সংগঠিত জাতীয়তাবাদী রাজনীতির উত্থান : প্রাক ১৯১৭ ও উত্তর ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দ, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত (তৃতীয় অধ্যায়) দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর

HS Class 12 History Songothito Jatiyatabadi Question and Answer

সংগঠিত জাতীয়তাবাদী রাজনীতির উত্থান : প্রাক ১৯১৭ ও উত্তর ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দ, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত (তৃতীয় অধ্যায়) দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | HS Class 12 History Songothito Jatiyatabadi Question and Answer : সংগঠিত জাতীয়তাবাদী রাজনীতির উত্থান : প্রাক ১৯১৭ ও উত্তর ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দ, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত (তৃতীয় অধ্যায়) দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | HS Class 12 History Songothito Jatiyatabadi Question and Answer নিয়ে আলোচনা করা হলো। এই West Bengal WBCHSE HS Class 12th History Songothito Jatiyatabadi Question and Answer, Suggestion, Notes | দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – সংগঠিত জাতীয়তাবাদী রাজনীতির উত্থান : প্রাক ১৯১৭ ও উত্তর ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দ, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত (তৃতীয় অধ্যায়) থেকে রোচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর (Descriptive Question and Answer) গুলি আগামী West Bengal HS Class 12th Twelve XII History 4th Semester Examination – পশ্চিমবঙ্গ উচ্চমাধ্যমিক দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস চতুর্থ সেমিস্টার পরীক্ষার জন্য খুব ইম্পর্টেন্ট। দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস পরীক্ষা তে এই সাজেশন বা কোশ্চেন সংগঠিত জাতীয়তাবাদী রাজনীতির উত্থান : প্রাক ১৯১৭ ও উত্তর ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দ, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত (তৃতীয় অধ্যায়) দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | HS Class 12 History Songothito Jatiyatabadi Question and Answer গুলো আসার সম্ভাবনা খুব বেশি।

তোমরা যারা সংগঠিত জাতীয়তাবাদী রাজনীতির উত্থান : প্রাক ১৯১৭ ও উত্তর ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দ, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত (তৃতীয় অধ্যায়) দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | HS Class 12 History Songothito Jatiyatabadi Question and Answer খুঁজে চলেছ, তারা এই প্রশ্ন ও উত্তর গুলো ভালো করে পড়ো এবং নীচে দেওয়া লিঙ্ক থেকে ডাউনলোড করে নাও।

রাজ্য (State) পশ্চিমবঙ্গ (West Bengal)
বোর্ড (Board) WBCHSE, West Bengal
শ্রেণী (Class) উচ্চমাধ্যমিক দ্বাদশ শ্রেণী (WB HS Class 12th)
বিষয় (Subject) দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস (HS Class 12 History)
তৃতীয় অধ্যায় (3rd Chapter) সংগঠিত জাতীয়তাবাদী রাজনীতির উত্থান : প্রাক ১৯১৭ ও উত্তর ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দ, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত (Songothito Jatiyatabadi)

[দ্বাদশ শ্রেণীর সমস্ত বিষয়ের প্রশ্নউত্তর Click Here]

সংগঠিত জাতীয়তাবাদী রাজনীতির উত্থান : প্রাক ১৯১৭ ও উত্তর ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দ, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত (তৃতীয় অধ্যায়) দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | West Bengal WBCHSE HS Class 12th History Songothito Jatiyatabadi 3rd Chapter Question and Answer 

রচনাধর্মী | সংগঠিত জাতীয়তাবাদী রাজনীতির উত্থান : প্রাক ১৯১৭ ও উত্তর ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দ, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত (তৃতীয় অধ্যায়) দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | WB HS Class 12 History Songothito Jatiyatabadi Descriptive Question and Answer:

1. ভারতে চরমপন্থী রাজনীতির উদ্ভবের কারণগুলি আলোচনা করো।

অথবা, ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে সংগ্রামশীল জাতীয়তাবাদের উন্মেষের কারণগুলি সম্পর্কে লেখো।

Ans: উনবিংশ শতকের শেষদিকে জাতীয় কংগ্রেসের অভ্যন্তরে নরমপন্থীদের রাজনৈতিক ব্যর্থতা স্পষ্টরূপ ধারণ করে। এমতাবস্থায়, নরমপন্থার বিকল্প হিসেবে যে বাস্তববাদী ও কার্যকরী প্রতিরোধ আন্দোলনের ধারার বিকাশ ঘটে, তাই সংগ্রামশীল জাতীয়তাবাদ বা চরমপন্থা (Extremism) নামে পরিচিত। আর এই নতুন ধারার অনুগামীরা অভিহিত হন চরমপন্থী (Extremists) নামে। মহারাষ্ট্রে বাল গঙ্গাধর তিলক, বাংলায় বিপিনচন্দ্র পাল ও অরবিন্দ ঘোষ, পাঞ্জাবে লালা লাজপত রায় প্রমুখ নেতার মাধ্যমে ভারতে চরমপন্থী মতাদর্শ ছড়িয়ে পড়ে। ে

সংগ্রামশীল জাতীয়তাবাদ/ চরমপন্থী রাজনীতি-র উদ্ভবের প্রেক্ষাপট/কারণসমূহ:

নরমপন্থী রাজনীতির দুর্বলতা: জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার পর প্রথম কুড়ি বছর কংগ্রেসের নেতৃত্ব নরমপন্থী নেতাদের হাতে ন্যস্ত ছিল। নরমপন্থী নেতারা ব্রিটিশ সরকার ও ইংরেজ জাতির উদারতা মানবতা, সংস্কৃতির প্রতি গভীর আস্থাশীল ছিলেন। কিন্তু এক দশকের মধ্যেই প্রমাণিত হয় যে, ব্রিটিশ সরকার নরমপন্থী নেতৃত্ব এবং ভারতবাসীর দাবিদাওয়া নস্যাৎ করে দিতেই বেশি তৎপর। অন্যদিকে, জাতীয় কংগ্রেসের প্রতি সরকারের আদৌ আস্থা ছিল না। সাধারণ জনগণের মধ্যে কংগ্রেসের জনপ্রিয়তা ক্রমেই বৃদ্ধি পেলে সরকার কংগ্রেসের বিরূপ সমালোচনা শুরু করে। একের পর এক দমনমূলক আইন জারি করে কংগ্রেসের রাজনৈতিক অস্তিত্বকে অগ্রাহ্য করতে থাকে। এমতাবস্থায় কংগ্রেসের একাংশ মনে করেন যে, নরমপন্থা বা আবেদন-নিবেদন নীতি দ্বারা ভারতবাসীর দাবি আদায় করা সম্ভব নয়। নরমপন্থীদের আপস নীতির পরিবর্তে নিষ্ক্রিয় প্রতিরোধ এবং গণ আন্দোলন সংগঠিত করে অধিকার প্রতিষ্ঠার ভাবনা চরমপন্থার জন্ম দেয়।

কংগ্রেসের মধ্যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ও ক্ষমতা দখলের লড়াই: কেমব্রিজ গোষ্ঠীর ঐতিহাসিকেরা, যেমন- জুডিথ ব্রাউন, অনিল শীল প্রমুখ চরমপন্থার উৎস হিসেবে জাতীয় কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ও ক্ষমতা দখলের লড়াইকে চিহ্নিত করেছেন। এই প্রসঙ্গে তাঁরা বাংলায় অমৃতবাজার পত্রিকা গোষ্ঠীর সঙ্গে সুরেন্দ্রনাথ ও তাঁর বেঙ্গলী পত্রিকা গোষ্ঠীর দ্বন্দ্ব: মহারাষ্ট্রে গোখলে-র সঙ্গে বাল গঙ্গাধর তিলক-এর দ্বন্দ্বের উল্লেখ করেছেন।

পাশ্চাত্য সংস্কৃতিকে অনুকরণের প্রতিবাদ: ড. অমলেশ ত্রিপাঠী তাঁর The Extremist Challenge গ্রন্থে চরমপন্থার উদ্ভবের প্রাথমিক কারণ হিসেবে পশ্চিমি সভ্যতার প্রতি নরমপন্থীদের অন্ধ আনুগত্যের প্রতিক্রিয়ার বিষয়টির উল্লেখ করেছেন। ইউরোপের ভোগবাদী ও যান্ত্রিক ব্যক্তিকেন্দ্রিকতার প্রতি আকর্ষণ এবং জাতীয় ঐতিহ্যকে অগ্রাহ্য করার অশুভ প্রবণতার বিরুদ্ধে চরমপত্রী আদর্শ উপস্থাপন করা হয়েছিল। এই মতবাদে স্বদেশ ও সংস্কৃতিকে উচ্চাসনে তুলে ধরার কথা বলা হয়।

ভাবজাগতিক পরিবর্তন: ড. অমলেশ ত্রিপাঠি চরমপন্থার উদ্ভবের প্রেক্ষাপটে ভাবজাগতিক পরিবর্তনের কথা উল্লেখ করেছেন। বিশিষ্ট সাহিত্যিক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের আনন্দমঠ উপন্যাসে (১৮৮২ খ্রি.) ভারতের যুবসমাজকে দেশপ্রেম, জাতীয়তাবোধ ও আত্মত্যাগের আদর্শে উদ্‌বুদ্ধ করেছিল। তাঁর বন্দেমাতরম্ সংগীত ছিল ব্রিটিশবিরোধী ভারতীয়দের অন্যতম প্রেরণা। অন্যদিকে স্বামী বিবেকানন্দ দেশমাতৃকার জন্য আত্মত্যাগের মন্ত্রে যুবসমাজকে উজ্জীবিত করে তোলেন। আবার আর্য সমাজের প্রতিষ্ঠাতা স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী-র মতাদর্শও চরমপন্থা উদ্ভবের অন্যতম প্রেরণা ছিল। অর্থনৈতিক কারণ: অর্থনৈতিক দিক থেকেও প্রবল শোষণ, ব্রিটিশ সরকারের বৈষম্যমূলক করব্যবস্থা তথা দেশীয় শিল্পের ধ্বংসসাধন, সামরিক খাতে ক্রমাগত ভারতীয় সম্পদের অপচয় ইত্যাদি বিষয়গুলির দরুন ভারতীয়রা আর্থিকভাবে বিপর্যন্ত হতে থাকে, যা চরমপন্থী রাজনীতির উদ্ভবের পটভূমি রচনায় সাহায্য করেছিল।

দুর্ভিক্ষ ও ব্রিটিশ সরকারের অনাচার: ব্রিটিশ সরকারের বিমাতৃসুলভ অর্থনীতির ফলস্বরূপ ১৮৯৬ থেকে ১৯০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ভারতের বিস্তীর্ণ এলাকায় ব্যাপক দুর্ভিক্ষের প্রাদুর্ভাব ঘটে। এ সময় বোম্বাই প্রেসিডেন্সিতে দেখা দেয় ভয়াবহ প্লেগ মহামারি। এই পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য ব্রিটিশ সরকার কোনোরকম ত্রাণের ব্যবস্থা না করে মহারানি ভিক্টোরিয়ার সিংহাসন আরোহণের হীরক জয়ন্তী উৎসব পালন করে। সরকারের এই অনাচার জনমানসে প্রবল হতাশা ও ঘৃণার জন্ম দেয়, যা চরমপন্থী জাতীয়তাবাদের উন্মেষের পথ প্রশস্ত করে।

সরকারের উদাসীনতা: ব্রিটিশ সরকারের পরিকল্পিত উদাসীনতা এবং কঠোরতা চরমপন্থী মতাদর্শ বিকাশের পথ প্রশস্ত করে। আইন পরিষদে ভারতীয়দের নিয়োগ, সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার বয়স বৃদ্ধি, নির্বাচন প্রথার প্রচলন জাতীয় কংগ্রেসের এসকল দাবির প্রতি সরকারের মনোভাব ছিল আগাগোড়া নেতিবাচক। পাশাপাশি লর্ড লিটন কর্তৃক দেশীয় সংবাদপত্রের কণ্ঠরোধের পরিকল্পনা (১৮৭৬ খ্রি.), লর্ড কার্জন কর্তৃক ইন্ডিয়ান অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট (১৯০৪ খ্রি.) ও ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয় আইন (১৯০৪ খ্রি.) পাস করা ছিল ব্রিটিশ প্রতিক্রিয়াশীল নীতির নগ্ন প্রকাশ। এসবেরই পরিণতি ছিল চরমপন্থার আবির্ভাব ও জনপ্রিয়তা লাভ।

2. বাংলার বিপ্লববাদী আন্দোলনের বিবরণ দাও। অথবা, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পূর্ব পর্যন্ত বাংলার বিপ্লবী কর্মসূচির পরিচয় দাও।

অথবা, ১৯০৫-১৯১৫ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে বাংলার বিপ্লবী আন্দোলন সম্পর্কে লেখো।

Ans: বিংশ শতকের সূচনায় ভারতবর্ষে সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনের কেন্দ্র ছিল বাংলা। মূলত ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বাংলায় বিপ্লবী আন্দোলনের ব্যাপক বিস্তার ঘটে।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পূর্ব পর্যন্ত বাংলার বিপ্লববাদী আন্দোলন/ বাংলার বিপ্লবী কর্মসূচি:

বাংলায় প্রথমদিকে মূলত সমিতি প্রতিষ্ঠা করে বৈপ্লবিক কাজকর্ম শুরু হয়। ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে মেদিনীপুর সোসাইটি এবং সরলা ঘোষাল স্থাপিত বালিগঞ্জ-সার্কুলার রোডের ব্যায়াম সমিতি এই কাজের সম্প্রসারণ ঘটায়। ক্রমে আরও নানান গুপ্ত সমিতি গড়ে ওঠে, যেগুলির মাধ্যমে বিভিন্ন বিপ্লবী কার্যকলাপ সংঘটিত হয়।

গুপ্ত সমিতি গঠন:

অনুশীলন সমিতি: বাংলার বিপ্লবী আন্দোলনের পথিকৃৎ ছিল অনুশীলন সমিতি। আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯০২ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসে কলকাতায় প্রথম অনুশীলন সমিতি স্থাপিত হয়। সতীশচন্দ্র বসু-র উদ্যোগে ও সহায়তায় ব্যারিস্টার প্রমথনাথ মিত্র (পি মিত্র) অনুশীলন সমিতির কার্য পরিচালনা শুরু করেন এবং এই সমিতির সভাপতি হন। এই সমিতির সহকারী সভাপতি ছিলেন চিত্তরঞ্জন দাশ ও অরবিন্দ ঘোষ, সম্পাদক ছিলেন সতীশচন্দ্র বসু এবং কোশাধ্যক্ষ ছিলেন সুরেন্দ্রনাথ ঠাকুর।

সমিতির আদর্শ ও শিক্ষা: বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘অনুশীলন তত্ত্ব’ অনুযায়ী শারীরিক, মানসিক, নৈতিক ও আধ্যাত্মিক উৎকর্ষের সমন্বয়ে আদর্শ মানব ও মানবচরিত্র গঠন-ই ছিল এই সমিতির আদর্শ। শারীরিক শক্তিবৃদ্ধির জন্য এখানে নিয়মিত শরীরচর্চা, লাঠিখেলা অনুশীলন করা হত। এখানকার সদস্যদের দেশ-বিদেশের স্বাধীনতার কাহিনি, রাজনীতি, অর্থনীতি, স্বামী বিবেকানন্দের জ্ঞানযোগ, কর্মযোগ-এর মতো রচনাসমূহ ইত্যাদি পাঠ করতে হত। তাদের অবশ্যপাঠ্য গ্রন্থ ছিল গীতা ও আনন্দমঠ।

যুগান্তর দল: অনুশীলন সমিতি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কিছুদিন পর, এই সমিতির কর্মপন্থা নিয়ে পি মিত্র-এর সঙ্গে সমিতির তরুণ বিপ্লবী বারীন্দ্র কুমার ঘোষ-সহ অনেকেরই বিরোধ বাধে। এই সকল তরুণ বিপ্লবীরা ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে যুগান্তর নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করেন। এই পত্রিকার মাধ্যমে তাঁরা সশস্ত্র পথে গেরিলা পদ্ধতিতে সংঘর্ষের আদর্শ প্রচার করতে থাকেন। এই গোষ্ঠীর সদস্যরাই ক্রমে যুগান্তর গোষ্ঠী বা যুগান্তর দল নামে পরিচিত হন।

উল্লেখযোগ্য কর্মসূচি: যুগান্তর দল অস্ত্র সংগ্রহ, বিপ্লবী ভারতীয় যুবকদের বিদেশে প্রেরণ করে অস্ত্র নির্মাণের কৌশল আয়ত্ত করা, ভবিষ্যতে সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ ও সরঞ্জাম সংগ্রহ ইত্যাদি কর্মসূচি গ্রহণ করে। পাশাপাশি, বিপ্লবী আন্দোলনের জন্য অর্থ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে স্বদেশি ডাকাতি শুরু হয়।

সশস্ত্র বিপ্লবী কার্যকলাপ:

গুপ্তহত্যার প্রথম প্রচেস্টা : যুগান্তর দলের বিপ্লবীরা পূর্ববঙ্গ ও আসাম-এর স্বৈরাচারী লেফটেন্যান্ট গভর্নর ব্যামফিল্ড ফুলার, তৎকালীন বাংলার গভর্নর স্যার অ্যান্ড্রু ফ্রেজার, ঢাকার প্রাক্তন ম্যাজিস্ট্রেট অ্যালেন সাহেব প্রমুখ-কে একাধিকবার হত্যার চেষ্টা করেন।

কিংসফোর্ডকে হত্যার প্রয়াস : বাংলার বিপ্লবীদের ব্যক্তিহত্যার তালিকায় এক বিশেষ নাম ছিল কলকাতার অত্যাচারী প্রেসিডেন্সি ম্যাজিস্ট্রেট মি. কিংসফোর্ড। তিনি অতি সামান্য অপরাধের জন্য কঠোর শাস্তি প্রদানের জন্য কুখ্যাত ছিলেন। তাঁকে হত্যা করার জন্য মুজফ্ফরপুরে যান ক্ষুদিরাম বসু ও প্রফুল্ল চাকি। কিন্তু ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দের ৩০ এপ্রিল তাঁরা ভুলবশত জনৈকা মিসেস কেনেডি ও তাঁর কন্যার গাড়িতে বোমা ছোঁড়েন। পুলিশের হাতে ধরা পড়ার আগেই প্রফুল্ল চাকি মোকামা স্টেশনে নিজের পিস্তলের গুলিতে আত্মহত্যা করেন। অন্যদিকে ক্ষুদিরাম বসু-র ফাঁসি হয় (১১ আগস্ট, ১৯০৮ খ্রি.)।

আলিপুর ষড়যন্ত্র মামলা : মুজফ্ফরপুরের ঘটনার সূত্র ধরে পুলিশ মুরারিপুকুর বাগানবাড়িতে তল্লাশি চালায় এবং অরবিন্দ ঘোষ-সহ ৪৭ জনকে গ্রেফতার করে। এঁদের বিরুদ্ধে বুজু হয় বিখ্যাত আলিপুর ষড়যন্ত্র মামলা (১৯০৮ খ্রি.)। বিপ্লবীদের পক্ষে ওকালতি করেন চিত্তরঞ্জন দাশ। মামলার বিচারে অরবিন্দ ঘোষ মুক্তিলাভ করলেও অধিকাংশ বিপ্লবীর দীর্ঘ কারাদণ্ড স্বরূপ দ্বীপান্তরে নির্বাসন হয়।

বাঘা যতীন ও বুড়িবালামের যুদ্ধ: বিপ্লবী বাঘা যতীন বা যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে বিপ্লবীরা জার্মান সরকারের সহযোগিতায় প্রচুর অস্ত্র ভারতে আনার ব্যবস্থা করেছিলেন। এর মধ্যে মাভেরিক জাহাজের অস্ত্র সংগ্রহ করার জন্য বাঘা যতীন ও তাঁর সঙ্গীরা ওড়িশার বালেশ্বরের কাছে বুড়িবালাম নদীর তীরে পৌঁছান। কিন্তু ব্রিটিশদের কাছে এই খবর ফাঁস হয়ে যায় এবং পুলিশের সঙ্গে বিপ্লবীদের খন্ডযুদ্ধ শুরু হয়। এই লড়াইয়ে বাঘা যতীন গুরুতর আহত হয়ে বালেশ্বর হাসপাতালে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন।

সরকারি দমননীতি: সরকার কঠোর হাতে বিপ্লবী আন্দোলন দমনের চেষ্টা চালায়। পুলিনবিহারী দাস, অশ্বিনীকুমার দত্ত, শ্যামসুন্দর চক্রবর্তী, সুবোধ চন্দ্র মল্লিক-সহ অনেক বিপ্লবীকে নির্বাসনে পাঠানো হয়। ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে অনুশীলন সমিতি ও যুগান্তর দল-কে নিষিদ্ধ বলে ঘোষণা করা হয়। অবশ্য দমনপীড়ন সত্ত্বেও বাংলায় বিপ্লবী কর্মকাণ্ড পুরোপুরি স্তব্ধ করে দেওয়া যায়নি।

3. ভারতসভা বা ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান কার্যাবলি বা পদক্ষেপগুলি উল্লেখ করো।

অথবা, সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ভারতসভার প্রতিবাদ আন্দোলনগুলি উল্লেখ করো।

Ans: ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দের ২৬ জুলাই আনন্দমোহন বসু, শিবনাথ শাস্ত্রী ও সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে কলকাতার অ্যালবার্ট হলে ভারতসভা বা ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন (Indian Association) প্রতিষ্ঠিত হয়। সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ভারতসভার প্রতিবাদ আন্দোলনগুলি ছিল তাৎপর্যপূর্ণ।

ভারতসভা পরিচালিত প্রতিবাদ আন্দোলনসমূহ:

(i) সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা সংক্রান্ত আন্দোলন: লর্ড লিটন-এর আমলে সিভিল সার্ভিস-এ পরীক্ষার্থীদের বয়স ২১ বছর থেকে কমিয়ে ১৯ বছর করা হলে (১৮৭৬ খ্রি.) ভারতসভা দেশব্যাপী প্রতিবাদ আন্দোলন সংগঠিত করে। ১৮৭৭ খ্রিস্টাব্দের ২৪ মার্চ কলকাতার টাউন হলে নরেন্দ্রকৃয় দেব-এর সভাপতিত্বে আয়োজিত হয় এক বিরাট জনসভা। সেখানে সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ব্যারিস্টার লালমোহন ঘোষ সিভিল সার্ভিস সংক্রান্ত ভারতীয়দের আবেদনপত্র ব্রিটিশ পার্লামেন্টে পেশ করার জন্য লন্ডন যাত্রা করেন। অতঃপর সরকার কিছুটা নম্র হয় এবং স্ট্যাটুটারি সিভিল সার্ভিস প্রবর্তন করে ভারতীয়দের নিয়োগের সুযোগ বৃদ্ধি করে।

(ii) দেশীয় ভাষা সংবাদপত্র আইন সংক্রান্ত আন্দোলন : ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে ভারতের বড়োলাট লর্ড লিটন দেশীয় ভাষা সংবাদপত্র আইন (Vernacular Press Act) চালু করেন। এর মাধ্যমে তিনি দেশীয় ভাষায় প্রকাশিত সংবাদপত্রগুলির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে ভারতসভা এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আন্দোলন গড়ে তোলে। পরে সরকার এই আইন প্রত্যাহার করে নেয় (আনুমানিক ১৮৮২ খ্রি.)।

(iii) অস্ত্র আইনের বিরোধিতা: বড়োলাট লর্ড লিটন ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে অস্ত্র আইন জারি করে সরকারের অনুমতি ছাড়া ভারতীয়দের কোনও অস্ত্র রাখা নিষিদ্ধ বলে ঘোষণা করেন। সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ভারতসভা এর বিরুদ্ধেও প্রবল প্রতিবাদ জানায়।

(iv) ইলবার্ট বিল আন্দোলন: ১৮৮৩ খ্রিস্টাব্দে লর্ড রিপন-এর আইনসচিব কোর্টনি ইলবার্ট ইলবার্ট বিল (llbert Bill) নামক একটি আইনের খসড়া তৈরি করেন। এতে বৈষম্য দূর করে ভারতীয় ও ইউরোপীয় বিচারকদের সমক্ষমতা দান করার কথা বলা হয়। এই ঘটনায় অসন্তুষ্ট ইংরেজরা ইলবার্ট বিলের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করলে, ইলবার্ট বিলকে সমর্থন করে ভারতসভা এক প্রতি-আন্দোলন গড়ে তোলে।

4. সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় কর্তৃক আয়োজিত সর্বভারতীয় জাতীয় সম্মেলনের গুরুত্ব বর্ণনা করো।

অথবা, ‘জাতীয় কংগ্রেসের মহড়া কোন্ অধিবেশনকে, কেন আখ্যা দেওয়া হয়?

Ans: ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দে গঠিত ভারতসভা-র আন্দোলন তৎকালীন জনসমাজে এক নতুন চেতনার উন্মেষ ঘটায়। তবে এই সভার বিশিষ্ট সদস্য সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় উপলব্ধি করেন যে, সর্বভারতীয় কোনও প্রতিষ্ঠান ছাড়া ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে কার্যকরী আন্দোলন পরিচালনা করা সম্ভব নয়। এই উদ্দেশ্যে ভারতসভার উদ্যোগে আহ্বান করা হয় সর্বভারতীয় জাতীয় সম্মেলন।

সর্বভারতীয় জাতীয় সম্মেলন: ১৮৮৩ খ্রিস্টাব্দের ২৮-৩০ ডিসেম্বর সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, শিবনাথ শাস্ত্রী ও আনন্দমোহন বসু-র উদ্যোগে কলকাতার অ্যালবার্ট হলে (বর্তমান কফি হাউস) All India National Conference বা সর্বভারতীয় জাতীয় সম্মেলনের প্রথম বসে। বাংলা, বোম্বাই, মাদ্রাজ, লাহোর, মিরাট-সহ ভারতের নানা অঞ্চলের প্রায় শতাধিক প্রতিনিধি এই সম্মেলনে যোগদান করেন।

প্রস্তাবসমূহ: তিনদিনব্যাপী এই সম্মেলনে বেশকিছু প্রস্তাব গৃহীত হয়। যেমন-

  • স্বায়ত্তশাসন প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার গঠন করা,
  • বৃহত্তর কর্মসংস্থান গড়ে তোলা,
  • চাকুরিতে ও উচ্চপদে অধিক সংখ্যক ভারতীয় নিয়োগ করা,
  • অস্ত্র আইন রোধ করা,
  • আইন বিভাগ থেকে বিচার বিভাগের পৃথকীকরণ,
  • সাধারণ ও কারিগরি শিক্ষার ব্যবস্থা করা জাতীয় আন্দোলন পরিচালনা করার জন্য জাতীয়
  • ধনভান্ডার গড়ে তোলা,
  • ইংল্যান্ডে ও ভারতে একইসঙ্গে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা গ্রহণ,
  • আই সি এস (ICS) পরীক্ষার বয়স ২২ বছর করা ইত্যাদি।

গুরুত্ব: সর্বভারতীয় জাতীয় সম্মেলন নানা দিক থেকে ছিল গুরুত্বপূর্ণ।

(i) আনন্দমোহন বসু জাতীয় সম্মেলন-কে জাতীয় পার্লামেন্ট গঠনের প্রথম পর্যায় বলেছেন।

(ii)ঐতিহাসিক ড. তারাচাঁদ-এর মতে, ইলবার্ট বিল সম্পর্কে ইউরোপীয়দের আন্দোলনের বিরুদ্ধে এই সম্মেলন ছিল শিক্ষিত ভারতবাসীর যোগা প্রত্যুত্তর।

(iii) ড. অমলেশ ত্রিপাঠী সর্বভারতীয় জাতীয় সম্মেলনকে ‘জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার মহড়া’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। এই সম্মেলনের অনুকরণেই পরবর্তীতে জাতীয় কংগ্রেসে নানা প্রস্তাব পাস করা হয়। ড. রমেশচন্দ্র মজুমদার লিখেছেন যে, জাতীয় সম্মেলন প্রদর্শিত মডেলকে ভিত্তি করেই দুবছর পরে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের উদবোধন হয়েছিল’।

উপরোক্ত আলোচনার ভিত্তিতে বলা যায় যে, ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করতে এবং ব্রিটিশবিরোধী ভারতের জাতীয় আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সর্বভারতীয় জাতীয় সম্মেলনের অবদান ছিল যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।

5. ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে কংগ্রেসের নরমপন্থীদের দাবিদাওয়াগুলি কী কী ছিল তা লেখো।

অথবা, ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম কুড়ি বছরের কার্যাবলির মূল্যায়ন করো।

Ans: ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার পর প্রথম কুড়ি বছর (১৮৮৫-১৯০৫ খ্রি.) কংগ্রেসের ইতিহাসে আদিপর্ব নামে পরিচিত। এই সময়কালে কংগ্রেস নেতৃবৃন্দ ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে কোনোরূপ গণ আন্দোলন সংগঠিত করে প্রশাসনকে বিব্রত করতে চাননি। তাঁরা প্রধানত নিয়মতান্ত্রিক পথে এবং আবেদন-নিবেদন তথা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ভারতীয়দের অভাব-অভিযোগ সরকারের সামনে আনতে সচেষ্ট ছিলেন।

১৮৮৫ থেকে ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের কার্যাবলি:

কংগ্রেসের প্রথম পর্বের নেতাগণ বিশ্বাস করতেন যে, গণতন্ত্রে বিশ্বাসী ইংরেজরা ভারতীয়দের ন্যায্য দাবি অবশ্যই মেনে নেবেন। তাই দাবি আদায়ের জন্য তাঁরা ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে সংঘাতের পক্ষপাতী ছিলেন না। কংগ্রেসের প্রথম বা আদিপর্বের এই সকল নেতারা নরমপন্থী (Moderates) নামে পরিচিত ছিলেন। এই পর্বের কয়েকজন উল্লেযোগ্য নরমপন্থী নেতারা হলেন- উমেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, দাদাভাই নৌরজি, বদরউদ্দিন তায়েবজী, সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ। আলোচ্য পর্বে নরমপন্থীদের আন্দোলন আবেদন-নিবেদন (A Policy of 3P’s Prayer, Petition & Protest) নীতি দ্বারা পরিচালিত হয়। ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে কংগ্রেস যেসকল দাবি উত্থাপন করে, সেগুলি হল নিম্নরূপ-

অর্থনৈতিক দাবি: জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম দিককার নেতাগণ ইংরেজদের অর্থনৈতিক শোষণের ভয়াবহ রূপটি তুলে ধরার পাশাপাশি ভারতবর্ষের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার মূল্যায়ন ও সেই সম্পর্কিত দাবিদাওয়ার উপরে গুরুত্ব আরোপ করেছেন। যেমন-

  • ভারতের দারিদ্র্য ও দুর্ভিক্ষের কারণ
  • অনুসন্ধানের জন্য তদন্ত কমিটি গঠন করা,
  • ভারতের সর্বত্র চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তন,
  • রাজস্ব আদায়ের কঠোরতা হ্রাস ইত্যাদি দাবি করা,
  • অবাধ বাণিজ্যনীতি রদ করা ও ভারতীয় শিল্পকে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা,
  • বিদেশি কাপড়ের উপর শুল্ক বৃদ্ধি করা,
  • ভারতের শুল্ক ব্যবস্থার বৈষম্য দূর করা,
  • ভূমিরাজস্বের হার কমানো,
  • লবণ শুল্ক তুলে দেওয়া,
  • আবগারি শুল্ক হ্রাস করা।

প্রশাসনিক দাবি: জাতীয় কংগ্রেসের নেতৃবৃন্দ বিভিন্ন অধিবেশনে প্রশাসনের ভারতীয়করণ-এর দাবি উত্থাপন করেন। বস্তুত, কংগ্রেস মনে করত যে-প্রশাসনিক উচ্চপদগুলিতে অ-ভারতীয়দের নিয়োগের দরুন অর্থনৈতিক এবং নৈতিক দুই দিক থেকেই ভারতের ক্ষতি হচ্ছে। আলোচ্য পর্বে তাই জাতীয় কংগ্রেস শাসন বিভাগের উচ্চপদগুলিতে যোগ্য ভারতীয়দের নিয়োগের দাবি তোলে।

পাশাপাশি কংগ্রেস আই সি এস (ICS) পরীক্ষার ভারতীয়করণ, ইংল্যান্ড ও ভারতে একই সময়ে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা গ্রহণ, এই পরীক্ষায় পরীক্ষার্থীদের বয়স বাড়িয়ে ২৩ বছর করা, স্ট্যাটুটারি সিভিল সার্ভিসের অবসান ইত্যাদি প্রশাসনিক সংস্কারের দাবিপত্রও পেশ করে।

তাছাড়া শাসন ও বিচার বিভাগের পৃথকীকরণ, বিচারের ক্ষেত্রে জুরিদের ক্ষমতা হ্রাস না করা, অস্ত্র আইন প্রত্যাহার, উচ্চ সামরিক পদে তথা পূর্ত, রেল, শুল্ক বিভাগে ভারতীয়দের নিয়োগ, পুলিশ প্রশাসনের সংস্কার, ভারতীয়দের সামরিক শিক্ষাদান-সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কংগ্রেস নেতারা দাবি জানান।

সাংবিধানিক বা শাসনতান্ত্রিক সংস্কার সংক্রান্ত দাবি: কংগ্রেসের প্রধান দাবি ছিল ভারতবাসীর স্বায়ত্তশাসনের অধিকারের বিষয়টি। এই লক্ষ্যে কংগ্রেস নেতারা বিভিন্ন অধিবেশনে বেশকিছু সাংবিধানিক সংস্কারের প্রস্তাব গ্রহণ করেন।

  • ১৮৬১-র ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অ্যাক্ট-এর মনোনয়নের ভিত্তিতে আইনসভার কিছু পদ ভারতীয়দের জন্য দেওয়া হয়।
  • কংগ্রেস দাবি করে যে, নির্বাচনের ভিত্তিতে জনপ্রতিনিধি গ্রহণের ব্যবস্থা করতে হবে। আইনসভাকে বাজেট ও দৈনন্দিন প্রশাসন সম্পর্কে প্রশ্ন তোলার অধিকার দিতে হবে। এ ছাড়া কংগ্রেসের অন্যান্য দাবিদাওয়াগুলি ছিল-
  • ভাইসরয়ের আইন পরিষদ এবং প্রাদেশিক আইন পরিষদগুলির সম্প্রসারণ ও নির্বাচনের মাধ্যমে অধিক সংখ্যক নির্বাচিত ভারতীয় সদস্য নিয়োগ করা।
  • সংখ্যক ভারতীয় সদস্য নিয়ে একটি রাজকীয় কমিশন গঠন করে ভারতের শাসনব্যবস্থা সম্পর্কে উপযুক্ত অনুসন্ধান করা।
  • নিখিল ভারতীয় শাসন পরিষদে অন্ততপক্ষে দুজন এবং বোম্বাই ও মাদ্রাজের প্রাদেশিক গভর্নরের শাসন পরিষদে একজন ভারতীয় সদস্য গ্রহণ করা।
  • ভারত-সচিবের মন্ত্রণা পরিষদ (ইন্ডিয়া কাউন্সিল)-এর বিলুপ্তি ঘটানো।
  • ব্রিটিশ কমন্স সভায় ভারতের প্রতিটি প্রদেশ থেকে অন্তত দুজন করে প্রতিনিধি নিয়োগ করা ইত্যাদি।

নাগরিক অধিকার সংক্রান্ত দাবি: জাতীয় কংগ্রেসের নেতৃবৃন্দ ভারতীয়দের গণতান্ত্রিক ও নাগরিক অধিকার সম্পর্কেও বিভিন্ন দাবি উত্থাপন করতে থাকেন। যেমন-

  • ভারতীয়দের বাস্বাধীনতা ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা প্রদান করার দাবি জানানো হয়।
  • তাছাড়া ফৌজদারি আইনের কঠোরতার বিরুদ্ধেও জাতীয় কংগ্রেস প্রতিবাদ জানায়।
  • সেইসঙ্গে মিউনিসিপ্যাল আইন (১৮৯৯ খ্রি.), বিশ্ববিদ্যালয় আইন (১৯০৪ খ্রি.) প্রভৃতি অগণতান্ত্রিক ও দমনমূলক আইনগুলির বিরুদ্ধেও তাঁরা সরব হন।

মূল্যায়ন: আদিপর্বে কংগ্রেসের আন্দোলন খুব বেশি সাফল্য অর্জন করতে পারেনি। এক্ষেত্রে সাংগঠনিক দুর্বলতা, নেতাদের উচ্চবর্গীয় আদবকায়দা, জনগণের সঙ্গে সম্পর্কহীনতা, ব্রিটিশ শাসনের প্রতি অগাধ আস্থা ইত্যাদি বিষয় বিশেষভাবে দায়ী ছিল। তবে প্রথম পর্বের কংগ্রেসের কার্যাবলির মধ্যে ত্রুটি থাকা সত্ত্বেও বলা যায় যে, কংগ্রেস জাতীয় ঐক্য ও জাতীয় চেতনার বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। পরবর্তীকালে এই কংগ্রেস নরমপন্থী মোড়ক থেকে বেরিয়ে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করেছিল।

6. টীকা লেখো: সুরাট বিচ্ছেদ (১৯০৭ খ্রি.)। অথবা, কংগ্রেসের সুরাট ভাঙনের পটভূমি আলোচনা করো।

Ans: সুরাট বিচ্ছেদ: ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের নরমপন্থী ও চরমপন্থী নেতৃবৃন্দের মধ্যে মতাদর্শগত পার্থক্য ছিল বিস্তর। ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলন চলাকালীন উভয়পক্ষের মধ্যেকার সংঘাত ক্রমে বাড়তে থাকে। এমতাবস্থায় ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে গুজরাটের তাপ্তি নদীর তীরে সুরাটে কংগ্রেসের ২৩ তম অধিবেশন বসে। এই অধিবেশনে কংগ্রেসের নরমপন্থী ও চরমপন্থী নেতাদের মধ্যে তীব্র বিরোধ সৃষ্টি হয়। ইতিহাসে এই ঘটনা কংগ্রেসের সুরাট বিচ্ছেদ বা সুরাট ভাঙন নামে পরিচিত। আওয়া

কংগ্রেসের সুরাট ভাঙনের পটভূমি/ ১৯০৭খ্রিস্টাব্দে সুরাট অধিবেশনে কংগ্রেসের বিচ্ছেদের কারণসমূহ:

আদর্শগত বিরোধ: নরমপন্থীদের কাছে ব্রিটিশ শাসন ছিল আশীর্বাদ স্বরূপ কিন্তু চরমপন্থীদের কাছে তা ছিল অভিশাপ। নরমপন্থীরা শান্তিপূর্ণ উপায়ে সাংবিধানিক পদ্ধতিতে আবেদন-নিবেদন-এর মাধ্যমে দাবি আদায় করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু চরমপন্থীরা সংঘবদ্ধভাবে সক্রিয় কর্মসূচির মাধ্যমে ভারতীয়দের দাবিদাওয়া আদায় তথা সমস্যাসমাধানে বিশ্বাসী ছিলেন।

উদ্দেশ্যগত পার্থক্য: উভয়ের মধ্যে লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে পার্থক্য সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছিল। নরমপন্থীরা ছিলেন আপোস-মীমাংসার মাধ্যমে ব্রিটিশদের অধীনে স্বরাজ অর্থাৎ স্বায়ত্তশাসন লাভে বিশ্বাসী। অপরদিকে, চরমপন্থীদের কাছে স্বরাজ ছিল ব্রিটিশমুক্ত পূর্ণ স্বাধীনতা।

কংগ্রেসের বেনারস অধিবেশন (১৯০৫ খ্রি): কংগ্রেসে মতাদর্শের বিরোধ ও সংঘাত প্রথম প্রকাশ্যে আসে জাতীয় কংগ্রেসের বেনারস অধিবেশনে (১৯০৫ খ্রি.)। এই অধিবেশনে লর্ড কার্জন কর্তৃক বঙ্গভঙ্গের প্রস্তাবের বিরুদ্ধে সর্বসম্মতভাবে নিন্দা প্রস্তাব গৃহীত হয়। কিন্তু আন্দোলনের পদ্ধতির প্রশ্নে উভয়পক্ষের মতভেদ বৃদ্ধি পায়। চরমপন্থীরা রাজনৈতিক হাতিয়ার রূপে বয়কট আন্দোলনের উপর জোর দিয়ে এই আন্দোলনকে দেশের নানা অংশে ছড়িয়ে দিতে চান। একই সঙ্গে তাঁরা বয়কট-কে ব্রিটিশ পণ্য বর্জনের পাশাপাশি ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে যুক্ত সবকিছুর সম্পর্ক ও সহযোগিতা বর্জনের দিকে নিয়ে যেতে সচেষ্ট হয়েছিলেন। কিন্তু নরমপন্থীরা বয়কট-কে নেতিবাচক আদর্শ আখ্যা দিয়ে তা কেবল বাংলার মধ্যেই সীমিত রাখতে ইচ্ছা প্রকাশ করেন।

কংগ্রেসের কলকাতা অধিবেশন (১৯০৫ খ্রি.): এরপর ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে কংগ্রেসের কলকাতা অধিবেশনেও নরমপন্থী ও চরমপন্থীদের বিরোধ অব্যাহত থাকে। বাল গঙ্গাধর তিলক-কে চরমপন্থীরা এই অধিবেশনে সভাপতি করার চেষ্টা করলেও শেষপর্যন্ত নরমপন্থী দাদাভাই নৌরজি-কে তাঁরা সভাপতি হিসেবে মেনে নেন। তবে চরমপন্থীরা বয়কট আন্দোলনের মাধ্যমে নিষ্ক্রিয় প্রতিরোধ জোরালো করার দাবিতে অনড় থাকেন।

সুরাট অধিবেশন ও চূড়ান্ত বিচ্ছেদ পর্ব: এক সংঘাতময় পরিস্থিতিতে কংগ্রেসের বার্ষিক অধিবেশনের আয়োজন শুরু হয়। এসময় নরমপন্থী নেতা ফিরোজ শাহ মেহতা পরবর্তী অধিবেশন স্থল নাগপুর থেকে সরিয়ে সুরাটে নিয়ে যান।

সভাপতি নির্বাচনে মতভেদ : সভাপতি নির্বাচনের বিষয়টি নিয়ে দেখা দেয় মতভেদ। চরমপন্থীরা লালা রাজপত রায়-কে সভাপতি পদে বরণ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন, অন্যদিকে নরমপন্থীরা সভাপতিরূপে নির্বাচিত করেন। রাসবিহারী ঘোষ-কে। অতঃপর নরমপদী নেতা। রাসবিহারী ঘোষ-এর সভাপতিত্বে সুরাট অধিবেশন (২৬ ডিসেম্বর, ১৯০৭ খ্রি.)-এর সূচনা হয়।

চূড়ান্ত বিচ্ছেদ সভার চরমপত্রীরা দাবি তোলেন যে, পূর্ববর্তী অধিবেশনে গৃহীত চারটি প্রস্তাব (বয়কট, স্বদেশি, জাতীয় শিক্ষা ও স্বরাজ সমর্থন করা হোক। কিন্তু নরমপস্বীরা উক্ত চারটি প্রস্তাবের আলোচনা এড়িয়ে যেতে চেষ্টা করেন। উভয়পক্ষের মতভেদের দরুন সৃষ্টি হয় এক বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির। শেষপর্যন্ত চরমপন্দ্বীদের দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।

7. লাল-বাল-পাল কাদের বলা হত?

Ans: লাল-বাল-পাল: প্রধানত বাংলা, মহারাষ্ট্র ও পাঞ্জাব-এ চরমপন্থী আন্দোলনের বিকাশ ঘটে। এই তিন অঞ্চলের তিনজন প্রধান চরমপন্থী নেতা ছিলেন- পাঞ্জাবের লালা লাজপত রায়, মহারাষ্ট্রের বাল গঙ্গাধর তিলক ও বাংলার বিপিনচন্দ্র পাল। এঁদের তিনজনকে একসঙ্গে লাল-বাল-পাল বলে অভিহিত করা হয়।

লালা লাজপত রায়: পাঞ্জাব কেশরী নামে পরিচিত বিশিষ্ট আইনজ্ঞ ও আর্য সমাজের একজন সক্রিয় কর্মী লালা লাজপত রায় ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত পাঞ্জাব অঞ্চলে চরমপন্থী আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের কংগ্রেসের বেনারস অধিবেশনে তিনি বলেন যে, নিষ্ক্রিয় প্রতিরোধের মাধ্যমে স্বরাজ অর্জন করা একটি আইনসম্মত পদ্ধতি। বয়কট, স্বদেশি ও গণ আন্দোলন-এর সমর্থনে তিনি গণসংযোগ গড়ে তোলেন। তাঁর উদ্যোগে পাঞ্জাবে স্বদেশি ব্যাংক বিমা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপিত হয়। ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে সাইমন কমিশন বয়কট মিছিলে পুলিশের লাঠির আঘাতে তিনি গুরুতর আহত হন এবং কিছুদিনের মধ্যেই মৃত্যুবরণ করেন (১৭ নভেম্বর, ১৯২৮ খ্রি.)।

বাল গঙ্গাধর তিলক: জাতীয়তাবাদী আদর্শ ও চরমপন্থী রাজনীতির অন্যতম অগ্রণী প্রবক্তা মহারাষ্ট্রের বিশিষ্ট নেতা বাল গঙ্গাধর তিলক ছিলেন। তাঁর জনপ্রিয়তার কারণে তিনি লোকমান্য অভিধায় ভূষিত হয়েছিলেন। কেশরী ও মারাঠা (মাহরাট্টা) পত্রিকা মারফত তিনি তাঁর রাজনৈতিক মতাদর্শ প্রচারে উদ্যত হন। ১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দ থেকে গণপতি উৎসবে বক্তৃতা, নাটক, গান ইত্যাদির মাধ্যমে শুরু করেন জাতীয়তাবাদী আদর্শের প্রচার। ১৮৯৫ খ্রিস্টাব্দ থেকে শিবাজি উৎসবের মাধ্যমে মহারাজা শিবাজির আদর্শ, বীরত্ব, আত্মত্যাগ ও অখণ্ড ভারত রাষ্ট্র গঠনের কাহিনি প্রচার করেন। তিনি বলেছিলেন যে, স্বরাজ আমার জন্মগত অধিকার এবং আমি তা অর্জন করবই (Swaraj is my birthright and I must have it.)

বিপিনচন্দ্র পাল: বাংলার প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ বিপিনচন্দ্র পাল ছিলেন চরমপত্রী মতাদর্শের অন্যতম প্রবক্তা। ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে জাতীয় কংগ্রেসের কলকাতা অধিবেশনে তিনি স্বায়ত্তশাসনের দাবি জানান। তিনি মনে করতেন, একমাত্র ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রণমুক্ত ভারতেই স্বরাজ অর্জন সম্ভব। তাঁর আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ সত্তর বৎসর আধুনিক ভারতের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে স্বীকৃত।

8. ভারতে সশস্ত্র বৈপ্লবিক আন্দোলনের উদ্ভবের কারণগুলি সংক্ষেপে আলোচনা করো।

Ans: ভারতে সশস্ত্র বৈপ্লবিক আন্দোলনের উদ্ভবের কারণসমূহ:

উনবিংশ শতকের শেষ দশকে ভারতের রাজনীতিতে ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে একটি নতুন ধারার উদ্ভব ঘটে। এটি ছিল সশস্ত্র বৈপ্লবিক আন্দোলনের ধারা। এর অন্যতম প্রধান কারণগুলি ছিল-

(i) বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনে কংগ্রেসের ব্যর্থতা: নরমপত্রীদের আবেদন-নিবেদন নীতির ব্যর্থতার প্রেক্ষিতে যুবসমাজ চরমপন্থী আন্দোলনে আশার আলো দেখেছিলেন। কিন্তু বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনে চরমপন্থীরা বয়কট বা নিষ্ক্রিয় প্রতিরোধ আন্দোলনের কর্মসূচি নিলেও, তা রূপায়ণের সঠিক পথ খুঁজে পাননি। জনগণের সামনে গণ আন্দোলনের নতুন কোনও রূপ উপস্থিত করতে পারেননি।

(ii) তৎকালীন সংবাদপত্রের প্রচার: সেসময় প্রকাশিত বন্দেমাতরম্, যুগান্তর সংবাদপত্রগুলি কংগ্রেসের নিষ্ক্রিয় প্রতিরোধেরও তীব্র সমালোচনা করে। ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে দলীয় ভাঙনের ফলে চরমপন্থীদের আন্দোলন স্তিমিত হয়ে পড়লে যুবসমাজ সশস্ত্র আন্দোলনের প্রতি আকৃষ্ট হন। তাঁদের অসন্তোষ প্রতিফলিত হয় যুগান্তর পত্রিকায় (এপ্রিল, ১৯০৬ খ্রি.)। শান্তিপূর্ণ বরিশাল সম্মেলনের উপর পুলিশের নির্মম আক্রমণের প্রতিবাদে লেখা হয়, “দেশের ত্রিশ কোটি মানুষ যদি তাদের ষাট কোটি হাত প্রতিরোধের প্রতিজ্ঞায় তুলে ধরে তবেই বন্ধ হবে এই অত্যাচার। একমাত্র শক্তি দিয়েই শক্তির প্রতিরোধ করা সম্ভব।”

(iii) মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব : স্বামী বিবেকানন্দ কর্তৃক পেশিশক্তি এবং ইস্পাত কঠিন স্নায়ুর বিকাশ সাধনায় যুবসমাজকে আহ্বান, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়-এর দেশাত্মবোধক রচনাবলি; বাল গঙ্গাধর তিলক, ঋষি অরবিন্দ প্রমুখের জাতীয়তাবাদী আদর্শ ইত্যাদি। বিপ্লবী আন্দোলনের একটা মনস্তাত্ত্বিক পটভূমি গড়ে দেয়।

(iv) আন্তর্জাতিক ঘটনাবলির প্রভাব : বিদেশের বিপ্লববাদী আন্দোলনের দৃষ্টান্ত ভারতের সশস্ত্র সংগ্রামী চেতনায় উদ্বুদ্ধ তরুণ সমাজকে অনুপ্রাণিত করে। বিপ্লববাদীরা হাঙ্গেরিতে লুই কসুথ-এর সংগ্রাম, ইটালির কার্বোনারি দলের আন্দোলন, রাশিয়ার নিহিলিস্টদের ক্রিয়াকলাপ থেকে গুপ্ত সমিতি স্থাপনের মাধ্যমে সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনের শিক্ষা গ্রহণ করেন। কালক্রমে বাংলা, পাঞ্জাব ও মহারাষ্ট্র ব্রিটিশবিরোধী সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনের সক্রিয় কেন্দ্রে পরিণত হয়।

9. ক্ষুদিরাম বসু কেন স্মরণীয়?

অথবা, বাংলায় বিপ্লবী আন্দোলনে ক্ষুদিরাম বসুর অবদান লেখো।

Ans: বাংলার বিপ্লবী আন্দোলনের বীর অগ্নিসন্তান ছিলেন ক্ষুদিরাম বসু। তিনি ছিলেন বাংলার প্রথম বিপ্লবী যিনি ফাঁসির মঞ্চে শহীদ হয়েছিলেন। ক্ষুদিরাম বসুর আত্মবলিদান বাংলার বিপ্লবী আন্দোলনের পথ প্রশস্ত করেছিল।

বাংলার বিপ্লবী আন্দোলনে ক্ষুদিরাম বসুর অবদান

পূর্ব পরিচয়: ক্ষুদিরাম বসু ১৮৮৯ খ্রিস্টাব্দের ৩ ডিসেম্বর মেদিনীপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। সেখানে হ্যামিলটন স্কুল ও কলেজিয়েট স্কুলে শিক্ষালাভের পর তিনি বিপ্লবী আদর্শে উদ্‌বুদ্ধ হয়ে যুগান্তর দলের সঙ্গে যুক্ত হন।

কিংসফোর্ড হত্যার দায়িত্ব লাভ : মি. কিংসফোর্ড ছিলেন কলকাতার প্রেসিডেন্সি ম্যাজিস্ট্রেট। তিনি স্বদেশি আন্দোলনের সময় বাংলার বিপ্লবীদের উপর ভয়ংকর নির্যাতনের নির্দেশ দিতেন। তাঁর নির্মম অত্যাচারের উপযুক্ত শাস্তি হিসেবে বাংলার বিপ্লবীরা তাঁকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু ইতিমধ্যে মি. কিংসফোর্ড মুজফ্ফরপুরে বদলি হয়ে গিয়েছিলেন। সেখানে গিয়ে কিংসফোর্ডকে হত্যা করার দায়িত্ব পান বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসু ও প্রফুল্ল চাকি।

কিংসফোর্ডকে হত্যার চেষ্টা: ক্ষুদিরাম বসু ও প্রফুল্ল চাকি মুজফফরপুরে গিয়ে ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দের ৩০ এপ্রিল রাত আটটা নাগাদ পরিকল্পনামতো একটি ঘোড়ার গাড়ির উপর বোমা ছোঁড়েন। কিন্তু সেটি কিংসফোর্ডের গাড়ি ছিল না। ভুলবশত কিংসফোর্ডের জায়গায় ব্যারিস্টার কেনেডির স্ত্রী ও কন্যা বোমার আঘাতে মারা যান।

পরিণতি: ব্যারিস্টার কেনেডির স্ত্রী ও কন্যাকে হত্যার পর ক্ষুদিরাম বসু পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। বিচারে ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দের ১১ আগস্ট তাঁর ফাঁসি হয়।

মূল্যায়ন: উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, বাংলার বিপ্লবী আন্দোলনে ক্ষুদিরাম বসু-র অবদান অনস্বীকার্য। তাঁর এই আত্মবলিদান বাংলার বিপ্লবী আন্দোলনের ইতিহাসে তাঁকে চিরস্মরণীয় করে রেখেছে।

10. মহারাষ্ট্রের বিপ্লবী আন্দোলনে বাসুদেব বলবন্ত ফাদকের ভূমিকা লেখো।

অথবা, ভারতের বৈপ্লবিক জাতীয়তাবাদের জনক কাকে, কেন আখ্যা দেওয়া হয়?

Ans: মহারাষ্ট্রের বিপ্লবী আন্দোলনে বাসুদেব বলবন্ত ফাদকের ভূমিকা:

প্রথম জীবন: ভারতের সশস্ত্র বিপ্লববাদের পথপ্রদর্শক ছিলেন বাসুদেব বলবন্ত ফাদকে। ১৮৪৫ খ্রিস্টাব্দে ৪ নভেম্বর বর্তমান মহারাষ্ট্রের কোলাবা জেলার এক চিৎপাবন ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্ম হয় তাঁর। মহারাষ্ট্রের থানে জেলায় প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করেন তিনি। পরবর্তীকালে তিনি পুনা হাইস্কুল থেকে শিক্ষালাভ করেন। এরপর বোম্বাইতে গ্রেট ইন্ডিয়ান পেনিনসুলা রেলওয়ে কোম্পানির অডিট অফিসে করণিক হিসেবে যুক্ত হন ফাদকে। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি সরকারি কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে অংশগ্রহণ: ১৮৭৬-১৮৭৭ খ্রিস্টাব্দে মহারাষ্ট্রের বোম্বাই প্রেসিডেন্সিতে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। বেকারত্ব, খাদ্যের জন্য হাহাকার এবং দরিদ্র সাধারণ মানুষের কষ্ট দেখে ফাদকে ব্যথিত হন। এই দুর্ভিক্ষে বহু মানুষ মারা যান। সরকারের উদাসীনতা লক্ষ করে তিনি দেশের সকল দুরবস্থার জন্য ইংরেজ সরকারকে দায়ী করেন। তিনি সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে ভারত থেকে ইংরেজ শাসনের অবসানের শপথ গ্রহণ করেন। এই লক্ষ্যে ফাদকে কিছু যুবকদের বিপ্লবী আদর্শে দীক্ষিত করেন। রামোশি নামক এক নির্যাতিত ও পিছিয়ে পড়া গোষ্ঠীকে দলভুক্ত করে তাদের অস্ত্রশিক্ষা দেওয়া শুরু করেন। এ ছাড়াও তিনি ধাঙড়, কোল, ভিল প্রভৃতি নিম্নবর্গীয় মানুষদের সংগঠিত করে বিপ্লবী দল গঠন করেন। সম্ভবত এটিই ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রথম সশস্ত্র বিপ্লবী দল। ব্রিটিশদের সমর্থক ধনী ব্যবসায়ী ও মহাজনদের বাড়ি লুঠ করে এই দল দরিদ্র কৃষকদের মধ্যে তা বণ্টন করে দেয়।

ফাদকের পরিকল্পনা: ব্রিটিশ শাসনের উচ্ছেদের জন্য ফাদকে যে পরিকল্পনাগুলি গ্রহণ করেছিলেন, সেগুলি হল- গুপ্ত বিপ্লবী সংঘ স্থাপন, বিপ্লবের প্রয়োজনে অর্থ সংগ্রহের জন্য রাজনৈতিক ডাকাতি, রেল চলাচল ও ডাকব্যবস্থা বিপর্যস্ত করা, জেলবন্দিদের মুক্ত করে তাদের দলের অন্তর্ভুক্ত করা ইত্যাদি। তিনি স্থানীয় আফগানি সর্দার ইসমাইল খান-এর সাহায্য নিয়ে বৈপ্লবিক কাজকর্ম পরিচালনা করেন।

গ্রেফতার ও মৃত্যু : ফাদকে-র বিপ্লবী দলের কাজকর্ম ও তাঁর জনপ্রিয়তা ক্রমেই ব্রিটিশ সরকারকে শঙ্কিত করে। ১৮৭৯ খ্রিস্টাব্দে তাঁকে বন্দি করা হয় এবং যাবজ্জীবন নির্বাসন দন্ড দিয়ে পাঠানো হয় আরবের এডেন জেলে। ১৮৮৩ খ্রিস্টাব্দে বন্দি অবস্থায় যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়।

বিপ্লবী বাসুদেব বলবন্ত ফাদকে ভারতের অগণিত সশস্ত্র বিপ্লবীকে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। ফাদকের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলেও তাঁর আদর্শ সফল হয়েছিল। তাঁরই দেখানো পথে পরবর্তীকালে বিপ্লবীরা নির্ভয়ে এগিয়ে গিয়েছেন। এজন্য ড. রমেশচন্দ্র মজুমদার ফাদকে-কে ভারতের বৈপ্লবিক জাতীয়তাবাদের জনক (Father of Militant Natonalism in India) বলে আখ্যায়িত করেছেন।

11. গদর পার্টি সম্পর্কে কী জানো লেখো।

Ans: আজ ভারতের ব্রিটিশবিরোধী সশস্ত্র বৈপ্লবিক আন্দোলনের ইতিহাসে গদর দল বা গদর পার্টি-র গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। বিংশ শতকে ভারতে একদিকে যেমন বিপ্লবী ভাবধারা তথা আন্দোলনের প্রসার ঘটে তেমনি ভারতের বাইরে বিদেশের মাটিতেও বিপ্লবী ভাবাদর্শ ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। গদর পার্টির প্রতিষ্ঠা ছিল বিদেশের মাটিতে এই ভাবাদর্শ বিস্তারের এক সার্থক রূপায়ণ।

গদর পার্টি:

প্রতিষ্ঠা: ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে লালা হরদয়াল-এর সক্রিয় উদ্যোগে আমেরিকার সানফ্রান্সিসকো শহরে গদর দল (Ghadar Party) প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গদর শব্দের অর্থ-বিদ্রোহ। সম্ভবত এই দলের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন সোহন সিং ভাকনা এবং প্রথমদিকের নেতাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন লালা হরদয়াল। গদর দল প্রতিষ্ঠার স্বল্পকালের মধ্যেই বিভিন্ন সম্প্রদায়ের প্রায় ১৫ হাজার স্বাধীনতাকামী প্রবাসী ভারতীয় এই পার্টির সদস্যপদ গ্রহণ করেন।

পত্রিকা প্রকাশ: গদর পার্টির প্রধান মুখপত্র ছিল গদর পত্রিকা। এই পত্রিকা লালা হরদয়াল-এর তত্ত্বাবধানে প্রকাশিত হত। ভারতে ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটানোর উদ্দেশ্যে বিপ্লবী অগ্নিমন্ত্র প্রচারিত হত এই পত্রিকায়। ইংরেজি গদর পত্রিকা হিন্দু, উর্দু, গুজরাটি প্রভৃতি ভারতীয় ভাষায় অনুবাদ করে আমেরিকা, ইউরোপ, আফ্রিকা ও এশিয়ার প্রবাসী ভারতীয়দের মধ্যে এবং ভারতবর্ষে ছড়িয়ে দেওয়া হত।

বিপ্লবী কার্যকলাপের প্রসার: কালক্রমে গদর পার্টি আমেরিকা ও কানাডার প্রবাসী ভারতীয়দের মধ্যে জাতীয় চেতনা বিকাশে বিশেষভাবে সাহায্য করেছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে গদর পার্টির সশস্ত্র বৈপ্লবিক কার্যকলাপ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায় এবং পার্টির বহু সদস্য বিদেশ থেকে অর্থ ও অস্ত্র-সহ ভারতে প্রত্যাবর্তন করেন। পরবর্তীতে কোমাগাতামারু ঘটনা (Komagata Maru Incident)-কে কেন্দ্র করে গদরপন্থীদের বিক্ষোভচরমে ওঠে।

লালা হরদয়ালের বিরুদ্ধে মামলা: ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দের ১৬ মার্চ আমেরিকায় ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে উত্তেজনা সৃষ্টির অপরাধে মার্কিন সরকার লালা হরদয়াল-কে গ্রেফতার করে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা শুরু করে। জামিনে মুক্তি লাভ করে তিনি জার্মানিতে চলে যান। এই সময়ে ব্রিটিশ সরকার গদর পার্টি ও পত্রিকাকে নিষিদ্ধ বলে ঘোষণা করে।

এভাবে বিদেশের মাটিতে ও ভারতবর্ষে বিপ্লবী চেতনা বিস্তারে গদর পার্টির অবদান ছিল অবিস্মরণীয়।

12. সেফটি সেফটি ভাল্ভ তত্ত্ব (Safety Valve Theory) কী?

অথবা, ভারতের জাতীয় কংগ্রেসকে কেন সেফটি ভাল্ড বলা হয়?

Ans: ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠায় সেফটি ভাল্ভ তত্ত্ব:

জাতীয় কংগ্রেস-এর প্রতিষ্ঠায় প্রাক্তন ব্রিটিশ আমলা অ্যালান অক্টাভিয়ান হিউম-এর ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর জীবনীকার উইলিয়ম ওয়েডারবার্ন রচিত Allan Octavian Hume, C.B.: Father of the Indian National Congress, 1829 – 1912 গ্রন্থ থেকে হিউমের কর্মকান্ডের কথা জানা যায়। কর্মসূত্রে তিনি সিমলাতে থাকাকালীন সময়ে সাত খণ্ডের এক গোপন দলিল দেখার সুযোগ পান। সেগুলি পড়ে তিনি বুঝতে পারেন যে, ব্রিটিশ শাসনের চাপে জর্জরিত ভারতের সাধারণ ও নিম্নশ্রেণির মানুষেরা যে-কোনো সময় ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে পারে। এই বিদ্রোহ থেকে দেশের শিক্ষিত সম্প্রদায়কে দূরে রেখে তাঁদের মতামতকে একটি নিয়মতান্ত্রিক পথে পরিচালিত করার জন্য হিউম জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগী হন। হিউমের উদ্দেশ্য ছিল জাতীয় কংগ্রেসকে ব্রিটিশ সরকারের স্বার্থে সেফটি ভাল্ভহিসেবে ব্যবহার করা। হিউম স্বয়ং বলেছেন-‘আমাদের কাজের জন্য ভারতবাসীর মনে যে ব্রিটিশবিদ্বেষ পুঞ্জীভূত হয়েছে, তার নির্গমনের জন্য একটি নিরাপত্তামূলক যন্ত্র (সেফটি ভাল্ভ) আশু প্রয়োজন এবং একাজে কংগ্রেসের মতো সংগঠন সবথেকে উপযোগী হতে পারে।’ এই সামগ্রিক ধারণাই সেফটি ভাল্ভ তত্ত্ব (Safety Valve Theory) নামে পরিচিত।

সেফটি ভাল্ভ তত্ত্বের সমর্থন: বিশিষ্ট চরমপন্থী নেতা লালা লাজপত রায় তাঁর Young India গ্রন্থে (১৯১৬ খ্রি.) প্রথম সেফটি ভাল্ভ তত্ত্ব উল্লেখ করে নরমপত্রীদের আক্রমণ করেন। তাঁর মতে, কংগ্রেস বড়োলাট লর্ড ডাফরিন-এর মস্তিষ্কপ্রসূত। সি এফ অ্যান্ড্রুজ ও গিরিজা মুখার্জি রচিত The Rise and Growth of the Congress in India গ্রন্থেও (১৯৩৮ খ্রি.) সেফটি ভাল্ভ তত্ত্বের সমর্থন পাওয়া যায়। উমেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, রজনীপাম দত্ত এক্ষেত্রে হিউমের সঙ্গে বড়োলাট লর্ড ডাফরিন-এর সাক্ষাৎ ও আলোচনার বিষয়টিকে কংগ্রেস প্রতিষ্ঠায় বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ছিল বলে মনে করেছেন।

সেফটি ভাল্ড তত্ত্বের সমর্থন : সাম্প্রতিক নানা গবেষণায় সেফটি ভাল্ভ তত্ত্বের অসাড়তা তুলে ধরেছেন বিপানচন্দ্র, অমলেশ ত্রিপাঠি, সুমিত সরকার-এর মতো ঐতিহাসিকগণ। তাঁদের প্রদত্ত যুক্তিগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল-

  • সিমলায় অবস্থানকালে হিউম সাত খন্ড গোপন রিপোর্ট দেখার সুযোগ পান বলে ওয়েডারবার্ন দাবি করেছেন। কিন্তু বিপানচন্দ্র ও অন্যান্যরা দিল্লি বা লন্ডনের মহাফেজখানায় (তথ্যাগার) তন্ন তন্ন করে খুঁজেও ওই নথির অস্তিত্ব দেখতে পাননি।
  • ওয়েডারবার্ন বলেছেন যে, ওই সকল গণ অসন্তোষের তথ্য প্রায় ৩০ হাজার প্রতিবেদক সংগ্রহ করেছিলেন। এই সংখ্যা অবাস্তব।
  • ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে হিউম ছিলেন রাজস্ব ও বাণিজ্য বিভাগের সচিব। তাঁর দফতর ছিল সিমলাতে। স্বভাবতই স্বরাষ্ট্র দফতরের গোপন তথ্য জানার সুযোগ তাঁর ছিল না।

পরিশেষে বলা যায় যে, ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠার সঙ্গে হিউম ও সেফটি ভাল্ভতত্ত্বের ধারণা গভীরভাবে সম্পর্কিত। কিন্তু, তা সত্ত্বেও পুরোপুরিভাবে কংগ্রেসকে ব্রিটিশ শাসনের স্বার্থে গড়ে তোলা একটি সংগঠন বলা যুক্তিযুক্ত হবে না।

13. ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠায় হিউম-ডাফরিন ষড়যন্ত্র তত্ত্ব সম্পর্কে আলোচনা করো।

Ans: ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠায় হিউম ডাফরিন ষড়যন্ত্র তত্ত্ব:

অ্যালান অক্টাভিয়ান হিউম ছিলেন একজন অবসরপ্রাপ্ত ব্রিটিশ কর্মচারী। আর তৎকালীন ভারতের বড়োলাট বা ভাইসরয় ছিলেন লর্ড ডাফরিন। ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দে সিমলায় ডাফরিন ও হিউমের সাক্ষাৎ হয়। বেশকিছু ঐতিহাসিক মনে করেন যে, এই সাক্ষাৎ এবং তাঁদের আলোচনার মধ্যে দিয়েই জাতীয় কংগ্রেস তৈরির পরিকল্পনা করা হয়, যা ইতিহাসে হিউম-ডাফরিন ষড়যন্ত্র নামে পরিচিত।

হিউম-ডাফরিন ষড়যন্ত্র তত্ত্বের সমর্থন:

রজনীপাম দত্তের অভিমত: মার্কসবাদী ঐতিহাসিক রজনীপাম দত্ত ষড়যন্ত্র তত্ত্ব-এর অবতারণা করে তাকে বহুল প্রচারিত করেন। তিনি তাঁর India Today গ্রন্থে (১৯৪০ খ্রি.) লেখেন যে, ভারতবর্ষে কোনও গণ অভ্যুত্থান ঘটার আগেই তাকে ব্যর্থ করে দেওয়ার উদ্দেশ্যে ষড়যন্ত্র করে কংগ্রেসকে সৃষ্টি করা হয়েছে। এই কারণে কংগ্রেসের কর্মধারায় এক ধরনের দোদুল্যমানতা দেখা যায়। একদিকে কংগ্রেস গণ আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে, আবার আন্দোলন যখন দ্রুত বৈপ্লবিক পথে এগিয়েছে তখনই সাম্রাজ্যবাদের স্বার্থে আন্দোলন ভেঙে দিয়ে বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়েছে।

উমেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিমত: জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম সভাপতি উমেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা Introduction to Indian Politics (১৮৯৮ খ্রি.) গ্রন্থে জাতীয় কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠার জন্য হিউম-এর সঙ্গে বড়োলাট লর্ড ডাফরিন-এর সাক্ষাৎ এবং ভারতীয়দের একটি জাতীয় সংগঠন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ডাফরিনের উৎসাহের বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

এস আর মেহরোত্রার মত: ঐতিহাসিক এস আর মেহরোত্রা তাঁর The Emergence of the Indian National Congress (১৯৭১ খ্রি.) নামক গ্রন্থে এই ষড়যন্ত্র তত্ত্বকেই সমর্থন করেছেন। হিউম মূলত ডাফরিন-এর পরামর্শ নিয়ে এবং লর্ড রিয়ে -কে সভাপতি করে নতুন প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন বলে মেহরোত্রা মনে করেন।

হিউম-ডাফরিন ষড়যন্ত্র তত্ত্বের বিরুদ্ধাচরণ :

ঐতিহাসিক রমেশচন্দ্র মজুমদার, বিপানচন্দ্র, অমলেশ ত্রিপাঠী প্রমুখ হিউম-ডাফরিন ষড়যন্ত্র তত্ত্ব-এর বিরোধিতা করেন। কারণ হিসেবে তাঁরা দেখিয়েছেন যে-

  • সেফটি ভাল্ভ ও ষড়যন্ত্রের ঘটনার সময়ে হিউম স্বরাষ্ট্র দফতরের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। তাই সরকারি গোপন রিপোর্ট দেখে ডাফরিন-এর সঙ্গে হিউমের আলোচনার ব্যাপারটা যুক্তিগ্রাহ্য হয় না।
  • ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দের ১৭ মে বোম্বাইয়ের ছোটোলাট লর্ড রিয়ে-কে লেখা বড়োলাট লর্ড ডাফরিন-এর একটি চিঠি থেকেই বোঝা যায় যে, হিউম-এর এই ধরনের সম্মেলনের প্রস্তাবকে সন্দেহের চোখেই দেখেছিলেন ডাফরিন। তিনি, হিউমকে একজন ধূর্ত, ছিটগ্রস্ত ও অহংকারী মানুষ বলেই মনে করতেন।

কংগ্রেস ব্রিটিশ কর্তৃত্ব রক্ষার হাতিয়ার হলে লর্ড ডাফরিন অবশ্যই কংগ্রেসের পক্ষে কথা বলতেন। কিন্তু কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার কয়েক বছরের মধ্যেই তিনি কংগ্রেসকে আণুবীক্ষণিক সংখ্যালঘু বা বাবুশ্রেণির সংগঠন বলে ব্যঙ্গ করেন।

পরিশেষে বলা যায়, হিউম-ডাফরিন ষড়যন্ত্র তত্ত্ব অধিকাংশ ঐতিহাসিকদের কাছেই স্বীকৃত নয়। তবে কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার ইতিহাসে এর গুরুত্ব অস্বীকার করা যায় না।

HS Class 12 3rd Semester (Third Unit Test) Question and Answer :

  • HS Class 12 Bengali 3rd Semester Question Click here
  • HS Class 12 English 3rd Semester Question Click here
  • HS Class 12 Geography 3rd Semester Question Click here
  • HS Class 12 History 3rd Semester Question Click here
  • HS Class 12 Education 3rd Semester Question Click here
  • HS Class 12 Political Science 3rd Semester Question Click here
  • HS Class 12 Philosophy 3rd Semester Question Click here
  • HS Class 12 Sociology 3rd Semester Question Click here
  • HS Class 12 Sanskrit 3rd Semester Question Click here
  • HS Class 12 All Subjects First Semester Question Click here

HS Class 12 4th Semester (Forth Unit Test) Question and Answer :

  • HS Class 12 Bengali 4th Semester Question Click here
  • HS Class 12 English 4th Semester Question Click here
  • HS Class 12 Geography 4th Semester Question Click here
  • HS Class 12 History 4th Semester Question Click here
  • HS Class 12 Education 4th Semester Question Click here
  • HS Class 12 Political Science 4th Semester Question Click here
  • HS Class 12 Philosophy 4th Semester Question Click here
  • HS Class 12 Sociology 4th Semester Question Click here
  • HS Class 12 Sanskrit 4th Semester Question Click here
  • HS Class 12 All Subjects 4th Semester Question Click here

Higher Secondary All Subject Suggestion – উচ্চমাধ্যমিক সমস্ত বিষয়ের সাজেশন

আরোও দেখুন:-

HS Bengali Suggestion Click here

আরোও দেখুন:-

Class 12 English Suggestion Click here

আরোও দেখুন:-

Class 12 Geography Suggestion Click here

আরোও দেখুন:-

Class 12 History Suggestion Click here

আরোও দেখুন:-

Class 12 Political Science Suggestion Click here

আরোও দেখুন:-

Class 12 Education Suggestion Click here

আরোও দেখুন:-

Class 12 Philosophy Suggestion Click here

আরোও দেখুন:-

Class 12 Sociology Suggestion Click here

আরোও দেখুন:-

Class 12 Sanskrit Suggestion Click here

আরোও দেখুন:-

Class 12 All Subjects Suggestion Click here

◆ উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার প্রস্তুতি: বিনামূল্যে নোটস, সাজেশন, PDF ও সমস্ত আপডেটের জন্য আমাদের WhatsApp Group এ Join হয়ে যাও।

Class 12 WhatsApp Groups Click Here to Join

দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | West Bengal HS Class 12th History Question and Answer / Suggestion / Notes Book

আরোও দেখুন :-

দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস সমস্ত অধ্যায়ের প্রশ্নউত্তর Click Here

FILE INFO : সংগঠিত জাতীয়তাবাদী রাজনীতির উত্থান : প্রাক ১৯১৭ ও উত্তর ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দ, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত (তৃতীয় অধ্যায়) দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | HS Class 12 History Songothito Jatiyatabadi Question and Answer with FREE PDF Download Link

PDF File Name সংগঠিত জাতীয়তাবাদী রাজনীতির উত্থান : প্রাক ১৯১৭ ও উত্তর ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দ, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত (তৃতীয় অধ্যায়) দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | HS Class 12 History Songothito Jatiyatabadi Question and Answer PDF
Prepared by Experienced Teachers
Price FREE
Download Link  Click Here To Download
Download PDF Click Here To Download

সংগঠিত জাতীয়তাবাদী রাজনীতির উত্থান : প্রাক ১৯১৭ ও উত্তর ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দ, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত (তৃতীয় অধ্যায়) অধ্যায় থেকে আরোও বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর দেখুন :

Update

[আরও দেখুন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবন রচনা – Rabindranath Tagore Biography in Bengali]

[আমাদের YouTube চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন Subscribe Now]

Info : সংগঠিত জাতীয়তাবাদী রাজনীতির উত্থান : প্রাক ১৯১৭ ও উত্তর ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দ, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত (তৃতীয় অধ্যায়) দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস সাজেশন বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর

 HS Class 12 History Suggestion | West Bengal WBCHSE Class Twelve XII (HS Class 12th) History Question and Answer Suggestion 

” সংগঠিত জাতীয়তাবাদী রাজনীতির উত্থান : প্রাক ১৯১৭ ও উত্তর ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দ, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত (তৃতীয় অধ্যায়) দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস প্রশ্ন উত্তর “ একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ টপিক দ্বাদশ শ্রেণীর পরীক্ষা (West Bengal Class Twelve XII / WB HS Class 12 / WBCHSE / HS Class 12 Exam / West Bengal Council of Higher Secondary Education – WB HS Class 12 Exam / HS Class 12th / WB HS Class 12 / HS Class 12 Pariksha ) এখান থেকে প্রশ্ন অবশ্যম্ভাবী । সে কথা মাথায় রেখে Bhugol Shiksha .com এর পক্ষ থেকে দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস পরীক্ষা প্রস্তুতিমূলক সাজেশন এবং বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর ( দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস সাজেশন / দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস প্রশ্ও উত্তর । Class-11 History Suggestion / HS Class 12 History Songothito Jatiyatabadi Question and Answer / HS Class 12 History Suggestion / Class-11 Pariksha History Suggestion / History HS Class 12 Exam Guide / MCQ , Short , Descriptive Type Question and Answer / HS Class 12 History Suggestion FREE PDF Download) উপস্থাপনের প্রচেষ্টা করা হলাে। ছাত্রছাত্রী, পরীক্ষার্থীদের উপকারে লাগলে, আমাদের প্রয়াস দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস পরীক্ষা প্রস্তুতিমূলক সাজেশন এবং বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর (HS Class 12 History Suggestion / West Bengal Twelve XII Question and Answer, Suggestion / WBCHSE HS Class 12th History Suggestion / HS Class 12 History Songothito Jatiyatabadi Question and Answer / HS Class 12 History Suggestion / HS Class 12 Pariksha Suggestion / HS Class 12 History Exam Guide / HS Class 12 History Suggestion 2024, 2025, 2026, 2027, 2028, 2029, 2030 / HS Class 12 History Suggestion MCQ , Short , Descriptive Type Question and Answer. / Class-11 History Suggestion FREE PDF Download) সফল হবে।

সংগঠিত জাতীয়তাবাদী রাজনীতির উত্থান : প্রাক ১৯১৭ ও উত্তর ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দ, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত (তৃতীয় অধ্যায়) বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর 

সংগঠিত জাতীয়তাবাদী রাজনীতির উত্থান : প্রাক ১৯১৭ ও উত্তর ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দ, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত (তৃতীয় অধ্যায়) বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | সংগঠিত জাতীয়তাবাদী রাজনীতির উত্থান : প্রাক ১৯১৭ ও উত্তর ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দ, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত (তৃতীয় অধ্যায়) HS Class 12 History Songothito Jatiyatabadi Question and Answer Suggestion দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – সংগঠিত জাতীয়তাবাদী রাজনীতির উত্থান : প্রাক ১৯১৭ ও উত্তর ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দ, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত (তৃতীয় অধ্যায়) বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর।

সংগঠিত জাতীয়তাবাদী রাজনীতির উত্থান : প্রাক ১৯১৭ ও উত্তর ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দ, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত (তৃতীয় অধ্যায়) SAQ সংক্ষিপ্ত বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস 

সংগঠিত জাতীয়তাবাদী রাজনীতির উত্থান : প্রাক ১৯১৭ ও উত্তর ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দ, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত (তৃতীয় অধ্যায়) SAQ সংক্ষিপ্ত বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | সংগঠিত জাতীয়তাবাদী রাজনীতির উত্থান : প্রাক ১৯১৭ ও উত্তর ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দ, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত (তৃতীয় অধ্যায়) HS Class 12 History Songothito Jatiyatabadi Question and Answer Suggestion দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – সংগঠিত জাতীয়তাবাদী রাজনীতির উত্থান : প্রাক ১৯১৭ ও উত্তর ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দ, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত (তৃতীয় অধ্যায়) SAQ সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর।

উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – সংগঠিত জাতীয়তাবাদী রাজনীতির উত্থান : প্রাক ১৯১৭ ও উত্তর ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দ, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত (তৃতীয় অধ্যায়) প্রশ্ন উত্তর | HS Class 12 History Songothito Jatiyatabadi Question and Answer Question and Answer, Suggestion 

উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – সংগঠিত জাতীয়তাবাদী রাজনীতির উত্থান : প্রাক ১৯১৭ ও উত্তর ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দ, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত (তৃতীয় অধ্যায়) | দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – সংগঠিত জাতীয়তাবাদী রাজনীতির উত্থান : প্রাক ১৯১৭ ও উত্তর ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দ, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত (তৃতীয় অধ্যায়) | পশ্চিমবঙ্গ দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – সংগঠিত জাতীয়তাবাদী রাজনীতির উত্থান : প্রাক ১৯১৭ ও উত্তর ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দ, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত (তৃতীয় অধ্যায়) | দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস সহায়ক – সংগঠিত জাতীয়তাবাদী রাজনীতির উত্থান : প্রাক ১৯১৭ ও উত্তর ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দ, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত (তৃতীয় অধ্যায়) বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর । HS Class 12 History Songothito Jatiyatabadi Question and Answer, Suggestion | HS Class 12 History Songothito Jatiyatabadi Question and Answer Suggestion | HS Class 12 History Songothito Jatiyatabadi Question and Answer Notes | West Bengal HS Class 12th History Question and Answer Suggestion.

উচ্চমাধ্যমিক দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – সংগঠিত জাতীয়তাবাদী রাজনীতির উত্থান : প্রাক ১৯১৭ ও উত্তর ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দ, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত (তৃতীয় অধ্যায়) প্রশ্ন উত্তর | Higher Secondary Class 12 History Question and Answer, Suggestion 

দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – সংগঠিত জাতীয়তাবাদী রাজনীতির উত্থান : প্রাক ১৯১৭ ও উত্তর ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দ, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত (তৃতীয় অধ্যায়) প্রশ্ন উত্তর বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | সংগঠিত জাতীয়তাবাদী রাজনীতির উত্থান : প্রাক ১৯১৭ ও উত্তর ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দ, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত (তৃতীয় অধ্যায়) । HS Class 12 History Songothito Jatiyatabadi Question and Answer Suggestion.

WBCHSE HS Class 12th History Songothito Jatiyatabadi Suggestion | দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – সংগঠিত জাতীয়তাবাদী রাজনীতির উত্থান : প্রাক ১৯১৭ ও উত্তর ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দ, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত (তৃতীয় অধ্যায়)

WBCHSE HS Class 12 History Songothito Jatiyatabadi Suggestion দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – সংগঠিত জাতীয়তাবাদী রাজনীতির উত্থান : প্রাক ১৯১৭ ও উত্তর ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দ, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত (তৃতীয় অধ্যায়) প্রশ্ন উত্তর বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর । সংগঠিত জাতীয়তাবাদী রাজনীতির উত্থান : প্রাক ১৯১৭ ও উত্তর ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দ, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত (তৃতীয় অধ্যায়) | HS Class 12 History Songothito Jatiyatabadi Suggestion দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – সংগঠিত জাতীয়তাবাদী রাজনীতির উত্থান : প্রাক ১৯১৭ ও উত্তর ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দ, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত (তৃতীয় অধ্যায়) প্রশ্ন উত্তর বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর ।

HS Class 12 History Songothito Jatiyatabadi 4th Semester Question and Answer Suggestions | দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – সংগঠিত জাতীয়তাবাদী রাজনীতির উত্থান : প্রাক ১৯১৭ ও উত্তর ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দ, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত (তৃতীয় অধ্যায়) | দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর 

HS Class 12 History Songothito Jatiyatabadi 4th Semester Question and Answer দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – সংগঠিত জাতীয়তাবাদী রাজনীতির উত্থান : প্রাক ১৯১৭ ও উত্তর ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দ, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত (তৃতীয় অধ্যায়) দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর HS Class 12 History Songothito Jatiyatabadi Question and Answer দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – সংগঠিত জাতীয়তাবাদী রাজনীতির উত্থান : প্রাক ১৯১৭ ও উত্তর ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দ, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত (তৃতীয় অধ্যায়) সংক্ষিপ্ত, রোচনাধর্মী বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর ।

WB HS Class 12 History Songothito Jatiyatabadi Suggestion | দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – সংগঠিত জাতীয়তাবাদী রাজনীতির উত্থান : প্রাক ১৯১৭ ও উত্তর ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দ, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত (তৃতীয় অধ্যায়) সাজেশন 

HS Class 12 History Songothito Jatiyatabadi Question and Answer Suggestion দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – সংগঠিত জাতীয়তাবাদী রাজনীতির উত্থান : প্রাক ১৯১৭ ও উত্তর ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দ, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত (তৃতীয় অধ্যায়) সাজেশন । HS Class 12 History Songothito Jatiyatabadi Question and Answer Suggestion দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর।

West Bengal HS Class 12 History Suggestion Download WBCHSE HS Class 12th History short question suggestion . HS Class 12 History Songothito Jatiyatabadi Suggestion download HS Class 12th Question Paper History. WB HS Class 12 History suggestion and important question and answer. HS Class 12 Suggestion pdf.পশ্চিমবঙ্গ দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস পরীক্ষার সম্ভাব্য সাজেশন ও শেষ মুহূর্তের বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর ডাউনলোড। দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস পরীক্ষার জন্য সমস্ত রকম গুরুত্বপূর্ণ বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর।

Get the HS Class 12 History Songothito Jatiyatabadi Question and Answer by Bhugol Shiksha .com

HS Class 12 History Songothito Jatiyatabadi Question and Answer prepared by expert subject teachers. WB HS Class 12 History Suggestion with 100% Common in the Examination .

Class Twelve XII History Songothito Jatiyatabadi Suggestion | West Bengal Council of Higher Secondary Education (WBCHSE) HS Class 12 Exam 

HS Class 12 History Songothito Jatiyatabadi Question and Answer, Suggestion Download PDF: West Bengal Council of Higher Secondary Education (WBCHSE) HS Class 12 Twelve XII History Suggestion is provided here. HS Class 12 History Songothito Jatiyatabadi Question and Answer Suggestion Questions Answers PDF Download Link in Free here.

সংগঠিত জাতীয়তাবাদী রাজনীতির উত্থান : প্রাক ১৯১৭ ও উত্তর ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দ, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত (তৃতীয় অধ্যায়) দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | HS Class 12 History Songothito Jatiyatabadi Question and Answer 

অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই ” সংগঠিত জাতীয়তাবাদী রাজনীতির উত্থান : প্রাক ১৯১৭ ও উত্তর ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দ, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত (তৃতীয় অধ্যায়) দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | HS Class 12 History Songothito Jatiyatabadi Question and Answer ” পােস্টটি পড়ার জন্য। এই ভাবেই Bhugol Shiksha ওয়েবসাইটের পাশে থাকো যেকোনো প্ৰশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলাে করো এবং নিজেকে তথ্য সমৃদ্ধ করে তোলো , ধন্যবাদ।

WhatsApp Channel Follow Now
Telegram Channel Follow Now