
ভূমিরূপ গঠনকারী প্রক্রিয়া (প্রাকৃতিক ভূগোল) একাদশ শ্রেণীর ভূগোল প্রশ্ন ও উত্তর
Class 11 Geography Geomorphic Process Question and Answer
ভূমিরূপ গঠনকারী প্রক্রিয়া (প্রাকৃতিক ভূগোল) একাদশ শ্রেণীর ভূগোল প্রশ্ন ও উত্তর | Class 11 Geography Geomorphic Process Question and Answer : ভূমিরূপ গঠনকারী প্রক্রিয়া (প্রাকৃতিক ভূগোল) একাদশ শ্রেণীর ভূগোল প্রশ্ন ও উত্তর | Class 11 Geography Geomorphic Process Question and Answer নিচে দেওয়া হলো। এই West Bengal WBCHSE Class 11th Geography Geomorphic Process Question and Answer, Suggestion, Notes | একাদশ শ্রেণীর ভূগোল প্রশ্ন ও উত্তর – ভূমিরূপ গঠনকারী প্রক্রিয়া (প্রাকৃতিক ভূগোল) থেকে বহুবিকল্পভিত্তিক, সংক্ষিপ্ত, অতিসংক্ষিপ্ত এবং রোচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর (MCQ, Very Short, Short, Descriptive Question and Answer) গুলি আগামী West Bengal Class 11th Eleven XI Geography Examination – পশ্চিমবঙ্গ একাদশ শ্রেণীর ভূগোল পরীক্ষার জন্য খুব ইম্পর্টেন্ট। একাদশ শ্রেণীর ভূগোল পরীক্ষা তে এই সাজেশন বা কোশ্চেন (ভূমিরূপ গঠনকারী প্রক্রিয়া (প্রাকৃতিক ভূগোল) একাদশ শ্রেণীর ভূগোল প্রশ্ন ও উত্তর | Class 11 Geography Geomorphic Process Question and Answer) গুলো আসার সম্ভাবনা খুব বেশি।
তোমরা যারা ভূমিরূপ গঠনকারী প্রক্রিয়া (প্রাকৃতিক ভূগোল) একাদশ শ্রেণীর ভূগোল প্রশ্ন ও উত্তর | Class 11 Geography Geomorphic Process Question and Answer খুঁজে চলেছ, তারা নিচে দেওয়া প্রশ্ন ও উত্তর গুলো ভালো করে পড়তে পারো।
রাজ্য (State) | পশ্চিমবঙ্গ (West Bengal) |
বোর্ড (Board) | WBCHSE, West Bengal |
শ্রেণী (Class) | একাদশ শ্রেণী (WB Class 11th) |
বিষয় (Subject) | একাদশ শ্রেণীর ভূগোল (Class 11 Geography) |
প্রাকৃতিক ভূগোল (Physical Geography) | ভূমিরূপ গঠনকারী প্রক্রিয়া (Geomorphic Process) |
[একাদশ শ্রেণীর সমস্ত বিষয়ের প্রশ্নউত্তর Click Here]
ভূমিরূপ গঠনকারী প্রক্রিয়া (প্রাকৃতিক ভূগোল) একাদশ শ্রেণীর ভূগোল প্রশ্ন ও উত্তর | West Bengal WBCHSE Class 11th Geography Geomorphic Process Question and Answer
সংক্ষিপ্ত | ভূমিরূপ গঠনকারী প্রক্রিয়া (প্রাকৃতিক ভূগোল) একাদশ শ্রেণীর ভূগোল প্রশ্ন ও উত্তর | WB Class 11 Geography Geomorphic Process SAQ Question and Answer :
- শল্কমোচন কী?
Ans: তাপমাত্রার তারতম্যে শিলার উপর ও নিচের স্তরের প্রসারণ ও সংকোচনের পার্থক্যের ফলে, অতিরিক্ত গরমে শিলার উপরিভাগ ফেটে গিয়ে পেঁয়াজের খোসার মতো খুলে আসে। এই প্রক্রিয়াকে শল্কমোচন বলে। এটি প্রধানত গ্র্যানাইট শিলায় দেখা যায়।
- শিলায় মরচে পড়ে কেন?
Ans: লৌহযুক্ত খনিজের উপস্থিতিতে শিলা বায়ু ও জলীয় বাষ্পের সংস্পর্শে এলে জারণ বিক্রিয়ায় ফেরাস অক্সাইড থেকে ফেরিক অক্সাইড তৈরি হয়। এর ফলে শিলায় বাদামি বা হলদে রঙের মরচে পড়ে।
- ট্যালাস কী?
Ans: ঠান্ডা পার্বত্য অঞ্চলে তুষারজনিত যান্ত্রিক আবহবিকারে উৎপন্ন তীক্ষ্ণ শিলাখণ্ডগুলি পর্বতের পাদদেশে কৌণিকভাবে জমা হয়। একে ট্যালাস বা স্ক্রি বলে।
উদাহরণ: লাডাক মালভূমি।
- রেগোলিথ কাকে বলে? ইলুভিয়েশন বলতে কী বোঝায়?
Ans:
- রেগোলিথ হলো আবহবিকারপ্রাপ্ত শিলাচূর্ণ যা ভবিষ্যতে মৃত্তিকায় রূপান্তরিত হয়।
- ইলুভিয়েশন হলো মৃত্তিকার উপরের স্তর থেকে দ্রবীভূত ও ভাসমান খনিজ পদার্থের নিচের স্তরে স্থানান্তরের প্রক্রিয়া।
- ভারতে কৃষ্ণ মৃত্তিকা ও পডসল মৃত্তিকা কোথায় দেখা যায়?
Ans:
- কৃষ্ণ মৃত্তিকা – দাক্ষিণাত্য মালভূমিতে।
- পডসল মৃত্তিকা – হিমালয়ের সরলবর্গীয় বনাঞ্চলে।
- মৃত্তিকার ক্ষয় ও মৃত্তিকা অবনমন কী?
Ans:
- মৃত্তিকার কণার স্থানান্তর হলে তাকে মৃত্তিকাক্ষয় বলে।
- মৃত্তিকার গুণমান হ্রাস পেলে তাকে মৃত্তিকা অবনমন বলে।
- রেগোলিথ কাকে বলে? এর বৈশিষ্ট্য লেখো।
Ans: রেগোলিথ হলো আবহবিকারজনিত শিলাচূর্ণ যা আদি শিলার ওপর অবস্থান করে।
বৈশিষ্ট্য:
(i) মৃত্তিকা হওয়ার পূর্বাবস্থা।
(ii) গভীর আবহবিকারে গভীরতা বেশি (৩০ মিটার পর্যন্ত)।
(iii) মৃত্তিকার গুণ এই স্তরের ওপর নির্ভর করে।
উদ্ভব: গ্রিক শব্দ Rhegos (আচ্ছাদন) ও Lithos (শিলা)।
প্রবর্তক: জর্জ মেরিল (১৮৯৭)।
- সংস্র বা গ্রস্ত উপত্যকা কীভাবে সৃষ্টি হয়?
Ans: দুটি চ্যুতির মধ্যবর্তী ভূভাগ বসে গেলে বা পাশে থাকা অঞ্চল উঁচু হলে মধ্যভাগ নিচে চলে গিয়ে গ্রস্ত উপত্যকা তৈরি হয়।
উদাহরণ: সাতপুরা পর্বতের আশপাশে।
- ইউস্ট্যাটিক ও সমস্থিতিক আলোড়ন কাকে বলে?
Ans:
- ইউস্ট্যাটিক আলোড়ন: সমুদ্রের জলের পরিমাণ পরিবর্তনের ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের ওঠানামা।
- সমস্থিতিক আলোড়ন: শিলার চাপের পরিবর্তনে অ্যাসথেনোস্ফিয়ারে ভাসমান ভূভাগের উচ্চতা পরিবর্তন।
- ভাঁজের আয়াম কাকে বলে?
Ans: ভূপৃষ্ঠে শিলাস্তর অনুভূমিক তলকে যে রেখা বরাবর ছেদ করে, তাকে আয়াম (Strike) বলে।
বৈশিষ্ট্য: এটি নতির সাথে সর্বদা সমকোণে অবস্থান করে।
- প্রতিসম ভাঁজ কাকে বলে?
Ans: যে ভাঁজের উভয় বাহু সমান কোণে হেলে থাকে ও সমান দৈর্ঘ্যের হয়, তাকে প্রতিসম ভাঁজ বলে।
বৈশিষ্ট্য: উভয় পাশের সংকোচন চাপ সমান হলে এই ভাঁজ তৈরি হয়।
- একনত ভাঁজ কাকে বলে?
Ans: সমান্তরাল শিলাস্তরে স্থানীয়ভাবে একটি দিক খাড়া হয়ে নত হলে তাকে একনত ভাঁজ (Monoclinal Fold) বলে।
- চ্যুতিরেখা কাকে বলে?
Ans: চ্যুতিতল ও ভূপৃষ্ঠ যেখানে ছেদ করে, সেই রেখাকে চ্যুতিরেখা বলে।
বৈশিষ্ট্য: এটি সরল বা বক্র উভয় হতে পারে।
- চ্যুতির নতি ও আয়াম কাকে বলে?
Ans:
- অনুভূমিক তলের সাথে চ্যুতিতলের কোণ – নতি (Dip)।
- চ্যুতিতল ও অনুভূমিক তলের ছেদরেখা – আয়াম (Strike)।
বৈশিষ্ট্য: আয়াম সর্বদা নতির সাথে সমকোণে থাকে।
- স্বাভাবিক চ্যুতি কাকে বলে?
Ans: যে চ্যুতিতে ঝুলন্ত প্রাচীর নিচে নেমে যায় তাকে স্বাভাবিক (Normal) চ্যুতি বলে। অনুভূমিক টান ও অভিকর্ষ বলের কারণে ঘটে।
- আবহবিকার কাকে বলে?
Ans: আবহাওয়ার উপাদান (তাপ, আর্দ্রতা, বৃষ্টি, গ্যাস ইত্যাদি)-এর ফলে শিলাস্তর যান্ত্রিক বা রাসায়নিকভাবে ভেঙে গেলে তাকে আবহবিকার বলে।
- আবহবিকার কয় প্রকার ও কী কী?
Ans: তিন প্রকার –
(i) যান্ত্রিক, (ii) রাসায়নিক, (iii) জৈবিক আবহবিকার।
- নগ্নীভবন বলতে কী বোঝ?
Ans: আবহবিকার, পুঞ্জিত স্থলন ও ক্ষয়ীভবনের সম্মিলিত ক্রিয়ায় ভূত্বকের শিলাস্তর উন্মুক্ত হলে তাকে নগ্নীভবন বলে।
- প্রস্তরচাঁই খণ্ডীকরণ কী?
Ans: তাপের তারতম্যে শিলা ব্লকের মতো ভেঙে গেলে তাকে প্রস্তরচাঁই খণ্ডীকরণ বলে।
- ক্ষুদ্রকণা বিসরণ কী?
Ans: উষ্ণ মরু অঞ্চলে শিলার ভেতরের খনিজ উপাদান ভিন্ন হারে প্রসারণ-সংকোচনের ফলে চূর্ণ হয়ে ক্ষুদ্র কণায় পরিণত হয়। একে ক্ষুদ্রকণা বিসরণ বলে।
রচনাধর্মী | ভূমিরূপ গঠনকারী প্রক্রিয়া (প্রাকৃতিক ভূগোল) একাদশ শ্রেণীর ভূগোল প্রশ্ন ও উত্তর | WB Class 11 Geography Geomorphic Process Question and Answer :
1. প্রতিসম ও অপ্রতিসম ভাঁজের মধ্যে পার্থক্য নির্দেশ করো।
Ans: প্রতিসম ভাঁজ ও অপ্রতিসম ভাঁজের পার্থক্য: প্রতিসম ভাঁজ ও অপ্রতিসম ভাঁজের মধ্যে পার্থক্যগুলি হল –
বিষয় | প্রতিসম ভাঁজ | অপ্রতিসম ভাঁজ |
১. বাহুর দৈর্ঘ্য | দুটি বাহুর দৈর্ঘ্য সমান। | দুটি বাহুর দৈর্ঘ্য অসমান অর্থাৎ একটি বাহু বড় ও অন্য বাহু ছোটো হয়। |
২. অক্ষরেখার অবস্থান | অক্ষরেখা উল্লম্বভাবে অবস্থিত। | অক্ষরেখা তির্যকভাবে অবস্থিত। |
৩. মাটির পরিমাপ | দুটি বাহুর মাটির পরিমাণ সমান অর্থাৎ বাহু দুটি একই পরিমাণ কোনো দিকে থাকে। | দুটি বাহু বিশেষ দিকে কেবল বেশি থাকে যা মাটির পরিমাণ অসমান। |
৪. বলের প্রয়োগ | সংকোচনকারী বল ভাঁজের দুইদিকে বাহুরে সমানভাবে পড়ে। | সংকোচনকারী বল ভাঁজের একদিকে বাহুতে বেশি ও অপরদিকে বাহুতে কম পড়ে। |
৫. ভূমিরূপ | সমানতর শৈলশিরা বা উপত্যকার সৃষ্টি হয়। | একদিকে শৈল ও অপরদিকে মৃদু ঢালযুক্ত শৈলশিরা বা উপত্যকার এবং খাড়া ঢাল সৃষ্টি। |
2. মহীবায়বক ও গিরিজিনি আলোড়নের মধ্যে পার্থক্য লেখো।
Ans: মহীবায়বক আলোড়ন এবং গিরিজিনি আলোড়নের পার্থক্য: মহীবায়বক আলোড়ন ও গিরিজিনি আলোড়নের মধ্যে পার্থক্যগুলি হল –
বিষয় | মহীবায়বক আলোড়ন | গিরিজিনি আলোড়ন |
১. সংজ্ঞা | যে ভূ-আলোড়নের ফলে মহাদেশ বা এর অংশবিশেষ উঁচানো বা অবনমন ঘটে, অর্থাৎ মহাদেশের গঠন নির্ধারিত হয়, তাকে মহীবায়বক আলোড়ন বলে। | যে ভূ-আলোড়নের ফলে ভূত্বকের ভাঁজ পড়ে গিরি বা পর্বত, বিস্ফোরণ ইত্যাদির উৎপত্তি হয়, তাকে গিরিজিনি আলোড়ন বলে। |
২. প্রকৃতি | এটি উঁচানো আলোড়ন, অর্থাৎ পৃথিবীর ব্যাপসারী ব্যাবহার ঘটে। | এটি অনুসঙ্কোচন আলোড়ন, অর্থাৎ পৃথিবীর সঙ্কোচন ব্যাবহার ঘটে। |
৩. আলোড়নের অভিমুখ | এই আলোড়নের ফলে সূচ বল ভূমির থেকে পৃথিবীর কেন্দ্রে নেমে অর্থাৎ কেন্দ্র থেকে উপরের দিকে চাপ দেয়। | এই আলোড়নের ফলে সূচ বল ভূত্বকের অনুসঙ্কোচন বলমূলে উপরের অভিমুখে ও কেন্দ্র থেকে বাইরে দিকে চাপ দেয়। |
৪. শিলাস্তরের দিক পরিবর্তন | মহীবায়বক উঁচানো ও অবনমনের ঘটনা। | শিলাস্তরের অনুসঙ্কোচন ঘটনে। |
৫. সংকোচন ও প্রসারণ | এক্ষেত্রে শিলাস্তরের প্রসারণ ও সংকোচন ঘটে না। | শিলাস্তরের উপর পড়লে সম্পূর্ণভাবে ঘটে এবং সংকোচন সৃষ্টি করে সংকোচন (Contraction) ও দীর্ণতা (Tension) ঘটে। |
৬. প্রভাবিত এলাকা | মহাদেশের বিশাল এলাকা জুড়ে এই ধরনের আলোড়ন হলে এর দ্বারা স্থানীয় ভূত্বকের অনেক বেশি ক্ষয় ঘটানো যায়। | ভূমির মহায়ুগে সংঘটিত ফলাফলকে দেখা যায় বলে এই ধরনের আলোড়নের প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী। |
3. স্বাভাবিক চ্যুতি ও বিপরীত চ্যুতির মধ্যে পার্থক্য লেখো।
Ans: স্বাভাবিক ও বিপরীত চ্যুতির পার্থক্য: স্বাভাবিক বা অনুক্রম চ্যুতি ও বিপরীত বা বিরোম চ্যুতির মধ্যে পার্থক্যগুলি হল –
বিষয় | স্বাভাবিক চ্যুতি | বিপরীত চ্যুতি |
১. ঝুলন্ত প্রস্তরের সরণ | চ্যুতির বরাবর ঝুলন্ত প্রস্তরের আপেক্ষিক সরণ পাদান প্রস্তর অপেক্ষা নিচের দিকে হয়। | চ্যুতির বরাবর ঝুলন্ত প্রস্তরের আপেক্ষিক সরণ পাদান প্রস্তর অপেক্ষা উপরের দিকে হয় অর্থাৎ এটি ঝুলন্ত প্রস্তরকে উপরে উঠিয়ে নিয়ে যায়। |
২. অভিকর্ষ টান অনুসরণ | পৃথিবীর অভিকর্ষ টানের দিক অনুসরণ করে এই চ্যুতি ঘটে, তাই একে অনুক্রম চ্যুতি বলে। | পৃথিবীর অভিকর্ষ টানের বিপরীত দিকে চ্যুতি ঘটে। |
৩. নাটি, চ্যুতিকোষ ও ব্যবহার | অভিকর্ষ ক্ষেত্রে এই চ্যুতি নাটি পরিমানে বেশি হয় (সাধারণত নাটির পরিমাণ ৬০°)। | অভিকর্ষবিরোধী চ্যুতির নাটি পরিমাণ একেবারে কম (৪৫° কম)। এই চ্যুতি বিপরীত দিক থেকে হয়। |
৪. ভূ-আলোড়নজনিত বল | ভূত্বক সাধারণ টানের ফলে এই চ্যুতি সৃষ্টি হয়। | সাধারণত ভূত্বকের সংকোচনের ফলে এই চ্যুতি সৃষ্টি হয়। |
৫. ভূত্বকের ক্রেড়ফল | ভূত্বকের ক্ষেত্রফল বেড়ে যায়। | ভূত্বকের ক্ষেত্রফল কমে যায়। |
৬. সৃষ্ট ভূমিরূপ | সৃষ্ট ভূমিরূপ হল খাড়া ঢালযুক্ত চ্যুত ভূমি। | সৃষ্ট ভূমিরূপ হল ঝুলন্ত চ্যুত ভূমি। |
4. স্তূপ পর্বত ও প্রশস্ত উপত্যকার মধ্যে পার্থক্য লেখো।
Ans: স্তূপ পর্বত ও প্রশস্ত উপত্যকার পার্থক্য: চ্যুতি সৃষ্টি ফলে স্তূপ পর্বত ও প্রশস্ত উপত্যকা সৃষ্টি হয়। এই দুটি ভূ-রূপের পাশাপাশির অবস্থান করলেও এদের মধ্যে কিছু পার্থক্য দেখা যায়। এগুলি হল –
বিষয় | স্তূপ পর্বত | প্রশস্ত উপত্যকা |
১. উৎপত্তি | একইসঙ্গে ভূত্বকের দুটি পাশে দিকরেখা চ্যুতি গিয়ে ভূমি খণ্ড স্তূপ হয়ে যায়, তখন দুই-দিকের ভূমি নেমে স্তূপ পর্বত সৃষ্টি হয়। অর্থাৎ এই ধরনের স্তূপ পর্বত একদিকে ওঠা ও অন্যদিকে পড়া চ্যুতির ফলে সৃষ্টি হয়। | দুই পাশে চ্যুতি হওয়ায় উভয় পাশে ভূমি উঠে গিয়ে কেন্দ্রের অংশে ভূমি নিচে বসে গিয়ে প্রশস্ত উপত্যকা সৃষ্টি হয়। সাধারণত স্তূপ উপত্যকার কেন্দ্রে দেখা যায়। |
২. ভূত্বকের আপেক্ষিক অবস্থান | দুটি চ্যুতির মাঝখানের ভূভাগ পার্শ্ববর্তী অংশের অপেক্ষা অনেক উঁচু অবস্থানে থাকে। | দুটি চ্যুতির মাঝখানের অংশ পার্শ্ববর্তী অংশের অপেক্ষা নিচে অবস্থান করে। |
৩. সমলম্বতাযুক্তি ও চ্যুতিতালের বৈশিষ্ট্য | চ্যুতিতাল খাড়াভাবে হেলানো অবস্থায় উচ্চতার দুই-ই দিকে পারে। বিশেষ কোনো একপ্রকার চ্যুতি স্তূপ পর্বত সৃষ্টির জন্য নয়। | চ্যুতিতাল অভিকর্ষ ক্ষেত্রের বিপরীত দিকে হেলানো। ফলে সাধারণত স্তাভারিক চ্যুতিতাল মিলন ঘটে প্রশস্ত উপত্যকার ক্ষেত্রে দেখা যায়। |
৪. ভূগঠনের প্রকৃতি | স্তূপ পর্বতের পার্শ্বভাগ সাধারণত খুব খাড়া ঢাল গঠন করে। | উপত্যকার প্রান্ত বা পাশে, মৃদু ঢালযুক্ত হয়। |
৫. ভূত্বকগঠনের বৈশিষ্ট্য | পর্বতের শীর্ষভাগ প্রথমে সমতল থাকলেও পরবর্তীকালে ক্ষয়ের ফলে ত্রিভুজাকৃতি প্রান্ত হয়। ফলে তা স্পষ্ট স্তূপ উঁচু ঢাল ও অসমতা থাকে। | উপত্যকার দুই পাশে ফ্ল্যাঙ্ক সৃষ্টির মাধ্যমে সরু এবং খাড়া ভূমির প্রান্ত তৈরি হয়। ফলে প্রান্তে খাড়া ঢাল ও সমানভূমি থাকে। |
৬. নদীতল | অত্যন্ত বন্ধুর প্রকৃতির হওয়ায় এর ওপর দিয়ে নদী একেবারে প্রবাহিত হয় না। ফলে নদীতলের আকৃতি এক হয়। | অপেক্ষাকৃত কম বন্ধুর উপত্যকার ওপর দিয়ে নদী চলার উপযোগী এবং সহজ। ফলে নদীতলের আকৃতি প্রায় সরলরৈখিক হয়। |
5. সমনতল ও একনতল ভাঁজের মধ্যে পার্থক্য লেখো।
Ans: সমনতল ও একনতল ভাঁজের পার্থক্য: সমনতল ও একনতল ভাঁজের পার্থক্যগুলি হল –
বিষয় | সমনতল ভাঁজ | একনতল ভাঁজ |
১. ধারা | যে প্রকার ভাঁজে দুটি বাহু একই দিকে এবং একই নাটি বা কোনে হেলে থাকে, তখন তাকে সমনতল ভাঁজ বলা হয়। | যে ধরনের ভাঁজের শিলাস্তরের একটি বাহু হয়ে যায় এবং অপরটি খাড়া থাকে তাকে একনতল ভাঁজ বলে। |
২. বাহুর অবস্থান | সমনতল ভাঁজে দুটি বাহু পরস্পরের সঙ্গে সমানভাবে অবস্থান করে। | এই ভাঁজের একটি বাহু মোটামুটি অনুরূপিক এবং অপরটি খাড়াভাবে অবস্থান করে। |
৩. অক্ষরেখা | এই ভাঁজে অক্ষরেখা উল্লম্ব, অনুরূপিক বা তির্যক যেকোনোভাবে থাকতে পারে। | একনতল ভাঁজে অক্ষরেখা সবসময় একদিকে হেলানো অবস্থায় থাকে। |
৪. ভূমিরূপ | এই প্রকার ভাঁজ বন্ধুর এবং মৃদু ঢালযুক্ত ভাঁজলিপি পর্যন্ত সৃষ্টি করে। | ভাঁজের অনুরূপিক বাহু উঁচুস্তর এবং খাড়া বাহু ভূত্বক তৈরি করে। এভাবে উচ্চভূমি বা মালভূমি সৃষ্টি হয়ে থাকে। |
6. হোর্স্ট ও স্তূপ পর্বতের মধ্যে পার্থক্য লেখো।
Ans: হোর্স্ট ও স্তূপ পর্বতের পার্থক্য: হোর্স্ট ও স্তূপ পর্বতের মধ্যে পার্থক্যগুলি হল –
বিষয় | হোর্স্ট | স্তূপ পর্বত |
১. ধারা | দুটি প্রান্ত সমান্তরাল চ্যুতির ফলে মাঝখানের ভূমি পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের তুলনায় উঁচু অবস্থানে উঠে যে মালভূমিসদৃশ উচ্চভূমি বা পর্বত সৃষ্টি করে তাকে হোর্স্ট বলে। | দুটি তির্যক চ্যুতির মধ্যবর্তী ভূভাগ উপরে উঠে তির্যক ঢালের উপরে ভূমিরূপ সৃষ্টি করলেই তাকে স্তূপ পর্বত বলে। |
২. প্রকৃতি | হোর্স্ট স্তূপ পর্বতের একটি বিশেষ ধরণ। সব হোর্স্টই স্তূপ পর্বত। | সব স্তূপ পর্বতই হোর্স্ট নয়। |
৩. আকার | হোর্স্টের ক্ষেত্রে দুটি চ্যুতির মধ্যবর্তী অংশ সাধারণত উঁচু দিকে উঠে যায়। | অধিকাংশ স্তূপ পর্বতের ক্ষেত্রে দুটি চ্যুতির মধ্যের অংশ তির্যক বা হেলানোভাবে উঠে যায়। |
৪. উচ্চতা | স্তূপ পর্বতের চেয়ে হোর্স্ট ছোটো। | হোর্স্ট তুলনায় স্তূপ পর্বত অনেক বড়ো। |
৫. ঢাল | এক্ষেত্রে পর্বতের দুই-দিকের ঢাল মোটামুটি খাড়া হয়। | স্তূপ পর্বতের ক্ষেত্রে দুটি চ্যুতির উভয় অংশ খাড়া এবং অন্য অংশ মৃদু ঢালযুক্ত হয়। |
৬. চ্যুতি | চ্যুতি তির্যক প্রকৃতির হয়। | চ্যুতি তির্যক প্রকৃতির হয়। |
৭. উদাহরণ | ফ্রান্সের ভোজ, জার্মানির ব্ল্যাক ফরেস্ট, ভারতের সাতপুরা পর্বত এবং মালভূমি। | আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম অংশের গ্রেট বেসিন অঞ্চল এবং ভারতের পশ্চিমঘাট পর্বত। |
7. ভাঁজ ও চ্যুতির মধ্যে পার্থক্য লেখো।
Ans: ভাঁজ ও চ্যুতির পার্থক্য:
বিষয় | ভাঁজ | চ্যুতি |
১. ধারণা | শিলাস্তরের তরঙ্গের আকৃতি প্রাপ্তিকে ভাঁজ বলে। | ফাটল বরাবর শিলাস্তরের দুটি অংশের বিচ্যুতিকে চ্যুতি বলে। |
২. সৃষ্টির কারণ | সংকোচন ও প্রয়াণ বলের প্রভাবে শিলাস্তরের ভাঁজ সৃষ্টি হয়। | ভূত্বকের শিলাস্তরে সীস্মিক স্পন্দনের ফলে চ্যুতি সৃষ্টি হয়। |
৩. ভূ-আলোড়ন | গিরিজনী ভূ-আলোড়নের ফলে শিলার ভাঁজ পড়ে। | মহীভৌম ভূ-আলোড়নের ফলে শিলা চ্যুতি ঘটে। |
৪. প্রকৃতি | ভাঁজের ফলে শিলাস্তরে বক্রতা দেখা যায়। | চ্যুতির ফলে শিলাস্তরের ছিন্নতা দেখা যায়। |
৫. অবস্থান | ভাঁজযুক্ত শিলাস্তর একই স্থানে অবস্থান করে। | চ্যুতি ফলে শিলাস্তরের স্থানান্তর ঘটে। |
৬. আকস্মিকতা | মহীভৌম অথবা অন্তস্থীয় পাত সঞ্চালনের ফলে সমুদ্রের পরিবেশে ভাঁজ পড়ে। | ভূপৃষ্ঠীয় অথবা অন্তস্থীয় পাতের গতিশীলতার কারণে চ্যুতি সৃষ্টি হতে পারে। |
৭. উৎপন্ন ভূমিরূপ | ভাঁজ পর্বত, জোড়া গঠন, বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ভূমিরূপ প্রভৃতি। | স্তূপ পর্বত, প্রশস্ত উপত্যকা, চ্যুত ভূমি প্রভৃতি। |
8. আবহবিকার ও ক্ষয়িভবনের মধ্যে পার্থক্য লেখো।
Ans: আবহবিকার ও ক্ষয়িভবনের মধ্যে পার্থক্য:
বিষয় | আবহবিকার | ক্ষয়িভবন |
১. ধারণা | আবহাওয়ার বিভিন্ন উপাদানের মাধ্যমে যানবাহ ও রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় শিলাস্তরের বিঘ্নীকরণ হল ‘আবহবিকার’। | বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তির মাধ্যমে শিলাস্তরের চ্যুতিকরণ, বিঘ্নজনক ও অপসারণ হল ‘ক্ষয়িভবন’। |
২. অপসারণ | শিলার বিঘ্নীকরণের মাধ্যমে উপাদান পদার্থের অপসারণ ঘটে না, একে জায়গায় থাকে। তাই আবহবিকার একটি স্থৈর্য প্রক্রিয়া। | ক্ষয়িভবনের ফলে ক্ষুৎপিণ্ড চ্যুতিকরণ ও বিয়োজন হয়, অপসারণ হয়। তাই এটি গতিশীল প্রক্রিয়া। |
৩. উৎপাদিত পদার্থের অবস্থান | আবহবিকারনের মাধ্যমে উৎপন্ন পদার্থগুলি মূল শিলার ওপর কিংবা কাছাকাছি অবস্থান করে। | পদার্থসমূহ মূল শিলা থেকে বহুদূর বহিষ্কৃত হয়। |
৪. উৎপাদন | এই প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন, বৃদ্ধি ও আবরণ সঞ্চয়ের প্রক্রিয়া ঘটে। | এই প্রক্রিয়ায় নদী, বাতাসপ্রভৃতি, হিমবাহ, সাগরের প্রভাবে নতুন ভূমিরূপ থাকে। |
৫. পরবর্তী ক্রিয়া | আবহবিকারের শিলাস্তর ক্ষয়িভবনে দ্রুত ঘটে। | বিঘ্নীত শিলাস্তরের ক্ষয়িভবনের মাধ্যমে উপাদান অপসারণের পর পুনরায় আবহবিকার ঘটে। |
৬. প্রকৃতি | এটি অত্যন্ত ধীর প্রক্রিয়া। | এটি দ্রুতগামী প্রক্রিয়া। |
9. এনডুজেনেশন ও ইন্টিজেনেশন-এর মধ্যে পার্থক্য নির্দেশ করো।
Ans: এনডোজেনেশন ও ইন্টিজেনেশনের পার্থক্য:
বিষয় | এনডুজেনেশন | ইন্টিজেনেশন |
১. স্থান | এনডুজেনেশন পাতলা মাটির ওপরের স্তরে ঘটে থাকে। | ইন্টিজেনেশন পাতলা মাটির নিচের স্তরে ঘটে থাকে। |
২. পদার্থের স্থানান্তর | প্রৌঢ় প্রক্রিয়ায় মাটির উপরের স্তর থেকে নিচের স্তরে খনিজের অপসারণ ঘটে। | মাটির নিম্নস্তরে দ্রবীভূত খনিজের সঞ্চয় ঘটে। |
৩. বর্ণ | মাটির উপরের ধরণবিশেষ হয়ে থাকে এবং তত্ত্বের রং কালচে হয়ে থাকে। | মাটির নিচের স্তরে ধ্বসপ্রবণ ধরা যায় বা গাঢ় হয়। |
৪. পদ্ধতি | যানবাহক ও রাসায়নিক কণাগুলো এনডুজেনেশন ঘটে থাকে। এটি একটি পদার্থ বৃদ্ধির দরকার। | ইন্টিজেনেশনের পদার্থ দ্রবীভূত করে এনডুজেনেশন প্রক্রিয়ায় তা পদার্থে পৌঁছে। |
৫. স্তর গঠন | মাটির A স্তর গঠিত হয়। | মাটির B স্তর গঠিত হয়। |
10. আবহবিকার ও নদীভবনের মধ্যে পার্থক্য লেখো।
Ans: আবহবিকার ও নদীভবনের মধ্যে পার্থক্য:
বিষয় | আবহবিকার | নদীভবন |
১. ধারণা | আবহাওয়ার উপাদান (উষ্ণতা, বৃষ্টিপাত প্রভৃতি) দ্বারা শিলার নিজ স্থান বিঘ্নিত ও বিয়োজন হওয়ার প্রক্রিয়া। | আবহবিকার ও ক্ষয়িভবনের মাধ্যমে শিলাস্তরের ওপরের অংশ অপসারিত হলে নিচের শিলা উদ্ভুত হওয়ার প্রক্রিয়া। |
২. নির্ধারিততা | আবহবিকারের ওপর নির্ধারিত। | আবহবিকার ও ক্ষয়িভবনের ওপর নির্ধারিত। |
৩. ভূত্বকপত্র পরিবর্তন | ভূত্বকপত্র পরিবর্তন সরাসরি সম্পর্কযুক্ত নয়। | ভূমির ভূত্বকপত্র পরিবর্তনের সূচকভূমি দেখা যায়। |
11. আবহবিকার কীভাবে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে?
Ans: মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি ও আবহবিকার:
মাটির উর্বরতা বৃদ্ধিতে আবহবিকারের ভূমিকা: (1) আবহবিকারের মাধ্যমে সূক্ষ্ম শিলাংশে ভূত্বকের ওপর নমন আকারের তৈরি করে, যাকে রেজোলিয়ম বলে। এই রেজোলিয়ম মাটির খনিজ জলের মাধ্যমে মাটির নিচে ঢুকে যায় ও উদ্ভিদের প্রয়োজনীয় পুষ্টি জোগান দেয়। (2) ফলে আবহবিকার প্রক্রিয়ায় উদ্ভিদের শিকড় শিলার গভীরে ঢুকে পড়ে। (3) ছত্রাক, কেঁচো, ছুঁদ্র প্রজাতির অণুজীব, পোকামাকড় মাটিতে চলাচলের সুযোগ করে দিয়ে মাটির গুণমান বৃদ্ধি করে। (4) গাছের পাতা, ফুল, শিকড়, প্রাণীর দেহাবশেষ প্রভৃতি মাটির সাথে মিশে আবহবিকারের মাধ্যমে হিউমাস তৈরি করে, যা অধিকতর মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করে
12. আবহবিকারের সঙ্গে মাটির উৎপত্তির সম্পর্ক আলোচনা করো।
Ans: আবহবিকারের সঙ্গে মাটির উৎপত্তির সম্পর্ক: মাটির উৎপত্তিতে আবহবিকারের অবদান সর্বাধিক। কারণ যান্ত্রিক, রাসায়নিক ও জৈবিক আবহবিকারের ফলে আদি শিলা চূর্ণবিচূর্ণ ও বিয়োজিত হয়ে মৃত্তিকা করে। আবহবিকারের ফলে প্রথমে রেগোলিথ সৃষ্টি হয়। দ্বিতীয় পর্বে শুরু হয় মাটি গঠন প্রক্রিয়া। এই পর্বে হিউমিফিকেশন প্রক্রিয়ায় জীবাণুকুল মৃত উদ্ভিদ প্রাণীর দেহাবশেষকে পচন ক্রিয়ার মাধ্যমে হিউমাসে পরিণত করে। হিউমাস গঠনের সঙ্গে সঙ্গে খনিজকরণ প্রক্রিয়ায় জৈব-রাসায়নিক পদ্ধতিতে হিউমাস ও আবহবিকারজাত পদার্থ একত্রে নতুন খনিজের সৃষ্টি করে। এই দুটি প্রক্রিয়া চলাকালীন মাটির উপরিস্তর থেকে এলুভিয়েশন (Eluviation) পদ্ধতিতে দ্রবীভূত খনিজ ও অদ্রবীভূত মুক্ত মৌল মাটির নীচের স্তরে স্থানান্তরিত হয় এবং নিম্ন স্তরে ইলুভিয়েশন (Illuviation) প্রক্রিয়ায় ওইসব পদার্থ আবদ্ধ হয়। এভাবে আবহবিকার ও মাটির গঠন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মাটি গঠিত হয়।
13. ভাঁজ (Fold) সৃষ্টির প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করো।
Ans: ভাঁজ সৃষ্টির প্রক্রিয়া: সাধারণত স্তরযুক্ত শিলায় ভাঁজ পড়ে। তাই, পাললিক শিলায় ভাঁজ
গঠিত হয়। প্রাথমিক অবস্থায় শিলাস্তর সমতল তলবিশিষ্ট হয়। কিন্তু, যখন সমতল তলবিশিষ্ট এ জাতীয় শিলা অন্তর্জাত বলের প্রভাবে বক্রতলে পরিবর্তিত হয়, তখনই ভাঁজ গঠিত হয়।
ভাঁজ সৃষ্টির প্রক্রিয়ার শ্রেণিবিন্যাস: দুটি মুখ্য দৃষ্টিভঙ্গির পরিপ্রেক্ষিতে ভাঁজ সৃষ্টির প্রক্রিয়াকে ভাগ করা হয়। যেমন-
[1] জ্যামিতিক বা সরণজনিত প্রক্রিয়া: শিলাস্তরে আরোপিত বল যখন গতির সঞ্চার করে
ভাঁজের উৎপত্তি ঘটায়, তখন তাকে জ্যামিতিক বা সরণজনিত প্রক্রিয়া বলা হয়। শিলাস্তরে এই বল দু-ভাবে আসে। তাই, এই প্রক্রিয়াকে দুটি উপশ্রেণিতে ভাগ করা যায়। যথা- (i) আনত সরণ প্রক্রিয়া (Flexural Slip Mechanism) ও (ii) বিষম সহজ কৃত্তন প্রক্রিয়া (Heterogeneous Simple Shear Mechanism) I
(i) আনত সরণ প্রক্রিয়া: এক্ষেত্রে শিলার স্তরায়ণ তলের সমান্তরালে দুই প্রান্ত থেকে পীড়ন শুরু হয় যার মাত্রা সীমানায় সবচেয়ে বেশি হয় ও গ্রন্থির দিকে ক্রমশ কমতে কমতে গ্রন্থিরেখায় তা শূন্য হয়। সীমানায় পীড়ন বেশি কার্যকরী হওয়ায় স্তরায়ণ তল ওপরের দিকে অথবা নীচের দিকে বেঁকে যায় ও ভাঁজ প্রাপ্ত হয়। শিলাস্তরগুলিও বক্রতাকে অনুসরণ করে সমান্তরালভাবে বাইরের দিকে অথবা ভিতরের দিকে সরতে থাকে যা স্তর সমান্তরাল সরণ (Layer Paralled Slip) নামে পরিচিত। একটি মোটা বইকে দুপাশ থেকে চাপ দিলে অর্থাৎ একটি মোটা বইকে ভাঁজ করলে বক্রতা অনুযায়ী পাতগুলি যেভাবে সরে সরে যায় শিলাস্তরগুলিও ঠিক সেভাবে সরে যায়।
(ii) বিষম সহজ কৃন্তন প্রক্রিয়া: কৃন্তন প্রক্রিয়ায় ধরে নেওয়া হয় যে, শিলাস্তর স্তরায়ণ তলের
সাপেক্ষে আড়াআড়িভাবে অবস্থিত অদৃশ্য অসংখ্য অতি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ফালির সমন্বয়ে গঠিত। ফাটল বরাবর টুকরো ফালিসমূহের এদিক-ওদিক স্থানচ্যুতি বা স্খলনকে কৃত্তন (Shearing) বলে। প্রতিটি ফাটল প্রকৃতপক্ষে অতি ক্ষুদ্র চ্যুতি নির্দেশ করে। ভাঁজের উৎপত্তিতে এক্ষেত্রে পীড়ন স্তরায়ণ তলের সমান্তরালে কার্যকরী না হয়ে আড়াআড়িভাবে কার্যকরী হয়। কৃন্তন জনিত সরণের পরিমাণ শিলাস্তরের প্রান্তভাগে হয় শূন্য এবং তা গ্রন্থির দিকে ক্রমশ বাড়তে বাড়তে গ্রন্থিরেখায় সবচেয়ে বেশি হয়। তখন ওই অতি ক্ষুদ্র আড়াআড়ি ফালিগুলি শিলাস্তরের প্রায় সমান্তরালে এসে যায়। প্রান্তভাগ থেকে গ্রন্থিবিন্দু পর্যন্ত এভাবে অসমান কৃন্ডনের জন্য সমতলপৃষ্ঠ বক্রতলে পরিণত হয়ে ভাঁজ সৃষ্টি করে।
[2] সংযুক্ত পীড়নজনিত প্রক্রিয়া: অনুভূমিক স্তরের সাপেক্ষে পীড়ন বলের অবস্থান অনুযায়ী এই প্রক্রিয়াকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-বাকলিং ও বেন্ডিং।
(i) বাকলিং: বল যখন শিলাস্তরের সমান্তরালে দু-দিক থেকে কার্যকরী হয় তখন সংনমন বল অর্থাৎ চাপ-পীড়ন (Compressive Stress) উৎপন্ন হয়। এই উৎপন্ন বল সমগ্র স্তরকে ঢেকে রাখার মতো
অর্থাৎ মোড়কের মতো বাঁকিয়ে দিলে তাকে বাকলিং (Buckling) বলে। ঊর্ধ্ব বাকলিং-এ ঊর্ধ্বভাঁজ ও নিম্ন বাকলিং-এ অধোভাঁজ গঠিত হয়।
(ii) বেন্ডিং: সংযুক্ত পীড়ন যদি শিলাস্তরের আড়াআড়ি ঘটে তাহলে শিলাস্তর বলয়ের মতো মোচড় খায়, যাকে বলা হয় বেন্ডিং (Bending)।
14. আকৃতি অনুসারে ভাঁজের শ্রেণিবিভাগ করো।
Ans: আকৃতি অনুসারে ভাঁজের শ্রেণিবিভাগ: আকৃতি অনুসারে ভাঁজকে প্রধান চারটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
[1] ঊর্ধ্বভঙ্গ: যে প্রকার ভাঁজে শিলাস্তর প্রবল পার্শ্বচাপে ওপরের দিকে বাঁক নেয় বা উত্তল ভাঁজ তৈরি করে, তাকে ঊর্ধ্বভঙ্গ (Anticline) বলে। এই ঊর্ধ্বভঙ্গগুলি সাধারণভাবে পর্বতশীর্ষ তৈরি করে থাকে।
[2] অধোভঙ্গ: যে প্রকার ভাঁজে শিলাস্তর প্রবল পার্শ্বচাপে নীচের দিকে বাঁক নেয় বা অবতল ভাঁজ তৈরি করে, তাকে অধোভঙ্গ (Syncline) বলে। অর্থাৎ, উর্ধ্বভঙ্গের ঠিক বিপরীত ভাঁজ হল অধোভঙ্গ। এগুলি সাধারণভাবে উপত্যকা সৃষ্টি করে থাকে।
[3] ঊর্ধ্বভঙ্গধারা: যখন একটি বড়ো আকারের ঊর্ধ্বভঙ্গের মধ্যে অনেকগুলি ছোটো আকারের ঊর্ধ্বভঙ্গ এবং অধোভঙ্গের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়, তখন তাকে উর্ধ্বভাধারা (Anticlinorium) বলে। অনুভূমিক সংনমন বল প্রগাঢ় এবং নিয়মিতভাবে ক্রিয়াশীল হলে এটি সৃষ্টি হয়।
[4] অধোভলধারা: একটি বড়ো আকারের অধোভঙ্গের মধ্যে যখন অনেকগুলি ছোটো আকারের ঊর্ধ্বভঙ্গ ও অধোভঙ্গের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়, তখন তাকে অধোভাধারা (Synclinorium) বলা হয়। অনুভূমিক সংনমন বল অনিয়মিত হলে সাধারণত অধোভঙ্গ তৈরি করে।
15. অক্ষ ও অক্ষতলের অবস্থান অনুসারে ভাঁজের শ্রেণিবিভাগ করো। অথবা, বাহুর সাদৃশ্য ও অক্ষতল অনুসারে ভাঁজের শ্রেণিবিভাগ আলোচনা করো।
Ans: অক্ষ ও অক্ষতলের অবস্থান অনুসারে ডাঁজের শ্রেণিবিভাগ: অক্ষ ও অক্ষতলের অবস্থানের ভিত্তিতে প্রধানত সাত প্রকার ভাঁজ সৃষ্টি হয়। যথা-
[1] প্রতিসম ভাঁজ: যে ভাঁজের দু-পাশের বাহু সমান কোণে দু-দিকে হেলে থাকে এবং দুটি বাহু সমান দৈর্ঘ্যের হয়, তাকে প্রতিসম ভাঁজ (Symmetrical Fold) বলে।
বৈশিষ্ট্য: ভাঁজের দু-দিকের সংকোচনকারী বল সমান হলে এই প্রকার ভাঁজ সৃষ্টি হয় এবং এর অক্ষতল সর্বদা উল্লম্ব হয়।
[2] অপ্রতিসম ভাঁজ: যখন কোনো ভাঁজের একপাশে সংকোচন বল বেশি ও অন্য পাশে সংকোচন বল কম হয়, তখন অক্ষতল কম সংকোচনকারী বলের দিকে হেলে যায়। এই অবস্থায় একদিকের বাহু বড়ো হয় ও অন্যদিকের বাহু ছোটো হয় এবং বায়ু দুটির নতি ও নতির অভিমুখ ভিন্ন ভিন্ন হয়। এ ধরনের। ভাঁজকে অপ্রতিসম ভাঁজ (Asymmetrical Fold) বলে।
বৈশিষ্ট্য: এই ভাঁজের এক পাশের বাহু অন্য পাশের বাহু অপেক্ষা বেশি খাড়া হয় এবং অক্ষতল হেলে থাকে। শিবালিক ও মধ্য হিমালয়ের অধিকাংশ ভাঁজই অপ্রতিসম ভাঁজের উদাহরণ।
[3] আবৃত ভাঁজ: যে প্রকার অপ্রতিসম ভাঁজের অক্ষতল হেলে যায় এবং ভাঁজের বাহুদ্বয় একই দিকে কিন্তু ভিন্ন কোণ তৈরি করে হেলে পড়ে, তাকে আবৃত বা বিপর্যন্ত (overturned fold) ভাঁজ বলে। অসম পার্শ্বচাপের কারণেই মূলত এই ভাঁজ তৈরি হয়।
[4] সমনত বা সমপ্রবণ ভাঁজ: যখন কোনো আবৃত ভাঁজের দুটি বাহু একই দিকে এবং একই কোণে হেলে অবস্থান করে ও দুটি বাহু পরস্পরের সমান্তরালে নত থাকে, তাকে সমনত বা সমপ্রবণ (Isoclinal) ভাঁজ বলে। এই ভাঁজের দুটি বাহু উল্লম্ব থাকলে তাকে উল্লম্ব সমপ্রবণ ভাঁজ (Upright isoclinal) বলে এবং একদিকে হেলানো অবস্থায় থাকলে তাকে তির্যক সমপ্রবণ ভাঁজ (Inclined isoclinal) বলে।
[5] শায়িত ভাঁজ: একদিকে পার্শ্বচাপ অত্যধিক বেশি হলে সমনত বা সমপ্রবণ ভাঁজের অক্ষতল অনুভূমিক তলের সঙ্গে প্রায় সমান্তরালে (সর্বাধিক 10° কোণে) অবস্থান করে এবং একদিকের বাহু অন্যদিকের বাহুর ওপর পুরোপুরি উঠে যায়, তাকে শায়িত ভাঁজ (Recumbent Fold) বলে। দার্জিলিং-হিমালয় হল বিশালায়তন শায়িত ভাঁজের উদাহরণ।
বৈশিষ্ট্য: কোনো একদিকে সংকোচনশীল বলের মান অত্যন্ত বেশি হলে অপ্রতিসম ভাঁজ ভূমির সমান্তরাল হয়ে পড়ে এবং তার ফলে শায়িত ভাঁজের সৃষ্টি হয়।
[6] উদ্ঘউ ভাঁজ: শায়িত ভাঁজে অনুভূমিক চাপের পরিমাণ বেড়ে গেলে ভাঁজের মাঝ বরাবর শিলাস্তর ফেটে যায় এবং ভাঁজের একটি অংশ অন্য অংশ থেকে বিচ্যুত হয়। এই ভাঁজকে উদ্ঘট্ট ভাঁজ (Overthrust Fold) বলে। যেমন-পীরপাঞ্জাল পর্বতে উদ্ঘট্ট ভাঁজ দেখতে পাওয়া যায়।
[7] ন্যাপ ভাঁজ: বিশাল আকৃতির উদ্ঘট্ট ভাঁজগুলিতে অনুভূমিক চাপের পরিমাণ অত্যধিক বেড়ে গেলে বিচ্যুত হওয়া অংশটি অনেক দূরে কমপক্ষে 1.5 কিমি বা তারও বেশি দূরে এগিয়ে যায় এবং সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের স্থানীয় শিলাস্তরকে ঢেকে দেয়। একে ন্যাপ ভাঁজ (Nappe fold) বলে। Nappe একটি ফরাসি শব্দ যার অর্থ হল Table cloth ভারতের কাশ্মীর উপত্যকায় ন্যাপ দেখা যায়।
16. ভাঁজের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপগুলির বর্ণনা দাও।
Ans: ভাজের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ: শিলাস্তরে ভাঁজের গঠন বিভিন্ন ধরনের ভূমিরূপ সৃষ্টি করে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভূমিরূপেরও পরিবর্তন ঘটে।
[1] ভঙ্গিল পর্বতের গঠন: যখন মহাদেশীয় ও মহাসাগরীয় পাত একে অপরের দিকে অগ্রসর হয় তখন বেশি ঘনত্বের শিলা দ্বারা গঠিত মহাসাগরীয় পাতের চাপে হালকা মহাদেশীয় পাতের প্রান্ত বেঁকে যায় ও নিম্নখাতের সৃষ্টি হয়। একে মহীখাত বলা হয়। এই নিম্নখাতে পলি সঞ্চিত হতে থাকে।
পরবর্তী সময়ে যখন এই দুটি পাত পরস্পর আরও এগিয়ে আসে তখন বেশি ঘনত্বের মহাসাগরীয় পাত কম ঘনত্বের মহাদেশীয় পাতের তলায় প্রবেশ করে। ফলে চাপ আরও বেড়ে যায় ও মহীখাতে সঞ্চিত পলি ভাঁজ প্রাপ্ত হয়ে ওপরে উঠে ভঙ্গিল পর্বতের সৃষ্টি করে। রকি, আল্পস, হিমালয়-এর অন্যতম উদাহরণ।
[2] বন্ধুর ভূমিরূপ গঠন: শিলাস্তরে ঊর্ধ্বভঙ্গধারা বা অধোভঙ্গধারা থাকলে বিরাট অঞ্চল জুড়ে বন্ধুর ভূমিরূপ সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া পাখা ভাঁজ, বাক্স ভাঁজ, প্রভৃতি ভাঁজে বন্ধুর ভূমিরূপ সৃষ্টি হয়।
[3] নদী উপত্যকা গঠন: ভাঁজযুক্ত শিলাস্তরের প্রাথমিক ঢাল অনুযায়ী অনুগামী নদী (Consequent River) এবং অনুগামী নদীর বিপরীত ঢালে বিপরা নদী (Obsequent River) গঠিত হয়। অনুগামী নদীর পরে পরবর্তী নদী (Subsequent River) গঠিত হয় এবং কোমল শিলাস্তরের আয়াম বারাবর প্রবাহিত হয়।
17. চ্যুতির বিভিন্ন গাঠনিক বা জ্যামিতিক উপাদানগুলির চিত্র-সহ বিবরণ দাও। অথবা, বিভিন্ন প্রকার চ্যুতির ভূগাঠনিক উপাদানগুলি উপযুক্ত চিত্র-সহ আলোচনা করো।
Ans: চ্যুতির গাঠনিক বা জ্যামিতিক উপাদান: চ্যুতির বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য তার গাঠনিক বা জ্যামিতিক উপাদান দ্বারা জানা যায়। প্রধান প্রধান উপাদানগুলি হল-
[1] চ্যুতিতল: যে তল বা পৃষ্ঠ বরাবর শিলার খণ্ডিত অংশ বা খণ্ডিত শিলাস্তূপ একে অপরকে ঘর্ষণ করতে করতে দূরে সরে যায়, তাকে চ্যুতিতল (Fault Plane) বলে।
বৈশিষ্ট্য: চ্যুতিতলের নতি থাকে ও এটি মোটামুটি সমতল বা মসৃণ হয়।
[2] চ্যুতিরেখা: চ্যুতিতল এবং ভূপৃষ্ঠ যে রেখা বরাবর একে অন্যকে ছেদ করে, তাকে চ্যুতিরেখা (Fault Line) বলে।
বৈশিষ্ট্য: চ্যুতিরেখা সরল ও বক্র হয়।
[3] চ্যুতির নতি ও আয়াম: অনুভূমিক তলের সঙ্গে চ্যুতিতল যে কোণে হেলে থাকে, তাকে চ্যুতিতলের নতি বলে। অনুভূমিক তল ও চ্যুতিতল যে রেখা বরাবর একে অন্যকে ছেদ করে, তাকে চ্যুতির আয়াম (Strike) বলে।
বৈশিষ্ট্য: চ্যুতির নতির অভিমুখ ও পরিমাণ দুই-ই আছে। আয়াম সর্বদা নতি অভিমুখের সঙ্গে সমকোণে অবস্থান করে।
[4] চ্যুতিকোণ: চ্যুতিকোণ হল চ্যুতিতলের এক কৌণিক পরিমাপ। উল্লম্ব তলের সঙ্গে চ্যুতিতল যে কোণে অবস্থান করে বা হেলে থাকে, তাকে চ্যুতিকোণ বলে।
[5] ব্যবধি: চ্যুতির উর্ধ্বক্ষেপ ও অধোক্ষেপের মধ্যবর্তী অনুভূমিক বা পাশাপাশি দূরত্ব বা ব্যবধানকে ব্যবধি (Heave) বলে।
[6] ক্ষেপ: চ্যুতিতল বরাবর চ্যুতির দু-পাশের একই স্তরায়ণ তল বা শিলাস্তরের মধ্যবর্তী উল্লম্ব দূরত্ব বা ব্যবধানকে ক্ষেপ (Throw) বলে।
[7] ঊর্ধ্বস্তূপ বা ঝুলন্ত প্রাচীর ও অধোভূপ বা পাদমূল প্রাচীর: একটি চ্যুতিতলে দুটি পৃষ্ঠ থাকে। একটি হল উপর পৃষ্ঠ এবং অন্যটি হল তলার বা নীচের পৃষ্ঠ। চ্যুতিতলের উপর পৃষ্ঠে যে শিলাস্তূপ অবস্থান করে, তাকে ঝুলন্ত প্রাচীর (Hanging Wall) বলে। এক্ষেত্রে মনে হয়, চ্যুতিতলের ওপর থেকে শিলাস্তূপ যেন ঝুলে রয়েছে। আবার, যে পাশের শিলাস্তূপ চ্যুতিতলের নীচের পৃষ্ঠের সঙ্গে লেগে থাকে অর্থাৎ চ্যুতিতলের নীচে অবস্থান করে, তাকে পাদমূল প্রাচীর (Foot Wall) বলে।
বৈশিষ্ট্য: চ্যুতিতল উল্লম্ব হলে ঝুলন্ত প্রাচীর বা পাদমূল প্রাচীর সৃষ্টি হয় না। একমাত্র হেলানো চ্যুতিতলের ক্ষেত্রে এদের সৃষ্টি হয়।
[৪] ঊর্ধ্বক্ষেপ ও অধোক্ষেপ: উল্লম্ব বা হেলানো চ্যুতিতলের ক্ষেত্রে স্থানচ্যুত দুটি ভূখণ্ড একই উচ্চতায় অবস্থান করে না। চ্যুতিতল বরাবর যে ভূখণ্ডটি আপেক্ষিকভাবে অন্য ভূখণ্ডটি অপেক্ষা উঁচুতে অবস্থান করে, তাকে উর্ধ্বক্ষেপ (Upthrow) বলে। আর যে খণ্ডটি নীচুতে অবস্থান করে, তাকে অধোক্ষেপ (Downthrow) বলে।
18. উৎপত্তিগতভাবে বিভিন্ন প্রকার চ্যুতি চিত্র-সহ আলোচনা করো।
Ans: উৎপত্তিগতভাবে চ্যুতির শ্রেণিবিভাগ: চ্যুতিতল বরাবর দু-পাশের শিলাস্তূপের আপেক্ষিক ওঠা-নামার ভিত্তিতে চ্যুতির উৎপত্তিগত শ্রেণিবিভাগ করা হয়। এই শ্রেণির অন্তর্গত বিভিন্ন প্রকার চ্যুতি সম্বন্ধে আলোচনা করা হল-
[1] স্বাভাবিক চ্যুতি বা অনুলোম চ্যুতি: যে চ্যুতিতে চ্যুতিতল বরাবর অধোস্তূপ বা পাদমূল প্রাচীর
অপেক্ষা উর্ধ্বস্তূপ বা ঝুলন্ত প্রাচীর নীচের দিকে নেমে যায়, তাকে স্বাভাবিক চ্যুতি (Normal Fault) বা অনুলোম চ্যুতি বলে। শিলায় অনুভূমিক টান ও অভিকর্ষজ টানের কারণে এই চ্যুতি সৃষ্টি হয়। স্বাভাবিক চ্যুতির বৈশিষ্ট্যগুলি হল-
(i) ঊর্ধ্বস্তূপ, অধোস্তূপ অপেক্ষা নীচে অবস্থান করে। নতি ঢাল ও অভিকর্ষজ টানকে অনুসরণ করে এই চ্যুতি ঘটে।
(ii) অধিকাংশ ক্ষেত্রে চ্যুতিতলের নতির পরিমাণ বেশি হয়।
(iii) হেড ও ব্যবধির পরিমাণ সাধারণত কম হয়।
(iv) ভূপৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল বেড়ে যায়।
(v) ভূমিরূপ হিসেবে খাড়া চ্যুতিতে তৃণুতট সৃষ্টি হয়।
(vi) চ্যুতিতল উল্লম্ব ও হেলানো দুই-ই হয়।
(vii) ভূত্বকে টানের প্রভাবে এই চ্যুতি সৃষ্টি হয়।
[2] বিপরীত চ্যুতি বা বিলোম চ্যুতি: সংনমন বল খুব বেশি হলে খাড়া চ্যুতিতল বরাবর অধোস্তূপের বা পাদমূল প্রাচীরের ওপর ঊর্ধ্বস্তূপ বা ঝুলন্ত প্রাচীর উঠে এসে যে চ্যুতি গঠিত হয়, তাকে বিপরীত বা বিলোম চ্যুতি (Reserve Fault) বলে। এই চ্যুতি অভিকর্ষজ টানের বিপরীতে ঘটে থাকে। তাই একে বিপরীত চ্যুতি বলা হয়। বিপরীত চ্যুতির প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি হল-
(i) সংনমনের ফলে বিপরীত চ্যুতি ঘটে।
(ii) ঊর্ধ্বস্তূপ, অধোস্তূপের ওপর উঠে যায়। নতির অভিমুখ ও অভিকর্ষজ টানের বিপরীতে এই চ্যুতি ঘটে।
(iii) চ্যুতিতলের নতি 45° বা এর কম হয়।
(iv) চ্যুতিকোণ ও ব্যবধির পরিমাণ বেশি হয়।
(v) ভূপৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল কমে যায়।
(vi) ভূমিরূপ হিসেবে ঝুলন্ত তৃণু থাকে এবং ধসের ফলে ভূমিচালের পরিবর্তন ঘটে।
(vii) চ্যুতিতল হেলানো হয়।
[3] সোপান চ্যুতি ও পরিখা চ্যুতি: ক্রমাগত ভূ-আলোড়নের ফলে অনেক সময় একই সঙ্গে পরপর কতকগুলি স্বাভাবিক চ্যুতি শ্রেণিবন্ধভাবে সৃষ্টি হয়। এর ফলে দেখা যায় যে, চ্যুতিতল বরাবর একটার পর একটা ঊর্ধ্বস্তূপ বা ঝুলন্ত প্রাচীর সিঁড়ির ধাপের মতো নীচের দিকে নেমে গেছে। এভাবে গঠিত স্বাভাবিক চ্যুতিগোষ্ঠীকে সোপান চ্যুতি (Step Fault) বলে। চ্যুতিগুলির নতির মান সাধারণত পৃথক হয় এবং চ্যুতিগুলি অসমান্তরালভাবে অবস্থান করে। তবে প্রত্যেকটি চ্যুতির নতির মান সমান থাকলে এগুলি সমান্তরালভাবে অবস্থান করে। পশ্চিম ইউরোপে একদিকে ফ্রান্সের ভোজ পর্বত এবং অন্যদিকে জার্মানির ব্ল্যাক ফরেস্ট পর্বত থেকে ধাপে ধাপে সোপান চ্যুতি নেমে মধ্যভাগের রাইন নদী-সংলগ্ন গ্রস্ত উপত্যকায় মিশেছে।
যদি দু-পাশ থেকে সোপান চ্যুতি এভাবে সৃষ্টি হয়, তাহলে এই দুই চ্যুতি পরস্পরের দিকে এগিয়ে এসে একত্রে মিলিত হয়। ফলে এই দুই চ্যুতির মাঝখানের ব্যবধান কমে যায়। ফলে স্থানটি একটি সংকীর্ণ ফালির আকার ধারণ করে, যা সরু পরিখার মতো দেখতে লাগে। এভাবে পরিখা চ্যুতি (Trough Fault) গঠিত হয় এবং সোপান চ্যুতি এভাবে পরিখা চ্যুতির ক্ষেত্র প্রস্তুত করে।
[4] প্লাস্ট বা সংঘউ চ্যুতি: বিলোম চ্যুতির চ্যুতিতলের নতির পরিমাণ 45°-র কম হলে তাকে থ্রাস্ট চ্যুতি (Thrust Fault) বা সাধারণভাবে থ্রাস্ট (Thrust) বলা হয়। ভূ-আলোড়ন ঘন ঘন ও তীব্র হলে চ্যুতিতল বেশি মাত্রায় হেলে গিয়ে থ্রাস্ট গঠন করে। ভঙ্গিল পর্বতের শায়িত ভাঁজে চাপ বেশি পড়লে ভাঁজ-অক্ষ বরাবর থ্রাস্ট চ্যুতি গঠিত হয়। হিমালয় পর্বতে বহু গ্রাস্ট চ্যুতি দেখা যায়।
(i) ওভারগ্লাস্ট বা উদ্ঘট্ট চ্যুতি: থ্রাস্ট চ্যুতির ক্ষেত্রে যখন চ্যুতিতলের নতি 10° কিংবা আরও কম হয় এবং ঝুলন্ত প্রাচীর চ্যুতিতল বরাবর পাদমূল প্রাচীরের ওপর দিয়ে বহুদুরে সরে যায়, তখন তাকে অধিরোপণ বা উদ্ঘট বা ওভারগ্রাস্ট চ্যুতি (Over Thrust) বলে।
(ii) আন্ডারথ্রাস্ট বা অধোঘট্ট চ্যুতি: থ্রাস্ট চ্যুতির ক্ষেত্রে চ্যুতিতলের নতি 10° বা তার কম হয় এবং পাদমূল প্রাচীর যদি চ্যুতিতল বরাবর ভূত্বকের আরও গভীরে জোরপূর্বক ঢুকে যায়, তখন তাকে অবরোপণ বা অধোঘট্ট বা আন্ডারথ্রাস্ট চ্যুতি (Under Thrust) বলা হয়।
19. চ্যুতির ফলে সৃষ্ট প্রত্যক্ষ ভূমিরূপগুলির চিত্র-সহ বর্ণনা দাও।
Ans: চ্যুতির ফলে সৃষ্ট প্রত্যক্ষ ভূমিরূপসমূহ: চ্যুতির ফলে সৃষ্ট প্রত্যক্ষ ভূমিরূপগুলি হল-
[1] হোস্ট বা স্তূপ পর্বত: উৎপত্তিগত দিক থেকে হোস্ট ও স্তূপ পর্বত একই শ্রেণির অন্তর্গত হলেও এদের আলাদাভাবে চেনা যায়। প্রায় সমান্তরাল দুটি চ্যুতির মাঝখানের ভূখণ্ড ওপরে উঠে গিয়ে কিংবা বিস্তীর্ণ ভূভাগের চারপাশের অঞ্চল বসে গেলে যে বিস্তৃত উচ্চভূমি সৃষ্টি হয়, তাকে হোস্ট (Horst) বলা হয়। প্রথমে হোর্স্টের শীর্ষদেশ মালভূমির মতো চ্যাপটা হয়। কিন্তু পরে এটি নদনদীর দ্বারা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে পর্বতের আকার ধারণ করে। তখন একে স্তূপ পর্বত (Block Mountain) বলে। তবে দুটি তির্যক চ্যুতির মাঝখানে উত্থিত উচ্চভূমি হল প্রকৃত স্তূপ পর্বত।
[2] গ্রস্ত উপত্যকা: দুটি স্বাভাবিক চ্যুতির মাঝখানের ভূভাগ বসে যাওয়ার ফলে অথবা চ্যুতিসংলগ্ন ভূমিভাগের চারপাশের অঞ্চল উঠে যাওয়ার ফলে যে নীচু ভূমিভাগ বা উপত্যকার সৃষ্টি হয়, তাকে গ্রস্ত উপত্যকা (Rift Valley) বলে। দুটি বিপরীত চ্যুতির দ্বারা সৃষ্ট গ্রস্ত উপত্যকাকে র্যাম্প উপত্যকা বলা হয়। ভারতের নর্মদা ও তাপ্তি নদীর উপত্যকা, ইউরোপের রাইন নদীর উপত্যকা গ্রস্ত উপত্যকার প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
[3] চ্যুতি ভৃগু বা চ্যুতি খাড়া ঢাল: চ্যুতি গঠিত হলে ঊর্ধ্বস্তূপ ও অধোস্তূপের মাঝখানে যে খাড়া ঢালের দেয়াল প্রকাশিত হয় তাকে চ্যুতি ভৃগু (Fault Scarp) বলে। চ্যুতি গঠনের ঠিক পরেই অর্থাৎ চ্যুতি গঠনের প্রত্যক্ষ ভূমিরূপ হিসেবে চ্যুতি ভৃগু দেখা যায়। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের গ্রেট বেসিন অঞ্চল-এর উদাহরণ।
20. আবহবিকার ও পুঞ্জিত ক্ষয়ের ধারণা সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করো।
Ans: আবহবিকারের ধারণা: আবহাওয়ার বিভিন্ন উপাদান (বৃষ্টিপাত, উষ্ণতা, আর্দ্রতা, বায়ুর চাপ, তুষারপাত প্রভৃতি)-এর মাধ্যমে ভূত্বকের উপরিভাগের শিলাসমূহের ভৌত বা রাসায়নিক পরিবর্তন হয় এবং তার ফলে শিলাস্তর ক্রমশ শিথিল হতে হতে ছোটো ছোটো শিলাখণ্ডে ও শিলাচূর্ণে পরিণত হয়। এই প্রক্রিয়াকে আবহবিকার বলে।
[1] নামকরণ: আবহাওয়ার বিভিন্ন উপাদান দ্বারা শিলার ‘বিকার’ বা ‘পরিবর্তন’ ঘটে বলে প্রক্রিয়াটির নামকরণ করা হয়েছে আবহবিকার।
[2] নিয়ন্ত্রক: আবহবিকারের প্রধান নিয়ন্ত্রকগুলি হল-জলবায়ু, উদ্ভিদ, ভূপ্রকৃতি, আদি শিলার প্রকৃতি, সময়, মানুষ ও অন্যান্য প্রাণী প্রভৃতি।
[3] প্রকারভেদ: আবহবিকার মূলত তিনপ্রকার। যথা- (ii) যান্ত্রিক আবহবিকার (শিলা চূর্ণবিচূর্ণ হয়), (ii) রাসায়নিক আবহবিকার (শিলার বিয়োজন হয়) এবং (iii) জৈবিক আবহবিকার (উদ্ভিদ ও প্রাণীর দ্বারা শিলার পরিবর্তন হয়)।
[4] বৈশিষ্ট্য: (i) আবহবিকারে শিলার বিচূর্ণন ও বিয়োজন ঘটে, (ii) এটি একটি স্থৈতিক বা স্থিতিশীল প্রক্রিয়া, (iii) এর মাধ্যমে শিলাচূর্ণের অপসারণ হয় না, (iv) আবহবিকারের শক্তি শিলার গঠন, শিলার প্রকৃতি ও আবহাওয়ার ওপর নির্ভরশীল, (v) এটি অত্যন্ত ধীর প্রক্রিয়া।
[5] প্রভাব: (1) আবহবিকারের ফলে গোলাকৃতি পাহাড়, ইনসেলবার্জ, স্ট্যালাকটাইট, স্ট্যালাগমাইট, সিঙ্কহোল, গুহা প্রভৃতি ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়, (ii) মৃত্তিকা সৃষ্টিতেও আবহবিকারের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ, (iii) আবহবিকারের ফলে শিলাস্তূপের উচ্চতা কমে যায় এবং তাই ভূপৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল বাড়ে। (iv) আবহবিকারের অবশিষ্টাংশ হিসেবে ভূপৃষ্ঠে প্রচুর পরিমাণে অদ্রবীভূত সিলিকা বা বালি পাওয়া যায়।
পুঞ্জিত ক্ষয়ের ধারণা: কোনো উচ্চভূমির ঢাল বরাবর আবহবিকারজাত নুড়ি, পাথর প্রভৃতি যখন অভিকর্ষজ বলের প্রভাবে নীচের দিকে নামতে থাকে তখন তাকে পুঞ্জিত ক্ষয় (Mass wasting) বলে।
[1] নামকরণ: উচ্চভূমির ঢাল বরাবর আবহবিকারসৃষ্ট শিলাচূর্ণ ‘স্তূপ’ বা ‘পুঞ্জ’ আকারে নেমে আসে বলে এরূপ নামকরণ হয়েছে।
[2] নিয়ন্ত্রক: পুঞ্জিত ক্ষয়ের নিয়ন্ত্রকগুলি হল-ভূমির ঢাল, উচ্চতা, আবহবিকারসৃষ্ট পদার্থের আকৃতি ও পরিমাণ, উদ্ভিদের উপস্থিতি, উষ্ণতা, বৃষ্টিপাত, অভিকর্ষজ বল প্রভৃতি। এ ছাড়া জল, বায়ু, বরফ প্রভৃতিও পুঞ্জিত ক্ষয়কে প্রভাবিত করে।
[3] প্রকারভেদ: পুঞ্জিত ক্ষয় মূলত চারপ্রকার- (i) ধীর প্রবাহ, (ii) দ্রুত প্রবাহ, (iv) ধস ও (v) অবনমন। আবার, প্রকৃতি অনুসারে পুঞ্জিত ক্ষয় বিভিন্ন প্রকার হয়- (i) মৃত্তিকা প্রবাহ, (ii) কর্দম প্রবাহ, (iii) ভূমিধস।
[4] বৈশিষ্ট্য: (i) পুঞ্জিত ক্ষয় ঢালযুক্ত ভূমিভাগে দেখা যায়, (ii) অভিকর্ষজ বলের প্রভাবে পুঞ্জিত ক্ষয় সক্রিয় হয়, (iii) পুঞ্জিত ক্ষয় ধীর বা দ্রুতগতিতে হতে পারে, (iv) এই প্রক্রিয়ায় ক্ষয়িত পদার্থ প্রাকৃতিক বহনকারী শক্তির (নদী, বায়ু, হিমবাহ প্রভৃতি) দ্বারা বাহিত হয় না।
[5] প্রভাব: (i) পাহাড়ি অঞ্চলে পুঞ্জিত ক্ষয়ের ফলে ধস নামে, (ii) পুঞ্জিত ক্ষয়ের ফলে জীবন ও সম্পদহানি ঘটে, (iii) পুঞ্জিত ক্ষয়ের ফলে খাড়া ঢাল, ভূমিঢালে ক্ষয়, ট্যালাস, শঙ্কু প্রভৃতি ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়।
21. যান্ত্রিক আবহবিকারের প্রধান 5 টি প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করো।
Ans: যান্ত্রিক আবহবিকারের বিভিন্ন প্রক্রিয়া: আবহবিকারের প্রধান প্রক্রিয়াগুলি হল –
প্রস্তরচাঁই খন্ডীকরণ: উষ্ণতার প্রভাবে শিলা যখন চাঁই বা ব্লকের মতো বিভিন্ন খণ্ডে বিভক্ত হয়, তখন তাকে প্রস্তরচাঁই খন্ডীকরণ (Block disintegration) বলে।
(i) পদ্ধতি: শিলা তাপের কুপরিবাহী হওয়ায় উষ্ণতার তারতম্যের ফলে শিলার বাইরের এবং ভেতরের স্তরের মধ্যে প্রসারণ ও সংকোচনের পার্থক্য ঘটে। এই অসম সংকোচন-প্রসারণের ফলে শিলাস্তরে একাধিক অনুভূমিক ও উল্লম্ব ফাটল সৃষ্টি হয়। এই ফাটল বরাবর একাধিক খণ্ডে শিলাস্তর ভাগ হয়ে যায়।
(ii) বৈশিষ্ট্য: যান্ত্রিক আবহবিকারের বৈশিষ্ট্যগুলি হল [a] ব্যাসল্ট শিলায় যান্ত্রিক আবহবিকার বেশি দেখা যায়। [৮] এই আবহবিকারের ফলে শিলায় অনুভূমিক ও উল্লম্বভাবে একাধিক ফাটল সৃষ্টি হয়। [c] এই ধরনের আবহবিকারের ফলে শিলার চৌকাকারে বিচূর্ণন ঘটে এবং [d] চাঁইয়ের আকারে শিলা বিভক্ত হয়।
(iii) অবস্থান: অধিক উষ্ণতাযুক্ত অঞ্চলে বিশেষত উষ্ণ মরুভূমিতে এই আবহবিকার দেখা যায়।
[2] শল্কমোচন: ‘শল্ক’ শব্দের অর্থ বাকল (গাছের ছাল)। উষ্ণতার প্রভাবে শিলাস্তর বাকলের মতো খুলে যায় ও চূর্ণবিচূর্ণ হয়। এই প্রক্রিয়াকে শল্কমোচন (Exfoliation) বলে।
(i) পদ্ধতি: সমসত্ত্ব শিলার ভেতর ও বাইরের অংশের মধ্যে উষ্ণতার প্রভাবে প্রসারণ (দিনের বেলায়) ও সংকোচন (রাত্রিবেলায়) সমহারে হয় না। তাই ওপরের শিলাস্তর পেঁয়াজের খোসার মতো মূল শিলা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে চূর্ণবিচূর্ণ হয়। এজন্য এইপ্রকার আবহবিকারকে Onion Weathering-3 বলা হয়।
(ii) বৈশিষ্ট্য: শল্কমোচনের বৈশিষ্ট্যগুলি হল [a] এই আবহবিকার গ্র্যানাইট শিলায় বেশি দেখা যায়। [b] এই ধরনের আবহবিকারের ফলে উচ্চভূমির মাথাগুলি গোলাকার হয় এবং [c] সমসত্ত্ব শিলায় এই ধরনের আবহবিকার ঘটে।
(iii) অবস্থান: সাহারা, থর প্রভৃতি উষ্ণ মরুভূমিতে শল্কমোচন প্রক্রিয়া বেশি দেখা যায়।
[3] ক্ষুদ্রকণা বিসরণ: উষ্ণতার হ্রাসবৃদ্ধির ফলে অসম চরিত্রের খনিজে গঠিত শিলাগুলির ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণায় বিভক্ত হওয়ার প্রক্রিয়াকে ক্ষুদ্রকণা বিসরণ (Granular disintegration) বলা হয়।
(i) পদ্ধতি: অসমসত্ত্ব শিলার খনিজগুলির তাপ গ্রহণ ও বর্জনের হার আলাদা হওয়ায় অসম প্রসারণ ও সংকোচনের কারণে শিলাটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায়।
(ii) বৈশিষ্ট্য: ক্ষুদ্রকণা বিসরণের বৈশিষ্ট্যগুলি হল-[a] অসমসত্ত্ব শিলায় এই আবহবিকারের প্রক্রিয়া ঘটে থাকে। [৮] শিলাগুলি ফাটলে বন্দুকের গুলি ছোঁড়ার মতো শব্দ হয় এবং [c] এই আবহবিকারের মাধ্যমে কালক্রমে বালুকণা সৃষ্টি হয়।
(iii) অবস্থান: উষ্ণ মরুভূমি অঞ্চলে যেখানে দৈনিক উষ্ণতার প্রসর বেশি, সেখানে এই প্রক্রিয়া বেশি দেখা যায়।
[4] তুষারের কার্য: শীতল জলবায়ুতে তুষারের কেলাস গঠনের দ্বারা যান্ত্রিক উপায়ে শিলা চূর্ণবিচূর্ণ হয়।
(i) পদ্ধতি: তুন্দ্রা ও মেরু অঞ্চল এবং শীতল পার্বত্য অঞ্চলে শিলাস্তরের ফাটলে জমা জল তুষার কেলাসে পরিণত হলে আয়তনে বেড়ে যায় এবং তখন শিলাগাত্রে চাপ পড়ে ও শিলা বিচূর্ণ হয়।
(ii) বৈশিষ্ট্য: তুষারের কেলাস গঠনের ফলে সৃষ্ট আবহবিকারের বৈশিষ্ট্যগুলি হল-[a] তুষারের কেলাস গঠনের মাধ্যমে এই আবহবিকার ঘটে। [৮] পর্বতের পাদদেশে ও ঢালে শঙ্কু আকৃতির টুকরো টুকরো শিলা বা শিলাখণ্ড জমে নুড়িক্ষেত্র সৃষ্টি হয়। এর নাম স্ত্রী বা ট্যালাস।
(iii) অবস্থান: শীতল জলবায়ু অঞ্চলে এই ধরনের আবহবিকার দেখা যায়।
[5] কলয়েড প্লাকিং: আর্দ্র মাটি বা কলয়েডের সংস্পর্শে শিলাস্তর দীর্ঘদিন ধরে থাকলে, তবে সেগুলির আকর্ষণে ওই শিলাস্তরের ওপর চাপ পড়ে। ফলস্বরূপ ওই শিলাস্তর আলগা হয়ে পড়ে এবং খন্ডিত ও বিচ্ছিন্ন হয়, একে কলয়েড উৎপাদন বা কলয়েড প্লাকিং বলে। কারণ আর্দ্রমাটি বা আঠালো মাটি শুকনো হওয়ার সময় যে টান বা আকর্ষণ তৈরি করে, তাতেই এই আবহবিকার ঘটে।
22. আবহবিকারের ফলে কীভাবে মৃত্তিকার সৃষ্টি হয় তা ব্যাখ্যা করো।
Ans: আবহবিকারের ফলে মৃত্তিকার সৃষ্টি: আবহবিকারের ফলে মৃত্তিকার সৃষ্টির প্রক্রিয়াকে কয়েকটি পর্যায়ের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে, যেমন-
[1] রেগোলিথ সৃষ্টি: যান্ত্রিক, রাসায়নিক ও জৈবিক আবহবিকারের মাধ্যমে আদি শিলা ক্রমাগত চূর্ণবিচূর্ণ ও বিয়োজিত হয়ে শেষে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণায় পরিণত হয় এবং ভূমির ওপর এক শিথিল, কোমল বস্তুকণার আবরণ সৃষ্টি করে, যার নাম রেগোলিথ বা ভূ-আস্তরণ। এটিই হল মৃত্তিকা সৃষ্টির মূল উপাদান এবং প্রথম পর্ব ও অন্যতম শর্ত।
[2] হিউমিফিকেশন: রেগোলিথ সৃষ্টির পর তার ওপর জীবদেহজাত নানা ধরনের জৈব পদার্থ (মৃত প্রাণী ও উদ্ভিদের দেহাবশেষ) জমতে থাকে। তখন ভূমির উপরিভাগের বিভিন্ন প্রকার অণুজীব বা সূক্ষ্ম জীবাণু (যেমন-ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক ইত্যাদি) ওই জৈব পদার্থকে ক্রমশ বিয়োজিত করে বা পচিয়ে এক ধরনের জটিল কালো পদার্থ সৃষ্টি করে, যার নাম হিউমাস। আর এই প্রক্রিয়াটিকে বলে হিউমিফিকেশন।
[3] খনিজিকরণ/এলুভিয়েশন ও ইলুভিয়েশন: উৎপন্ন হিউমাস ও আবহবিকারজাত পদার্থসমূহ বায়ুমণ্ডলের অক্সিজেন দ্বারা জারিত হয়ে অত্যন্ত জটিল রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় নতুন নতুন খনিজ সৃষ্টি করে। এই প্রক্রিয়াটিকে বলে খনিজকরণ। মাটি সৃষ্টির এইসব প্রক্রিয়া চলার সময় মাটির উপরিভাগ থেকে লোহা, অ্যালুমিনিয়াম প্রভৃতি খনিজ পদার্থ এলুভিয়েশন পদ্ধতিতে নিম্নস্তরে চলে যায় এবং ইলুভিয়েশন প্রক্রিয়ায় সঞ্চিত হয়।
এইভাবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মাটির উপাদানসমূহের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্ম পরিবর্তিত হয় এবং ধীরে ধীরে জৈব ও খনিজ পদার্থ সমৃদ্ধ এক নরম শিথিল পরিণত স্তর ভূত্বকের উপরিভাগে সৃষ্টি হয়, যার নাম মৃত্তিকা।
সুতরাং, আবহবিকারজাত পদার্থকে মূল। উপাদান হিসেবে গ্রহণ করে মৃত্তিকা সৃষ্টিকারী প্রক্রিয়াসমূহ বিভিন্ন প্রকার জৈবিক ও জৈব-রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পৃথিবীপৃষ্ঠে মৃত্তিকাস্তর গঠন করে। আর এজন্যই বলা হয় মৃত্তিকা সৃষ্টিতে আবহবিকারের অবদান সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ।
23. মাটি গঠনে সক্রিয় উপাদানগুলির প্রভাব সম্পর্কে লেখো।
Ans: মাটি গঠনে সক্রিয় উপাদানগুলির প্রভাব: মাটি গঠনে প্রত্যক্ষ বা সক্রিয় উপাদান দুটি হল – [1] জলবায়ু ও [2] জীবজগৎ। নিষ্ক্রিয় উপাদান অপেক্ষা মাটির উৎপত্তিতে এদের প্রভাব বেশি দেখা যায়।
[1] জলবায়ু: মাটি গঠনে জলবায়ু সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। জলবায়ুর দুটি প্রধান উপাদান হল-বৃষ্টিপাত ও উষ্ণতা।
(i) বৃষ্টিপাত: মাটির যে বৈশিষ্ট্যগুলি বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ও তীব্রতার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, সেগুলি হল – [a] বৃষ্টিপাত বেশি হলে মাটিতে হাইড্রোজেন আয়নের পরিমাণ বেড়ে যায়। ফলে pH-এর পরিমাণ কমে এবং মাটি আম্লিক হয়। [৮] বেশি বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলে উদ্ভিদের প্রাচুর্য লক্ষ করা যায়। ফলে ওইসব অঞ্চলে বেশি জৈব পদার্থের সঞ্চয়ের কারণে মৃত্তিকায় নাইট্রোজেনের পরিমাণ বেড়ে যায়। [c] চুনাপাথর গঠিত অঞ্চলে বেশি বৃষ্টিপাত হলে ক্যালশিয়াম কার্বনেট কার্বনেশন পদ্ধতিতে ক্যালশিয়াম বাই-কার্বনেটে পরিণত হয়ে মাটির অনেক গভীরে স্থানান্তরিত হয়। [d] আর্দ্র-ক্রান্তীয় অঞ্চলে বেশি বৃষ্টিপাতের কারণে রাসায়নিক আবহবিকার দ্রুত হয় এবং মাটিতে কাদার পরিমাণ বাড়ে। [e] আর্দ্র-ক্রান্তীয় জলবায়ু অঞ্চলে এলুভিয়েশন পদ্ধতিতে পটাশিয়াম, সোডিয়াম, ক্যালশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম প্রভৃতি মাটির ওপরের স্তর থেকে নীচের স্তরে অপসৃত হয়। [f] মরুভূমি ঞ্চলে মাটি রাসায়নিক আবহবিকারের মাধ্যমে ক্যালশিয়াম, পটাশিয়াম, সোডিয়াম, অঞ্চলে ম্যাগনেশিয়াম প্রভৃতি খনিজ মুক্ত হলেও, এখানে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় মৃত্তিকার উর্ধ্বস্তর থেকে অপসৃত হয় না। [৪] বৃষ্টিপাত ও বাষ্পীভবনের অনুপাতের ওপর নির্ভর করে যেখানে ধৌত প্রক্রিয়ায় মুক্ত ক্যালশিয়াম অপসারিত হয়ে কেবল অ্যালুমিনিয়াম ও লোহার অক্সাইড পড়ে থাকে, সেখানে পেডালফার (Pedalfer = Ped-Al-Fe-rs) মৃত্তিকা সৃষ্টি হয়। তুন্দ্রা মৃত্তিকা, পডসল ও ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা এর উদাহরণ। [h] বাষ্পীভবন অপেক্ষা বৃষ্টিপাত কম হলে (শুষ্ক জলবায়ুতে) কৈশিক প্রক্রিয়ায় মৃত্তিকার নীচ থেকে ওপরের দিকে ক্যালশিয়াম কার্বনেট ও লবণ উঠে এসে মাটির ওপরের স্তরে সঞ্চিত হয়। এভাবে পেডোক্যাল (Pedocal = Pedo-Ca-Ls) মৃত্তিকার সৃষ্টি হয়। চেস্টনাট, চারনোজেম মৃত্তিকা এই শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত।
(ii) উষ্ণতা: উষ্ণতা দ্বারা মৃত্তিকার নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যগুলি নিয়ন্ত্রিত হয় [a] অধিক উষ্ণতার জন্য আবহবিকার ভূত্বকের অনেক গভীরতা (Deep Weathering) পর্যন্ত ক্রিয়াশীল থাকে। [৮] তাপমাত্রা বেশি হলে জৈব পদার্থ ও নাইট্রোজেনের পরিমাণ হ্রাস পায়। [c] আর্দ্র-ক্রান্তীয় অঞ্চলে গড় বার্ষিক
উষ্ণতা বেড়ে গেলে রাসায়নিক বিয়োজন বেশি হয় ও মাটিতে কাদার পরিমাণ বেড়ে যায়। [d] আর্দ্র-ক্রান্তীয় অঞ্চলে উষ্ণতা বেড়ে গেলে সিলিকা সেসক্যুইঅক্সাইডের অনুপাত কমে যায়।
[2] জীবজগৎ: উদ্ভিদ ও প্রাণী হল জীবজগতের প্রধান দুটি উপাদান। এরা মাটি গঠনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা গ্রহণ করে। যেমন-
(i) উদ্ভিদের শিকড় শিলার ফাটলের মধ্যে প্রবেশ করে এবং জল ও বাতাসের চলাচলের পথ তৈরি করে দেয়। এর ফলে যান্ত্রিক ও রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় শিলা চূর্ণবিচূর্ণ হয়।
(ii) মাটির নীচে উদ্ভিদ দেহের মৃত ও পচে যাওয়া অংশ থেকে উৎপন্ন জৈব অম্ল মাটিতে মিশে যায়। এ ছাড়া জীবিত উদ্ভিদের শিকড় থেকে কার্বনিক অ্যাসিড ও অন্যান্য পদার্থ নির্গত হয়। এইসব অ্যাসিড ও অন্যান্য পদার্থ জলের মাধ্যমে মিশে শিলা ও খনিজের সঙ্গে বিক্রিয়া ঘটিয়ে মাটি গঠনে সাহায্য করে।
(iii) পিঁপড়ে, কেঁচো, ইঁদুর প্রভৃতি প্রাণী মাটিতে গর্ত খুঁড়ে বিভিন্ন স্তরের উপাদানের মধ্যে মিশ্রণ ঘটায়।
(iv) মৃত উদ্ভিদ ও প্রাণীর দেহাবশেষ বেশি থাকলে মাটি হিউমাসে পরিপূর্ণ হয় এবং মাটির রং কালো হয়। এই মাটি পুষ্টিগুণসম্পন্ন হয়। এ ছাড়া মাটির স্তর পুরু ও খনিজসমৃদ্ধ হয়।
24. মাটি সৃষ্টির মৌলিক প্রক্রিয়াগুলি আলোচনা করো।
Ans: মাটি সৃষ্টির মৌলিক প্রক্রিয়াসমূহ: মাটি সৃষ্টি এক জটিল প্রক্রিয়া। মাটি সৃষ্টির প্রথম পর্বে আবহবিকারের ফলে শিলা চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে রেগোলিথে পরিণত হয়। পরবর্তী পর্বে এই অসংবন্ধ শিলাচূর্ণ বা রেগোলিথ বহুকাল ধরে কতকগুলি জটিল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পরিবর্তিত হয়ে মাটিতে পরিণত হয়। এইসব প্রক্রিয়াকে একত্রে মৌলিক প্রক্রিয়া বলে। সাইমনসন (Simonson, 1959) মৃত্তিকা গঠনকারী প্রাথমিক বা মৌলিক প্রক্রিয়াগুলিকে চারটি প্রধান ভাগে ভাগ করেছেন-
[1] সংযোজন: বৃষ্টিপাত ও তুষারপাতের ফলে রেগোলিথের মধ্যে জল জমা হয়। এ ছাড়া, উদ্ভিদ ও প্রাণীর দেহাবশেষ জৈব পদার্থরূপে সঞ্চিত হয়। রাসায়নিক আবহবিকারে শিলা বিয়োজিত হয়ে বিভিন্ন খনিজের সংযোজনও ঘটায়।
[2] অপসারণ: বাষ্পীভবনের ফলে মাটি থেকে জল ও ভূমিক্ষয়ের মাধ্যমে আলগা হয়ে যাওয়া পদার্থসমূহ অপসারিত হয়। এ ছাড়া রেগোলিথে উপস্থিত জৈব পদার্থ জারিত হলে জল ও কার্বন ডাইঅক্সাইড সৃষ্টি হয় এবং ওই কার্বন ডাইঅক্সাইড বায়ুতে মিশে যায়।
[3] রূপান্তর: রেগোলিথে উপস্থিত প্রাথমিক খনিজ পদার্থগুলি বিয়োজিত হয়ে গৌণ খনিজে রূপান্তরিত হয় এবং ভূপৃষ্ঠে সঞ্চিত জৈব পদার্থ (i) হিউমিফিকেশন ও (ii) খনিজকরণ পদ্ধতির মাধ্যমে রূপান্তরিত হয়।
(i) হিউমিফিকেশন: উদ্ভিদ বা প্রাণীর দেহাবশেষ ভূপৃষ্ঠে অপরিণত জৈব পদার্থ (Raw Organic Matter) হিসেবে সঞ্চিত হয়। ওইসব পদার্থ আণুবীক্ষণিক জীব দ্বারা বিয়োজিত হয় এবং তা ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হয়ে এক কালো রঙের জটিল পদার্থ সৃষ্টি করে। একে হিউমাস বলে। হিউমাস সৃষ্টির প্রক্রিয়াকে হিউমিফিকেশন বলে। এই প্রক্রিয়া পরিবেশের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত হয়। এ কারণে জলাভূমিতে অবায়ুজীবী হিউমিফিকেশন এবং মাটিতে চুনজাতীয় পদার্থের অভাব থাকলে অম্ল হিউমিফিকেশন ঘটে থাকে। এ ছাড়া, আর্দ্র ক্রান্তীয় অঞ্চল ও মরুপ্রায় অঞ্চলেও বিশেষ ধরনের হিউমিফিকেশন ঘটে থাকে।
(ii) খনিজকরণ: হিউমিফিকেশনের ফলে সৃষ্ট হিউমাস বায়ুর অক্সিজেন দ্বারা জারিত হয়ে জল, কার্বন ডাইঅক্সাইড ও হিউমাস গঠনকারী খনিজ পদার্থে রূপান্তরিত হয়। হিউমাস গঠনকারী খনিজগুলি এই প্রক্রিয়ায় পুনরায় মাটিতে ফিরে আসে। মৃত্তিকা গঠনকারী এই প্রক্রিয়াকে খনিজকরণ বলে।
[4] স্থানান্তর: মৃত্তিকা পরিলেখে (Profile) মৃত্তিকার উপাদানগুলির স্থানান্তর ঘটে দুটি পদ্ধতিতে- (i) এলুভিয়েশন এবং (ii) ইলুভিয়েশন।
(i) এলুভিয়েশন বা পরিবহণ প্রক্রিয়া: মৃত্তিকার ঊর্ধ্বস্তরের কিছু কিছু খনিজ বৃষ্টির জলে দ্রবীভূত হয়ে অথবা ভাসমান অবস্থায় নীচের স্তরে নামতে থাকে, একে এলুভিয়েশন বলে। এর ফলে মৃত্তিকার ঊর্ধ্বস্তরে ওইসব খনিজের অভাব ঘটে। এইরূপ ওপরের স্তরটিকে এলুভিয়েটেড স্তর বা এলুভিয়েটেড হোরাইজন (A) বলে। যান্ত্রিক ও রাসায়নিক উভয় পদ্ধতিতে এলুভিয়েশন হয়। ধৌত প্রক্রিয়ায় পদার্থের অধোগমন ঘটে। এই প্রক্রিয়ায় মাটির এ স্তর সৃষ্টি হয়।
(ii) ইলুভিয়েশন বা সঞ্চয় প্রক্রিয়া: মৃত্তিকার ঊর্ধ্বস্তর থেকে যান্ত্রিক ও রাসায়নিক পদ্ধতিতে দ্রবীভূত এবং ভাসমান খনিজগুলি মৃত্তিকার নিম্নস্তরে সঞ্চিত হতে থাকে। এই পদ্ধতিকে ইলুভিয়েশন বা অভিবাসন বা সঞ্চয় প্রক্রিয়া বলে। ওই স্তরটিকে ইলুভিয়েটেড হোরাইজন বলা হয়। এই স্তরটি ৪ হোরাইজন নামে পরিচিত।
25. মৃত্তিকা সৃষ্টির বিশেষ প্রক্রিয়াসমূহ আলোচনা করো।
Ans: মৃত্তিকা সৃষ্টির বিশেষ প্রক্রিয়াসমূহ: পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের জলবায়ু ও স্বাভাবিক উদ্ভিদের পার্থক্যের ওপর নির্ভর করে ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন অংশে মৃত্তিকা সৃষ্টির স্বতন্ত্র প্রক্রিয়া কার্যকরী হয়। এদের বিশেষ বা সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়া বলা হয়। এগুলি হল [1] ল্যাটেরাইজেশন, [2] পডসলাইজেশন, [3] গ্রেইজেশন, [4] ক্যালসিফিকেশন [5] স্যালিনাইজেশন, [6] অ্যালকালাইজেশন।
[1] ল্যাটেরাইজেশন: যে প্রক্রিয়ায় ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা গঠিত হয় তাকে ল্যাটেরাইজেশন বলে। অধিক উষ্ণতা (গড়ে 25 deg (7) ও অধিক বৃষ্টিপাতযুক্ত (200 সেমি থেকে 250 সেমি) অঞ্চলে এবং লোহা ও অ্যালুমিনিয়াম সমৃদ্ধ জনক শিলার ওপরে ল্যাটেরাইজেশন প্রক্রিয়া সহজ ও দ্রুত হয়। ধৌত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ক্যালশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম প্রভৃতি ক্ষারকীয় দ্রাব্য পদার্থ এবং সিলিকা (SiO₂) মৃত্তিকার ওপরের স্তর থেকে নীচে চলে যায়। ফলে মৃত্তিকার ওপরের অংশে লোহা ও অ্যালুমিনিয়ামের জারিত কণাগুলি সেসক্যুইঅক্সাইড রূপে থেকে যায়। এই পদ্ধতিতে লাল রঙের কঠিন ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা গড়ে ওঠে।
[2] পন্ডসলাইজেশন: পডসল মৃত্তিকা সৃষ্টির প্রক্রিয়াকে পডসলাইজেশন বলা হয়। স্বল্প বৃষ্টিপাতযুক্ত শীতল নাতিশীতোয় জলবায়ু অঞ্চলে (যেখানে বিস্তৃত সরলবর্গীয় অরণ্য সৃষ্টি হয়েছে) সেখানে এই ধরনের মৃত্তিকা গড়ে ওঠে। এই অঞ্চলে কম তাপমাত্রার জন্য বাষ্পীভবনের হার খুব কম থাকে ফলে এই মৃত্তিকা সারাবছর আর্দ্র থাকে এবং মৃত্তিকায় সারাবছরই অনুস্রবণ ও ধৌত প্রক্রিয়া সক্রিয় থাকে। ক্যালশিয়াম, পটাশিয়াম প্রভৃতি ধাতব ক্যাটায়নগুলি এবং লোহা ও অ্যালুমিনিয়ামের অক্সাইডগুলি ধৌত প্রক্রিয়ায় অপসারিত হয়ে নীচের স্তরে সঞ্চিত হয়। ফলে মৃত্তিকার ওপরের স্তরে সাদা ও ধূসর রঙের বালি থেকে যায়। এভাবে পডসল মৃত্তিকা সৃষ্টি হয়।
[3] মেইজেশন: জলমগ্ন অঞ্চল বা যেসব স্থানে জল জমে থাকে সেখানে মৃত্তিকায় অক্সিজেনের পরিমাণ কম থাকে। তাই মৃত্তিকায় জৈব বিজারণ প্রক্রিয়া সক্রিয় হয়। এর ফলে মৃত্তিকায় জৈব অম্ল উৎপন্ন হয় ও মৃত্তিকার স্বাভাবিক রং বাদামি হওয়ার পরিবর্তে ধূসর বা সবুজ বা নীলাভ হয়। মৃত্তিকা সৃষ্টির এই প্রক্রিয়াটিকে প্লেইজেশন বলে।
[4] ক্যালসিফিকেশন: মৃত্তিকার স্তরে চুন-জাতীয় পদার্থ সঞ্চিত হওয়ার প্রক্রিয়াকে ক্যালসিফিকেশন বলে। নাতিশীতোয় তৃণভূমি ও মরুপ্রায় অঞ্চলে যেখানে বৃষ্টিপাত কম সেখানে এই প্রক্রিয়া বিশেষভাবে কার্যকরী। শিলা থেকে নির্গত ক্যালশিয়াম বায়ুমণ্ডলের কার্বন ডাইঅক্সাইডের সাথে রাসায়নিক বিক্রিয়া করে ক্যালশিয়াম কার্বনেট সৃষ্টি করে। এই ক্যালশিয়াম কার্বনেট মৃত্তিকা স্তরের মধ্যে অধঃক্ষিপ্ত ও সঞ্চিত হয়। ফলে চুন-জাতীয় মৃত্তিকার সৃষ্টি হয়।
[5] স্যালিনাইজেশন: যে প্রক্রিয়ায় মৃত্তিকা স্তরের মধ্যে ক্যালশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও সোডিয়ামের লবণ সালফেট বা ক্লোরাইড রূপে সঞ্চিত হয়, তাকে স্যালিনাইজেশন বলে। মরু, মরুপ্রায় অঞ্চল, সমুদ্রতীর ও বিভিন্ন শুদ্ধ এলাকায় এই প্রক্রিয়া সক্রিয়। কৈশিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দ্রবীভূত লবণ মৃত্তিকার ওপরের স্তরে উঠে আসে।
[6] অ্যালকালাইজেশন: মৃত্তিকার স্তরে ক্যালশিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ইত্যাদি আয়নের তুলনায় সোডিয়াম আয়ন অধিক সঞ্চিত হলে সেই প্রক্রিয়াকে অ্যালকালাইজেশন বলে। উষ্ণ মরুভূমি অঞ্চলে এই প্রক্রিয়া অধিক কার্যকরী। এই প্রক্রিয়ায় তীব্র ক্ষারধর্মী মাটির সৃষ্টি হয়। মৃত্তিকার pH-এর মান 8.5 এর বেশি হয়। এই প্রক্রিয়ায় কালো ক্ষার মৃত্তিকা বা ব্ল্যাক অ্যালকালি বা সোলোনেৎজ মৃত্তিকার সৃষ্টি হয়।
26. আদিশিলাকে যান্ত্রিক আবহবিকার কীভাবে মাটিতে পরিণত করে?
Ans: যান্ত্রিক আবহবিকারের ফলে আদিশিলার মৃত্তিকায় পরিণতি: যান্ত্রিক আবহবিকারের দ্বারা শিলা চূর্ণবিচূর্ণ হয় এবং পরিশেষে মাটিতে পরিণত হয়। যান্ত্রিক আবহবিকার বিভিন্নভাবে ঘটে থাকে-
[1] প্রস্তরচাঁই খন্ডীকরণের মাধ্যমে: শিলায় ক্রমাগত অসম সংকোচন ও প্রসারণের কারণে শিলাস্তরে অসংখ্য উল্লম্ব ও অনুভূমিক ফাটলের সৃষ্টি হয়। এক সময় এই ফাটল বরাবর টুকরো টুকরো হয়ে বিভিন্ন আকৃতির শিলাখণ্ড খুলে বেরিয়ে আসে। একেই প্রস্তরচাঁই খন্ডীকরণ (Block Disintegration) বলে। এভাবে আদিশিলা চূর্ণবিচূর্ণ হয় ও মাটির উৎপত্তি ঘটে।
[2] শঙ্কমোচনের মাধ্যমে: শিলা তাপের কুপরিবাহী হওয়ায় শিলাস্তরের বাইরের অংশে ক্রমাগত সম্প্রসারণ ও সংকোচনের কারণে স্তরগুলি পেঁয়াজের খোসার মতো খুলে যায়। একেই শল্কমোচন বা গোলাকার আবহবিকার (Exfoliation or Spheroidal weathering) বলে। পরবর্তীকালে খুলে যাওয়া অংশগুলি বায়ুপ্রবাহ দ্বারা অপসারিত হওয়ায় শিলাস্তরটি গোলাকার রূপ ধারণ করে। মরুভূমি ও শুষ্ক অঞ্চলের কেলাসিত সমধর্মী শিলায় এই প্রকার আবহবিকার ঘটে এবং পরবর্তীকালে মাটির উৎপত্তি হয়।
[3] ক্ষুদ্রকণা বিসরণের মাধ্যমে: শিলা একাধিক খনিজের সমন্বয়ে গঠিত হয়। শিলামধ্যস্থ এই খনিজগুলির বৈশিষ্ট্য, প্রকৃতি এবং ধর্ম ভিন্ন হয়। উষ্ণতার হ্রাসবৃদ্ধির জন্য শিলামধ্যস্থ খনিজগুলি বিভিন্ন হারে প্রসারিত ও সংকুচিত হয়। এ কারণে শিলা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র খণ্ডে বিভক্ত হয়। একেই ক্ষুদ্রকণা বিসরণ (Granular Disintegration) বলে। এই প্রক্রিয়ায় মূল শিলা থেকে প্রথমে বালুকা ও পরে জৈব পদার্থের সংযোজনে মাটি সৃষ্টি হয়।
[4]শিলাস্তরে চাপ হ্রাসের মাধ্যমে: ভূগর্ভে গ্র্যানাইটজাতীয় শিলা ওপরের অন্য শিলাস্তূপ বা বিপুল পরিমাণ বরফের চাপে সংকুচিত থাকে। কিন্তু নানা কারণে ওপরের শিলাস্তূপ বা বরফ সরে গেলে নীচের ওই শিলা চাপ ও ওভারমুক্ত ভারস হয়ে প্রসারিত হয় এবং শিলায় পীড়ন ও টানের সৃষ্টি হয়। এভাবে শিলায় ফাটল ধরে এবং আবহবিকার ঘটে ও পরে মাটি সৃষ্টি হয়। যেমন-অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশের শিলাস্তূপ বিশাল বরফের চাপে সংকুচিত অবস্থায় রয়েছে।
[5] কেলাস গঠনের মাধ্যমে: উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে ও উচ্চ অক্ষাংশের শীতল জলবায়ু অঞ্চলে দিনের বেলায় বরফগলা জল শিলার ফাটলে প্রবেশ করে। রাতে তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নীচে নামলে ওই জল বরফে পরিণত হয় এবং আয়তনে বেড়ে যায়। এর ফলে ফাটলের দু-পাশের দেওয়ালে প্রচণ্ড চাপ পড়ে। এভাবে দিন ও রাতে জলের ভৌত অবস্থার পরিবর্তনের সাথে সাথে ক্রমাগত শিলায় চাপ পরে ও ফাটল বৃদ্ধি পায় এবং অবশেষে শিলা চূর্ণবিচূর্ণ হয়। এই পদ্ধতিকে তুহীন খণ্ডীকরণ বলা হয়। এর ফলে উৎপন্ন এই তীক্ষ্ণ শিলাখণ্ডগুলিকে স্ক্রি বা ট্যালাস বলে। এগুলি পর্বতের পাদদেশে জমা হয়ে বালুকাপূর্ণ মাটি গঠন করে।
[6] জলের মাধ্যমে:
(i) বর্ষার সময় শিলাছিদ্র জলে পূর্ণ হয় এবং গ্রীষ্মকালে শিলাছিদ্রের জল শুকিয়ে যায়। আর্দ্রতা ও শুষ্কতার এই পর্যায়ক্রমিক পরিবর্তনের ফলে শিলা ভেঙে টুকরো টুকরো (Flake) হয়ে যায়।
(ii) মরু অঞ্চলে অতি উত্তপ্ত শিলার ওপর হঠাৎ বৃষ্টির জল পড়লে শিলা সংকুচিত হয় এবং ফেটে যায়। এভাবে আদিশিলা চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে মাটিতে পরিণত হয়।
27. মৃত্তিকা ক্ষয় কাকে বলে? জলের মাধ্যমে মৃত্তিকা ক্ষয়ের পদ্ধতিগুলি আলোচনা করো।
Ans: মৃত্তিকা ক্ষয়: বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তি (বৃষ্টিপাত, জলপ্রবাহ, বায়ুপ্রবাহ, হিমবাহ, সমুদ্রতরঙ্গ প্রভৃতি) ও মানুষের অবাঞ্ছিত হস্তক্ষেপ ও কার্যাবলির ফলে মাটির পৃষ্ঠস্তরের হালকা ও অসংবদ্ধ অংশ ক্ষয়প্রাপ্ত, অপসারিত ও নগ্নীভূত হয় এবং মাটির উর্বরতা-সহ স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য দ্রুত হ্রাস পায়। একে মৃত্তিকা ক্ষয় বলে। জলের মাধ্যমে মৃত্তিকা ক্ষয়ের পদ্ধতিসমূহ: প্রধানত জলের মাধ্যমে চারভাবে মৃত্তিকা ক্ষয় পরিলক্ষিত হয়।
[1] কর্দমাক্ত ক্ষয়: বৃষ্টির কণা সরাসরি মৃত্তিকার উপরিভাগে পড়লে বৃষ্টিকণার আঘাতে মাটির কণাসমষ্টি ভেঙে গিয়ে সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম মৃত্তিকা কণায় পরিণত হয়, এই প্রক্রিয়াকে কর্দমাক্ত ক্ষয় (Splash Erosion) বলে। কর্দমাক্ত ক্ষয়ের ফলে মৃত্তিকার উপরিস্তরে সূক্ষ্ম মৃত্তিকা কণার মধ্যবর্তী ছিদ্রগুলি বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে বৃষ্টির জল মৃত্তিকার গভীরে পৌঁছোতে পারে না এবং মৃত্তিকার উপরিভাগের কণাগুলি বৃষ্টির জলের সঙ্গে অন্যত্র পরিবাহিত হয়ে যায়।
[2] চাদর ক্ষয়: প্রবল বৃষ্টির জলে ভূমির ঢাল বরাবর জমির ওপরের পাতলা মাটি স্তর চাদরের মতো সরে যায়। একে চাদর ক্ষয় (Sheet Erosion) বলে। এই প্রক্রিয়ায় মৃত্তিকা স্তরের পুরুত্ব (Thickness) ক্রমশ কমতে থাকে। এই পদ্ধতিতে মৃত্তিকা ক্ষয় বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে হতে থাকে এবং মৃত্তিকার উর্বরতা হ্রাস পায়।
[3] নালি ক্ষয়: বৃষ্টির জলের আঘাতে মাটিতে সরু লম্বা অগভীর গর্ত সৃষ্টি হয়। একে রিল বলে। ক্রমাগত বৃষ্টির জলে রিলগুলির গভীরতা ও দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে সৃষ্ট নালি বরাবর মাটি ধুয়ে যায়। একে নালি ক্ষয় (Rill Erosion) বলে। এই ধরনের মৃত্তিকার ক্ষয় নির্দিষ্ট অঞ্চলে সীমাবদ্ধ থাকে। বিশেষ করে শুষ্ক অঞ্চলে হঠাৎ করে প্রবল বৃষ্টিপাত হলে তীব্র জলস্রোতের প্রবাহে ভূমিভাগে অসংখ্য নালির সৃষ্টি হয়। নালি ক্ষয়যুক্ত অঞ্চলে মাটি বন্ধুর ও কৃষিকাজের অনুপযুক্ত হয়ে পড়ে।
[4] খাত ক্ষয়: উদ্ভিদবিহীন উন্মুক্ত ও ঢালু জমিতে বৃষ্টির জল দ্বারা নালি ক্ষয় আরও তীব্রতর হলে তা ধীরে ধীরে খাত ক্ষয়ে (Gully Erosion) পরিণত হয়। বৃষ্টির জলের প্রবল আঘাতে নালিগুলি পরস্পরের সাথে যুক্ত হয়ে অধিকতর চওড়া হয়ে পড়ে। এরপর মাটি ক্রমাগত ধুয়ে আরও গভীর ছোটো ছোটো খাত বা গর্ত সৃষ্টি করে। এই ধরনের খাত বরাবর মৃত্তিকার ক্ষয় লক্ষ করা যায়।
28. মাটি সংরক্ষণের কারিগরি পদ্ধতিগুলি ব্যাখ্যা করো।
Ans: মাটি সংরক্ষণের কারিগরি পদ্ধতিসমূহ: মাটি সংরক্ষণের কারিগরি পদ্ধতিগুলি হল –
[1] কৃত্রিম বাঁধ নির্মাণ: মৃত্তিকাক্ষয় রোধের উদ্দেশ্যে ঢালের সমান্তরালে বিভিন্ন উচ্চতায় বাঁধ নির্মাণ করা হয় এবং দুটি বাঁধের মধ্যবর্তী অংশে কৃষিকাজ করা হয়।
[2] খাতের তদারকি বা ব্যবস্থাপনা: খাত বরাবর জলপ্রবাহ কমানোর জন্য খাতগুলির মধ্যে কতকগুলি বাঁধ নির্মাণ করা হয়। একে বলা হয় চেক বাঁধ। খাতগুলি ছোটো হলে ঢাল অনুযায়ী 4-9 মি. অন্তর প্রায় 0.5 মি. উচ্চতাযুক্ত চেক বাঁধ তৈরি করা হয়। এই বাঁধগুলির পশ্চাতে পলি জমলে খাতের ঢাল কমে গিয়ে খাত বরাবর জলপ্রবাহের গতিবেগ কমতে থাকে।
[3] বৃক্ষরোপণ: খাত অন্তর্বর্তী জমিগুলিতে ঝোপ, বৃক্ষ ইত্যাদি রোপণ করলে এবং মাটির বাঁধগুলির ওপর ঝোপঝাড় ও বৃক্ষরোপণ করলে মৃত্তিকাক্ষয় হ্রাস পায়।
[4] শেল্টার বেল্ট: বিভিন্ন প্রকার গাছ সমান্তরালভাবে রোপণ করলে অতি শক্তিশালী বায়ুপ্রবাহের গতিকে প্রতিরোধ করা সম্ভব যা ভূমির উপরিভাগের মৃত্তিকাক্ষয়ের পরিমাণ রোধ করে। মরুভূমি ও মরূদ্যান অঞ্চলে এভাবে মাটির ক্ষয় রোধ করা হয়।
[5] অগভীর নালা খনন: বায়ুর কার্যকরী শক্তি যেখানে বেশি সেইসব অঞ্চলে ভূমিক্ষয় কমাতে হলে বায়ুর গতির আড়াআড়িভাবে জমিতে নালা খনন করে রাখা হয়। এতে ভূমিক্ষয় রোধ করা যায়। পাশাপাশি বায়ু দ্বারা বাহিত মৃত্তিকা নালায় পড়ে নালা ভরাট করে দেয়।
[6] জৈবপ্রযুক্তি কৌশল গ্রহণ: অতি খরস্রোত খাতগুলির জলের গতিবেগ রোধ ও ঢালের স্থায়িত্ব রক্ষার উদ্দেশ্যে জৈবপ্রযুক্তি (Bioengineering) কৌশল গ্রহণ করা হয়। এক্ষেত্রে স্থানীয় উদ্ভিদ ও প্রাকৃতিকভাবে পচনযোগ্য পদার্থ ব্যবহার করা হয়। গাছের টাটকা ডালকে আংশিক মাটি মাখিয়ে শক্ত আঁটি বা বান্ডিল করে খাতের মধ্যে লম্বা খুঁটি পুঁতে শুইয়ে রাখা হয়। এতে মাটি সঙ্গে সঙ্গে সংরক্ষিত হয় এবং পরবর্তীকালে ডালপালা থেকে গভীর শিকড় বিশিষ্ট স্থায়ী উদ্ভিদ জন্মে মাটির ক্ষয় রোধ করে।
29. মৃত্তিকাক্ষয় বা ভূমিক্ষয়ের কারণগুলি আলোচনা করো।
Ans: মৃত্তিকাক্ষয়ের কারণসমূহ: মাটির স্তর ক্রমাগত অস্বাভাবিক হারে ক্ষয় হওয়ার অনেক কারণ আছে। এর মধ্যে প্রাকৃতিক এবং মনুষ্যসৃষ্ট কারণ উভয়ই রয়েছে।
[1] প্রাকৃতিক কারণ:
(i) খাড়া ঢাল: খাড়া পাহাড়ি ঢালের ওপর প্রচুর বৃষ্টিপাত হলে বৃষ্টির জলে মাটি ধুয়ে যায়।
(ii) স্বল্প পরিমাণ বনভূমি: মাটির ওপর গাছপালার ঘন আবরণ না থাকলে বৃষ্টির জল, নদীর জল, বায়ুপ্রবাহ ও সমুদ্রের ঢেউষ্ণের আঘাতে ভূমিক্ষয় হয়।
(iii) আলগা মাটি: মাটিতে চটচটে আঠালো ভাব না থাকলে ভূমিক্ষয় সহজ হয়। সে কারণে সমুদ্রের ধারে, মরুভূমির কাছে, মালভূমির ঢালে মাটি তাড়াতাড়ি ক্ষয়ে যায়।
[2] মনুষ্যসৃষ্ট কারণ:
(i) বনভূমির বিলোপ: অতিরিক্ত গাছ কেটে ফেলার জন্য মাটির দানাগুলি আলগা হয়ে যায়। ফলে গাছের শিকড় আর তখন মাটিকে আঁকড়ে রাখতে পারে না।
(ii) ধাপচাষ: পাহাড়ি ঢালের ওপর চাষ-আবাদ করার জন্য ধাপ কাটা হয়। এই ধাপগুলি জমির সমোন্নতিরেখা (Contour) বরাবর তৈরি করা না হলে বৃষ্টির জলের আঘাতে বা জলপ্রবাহের মাধ্যমে মাটি ক্ষয়ে যায়।
(iii) অনিয়ন্ত্রিত পথচালন: পাহাড়ি অঞ্চলে অতিরিক্ত পথচারণা করা হলে ভূমিক্ষয় ঘটে। কারণ গবাদি পশু মাটির উপরের স্তরের ঘাসের আবরণকে থেকে প্রায় নির্মূল করে ফেলে। ফলে মাটি ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে পড়ে।
(iv) অপ্রয়োজনীয় জলসেচ: জলসেচের ব্যবস্থা অযৌক্তিক হলে মাটির গুণমান নষ্ট হয়। ফলে ভূমিক্ষয়ের হার বৃদ্ধি পায়।
(v) জমির অনুপযুক্ত ব্যবহার: জমিকে উপযুক্তভাবে ব্যবহার না করা হলে অর্থাৎ যে জমিকে যে কাজে লাগানো ভালো হয়, তাকে সেই কাজে না লাগিয়ে অন্য কোনভাবে ব্যবহার করা হলে মাটির ক্ষয় হয়।
Class 11 First (1st) Unit Test Question and Answer :
- Class 11 Bengali 1st Semester Question Click here
- Class 11 English 1st Semester Question Click here
- Class 11 Geography 1st Semester Question Click here
- Class 11 History 1st Semester Question Click here
- Class 11 Education 1st Semester Question Click here
- Class 11 Political Science 1st Semester Question Click here
- Class 11 Philosophy 1st Semester Question Click here
- Class 11 Sociology 1st Semester Question Click here
- Class 11 Sanskrit 1st Semester Question Click here
- Class 11 All Subjects First Semester Question Click here
Class 11 Second (2nd) Unit Test Question and Answer :
- Class 11 Bengali 2nd Semester Question Click here
- Class 11 English 2nd Semester Question Click here
- Class 11 Geography 2nd Semester Question Click here
- Class 11 History 2nd Semester Question Click here
- Class 11 Education 2nd Semester Question Click here
- Class 11 Political Science 2nd Semester Question Click here
- Class 11 Philosophy 2nd Semester Question Click here
- Class 11 Sociology 2nd Semester Question Click here
- Class 11 Sanskrit 2nd Semester Question Click here
- Class 11 All Subjects 2nd Semester Question Click here
Class 11 Suggestion 2025 – একাদশ শ্রেণীর সাজেশন ২০২৫
আরোও দেখুন:-
Class 11 Bengali Suggestion 2025 Click here
আরোও দেখুন:-
Class 11 English Suggestion 2025 Click here
আরোও দেখুন:-
Class 11 Geography Suggestion 2025 Click here
আরোও দেখুন:-
Class 11 History Suggestion 2025 Click here
আরোও দেখুন:-
Class 11 Political Science Suggestion 2025 Click here
আরোও দেখুন:-
Class 11 Education Suggestion 2025 Click here
আরোও দেখুন:-
Class 11 Philosophy Suggestion 2025 Click here
আরোও দেখুন:-
Class 11 Sociology Suggestion 2025 Click here
আরোও দেখুন:-
Class 11 Sanskrit Suggestion 2025 Click here
আরোও দেখুন:-
Class 11 All Subjects Suggestion 2025 Click here
◆ একাদশ শ্রেণীর পরীক্ষার প্রস্তুতি, বিনামূল্যে নোটস, সাজেশন, PDF ও সমস্ত আপডেটের জন্য আমাদের WhatsApp Group এ Join হয়ে যাও।
Class 11 WhatsApp Groups | Click Here to Join |
একাদশ শ্রেণীর ভূগোল প্রশ্ন ও উত্তর | West Bengal Class 11th Geography Question and Answer / Suggestion / Notes Book
আরোও দেখুন :-
একাদশ শ্রেণীর ভূগোল সমস্ত অধ্যায়ের প্রশ্নউত্তর Click Here
FILE INFO : ভূমিরূপ গঠনকারী প্রক্রিয়া (প্রাকৃতিক ভূগোল) একাদশ শ্রেণীর ভূগোল প্রশ্ন ও উত্তর | Class 11 Geography Geomorphic Process Question and Answer with FREE PDF Download Link
PDF File Name | ভূমিরূপ গঠনকারী প্রক্রিয়া (প্রাকৃতিক ভূগোল) একাদশ শ্রেণীর ভূগোল প্রশ্ন ও উত্তর | Class 11 Geography Geomorphic Process Question and Answer PDF |
Prepared by | Experienced Teachers |
Price | FREE |
Download Link | Click Here To Download |
Download PDF | Click Here To Download |
ভূমিরূপ গঠনকারী প্রক্রিয়া (প্রাকৃতিক ভূগোল) অধ্যায় থেকে আরোও প্রশ্ন ও উত্তর দেখুন :
Update
[আরও দেখুন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবন রচনা – Rabindranath Tagore Biography in Bengali]
[আমাদের YouTube চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন Subscribe Now]
Info : ভূমিরূপ গঠনকারী প্রক্রিয়া (প্রাকৃতিক ভূগোল) একাদশ শ্রেণীর ভূগোল সাজেশন প্রশ্ন ও উত্তর
Class 11 Geography Suggestion | West Bengal WBCHSE Class Eleven XI (Class 11th) Geography Question and Answer Suggestion
” ভূমিরূপ গঠনকারী প্রক্রিয়া (প্রাকৃতিক ভূগোল) একাদশ শ্রেণীর ভূগোল প্রশ্ন উত্তর “ একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ টপিক একাদশ শ্রেণীর পরীক্ষা (West Bengal Class Eleven XI / WB Class 11 / WBCHSE / Class 11 Exam / West Bengal Council of Higher Secondary Education – WB Class 11 Exam / Class 11th / WB Class 11 / Class 11 Pariksha ) এখান থেকে প্রশ্ন অবশ্যম্ভাবী । সে কথা মাথায় রেখে Bhugol Shiksha .com এর পক্ষ থেকে একাদশ শ্রেণীর ভূগোল পরীক্ষা প্রস্তুতিমূলক সাজেশন এবং প্রশ্ন ও উত্তর ( একাদশ শ্রেণীর ভূগোল সাজেশন / একাদশ শ্রেণীর ভূগোল প্রশ্ও উত্তর । Class-11 Geography Suggestion / Class 11 Geography Geomorphic Process Question and Answer / Class 11 Geography Suggestion / Class-11 Pariksha Geography Suggestion / Geography Class 11 Exam Guide / MCQ , Short , Descriptive Type Question and Answer / Class 11 Geography Suggestion FREE PDF Download) উপস্থাপনের প্রচেষ্টা করা হলাে। ছাত্রছাত্রী, পরীক্ষার্থীদের উপকারে লাগলে, আমাদের প্রয়াস একাদশ শ্রেণীর ভূগোল পরীক্ষা প্রস্তুতিমূলক সাজেশন এবং প্রশ্ন ও উত্তর (Class 11 Geography Suggestion / West Bengal Eleven XI Question and Answer, Suggestion / WBCHSE Class 11th Geography Suggestion / Class 11 Geography Geomorphic Process Question and Answer / Class 11 Geography Suggestion / Class 11 Pariksha Suggestion / Class 11 Geography Exam Guide / Class 11 Geography Suggestion 2025, 2026, 2027, 2028, 2029, 2030 / Class 11 Geography Suggestion MCQ , Short , Descriptive Type Question and Answer. / Class-11 Geography Suggestion FREE PDF Download) সফল হবে।
ভূমিরূপ গঠনকারী প্রক্রিয়া (প্রাকৃতিক ভূগোল) প্রশ্ন ও উত্তর
ভূমিরূপ গঠনকারী প্রক্রিয়া (প্রাকৃতিক ভূগোল) প্রশ্ন ও উত্তর | ভূমিরূপ গঠনকারী প্রক্রিয়া (প্রাকৃতিক ভূগোল) Class 11 Geography Geomorphic Process Question and Answer Suggestion একাদশ শ্রেণীর ভূগোল প্রশ্ন ও উত্তর – ভূমিরূপ গঠনকারী প্রক্রিয়া (প্রাকৃতিক ভূগোল) প্রশ্ন ও উত্তর।
ভূমিরূপ গঠনকারী প্রক্রিয়া (প্রাকৃতিক ভূগোল) MCQ প্রশ্ন ও উত্তর | একাদশ শ্রেণীর ভূগোল
ভূমিরূপ গঠনকারী প্রক্রিয়া (প্রাকৃতিক ভূগোল) MCQ প্রশ্ন ও উত্তর | ভূমিরূপ গঠনকারী প্রক্রিয়া (প্রাকৃতিক ভূগোল) Class 11 Geography Geomorphic Process Question and Answer Suggestion একাদশ শ্রেণীর ভূগোল প্রশ্ন ও উত্তর – ভূমিরূপ গঠনকারী প্রক্রিয়া (প্রাকৃতিক ভূগোল) MCQ প্রশ্ন উত্তর।
ভূমিরূপ গঠনকারী প্রক্রিয়া (প্রাকৃতিক ভূগোল) SAQ সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর | একাদশ শ্রেণির ভূগোল
ভূমিরূপ গঠনকারী প্রক্রিয়া (প্রাকৃতিক ভূগোল) SAQ সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর | ভূমিরূপ গঠনকারী প্রক্রিয়া (প্রাকৃতিক ভূগোল) Class 11 Geography Geomorphic Process Question and Answer Suggestion একাদশ শ্রেণীর ভূগোল প্রশ্ন ও উত্তর – ভূমিরূপ গঠনকারী প্রক্রিয়া (প্রাকৃতিক ভূগোল) SAQ সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর।
ভূমিরূপ গঠনকারী প্রক্রিয়া (প্রাকৃতিক ভূগোল) MCQ প্রশ্ন উত্তর – একাদশ শ্রেণি ভূগোল | Class 11 Geography Geomorphic Process
একাদশ শ্রেণি ভূগোল (Class 11 Geography Geomorphic Process) – ভূমিরূপ গঠনকারী প্রক্রিয়া (প্রাকৃতিক ভূগোল) প্রশ্ন ও উত্তর | ভূমিরূপ গঠনকারী প্রক্রিয়া (প্রাকৃতিক ভূগোল) | Class 11 Geography Geomorphic Process Suggestion একাদশ শ্রেণি ভূগোল – ভূমিরূপ গঠনকারী প্রক্রিয়া (প্রাকৃতিক ভূগোল) প্রশ্ন উত্তর।
একাদশ শ্রেণীর ভূগোল প্রশ্ন ও উত্তর | একাদশ শ্রেণির ভূগোল প্রশ্ন ও উত্তর – ভূমিরূপ গঠনকারী প্রক্রিয়া (প্রাকৃতিক ভূগোল) প্রশ্ন উত্তর | Class 11 Geography Geomorphic Process Question and Answer Question and Answer, Suggestion
একাদশ শ্রেণীর ভূগোল প্রশ্ন ও উত্তর – ভূমিরূপ গঠনকারী প্রক্রিয়া (প্রাকৃতিক ভূগোল) | একাদশ শ্রেণীর ভূগোল প্রশ্ন ও উত্তর – ভূমিরূপ গঠনকারী প্রক্রিয়া (প্রাকৃতিক ভূগোল) | পশ্চিমবঙ্গ একাদশ শ্রেণীর ভূগোল প্রশ্ন ও উত্তর – ভূমিরূপ গঠনকারী প্রক্রিয়া (প্রাকৃতিক ভূগোল) | একাদশ শ্রেণীর ভূগোল সহায়ক – ভূমিরূপ গঠনকারী প্রক্রিয়া (প্রাকৃতিক ভূগোল) প্রশ্ন ও উত্তর । Class 11 Geography Geomorphic Process Question and Answer, Suggestion | Class 11 Geography Geomorphic Process Question and Answer Suggestion | Class 11 Geography Geomorphic Process Question and Answer Notes | West Bengal Class 11th Geography Question and Answer Suggestion.
একাদশ শ্রেণীর ভূগোল প্রশ্ন ও উত্তর – ভূমিরূপ গঠনকারী প্রক্রিয়া (প্রাকৃতিক ভূগোল) MCQ প্রশ্ন উত্তর | WBCHSE Class 11 Geography Question and Answer, Suggestion
একাদশ শ্রেণীর ভূগোল প্রশ্ন ও উত্তর – ভূমিরূপ গঠনকারী প্রক্রিয়া (প্রাকৃতিক ভূগোল) প্রশ্ন উত্তর প্রশ্ন ও উত্তর | ভূমিরূপ গঠনকারী প্রক্রিয়া (প্রাকৃতিক ভূগোল) । Class 11 Geography Geomorphic Process Question and Answer Suggestion.
WBCHSE Class 11th Geography Geomorphic Process Suggestion | একাদশ শ্রেণীর ভূগোল প্রশ্ন ও উত্তর – ভূমিরূপ গঠনকারী প্রক্রিয়া (প্রাকৃতিক ভূগোল)
WBCHSE Class 11 Geography Geomorphic Process Suggestion একাদশ শ্রেণীর ভূগোল প্রশ্ন ও উত্তর – ভূমিরূপ গঠনকারী প্রক্রিয়া (প্রাকৃতিক ভূগোল) প্রশ্ন উত্তর প্রশ্ন ও উত্তর । ভূমিরূপ গঠনকারী প্রক্রিয়া (প্রাকৃতিক ভূগোল) | Class 11 Geography Geomorphic Process Suggestion একাদশ শ্রেণীর ভূগোল প্রশ্ন ও উত্তর – ভূমিরূপ গঠনকারী প্রক্রিয়া (প্রাকৃতিক ভূগোল) প্রশ্ন উত্তর প্রশ্ন ও উত্তর ।
Class 11 Geography Geomorphic Process Question and Answer Suggestions | একাদশ শ্রেণীর ভূগোল প্রশ্ন ও উত্তর – ভূমিরূপ গঠনকারী প্রক্রিয়া (প্রাকৃতিক ভূগোল) | একাদশ শ্রেণীর ভূগোল প্রশ্ন ও উত্তর
Class 11 Geography Geomorphic Process Question and Answer একাদশ শ্রেণীর ভূগোল প্রশ্ন ও উত্তর – ভূমিরূপ গঠনকারী প্রক্রিয়া (প্রাকৃতিক ভূগোল) একাদশ শ্রেণীর ভূগোল প্রশ্ন ও উত্তর Class 11 Geography Geomorphic Process Question and Answer একাদশ শ্রেণীর ভূগোল প্রশ্ন ও উত্তর প্রশ্ন ও উত্তর – ভূমিরূপ গঠনকারী প্রক্রিয়া (প্রাকৃতিক ভূগোল) MCQ, সংক্ষিপ্ত, রোচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর ।
WB Class 11 Geography Geomorphic Process Suggestion | একাদশ শ্রেণীর ভূগোল প্রশ্ন ও উত্তর – ভূমিরূপ গঠনকারী প্রক্রিয়া (প্রাকৃতিক ভূগোল) MCQ প্রশ্ন উত্তর প্রশ্ন ও উত্তর
Class 11 Geography Geomorphic Process Question and Answer Suggestion একাদশ শ্রেণীর ভূগোল প্রশ্ন ও উত্তর – ভূমিরূপ গঠনকারী প্রক্রিয়া (প্রাকৃতিক ভূগোল) MCQ প্রশ্ন ও উত্তর । Class 11 Geography Geomorphic Process Question and Answer Suggestion একাদশ শ্রেণীর ভূগোল প্রশ্ন ও উত্তর।
West Bengal Class 11 Geography Suggestion Download WBCHSE Class 11th Geography short question suggestion . Class 11 Geography Geomorphic Process Suggestion download Class 11th Question Paper Geography. WB Class 11 Geography suggestion and important question and answer. Class 11 Suggestion pdf.পশ্চিমবঙ্গ একাদশ শ্রেণীর ভূগোল পরীক্ষার সম্ভাব্য সাজেশন ও শেষ মুহূর্তের প্রশ্ন ও উত্তর ডাউনলোড। একাদশ শ্রেণীর ভূগোল পরীক্ষার জন্য সমস্ত রকম গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তর।
Get the Class 11 Geography Geomorphic Process Question and Answer by Bhugol Shiksha .com
Class 11 Geography Geomorphic Process Question and Answer prepared by expert subject teachers. WB Class 11 Geography Suggestion with 100% Common in the Examination .
Class Eleven XI Geography Geomorphic Process Suggestion | West Bengal Council of Higher Secondary Education (WBCHSE) Class 11 Exam
Class 11 Geography Geomorphic Process Question and Answer, Suggestion Download PDF: West Bengal Council of Higher Secondary Education (WBCHSE) Class 11 Eleven XI Geography Suggestion is provided here. Class 11 Geography Geomorphic Process Question and Answer Suggestion Questions Answers PDF Download Link in Free here.
ভূমিরূপ গঠনকারী প্রক্রিয়া (প্রাকৃতিক ভূগোল) একাদশ শ্রেণীর ভূগোল প্রশ্ন ও উত্তর | Class 11 Geography Geomorphic Process Question and Answer
অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই ” ভূমিরূপ গঠনকারী প্রক্রিয়া (প্রাকৃতিক ভূগোল) একাদশ শ্রেণীর ভূগোল প্রশ্ন ও উত্তর | Class 11 Geography Geomorphic Process Question and Answer ” পােস্টটি পড়ার জন্য। এই ভাবেই Bhugol Shiksha ওয়েবসাইটের পাশে থাকো যেকোনো প্ৰশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলাে করো এবং নিজেকে তথ্য সমৃদ্ধ করে তোলো , ধন্যবাদ।