টামেন্টে সামাজিক চুক্তিবাদের উল্লেখ পাওয়া যায় । তবে মূলত যে তিন জন রাষ্ট্র দার্শনিক এই মতবাদকে সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করেন তাঁরা হলেন সপ্তদশ শতাব্দীর ইংরেজ রাষ্ট্রচিন্তাবিদ টমাস হস ও জন লক এবং অষ্টাদশ শতাব্দীর ফরাসি চিন্তাবিদ জা জ্যাক রুশো । চুক্তি মতবাদী | রাষ্ট্রচিন্তাবিদ হিসাবেই এঁরা সমধিক পরিচিত ।

টমাস হব্‌সের মতবাদ : 1651 সালে ইংরেজ দার্শনিক টমাস হব্‌স তাঁর ‘ লেভিয়াথান ’ গ্রন্থে এই অভিমত ব্যক্ত করেন যে , প্রাকৃতিক অবস্থায় মানুষ ছিল নিঃসঙ্গ , দরিদ্র , ঘৃণ্য , পাশবিক ও ক্ষণস্থায়ী । এই অরাজক অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আদিম মানুষ নিজেদের মধ্যে চুক্তি করে সমস্ত ক্ষমতা নিঃশর্তভাবে কোনো এক জন ব্যক্তি বা কয়েকজন ব্যক্তির হাতে অর্পণ করে । হসনের মতে , পূর্ণ ক্ষমতাপ্রাপ্ত এই ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ হলেন সার্বভৌম শক্তির আধার । সার্বভৌম কর্তৃপক্ষ হলো জনগণের স্বাধীনতার সৃষ্টিকর্তা ও সংরক্ষক । এই কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার কোনো অধিকার জনগণের নেই । হব্স এর এই বক্তব্যে চরম রাজতন্ত্রের পদধ্বনি শুনতে পাওয়া যায় ৷ 

জন লকের মতবাদ : 1690 সালে প্রকাশিত ‘ টুট্রিটিজেস অন সিভিল গভর্নমেন্ট ’ গ্রন্থে ব্রিটিশ চিন্তাবিদ জন লক এই মতবাদ ব্যক্ত করেন যে , প্রাক্রাষ্ট্রনৈতিক অবস্থায় প্রাকৃতিক নিয়মের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত জীবনে জনগণ কিছু অধিকার ভোগ করত । জীবন , সম্পত্তি ও স্বাধীনতার এইসব অধিকারকে লক প্রাকৃতিক অধিকার বা Natural Rights বলে অ্যাখ্যায়িত করেছেন । তাঁর মতে , জনগণ এইসমস্ত অধিকার সুষ্ঠুভাবে ভোগ করতে পারত না বলে চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্র সৃষ্টি করে । লকের মতে , দু’টি চুক্তি সম্পাদিত হয়েছিল । প্রথমটি জনগণের নিজেদের মধ্যে আর দ্বিতীয়টি রাজার সঙ্গে জনগণের । 

রুশোর মতবাদ : 1762 সালে ফরাসি দার্শনিক জ্যা জ্যাক রুশো ‘ সোশ্যাল কনট্যাক্ট ‘ নামক গ্রন্থে তার মৌলিক তত্ত্বের অবতারণা করে এই অভিমত ব্যক্ত করেন যে , মানুষ স্বাধীন হয়ে জন্মায় , কিন্তু সর্বত্র সে শৃঙ্খলাবদ্ধ । তাঁর মতে , মানুষের প্রাকৃাষ্ট্রীয় জীবন ছিল সুখী , সরল ও আনন্দময় । কিন্তু জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও ব্যক্তিগত সম্পত্তির উদ্ভবের ফলে যে সমস্যার সৃষ্টি হয় তাতে মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে । এই অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য সামাজিক চুক্তির মাধ্যমে মানুষ রাষ্ট্রব্যবস্থার সৃষ্টি করে সুসংবদ্ধ সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুলল । রুশের মতে , কোনো ব্যক্তি বা ব্যক্তিসংসদের সঙ্গে মানুষ সামাজিক চুক্তি করেনি । জনগণ নিজেদের মধ্যে এই চুক্তি সম্পাদন করে সার্বভৌম ক্ষমতা ‘ সাধারণ ইচ্ছার ’ হাতে তুলে দেয় । রুশো এইভাবেই জনগণের সার্বভৌমিকতার তত্ত্ব উপস্থাপন করেন । 

সমালোচনা : রাষ্ট্রের উৎপত্তির পটভূমি পর্যালোচনায় সামাজিক চুক্তি মতবাদের মৌলিক অবদান থাকা সত্ত্বেও মতবাদটি নানা কারণে সমালোচিত হয়েছে । যেমন— 

অনৈতিহাসিক : সামাজিক চুক্তি মতবাদের বিরুদ্ধে মুখ্য অভিযোগ হলো চুক্তির দ্বারা রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়েছে – এই ধারণা সম্পূর্ণ অনৈতিহাসিক । ইংরেজ দার্শনিক হিউমের মতে , মানবসভ্যতার তাবৎ ইতিহাস খুঁজে বেড়ালেও এই ধরনের কোনো চুক্তির সন্ধান পাওয়া যায় না । 

যুক্তিহীন : সমালোচকদের মতে , রাষ্ট্রীয় আইন হলো সামাজিক চুক্তির ভিত্তি । রাষ্ট্রীয় আইন ছাড়া কোনো চুক্তি সম্পাদন বৈধ হতে পারে না । প্রকৃতির রাজ্যে প্রাক্রাস্ট্রীয় অবস্থায় এধরনের চুক্তি সম্পাদনের তত্ত্ব তাই আদৌ যুক্তিসংগত নয় । 

স্ববিরোধী : সমালোচকদের মতে , আইন ছাড়া কোনো ধরনের অধিকার বা স্বাধীনতার কথা কল্পনা করা যায় না । আদিম সমাজে আইনের কোনো অস্তিত্ব ছিল না , অথচ সেখানে অধিকার ও স্বাধীনতা ছিল । এই ধরনের বক্তব্য মেনে নেওয়া যায় না । 

অংশীদারি কারবারের স্বীকৃতি : অধ্যাপক গেটেল – এর মতে , সামাজিক চুক্তি মতবাদ রাষ্ট্রকে অংশীদারি কারবারের পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত করেছে । কিন্তু রাষ্ট্রের সাথে নাগরিকদের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড় ও অচ্ছেদ্য বন্ধনে আবদ্ধ । এই সম্পর্ক কোনো মতেই অংশীদারি কারবারের সমপর্যায়ের হতে পারে না । 

ইতিহাসের বিকৃত ব্যাখ্যা প্রদানকারী : সামাজিক চুক্তি মতবাদ অনুযায়ী প্রাক্রাষ্ট্রীয় অবস্থায় ব্যক্তি চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্রের সৃষ্টি করেছিল এই দৃষ্টিভঙ্গি ইতিহাসকে বিকৃত করেছে । 

অন্যান্য উপাদান উপেক্ষিত : সামাজিক চুক্তি মতবাদ রাষ্ট্রের ভিত্তি হিসাবে চুক্তির ওপর গুরুত্ব দিয়ে রাষ্ট্র সৃষ্টির অন্যান্য উপাদানকে উপেক্ষা করেছে । রাষ্ট্রের উপাদান হিসাবে বলপ্রয়োগ , ধর্ম , রক্তের সম্পর্ক ইত্যাদির কোনো গুরুত্ব এখানে স্বীকার করা হয়নি । 

অবৈজ্ঞানিক : সমালোচকদের মতে , দু’টি পক্ষের উপস্থিতি ছাড়া কোনো চুক্তি সম্পাদিত হতে পারে না । কিন্তু সামাজিক চুক্তি মতবাদে আদিম অবস্থায় শুধুমাত্র একটি পক্ষের উপস্থিতিকে দেখানো হয়েছে । সুতরাং একটি পক্ষের উপস্থিতিতে চুক্তি | সম্পাদনের সম্ভাবনা আদৌ থাকতে পারে না । 

উপসংহার : উপরিউক্ত বিচ্যুতিগুলি সত্ত্বেও সামাজিক চুক্তি মতবাদের তাৎপর্যকে কোনোভাবেই অস্বীকার করা যায় না । বার্কার – এর মতে , সামাজিক চুক্তি মতবাদ ‘ ন্যায় ’ ও ‘ স্বাধীনতার মহান গণতান্ত্রিক আদর্শ প্রচার করে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে সুদৃঢ় করেছে । রাষ্ট্রের ভিত্তি হলো জনসাধারণের সম্মতি , বলপ্রয়োগ নয় — এই সত্য সামাজিক চুক্তি মতবাদে উন্মোচিত হয় । রাষ্ট্র যে একটি মানবীয় প্রতিষ্ঠান এই সত্যের স্বীকৃতি দিয়ে সামাজিক চুক্তি মতবাদ জনগণের সার্বভৌমিকতার ধারণা উপস্থাপন করে । ইংল্যান্ডের গৌরবময় বিপ্লব , আমেরিকার স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং ফরাসি বিপ্লবের ওপর এই মতবাদের প্রভাব সুস্পষ্ট । সুতরাং রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসে সামাজিক চুক্তিবাদ যে বিশেষ একটা স্থান করে নিয়েছে সেই বিষয়ে কোনো সংশয় নেই । 

  1. রাষ্ট্র ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করো । 

Ans: কোনো বিশেষ একটি বা কয়েকটি উদ্দেশ্যসাধনের জন্য কিছু সংখ্যক ব্যক্তি সংঘবদ্ধ হলে তাকে সংঘ বলা হয় । কিন্তু রাষ্ট্র হলো একটি বৃহৎ প্রতিষ্ঠান । এই প্রতিষ্ঠানের অন্তর্ভুক্ত যেমন রাজনৈতিক সংঘ , ঠিক তেমনই সমাজের মধ্যে অর্থনৈতিক সামাজিক , সাংস্কৃতিক , ধর্মীয় প্রভৃতি সংঘ রয়েছে । রাষ্ট্র এবং অন্যান্য সংঘ বা সামাজিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে যেসকল পার্থক্য পরিলক্ষিত হয় সেগুলি নিম্নে আলোচিত হলো ৷ 

উৎপত্তিগত পার্থক্য : মানবসমাজের ঐতিহাসিক ক্রমবিবর্তনের একটি বিশেষ স্তরে রাষ্ট্রের উদ্ভব হয়েছে । কিন্তু অন্যান্য সামাজিক সংগঠনের সৃষ্টি হয়েছে মানুষের স্বেচ্ছামূলক পরিকল্পনা ও প্রচেষ্টার মাধ্যমে । 

সদস্যগত পার্থক্য : রাষ্ট্রের সদস্য হওয়া বাধ্যতামূলক কিন্তু কোনো প্রতিষ্ঠানের সদস্যপদ বাধ্যতামূলক নয় । অ্যারিস্টটল বলেছিলেন , “ কোনো ব্যক্তি যদি কোনো রাষ্ট্রের সদস্য না হয় , তাহলে ধরে নিতে হবে যে সে মানুষ নয় , সে পশু কিংবা দেবতা । ” 

প্রতিষ্ঠানগত পার্থক্য : রাষ্ট্রের উৎপত্তি হয়েছে বিবর্তনের মাধ্যমে । অর্থাৎ হঠাৎ করে একদিনে হয়নি । কিন্তু অন্যান্য সামাজিক প্রতিষ্ঠান মানুষের ইচ্ছাকৃত সৃষ্টি , তাই একে বলা হয় ‘ কৃত্রিম প্রতিষ্ঠান , কিন্তু রাষ্ট্র হলো স্বাভাবিক প্রতিষ্ঠান । 

বলপ্রয়োগের ক্ষমতাগত পার্থক্য : রাষ্ট্রের হাতে আছে শক্তি প্রয়োগের ক্ষমতা । এই ক্ষমতাবলে রাষ্ট্র যেকোনো নাগরিককে কারারুদ্ধ করতে পারে , প্রাণদণ্ড দিতে পারে । প্রতিষ্ঠানগুলির এই ক্ষমতা নেই । 

উদ্দেশ্যগত ক্ষমতার পার্থক্য : রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য ব্যাপক , সামাজিক প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য ব্যাপক নয় । একজন ব্যক্তি একইসঙ্গে একাধিক সামাজিক প্রতিষ্ঠানের সদস্য হতে পারে । কিন্তু একজন ব্যক্তি একাধারে অনেক রাষ্ট্রের সদস্য হতে পারে না । 

সার্বভৌমত্বের পার্থক্য : রাষ্ট্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো তার সার্বভৌমত্ব । রাষ্ট্র কখনো কারও নিয়ন্ত্রণাধীন নয় , কিন্তু সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলি নিয়ন্ত্রণের আওতায় পড়ে । রাষ্ট্র নিজেই নতুন সংগঠন সৃষ্টি ও নিয়ন্ত্রণ করতে পারে । 

উপসংহার : সবশেষে উল্লেখ করা যেতে পারে , রাষ্ট্রের যেমন গুরুত্ব আছে , তেমনি অন্য সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলিরও গুরুত্ব রয়েছে । আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মতে , এখনকার সমাজ বহুত্ববাদী । এর অর্থ এই যে , রাষ্ট্রের ওপর অত্যধিক নির্ভর না করে সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলি মানুষের চাহিদা পূরণ করে । এভাবে সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলির সাহায্যে মানুষ গুণগত উৎকর্ষ লাভ করে । এই কথা মনে রাখলে রাষ্ট্রের পাশাপাশি অন্যান্য সামাজিক প্রতিষ্ঠানকেও বিশেষ মর্যাদার আসন দিতে হয় । আমাদের মতে , উভয়ের অবদান মানবজীবনে অপরিহার্য । আমরা অধ্যাপক ল্যাস্কির সঙ্গে একমত , “ Society is federal by Nature . 

  1. ” রাষ্ট্রের উৎপত্তি সংক্রান্ত বলপ্রয়োগ মতবাদ আলোচনা করো । 

Ans: রাষ্ট্রের উৎপত্তি সংক্রান্ত কল্পনাপ্রসূত মতবাদগুলির মধ্যে অন্যতম হলো বলপ্রয়োগ মতবাদ । এই মতবাদের মূলবক্তব্য হলো রাষ্ট্র সৃষ্টি হয়েছে শুধুমাত্র বলপ্রয়োগের ভিত্তিতে । পশুবল বা বাহুবল হলো রাষ্ট্রের মূলভিত্তি । প্রকৃতিগতভাবে সামাজিক জীব হিসাবে মানুষ কলহপ্রিয় ও ক্ষমতালোভী । ম্যাকিয়াভেলির মতে , মানুষ সম্বন্ধে সাধারণ ধারণা হলো , তারা অকৃতজ্ঞ , অস্থির , মিথ্যুক , ভীরু ও ক্ষমতালোভী ।

  তাই অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে শান্তি – শৃঙ্খলা রক্ষা করার জন্য এবং বৈদেশিক আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য রাষ্ট্রকে সর্বদা পুলিশ ও সামরিক বাহিনী প্রস্তুত রাখতে হয় । কাজেই বলপ্রয়োগ মতবাদ অনুযায়ী রাষ্ট্রের অস্তিত্বের স্বার্থে শক্তি বা বলপ্রয়োগ অপরিহার্য । গ্রিক দার্শনিক হেরাক্লিটাস ছিলেন বলপ্রয়োগ মতবাদরে প্রথম প্রবক্তা । এই মতবাদের অন্য প্রবক্তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন — ম্যাকিয়াভেলি , হার্বার্ট স্পেনসার , ডেভিড হিউম , ট্রিকে , লিকক , ওপেন হাইমার , জেঙ্কস প্রমুখ । 

রাষ্ট্রের সৃষ্টি : মানবসভ্যতার ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় , অতীতে মানবসমাজ ছিল বহু ক্ষুদ্র গোষ্ঠী , দল ও উপজাতিতে বিভক্ত । প্রথম অবস্থায় কোনো শক্তিশালী ব্যক্তি দুর্বল ব্যক্তি বা দলের ওপর পাশবিক বলের সাহায্যে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে গোষ্ঠীর সৃষ্টি করে । পরবর্তীকালে গোষ্ঠী থেকে সৃষ্টি হয় উপজাতির । পরে উপজাতিগুলির মধ্যে সংঘর্ষ দেখা দেয় । এইভাবে কোনো শক্তিশালী উপজাতি যখন দুর্বল উপজাতিগুলির ওপর বলপ্রয়োগের মাধ্যমে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয় , তখন বিজয়ী উপজাতি তাদের দলপতিকে শাসনকর্তা রূপে স্বীকৃতি দেয় । কালক্রমে দলপতির শাসনে এক – একটি এলাকায় রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয় এবং দলপতি নিজে রাজা হিসাবে পরিচিতি লাভ করেন । এই কারণে ফরাসি দার্শনিক ভলতেয়ার মন্তব্য করেন , প্রথম যিনি রাজা হন তিনি ছিলেন একজন সৌভাগ্যবান যোদ্ধা । 

সমালোচনা : রাষ্ট্রের উৎপত্তি সম্পর্কে বলপ্রয়োগ মতবাদটি নানান দিক থেকে সমালোচিত হয়েছে । সমালোচনাগুলি বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে নিম্নে তুলে ধরা হলো 

একপেশে ধারণা : রাষ্ট্রের উৎপত্তির একমাত্র কারণ হিসাবে বলপ্রয়োগকে কখনোই স্বীকার করা যায় না । বলপ্রয়োগ ছাড়াও রাষ্ট্রের উৎপত্তির পেছনে আরও অনেক কারণ বিদ্যমান । তাই বলা যেতেই পারে যে এটি একটি একপেশে ধারণা । 

জনগণের সম্মতি : সমালোচকদের মতে , শুধুমাত্র বলপ্রয়োগের দ্বারা রাষ্ট্রীয় অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা যায় না । ব্রিটিশ বিজ্ঞানী গ্রিন – এর মতে , জনগণের সম্মতি হলো রাষ্ট্রের ভিত্তি , পাশবিক বল নয় । 

আনুগত্যের বিভ্রান্তিকর ব্যাখ্যা : রাষ্ট্রের প্রতি জনগণের আনুগত্যের প্রকৃত কারণ হলো সরকারের বলপ্রয়োগ বা ক্ষমতার ভয় – বলপ্রয়োগ মতবাদ একথা প্রচার করে চরম বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছে । জনগণ কেবলমাত্র রাষ্ট্রশক্তির ভয়ে আইন মেনে চলে একথা ঠিক নয় ৷ 

স্বৈরাচারের সমর্থক : অভ্যন্তরীণ শান্তি – শৃঙ্খলা ও প্রতিরক্ষার ব্যাপারে বলপ্রয়োগকে একান্ত অপরিহার্য অ্যাখ্যা দিয়ে এই মতবাদ জনগণকে স্বাধীনতা ও নাগরিক অধিকারের মূল্যকে উপেক্ষা করে ক্ষমতাবান স্বৈরাচারী শাসকের কাছে নত থাকার শিক্ষা দেয় । এই মতবাদ স্বৈরাচারিতাকে সমর্থন করে । 

নৈতিকতার বিরোধী : বল বা শক্তিপ্রয়োগের দ্বারা রাষ্ট্রের সৃষ্টি এবং তাকে সংরক্ষিত রাখার প্রয়াস নৈতিক দিক থেকে সমর্থনযোগ্য নয় । 

হীন প্রবৃত্তিকে গুরুত্বদান : দয়া , মায়া , স্নেহ , প্রেম , প্রীতি , ভালোবাসা প্রভৃতি সদ্গুণের পরিবর্তে লোভ , হিংসা , স্বার্থপরতাকে এই মতবাদ গুরুত্ব দিয়েছে । 

সভ্যতার অগ্রগতির পরিপন্থী : বলপ্রয়োগ মতবাদ সভ্যতার অগ্রগতির পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায় । এই মতবাদ সভ্যতার পশ্চাদ্‌গতি সূচিত করে । মানবিকতাবাদ ও সাম্য – মৈত্রী – স্বাধীনতার ভিত্তিতে বিশ্বশান্তির যে আদর্শ প্রচারিত হয় , বলপ্রয়োগ মতবাদ তার পরিপন্থী । 

অগণতান্ত্রিক : বলপ্রয়োগ মতবাদ অনুসারে , রাষ্ট্রনায়করা জনগণের কাছে কোনোভাবেই দায়বদ্ধ থাকেন না । এই মতবাদে গণতান্ত্রিক আদর্শ ও মূল্যবোধকে কোনো স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি । 

মানবিকতার পরিপন্থী : বলপ্রয়োগ মতবাদের নীতি মানবিক দিক থেকে কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয় । এই মতবাদের ‘ যোগ্যতমের উদ্‌র্তন ’ নীতিটি হিংস্র জতুজানোয়ারের ক্ষেত্রে প্রযুক্ত হলেও মানুষের ক্ষেত্রে তা কখনোই প্রযোজ্য হতে পারে না । 

সাম্রাজ্যবাদের সমর্থক : বলপ্রয়োগ মতবাদ সাম্রাজ্যবাদ ও যুদ্ধবাদকে উৎসাহ দেয় । এই মতবাদের সমর্থক জার্মান আদর্শবাদী নিৎসে , ট্রিকে , বার্নহার্ডি প্রমুখের তত্ত্ব সাম্রাজ্যবাদী মানসিকতার বীজ বপন করে । 

উপসংহার : এই ধরনের বিরূপ সমালোচনা সত্ত্বেও বলপ্রয়োগ মতবাদের ঐতিহাসিক তাৎপর্যকে উপেক্ষা করা যায় না । রাষ্ট্রের উৎপত্তির পেছনে শক্তি বা বলপ্রয়োগের যে অবদান ছিল , ইতিহাসবিদরাও তা স্বীকার করেন । অপরদিকে রাষ্ট্রের অস্তিত্ব বজায় রাখার স্বার্থে বলপ্রয়োগ কত জরুরি তা সন্ত্রাসবাদ কবলিত আধুনিক বিশ্বের রাষ্ট্রগুলির দিকে তাকালে খুব সহজেই বুঝতে পারা যায় । সুতরাং এই মতবাদ সম্পূর্ণ গুরুত্বহীন এমন কথা মনে করার কোনো প্রাসঙ্গিকতা নেই । 

  1. রাষ্ট্রের উৎপত্তি সম্পর্কিত বিবর্তনবাদী তত্ত্ব ব্যাখ্যা করো । 

Ans: রাষ্ট্রের উৎপত্তি সম্পর্কে বিবর্তনবাদ বা ঐতিহাসিক মতবাদ সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য মতবাদ । বিবর্তনবাদ অনুসারে , মানবসমাজের নানান জটিল উপাদানের মিশ্রণে নিরবচ্ছিন্ন ক্রমবিকাশের ফলে বিবর্তনের পথে আধুনিক রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছে । বার্জেসের ভাষায় , রাষ্ট্র হলো মানবসমাজের বিরতিহীন ক্রমবিকাশের ফল । 

বিবর্তনের উপাদানসমূহ : মানবসমাজের নিরবচ্ছিন্ন ক্রমবিকাশের পর্যায়ে রাষ্ট্র গঠনে যেসকল উপাদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সেগুলি হলো- 1) আসঙ্গলিপ্সা 2) রক্তের সম্পর্ক 3) ধর্ম 4) যুদ্ধ বা সংঘর্ষ 5) অর্থনৈতিক চেতনা 6) রাজনৈতিক চেতনা । 

আসঙ্গলিপ্সা : এটি মানুষের একটি সহজাত প্রবণতা । এই প্রবণতার মাধ্যমেই শুরু হয় মানবসভ্যতার অগ্রগতির প্রারম্ভিক পর্যায় । গঠিত হয় পরিবার । এই পরিবার থেকেই মানুষ আনুগত্যের পাঠগ্রহণ করে এবং শুরু হয় নিয়ন্ত্রিত জীবনের পথচলা । এই নিয়ন্ত্রণই সম্প্রসারিত হয় গোষ্ঠীজীবন ও সমাজজীবনে । 

রক্তের সম্পর্ক : রাষ্ট্র গঠনের অন্যতম প্রাথমিক উপাদান হলো রক্তের সম্পর্ক । রক্তের সম্পর্কের ওপর ভিত্তি করে পারিবারিক বন্ধন সুদৃঢ় হয় । পরিবারের সদস্যসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে পরিবারের সংখ্যাও বাড়তে থাকে । এই প্রসঙ্গে অধ্যাপক ম্যাকাইভারের অভিমত হলো — আত্মীয়তার বন্ধনের ফলে সৃষ্টি হয় সমাজের এবং পরবর্তীকালে সমাজ থেকে সৃষ্টি হয় রাষ্ট্রের । 

ধর্ম : রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মতে , জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে পরিবার ক্রমশ গোষ্ঠীর অধীনে এসেছে । ক্রমে গোষ্ঠীর এইরকম পরিস্থিতিতে শক্তিশালী হাতিয়ার ধর্ম মানুষকে পুনরায় একতার বন্ধনে আবদ্ধ করে তোলে । 

যুদ্ধ : ব্যক্তিগত সম্পত্তির মালিকানা নিয়ে এক উপজাতি গোষ্ঠী অন্য উপজাতিদের সঙ্গে দলপতিদের নেতৃত্বে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় । এইভাবে একজন সফল দলপতি পরবর্তীকালে রাজার পদলাভ করেন । এই কারণে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা বলেন , যুদ্ধই রাজার জন্ম দিয়েছে । 

অর্থনৈতিক চেতনা : আদিম অবস্থায় মানুষ বাঁচার তাগিদে দল বেঁধে বনজঙ্গল থেকে ফলমূল সংগ্রহ ও পশুশিকার করত । এইসময় মানুষের ব্যক্তিগত ধনসম্পত্তি বলে কিছু ছিল না । মানুষের ব্যক্তিগত সম্পত্তির উদ্ভব ঘটে পশুপালনের যুগে । ফলে সমাজে ঋণবৈষম্য দেখা যায় । 

রাজনৈতিক চেতনা : অর্থনৈতিক চেতনার হাত ধরে মানুষের মধ্যে রাজনৈতিক চেতনার বিকাশ ঘটে । আদিম যুগে রক্তের সম্পর্ক এবং ধর্মের ভীতি মানুষকে পরিবারের প্রধান ও পুরোহিতদের প্রতি অন্ধ আনুগত্য প্রদর্শন করতে শিখিয়েছিল । এইসময়কে ‘ রাজনৈতিক অবচেতনার যুগ ‘ অ্যাখ্যা দেওয়া হয় । 

সমালোচনা : রাষ্ট্রের উৎপত্তি সম্পর্কিত বিবর্তনমূলক মতবাদটি নানা দিক থেকে সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছে । নিম্নে তা আলোচনা করা হলো— 

মৌলিক নয় : সমালোচকদের মতে , বিবর্তনবাদকে কোনোভাবেই মৌলিক মতবাদ বলা যায় না । রাষ্ট্রের উৎপত্তি সংক্রান্ত অন্য মতবাদ যেমন— ঐশ্বরিক উৎপত্তিবাদ , বলপ্রয়োগ মতবাদ , সামাজিক চুক্তি মতবাদ প্রভৃতি থেকে উপকরণ সংগ্রহ করে বিবর্তনবাদ সমৃদ্ধ হয়েছে । 

অসম্পূর্ণ : সমালোচকদের মতে , এখানে বিবর্তনের পর্যায়গুলিকে যতটা গুরুত্বের সঙ্গে ব্যাখ্যা করা হয়েছে রাষ্ট্রের উৎপত্তি সম্পর্কে তা করা হয়নি । কখন এবং কীভাবে মানুষের রাষ্ট্রনৈতিক জীবনের সূচনা হয় তার কোনো সদুত্তর এই মতবাদে পাওয়া যায় না । 

অযৌক্তিক : বিবর্তনবাদ যেভাবে রক্তের সম্পর্ক ও ধর্মনির্ভর অন্ধ আনুগত্যের বিবরণ দিয়ে রাষ্ট্রের উৎপত্তির কথা তুলে ধরেছে তা যুক্তিসংগত নয় । কারণ রাষ্ট্রের উৎপত্তির প্রধান উপাদান রাজনৈতিক আনুগত্য কখনো অন্ধ আনুগত্যের ফলে উদ্ভূত হতে পারে না । 

গুরুত্বপূর্ণ নয় : মার্কসবাদী সমালোচকদের মতে , ব্যক্তিগত সম্পত্তির উদ্ভবের আগে রাষ্ট্র গঠনের কোনো প্রয়োজন মানুষ অনুভব করেছিল বলে মনে হয় না । এই কারণে ধর্ম , রক্তের সম্পর্ক প্রভৃতি উপাদান রাষ্ট্রের উৎপত্তির ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ নয় । 

উপসংহার : অবশেষে বলা যায় , সমস্ত রকম অসম্পূর্ণতার ঊর্ধ্বে গিয়ে বিবর্তনবাদের ঐতিহাসিক গুরুত্ব অস্বীকার করা যায় না । রাষ্ট্র অলৌকিকভাবে সৃষ্টি হয়নি । মানবসমাজের নিরবচ্ছিন্ন ক্রমবিবর্তনের এক বিশেষ পর্যায়ের ফসল হলো রাষ্ট্র । তাই মতবাদটি অন্যান্য মতবাদের তুলনায় অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য । 

  1. হব্স , লক এবং রুশোর তত্ত্বের তুলনামূলক আলোচনা করো । 

Ans: সাদৃশ্য : সামাজিক চুক্তি মতবাদের তিন জন প্রবক্তা হলেন ইংরেজ দার্শনিক হস , লক এবং ফরাসি দার্শনিক রুশো । সামাজিক চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্রের সৃষ্টির কথা তাঁরা তিন জনই তাঁদের তত্ত্বের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করেছেন । হস , লক এবং রুশোর তত্ত্বে একথা স্বীকার করা হয়েছে , রাষ্ট্রের সৃষ্টি হওয়ার আগে মানুষ প্রকৃতির রাজ্যে বাস করত । প্রকৃতির রাজ্যে বসবাস করার সময় মানুষ যেসব বাধাবিপত্তি বা প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয়েছিল তা দুর করার জন্য এবং জীবন , স্বাধীনতা ও সম্পত্তির নিরাপত্তার লক্ষ্যে তাঁরা রাষ্ট্র গঠনের জন্য উদ্যোগী হয় । 

বৈসাদৃশ্য : হস , লক এবং রুশোর তত্ত্বের মধ্যে সাদৃশ্যের বা মতৈক্যের পাশাপাশি বহু বিষয়ে বৈসাদৃশ্যও পরিলক্ষিত হয় । সেগুলি নিম্নে আলোচিত হলো— 

উদ্দেশ্য : হস নিজে ইংল্যান্ডের স্বৈরাচারী স্টুয়ার্ট রাজপরিবারের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন । এইজন্য তিনি সামাজিক চুক্তি মতবাদে রাজার হাতে চরম ক্ষমতা তুলে দিয়েছিলেন । এবং রাজার বিরুদ্ধে কোনো বিদ্রোহ ঘোষণা করা যাবে না বলে অভিমত প্রকাশ করেছিলেন । অন্যদিকে লকের মতবাদে নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্রের প্রতি সমর্থন লক্ষ করা যায় । আবার রুশো তাঁর মতবাদে সামাজিক চুক্তির মাধ্যমে সাম্য , মৈত্রী ও স্বাধীনতার আদর্শের ওপর ভিত্তি করে একটি প্রকৃত গণতান্ত্রিক সমাজ গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন ।

সার্বভৌমত্বের অবস্থান : হসের তত্ত্বে রাজাকে চরম ক্ষমতার অধিকারী রূপে বর্ণনা করা হয়েছে । লকের তত্ত্বে একথা স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে কর্তব্যচ্যুত রাজাকে সিংহাসনচ্যুত করার পূর্ণ অধিকার জনগণের রযেছে । অন্যদিকে ফরাসি দার্শনিক রুশো ‘ সাধারণ ইচ্ছা ’ – কে চূড়ান্ত , অভ্রান্ত , অবিভাজ্য ও অহস্তান্তরযোগ্য বলে অভিহিত করেন । এইভাবে রুশো জনগণের সার্বভৌমিকতার কথা তুলে ধরেন । 

আইন : হব্‌সের মতে , রাজার নির্দেশই হলো আইন । তাঁর মতে , আইন হলো চরম ও অভ্রান্ত । লকের অভিমত হলো , আইনের মাধ্যমে জনগণের জীবন , সম্পত্তি ও স্বাধীনতা রক্ষা করা রাজার কর্তব্য । রুশোর মতে , আইন হলো সমষ্টিগত ইচ্ছার প্রকাশ । তাঁর মতে , আইনের বিরোধিতা করা ঠিক নয় । কারণ আইনের বিরোধিতা করার অর্থ হলো নিজেদের সমষ্টিগত ইচ্ছার বিরোধিতা করা । 

চুক্তির স্বরূপ : হব্‌সের বক্তব্য অনুসারে , আদিম মানুষ নিজেদের মধ্যে একটি চুক্তি করে যাবতীয় ক্ষমতা কোনো ব্যক্তি বা ব্যক্তিসংসদের হাতে তুলে দিয়েছিল । রাজা নিজে চুক্তির ঊর্ধ্বে ছিলেন । অন্যদিকে লকের মতে , চুক্তি হয়েছিল দু’টি । প্রথমে জনগণ নিজেদের মধ্যে একটি চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্রের সৃষ্টি করে এবং পরে দ্বিতীয় চুক্তিটির মাধ্যমে জনগণ তাঁদের সমস্ত ক্ষমতা রাজার হাতে তুলে দেয় । রুশোর মতে , আদিম মানুষ চুক্তির সাহায্যে রাষ্ট্র তৈরি করেছিল ঠিকই , কিন্তু এই চুক্তি হয়েছিল জনগণের নিজেদের মধ্যে । রুশোর বক্তব্য হলো চুক্তির মাধ্যমে জনগণ তাদের সমস্ত ক্ষমতা ‘ সাধারণ ইচ্ছা’র হাতে তুলে দিয়েছিল । 

চুক্তির আবশ্যিকতা : হব্‌সের বক্তব্য ছিল , আদিম মানুষ তাদের দুর্বিষহ জীবন থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্রের সৃষ্টি করেছিল । লকের মতে , প্রাকৃতিক অবস্থায় আদিম মানুষের জীবন ছিল অসম্পূর্ণ । এই অবস্থায় আদিম মানুষ চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্রের সৃষ্টি করল । রুশোর মতে , প্রাকৃতিক অবস্থায় জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং ব্যক্তিগত ধনসম্পত্তির আবির্ভাবের ফলে যে সমস্ত জটিলতা দেখা দেয় , তার ফলে মানুষের জীবনের সুখ – স্বাচ্ছন্দ্য নষ্ট হয়ে যায় , ধনী – দরিদ্রের মধ্যে সংঘাত দেখা দেয় । এই অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য মানুষ চুক্তির মাধ্যমে সার্বভৌম শক্তির প্রতিষ্ঠা করে ।

সামাজিক পরিস্থিতি : হল্স – এর বক্তব্য হলো রাষ্ট্র সৃষ্টির পূর্বে মানুষ প্রাক্‌সামাজিক পরিবেশে বসবাস করত । অর্থাৎ তখনও পর্যন্ত সমাজের আবির্ভাব ঘটেনি । লকের মতে , প্রাকৃতিক অবস্থায় রাষ্ট্র সৃষ্টি না হলেও সমাজ সৃষ্টি হয়েছিল । রুশোর অভিমত হলো , প্রাকৃতিক অবস্থায় প্রথম পর্বে মানুষ সম্পূর্ণ স্বাধীন ছিল । তার মতে , এই প্রাক্‌সামাজিক পরিবেশে আদিম মানুষের সমাজে সাম্য প্রতিষ্ঠিত ছিল । 

প্রাকৃতিক অবস্থায় মানবজীবন : হব্‌সের মতে , প্রকৃতির রাজত্বে কোনোপ্রকার বলবৎযোগ্য আইনকানুন না থাকার ফলে মানুষ এক অনিয়ন্ত্রিত ও স্বেচ্ছাচারী জীবনযাপন করত । অন্যদিকে লকের বক্তব্য হলো , প্রাকৃতিক অবস্থায় সমাজজীবনের অস্তিত্ব না থাকায় মানুষের জীবনযাত্রা প্রকৃতির নিয়মকানুনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হতো । রুশোর মতে , প্রকৃতির রাজত্বে মানবসমাজে কলহ , বিবাদ , হিংসা , দ্বেষ ইত্যাদি দেখা যায়নি । 

  1. রাষ্ট্রের প্রকৃতি সম্পর্কিত তত্ত্বগুলির সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা করো । 

Ans: রাষ্ট্রের প্রকৃতি সম্পর্কিত তত্ত্বগুলি সম্পর্কে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মধ্যে মতপার্থক্য থেকে জন্ম নিয়েছে বিভিন্ন মতবাদ । এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো— 1) জৈব মতবাদ 2) ভাববাদ বা আদর্শবাদ 3) সামাজিক চুক্তি মতবাদ 4) মার্কসীয় মতবাদ 5) উদারনৈতিক ও নয়াউদারনৈতিক মতবাদ । 

জৈব মতবাদ : রাষ্ট্রের প্রকৃতি সম্পর্কিত প্রাচীন মতবাদগুলির মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হলো জৈব মতবাদ । জীববিজ্ঞানের সূত্রের সাহায্যে এই মতবাদে রাষ্ট্রের প্রকৃতি বিশ্লেষণ করা হয় । প্লেটো , অ্যারিস্টটল , সিসেরো , মারসিগলিও প্রমুখ দার্শনিক সাদৃশ্যমূলক যুক্তির সাহায্যে রাষ্ট্রকে জীবদেহের সঙ্গে তুলনা করেছেন । একটি জীবদেহ যেভাবে বিভিন্ন জীবকোশের সমন্বয়ে গঠিত হয় , রাষ্ট্রও তেমনি অনেক ব্যক্তির সমন্বয়ে গঠিত হয় । 

  জীবদেহের কোশগুলির মতো রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত নাগরিকরাও সামগ্রিকভাবে একে – অপরের ওপর নির্ভরশীল । জীবদেহ থেকে অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লে সেগুলি যেমন অকেজো হয়ে যায় রাষ্ট্র থেকে বিচ্ছিন্ন ব্যক্তির অবস্থাও তা – ই হয় । আবার জৈব মতবাদের দ্বিতীয় ধরনের প্রবক্তা রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ব্লুটলি ও স্পেনসার প্রমুখও মানবদেহের সঙ্গে রাষ্ট্রের কোনোরূপ পার্থক্য আছে বলে মানতে চাননি । 

ভাববাদ ও আদর্শবাদ : আদর্শবাদ হলো রাষ্ট্রের প্রকৃতি বিষয়ক প্রাচীন মতবাদগুলির মধ্যে অন্যতম । প্রাচীন গ্রিক রাষ্ট্রতত্ত্বের প্রবক্তা প্লেটো এবং অ্যারিস্টটলের রচনায় এই মতবাদের সন্ধান পাওয়া যায় । পরবর্তীকালে জার্মান দার্শনিক কান্ট , ফিকটে , হেগেল , ট্রিট্সকে , বার্নহার্ডি প্রমুখের দ্বারা এই মতবাদ পরিপূর্ণভাবে বিকশিত হয় । আদর্শবাদ বা ভাববাদের মূলবক্তব্য হলো ঈশ্বরের মতো রাষ্ট্রের ক্ষমতা অসীম , চরম , সর্বব্যাপী ও নির্ভুল । রাষ্ট্র হলো পৃথিবীতে ঈশ্বরের পদচারণা । আদর্শবাদে ব্যক্তি ও রাষ্ট্রের মধ্যে কোনো দ্বন্দ্ব স্বীকার করা হয়নি । এই তত্ত্ব অনুসারে রাষ্ট্রের প্রতি দ্বিধাহীন আনুগত্য প্রদর্শনের মাধ্যমে ব্যক্তি তার স্বাধীনতা ভোগ করতে পারে । হেগেলের মতে , রাষ্ট্র ব্যতীত স্বাধীনতা অবাস্তব । রাষ্ট্রকে বাদ দিয়ে ব্যক্তি তাঁর স্বতন্ত্র অস্তিত্বের কথা কল্পনা করতে পারে না। 

সামাজিক চুক্তি মতবাদ : রাষ্ট্রের প্রকৃতি সম্পর্কে একটি তাৎপর্যপূর্ণ মতবাদ হলো সামাজিক চুক্তি মতবাদ । এই তত্ত্বের প্রধান প্রবক্তারা হলেন ব্রিটিশ চিন্তাবিদ টমাস হব্‌স , জন লক এবং ফরাসি দার্শনিক রুশো । 

  সামাজিক চুক্তি মতবাদের মূলকথা হলো মানুষ চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্রের সৃষ্টি করেছে । রাষ্ট্র কোনো ঐশ্বরিক প্রতিষ্ঠান নয় । ইংরেজ দার্শনিক টমাস হস 1651 সালে তাঁর ‘ Leviathan ’ গ্রন্থে এই অভিমত ব্যক্ত করেন যে , প্রাকৃতিক অবস্থায় মানুষের জীবন ছিল নিঃসঙ্গ , দরিদ্র , ঘৃণ্য ও ক্ষণস্থায়ী । এই অরাজক অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আদিম মানুষ নিজেদের মধ্যে চুক্তি করে সমস্ত ক্ষমতা নিঃশর্তভাবে কোনো একজন ব্যক্তি বা ব্যক্তিসংসদের হাতে অর্পণ করে । জন লক চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্র সৃষ্টির কথা মেনে নিলেও শাসকের নিঃশর্ত ক্ষমতাকে অনুমোদন করেননি । তাঁর মতে , শাসক যতক্ষণ পর্যন্ত চুক্তির শর্ত পালন করবেন ততক্ষণ পর্যন্ত তিনি শাসনক্ষমতা ভোগ করার অধিকার পাবেন । চুক্তির শর্ত পালনে ব্যর্থ হলে জনগণ শাসককে ক্ষমতাচ্যুত করতে পারবে । অন্যদিকে ফরাসি দার্শনিক রুশোর মতে , কোনো ব্যক্তি বা ব্যক্তিসংসদের সঙ্গে মানুষ চুক্তি করেনি । জনগণ নিজেদের মধ্যে এই চুক্তি সম্পাদন করে সার্বভৌম ক্ষমতা ‘ সাধারণ ইচ্ছার ’ হাতে অর্পণ করেছিল । 

মার্কসীয় মতবাদ : রাষ্ট্রের প্রকৃতি সম্পর্কে মার্কসীয় মতবাদ হলো এক বৈজ্ঞানিক মতবাদ । রাষ্ট্র সম্পর্কে মার্কস , এঙ্গেলসের চিন্তাধারা ও পরবর্তীকালে লেনিনের রচনা থেকে মার্কসীয় তত্ত্ব গড়ে উঠেছে । মার্কসীয় মতবাদ অনুসারে রাষ্ট্রের আবির্ভাব আকস্মিকভাবে ঘটেনি । সমাজে ব্যক্তিগত সম্পত্তির উদ্ভবের পর রাষ্ট্রের উৎপত্তি হয় । এইসময় সমাজ পরস্পরবিরোধী দু’টি শ্রেণিতে বিভক্ত হয় । একদিকে সম্পত্তিবান শোষক শ্রেণি , অপরদিকে সম্পত্তিহীন শোষিত শ্রেণি । এই অবস্থায় রাষ্ট্রের সাহায্যে সমাজে প্রভুত্বকারী সংখ্যালঘু সম্পত্তিবান শ্রেণি তার বিরোধী সম্পত্তিহীন শ্রেণিকে শোষণ করে । মার্কসের মতে , একমাত্র সমাজতান্ত্রিক সমাজে রাষ্ট্রপ্রকৃতির আমূল পরিবর্তন ঘটে । সমাজতান্ত্রিক সমাজের পরবর্তী পর্যায়ে সাম্যবাদী সমাজে সমস্তরকম শ্রেণিশোষণের সমাপ্তি ঘটায় রাষ্ট্রযন্ত্রের কোনো প্রয়োজন থাকবে না । স্বাভাবিকভাবেই রাষ্ট্রের বিলুপ্তি ঘটবে বলে মার্কসীয় তত্ত্বে দাবি করা হয় । 

উদারনৈতিক মতবাদ : রাষ্ট্রের প্রকৃতি সম্পর্কিত একটি গুরুত্বপূর্ণ মতবাদ হলো উদারনৈতিক মতবাদ । সপ্তদশ শতাব্দীতে সামন্ততান্ত্রিক স্বৈরাচারী শাসন ও বিধি নিষেধের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের মধ্যে দিয়ে ইংল্যান্ডে উদারনৈতিক তত্ত্বের উদ্ভব হয় । উদারনীতিবাদের মূলবক্তব্য হলো ব্যক্তির জন্যই রাষ্ট্র গঠিত হয় । তাই রাষ্ট্রের অস্তিত্ব ব্যক্তির জন্য , ব্যক্তি রাষ্ট্রের জন্য নয় । এই মতবাদ রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ববাদের বিরুদ্ধে ব্যক্তিস্বাধীনতার নীতিকে প্রতিষ্ঠিত করে । উদারনীতিবাদের প্রধান প্রবক্তা জন লকের মতে , জনগণের সম্পত্তি হলো রাষ্ট্রের মূলভিত্তি । রাষ্ট্রের অস্তিত্ব জনগণের কল্যাণসাধনের ওপর নির্ভরশীল । নয়াউদারনীতিবাদী তাত্ত্বিক রবার্ট নজিকের মতে , রাষ্ট্র কোনো ক্ষমতাকেন্দ্রিক বা স্বৈরাচারী প্রতিষ্ঠান নয় । রাষ্ট্র একটি ন্যূনতম রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা মাত্র । নিরাপত্তা রক্ষা , ন্যায়বিচার ও প্রতিরক্ষা ছাড়া রাষ্ট্রের আর কোনো কাজ থাকতে পারে না । 

উপসংহার : রাষ্ট্রনৈতিক চিন্তায় মৌলিক মতপার্থক্য থাকলেও আলোচ্য তত্ত্বগুলি রাষ্ট্রের প্রকৃতি সম্পর্কে যে বক্তব্য উপস্থাপিত করেছে তার তাৎপর্য অপরিসীম ।

 একাদশ শ্রেণী রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রশ্ন ও উত্তর – West Bengal Class 11 Class 11th Political Science Question and Answer / Suggestion / Notes Book

আরোও কিছু প্রশ্ন ও উত্তর দেখুন :-

একাদশ শ্রেণী রাষ্ট্রবিজ্ঞান সমস্ত অধ্যায়ের প্রশ্নউত্তর Click Here

Class 11 Suggestion 2024 | একাদশ শ্রেণীর সাজেশন ২০২৪

আরোও দেখুন:-

Class 11 Bengali Suggestion 2024 Click here

আরোও দেখুন:-

Class 11 English Suggestion 2024 Click here

আরোও দেখুন:-

Class 11 Geography Suggestion 2024 Click here

আরোও দেখুন:-

Class 11 History Suggestion 2024 Click here

আরোও দেখুন:-

Class 11 Political Science Suggestion 2024 Click Here

আরোও দেখুন:-

Class 11 Education Suggestion 2024 Click here

আরোও দেখুন:-

Class 11 Philosophy Suggestion 2024 Click here

আরোও দেখুন:-

Class 11 Sociology Suggestion 2024 Click here

আরোও দেখুন:-

Class 11 Sanskrit Suggestion 2024 Click here

আরোও দেখুন:-

Class 11 All Subjects Suggestion 2024 Click here

Info : West Bengal Class 11 Political Science Qustion and Answer | WBCHSE Higher Secondary Eleven XI (Class 11th) Political Science Suggestion 

একাদশ শ্রেণী রাষ্ট্রবিজ্ঞান সাজেশন – রাষ্ট্র : সংঘা, বৈশিষ্ট্য ও উৎপত্তি (দ্বিতীয় অধ্যায়) প্রশ্ন ও উত্তর   

” একাদশ শ্রেণী রাষ্ট্রবিজ্ঞান –  রাষ্ট্র : সংঘা, বৈশিষ্ট্য ও উৎপত্তি (দ্বিতীয় অধ্যায়) – প্রশ্ন উত্তর  “ একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ টপিক একাদশ শ্রেণী পরীক্ষা (West Bengal Class Eleven XI  / WB Class 11  / WBCHSE / Class 11  Exam / West Bengal Board of Secondary Education – WB Class 11 Exam / Class 11 Class 11th / WB Class 11 / Class 11 Pariksha  ) এখান থেকে প্রশ্ন অবশ্যম্ভাবী । সে কথা মাথায় রেখে Bhugol Shiksha .com এর পক্ষ থেকে একাদশ শ্রেণী রাষ্ট্রবিজ্ঞান পরীক্ষা প্রস্তুতিমূলক সাজেশন এবং প্রশ্ন ও উত্তর ( একাদশ শ্রেণী রাষ্ট্রবিজ্ঞান সাজেশন / একাদশ শ্রেণী রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রশ্ও উত্তর । Class 11 Political Science Suggestion / Class 11 Political Science Question and Answer / Class 11 Political Science Suggestion / Class 11 Pariksha Political Science Suggestion  / Political Science Class 11 Exam Guide  / MCQ , Short , Descriptive  Type Question and Answer  / Class 11 Political Science Suggestion  FREE PDF Download) উপস্থাপনের প্রচেষ্টা করা হলাে। ছাত্রছাত্রী, পরীক্ষার্থীদের উপকারেলাগলে, আমাদের প্রয়াস একাদশ শ্রেণী রাষ্ট্রবিজ্ঞান পরীক্ষা প্রস্তুতিমূলক সাজেশন এবং প্রশ্ন ও উত্তর (Class 11 Political Science Suggestion / West Bengal Eleven XI Question and Answer, Suggestion / WBCHSE Class 11th Political Science Suggestion  / Class 11 Political Science Question and Answer  / Class 11 Political Science Suggestion  / Class 11 Pariksha Suggestion  / Class 11 Political Science Exam Guide  / Class 11 Political Science Suggestion 2022, 2023, 2024, 2025, 2026, 2027, 2028, 2029, 2030, 2021, 2020, 2019, 2017, 2016, 2015 / Class 11 Political Science Suggestion  MCQ , Short , Descriptive  Type Question and Answer. / Class 11 Political Science Suggestion  FREE PDF Download) সফল হবে।

রাষ্ট্র : সংঘা, বৈশিষ্ট্য ও উৎপত্তি (দ্বিতীয় অধ্যায়) প্রশ্ন ও উত্তর  

রাষ্ট্র : সংঘা, বৈশিষ্ট্য ও উৎপত্তি (দ্বিতীয় অধ্যায়) – প্রশ্ন ও উত্তর | রাষ্ট্র : সংঘা, বৈশিষ্ট্য ও উৎপত্তি (দ্বিতীয় অধ্যায়) Class 11 Political Science Question and Answer Suggestion  একাদশ শ্রেণী রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রশ্ন ও উত্তর  – রাষ্ট্র : সংঘা, বৈশিষ্ট্য ও উৎপত্তি (দ্বিতীয় অধ্যায়) প্রশ্ন ও উত্তর।

রাষ্ট্র : সংঘা, বৈশিষ্ট্য ও উৎপত্তি (দ্বিতীয় অধ্যায়) MCQ প্রশ্ন ও উত্তর | একাদশ শ্রেণী রাষ্ট্রবিজ্ঞান 

রাষ্ট্র : সংঘা, বৈশিষ্ট্য ও উৎপত্তি (দ্বিতীয় অধ্যায়) MCQ প্রশ্ন ও উত্তর | রাষ্ট্র : সংঘা, বৈশিষ্ট্য ও উৎপত্তি (দ্বিতীয় অধ্যায়) Class 11 Political Science Question and Answer Suggestion  একাদশ শ্রেণী রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রশ্ন ও উত্তর  – রাষ্ট্র : সংঘা, বৈশিষ্ট্য ও উৎপত্তি (দ্বিতীয় অধ্যায়) MCQ প্রশ্ন উত্তর।

রাষ্ট্র : সংঘা, বৈশিষ্ট্য ও উৎপত্তি (দ্বিতীয় অধ্যায়) SAQ সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর | একাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান 

রাষ্ট্র : সংঘা, বৈশিষ্ট্য ও উৎপত্তি (দ্বিতীয় অধ্যায়) SAQ সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর | রাষ্ট্র : সংঘা, বৈশিষ্ট্য ও উৎপত্তি (দ্বিতীয় অধ্যায়) Class 11 Political Science Question and Answer Suggestion  একাদশ শ্রেণী রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রশ্ন ও উত্তর  – রাষ্ট্র : সংঘা, বৈশিষ্ট্য ও উৎপত্তি (দ্বিতীয় অধ্যায়) SAQ সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর।

একাদশ শ্রেণি রাষ্ট্রবিজ্ঞান  – রাষ্ট্র : সংঘা, বৈশিষ্ট্য ও উৎপত্তি (দ্বিতীয় অধ্যায়) MCQ প্রশ্ন উত্তর | Class 11 Political Science  

একাদশ শ্রেণী রাষ্ট্রবিজ্ঞান (Class 11 Political Science) – রাষ্ট্র : সংঘা, বৈশিষ্ট্য ও উৎপত্তি (দ্বিতীয় অধ্যায়) – প্রশ্ন ও উত্তর | রাষ্ট্র : সংঘা, বৈশিষ্ট্য ও উৎপত্তি (দ্বিতীয় অধ্যায়) | Class 11 Political Science Suggestion  একাদশ শ্রেণী রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রশ্ন ও উত্তর  – রাষ্ট্র : সংঘা, বৈশিষ্ট্য ও উৎপত্তি (দ্বিতীয় অধ্যায়) প্রশ্ন উত্তর।

একাদশ শ্রেণী রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রশ্ন ও উত্তর  | একাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রশ্ন ও উত্তর  – রাষ্ট্র : সংঘা, বৈশিষ্ট্য ও উৎপত্তি (দ্বিতীয় অধ্যায়) প্রশ্ন উত্তর | Class 11 Political Science Question and Answer Question and Answer, Suggestion 

একাদশ শ্রেণী রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রশ্ন ও উত্তর – রাষ্ট্র : সংঘা, বৈশিষ্ট্য ও উৎপত্তি (দ্বিতীয় অধ্যায়) | একাদশ শ্রেণী রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রশ্ন ও উত্তর – রাষ্ট্র : সংঘা, বৈশিষ্ট্য ও উৎপত্তি (দ্বিতীয় অধ্যায়) | পশ্চিমবঙ্গ একাদশ শ্রেণী রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রশ্ন ও উত্তর – রাষ্ট্র : সংঘা, বৈশিষ্ট্য ও উৎপত্তি (দ্বিতীয় অধ্যায়) | একাদশ শ্রেণী রাষ্ট্রবিজ্ঞান সহায়ক – রাষ্ট্র : সংঘা, বৈশিষ্ট্য ও উৎপত্তি (দ্বিতীয় অধ্যায়) – প্রশ্ন ও উত্তর । Class 11 Political Science Question and Answer, Suggestion | Class 11 Political Science Question and Answer Suggestion  | Class 11 Political Science Question and Answer Notes  | West Bengal Class 11 Class 11th Political Science Question and Answer Suggestion. 

একাদশ শ্রেণী রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রশ্ন ও উত্তর   – রাষ্ট্র : সংঘা, বৈশিষ্ট্য ও উৎপত্তি (দ্বিতীয় অধ্যায়) MCQ প্রশ্ন উত্তর | WBCHSE Class 11 Political Science Question and Answer, Suggestion 

একাদশ শ্রেণী রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রশ্ন ও উত্তর  – রাষ্ট্র : সংঘা, বৈশিষ্ট্য ও উৎপত্তি (দ্বিতীয় অধ্যায়) প্রশ্ন উত্তর প্রশ্ন ও উত্তর  | রাষ্ট্র : সংঘা, বৈশিষ্ট্য ও উৎপত্তি (দ্বিতীয় অধ্যায়) । Class 11 Political Science Suggestion.

WBCHSE Class 11th Political Science Suggestion  | একাদশ শ্রেণী রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রশ্ন ও উত্তর   – রাষ্ট্র : সংঘা, বৈশিষ্ট্য ও উৎপত্তি (দ্বিতীয় অধ্যায়)

WBCHSE Class 11 Political Science Suggestion একাদশ শ্রেণী রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রশ্ন ও উত্তর  – রাষ্ট্র : সংঘা, বৈশিষ্ট্য ও উৎপত্তি (দ্বিতীয় অধ্যায়) প্রশ্ন উত্তর প্রশ্ন ও উত্তর  । রাষ্ট্র : সংঘা, বৈশিষ্ট্য ও উৎপত্তি (দ্বিতীয় অধ্যায়) | Class 11 Political Science Suggestion  একাদশ শ্রেণী রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রশ্ন ও উত্তর – রাষ্ট্র : সংঘা, বৈশিষ্ট্য ও উৎপত্তি (দ্বিতীয় অধ্যায়) – প্রশ্ন উত্তর প্রশ্ন ও উত্তর ।

Class 11 Political Science Question and Answer Suggestions  | একাদশ শ্রেণী রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রশ্ন ও উত্তর – রাষ্ট্র : সংঘা, বৈশিষ্ট্য ও উৎপত্তি (দ্বিতীয় অধ্যায়) | একাদশ শ্রেণী রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রশ্ন ও উত্তর 

Class 11 Political Science Question and Answer  একাদশ শ্রেণী রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রশ্ন ও উত্তর – রাষ্ট্র : সংঘা, বৈশিষ্ট্য ও উৎপত্তি (দ্বিতীয় অধ্যায়) একাদশ শ্রেণী রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রশ্ন ও উত্তর  Class 11 Political Science Question and Answer একাদশ শ্রেণী রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রশ্ন ও উত্তর  প্রশ্ন ও উত্তর – রাষ্ট্র : সংঘা, বৈশিষ্ট্য ও উৎপত্তি (দ্বিতীয় অধ্যায়) MCQ, সংক্ষিপ্ত, রোচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর  । 

WB Class 11 Political Science Suggestion  | একাদশ শ্রেণী রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রশ্ন ও উত্তর   – রাষ্ট্র : সংঘা, বৈশিষ্ট্য ও উৎপত্তি (দ্বিতীয় অধ্যায়) MCQ প্রশ্ন উত্তর প্রশ্ন ও উত্তর 

Class 11 Political Science Question and Answer Suggestion একাদশ শ্রেণী রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রশ্ন ও উত্তর – রাষ্ট্র : সংঘা, বৈশিষ্ট্য ও উৎপত্তি (দ্বিতীয় অধ্যায়) MCQ প্রশ্ন ও উত্তর । Class 11 Political Science Question and Answer Suggestion  একাদশ শ্রেণী রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রশ্ন ও উত্তর।

West Bengal Class 11  Political Science Suggestion Download WBCHSE Class 11th Political Science short question suggestion  . Class 11 Political Science Suggestion   download Class 11th Question Paper  Political Science. WB Class 11  Political Science suggestion and important question and answer. Class 11 Suggestion pdf.পশ্চিমবঙ্গ একাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান পরীক্ষার সম্ভাব্য সাজেশন ও শেষ মুহূর্তের প্রশ্ন ও উত্তর ডাউনলোড। একাদশ শ্রেণী রাষ্ট্রবিজ্ঞান পরীক্ষার জন্য সমস্ত রকম গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তর।

Get the Class 11 Political Science Question and Answer Question and Answer by Bhugol Shiksha .com

Class 11 Political Science Question and Answer Question and Answer prepared by expert subject teachers. WB Class 11  Political Science Suggestion with 100% Common in the Examination .

Class Eleven XI Political Science Suggestion | West Bengal Board WBCHSE Class 11 Exam 

Class 11 Political Science Question and Answer, Suggestion Download PDF: WBCHSE Class 11 Eleven XI Political Science Suggestion  is provided here. Class 11 Political Science Question and Answer Suggestion Questions Answers PDF Download Link in Free has been given below. 

একাদশ শ্রেণী রাষ্ট্রবিজ্ঞান – রাষ্ট্র : সংঘা, বৈশিষ্ট্য ও উৎপত্তি (দ্বিতীয় অধ্যায়) প্রশ্ন ও উত্তর | Class 11 Political Science Question and Answer 

        অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই ” একাদশ শ্রেণী রাষ্ট্রবিজ্ঞান – রাষ্ট্র : সংঘা, বৈশিষ্ট্য ও উৎপত্তি (দ্বিতীয় অধ্যায়) প্রশ্ন ও উত্তর | Class 11 Political Science Question and Answer  ” পােস্টটি পড়ার জন্য। এই ভাবেই Bhugol Shiksha ওয়েবসাইটের পাশে থাকো যেকোনো প্ৰশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলাে করো এবং নিজেকে  তথ্য সমৃদ্ধ করে তোলো , ধন্যবাদ।