
স্বাধীনতার পথে (পঞ্চম অধ্যায়) দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর
HS Class 12 History Sadhinotar Pothe Question and Answer
স্বাধীনতার পথে (পঞ্চম অধ্যায়) দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | HS Class 12 History Sadhinotar Pothe Question and Answer : স্বাধীনতার পথে (পঞ্চম অধ্যায়) দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | HS Class 12 History Sadhinotar Pothe Question and Answer নিয়ে আলোচনা করা হলো। এই West Bengal WBCHSE HS Class 12th History Sadhinotar Pothe Question and Answer, Suggestion, Notes | দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – স্বাধীনতার পথে (পঞ্চম অধ্যায়) থেকে রোচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর (Descriptive Question and Answer) গুলি আগামী West Bengal HS Class 12th Twelve XII History 4th Semester Examination – পশ্চিমবঙ্গ উচ্চমাধ্যমিক দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস চতুর্থ সেমিস্টার পরীক্ষার জন্য খুব ইম্পর্টেন্ট। দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস পরীক্ষা তে এই সাজেশন বা কোশ্চেন স্বাধীনতার পথে (পঞ্চম অধ্যায়) দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | HS Class 12 History Sadhinotar Pothe Question and Answer গুলো আসার সম্ভাবনা খুব বেশি।
তোমরা যারা স্বাধীনতার পথে (পঞ্চম অধ্যায়) দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | HS Class 12 History Sadhinotar Pothe Question and Answer খুঁজে চলেছ, তারা এই প্রশ্ন ও উত্তর গুলো ভালো করে পড়ো এবং নীচে দেওয়া লিঙ্ক থেকে ডাউনলোড করে নাও।
| রাজ্য (State) | পশ্চিমবঙ্গ (West Bengal) |
| বোর্ড (Board) | WBCHSE, West Bengal |
| শ্রেণী (Class) | উচ্চমাধ্যমিক দ্বাদশ শ্রেণী (WB HS Class 12th) |
| বিষয় (Subject) | দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস (HS Class 12 History) |
| পঞ্চম অধ্যায় (5th Chapter) | স্বাধীনতার পথে (Sadhinotar Pothe) |
[দ্বাদশ শ্রেণীর সমস্ত বিষয়ের প্রশ্নউত্তর Click Here]
স্বাধীনতার পথে (পঞ্চম অধ্যায়) দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | West Bengal WBCHSE HS Class 12th History Sadhinotar Pothe 5th Chapter Question and Answer
সংক্ষিত | স্বাধীনতার পথে (পঞ্চম অধ্যায়) দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | WB HS Class 12 History Sadhinotar Pothe SAQ Question and Answer:
- গান্ধিজির সত্যাগ্রহ নীতির মূল ভিত্তি ব্যাখ্যা করো।
Ans: সত্যাগ্রহ হল গান্ধিজির অহিংস সংগ্রাম পদ্ধতি। এর ভিত্তি সত্য, অহিংসা এবং আত্মবল। বলপ্রয়োগ বা অস্ত্র নয়, নৈতিক শক্তি ও আত্মত্যাগের মাধ্যমে অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হয়। সত্যাগ্রহের উদ্দেশ্য শত্রুকে পরাজিত করা নয়, তার হৃদয় পরিবর্তন করা।
- অসহযোগ আন্দোলনের দুইটি কারণ লিখো।
Ans: (i) ১৯১৯ সালে পাশ হওয়া রওলাট আইন ইংরেজদের রাজনৈতিক দমননীতির প্রকাশ করে, যা জনগণের ক্রোধ বৃদ্ধি করে।
(ii) ১৯১৯ সালের জালিয়ানওয়ালা বাগ হত্যাকাণ্ড ব্রিটিশ শাসনের বর্বরতা প্রকাশ করে।
এই দুই ঘটনার ফলে গান্ধিজি অসহযোগ আন্দোলন শুরু করতে বাধ্য হন।
- ক্রিপস মিশনের ব্যর্থতার কারণ ব্যাখ্যা করো।
Ans: ক্রিপস মিশনের প্রস্তাবে যুদ্ধশেষে ভারতে ডোমিনিয়ন স্ট্যাটাস দেওয়ার কথা থাকলেও তাৎক্ষণিক স্বাধীনতার প্রতিশ্রুতি ছিল না। প্রতিরক্ষা ও গুরুত্বপূর্ণ ক্ষমতা ব্রিটিশদের হাতে রাখার প্রস্তাব দেওয়া হয়। মুসলিম লীগ ও কংগ্রেস উভয়ই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। ফলে মিশন ব্যর্থ হয়।
- আজাদ হিন্দ ফৌজ গঠনের উদ্দেশ্য কী ছিল?
Ans: আজাদ হিন্দ ফৌজ (INA) এর লক্ষ্য ছিল সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে ব্রিটিশদের পরাজিত করে ভারতকে স্বাধীন করা। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর নেতৃত্বে এটি জাপানের সাহায্যে গঠিত হয়। “দিল্লি চলো” স্লোগান দিয়ে বাহিনী ভারতীয় মাটিতে স্বাধীনতার যুদ্ধের প্রস্তুতি নেয়।
- ‘দিল্লি চলো’ স্লোগানের তাৎপর্য লিখো।
Ans: “দিল্লি চলো” ছিল নেতাজির ডাক, যা ভারতবাসীর মনে স্বাধীনতা অর্জনের জ্বালাময়ী আবেগ সৃষ্টি করে। এই স্লোগান আজাদ হিন্দ ফৌজকে ব্রিটিশ শাসন উৎখাতের জন্য উদ্বুদ্ধ করে। এটি ভারতীয় জাতীয়তাবাদের এক শক্তিশালী প্রতীক হয়ে ওঠে।
- ভারত ছাড়ো আন্দোলন কেন গুরুত্বপূর্ণ?
Ans: ভারত ছাড়ো আন্দোলন ছিল ব্রিটিশবিরোধী সর্বশেষ ও বৃহত্তম গণআন্দोलन। গান্ধিজির “করো বা মরো” ডাক জনগণকে স্বাধীনতার জন্য সর্বস্ব ত্যাগে উদ্বুদ্ধ করে। এই আন্দোলন ব্রিটিশ সরকারের ভিত্তি নড়বড়ে করে এবং শেষ পর্যন্ত স্বাধীনতার পথ প্রস্তুত করে।
- রওলাট আইন সম্পর্কে সংক্ষেপে লিখো।
Ans: রওলাট আইন (1919) এর মাধ্যমে ব্রিটিশ সরকার বিচার ছাড়াই যেকোনো ভারতীয়কে গ্রেপ্তার ও আটক করার ক্ষমতা পায়। এই কঠোর দমনমূলক আইন জনমনে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি করে। গান্ধিজি এই আইনের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী সত্যাগ্রহ আন্দোলন শুরু করেন।
- জালিয়ানওয়ালা বাগ হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি বর্ণনা করো।
Ans: ১৯১৯ সালের ১৩ এপ্রিল পাঞ্জাবের অমৃতসরের জালিয়ানওয়ালা বাগে শান্তিপূর্ণ সমাবেশে জেনারেল ডায়ারের নির্দেশে নির্বিচারে গুলি চালানো হয়। শত শত নিরস্ত্র মানুষ নিহত হন। এই নির্মম ঘটনা ব্রিটিশ শাসনের নিষ্ঠুরতা প্রকাশ করে এবং জাতীয় আন্দোলন তীব্র করে।
- ১৯৪৬ সালের নৌবিদ্রোহের কারণ কী ছিল?
Ans: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে নৌসেনা কর্মীদের উপর বৈষম্যমূলক আচরণ, নিম্নমানের খাদ্য, বেতনের বৈষম্য ও শাসকদের অপমানজনক আচরণ বিদ্রোহের কারণ। “আই এন এস তালওয়ার” জাহাজ থেকে বিদ্রোহ শুরু হয়ে সমগ্র নৌবাহিনীতে ছড়িয়ে পড়ে। এটি ব্রিটিশ শাসনের পতন ত্বরান্বিত করে।
- লর্ড মাউন্টব্যাটেনের ভূমিকা আলোচনা করো।
Ans: মাউন্টব্যাটেন ১৯৪৭ সালে ভারতের শেষ ভাইসরয় হিসেবে দায়িত্ব নেন। তিনি রাজনৈতিক আলোচনা ও পরিকল্পনার মাধ্যমে ভারতের স্বাধীনতার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করেন। ‘মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনা’ অনুসারে ভারত ও পাকিস্তান দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রে বিভক্ত হয়। তিনি শান্তিপূর্ণ ক্ষমতান্তর নিশ্চিত করেন।
রচনাধর্মী | স্বাধীনতার পথে (পঞ্চম অধ্যায়) দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | WB HS Class 12 History Sadhinotar Pothe Descriptive Question and Answer:
1. ভারতীয় রাজনীতিতে গান্ধিজির ক্যারিশমা সম্পর্কে লেখো।
Ans: মহাত্মা গান্ধি (১৮৬৯-১৯৪৮ খ্রি.) ছিলেন ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন উজ্জ্বল নক্ষত্র। ভারতীয় জনমানসে তাঁর রাজনৈতিক ক্যারিশমা এমন ছিল যে, তিনি কেবল ভারতের জাতীয় আন্দোলনের নেতা নন, বরং সমগ্র জাতিকে একত্রিত করার প্রতীকে পরিণত হয়েছিলেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ক্যারিশমা (Charishma) শব্দটি একটি ইংরেজি শব্দ, যার বাংলা অর্থ হল ব্যক্তিগত আকর্ষণ, আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব, চুম্বকীয় আকর্ষণ বা অলৌকিক ক্ষমতা। ক্যারিশমা সাধারণত একজন ব্যক্তির মধ্যে থাকা একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্যকে বোঝায়, যা অন্যদের আকৃষ্ট করে বা তাদের উপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে।
গান্ধিজি / মহাত্মা গান্ধির ক্যারিশমা বা জনপ্রিয়তার কারণ:
(i) গান্ধীজির সহজ সরল জীবনমাত্রা: প্রাক্-গান্ধি পর্বের রাজনীতিবিদদের বিলিতি ও মহার্ঘ্য পোশাক, শহুরে আদবকায়দা ভারতের গ্রামীণ সাধারণ মানুষের সঙ্গে অন্তরের যোগ স্থাপন করতে পারেনি। কিন্তু গান্ধিজি-র সহজ-সরল জীবনধারা তাঁকে অন্যান্য রাজনীতিবিদদের থেকে আলাদা করেছিল। তাঁর ধর্মপরায়ণতা, নৈতিকতা, অনাড়ম্বর জীবনদর্শন সাধারণ মানুকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। হাঁটুর ওপরে পরা চরকায় বোনা ধুতি ও চাদর পরিহিত গান্ধিজিকে সাধারণ মানুষ গ্রামীণ কৃষকসমাজের একজন শুভাকাঙ্ক্ষী বলে বরণ করে নিয়েছিলেন।
(ii) ধর্মীয় প্রতীক ও বাণীর ব্যবহার: গান্ধিজি বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষকে তাদের নিজ নিজ ধর্মীয় প্রতীক ও বাণী দ্বারা অনুপ্রাণিত করার চেষ্টা করেন। যেমন- আদর্শ রাষ্ট্র বলতে তিনি রামরাজ্য এর কথা বলেছেন। আর এর বিপরীতে ব্রিটিশ শাসনকে তিনি বলেছেন রাবণরাজ বা শয়তানের রাজত্ব, যার পরিবর্তে তিনি ঈশ্বরের বা ন্যায়ের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন। অন্যদিকে, তিনি মুসলমানদের কাছে খুদা-ই-রাজ বা খ্রিস্টানদের কাছে কিংডম অফ গড (Kingdom of God)-এর কথা বলে প্রতিটি সম্প্রদায়ের আপন মানুষ হয়ে উঠতে সক্ষম হন।
(iii) নতুন ধারার আন্দোলন: গান্ধিজির নৈতিকতা, অহিংসা, সত্যবাদিতা এবং সেবার আদর্শ ভারতীয়দের মনে গভীর রেখাপাত করে। গান্ধিজির নেতৃত্বে গড়ে ওঠা আন্দোলন তাই কেবল ক্ষমতার লড়াই নয়, বরং নৈতিক আদর্শ প্রতিষ্ঠার লড়াই হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিল। তিনি শুধু আন্দোলনের নেতা হিসেবে নন, তার চেয়ে বেশি একজন নৈতিক পথপ্রদর্শকে পরিণত হয়েছিলেন। তাঁর নেতৃত্বে পরিচালিত আন্দোলনগুলিতে অহিংস সত্যাগ্রহ আদর্শের প্রয়োগ লক্ষ করা যায়। ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণভাবে, অহিংস উপায়ে আন্দোলন পরিচালনার এই পদ্ধতি বহু মানুষকে আকৃষ্ট করেছিল। তাঁর নেতৃত্বে এই আন্দোলনগুলিতে – শামিল হন নারী, কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র-সহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ।
(iv) সমাজকল্যাণ: গান্ধিজি ছিলেন একজন দূরদর্শী রাজনৈতিক নেতা। তিনি শুধুমাত্র ভারতের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য সংগ্রাম করেননি, এর পাশাপাশি তিনি কাজ করেছেন একটি ন্যায়সঙ্গত ও সাম্যবাদী সমাজ গড়ার লক্ষ্যে। তিনি গ্রামীণ উন্নয়ন, নারী অধিকার, শিক্ষার প্রসার, অস্পৃশ্যতা দূরীকরণ প্রভৃতি বিষয়গুলিকেও আন্তরিকভাবে গুরুত্ব দিয়েছেন।
গান্ধিজির ক্যারিশমা বা জনপ্রিয়তার প্রভাব:
(i) জাতীয় ঐক্য ও চেতনার বিকাশ: গান্ধিজির জনপ্রিয়তার জন্য তাঁর নেতৃত্বে পরিচালিত আন্দোলনগুলিতে হিন্দু-মুসলমান, ধনী-দরিদ্র, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকল শ্রেণির মানুষ যোগ দিয়েছিলেন। ফলে ভারতবাসীর মধ্যে ঐক্যভাব ও জাতীয়তাবাদী চেতনার পূর্ণ বিকাশ ঘটে।
(ii) গ্রামীণ সমাজের রাজনৈতিক জাগরণ: গান্ধিজি গ্রামের সাধারণ মানুষকে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত করেছিলেন। গ্রামীণ শিল্পের উন্নয়ন ও সামাজিক সংস্কারের মাধ্যমে গ্রামকে আন্দোলনের কেন্দ্রে নিয়ে আসেন তিনি।
(iii) বিশ্বব্যাপী অনুপ্রেরণা: মহাত্মা গান্ধির আন্দোলনের আদর্শ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের স্বাধীনতার আন্দোলনকে প্রভাবিত করেছিল। মহাত্মা গান্ধীর আদর্শে মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র ও নেলসন ম্যান্ডেলা-এর মতো ব্যক্তিরা অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন।
পরিশেষে বলা যায়, গান্ধিজির ক্যারিশমা তাঁকে ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রাণপুরুষে পরিণত করেছিল। তাঁর চরিত্র, আদর্শ, আত্মত্যাগ, ও নৈতিকতার প্রভাব এতটাই গভীর ছিল, যে তা আজও ভারতবাসীর হৃদয়ে বিশেষ স্থান দখল করে আছে।
2. ভারতীয় রাজনীতিতে সুভাষচন্দ্র বসুর ক্যারিশমা সম্পর্কে লেখো।
Ans: সুভাষচন্দ্র বসু ছিলেন ভারতের জাতীয় আন্দোলনের ইতিহাসে একজন আপোসহীন যোদ্ধা। জাতীয় কংগ্রেসের স্বেচ্ছাসেবক ও নেতা হিসেবে সুভাষচন্দ্র বসুর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড এবং আজাদ হিন্দ ফৌজের সর্বাধিনায়ক হিসেবে তাঁর সামরিক কর্মকাণ্ড ব্যাপক এবং বৈচিত্র্যপূর্ণ। ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে আই সি এস (ICS) পরীক্ষায় চতুর্থ স্থান লাভ করার পরও ব্রিটিশ সরকারের অধীনে চাকুরি না নিয়ে তিনি ভারতীয় জাতীয় আন্দোলনে যোগদান করেন। তাঁর দেশপ্রেম ও আত্মত্যাগ ইতিহাসে তাঁকে এক বিশিষ্ট স্থান প্রদান করেছে।
নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ক্যারিশমা বা জনপ্রিয়তার কারণ:
(i) সুভাষচন্দ্র বসুর আদর্শ: সুভাষচন্দ্র বসু সমাজতন্ত্রবাদ বা গান্ধিবাদের সঙ্গে পরিচিত হলেও, এদের তাত্ত্বিক শুদ্ধতা রক্ষার দায় তিনি গ্রহণ করেননি। তাঁর কাছে বিশেষ জরুরি ছিল ভারতের স্বাধীনতা। আন্তর্জাতিক রাজনীতির জটিল কূটনৈতিক বিন্যাসের মধ্যে তিনি স্বাধীনতার স্বপ্নকে রূপায়িত করতে সচেষ্ট ছিলেন। তাঁর আন্তরিকতা ও দেশপ্রেমের জন্য আত্মত্যাগ ভারতবাসীর কাছে দৃষ্টান্তস্বরূপ।
(ii) রাজনৈতিক দিক: কংগ্রেসের স্বেচ্ছাসেবক, দলীয় সভাপতি, কলকাতা কর্পোরেশনের মেয়র ইত্যাদি প্রতিটি ক্ষেত্রেই সুভাষচন্দ্র বসুর ভূমিকা সম্পর্কে কোনও সংশয়ের অবকাশ নেই। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, কংগ্রেসের হরিপুরা অধিবেশনে (১৯৩৮ খ্রি.) তিনি কংগ্রেস সভাপতি পদে নির্বাচিত হন। পরের বছর অর্থাৎ ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে কংগ্রেসের ত্রিপুরি অধিবেশনের সভাপতি নির্বাচনে গান্ধিজি সমর্থিত প্রার্থী পট্টভি সীতারামাইয়াকে পরাজিত করেন। ফলে গান্ধিজির সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের অবনতি ঘটে এবং তিনি কংগ্রেসের সভাপতি পদ থেকে ইস্তফা দেন। এরপর বামপন্থী রাজনীতিকে সংগঠিত করার লক্ষ্যে ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দের ৩ মে তিনি ফরয়ার্ড ব্লক নামে একটি দল গঠন করেন।
(iii) সংগ্রামে যোগদান: জাতীয় কংগ্রেস ও গান্ধিজির অহিংস গণ আন্দোলনের প্রতি সুভাষচন্দ্র বসুর প্রাথমিকভাবে আস্থা ছিল। কিন্তু ব্রিটিশ সরকারের সাম্রাজ্যবাদী শাসন টিকিয়ে রাখার অনমনীয় মনোভাব তাঁকে আশাহত করে। তাই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে তিনি ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে ছদ্মবেশে আফগানিস্থান, রাশিয়া হয়ে জার্মানিতে পৌঁছান। শেষ বিকল্প হিসেবে বিদেশি শক্তির সাহায্যে সামরিক যুদ্ধের পথ বেছে নেন। জাপানের সহায়তায় ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে পুনর্গঠন করেন আজাদ হিন্দ ফৌজ। এই কাজের ঝুঁকি ও বিপদ তাঁর অজানা ছিল না, কিন্তু ভারতমাতার স্বাধীনতার জন্য নিবেদিতপ্রাণ সুভাষচন্দ্র সেই জীবন-মৃত্যুর পথ গ্রহণ করে অভূতপূর্ব ইতিহাস তৈরি করেন।
(iv) সামরিক নেতা: সুভাষচন্দ্র বসুর যে প্রতিচ্ছবি সমগ্র ভারতবাসীর মনে সদা-জাগরুক, তা হল সামরিক পোশাকে সজ্জিত সেনাপতি সুভাষচন্দ্র। তাঁর নেতৃত্বে আজাদ হিন্দ ফৌজের সংগ্রাম ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায়। আজাদ হিন্দ বাহিনীর সেনাদের ভারত অভিযানে উদ্বুদ্ধ করার জন্য তিনি ডাক দেন-দিল্লি চলো। আর সাধারণ ভারতবাসীর উদ্দেশে বলেন-তোমরা আমাকে রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব (Give me blood and I promise you freedom)
নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ক্যারিশমা বা জনপ্রিয়তার প্রভাব:
(i) সশস্ত্র সংগ্রামে প্রেরণা: সুভাষচন্দ্র বসুর জনপ্রিয়তা ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামে এক সাহসী ও আক্রমণাত্মক ধারার জন্ম দেয়। তাঁর নেতৃত্বে আজাদ হিন্দ বাহিনীর ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রাম সাধারণ ভারতবাসীর মনে সশস্ত্র সংগ্রামের প্রতি আস্থা জাগিয়েছিল।
(ii) জাতীয় ঐক্য ও ধর্মনিরপেক্ষতার প্রসার: সুভাষচন্দ্র বসুর নেতৃত্বাধীন আজাদ হিন্দ ফৌজ ছিল সাম্প্রদায়িক চেতনা বিমুক্ত। শাহনওয়াজ খান, গুরবক্স সিং ধিলন, প্রেমকুমার সেহগল প্রমুখ সুযোগ্য সেনাধ্যক্ষের উপস্থিতি ধর্মনিরপেক্ষতা ও জাতীয় ঐক্যের বার্তা বহন করেছিল।
(iii) আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ভারতের সংগ্রামকে গুরুত্বদান : নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ব্রিটিশবিরোধী অক্ষশক্তিভুক্ত দেশ জার্মানি ও জাপানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলেন। তিনি রাসবিহারী বসুর উদ্যোগে গড়ে ওঠা আজাদ হিন্দ বাহিনীকে পুনর্গঠন করেছিলেন। এরপর তিনি আয়ারল্যান্ডের বিপ্লবীদের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে সিঙ্গাপুরে আজাদ হিন্দ সরকার প্রতিষ্ঠা করলে জাপান, জার্মানি, ইটালি-সহ মোট নয়টি রাষ্ট্র এই অস্থায়ী সরকারকে স্বীকৃতি দেয়।
সর্বোপরি বলা যায়, সুভাষচন্দ্র বসুর ক্যারিশমা ছিল তাঁর ব্যক্তিত্ব, বাগ্মিতা, দূরদর্শিতা, আত্মত্যাগ ও জনগণের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসার সমন্বয়। হয়তো তিনি তাঁর লক্ষ্যপূরণে পুরোপুরি সফল হতে পারেননি, কিন্তু তবুও ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে তাঁর উজ্জ্বল ভূমিকা আজও তাঁকে চিরস্মরণীয় করে রেখেছে।
3. ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের নৌবিদ্রোহের কারণ ও গুরুত্ব আলোচনা করো।
অথবা, নৌবিদ্রোহের প্রেক্ষাপট আলোচনা করো। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে এই বিদ্রোহের কী ইতিবাচক প্রভাব পড়েছিল?
Ans: ভারতের স্বাধীনতা অন্দোলনের ইতিহাসে সর্বশেষ উল্লেখযোগ্য সংগ্রাম হল ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের ১৮ ফেব্রুয়ারি সংঘটিত ভারতীয় নৌবাহিনীর বিদ্রোহ। ড. সুমিত সরকার এই বিদ্রোহকে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের বিভিন্ন ঘটনার মধ্যে সবচেয়ে বীরোচিত বলে অভিহিত করেছেন।
১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের নৌবিদ্রোহের কারণ:
(i) আজাদ হিন্দ সেনাদের বিচার: আজাদ হিন্দ ফৌজের সেনানীদের বিচারকে কেন্দ্র করে ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের প্রথমদিকে ভারতের রাজনৈতিক পরিস্থিতি রীতিমতো অশান্ত হয়ে উঠেছিল। আজাদ হিন্দ বাহিনীর দৃষ্টান্তে প্রভাবিত হয়ে ভারতীয় সেনাবাহিনীর মধ্যেও চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয় এবং বিদ্রোহের সম্ভাবনা দেখা দেয়।
(ii) নিম্নমানের খাদ্য সরবরাহ: ইতিপূর্বে ভারতীয় নৌ-সেনাদের নিম্নমানের খাদ্যদ্রব্য সরবরাহ করা হত। ফলে এদেশীয় নৌবাহিনীর কর্মী ও অফিসারদের মধ্যে বেশ কিছুদিন ধরেই বিক্ষোভ দানা বাধছিল।
(iii) জাতিবিদ্বেষ: ইংরেজ নৌ-সেনা অফিসারগণ এদেশীয় নাবিকদের অকারণে অকথ্য গালিগালাজ ও অপমান করতেন। ব্রিটিশ অফিসারদের এহেন জাতিবিদ্বেষমূলক মনোভাব তথা ভারতবিরোধী আচরণে অসন্তুষ্ট ভারতীয় নাবিকদের সহ্যসীমা অতিক্রম করেছিল।
(iv) বেতন বৈষম্য: কোনও কাজে নিযুক্ত ভারতীয় নাবিকরা যে পরিমাণ বেতন ও সুযোগসুবিধা পেতেন, সেই একই কাজে বা পদে নিযুক্ত থেকে ইংরেজ নাবিকরা ভারতীয়দের তুলনায় অনেক বেশি বেতন ও অন্যান্য সুযোগসুবিধা লাভ করতেন।
(v) পদোন্নতির ক্ষেত্রে বৈষম্য: একই পদে চাকুরি ও সমযোগ্যতাসম্পন্ন ইংরেজ নাবিকদের চাকুরিক্ষেত্রে পদোন্নতির ব্যবস্থা থাকলেও ভারতীয় নাবিক ও নৌ-সেনারা তা থেকে বঞ্চিত হতেন।
(vi) সেনাদের বরখাস্ত করা: ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রচুর ভারতীয়কে নৌবাহিনীতে নিযুক্ত করা হয়। কিন্তু যুদ্ধশেষে অতিরিক্ত সেনার প্রয়োজন না থাকায় বহু সেনাকে চাকুরি থেকে সরকার বরখাস্ত করে। এর ফলে নৌবাহিনীতে ক্ষোভের সঞ্চার হয়।
নৌবিদ্রোহের গুরুত্ব বা তাৎপর্ষ:
১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে ভারতীয় নৌ-সেনাদের বিদ্রোহ শেষপর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছিল। কিন্তু বিভিন্ন ঐতিহাসিক তথা পন্ডিতগণ ভারতের তৎকালীন পরিস্থিতিতে সংঘটিত নৌবিদ্রোহের নানা গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরেছেন। ড. সুমিত সরকার নৌ-সেনাদের অভ্যুত্থানকে আজাদ হিন্দ ফৌজের মুক্তিযুদ্ধের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেছেন।
(i) সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি: নৌবিদ্রোহে হিন্দু ও মুসলিম সেনাগণ একযোগে বিদ্রোহ ঘোষণা ও পরিচালনা করেন। পাশাপাশি হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে সাধারণ মানুষ এই বিদ্রোহে যোগ দিলে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠিত হয়। মতি মি
(ii) ব্রিটিশ শাসনের অবসানের ইঙ্গিত: নৌ-সেনাদের বিদ্রোহ ছিল ব্রিটিশ শাসনের অবসানের ইঙ্গিতস্বরূপ। কারণ-এই বিদ্রোহের পর ইংরেজরা বুঝতে পেরেছিলেন যে, ভারতীয় সেনাদের উপর নির্ভর করে আর ভারতে শাসনব্যবস্থা টিকিয়ে রাখা সম্ভবপর নয়।
(iii) ভারত ত্যাগের ভাবনা: অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন যে, নৌবিদ্রোহের প্রভাবে সেনাবাহিনী ও সাধারণ মানুষের মধ্যেকার দূরত্ব বা ব্যবধান কমে যায়। ভারতে আবারও উভয়ের সমন্বয়ে এমন এক বিদ্রোহ শুরু হলে তার ভয়াবহ পরিণামের কথা আঁচ করেই ব্রিটিশরা ভারত ত্যাগের ভাবনা ভাবতে শুরু করেন।
(iv) মন্ত্রী মিশনের আগমন: ঐতিহাসিক রজনীপাম দত্তের মতে, নৌবিদ্রোহের ফলে আতঙ্কিত হয়ে ইংরেজ সরকার শান্তিপূর্ণ উপায়ে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য কংগ্রেস ও মুসলিম লিগের সঙ্গে আলোচনা করতে মন্ত্রী মিশনকে ভারতে পাঠায়। ১৮ ফেব্রুয়ারি নৌবিদ্রোহ শুরু হয় এবং পরের দিন ভারতে মন্ত্রী মিশন পাঠানোর কথা সরকারিভাবে ঘোষণা করা হয়।
পরিশেষে বলা যায়, নৌবিদ্রোহের পরই ব্রিটিশ সরকার বুঝতে পারে যে, ভারতবর্ষের স্বাধীনতালাভপ্রায় আসন্ন। আর তাই ইতিহাসবিদ রজনীপাম দত্ত নৌ-সেনাদের বিদ্রোহকে ভারত ইতিহাসের বিশেষ নির্দেশিকা ও নবযুগের সংকেত বলে উল্লেখ করেছেন।
4. ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ভারত ছাড়ো আন্দোলন সম্পর্কে একটি নিবন্ধ লেখো।
অথবা, ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট আন্দোলন সম্পর্কে আলোচনা করো।
Ans: দুজন ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে সর্বশেষ ও বৃহৎ গণ আন্দোলন হিসেবে ভারত ছাড়ো আন্দোলনের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইতিহাসে এই আন্দোলন বিয়াল্লিশের বিপ্লব বা আগস্ট আন্দোলন নামেও পরিচিত।
১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ভারত ছাড়ো আন্দোলন /আগস্ট আন্দোলন:
প্রেক্ষাপট / কারণসমূহ:
(i) ক্রিপস মিশনের ব্যর্থতা: ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ক্রিপস প্রস্তাবে ভারতকে স্বাধীনতা দানের কোনও উল্লেখ না থাকায় ভারতবাসী তা গ্রহণ করেননি। – এই মিশনের ব্যর্থতার পর ভারতবাসীর কাছে স্পষ্ট হয় যে, যুদ্ধ চলাকালে ব্রিটিশ সরকার ভারতের সাংবিধানিক সংস্কার ঘটানোর বিষয়ে আদৌ আগ্রহী এ নয়। এই ঘটনায় গান্ধিজি-ও নিরাশ হন।
(ii) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ঘটনাবলি: আলোচ্য পর্বে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন ঘটনা গান্ধিজি ও জাতীয় নেতাদের উদ্বিগ্ন না করে। মালয়, সিঙ্গাপুর, বার্মা থেকে ব্রিটিশবাহিনী সরে এলে সেখানে চরম বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। ওই এ সকল অঞ্চলের মানুষেরা বিশেষত ভারতীয়রা অক্ষশক্তি জাপানের হাতে লাঞ্ছিত হতে থাকেন।
(iii) জাপানি আক্রমণের সম্ভাবনা: মালয় ও বার্মার সমতো ভারতের উপরেও জাপানের আক্রমণ ও অত্যাচারের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল। যা ভারতীয় নেতাদের উদ্বিগ্ন করে।
(iv) পোড়ামাটি নীতি: জাপানি আক্রমণ প্রতিহত করার উদ্দেশ্যে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল পূর্ব ভারতে পোড়ামাটি নীতি অনুসরণ করেন। এর ফলে আসাম, বাংলাদেশ ও ওড়িশায় বহু কৃষিজমি, খাদ্যশস্য, নৌকা, সাইকেল, রাস্তাঘাট জোরপূর্বক ধ্বংস করা হয়-যাতে জাপানিরা এগুলি ব্যবহার করে এদেশে প্রবেশ করতে না পারে। কিন্তু ভারতবাসী ব্রিটিশ শক্তির এহেন আচরণে অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হন। এভাবেই ভারতে এক সর্বভারতীয় গণ আন্দোলনের পটভূমি তৈরি হয়েছিল।
সূচনা:
প্রস্তাব গ্রহণ: ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ১৪ জুলাই কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটি ওয়ার্ধায় একটি জাতীয় দাবির খসড়া প্রস্তুত করে। গান্ধিজি ঘোষণা করেন, পূর্ণ স্বাধীনতা ছাড়া কোনও কিছুতেই আমি সন্তুষ্ট হব না। এরপর ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ৮ আগস্ট জাতীয় কংগ্রেসের বোম্বাই অধিবেশনে ভারত ছাড়ো প্রস্তাব পাস হয়। এখানেই তিনি ঘোষণা করেন আন্দোলনের বিখ্যাত মন্ত্র-করেঙ্গে ইয়া মরেঙ্গে (Do or Die)।
নেতৃবৃন্দের গ্রেফতারি: ভারত ছাড়ো প্রস্তাব গৃহীত হওয়ার পর ৮ আগস্ট মধ্যরাতে গান্ধিজি, মৌলানা আবুল কালাম আজাদ, জওহরলাল নেহরু-সহ অন্যান্য কংগ্রেসি শীর্ষ নেতাদের পুলিশ গ্রেফতার করে। জাতীয় কংগ্রেসকে অবৈধ বলে ঘোষণা করা হয়।
স্বতঃস্ফূর্ত গণ আন্দোলন: ৯ আগস্ট নেতাদের গ্রেফতারের খবর সারা দেশে ছড়িয়ে পড়লে ভারতবাসীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রতিবাদী আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ধর্মঘট, শোভাযাত্রা ও হরতাল পালনের মাধ্যমে ভারতবাসী তাদের প্রতিবাদ জানান।
প্রসার:
(i) ভারত ছাড়ো আন্দোলন প্রথমে বোম্বাই, কলকাতা, দিল্লি, নাগপুর, আহমেদাবাদ, বরোদা, ঢাকা প্রভৃতি শহরে বিস্তার লাভ করে।
(ii) অল্পদিনের মধ্যে এই আন্দোলন শহর থেকে গ্রামাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়লে জনতা সরকারি টেলিগ্রাফ, রেলপথ প্রভৃতি যোগাযোগ ব্যবস্থার উপর প্রবল আক্রমণ শুরু করেন। এমনকি থানা, অফিস, আদালতের উপরও তারা আক্রমণ চালান।
(iii) যুক্তপ্রদেশ, বিহারের বিস্তীর্ণ অঞ্চল, মহারাষ্ট্রের সাতারা ও বাংলার মেদিনীপুর জেলায় এই আন্দোলন তীব্র হয়ে ওঠে। এছাড়া ওড়িশা, গুজরাট, আসাম, অস্ত্রপ্রদেশ ইত্যাদি অঞ্চলেও ভারত ছাড়ো আন্দোলন প্রসারিত হয়।
(iv) আগস্ট আন্দোলনে ছাত্র, শ্রমিক ও কৃষক শ্রেণি সক্রিয়ভাবে অংশ নেয়। ছাত্র তথা যুব সম্প্রদায় স্কুলকলেজ বয়কট করে সভাসমিতি, মিটিং-মিছিল, পথ অবরোধ ইত্যাদি কর্মসূচিতে শামিল হন। দিল্লি, লখনউ, আহমেদাবাদ, কানপুর, নাগপুর, মাদ্রাজ, কলকাতা প্রভৃতি শহরের শ্রমিকরা ধর্মঘট করেন। আবার আসাম, বাংলা, বিহার, যুক্তপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ ও মাদ্রাজ অঞ্চলের কৃষকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন।
(v) এই আন্দোলনে নারীসমাজও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গোপনে নারীদের সংগঠিত করার কাজে দুই প্রধান সংগঠক ছিলেন অরুণা আসফ আলি ও সুচেতা কৃপালনি। তাছাড়া তমলুকের ৭৩ বছর বয়স্কা ‘গান্ধিবুড়ি’ মাতঙ্গিনী হাজরা, আসামের ১৩ বছরের কনকলতা বড়ুয়া, পাঞ্জাবের গৃহবধূ ভোগেশ্বরী ফুকোননী প্রমুখ এই আন্দোলনে নতুন প্রেরণা সঞ্চার করেছিলেন।
ব্যর্থতা: ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দ থেকে আগস্ট আন্দোলন বা ভারত ছাড়ো আন্দোলনের তীব্রতা কমতে থাকে। শেষপর্যন্ত এই আন্দোলন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। এর পিছনে ব্রিটিশ সরকারের প্রবল দমনপীড়ন, নেতৃত্ব ও সংগঠনের অভাব, মুসলিম লিগ, হিন্দু মহাসভা-র মতো দলগুলির আন্দোলনে যোগদান না করা প্রভৃতি বিষয়গুলি দায়ী ছিল।
গুরুত্ব: ভারত ছাড়ো আন্দোলন সফল না হলেও, এর গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। ভারতে ব্রিটিশ শাসনের ইতিহাসে এটাই ছিল শেষ গুরুত্বপূর্ণ সর্বভারতীয় আন্দোলন। এই আন্দোলনের মাধ্যমে সমগ্র ভারতবাসীর সংগ্রামী চেতনা প্রকাশ পেয়েছিল। সর্বোপরি এই আন্দোলনে সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে ভারতবাসীর যে ক্ষোভ প্রকাশ পেয়েছিল তাতে বিদেশি শাসকবর্গ আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। তাঁরা বুঝতে পেরেছিলেন যে, ভারতবর্ষে তাঁদের শাসনের মেয়াদ ফুরিয়ে এসেছে।
5. ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে আজাদ হিন্দ ফৌজের সংগ্রামের বর্ণনা দাও। এই সংগ্রাম কী ব্যর্থ হয়েছিল?
অথবা, আজাদ হিন্দ বাহিনীর ভারত অভিযানের বর্ণনা দাও।
Ans: ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে আজাদ হিন্দ ফৌজ। আজাদ হিন্দ বাহিনী (Indian National Army or INA)-এর সংগ্রাম একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ভারতকে ইংরেজদের অধীনতা থেকে মুক্ত করে স্বাধীনতার স্বপ্নকে সফল করার ক্ষেত্রে এই বাহিনীর সংগ্রাম চিরস্মরণীয়।
আজাদ হিন্দ ফৌজের সংগ্রাম/আজাদ হিন্দ বাহিনীর ভারত অভিযান:
‘আজাদ হিন্দ ফৌজ গঠন: প্রবাসী ভারতীয় বিপ্লবী রাসবিহারী বসু দীর্ঘদিন ধরে পূর্ব এশিয়ায় বসবাসকারী ভারতীয়দের সংঘবদ্ধ করে জাতীয় সংগ্রামের সঙ্গে যুক্ত করতে প্রচেষ্টা চালাচ্ছিলেন। এসময় জাপানিদের সমর্থন নিয়ে ব্যাংককে এক সম্মেলনে ভারতীয় স্বাধীনতা সংঘ (Indian Independence League) গঠিত হয়। এর সভাপতি ছিলেন রাসবিহারী বসু। রাসবিহারী বসুর উদ্যোগেই ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে সিঙ্গাপুরে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করে আজাদ হিন্দ ফৌজ। এই সেনাদলের তিনটি আদর্শ ছিল- ঐকা (ইত্যাদ), আত্মবিশ্বাস (ইত্তেফাক) ও আত্মোৎসর্গ (কুরবানি)।
‘আজাদ হিন্দ ফৌজ-এর নেতৃত্ব: ইতিমধে ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে জার্মানি থেকে জাপানে এসে পৌঁছান সুভাষচন্দ্র বসু। পরবর্তীকালে সুভাষচন্ত বসুর হাতেই আজাদ হিন্দ ফৌজ-এর সর্বাধিনায়কের দায়িত্ব আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে দেওয়া হয় (২৫ আগস্ট, ১৯৪৩ খ্রি.)। সুভাষচন্দ্র আজাদ হিন্ বাহিনীর পুনর্গঠন করেন। গঠিত হয় ৩টি বাহিনী- আজাদ ব্রিগেড, গান্ধি ব্রিগেড ও নেহরু ব্রিগেড নারীদের নিয়ে গঠিত হয় ঝাঁসির রানি ব্রিগেড সুভাষচন্দ্রের আপত্তি সত্ত্বেও তাঁর অনুগামীদের ইচ্ছানুসারে বাছাই সেনাদের নিয়ে গঠন করা হয় সুভাষ ব্রিগেড।
আজাদ হিন্দ সরকার প্রতিষ্ঠা: আয়ারল্যান্ডের বিপ্লবীদের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে সুভাষচন্দ্র সিঙ্গাপুরে ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে ২১ অক্টোবর স্বাধীন ভারতবর্ষের অস্থায়ী আজাদ হিন্দ সরকার প্রতিষ্ঠা করেন। এই সরকারের প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান সেনাপতি হন সুভাষচন্দ্র। জার্মানি, ইটালি, জাপান-সহ মোট ৯টি রাষ্ট্র এই অস্থায়ী সরকারকে স্বীকৃতি দেয়। জাপান অস্থায়ী সরকারকে সমর্থনের প্রতীক হিসেবে তার অধিকৃত আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ আজাদ হিন্দ সরকারকে অর্পণ করে। নেতাজি এগুলির নতুন নামকরণ করেন যথাক্রমে-শহিদ দ্বীপ ও স্বরাজ দ্বীপ। তিনি ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দের ৩১ ডিসেম্বর আন্দামানে উপস্থিত হয়ে সেখানে স্বাধীন ভারতের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন।
ভারত অভিমানের সূচনাপর্ব: ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি মাসে ব্রহ্মদেশের রেঙ্গুনে আজাদ হিন্দ সরকার ও সেনাবাহিনীর দ্বিতীয় সদর দফতর স্থাপন (প্রথমটি ছিল সিঙ্গাপুরে) করে সুভাষচন্দ্র ভারত অভিযানের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেন। সেনাদলের সামনে তিনি ধ্বনি দেন-দিল্লি চলো।
ইম্ফল ও কোহিমা অভিযান: জাপানি বাহিনীর সহযোগিতায় আজাদ হিন্দ ফৌজ প্রথমে ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দের ৪ ফেব্রুয়ারি আরাকান দখল করে। মার্চের শেষদিকে ইম্ফল অধিকৃত হয় এবং ১৪ এপ্রিল মণিপুরের মৈরাং দখল করার পর মে মাসের শেষদিকে আজাদ হিন্দ ফৌজ কোহিমা-তে উপস্থিত হয়। শাহনওয়াজ খানের নেতৃত্বে সুভাষ ব্রিগেড, গুলজারা সিং-এর নেতৃত্বে আজাদ ব্রিগেড এবং জামন কিয়ানির নেতৃত্বে গান্ধি ব্রিগেড অসীম সাহসের সঙ্গে লড়াই চালাতে থাকে। তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরিস্থিতিতে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে মার্কিন বাহিনীর তীব্র সক্রিয়তা; অস্ত্র সরবরাহের ক্ষেত্রে জাপানের অসহযোগিতা ও চুক্তির শর্তভঙ্গের ঘটনা আজাদ হিন্দ ফৌজের মনোবলে ভাঙন ধরিয়ে দিয়েছিল। অস্ত্র ও রসদের অভাব, প্রবল বর্ষণ ও রোগের প্রাদুর্ভাব বাহিনীকে সংকটাপন্ন করে তোলে। ফলে ইম্ফল-কোহিমা ফ্রন্টে বীরত্বপূর্ণ লড়াই-এর পরও আজাদ হিন্দ বাহিনী পিছু হটতে বাধ্য হয়।
যুদ্ধের অবসান: শেষপর্যন্ত ব্রিটিশবাহিনী তীব্র আক্রমণ চালিয়ে রেঙ্গুন দখল করে নেয়। নেতাজির বিশ্বস্ত অনুচর শাহনওয়াজ খান, জি এস ধিলন প্রমুখ গ্রেফতার হন। নিরাপত্তার কারণে সুভাষচন্দ্রকে ব্যাংককে চলে যেতে হয়। এইসময় বিশ্বযুদ্ধের গতি দ্রুত মিত্রপক্ষের অনুকূলে চলে যায়। ১৯৪৫-এর মে মাসে জার্মানি এবং আগস্ট মাসে জাপান আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। অতঃপর বিদেশি সাহায্যের সম্ভাবনা প্রায় শেষ হয়ে যায়। অনিচ্ছাসত্ত্বেও সহকর্মীদের একান্ত অনুরোধে সুভাষচন্দ্র বসু হাবিবুর রহমানের সঙ্গে সায়গন থেকে জাপানি বিমানে চেপে টোকিও অভিমুখে রওনা হতে বাধ্য হন। কিন্তু তাইহোকু বন্দরে বিমানটি আকস্মিক আগুনে ভস্মীভূত হয়ে যায় (১৮ আগস্ট, ১৯৪৫ খ্রি.)। কথিত আছে যে, এই দুর্ঘটনায় সুভাষচন্দ্রের জীবনাবসান ঘটেছে। তবে তাঁর জীবনের শেষ পরিণতি সম্পর্কে এখনও অস্পষ্টতা ও প্রবল বিতর্ক আছে।
আজাদ হিন্দ বাহিনীর ব্যর্থতা: নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর নেতৃত্বে আজাদ হিন্দ ফৌজ বীরবিক্রমে লড়াই করলেও, শেষপর্যন্ত অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছোতে পারেনি।
- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আবহে বিভিন্ন বিবদমান পক্ষগুলির অবস্থানকে কাজে লাগিয়ে এই বাহিনী সফল হতে চেয়েছিল, তাই পরবর্তীকালে ঘটনাক্রমের পরিবর্তনকে নিয়ন্ত্রণ করতে তারা ব্যর্থ হয়।
- এই বিশ্বযুদ্ধে জাপানের পরাজয় ঘটলে আজাদ হিন্দ বাহিনী তাদের আর্থসামরিক সাহায্য লাভ থেকে বঞ্চিত হয়।
- দুর্গম পার্বত্য অঞ্চলে বর্ষার সময় অভিযান চালানোয় এই ফৌজ নানা প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয়।
- প্রাকৃতিক দুর্যোগ, রোগ, শীত ও পার্বত্য অঞ্চলের বিষাক্ত পোকার আক্রমণে বহু সৈন্য মারা গেলে এবং প্রয়োজনীয় খাদ্য, রসদ ও সাজসরঞ্জামের অভাবে বাহিনী ছিন্নভিন্ন হয়ে পড়ে।
- এ ছাড়া জাপানি সেনাপতিদের সঙ্গে আজাদ হিন্দ বাহিনীর সেনাপ্রধানদের অন্তর্দ্বন্দ্ব, ভারতের জাতীয় নেতৃবৃন্দের অসহযোগিতা প্রভৃতি কারণেও আজাদ হিন্দ বাহিনীর সংগ্রাম ব্যর্থ হয়।
6. রাজাজি সূত্র বা সি আর ফর্মুলা বলতে কী বোঝো?
Ans: রাজাজি সূত্র / সি আর ফর্মুলা: ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় থেকে মুসলিম লিগ পৃথক পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠনের জন্য তৎপর হয়ে ওঠে। ফলে ভারতের অখণ্ডতা বিঘ্নিত হতে পারে ভেবে মুসলিম লিগের দাবি কিছুটা মেনে নেয় জাতীয় কংগ্রেস। অতঃপর জাতীয় কংগ্রেস ও মুসলিম লিগের মধ্যে মতভেদ দূর করা এবং ভারতের অখণ্ডতা রক্ষার প্রচেষ্টায় কংগ্রেস নেতা চক্রবর্তী রাজাগোপালাচারী একটি সমাধানসূত্র প্রকাশ করেন, যা রাজাজি সূত্র বা সি আর ফর্মুলা নামে পরিচিত।
সি আর ফর্মুলার প্রস্তাবসমূহ: চক্রবর্তী রাজাগোপালাচারী ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দে একটি সমাধানসূত্রের মাধ্যমে বলেন-
- কংগ্রেস ও মুসলিম লিগ ঐক্যবদ্ধভাবে স্বাধীনতা লাভের জন্য আন্দোলন করবে।
- লিগ প্রথম স্বাধীনতার দাবি সমর্থন করুক এবং কংগ্রেসের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারে যোগ দিক।
- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলের অধিবাসীদের গণভোট গ্রহণ করে দেখা হবে যে তারা পৃথক রাষ্ট্রগঠনের পক্ষপাতী কি না।
- মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলে ভোটগ্রহণের পূর্বে সব দলকে তাদের বক্তব্য প্রচারের সুযোগ দেওয়া হবে।
- মুসলিমপ্রধান অঞ্চলগুলি যদি পৃথক রাষ্ট্র গঠনের পক্ষে মতামত দেয়, তবে দুটি পৃথক রাষ্ট্র গঠন করা হবে।
- দেশভাগ হয়ে দুটি পৃথক রাষ্ট্র গঠিত হলেও প্রতিরক্ষা, বাণিজ্য, যোগাযোগ ও অন্যান্য বিষয়ে উভয় অংশই সমানভাবে জড়িত-এইসব বিষয় যৌথভাবে পরিচালিত হবে। সমগ্র প্রকল্পটি রূপায়িত হবে ব্রিটিশদের পূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের পরে।
সি আর ফর্মুলার ব্যর্থতা: মহম্মদ আলি জিন্নাহ রাজাজি সূত্রকে সার্বিকভাবে প্রত্যাখ্যান করেন। ড. অমলেশ ত্রিপাঠী বলেছেন, ‘জিন্নাহ-র অনমনীয় মনোভাবের কারণে সি আর ফর্মুলা ব্যর্থ হয় এবং দ্বিজাতি তত্ত্ব ও ভারতের সাম্প্রদায়িক আন্দোলন তীব্রতার হয়ে ওঠে।’ এর সার্বিক পরিণতি স্বরূপ দ্বিখণ্ডিত হয় ভারতবর্ষ-জন্ম নেয় দুটি পৃথক রাষ্ট্র-পাকিস্তান ও ভারত।
7. নওয়াভেল পরিকল্পনা কী? এর পটভূমি আলোচনা করো?
অথবা, কোন পরিস্থিতিতে ওয়াভেল পরিকল্পনা রচিত হয়?
Ans: ওয়াডেল পরিকল্পনা: ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবর মাসে বড়োলাট লর্ড লিনলিথগোর স্থলাভিষিক্ত হন লর্ড ওয়াভেল। তিনি তৎকালীন ভারতের সাম্প্রদায়িক সমস্যা, পৃথক পাকিস্তানের দাবিতে জিন্নাহ-র অনড় মনোভাব, বাংলার ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ ইত্যাদি সমস্যাসমাধানের প্রচেষ্টা চালাতে থাকেন। এরূপ পরিস্থিতিতে ১৮৪৫ খ্রিস্টাব্দের ২৩ মার্চ নাগাদ লর্ড ওয়াভেল প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল-এর সঙ্গে ভারতসংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনার জন্য লন্ডন যান। বিস্তারিত আলোচনার পর – ওয়াভেল ৪ জুন দিল্লি প্রত্যাবর্তন করেন এবং ১৪ জুন তিনি ভারতকে স্বায়ত্তশাসন দেওয়ার বিষয়ে তাঁর পরিকল্পনা ঘোষণা করেন। এটি ওয়াভেল পরিকল্পনা (Wavell Plan) নামে খ্যাত।
ওয়াভেল পরিকল্পনার পটভূমি: ভারতে ওয়াভেল পরিকল্পনা পেশের ক্ষেত্রে কতগুলি বিষয় দায়ী ছিল –
(i) জাপানি আক্রমণের আশঙ্কা: ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল মাসে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির পতন ঘটলেও এশিয়াতে জাপান তখনও যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছিল। এশিয়ায় জাপানের অগ্রগতির ফলে ব্রিটিশ উপনিবেশ হিসেবে ভারতেও জাপানের আক্রমণ বিষয়ে ব্রিটিশ সরকারের মধ্যে আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল।
(ii) মার্কিন মুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার চাপ: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ও তার পরবর্তীকালে পৃথিবীর দুই বৃহৎ শক্তি-আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া ভারতের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিল। ভারতের স্বাধীনতার দাবি মেনে নেওয়ার জন্য তারা ইংল্যান্ডের উপর চাপ সৃষ্টি করে।
(iii) ইংল্যান্ডের সাধারণ নির্বাচন: এই সময় ব্রিটেনের সাধারণ নির্বাচনের দিন এগিয়ে এসেছিল, তাই ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল রক্ষণশীল দলের নেতা হিসেবে আশঙ্কা করেছিলেন যে, নির্বাচনে তাঁর দলের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী লিবারেল পার্টি তাদের ভারতনীতির সমালোচনা করবে। তাই রক্ষণশীল দলের নেতা চার্চিল ভারতের সঙ্গে বোঝাপড়ায় আগ্রহী হয়ে উঠেছিলেন।
(iv) ভারতে সাম্প্রদায়িক সমস্যা সমাধানে ব্যর্থতা: ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে লর্ড ওয়াভেল ভারতের ভাইসরয় হয়ে আসেন। ভারতের রাজনৈতিক তথা সাম্প্রদায়িক সংকট নিরসনে গান্ধিজি এবং মুসলিম লিগের নেতা জিন্নাহ-র সঙ্গে লর্ড ওয়াভেল দীর্ঘ আলোচনা করেন, কিন্তু শেষপর্যন্ত সাম্প্রদায়িক সমস্যা সমাধানে তিনি ব্যর্থ হন।
8. মন্ত্রী মিশন/ক্যাবিনেট মিশনের ঘোষিত পরিকল্পনার প্রেক্ষিতে ভারতীয়দের মধ্যে কিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছিল তা লেখো।
Ans: ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের ১৬ মে মন্ত্রী মিশন বা ক্যাবিনেট মিশন (Cabinet Mission) ভারতের ভবিষ্যৎ গঠন ও শাসন কাঠামো গড়ে তোলার সুপারিশ পেশ করেছিলেন। এই ঘোষণার প্রেক্ষিতে ভারতীয় রাজনৈতিক দলগুলির প্রতিক্রিয়া ছিল ভিন্নমুখী ও দ্বিধান্বিত। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এই মিশনের মোট ৩ জন সদস্য ছিলেন পেথিক লরেন্স, এ ভি আলেকজান্ডার এবং স্ট্যাফোর্ড ক্রিপস।
মন্ত্রী মিশন/ক্যাবিনেট মিশনের ঘোষিত পরিকল্পনার প্রেক্ষিতে ভারতীয়দের প্রতিক্রিয়া:
মুসলিম লিগের প্রতিক্রিয়া:
- মুসলিম লিগ ৬ জুন প্রাথমিকভাবে ক্যাবিনেট মিশনের প্রস্তাব মেনে নিয়েছিল। তাদের মনে হয় যে, ক্যাবিনেট মিশনের পরিকল্পনার মধ্যে পৃথক পাকিস্তানের ভিত গড়ার সুযোগ নিহিত আছে। এই পরিকল্পনা সার্বভৌম স্বাধীন ‘পাকিস্তান’ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সহযোগী হবে বলেই লিগের বিশ্বাস হয়।
- এসময় কংগ্রেসকে বাইরে রেখে সরকার গঠনের সম্ভাবনা সৃষ্টি হলে মুসলিম লিগের নেতারা উচ্ছ্বসিতও হন।
- কিন্তু ব্রিটিশ সরকারের মনে হয়েছিল ভারতে কংগ্রেসকে বাইরে রেখে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন সঠিক হবে না। তাই কংগ্রেস যাতে তাদের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করে সেই চেষ্টা চালাতে থাকে সরকার। ফলে লিগ ক্ষুব্ধ হয় ও তারা পূর্ব সিদ্ধান্ত বাতিল করে। শেষপর্যন্ত ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের ২৯ জুলাই জিন্নাহ ঘোষণা করেন যে, মুসলিম লিগ ক্যাবিনেট মিশন পরিকল্পনা মানে না। অতঃপর জিন্নাহ ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের ১৬ আগস্ট প্রত্যক্ষ সংগ্রাম দিবস পালনের ডাক দেন।
জাতীয় কংগ্রেসের প্রতিক্রিয়া:
- প্রাথমিকভাবে, জাতীয় কংগ্রেস মন্ত্রী মিশনের সুপারিশে খুশি হতে পারেনি। কারণ, এতে ভারত বিভাগের সুযোগ রাখা ছিল। তাছাড়া সাম্প্রদায়িক ভিত্তিতে নির্বাচনের ব্যবস্থা ছিল, যা কংগ্রেসের নীতিবিরোধী। তাছাড়া কংগ্রেস ভারতের স্বাধীনতার শর্তকে অগ্রাধিকার দিয়েছিল, যা এই প্রস্তাবে ছিল না। তাই কংগ্রেস অন্তর্বর্তী সরকারে যোগ দিতে অসম্মত হয়।
- তবে ৬ জুলাই কংগ্রেস দলগতভাবে শর্তসাপেক্ষে ক্যাবিনেট মিশনের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনাগুলি অনুমোদন করে। কয়েকদিনের মধ্যে জওহরলাল নেহরু এ.আই.সি.সি (All India Congress Committee) অধিবেশনে জানিয়ে দেন যে, ‘সংবিধান সভায় যোগ দেওয়া ছাড়া অন্য কোনও বিষয়ে কংগ্রেসের বাধ্যবাধকতা নেই।’ কংগ্রেসের এই ঘোষণার মাধ্যমে কংগ্রেসকে বাইরে রেখে সরকার গঠনের সম্ভাবনা জোরালো হয়েছিল।
- ব্রিটিশ সরকার এই সময় উপলব্ধি করে, কংগ্রেসকে বাইরে রেখে ভারতে কোনও অন্তর্বর্তী সরকার গঠন যুক্তিযুক্ত হবে না। বড়োলাট লর্ড ওয়াভেল তাই কংগ্রেসকে তার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার কথা বলেন। ব্রিটিশ সরকারের একান্ত অনুরোধে কংগ্রেস তার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করে এবং অন্তর্বর্তী সরকারে যোগ দিতে রাজি হয়।
9. মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনার মাধ্যমে ভারত বিভাজন পদ্ধতি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করো।
Ans: মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনা: লর্ড মাউন্টব্যাটেন ছিলেন ভারতের শেষ ভাইসরয়। তিনি ভারতে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ৩ জুন যে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন, তা মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনা (Mountabatten Award) নামে পরিচিত। তাঁর পরিকল্পনার দুটি মূল বিষয় ছিল-পাকিস্তান গঠনের দাবিকে মান্যতা দান এবং দ্রুত ক্ষমতা হস্তান্তর করে অশান্ত উপমহাদেশে শৃঙ্খলা ও শান্তির পুনঃপ্রতিষ্ঠা।
মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনার মাধ্যমে ভারত বিভাজন পদ্ধতি:
ভারতীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা: ২৪ মার্চ থেকে ৬ মে পর্যন্ত লর্ড মাউন্টব্যাটেন ভারতের রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে প্রায় ১৩৩টি বৈঠক করেন। কিন্তু পৃথক ‘পাকিস্তান’ গঠনের দাবিতে মুসলিম লিগের অনড় মনোভাবের ফলে ঐক্যমত্যে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। কংগ্রেস চেয়েছিল শক্তিশালী কেন্দ্রীয় সরকারের অধীন ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্র গঠন -ই হোক। অন্যদিকে, জিন্নাহ ও লিগ দাবি করে প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন ও সার্বভৌমত্ব এবং প্রদেশসমূহের অনুমোদনের ভিত্তিতে একটি কেন্দ্রীয় সরকার। এরূপ পরিস্থিতিতে লর্ড মাউন্টব্যাটেন কংগ্রেস নেতাদের জানান যে, যুক্তরাষ্ট্রের দাবি মেনে নিলে কেন্দ্রে থাকবে প্রায় ক্ষমতাহীন এবং প্রদেশের উপর নির্ভরশীল একটি দুর্বল সরকার। ভারতবর্ষের মতো একটি বহু ভাষা, জাতি, ধর্ম ও সংস্কৃতি অধ্যুষিত দেশে বিচ্ছিন্নতা ও বিভেদকামী প্রবণতা রোধ করার জন্য শক্তিশালী কেন্দ্রীয় সরকার থাকা আবশ্যিক। মুসলিম অধ্যুষিত কয়েকটি অঞ্চল বাদ গেলেও অবশিষ্ট বৃহত্তর অংশে নতুন ও স্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার ঐক্যবদ্ধ, উন্নত ভারত গড়ে তোলার সুযোগ পাবে। তাই পৃথক ‘পাকিস্তান’ গঠন ভারতের পক্ষে ‘একমাতৃক অভিশাপ’ হবে না। মুসলিম লিগের অসহযোগিতা, সাম্প্রদায়িকতা ইত্যাদির প্রেক্ষিতে লর্ড মাউন্টব্যাটেনের প্রস্তাব কংগ্রেস নেতাদের কাছে বেশি যুক্তিগ্রাহ্য বলেই মনে হয়।
বলকান প্রস্তাব পেশ: বিকল্প পরিকল্পনা হিসেবে লর্ড মাউন্টব্যাটেন ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল মাসে বলকান প্রস্তাব পেশ করেন। এই প্রস্তাবে বলা হয়-
- বাংলা ও পাঞ্জাব বিধানসভার মুসলিম ও অমুসলিম জেলার সদস্যরা পৃথকভাবে মিলিত হয়ে প্রত্যেক বিধানসভার উভয় সেকশন যদি দেশভাগের পক্ষে রায় দেয় তবে বাংলা ও পাঞ্জাব ভাগ করা হবে।
- সীমান্তের অধিবাসীদের মনোভাব জানার জন্য গণভোট নেওয়া হবে। অর্থাৎ, দেশভাগের দায়িত্ব বর্তাবে ভারতবাসীর ওপর।
- ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের জুন পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতাসীন থাকবে। কিন্তু শেষপর্যন্ত এই পরিকল্পনা গৃহীত না হওয়ায় ভারত বিভাগের সমস্যা আরও জটিল হয়ে ওঠে।
মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনার খসড়া পেশ:
- এরপর ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে মাউন্টব্যাটেন তার পরিকল্পনার খসড়া প্রস্তুত করেন। ২ মে এই খসড়াটি ব্রিটিশ মন্ত্রীসভার অনুমোদনের জন্য লন্ডনে পাঠানো হয়। ১০ মে কিছু সংশোধনী-সহ তা ভারতে ফেরত আসে।
- মাউন্টব্যাটেন তাঁর পরিকল্পনা প্রকাশ্যে আনার আগেই জওহরলাল নেহরুকে দেখান। এই প্রস্তাবে বলা হয়েছিল যে, কোনও প্রদেশ ভারত বা পাকিস্তানে যোগ না দিয়ে স্বাধীন রাজ্য হিসেবে থাকতে পারবে। তাই নেহরু এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন এবং আপত্তি জানিয়ে বলেন যে, প্রদেশগুলি ক্ষমতার একক হলে এবং তাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ইউনিয়ন (যুক্তরাষ্ট্র) গঠিত হলে, গৃহযুদ্ধের সম্ভাবনা থাকবে। এতে ভারতবর্ষ টুকরো টুকরো হয়ে যাবে।
চূড়ান্ত পরিকল্পনা: জওহরলাল নেহরুর আপত্তির পরিপ্রেক্ষিতে মাউন্টব্যাটেন তাঁর খসড়া প্রস্তাব পুনর্বিবেচনা করেন। এ বিষয়ে রূপরেখা তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয় সরকারের প্রধান সংবিধানিক উপদেষ্টা ভি পি মেনন-কে। মেনন যে পরিকল্পনা পেশ করেন, তা প্ল্যান পার্টিশান নামে খ্যাত। এই পরিকল্পনা অনুযায়ী, সমগ্র ভারতবর্ষকে ভারত ও পাকিস্তান দুটি ডোমিনিয়নে ভাগ করে ক্ষমতা হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এই পরিকল্পনাটি সংশোধনের পর ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ৩ জুন ভারতবিভাগ ৩ ক্ষমতা হস্তান্তর সংক্রান্ত চূড়ান্ত পরিকল্পনাটি মাউন্টব্যাটেন ঘোষণা করেন। এই প্রস্তাবে বলা হয়-
- সমগ্র ভারতবর্ষকে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি ডোমিনিয়নে বিভক্ত করা হবে এবং এরা সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে নিজ নিজ অভ্যন্তরীণ ও বিদেশনীতি পরিচালনা করবে।
- মুসলমান অধ্যুষিত সিন্ধু, বালুচিস্তান, উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ, পশ্চিম পাঞ্জাব ও পূর্ব বাংলা নিয়ে পাকিস্তান গঠিত হবে।
- পাঞ্জাব ও বাংলাকে বিভক্ত করা হবে এবং এই দুই প্রদেশের কোন্ কোন্ অঞ্চল কোন্ ডোমিনিয়নের সঙ্গে যুক্ত হবে তা নির্ধারণের জন্য একটি সীমানা নির্ধারণ কমিশন গঠিত হবে।
- দেশীয় রাজ্যগুলি কে কোন্ অংশে যোগ দেবে তা স্থির করার স্বাধীনতা পাবে ইত্যাদি।
সংশোধনের পর মাউন্টব্যাটেনের পরিকল্পনাটি ১৮ জুলাই রাজকীয় অনুমোদন দ্বারা আইনে পরিণত হয়। কংগ্রেসের পক্ষ থেকে সর্দার প্যাটেল, পণ্ডিত নেহরু, মুসলিম লিগের পক্ষে জিন্নাহ, লিয়াকৎ আলি, বলদেব সিং এই প্রস্তাব মেনে নেন।
10. ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইনের গুরুত্ব কী ছিল?
Ans: ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইনের গুরুত্ব: ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে ঘোষিত ভারত শাসন আইন (Government of India Act, 1935) ভারতীয় আশা-আকাঙ্ক্ষা ও ভারতবাসীর জাতীয় স্বার্থকে বিঘ্নিত করলেও, পরাধীন এবং স্বাধীন ভারতের রাজনৈতিক জীবনে এই আইনের গুরুত্ব ছিল অপরিসীম।
(i) যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা : এই আইন দ্বারা ব্রিটিশ সরকার ঔপনিবেশিক শাসনকাঠামোর মধ্য দিয়ে ভারতে যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা গড়ে তোলার চেষ্টা করে। এই আইন অনুযায়ী পরবর্তীকালে ভারতে কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকার, আইনসভা ও যুক্তরাষ্ট্রীয় আদালত গঠিত হয়। চালাও চানী
(ii) প্রথম নির্বাচনি অনুষ্ঠান: ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইন দ্বারা পরাধীন ভারতে ১৯৩৭খ্রিস্টাব্দে প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। জাতীয় কংগ্রেস, মুসলিম লিগ ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলি এই নির্বাচনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে, যা সংসদীয় গণতন্ত্রের ভিত্তিকে সুদৃঢ় করে।
(iii) মন্ত্রীদের কর্মসূচির রদবদল: এই শাসন সংস্কার আইন দ্বারা প্রদেশে ছোটোলাট বা লেফটেন্যান্ট গভর্নরের হাতে বিশেষ ক্ষমতা থাকলেও, মন্ত্রীদের দায়িত্বে জনকল্যাণকর বিভিন্ন দফতর পরিচালিত হয়। মন্ত্রীদের কাজের জন্য বেতন দানের বিশেষ ব্যবস্থাও করা হয়।
(iv) শেষ সংস্কার আইন: ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক নীতি অনুসারে ডোমিনিয়ন স্ট্যাটাস দানের ক্ষেত্রে এই আইনটি ছিল বিশেষ উল্লেখযোগ্য। ব্রিটিশ ভারতের শেষ সংস্কার আইন ছিল ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইন।
(v) সংবিধান রচনার ভিত্তি: ৩২১ টি ধারা ও ১০ টি তফসিল সমন্বিত এই আইন পরবর্তীকালে ভারতের সংবিধান রচনার ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। তাই আইনের গুরুত্বও ছিল যথেষ্ট।
তবে ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের আইনে ভারতবাসীর সন্তুষ্ট হওয়ার মতো কোনও উপাদান ছিল না, কারণ এটি আসলে ছিল জাতীয়তাবাদীদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির একটি পন্থা। এই আইনের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশদের স্বার্থরক্ষা এবং ব্রিটিশ শাসন ও সাম্রাজ্যের নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা।
11. ভারতীয়রা কেন ক্লিপস মিশনের প্রস্তাবগুলিকে প্রত্যাখ্যান করেছিল?
অথবা, ক্লিপস মিশনের ব্যর্থতার কারণগুলি ব্যাখ্যা করো।
Ans: ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ মন্ত্রীসভার সদস্য স্যার স্ট্যাফোর্ড ক্রিপস দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ভারতের সাহায্যলাভের জন্য যে প্রস্তাব পেশ করেন, সেটি ভারতের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তা প্রত্যাখ্যান করে। তাই শেষপর্যন্ত ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ১১ এপ্রিল ক্রিপস একটি সাংবাদিক সম্মেলন করে তাঁর প্রস্তাব প্রত্যাহার করে নেন।
ক্লিপস প্রস্তাব বা ক্লিপস মিশনের ব্যর্থতার কারণ: একাধিক কারণে ক্রিপস মিশন ব্যর্থ হয়েছিল।
(i) পূর্ণ স্বাধীনতার আশ্বাস ছিল না: এই প্রস্তাবে ভারতকে পূর্ণ স্বাধীনতা প্রদানের কোনও উল্লেখ ছিল না। আসলে ব্রিটিশ সরকার চায়নি ভারত স্বাধীনতা লাভ করুক। এটি ছিল মানুষকে বিভ্রান্ত করার কৌশলমাত্র।
(ii) সংবিধান সভাকেন্দ্রিক সমস্যা: এই প্রস্তাবে সংবিধান সভায় ভারতীয় প্রতিনিধিদের নির্বাচনের মাধ্যমে নিয়োগের কথা বলা হয়নি। ফলে ভারতীয়রা অসন্তুষ্ট হন।
(iii) গান্ধিজিকে উপেক্ষা: ক্রিপস ভারতে এসে জওহরলাল নেহরু-র প্রতি অধিক গুরুত্ব দেওয়া শুরু করলে গান্ধিজি সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষিত হন। ফলে জনগণ প্রস্তাবগুলির প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।
(iv) ক্লিপসের ব্যক্তিগত ত্রুটি: ক্রিপসের ব্যক্তিগত দোষত্রুটিগুলিও তার প্রস্তাবটির ব্যর্থতার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। মন্ত্রীসভার প্রদত্ত ক্ষমতার বাইরে গিয়ে কথা বলা, বিভিন্ন দেশীয় রাজন্যকে বিভ্রান্তিকর প্রস্তাব দেওয়া প্রভৃতিও তাঁর প্রস্তাবটির ব্যর্থতার অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
(v) স্বদেশে বিরোধিতা: ইংল্যান্ডে ক্লিপস নানা বিরোধিতার সম্মুখীন হয়েছিলেন যা তাঁর প্রস্তাবগুলির ব্যর্থতাকে অনিবার্য করে তুলেছিল। প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল, ভারত-সচিব আমেরি, ভাইসরয় লর্ড লিনলিথগো এবং প্রধান সেনাপতি লর্ড ওয়াভেল-এর বিরোধিতার ফলে স্যার স্ট্যাফোর্ড ক্রিপস-এর মিশন ব্যর্থ হয়।
পরিশেষে বলা যায়, স্যার স্ট্যাফোর্ড ক্রিপস বেতার ভাষণে ক্লিপস মিশনের ব্যর্থতার জন্য কংগ্রেসকে দায়ী করেছিলেন। তবে ঐতিহাসিক এস গোপাল-এর মতে, ক্রিপস প্রস্তাব ছিল ‘রক্ষণশীল, প্রতিক্রিয়াশীল এবং সীমাবদ্ধ।’ অন্যদিকে আবার ঐতিহাসিক সুমিত সরকার লিখেছেন যে, ‘অজস্র দ্বিমুখিতা আর ভুল বোঝাবুঝি ক্লিপস মিশনকে সর্বক্ষণ জর্জরিত করে আর শেষ অবধি ডুবিয়ে ছাড়ে।’
12. টীকা লেখো: মাতঙ্গিনী হাজরা।
অথবা, মাতঙ্গিনী হাজরা ইতিহাসে কেন স্মরণীয়?
Ans: ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এক উজ্জ্বল নাম হল মাতঙ্গিনী হাজরা। গান্ধিজির আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি দেশের স্বাধীনতার জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন। এই নেত্রী ইতিহাসে গান্ধি বুড়ি নামেও খ্যাত।
মাতঙ্গিনী হাজরা:
পূর্বপরিচয়: ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দের (মতান্তরে ১৮৬৯ খ্রি.) ১৯ অক্টোবর তদানীন্তন মেদিনীপুর জেলার এক দরিদ্র কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন বীরাঙ্গনা মাতঙ্গিনী হাজরা। এই বিপ্লবী নেত্রী মাত্র ১৮ বছর বয়সে বিধবা হন। তাঁর কোনও সন্তান ছিল না।
স্বদেশি আন্দোলনে অংশগ্রহণ: তিনি ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে প্রত্যক্ষভাবে ভারতের জাতীয় আন্দোলনে যোগদান করেন। বঙ্গভঙ্গবিরোধী স্বদেশি আন্দোলনে তাঁর ভূমিকা ছিল বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
আইন অমান্য আন্দোলনে ভূমিকা: আইন অমান্য আন্দোলনের সময় ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে লবণ আইন অমান্য করে তিনি গ্রেফতার হন। অল্পকাল পরেই তাঁকে মুক্তি দেওয়া হলে চৌকিদারি কর বন্ধ আন্দোলনে অংশ নিয়ে পুনরায় তিনি ৬ মাসের সাজা ভোগ করেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এই সময় তিনি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সক্রিয় সদস্যপদ লাভ করেন।
ভারত ছাড়ো আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ: ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে ৭৩ বছরের বৃদ্ধা মাতঙ্গিনী হাজরা। মেদিনীপুরের তমলুক থানা দখলের জন্য ৬ হাজার নরনারীর এক মিছিলে নেতৃত্ব দান করেন। এই মিছিল শহরের প্রান্তে পৌঁছালে ব্রিটিশ পুলিশের তরফ থেকে মিছিল বন্ধের নির্দেশ আসে। পুলিশি নির্দেশ অমান্য করে এই মিছিল অগ্রসর হলে মাতঙ্গিনী হাজরাকে গুলি করা হয়। তিন বার গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরও ত্রিবর্ণরঞ্জিত পতাকা হাতে তুলে ধরে তিনি শহীদের ন্যায় মৃত্যুবরণ (২৯ সেপ্টেম্বর, ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দ) করেন।
পুলিশি অত্যাচার ও আক্রমণ সহ্য করেও মাতঙ্গিনী হাজরা যেভাবে নির্ভীক চিত্তে ভারত ছাড়ো আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন, তা ভারতীয় নারী সমাজের কাছে দৃষ্টান্তস্বরূপ। এই কারণে তিনি ইতিহাসে চিরস্মরণীয়।
13. টীকা লেখো: রশিদ আলি দিবস।
Ans: আজাদ হিন্দ ফৌজের সেনাদের বিচারকে কেন্দ্র করে কলকাতার ছাত্র সমাজের মধ্যে প্রবল ক্ষোভ সঞ্চারিত হয়েছিল। ছাত্ররা ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে ১২ নভেম্বর আজাদ হিন্দ দিবস পালন থেকে শুরু করে অর্থ সংগ্রহ করা, দোকানপাট বন্ধ রাখা ইত্যাদি কর্মসূচিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। এরূপ পরিস্থিতিতে আজাদ হিন্দ ফৌজের ক্যাপটেন রশিদ আলির বিচারকে কেন্দ্র করে পুনরায় ছাত্রদের মধ্যে ব্রিটিশবিরোধী তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়।
রশিদ আলি দিবস: ব্রিটিশ সরকারের সামরিক আদালতের বিচারে ক্যাপটেন আবদুর রশিদ আলিকে ৭ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হলে কলকাতার ছাত্র তথা যুবসমাজ তার বিরোধিতা করেন। এই কারাদণ্ডের প্রতিবাদে ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের ১১ থেকে ১৩ ফেব্রুয়ারি কলকাতায় ব্যাপক আন্দোলন সংঘটিত হয়েছিল। এর মধ্যে ১২ ফেব্রুয়ারি দিনটি রশিদ আলি দিবস হিসেবে পালন করা হয়।
কলকাতার আন্দোলন: ক্যাপটেন রশিদ আলির মুক্তির দাবিতে (১১-১৩ ফেব্রুয়ারি) কলকাতা গণ আন্দোলনে উত্তাল হয়ে ওঠে। কমিউনিস্ট দলের ছাত্র সংগঠন, মুসলিম লিগের ছাত্র সংগঠন এবং জাতীয় কংগ্রেস একজোট হয়ে আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন। ১২ ফেব্রুয়ারি অর্থাৎ রশিদ আলি দিবসের দিন ওয়েলিংটন স্কোয়ারে কংগ্রেস, লিগ ও কমিউনিস্ট নেতারা জনসমাবেশে এক মঞ্চ থেকে ভাষণ দেন। এঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন কমিউনিস্ট নেতা সোমনাথ লাহিড়ী, মুসলিম লিগের নেতা সুহরাবর্দি, গান্ধিবাদী নেতা সতীশচন্দ্র দাশগুপ্ত প্রমুখ। আন্দোলনকারীরা মিটিং, মিছিল, শ্রমিক ধর্মঘট ও পরিবহণ ধর্মঘট প্রভৃতির মাধ্যমে সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন। এমনকি শহরের বিভিন্ন অঞ্চলে ব্রিটিশ বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষও হয় তাঁদের। এরপর আন্দোলনের ঢেউ শীঘ্রই পূর্ববঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, তাঁদের দেশের অন্যান্য শহরেও এই আন্দোলনের প্রতি সহানুভূতি জানিয়ে সভা-সমাবেশ সংগঠিত হয়েছিল।
সরকারের দমননীতি: আন্দোলন দমন করার জন্য সরকার সেনাবাহিনী নিয়োগ করে। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সেনাবাহিনীর সংঘর্ষ বাধে। সরকারি মতে, এতে ৮৪ জন নিহত ও ৩০০ জন আহত হয়। যদিও বেসরকারি মতে, নিহতের সংখ্যা ছিল ২০০-র বেশি।
মূল্যায়ন: আজাদ হিন্দ বাহিনীর ক্যাপটেন রশিদ আলির বিচারকে কেন্দ্র করে যে বিক্ষোভ-আন্দোলন শুরু হয়েছিল, তা ভারতীয় জনমানসে প্রবল উৎসাহ সৃষ্টি করেছিল। অপরপক্ষে এই আন্দোলনের ফলে ব্রিটিশ সরকার ও জনগণের মনে ভয়ের সঞ্চার হয়, যা ভারতে ব্রিটিশ শাসনের অবসানের পটভূমি রচনা করে দিয়েছিল। ঐতিহাসিক গৌতম চট্টোপাধ্যায় এই আন্দোলনকে প্রায় বিপ্লব বলে অভিহিত করেছেন।
HS Class 12 3rd Semester (Third Unit Test) Question and Answer :
- HS Class 12 Bengali 3rd Semester Question Click here
- HS Class 12 English 3rd Semester Question Click here
- HS Class 12 Geography 3rd Semester Question Click here
- HS Class 12 History 3rd Semester Question Click here
- HS Class 12 Education 3rd Semester Question Click here
- HS Class 12 Political Science 3rd Semester Question Click here
- HS Class 12 Philosophy 3rd Semester Question Click here
- HS Class 12 Sociology 3rd Semester Question Click here
- HS Class 12 Sanskrit 3rd Semester Question Click here
- HS Class 12 All Subjects First Semester Question Click here
HS Class 12 4th Semester (Forth Unit Test) Question and Answer :
- HS Class 12 Bengali 4th Semester Question Click here
- HS Class 12 English 4th Semester Question Click here
- HS Class 12 Geography 4th Semester Question Click here
- HS Class 12 History 4th Semester Question Click here
- HS Class 12 Education 4th Semester Question Click here
- HS Class 12 Political Science 4th Semester Question Click here
- HS Class 12 Philosophy 4th Semester Question Click here
- HS Class 12 Sociology 4th Semester Question Click here
- HS Class 12 Sanskrit 4th Semester Question Click here
- HS Class 12 All Subjects 4th Semester Question Click here
Higher Secondary All Subject Suggestion – উচ্চমাধ্যমিক সমস্ত বিষয়ের সাজেশন
আরোও দেখুন:-
HS Bengali Suggestion Click here
আরোও দেখুন:-
Class 12 English Suggestion Click here
আরোও দেখুন:-
Class 12 Geography Suggestion Click here
আরোও দেখুন:-
Class 12 History Suggestion Click here
আরোও দেখুন:-
Class 12 Political Science Suggestion Click here
আরোও দেখুন:-
Class 12 Education Suggestion Click here
আরোও দেখুন:-
Class 12 Philosophy Suggestion Click here
আরোও দেখুন:-
Class 12 Sociology Suggestion Click here
আরোও দেখুন:-
Class 12 Sanskrit Suggestion Click here
আরোও দেখুন:-
Class 12 All Subjects Suggestion Click here
◆ উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার প্রস্তুতি: বিনামূল্যে নোটস, সাজেশন, PDF ও সমস্ত আপডেটের জন্য আমাদের WhatsApp Group এ Join হয়ে যাও।
| Class 12 WhatsApp Groups | Click Here to Join |
দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | West Bengal HS Class 12th History Question and Answer / Suggestion / Notes Book
আরোও দেখুন :-
দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস সমস্ত অধ্যায়ের প্রশ্নউত্তর Click Here
FILE INFO : স্বাধীনতার পথে (পঞ্চম অধ্যায়) দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | HS Class 12 History Sadhinotar Pothe Question and Answer with FREE PDF Download Link
| PDF File Name | স্বাধীনতার পথে (পঞ্চম অধ্যায়) দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | HS Class 12 History Sadhinotar Pothe Question and Answer PDF |
| Prepared by | Experienced Teachers |
| Price | FREE |
| Download Link | Click Here To Download |
| Download PDF | Click Here To Download |
স্বাধীনতার পথে (পঞ্চম অধ্যায়) অধ্যায় থেকে আরোও বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর দেখুন :
Update
[আরও দেখুন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবন রচনা – Rabindranath Tagore Biography in Bengali]
[আমাদের YouTube চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন Subscribe Now]
Info : স্বাধীনতার পথে (পঞ্চম অধ্যায়) দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস সাজেশন বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর
HS Class 12 History Suggestion | West Bengal WBCHSE Class Twelve XII (HS Class 12th) History Question and Answer Suggestion
” স্বাধীনতার পথে (পঞ্চম অধ্যায়) দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস প্রশ্ন উত্তর “ একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ টপিক দ্বাদশ শ্রেণীর পরীক্ষা (West Bengal Class Twelve XII / WB HS Class 12 / WBCHSE / HS Class 12 Exam / West Bengal Council of Higher Secondary Education – WB HS Class 12 Exam / HS Class 12th / WB HS Class 12 / HS Class 12 Pariksha ) এখান থেকে প্রশ্ন অবশ্যম্ভাবী । সে কথা মাথায় রেখে Bhugol Shiksha .com এর পক্ষ থেকে দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস পরীক্ষা প্রস্তুতিমূলক সাজেশন এবং বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর ( দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস সাজেশন / দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস প্রশ্ও উত্তর । Class-11 History Suggestion / HS Class 12 History Sadhinotar Pothe Question and Answer / HS Class 12 History Suggestion / Class-11 Pariksha History Suggestion / History HS Class 12 Exam Guide / MCQ , Short , Descriptive Type Question and Answer / HS Class 12 History Suggestion FREE PDF Download) উপস্থাপনের প্রচেষ্টা করা হলাে। ছাত্রছাত্রী, পরীক্ষার্থীদের উপকারে লাগলে, আমাদের প্রয়াস দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস পরীক্ষা প্রস্তুতিমূলক সাজেশন এবং বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর (HS Class 12 History Suggestion / West Bengal Twelve XII Question and Answer, Suggestion / WBCHSE HS Class 12th History Suggestion / HS Class 12 History Sadhinotar Pothe Question and Answer / HS Class 12 History Suggestion / HS Class 12 Pariksha Suggestion / HS Class 12 History Exam Guide / HS Class 12 History Suggestion 2024, 2025, 2026, 2027, 2028, 2029, 2030 / HS Class 12 History Suggestion MCQ , Short , Descriptive Type Question and Answer. / Class-11 History Suggestion FREE PDF Download) সফল হবে।
স্বাধীনতার পথে (পঞ্চম অধ্যায়) বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর
স্বাধীনতার পথে (পঞ্চম অধ্যায়) বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | স্বাধীনতার পথে (পঞ্চম অধ্যায়) HS Class 12 History Sadhinotar Pothe Question and Answer Suggestion দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – স্বাধীনতার পথে (পঞ্চম অধ্যায়) বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর।
স্বাধীনতার পথে (পঞ্চম অধ্যায়) SAQ সংক্ষিপ্ত বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস
স্বাধীনতার পথে (পঞ্চম অধ্যায়) SAQ সংক্ষিপ্ত বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | স্বাধীনতার পথে (পঞ্চম অধ্যায়) HS Class 12 History Sadhinotar Pothe Question and Answer Suggestion দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – স্বাধীনতার পথে (পঞ্চম অধ্যায়) SAQ সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর।
উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – স্বাধীনতার পথে (পঞ্চম অধ্যায়) প্রশ্ন উত্তর | HS Class 12 History Sadhinotar Pothe Question and Answer Question and Answer, Suggestion
উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – স্বাধীনতার পথে (পঞ্চম অধ্যায়) | দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – স্বাধীনতার পথে (পঞ্চম অধ্যায়) | পশ্চিমবঙ্গ দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – স্বাধীনতার পথে (পঞ্চম অধ্যায়) | দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস সহায়ক – স্বাধীনতার পথে (পঞ্চম অধ্যায়) বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর । HS Class 12 History Sadhinotar Pothe Question and Answer, Suggestion | HS Class 12 History Sadhinotar Pothe Question and Answer Suggestion | HS Class 12 History Sadhinotar Pothe Question and Answer Notes | West Bengal HS Class 12th History Question and Answer Suggestion.
উচ্চমাধ্যমিক দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – স্বাধীনতার পথে (পঞ্চম অধ্যায়) প্রশ্ন উত্তর | Higher Secondary Class 12 History Question and Answer, Suggestion
দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – স্বাধীনতার পথে (পঞ্চম অধ্যায়) প্রশ্ন উত্তর বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | স্বাধীনতার পথে (পঞ্চম অধ্যায়) । HS Class 12 History Sadhinotar Pothe Question and Answer Suggestion.
WBCHSE HS Class 12th History Sadhinotar Pothe Suggestion | দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – স্বাধীনতার পথে (পঞ্চম অধ্যায়)
WBCHSE HS Class 12 History Sadhinotar Pothe Suggestion দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – স্বাধীনতার পথে (পঞ্চম অধ্যায়) প্রশ্ন উত্তর বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর । স্বাধীনতার পথে (পঞ্চম অধ্যায়) | HS Class 12 History Sadhinotar Pothe Suggestion দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – স্বাধীনতার পথে (পঞ্চম অধ্যায়) প্রশ্ন উত্তর বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর ।
HS Class 12 History Sadhinotar Pothe 4th Semester Question and Answer Suggestions | দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – স্বাধীনতার পথে (পঞ্চম অধ্যায়) | দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর
HS Class 12 History Sadhinotar Pothe 4th Semester Question and Answer দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – স্বাধীনতার পথে (পঞ্চম অধ্যায়) দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর HS Class 12 History Sadhinotar Pothe Question and Answer দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – স্বাধীনতার পথে (পঞ্চম অধ্যায়) সংক্ষিপ্ত, রোচনাধর্মী বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর ।
WB HS Class 12 History Sadhinotar Pothe Suggestion | দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – স্বাধীনতার পথে (পঞ্চম অধ্যায়) সাজেশন
HS Class 12 History Sadhinotar Pothe Question and Answer Suggestion দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – স্বাধীনতার পথে (পঞ্চম অধ্যায়) সাজেশন । HS Class 12 History Sadhinotar Pothe Question and Answer Suggestion দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর।
West Bengal HS Class 12 History Suggestion Download WBCHSE HS Class 12th History short question suggestion . HS Class 12 History Sadhinotar Pothe Suggestion download HS Class 12th Question Paper History. WB HS Class 12 History suggestion and important question and answer. HS Class 12 Suggestion pdf.পশ্চিমবঙ্গ দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস পরীক্ষার সম্ভাব্য সাজেশন ও শেষ মুহূর্তের বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর ডাউনলোড। দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস পরীক্ষার জন্য সমস্ত রকম গুরুত্বপূর্ণ বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর।
Get the HS Class 12 History Sadhinotar Pothe Question and Answer by Bhugol Shiksha .com
HS Class 12 History Sadhinotar Pothe Question and Answer prepared by expert subject teachers. WB HS Class 12 History Suggestion with 100% Common in the Examination .
Class Twelve XII History Sadhinotar Pothe Suggestion | West Bengal Council of Higher Secondary Education (WBCHSE) HS Class 12 Exam
HS Class 12 History Sadhinotar Pothe Question and Answer, Suggestion Download PDF: West Bengal Council of Higher Secondary Education (WBCHSE) HS Class 12 Twelve XII History Suggestion is provided here. HS Class 12 History Sadhinotar Pothe Question and Answer Suggestion Questions Answers PDF Download Link in Free here.
স্বাধীনতার পথে (পঞ্চম অধ্যায়) দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | HS Class 12 History Sadhinotar Pothe Question and Answer
অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই ” স্বাধীনতার পথে (পঞ্চম অধ্যায়) দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | HS Class 12 History Sadhinotar Pothe Question and Answer ” পােস্টটি পড়ার জন্য। এই ভাবেই Bhugol Shiksha ওয়েবসাইটের পাশে থাকো যেকোনো প্ৰশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলাে করো এবং নিজেকে তথ্য সমৃদ্ধ করে তোলো , ধন্যবাদ।





















