দিগন্তের প্রসার (ষষ্ঠ অধ্যায়) একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | Class 11 History Digonter Prosar Question and Answer
দিগন্তের প্রসার (ষষ্ঠ অধ্যায়) একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | Class 11 History Digonter Prosar Question and Answer

দিগন্তের প্রসার (ষষ্ঠ অধ্যায়) একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর

Class 11 History Digonter Prosar Question and Answer

দিগন্তের প্রসার (ষষ্ঠ অধ্যায়) একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | Class 11 History Digonter Prosar Question and Answer : দিগন্তের প্রসার (ষষ্ঠ অধ্যায়) একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | Class 11 History Digonter Prosar Question and Answer নিচে দেওয়া হলো। এই West Bengal WBCHSE Class 11th History Digonter Prosar Question and Answer, Suggestion, Notes | একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – দিগন্তের প্রসার (ষষ্ঠ অধ্যায়) থেকে বহুবিকল্পভিত্তিক, সংক্ষিপ্ত, অতিসংক্ষিপ্ত এবং রোচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর (MCQ, Very Short, Short, Descriptive Question and Answer) গুলি আগামী West Bengal Class 11th Eleven XI History Examination – পশ্চিমবঙ্গ একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস পরীক্ষার জন্য খুব ইম্পর্টেন্ট। একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস পরীক্ষা তে এই সাজেশন বা কোশ্চেন (দিগন্তের প্রসার (ষষ্ঠ অধ্যায়) একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | Class 11 History Digonter Prosar Question and Answer) গুলো আসার সম্ভাবনা খুব বেশি।

তোমরা যারা দিগন্তের প্রসার (ষষ্ঠ অধ্যায়) একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | Class 11 History Digonter Prosar Question and Answer খুঁজে চলেছ, তারা নিচে দেওয়া প্রশ্ন ও উত্তর গুলো ভালো করে পড়তে পারো।

রাজ্য (State) পশ্চিমবঙ্গ (West Bengal)
বোর্ড (Board) WBCHSE, West Bengal
শ্রেণী (Class) একাদশ শ্রেণী (WB Class 11th)
বিষয় (Subject) একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস (Class 11 History)
ষষ্ঠ অধ্যায় (Chapter 6 / Unit-6) দিগন্তের প্রসার (Digonter Prosar)

[Class 11 All Unit Test Question and Answer (1st 2nd) Click here]

দিগন্তের প্রসার (ষষ্ঠ অধ্যায়) একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | West Bengal WBCHSE Class 11th History Digonter Prosar Question and Answer 

ব্যাখামূলক | দিগন্তের প্রসার (ষষ্ঠ অধ্যায়) একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | WB Class 11 History Digonter Prosar Question and Answer:

  1. ডাইনিবিদ্যা বা ‘witchcraft’ কী?

Ans: ভূমিকা: মধ্যযুগে ইউরোপে ডাইনিবিদ্যা বা ডাকিনীবিদ্যা বা witchcraft বহুল প্রচলিত ছিল। অতিপ্রাকৃত শক্তির চর্চা ও কিছুটা জাদুবিদ্যা চর্চা ছিল এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য। অতিপ্রাকৃতি বা অলৌকিক শক্তিকে আয়ত্তে আনার ভাবনা থেকেই ডাইনি বিদ্যার চর্চার শুরু।

[১] উৎপত্তি: ইংরেজি witch শব্দটি উদ্‌ভূত হয়েছে wieca শব্দ থেকে, যার অর্থ যে জ্ঞানী অথবা যে নিগূঢ় জ্ঞান অর্জন করেছে। উইকা বা ‘wieca’ শব্দটির অন্য অর্থ হল-প্রাচীন পেগান ধর্মের উপাসক নারী ও পুরুষ। এই পেগান ধর্মের একটি উপাসনার পদ্ধতি হল ‘witchcraft’ যা আসলে উপাসক নারীদের নৃত্য। পরবর্তীতে খ্রিস্টান ধর্ম ইউরোপে প্রধান ধর্মে পরিণত হলে এই পদ্ধতিকে ডাইনিবিদ্যা বলে চিহ্নিত করা হয়।

[২] মূল বৈশিষ্ট্যসমূহ: প্রকৃতির নানা শক্তির ব্যবহার, অতিপ্রাকৃত বা অবাস্তব বা অতিপ্রাকৃত শক্তি নিয়ে চর্চা ডাইনিবিদ্যা চর্চার মূল বৈশিষ্ট্য। অতিপ্রাকৃত শক্তি নিয়ে মানুষের চিরন্তন আগ্রহ, ভয়। এই অবাস্তব বা অতিপ্রাকৃত বিদ্যাচর্চাকারীদের ডাইনি বা witch বলে অভিহিত করা হয়। উইচ (witch) মানেই নারী, এমনটা প্রথমদিকে ছিল না, কিন্তু ক্রমশ নারীরাই এই চর্চায় অগ্রণী হন।

[৩] ব্যাবহারিক দিক: উইকান নারীরা তন্ত্রমন্ত্র ও লতাপাতা, শিকড় ইত্যাদি দ্বারা নানান রোগ সারাতেন। এক্ষেত্রে তন্ত্রমন্ত্র বলতে আসলে সম্মোহন, টেলিপ্যাথি প্রভৃতি। তাঁরা ব্যবহার করতেন রোগী বা সমস্যাগ্রস্ত মানুষকে সারিয়ে তোলার স্বার্থে। বর্তমানে টেলিপ্যাথি, সম্মোহন, ফেইথহিলিং ইত্যাদি চিকিৎসাবিজ্ঞানে সাদরে গৃহীত হয়েছে যা মধ্যযুগীয় ইউরোপে ‘witch’-রা করে দেখিয়েছেন। ভেষজ, রাসায়নিক উপাদান দিয়ে ওষধি তৈরি করে তার দ্বারা জাদুর মতো মানুষের কষ্ট লাঘব করতেন। এটি আসলে প্রাক্-বিজ্ঞানের পর্যায়েই পড়ে।

মূল্যায়ন: খ্রিস্টান চার্চের কাছে পেগান ধর্মবিশ্বাসী উইকানদের যাবতীয় অভ্যাস ও চর্চা দোষনীয় গুপ্তবিদ্যা বলে গণ্য হয়। পঞ্চদশ শতক থেকে চার্চের নির্দেশে উইকানদের ডাইনি আখ্যা দিয়ে পুড়িয়ে মারা শুরু হয়। এটি witch hunt বা ডাইনি নিধন নামে ইতিহাসে কুখ্যাত। মধ্যযুগে ইউরোপে হাজার হাজার ডাইনি নিধন হয়েছে।

  1. টাকা লেখো: কোপারনিকাস

Ans: ভূমিকা: রেনেসাঁ কালপর্বে ইউরোপে জোতির্বিদ্যা চর্চার অগ্রদূত ছিলেন নিকোলাস কোপারনিকাস। ১৪৭৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি পোল্যান্ডের টোরান শহরে জন্মগ্রহণ করেন। পৃথিবীকেন্দ্রিক বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের ভ্রান্ত ধারণার বিরুদ্ধে প্রথম মতামত প্রকাশ করেন বিজ্ঞানী নিকোলাস কোপারনিকাস। নিজের জীবদ্দশায় তাঁর তত্ত্ব ব্যাপকভাবে বিশ্বাসের জায়গা তৈরি করতে না পারলেও পরিবর্তনের সূত্রপাতটা তিনি করতে পেরেছিলেন।

[১] সূর্যকেন্দ্রিক বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের ধারণা দান: প্লেটোর প্রাচীন ভ্রান্ত ধারণাকে ভুল প্রমাণিত করে কোপারনিকাস বলেন যে, বিশ্বব্রহ্মান্ডের কেন্দ্রে অবস্থান করছে সূর্য এবং সূর্যকে কেন্দ্র কোপারনিকাসের স্বাক্ষর করে পৃথিবীসহ অন্যান্য গ্রহ ও উপগ্রহগুলি নির্দিষ্ট বৃত্তাকার পথে সর্বদা ঘুরে চলেছে। শুক্র ও মঙ্গল গ্রহের মাঝখানে যে পৃথিবীর অবস্থান তাও কোপারনিকাস নির্দিষ্ট করে বলেন। সূর্যের চারিদিকে পৃথিবীর ঘোরা ছাড়াও পৃথিবীর অপর একটি গতি রয়েছে, যে কারণে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত হয়-এ ধারণাও তিনি ব্যক্ত করেন।

[২] গ্রন্থরচনা: কোপারনিকাস রচিত বিখ্যাত গ্রন্থটি হল ‘ডি রেভলিউশনিবাস অরবিয়াম সেলেসটিয়াম’ (‘De Revolutionibus Orbium Caelestium’) ১৫৪৩ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যুর কয়েকমাস আগে প্রকাশিত এই গ্রন্থেই তিনি বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের গঠন সম্পর্কে বৈপ্লবিক তত্ত্বের ব্যাখ্যা দেন। যদিও বহু আগে ১৫১৪ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ তাঁর ‘কমেন্টারিওলাস’ গ্রন্থে তিনি একই বিষয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করেছিলেন-তা ততটা প্রচারিত হয়নি।

[৩] নতুন পঞ্জিকা রচনা: কোপারনিকাসের মতবাদের ভিত্তিতে ১৫৫১ খ্রিস্টাব্দে প্রাশিয়ার নতুন পঞ্জিকা রচিত হয়েছিল।

[৪] উত্তরসূরিদের প্রেরণা: কোপারনিকাসের জীবিত থাকাকালীন সময়ে তাঁর সূর্যকেন্দ্রিক বিশ্বব্রহ্মাণ্ড তত্ত্ব মানুষকে বিশ্বাস করানো কঠিন ছিল কিন্তু তাঁর মৃত্যুর পর পরবর্তীকালে বুনো, টাইকো ব্রাহে, কেপলার প্রমুখ জ্যোতির্বিজ্ঞানী কোপারনিকাসের মতবাদের ওপর ভিত্তি করেই জ্যোতির্বিদ্যা চর্চাকে আরও বহুদুর এগিয়ে নিয়ে যান।

মূল্যায়ন: কোপারনিকাসের মাধ্যমেই আধুনিক ইউরোপে জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চার সূত্রপাত ও প্রসার ঘটে। এ কারণে তাঁকে ‘আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানের জনক’ বলা হয়।

  1. ‘কোপারনিকাসের বিপ্লব’ কী?

Ans: ভূমিকা: রেনেসাঁ কালপর্বের প্রখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী কোপারনিকাসকে আধুনিক জ্যোতির্বিদ্যার জনক বলে অভিহিত করা হয়। মহাবিশ্বের গঠন সম্পর্কে তাঁর মতবাদ এক আমূল যুগান্তর আনে। তিনি প্রথম সূর্যকেন্দ্রিক বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের তত্ত্ব প্রমাণ করেন।

[১] পৃথিবীকেন্দ্রিক বিশ্বব্রহ্মাণ্ড তত্ত্ব: প্রাচীন কাল থেকে শুরু করে পঞ্চদশ শতক পর্যন্ত ইউরোপে মহাবিশ্ব সম্পর্কে টলেমীয় ও অ্যারিস্টট্রীয় ধারণা প্রচলিত ছিল। এতে বলা হয়েছিল যে-বিশ্বব্রহ্মান্ডের কেন্দ্রস্থলে অবস্থান করছে পৃথিবী এবং পৃথিবীকে কেন্দ্র করে সূর্য, চন্দ্র ও অন্যান্য গ্রহনক্ষত্র আবর্তন করছে।

[২] সূর্যকেন্দ্রিক বিশ্বব্রহ্মাণ্ড তত্ত্ব: ১৫৪৩ খ্রিস্টাব্দে কোপারনিকাস তাঁর ‘De Revolutionibus Orbium Coelestium’ ‘জ্যোতিষ্কসমূহের কক্ষপথের আবর্তন’ নামক গ্রন্থে বলেন যে, বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের কেন্দ্রে পৃথিবী নয়, সূর্য অবস্থান করছে এবং পৃথিবীসহ অন্যান্য সব গ্রহ-উপগ্রহগুলি নির্দিষ্ট বৃত্তাকার কক্ষপথে সূর্যকে প্রচারিত বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সম্পর্কিত ভ্রান্ত ধারণাকে ভেঙে দেয় এবং জ্যোতির্বিদ্যা চর্চায় নতুন দিগন্ত প্রসারিত করে। তাই এই ঘটনা কোপারনিকান বিপ্লব বা কোপারনিকাসের বিপ্লব নামে খ্যাত। পথে সূর্যকে আবর্তন করে চলেছে। তাঁর এই তত্ত্ব সমস্ত প্রাচীন ধারণা, এমনকি খ্রিস্টান চার্চের

মূল্যায়ন: কোপারনিকাসের জীবিতকালে খুব কম জ্যোতির্বিজ্ঞানই তাঁর তত্ত্বকে বিশ্বাস ও সমর্থন করেছিলেন। কিন্তু তাঁর মৃত্যুর পর জিওরদানো ব্রুনো, কেপলার, নিউটন প্রমুখ বিজ্ঞানী কোপারনিকাসের প্রদর্শিত পথেই। প্রদর্শিত পথেই জ্যোতির্বিদ্যা চর্চার এক বৈপ্লবিক রূপান্তর ঘটিয়েছিলেন।

  1. কে ‘নাবিক হেনরি’ নামে পরিচিত ছিলেন? সামুদ্রিক অভিযানে তাঁর অবদান লেখো।

Ans: ভূমিকা: পঞ্চদশ শতক থেকে ইউরোপে যে ভৌগোলিক অভিযানের সূচনা হয়েছিল, তাতে অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করেছিল পোর্তুগাল, স্পেন, হল্যান্ড, ইংল্যান্ড প্রভৃতি দেশগুলি। এই ভৌগোলিক আবিষ্কারের যুগের কান্ডারিদের মধ্যে অন্যতম নাম নাবিক হেনরি বা হেনরি দ্য নেভিগেটর।

মূল পরিচয়: ইনফ্যান্টে হেনরিক ছিলেন পোর্তুগালের রাজা প্রথম জনের পুত্র-যুবরাজ হেনরি। তিনি ছিলেন একজন অত্যন্ত দক্ষ নাবিক। সমুদ্র অভিযানে তাঁর উৎসাহ ও সফলতার কারণে তাঁকে নাবিক হেনরি আখ্যা দেওয়া হয়।

প্রথম অভিযান: যুবরাজ হেনরির নেতৃত্বে প্রথম অভিযান প্রেরিত হয় আফ্রিকার উপকূল বরাবর। এই পর্বে পোর্টো স্যান্টো, মাদেইয়া, অ্যাজোর্স প্রভৃতি দ্বীপ আবিষ্কৃত হয়। আফ্রিকার পশ্চিম উপকূলে অভিযান: ১৪২৪ খ্রিস্টাব্দে নাবিক হেনরির নেতৃত্বে আফ্রিকার পশ্চিম উপকূলে বোজাদোর অন্তরীপ আবিষ্কৃত হয়। ১৪৪১ খ্রিস্টাব্দে ব্ল্যাঙ্কো অন্তরীপ, ১৪৪৩ খ্রিস্টাব্দে আরগুঁই উপসাগর আবিষ্কৃত হয়।

অন্যান্য অবদান: নাবিক হেনরি সমুদ্রপথের মানচিত্র তৈরি করেন। তিনি সাগ্রেস নামে একটি নৌবিদ্যালয় স্থাপন করেন। যদিও এ নিয়ে বিতর্ক বর্তমান।

মূল্যায়ন: দুঃসাহসী সামুদ্রিক অভিযানগুলির অন্যতম পথপ্রদর্শক ছিলেন নাবিক হেনরি।

  1. উত্তমাশা অন্তরীপ-এর নামকরণ কীভাবে হয়?

Ans: ভূমিকা: আফ্রিকা মহাদেশের দক্ষিণ উপকূলে অবস্থিত উত্তমাশা অন্তরীপ একটি বিশেষ ভৌগোলিক অবস্থানের জন্য প্রাচ্য-পাশ্চাত্য বাণিজ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল পঞ্চদশ-ষোড়শ শতকে।

[১] ঝড়ের অন্তরীপ আবিষ্কার: পোর্তুগিজ নাবিক বার্থেলোমিউ দিয়াজ নাবিক হেনরির দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে আফ্রিকা অভিযানে যাত্রা করেন। ১৪৮৮ খ্রিস্টাব্দে আফ্রিকা মহাদেশের দক্ষিণ-তম প্রান্তে পৌঁছোন যেখানে উত্তর সাগর ও ভারতমহাসাগর মিলিত হয়েছে। পথে অত্যন্ত ঝড়-ঝঞ্ঝা-বৃষ্টিপাত বিঘ্ন সৃষ্টি করেছিল বলে, দিয়াজ-এর নাম দেন ঝড়ের অন্তরীপ (Cape of Storm)|

[২] উত্তমাশা অন্তরীপ নামকরণ: বার্থেলোমিউ দিয়াজের বর্ণনা থেকে পোর্তুগালের তৎকালীন রাজা দ্বিতীয় জন আশা করেন যে, এই অন্তরীপ অতিক্রম করে ভারতমহাসাগরের পথে ভারতে পৌঁছোনো সম্ভব হবে। তাই ১৪৮৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি এর নাম দেন উত্তমাশা অন্তরীপ (Cape of Good Hope) I

মূল্যায়ন: দিয়াজের এই অভিযান সম্পর্কে খুব বেশি তথ্য পাওয়া যায় না। তবে এ কথা অনস্বীকার্য যে, পরবর্তীকালে তাঁর দেখানো পথেই ভারত মহাসাগর পেরিয়ে প্রাচ্য-পাশ্চাত্য যোগাযোগের জলপথ আবিষ্কৃত হয়।

  1. টীকা লেখো: ম্যাগেলান

Ans: ভূমিকা: পঞ্চদশ-ষোড়শ শতকে যে দুঃসাহসিক অভিযাত্রীরা অজানা সমুদ্রে পাড়ি দিয়ে নতুন আবিষ্কারে শামিল হয়েছিলেন; তাঁদের মধ্যে স্পেনের নাবিক ফার্দিনান্দ ম্যাগেলান অগ্রগণ্য।

[১] যাত্রা শুরু: বিজ্ঞানী গ্যালিলিওর আবিষ্কার ‘পৃথিবী গোলাকার’-এ কথাকে প্রমাণ করার উদ্দেশ্যে ১৫১৯ খ্রিস্টাব্দে স্পেনের সোভিল বন্দর থেকে পাঁচটি জাহাজ নিয়ে যাত্রা শুরু করেন।

[২] মহাসাগরের নামকরণ: মালাক্কা পেরিয়ে দক্ষিণ মহাসাগরে পৌঁছে তার শান্ত ঢেউ দেখে নামকরণ করেন প্রশান্ত মহাসাগর।

[৩] ফিলিপাইন দ্বীপপুঞ্জ আবিষ্কার: দক্ষিণ আমেরিকার দক্ষিণ প্রান্ত ও প্রশান্ত মহাসাগর অতিক্রম করে ম্যাগেলান এক নতুন দ্বীপপুঞ্জ আবিষ্কার করেন। স্পেনের যুবরাজ ফিলিপের নামানুসারে এর নাম দেন ফিলিপাইন দ্বীপপুঞ্জ।

[৪] যাত্রা সমাপ্তি: ১৫২১ খ্রিস্টাব্দে ম্যাকটানের যুদ্ধে ম্যাগেলান ফিলিপাইনের স্থানীয় অধিবাসীদের হাতে নিহত হন। তাঁর সহযাত্রী জুয়ান সেবাস্টিয়ান এলক্যানো ম্যাগেলানের অসম্পূর্ণ কাজ সম্পূর্ণ করেন এবং ১৫২২ খ্রিস্টাব্দে স্পেনে ফিরে আসেন।

মূল্যায়ন: এইভাবে ম্যাগেলানের উদ্যোগেই প্রথম জলপথে পৃথিবী প্রদক্ষিণ সম্ভব হয়। তাই তিনি নিজে শেষপর্যন্ত না-থাকলেও ম্যাগেলানকেই প্রথম জলপথে পৃথিবী প্রদক্ষিণকারী বলা হয়।

  1. কনকুইসটেডর্স (Conquistadors) কাদের বলা হয়?

Ans: ভূমিকা: পঞ্চদশ শতক থেকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ যে ভৌগোলিক অভিযান শুরু করেছিল, সেই সংক্রান্ত একটি শব্দ হল কনকুইসটেডর্স। যার অর্থ-নতুন দেশ বিজয়ী বা দখলকারী। মূলত পঞ্চদশ-সপ্তদশ শতকের স্পেনীয় এবং পোর্তুগিজ নাবিকদের মধ্যে যারা নতুন অঞ্চল দখল করে নিজের দেশের উপনিবেশ স্থাপন করেন তাদেরই ‘কনকুইসটেডর্স’ বলা হয়।

[১] বৈশিষ্ট্য: অন্যান্য সকল অভিযাত্রী আবিষ্কারকদের থেকে কনকুইসটেডর্সদের মূল বৈশিষ্ট্যগত পার্থক্য হল-এরা অজানা অঞ্চল আবিষ্কার করে সেখানকার স্থানীয় মানুষ ও সভ্যতাকে অস্ত্রবলে পরাভূত এমনকি ধ্বংস করে, লুটপাট করে নিজেদের সাম্রাজ্যভুক্ত করেছিল।

[২] কোর্টেসের অভিযান: স্পেনীয় নাবিক হার্নান কোর্টেস ১৫১৯ খ্রিস্টাব্দে মেক্সিকো অভিযান করে সেখানকার প্রাচীন অ্যাজটেক সভ্যতা ধ্বংস করেন ও অসংখ্য আদিবাসীদের নির্বিচারে হত্যা করেন। ১৫২৫ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে দক্ষিণ ও মধ্য আমেরিকার বিস্তীর্ণ অঞ্চল স্পেনীয় সাম্রাজ্যভুক্ত করেন কোর্টেস।

[৩] পিজারোর অভিযান: স্পেনের ফ্রান্সিসকো পিজারো ১৫৩২ খ্রিস্টাব্দে পেরু অভিযান করেন এবং সেখানকার আদি অধিবাসী ইনকাদের নির্বিচারে হত্যা করে ইনকা সভ্যতা ধ্বংস করেন।

মূল্যায়ন: স্পেনের পেড্রো আলভারাডো, ডিয়েগো আলমারগো, পোর্তুগিজ আলবুকার্ক সহ বহু কনকুইসটেডর্স তাদের অস্ত্রবলে এশিয়া, আফ্রিকা ও আমেরিকার বহু অঞ্চলকে উপনিবেশে পরিণত করেন।

  1. প্রযুক্তি বিপ্লব সম্পর্কে লেখো।

Ans: ভূমিকা: খ্রিস্টীয় পঞ্চদশ-ষোড়শ শতকে ইউরোপে প্রকৃত আধুনিক বিজ্ঞানচর্চার সূত্রপাত ঘটে। আধুনিক বিজ্ঞানের প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে প্রযুক্তিবিদ্যার ক্ষেত্রেও এক যুগান্তকারী অগ্রগতি ঘটে। প্রযুক্তিবিদ্যার এই অভূতপূর্ব উন্নতি বা অগ্রগতিকে সাধারণভাবে প্রযুক্তি বিপ্লব বলা হয়। কৃষি, শিল্প, সামরিক বা যুদ্ধাস্ত্র নির্মাণ প্রভৃতি নানা ক্ষেত্রে এসময় প্রযুক্তিগত কলাকৌশলের বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটে।

[১] কৃষিপ্রযুক্তির অগ্রগতি: পঞ্চদশ-ষোড়শ শতকে ইউরোপে উন্নত যন্ত্রপাতির আবিষ্কার ও ব্যবহার কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন ঘটায়। এসময় পুরাতন যন্ত্রপাতির বদলে লোহার তৈরি ব মজবুত যন্ত্রপাতির (লাঙল, শস্য মাড়াইয়ের যন্ত্র ইত্যাদি) আবিষ্কার কৃষিক্ষেত্রে অভূতপূর্ব অগ্রগতি ঘটায়। নিবিড় পদ্ধতিতে চাষাবাদ এবং জমিতে উন্নত সার প্রয়োগের ফলে কৃষি উৎপাদন পূর্বের তুলনায় বহুগুণ বৃদ্ধি পায়।

[২] শিল্পপ্রযুক্তির অগ্রগতি: ইউরোপে প্রযুক্তি বিপ্লবের অগ্রগতি শিল্পক্ষেত্রেও এক যুগান্তকারী পরিবর্তন নিয়ে আসে। এসময় বস্ত্র ও জাহাজ নির্মাণ শিল্পের নানা উন্নত যন্ত্রপাতি আবিষ্কৃত হয়। এ ছাড়াও ধাতুশিল্প ও খনিজ উত্তোলনেও প্রযুক্তিগত উন্নতি লক্ষ করা যায়।

[৩] সামরিক ক্ষেত্রে প্রযুক্তির অগ্রগতি: পঞ্চদশ শতকের মাঝামাঝি সময় থেকেই ইউরোপে সামরিক ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত উন্নতি ঘটে। বারুদের ব্যবহার, উন্নতমানের কামান ও বন্দুকের আবিষ্কার, নতুন দুর্গ নির্মাণের কৌশল প্রভৃতি ইউরোপে সামরিক ক্ষেত্রে এক অভূতপূর্ব বিপ্লবের সূচনা করে।

মূল্যায়ন: সবশেষে বলা যায় যে, প্রযুক্তিগত বিপ্লব আধুনিক ইউরোপের জয়যাত্রার সূচনা করেছিল।

  1. কাগজের আবিষ্কার সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত টীকা লেখো।

Ans: ভূমিকা: শিক্ষা-সংস্কৃতির সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে যুক্ত হল কাগজ। বর্তমান পৃথিবীতে কাগজের বই-এর বহুল ব্যবহার দেখে কল্পনা করাও সম্ভব নয় একসময় কাগজ ছাড়াই বই ছাপা হত। তাই ধাপে ধাপে কাগজের আবিষ্কারের অগ্রগতি কীভাবে হল তা জানা প্রয়োজন।

[১] কাগজ আবিষ্কারের আগে: চিনে মুদ্রণ পদ্ধতি বহু পূর্বে চালু হলেও বই ছাপার কাজে কাগজ ব্যবহৃত হত না। কারণ কাগজ তখনও একটি মানুষের অজানা বিষয় ছিল। তার পরিবর্তে ‘পার্চমেন্ট’ নামক একপ্রকার পাতলা চামড়া (পশুর) ব্যবহার করা হত।

[২] পার্চমেন্টের ব্যবহারের সীমাবদ্ধতা: পার্চমেন্ট-এ মুদ্রণ অত্যন্ত ব্যয়বহুল ছিল। একটি বাইবেল মুদ্রণের জন্য যত পরিমাণ পার্চমেন্ট প্রয়োজন হত, তার জন্য প্রায় ৩০০টি ভেড়া ও ১৪০টি বাছুরের চামড়া দরকার হত। তাই বিপুল ব্যয়ের জন্য বেশি পরিমাণে বই ছাপা সম্ভব ছিল না।

[৩] কাগজ তৈরির প্রযুক্তি আবিষ্কার: খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় শতকে চিনে প্রথম কাগজ তৈরির প্রযুক্তি আবিষ্কৃত হয়। মূলত ছেঁড়া কাপড় ও উদ্ভিদ তত্ত্ব বিশেষ করে তুঁত গাছের ছাল একসঙ্গে মিশিয়ে কাগজ তৈরির পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়। এটি মুদ্রণশিল্পের ক্ষেত্রে যুগান্তর সৃষ্টি করে।

[৪] চিন থেকে আরবে কাগজের প্রচলন: চিন থেকে কাগজ তৈরির কৌশল আরবে আসে ৭৫১ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ, যখন তালাসের যুদ্ধে বেশ কিছুজন চিনা কাগজ কারিগর আরবদের হাতে বন্দি হয়।

[৫] কাগজ তৈরির প্রযুক্তির ইউরোপে প্রবেশ: খ্রিস্টীয় দ্বাদশ শতক নাগাদ আরবদের থেকে প্রথমে স্পেন ও পরে সমগ্র ইউরোপে কাগজ তৈরির কৌশল ছড়িয়ে পড়ে।

মূল্যায়ন: এইভাবে কাগজ আবিষ্কার ও তার বহুল প্রচলন ব্যাপক পরিমাণে বই ছাপতে সাহায্য করে এবং মুদ্রিত বই-এর দামও কম হওয়ায় বেশি পরিমাণে মানুষ বই পড়তে সমর্থ হন।

  1. জোহানেস গুটেনবার্গ কে ছিলেন? আধুনিক মুদ্রণযন্ত্রের আবিষ্কারে তাঁর অবদান লেখো।

Ans: আধুনিক মুদ্রণযন্ত্রের আবিষ্কারক ছিলেন জার্মানির বিজ্ঞানী জোহানেস গুটেনবার্গ।

গুটেনবার্গের অবদান: পঞ্চদশ শতকে ইউরোপে প্রথম আধুনিক মুদ্রণযন্ত্র আবিষ্কৃত হয়। আধুনিক মুদ্রণযন্ত্র আবিষ্কার করেন জার্মানির জোহানেস গুটেনবার্গ। জার্মানির মেইন্জ শহরে গুটেনবার্গ জন্মগ্রহণ করেন। প্রথম জীবনে তিনি ছেলেন একজন স্বর্ণকার। দীর্ঘকাল ধরে নানা পরীক্ষানিরীক্ষার মধ্য দিয়ে তিনি পঞ্চদশ শতকের মধ্যভাগে আধুনিক মুদ্রণযন্ত্র আবিষ্কার করেন।

[১] ধাতব টাইপ আবিষ্কার: পেশাগতভাবে স্বর্ণকার জার্মানির অধিবাসী গুটেনবার্গ ১৪৩৯ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ ধাতব টাইপের উদ্ভাবন করে তা দিয়ে মুদ্রণ করা শুরু করেন।

[২] মুদ্রণ বিষয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা: গুটেনবার্গ নিরলসভাবে মুদ্রণ ব্যবস্থার উন্নতির জন্য নানা পরীক্ষানিরীক্ষা করেন। তৈলাক্ত কালি ও কাঠের মুদ্রণ প্রেস ব্যবহার করে মুদ্রণ ব্যবস্থাকে আরও এক ধাপ উন্নত করেন।

[৩] আধুনিক মুদ্রণযন্ত্র আবিষ্কার: ১৪৫০ খ্রিস্টাব্দে অবশেষে গুটেনবার্গ জার্মানির মেইজ শহরে সর্বপ্রথম মুদ্রণযন্ত্র স্থাপন করেন। এজন্য তিনি বেশ কিছু অর্থ ধার করেছিলেন।

[৪] প্রথম মুদ্রণ: গুটেনবার্গের মুদ্রণযন্ত্রে প্রথম একটি কবিতা মুদ্রিত হয়। কিন্তু পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থ হিসেবে প্রথম ছাপা হয় বাইবেল, যাতে ৪২টি লাইন ছিল। এজন্য একে ‘৪২ লাইনের বাইবেল’ বলা হয়। এটিকে ‘গুটেনবার্গ বাইবেল’ও বলা হয়।

[৫] মুদ্রণের প্রসার: জার্মানি থেকে গুটেনবার্গের আধুনিক মুদ্রণযন্ত্র ও মুদ্রণপ্রযুক্তি ইউরোপের বিভিন্ন স্থানে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ১৫০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ইউরোপের বিভিন্ন ছাপাখানা থেকে ষাট লক্ষেরও বেশি বই ছাপা হয়।

মূল্যায়ন: মুদ্রণযন্ত্রের আবিষ্কারের মাধ্যমে গুটেনবার্গ আধুনিক সভ্যতার সমস্ত দিককেই আলোকিত করেছেন। এই কারণে ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে ‘টাইম লাইফ’ ম্যাগাজিন গুটেনবার্গের মুদ্রণযন্ত্র আবিষ্কারকে দ্বিতীয় সহস্রাব্দের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার বলে আখ্যা দিয়েছে।

  1. ‘মুদ্রণ বিপ্লব’ বলতে কী বোঝ?

Ans: ভূমিকা: পঞ্চদশ শতকে ইউরোপে এক যুগান্তকারী ঘটনা হল মুদ্রণযন্ত্রের আবিষ্কার। জার্মানির জোহানেস গুটেনবার্গ প্রথম আধুনিক মুদ্রণযন্ত্র আবিষ্কার করেন। মুদ্রণযন্ত্রের আবিষ্কারের ফলে ইউরোপে শিক্ষা, ধর্ম, সমাজ ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে যে যুগান্তকারী পরিবর্তনের সূচনা হয়, তা মুদ্রণ বিপ্লব নামে পরিচিত।

প্রেক্ষাপট: মধ্যযুগের শেষ দিকে ইউরোপে কাগজের বহুল প্রচলন এবং মুদ্রণের ক্ষেত্রে নানা প্রযুক্তিগত আবিষ্কার মুদ্রণ বিপ্লবের প্রেক্ষাপট রচনা করে। গুটেনবার্গের পাশাপাশি আধুনিক মুদ্রণপ্রযুক্তি আবিষ্কারের ক্ষেত্রে পিটার শোফার ও জোহান ফুস্টের অবদানও ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

প্রভাব: মুদ্রণ বিপ্লবের ফল ছিল সুদূরপ্রসারী। এই বিপ্লব শিক্ষা সংস্কৃতির পাশাপাশি জ্ঞান-বিজ্ঞানের জগতেও এক যুগান্তকারী পরিবর্তন বা অগ্রগতির সূচনা করে। মুদ্রণযন্ত্রের দ্বারা বাইবেল অনুদিত হওয়ায় পোপ-যাজকদের অনাচার-দুর্নীতি সম্পর্কে সাধারণ মানুষ জানতে পারে। ফলে ইউরোপে ধর্মসংস্কার-এর পথ সুগম হয়। অধ্যাপক ই এফ রাইস আধুনিক যুগের কম্পিউটারের সঙ্গে মুদ্রণ বিপ্লবের তুলনা করেছেন।

  1. বিজ্ঞান কাকে বলে? আধুনিক বিজ্ঞানের সূচনা কীভাবে ঘটে?

Ans: ভূমিকা: আধুনিক মানবসভ্যতা একান্তভাবেই বিজ্ঞান নির্ভর। বিজ্ঞানের কল্যাণেই মানুষের জীবনযাত্রা আমূল বদলে গেছে। যে দেশ বিজ্ঞানে যত বেশি উন্নত, সেই দেশ ও তার জনগণ শক্তি, সম্পদ, শিক্ষা ইত্যাদি বিষয়ে তত উন্নত।

বিজ্ঞানের সংজ্ঞা: বিজ্ঞান বলতে সাধারণভাবে বলা হয় বিশেষ জ্ঞান আক্ষরিক অর্থে বিজ্ঞান বলতে বোঝায় তত্ত্ব ও তথ্যের জ্ঞান। (Knowledge of principles of facts)। আভিধানিক অর্থে বিজ্ঞান হল ‘সঞ্চিত ও সর্বজনগ্রাহ্য জ্ঞান, যা সাধারণ সত্য ও সাধারণ নীতির আবিষ্কারের ভিত্তিতে সুসংবদ্ধ ও সুশৃঙ্খল সর্বজনগ্রাহ্য জ্ঞান।’ স্যার উইলিয়াম ডাম্পিয়ারের মতে, বিজ্ঞান হল প্রাকৃতিক ঘটনাবলি ও তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক সম্বন্ধে শৃঙ্খলাবদ্ধ জ্ঞান। তবে আধুনিক বিজ্ঞানের অনিবার্য শর্ত হল ব্যাপক পরীক্ষানিরীক্ষা এবং পর্যবেক্ষণ (Experiments and observation)।

আদি বিজ্ঞান: আধুনিক বিজ্ঞানের সূচনা পঞ্চদশ শতকের পরবর্তীকালে। কিন্তু তার আগেও বিজ্ঞান সম্পর্কিত জ্ঞানচর্চা জারি ছিল। এই আদি বিজ্ঞানের সূচনা ও চর্চা গ্রিস, আরব, চিন, জাপান, ভারতবর্ষে সাধিত হয়েছিল।

আধুনিক বিজ্ঞান: আধুনিক বিজ্ঞানের সূচনাকাল হিসেবে ইউরোপের রেনেসাঁ পর্বকে চিহ্নিত করা হয়। আদি বিজ্ঞানচর্চার সঙ্গে আধুনিক বিজ্ঞানচর্চার একটা সূক্ষ্ম প্রভেদ স্পষ্ট। আদি বিজ্ঞান ভাবনা, ধর্মতত্ত্ব বা দর্শন ভাবনা অথবা উভয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত ছিল। গ্রিসে বিজ্ঞান ছিল দর্শনশাস্ত্রের একটি অংশ। কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞানের একটি স্বাধীন সত্ত্বা বর্তমান। পরীক্ষানিরীক্ষা এবং গভীর পর্যবেক্ষণ দ্বারাই আধুনিক বিজ্ঞানের সত্য প্রতিষ্ঠা করা হয়। নবজাগরণের যুগেও পরবর্তীকালে এই পরীক্ষামূলক ও পর্যবেক্ষণমূলক বিজ্ঞানচর্চার সূত্রপাত হয়েছে, যাকে – আমরা আধুনিক বিজ্ঞান বলে চিহ্নিত করি।

  1. অপরসায়নের উৎপত্তি কীভাবে হয়?

Ans: ভূমিকা: আধুনিক বিজ্ঞানের একটি অন্যতম শাখা হল রসায়নবিদ্যা। প্রাচীন কাল থেকেই ব্যাবহারিক দিক থেকে রসায়নবিদ্যার চর্চা হলেও তা কখনোই বিজ্ঞান ও যুক্তিনির্ভর ছিল না। প্রাচীন কাল থেকে মধ্যযুগ পর্যন্ত সময়ে ইউরোপে যুক্তি ও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাহীন যে ব্যাবহারিক রসায়নবিদ্যা চর্চিত হত, তা অপরসায়ন নামে পরিচিত। আধুনিক রসায়নবিদ লাইবিন বলেছেন, “অপরসায়নও একটি বিজ্ঞান এবং পরীক্ষানিরীক্ষার মধ্য দিয়েই তার অগ্রগতি হয়েছে।”

[১] শব্দের ব্যাখ্যা: প্রাচীন মিশরীয় শব্দ খেম (Khem) থেকে গ্রিক খেমিয়া (Khemia) শব্দটির উদ্ভব হয়েছে। এই ‘খেমিয়া’ আবার আরবদের উচ্চারণে আলকিমিয়ায় পরিণত হয়। আরবীয় শব্দ আলকিমীয় থেকে ইংরেজি শব্দ অ্যালকেমি (Alchemy) শব্দটির উৎপত্তি হয়। এরই বাংলা প্রতিশব্দ অপরসায়ন।

[২] উৎপত্তি: প্রাচীন মিশরীয় ধর্মবিশ্বাস থেকেই অপরসায়নের উৎপত্তি হয় বলে মনে করা হয়। মৃত্যুর পরেও মানুষের আর একটি জীবন থাকে-প্রাচীন মিশরীয়দের এই বিশ্বাস থেকে তারা বিশেষ ব্যক্তিদের মৃতদেহ সংরক্ষণ করে মমি তৈরি করত। এই মমি তৈরির পদ্ধতি রীতিমতো রসায়নের প্রয়োগ দ্বারাই সম্ভব হয়েছিল। এইভাবে অপরসায়নের পথ চলা শুরু হয়।

[৩] প্রসার: ৩৩২ খ্রিস্টপূর্বাব্দে আলেকজান্ডারের মিশর জয়ের মাধ্যমে মিশর থেকে গ্রিসে অপরসায়ন চর্চা প্রবেশ করে। খ্রিস্টীয় সপ্তম শতকে আরবদের মিশর জয়ের পর। আরবে অপরসায়নচর্চা শুরু হয়। সেখান থেকে অষ্টম শতকে প্রথমে স্পেন এবং পরবর্তীকালে সমগ্র ইউরোপে অপরসায়ন চর্চা প্রসারিত হয়।

মূল্যায়ন: অ্যারিস্টলের ভ্রান্ত ধারণার ওপর ভরসা রেখেই ইউরোপে রসায়নবিদ্যার চর্চা বহুল প্রচলিত হয়, যা অপরসায়নবিদ্যা নামে পরিচিত। অ্যালকেমিস্ট বা অপরসায়নবিদরা রোগ নিরাময় করতেন কিংবা নিম্নমানের ধাতুকে উচ্চমানের ধাতুতে রূপান্তরিত করতেন। কিন্তু এর কারণ ব্যাখ্যা করতে পারতেন না।

  1. অপরসায়নের সঙ্গে যুক্ত বিষয়সমূহ সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ধারণা দাও।

Ans: ভূমিকা: প্রাচীন কাল থেকে মধ্যযুগ পর্যন্ত যে যুক্তিহীন ও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাহীন রসায়নবিদ্যার চর্চা ইউরোপে জনপ্রিয় ছিল, তাকে অপরসায়নবিদ্যা বা অ্যালকেমি বলে। এর সঙ্গে যুক্ত বিষয়গুলি হল-

[১] জ্যোতিষচর্চা: জ্যোতিষ চর্চায় ব্যাবহারিক ধাতুগুলিকে পৃথক পৃথক গ্রহের সঙ্গে বিশেষ সম্পর্কযুক্ত বলে মনে করা হত। পঞ্চদশ শতকের আগে পর্যন্ত ইউরোপে অপরসায়ন ও জ্যোতিষচর্চা অঙ্গাঙ্গিভাবে যুক্ত ছিল। অপরসায়নবিদরা বিশ্বাস করতেন, জ্যোতিষশাস্ত্র অনুযায়ী বিভিন্ন বিক্রিয়ার জন্য গ্রহনক্ষত্রের অবস্থান ও সময় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ; নচেৎ তাঁরা সাফল্য পাবেন না।

[২] রহস্যবাদ: এই মতবাদ অনুযায়ী, প্রকৃতিতে বিভিন্ন ধরনের গুপ্তশক্তি রয়েছে, যে শক্তিগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে মানবসমাজ উপকৃত হবে তাঁরা মানুষের জীবনকে অমর করার গুপ্তসাধনায় মগ্ন থাকতেন লোকচক্ষুর অন্তরালে। প্রকৃতির অজানা বিষয়গুলির মধ্যেকার রহস্যকে তাঁরা ধরতে চাইতেন।

[৩] সর্বপ্রাণবাদ: পৃথিবীতে সকল বস্তুরই প্রাণ আছে-এই কাল্পনিক ধারণাই সর্বপ্রাণবাদীদের মূল প্রতিপাদ্য ছিল। অপরসায়নবিদরা মনে করতেন পৃথিবীর সব বস্তুর মধ্যেই মহাজাগতিক আধ্যাত্মিক শক্তির অংশ রয়েছে। তারা বিশ্বাস করতেন বিভিন্ন পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে ধাতুগুলিও আধ্যাত্মিকতার চরম সীমায় পৌঁছোয় এবং আরও মূল্যবান ধাতুতে পরিণত হয়।

[৪] মূল্যবান ধাতু তৈরির চেষ্টা: সিসা বা অন্য কোনো সাধারণ ধাতুকে রাসায়নিক প্রক্রিয়ার দ্বারা বহুমূল্য ধাতু বিশেষ করে সোনায় রূপান্তরিত করার নিরলস চেষ্টা করেছিলেন অপরসায়নবিদরা। এভাবেই বিভিন্ন অপরসায়নবিদ বিভিন্ন ধাতু আবিষ্কার করেন।

মূল্যায়ন: সবশেষে বলা যায় যে, যুক্তি বা আধুনিক বিজ্ঞানের ছোঁয়া না-থাকলেও আল আমিনি, অ্যালবার্ট ম্যাগনাস প্রমুখ অপরসায়নবিদদের চর্চার ফলেই পরবর্তীকালে আধুনিক বিজ্ঞানচর্চার ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়েছিল। অপরসায়নবিদরা নিম্নমানের ধাতুকে উচ্চমানের ধাতুতে পরিণত করতেন। নানা রাসায়নিক উপাদানের সাহায্যে রোগ নিরাময়ও করতেন। যদিও তাঁরা এগুলির কার্যকারণ ব্যাখ্যা দিতে পারতেন না। তথাপি এগুলি আধুনিক রসায়নবিদ্যার চর্চার অগ্রগতিতে সাহায্য করেছিল বলা যায়। তা ছাড়া মানুষের অমরত্ব লাভের জন্য অপরসায়নবিদদের নিরলস প্রচেষ্টা আসলে প্রাকৃতিক বস্তুগুলির ক্রিয়া-বিক্রিয়ার বৈজ্ঞানিক সম্ভাবনাকেই তুলে ধরেছিল।

  1. অপরসায়নচর্চার গুরুত্ব ব্যাখ্যা করো।

Ans: ভূমিকা: অপরসায়নচর্চার কোনো যথার্থ বৈজ্ঞানিক ভিত্তি না-থাকলেও বিভিন্ন ব্যাবহারিক কারণে ও ভবিষ্যৎ বিজ্ঞানচর্চার ক্ষেত্র প্রস্তুতিতে এর গুরুত্ব অস্বীকার করা যায় না।

[১] আধুনিক বিজ্ঞানের বীক্ষণাগার: অপরসায়নবিদ্যার সংস্কার করেই তা থেকে আধুনিক রসায়নের উৎপত্তি ঘটে। তাই অনেকে অপরসায়নবিদ্যাকে আধুনিক বিজ্ঞানের বীক্ষণাগার বলে থাকেন। তাঁরা প্রাকৃতিক বিভিন্ন পদার্থকে নিয়ে নানা মিশ্রণ তৈরি করে ব্যাবহারিক ক্ষেত্রে তা প্রয়োগ করতেন, যা মানুষের উপকারে লাগত। এইভাবেই পরীক্ষামূলক বিজ্ঞানের ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়।

[২] নতুন আবিষ্কার: অপরসায়নবিদরাই সর্বপ্রথম বারুদ ও ধাতুবিদ্যা সংক্রান্ত নানা কৌশল আবিষ্কার করেন। প্যারাসেলসাস দস্তা নামে ধাতব মৌল আবিষ্কার করেন। তারাই প্রথম অ্যান্টিমনি, আর্সেনিক ও বিসমাথ ইত্যাদি শনাক্ত করেন।

[৩] চিকিৎসায় প্রাকৃতিক উপাদানের ব্যবহার: অপরসায়নবিদরা প্যানাসিয়া (Panacea) নামে একটি ওষুধ দিতেন মানুষকে যা সর্বরোগহর বলে দাবি করা হত। বাস্তবে তা প্রায় সবরকম রোগের প্রভাব কমাতেও পারত। অপরসায়নবিদ প্যারাসেলসাস প্লেগ মুক্তির জন্য যে কবচ দিতেন তাতে কোনোভাবেই বিজ্ঞানসম্মত ছিল না। কিন্তু তাঁর অনুগামীরা বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করতেন। আসলে তা আধুনিক রসায়ন চর্চার ভূমিকা প্রস্তুত করে।

মূল্যায়ন: উক্ত আলোচনার ভিত্তিতে বলা যায় যে, জাদুবিদ্যার মাধ্যমে হলেও প্রকৃতিগতভাবে অপরসায়নচর্চা আধুনিক বিজ্ঞানের অভিমুখ নির্দেশ করেছিল। আধুনিক রসায়নবিদ্যার অগ্রগতিতে অপরসায়ন বিদ্যার অবদান অনস্বীকার্য।

  1. ‘প্রোটো সায়েন্স’ বা ‘প্রাক্-বিজ্ঞান’ বলতে কী বোঝ?

Ans: ভূমিকা: অপরসায়নবিদ্যার কোনো বাস্তব বৈজ্ঞানিক ভিত্তি ছিল না। প্রাচীন থেকে মধ্যযুগীয় ইউরোপে যুক্তিহীন অপরসায়নচর্চা এবং জাদুবিদ্যা প্রায় সমার্থক ছিল। পরবর্তীকালে এই জাদুবিদ্যার সংস্কার করেই আধুনিক বিজ্ঞানের সূচনা হয়েছিল বলে মনে করা হয়। তাই জাদুবিদ্যাকে ‘Proto Science’ বা ‘প্রাক্-বিজ্ঞান’ বলা হয়।

[১] শব্দের উৎপত্তি: গ্রিক শব্দ প্রোটো (Proto)-র অর্থ প্রথম। অর্থাৎ প্রাথমিক স্তরে যে চর্চার মাধ্যমে আধুনিক বিজ্ঞানের উদ্ভব হয়, তা সাধারণভাবে প্রাক্-বিজ্ঞান (Proto Science) নামে পরিচিত।

[২] প্রাক্-বিজ্ঞানের ভিত্তি: টমাস কুনের মতে, প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় ইউরোপের দর্শন চর্চা, ওষধি চর্চা, কারুশিল্প চর্চা ইত্যাদি সকল কিছুতে যে অজানা অথচ জাদুর মতো কার্যকরী বস্তুসকল বা পদ্ধতি ব্যবহৃত হত, তাই-ই ক্রমাগত ‘অভ্যাস-পর্যবেক্ষণ-সিদ্ধান্ত’-এই চক্রের মাধ্যমে ধীরে ধীরে আধুনিক বিজ্ঞানের দিকে অগ্রসর হয়।

মূল্যায়ন: পঞ্চদশ শতক পর্যন্ত অপরসায়নের দ্বারা (যা জনসমাজে জাদুবিদ্যার সমার্থক ছিল) রোগ প্রতিকার থেকে শুরু করে ব্যাবহারিক অনেক সমস্যার সমাধান সম্ভব হত। অপরসায়নের ক্রমাগত চর্চা ও পর্যবেক্ষণই পরবর্তীকালে আধুনিক বিজ্ঞানের সূচনা করে।

রচনাধর্মী | দিগন্তের প্রসার (ষষ্ঠ অধ্যায়) একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | WB Class 11 History Digonter Prosar Descriptive Question and Answer:

1. ইউরোপে মুদ্রণ বিপ্লবের পটভূমি আলোচনা করো।

Ans: ভূমিকা: খ্রিস্টীয় পঞ্চদশ শতকে ইউরোপে আধুনিক মুদ্রণ- যন্ত্রের আবিষ্কারের ফলে শিক্ষা, ধর্ম, সমাজ ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে যে যুগান্তকারী পরিবর্তনের সূচনা হয়েছিল, তা মুদ্রণ বিপ্লব নামে পরিচিত। তবে ইউরোপে ছাপা বই-এর বিপুল পরিমাণ বৃদ্ধিকেই সাধারণভাবে মুদ্রণ বিপ্লব বলা হয়ে থাকে। যে বিষয়গুলি মুদ্রণ বিপ্লবের পটভূমি তৈরি করেছিল, সেগুলি হল-

[১] কাগজের ব্যবহার: মুদ্রণযন্ত্র আবিষ্কারের আগে হাতে লেখা পুথি যা পার্চমেন্ট-এর ওপর লেখা হত, যা ছিল বেশ ব্যয়বহুল এবং সংখ্যায় খুবই অল্প। চিন থেকে আরবে এবং সেখান থেকে ইউরোপে কাগজ তৈরির পদ্ধতির প্রচলন ঘটলে ইউরোপে বই ছাপার কাগজ অনেক সহজ হয়।

[২] ছাপার ব্যয় হ্রাস: পার্চমেন্টে (পশুর চামড়া) বই ছাপানো ছিল অত্যন্ত সময়সাধ্য ও ব্যয়বহুল। কাগজের ব্যবহার ঘটলে ব্যয় অনেক কমে যায়। কারণ পার্চমেন্টের থেকে অনেক কম ছিল কাগজের দাম। ফলে স্বল্প সময়ে কম খরচে বেশি পরিমাণে বই ছাপা সম্ভব হয়।

[৩] মুদ্রণযন্ত্র আবিষ্কার: ১৪৫০ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ জার্মানির জোহানেস গুটেনবার্গ আধুনিক মুদ্রণযন্ত্র আবিষ্কার করলে মুদ্রণশিল্পে যুগান্তকারী বিপ্লব ঘটে। জার্মানির মেইন্জ শহর থেকে শীঘ্রই জার্মানির অন্যান্য শহরে এবং তারপর ইউরোপের সর্বত্র মুদ্রণযন্ত্র বা ছাপাখানা তৈরি হতে থাকে। ফলে বহুল পরিমাণে বহুসংখ্যক মানুষের হাতে পৌঁছে যায়।

[৪] বইয়ের মানের উন্নতি: ধাতুশিল্পে অগ্রগতির ফলে সুক্ষম ধাতব টাইপের ব্যবহার, তৈলাক্ত কালির ব্যবহার, প্রুফ সংশোধনের প্রথা প্রচলন ইত্যাদি ছাপা বই-এর মান উন্নত, নির্ভুল ও নিখুঁত করে।

[৫] ছাপা বইয়ের চাহিদা বৃদ্ধি: উন্নত, সুদৃশ্য ও সস্তা হওয়ায় আধুনিক মুদ্রণযন্ত্রে ছাপা বই-এর চাহিদা বহুগুণ বৃদ্ধি পায়। আগে যারা বেশি দামের কারণে বই কিনতে পারতেন না তারাও আগ্রহ সহকারে বই কিনতে উৎসুক হয়ে ওঠেন।

[৬] নবজাগরণের প্রভাব: ইউরোপে নবজাগরণ প্রসূত অনুসন্ধিৎসা ও জ্ঞানার্জনের প্রতি আগ্রহ, মানুষকে ব্যাপকভাবে বইয়ের প্রতি আগ্রহী করে তোলে।

[৭] নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন: পঞ্চদশ শতক নাগাদ নবজাগরণের আবহে অনেক নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপিত হয়। এগুলি ইউরোপে শিক্ষার ব্যাপক প্রসার ঘটায়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য প্রয়োজন হয় ছাপা বই। এইভাবে ছাপা বইয়ের চাহিদা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পায়।

মূল্যায়ন: সবশেষে বলা যায় যে, মধ্যযুগের শেষ দিকে ইউরোপে কাগজের বহুল প্রচলন এবং মুদ্রণের ক্ষেত্রে নানা প্রযুক্তিগত উন্নতি মুদ্রণ বিপ্লবের পটভূমি রচনা করেছিল। মুদ্রণ বিপ্লবের ফলে মানুষের চাহিদা অনুযায়ী অসংখ্য বইপত্র ছাপা হতে থাকে ফলে একদিকে মানুষের জ্ঞানবৃদ্ধি হয় এবং অপরদিকে অনেক মানুষের জীবিকা সংস্থানের ব্যবস্থা করে।

2. চিনে মুদ্রণশিল্পের বিকাশ ও প্রসারের বিবরণ দাও।

Ans: ভূমিকা: মুদ্রণ বিপ্লব তথা আধুনিক মুদ্রণ পদ্ধতির আবিষ্কার ও তার ব্যাপক ব্যবহারের জন্য আধুনিক বিশ্ব চিনের কাছে ঋণী। এদেশেই প্রথম কাঠের ব্লকের দ্বারা মুদ্রণ ও কাগজের আবিষ্কার হয়, যা ক্রমে ক্রমে ইউরোপে এসে পৌঁছোয়।

[১] ব্লক মুদ্রণের সূচনা: চিনে ৫৯৩ খ্রিস্টাব্দে প্রথম যান্ত্রিক মুদ্রণ পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়। ৬৫০-৬৭০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে কাঠের ব্লক দ্বারা কাগজের ওপর ‘ধরণীসূত্র’ নামে একটি বৌদ্ধসূত্র ছাপা হয়। এর প্রতিলিপি আবিষ্কৃত হয়েছে ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে। ব্লকের দ্বারা মুদ্রণের এই পদ্ধতিকে ‘জাইলোগ্রাফি’ বলা হয়।

[২] প্রথম সংবাদপত্র ও ক্যালেন্ডার ছাপা: ৭০০ খ্রিস্টাব্দে চিনের বেজিং-এ প্রথম সংবাদপত্র ছাপা হয়। ৮৭৭-৮৮২ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ক্যালেন্ডার ছাপা হয় যা বিশ্বের প্রাচীনতম মুদ্রিত ক্যালেন্ডার। ১১৫৫ খ্রিস্টাব্দে প্রথম মুদ্রিত মানচিত্র প্রকাশ করেন চিনের লিউ চিং।

[৩] চিনের প্রথম ছাপা বই: ৮৬৮ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ চিনে কাঠের ব্লক দ্বারা ডায়মন্ড সূত্র বা হীরক সূত্র নামে একটি বৌদ্ধ গ্রন্থের অনুবাদ মুদ্রিত হয়। এটিকে বিশ্বের প্রথম মুদ্রিত বই বলে গণ্য করা হয় যা বর্তমানে ব্রিটিশ মিউজিয়ামে সংরক্ষিত আছে।

[৪] কাগজ আবিষ্কার: ব্যয়বহুল পার্চমেন্টের পরিবর্ত খুঁজতে খুঁজতে গবেষণা করে চিনারাই প্রথম ছেঁড়া কাপড় ও উদ্ভিদ তত্ত্বর সংমিশ্রণ দ্বারা কাগজ তৈরির কৌশল আবিষ্কার করে। খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় শতক – নাগাদ চিনের কাগজ আবিষ্কার মুদ্রণশিল্পে অভাবনীয় উন্নতি ঘটায়।

[৫] কালির ব্যবহার: শুধু কাগজ নয়, চিন দেশে ছাপার কালি ব্যবহারেও উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়। কাঠের ব্লকে অক্ষর খোদাই করে তাতে অমোচনীয় কালি লাগিয়ে কাগজে ছাপ নেওয়ার পদ্ধতিতে বই ছাপা হত। লাল, নীল ও কালো রঙের কালি ব্যবহৃত হত।

মূল্যায়ন: চিন থেকে মুদ্রণপ্রযুক্তি ও কাগজ তৈরির কৌশল অষ্টম শতক নাগাদ আরবে পৌঁছায় এবং আরবীয়দের থেকে খ্রিস্টীয় দ্বাদশ-ত্রয়োদশ শতক নাগাদ ইউরোপে পৌঁছায়। কাজেই ইউরোপের প্রথম আধুনিক মুদ্রণযন্ত্র চিনের কাছে আবশ্যিকভাবে ঋণী।

3. মুদ্রণ বিপ্লবের ফলাফল আলোচনা করো।

Ans: ভূমিকা: আধুনিক মুদ্রণযন্ত্রের আবিষ্কার ছিল বিশ্বের এক যুগান্তকারী ঘটনা। ইউরোপে পঞ্চদশ শতক থেকে যে মুদ্রণ বিপ্লব শুরু হয়েছিল, তা শিক্ষা, সাহিত্য, সমাজ, ধর্ম, জ্ঞান-বিজ্ঞান সহ মানবসভ্যতার সর্বক্ষেত্রেই উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছিল। নিউ কেমব্রিজ মর্ডান হিস্ট্রি গ্রন্থে বলা হয়েছে, মুদ্রণ মানুষের চিন্তার জগতকে উন্মোচিত করে।

[১] নির্ভুল বইপত্র প্রকাশ: আধুনিক মুদ্রণযন্ত্রে ছাপা বইপত্র আগেকার হাতে লেখা পুথির তুলনায় অনেক বেশি নির্ভুল হয় এবং প্রুফ দেখার রীতি চালু হওয়ায় ভুল সংশোধনও অনেক সহজ হয়। বই-এর মান যাতে সঠিক হয় সেদিকে বিভিন্ন বুদ্ধিজীবী ও পণ্ডিত ব্যক্তিরা যুক্ত থাকার ফলে প্রায় নির্ভুল বইপত্র প্রকাশ করা সম্ভব হয়।

[২] ধ্রুপদি যুগের বই-এর পুনমুদ্রণ: নতুন মুদ্রণ ব্যবস্থার দ্বারা প্রাচীন ধ্রুপদি যুগের লেখকদের মূল্যবান বইগুলি আবার ছাপা হয়ে সাধারণ মানুষের হাতে তুলে দেওয়া সম্ভব হয়। সিসেরো, প্লেটো, অ্যারিস্টট্ল, ভার্জিল প্রমুখের রচনা জনসাধারণের লভ্য হয়।

[৩] ধর্মনিরপেক্ষ বই প্রকাশ: মুদ্রণ বিপ্লবের ফলে পূর্বেকার ধর্মকেন্দ্রিক বই ছাপার বদলে জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার বই ছাপা হতে থাকে। ধর্মনিরপেক্ষ সাহিত্য, আইন, ব্যাকরণ, ইতিহাস প্রভৃতি বিষয়ে বই ছাপার ফলে এগুলির চর্চা বৃদ্ধি পায়।

[৪] শিক্ষার্থীদের সুবিধা: মুদ্রণ বিপ্লব পূর্ববর্তী যুগে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকের বক্তৃতা কানে শুনে মনে রেখে, তাই নিয়ে চর্চা করাই ছিল শিক্ষার্থীদের জ্ঞান অর্জনের একমাত্র পদ্ধতি। কিন্তু ব্যাপক পরিমাণে বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক পাঠ্যপুস্তক ছাপা ও তা স্বল্পমূল্য শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছে দেওয়া হয়। ফলে জ্ঞানচর্চায় স্বচ্ছতা ও পরিপূর্ণতা আসে। ই এফ রাইস বলেছেন, “মুদ্রণযন্ত্রের আবিষ্কার সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটায়।”

[৫] বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধিৎসা বৃদ্ধি: মুদ্রণ বিপ্লবের ফলে বিভিন্ন বিজ্ঞানীদের নতুন নতুন আবিষ্কার, তত্ত্ব রচনা, মতামত ইত্যাদি সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছোয় বিভিন্ন পত্রপত্রিকার মাধ্যমে। কোপারনিকাস, গ্যালিলিও, কেপলার প্রমুখের আধুনিক বিজ্ঞাননির্ভর ব্যাখ্যা সম্পর্কে মানুষ আগ্রহী হন, যা সাধারণ বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধিৎসা বৃদ্ধি করে।

[৬] আঞ্চলিক ভাষার বিকাশ: শুধুমাত্র লাতিন ভাষায় বই ছাপার পরিবর্তে বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষায় সাহিত্যরচনা শুরু হয়। দান্তে, পেত্রার্ক, চসার প্রমুখের মতো আরও অনেক সাহিত্যিক নিজের নিজের ভাষায় সাহিত্যরচনা করে ছাপার ফলে অনেক ভাষার বিকাশ ঘটে।

[৭] ধর্মসংস্কার আন্দোলনের প্রেক্ষাপট নির্মাণ: আগে ধর্মচর্চা তো বটেই, জ্ঞানচর্চাতেও চার্চের নিয়ন্ত্রণ ছিল শেষকথা। প্রচুর পরিমাণে ছাপা বই বিভিন্ন বিষয়ে মানুষের জ্ঞান বৃদ্ধি করে এবং মানুষ যুক্তি দিয়ে বিচার করতে শেখে। বাইবেলের অনুবাদের ফলে চার্চের প্রতি প্রশ্নহীন আনুগত্যে ফাটল ধরে। চার্চের দুর্নীতি-অনাচার মানুষের চোখে পড়ে, যা ধর্মসংস্কার আন্দোলনের পথ প্রশস্ত করে।

[৮] নতুন জীবিকা: আধুনিক মুদ্রণ পদ্ধতিতে বিভিন্ন পর্যায়ে যন্ত্র পরিচালনাসহ বই ছাপার বিভিন্ন স্তরে অনেক লোকের প্রয়োজন হয়। লেখক, প্রুফরিডার, হরফ প্রস্তুতকারক প্রভৃতি নতুন নতুন জীবিকার সংস্থান হয়।

মূল্যায়ন: সবশেষে বলা যায় যে, মুদ্রণ বিপ্লব মানবজীবন তথা মানবসভ্যতার সর্বক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছিল। শিক্ষা-সংস্কৃতির পাশাপাশি বিজ্ঞান ও ভৌগোলিক আবিষ্কারের ক্ষেত্রেও মুদ্রণ বিপ্লবের যথেষ্ট প্রভাব ছিল।

4. বিজ্ঞান বিপ্লব কী সত্যিই ‘বৈপ্লবিক’ ছিল?

Ans: ভূমিকা: রেনেসাঁ বা নবজাগরণের প্রভাবে ইউরোপে সাহিত্য-শিল্পের পাশাপাশি বিজ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রেও এক অভূতপূর্ব উন্নতি ঘটে। এই কালপর্বে ইউরোপে বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা, যথা- জ্যোতির্বিদ্যা, গণিত, রসায়ন, পদার্থ ও জীববিদ্যা এবং প্রযুক্তিবিদ্যার ক্ষেত্রে যে অভাবনীয় অগ্রগতি ঘটেছিল, তা সাধারণভাবে বিজ্ঞান বিপ্লব নামে পরিচিত।

[১] বিজ্ঞান বিপ্লবের ক্ষেত্র: ষোড়শ-সপ্তদশ শতকে নব্যবিজ্ঞান চর্চা চিন্তার জগতে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছিল। এসময় মহাকাশ চর্চা, শারীরবিদ্যা, রসায়ন, চিকিৎসাবিদ্যার নতুন নতুন আবিষ্কার বিজ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রকে বিশেষভাবে আলোকিত করেছিল। কোপারনিকাস, গ্যালিলিও, কেপলার প্রমুখরা যেমন মহাকাশ চর্চার ক্ষেত্রে এক নবপথের সন্ধান দিয়েছিলেন, তেমনি ভেসেলিয়াস, ইউলিয়াম হার্ভে, লিউয়েন হুক, রবার্ট হুক প্রমুখরা বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখাকেও আলোকিত করেছিলেন।

[২] বিতর্ক: ষোড়শ থেকে অষ্টাদশ শতকের বিজ্ঞানচেতনার ক্ষেত্রে এই অভূতপূর্ব অগ্রগতিকে বিপ্লব বলে অভিহিত করা যায় কিনা তা নিয়ে পণ্ডিতমহলে বিভিন্ন মত বর্তমান। কারও মতে, বিভিন্ন সামাজিক-অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে দীর্ঘকালীন চর্চা ও পরীক্ষানিরীক্ষার ফলে বিজ্ঞানের অগ্রগতি হয়েছিল। কিন্তু একে ‘বিপ্লব’ বলা যায় না।

[৩] পক্ষে যুক্তি: হারবার্ট বাটারফিল্ড (Herbert Butterfield) প্রথম বিজ্ঞান জগতের এই পরিবর্তনকে বৈপ্লবিক আখ্যা দিয়েছেন। এ ছাড়া সিলভাইন বেইলি (Sylvain Bailly) সহ আধুনিক কালের অনেক ঐতিহাসিক ও পণ্ডিত এই মতের সমর্থক যে বিজ্ঞান বিপ্লব একটি আকস্মিক অভিনব ঘটনা। এটি পুরানো ‘গ্রিক-অ্যারিস্টট্রীয়-চার্চ’ কেন্দ্রিক বিশ্বচরাচরের মডেলকে সম্পূর্ণ বর্জন করে আধুনিক পৃথিবীর দিকে মানবসভ্যতাকে এগিয়ে দিয়েছিল। তাঁদের মতে, বিজ্ঞানের প্রতিটি শাখারই যে উন্নতি ঘটেছিল, তা আগে কখনও দেখা যায়নি। তাঁরা আরও মনে করেন, চিন্তার জগতের এই বৈজ্ঞানিক পরিবর্তনের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ছিল বিজ্ঞানের হাতে। এখানে ধর্মীয় দর্শনের ভূমিকা বিন্দুমাত্র ছিল না।

[৪] বিপক্ষে যুক্তি: সাম্প্রতিক কালে স্টিফেন শ্যাপিন, টমাস কুন প্রমুখ ঐতিহাসিক বিজ্ঞান বিপ্লবের উদ্ভব ও বিকাশ নিয়ে ভিন্নতর ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তাঁদের মতে, বিজ্ঞান বিপ্লব আদৌ একটি ‘বিপ্লব’ নয় বা আকস্মিক যুগান্তর নয়; এটি একটি দীর্ঘকালীন চর্চার ধারাবাহিকতার ফসলমাত্র। তাই একে বিপ্লব না বলে অগ্রগতি বলাই যুক্তিযুক্ত। মধ্যযুগীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে যে জ্ঞানচর্চার ধারার সূত্রপাত হয়েছিল, তারই দীর্ঘ বিবর্তনের ফলশ্রুতি হিসেবে নতুন মতবাদ কোপারনিকাস, কেপলার, গ্যালিলিও, নিউটন প্রমুখ বিজ্ঞানীদের মাধ্যমে উঠে এসেছিল। এ ছাড়া বিজ্ঞান বিপ্লবের সময়কার জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চা সম্পূর্ণ ধর্মনিরপেক্ষ ছিল না। গ্রহনক্ষত্রের অবস্থান দেখে খ্রিস্টান ধর্মের আচার-অনুষ্ঠানের দিনক্ষণ স্থির করা ছিল কোপারনিকাসের জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চার প্রাথমিক উদ্দেশ্য। টলেমীয় পৃথিবীকেন্দ্রিক মডেলের পরিবর্তে ‘সূর্যকেন্দ্রিক’ মহাবিশ্বের মডেল আবিষ্কার করেও তিনি নিজে তা প্রচার করেননি। মৃত্যুর কয়েকমাস আগে ‘De Revolutionibus’ প্রকাশ করেন যা উৎসর্গ করেন পোপ তৃতীয় পলকে।

মূল্যায়ন: পরিশেষে বলা যায় যে, তথাকথিত ‘বিজ্ঞান বিপ্লব’ মানবসভ্যতার প্রতিটি দিককেই আলোকিত করেছিল। এ যুগের সূর্যকেন্দ্রিক মহাবিশ্বের ধারণা মধ্যযুগীয় পৃথিবীকেন্দ্রিক ধ্যানধারণাকে আমূল বদলে দিয়েছিল বলা যায়। সর্বোপরি, বিজ্ঞান বিপ্লব সাধারণ মানুষের মধ্যে নতুন চিন্তাভাবনা ও বিজ্ঞানচেতনার সঞ্চার করেছিল।

5. ইউরোপে আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চার ফলাফল কী হয়েছিল?

Ans: ভূমিকা: পঞ্চদশ শতক থেকে ইউরোপে আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চা শুরু হয়। ফলে মহাকাশ সম্পর্কে মধ্যযুগীয় ধ্যানধারণার আমূল পরিবর্তন ঘটে। আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চা সামগ্রিক মানবসভ্যতার ওপর সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলে।

[১] পুরোনো ভুল ধারণার অবসান: প্রাচীন ভ্রান্ত জ্যোতির্বিজ্ঞান সম্পর্কিত ধারণা যা টলেমি, অ্যারিস্টট্ল ও খ্রিস্টান চার্চ মানুষকে যুগের পর যুগ বিশ্বাস করিয়ে আসছিল, তার অসারতা প্রমাণিত হয়।

[২] বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সম্পর্কে নতুন ধারণার প্রসার: প্রাচীন পৃথিবীকেন্দ্রিক মহাবিশ্বের ধারণাকে ভুল প্রমাণিত করে কোপারনিকাস প্রথম প্রমাণ করেছিলেন যে, পৃথিবীসহ সমস্ত গ্রহগুলি সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরছে। এই সূর্যকেন্দ্রিক মহাবিশ্বের ধারণাকে পরবর্তীতে অন্যান্য জ্যোতির্বিদ আরও এগিয়ে নিয়ে যান।

[৩] খ্রিস্টান চার্চের প্রতিক্রিয়া: পঞ্চদশ শতকের আগে পর্যন্ত বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সম্পর্কে বিভিন্ন ভ্রান্ত ধারণাকে প্রচার করে ইউরোপের সর্বত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল খ্রিস্টান চার্চ। সেই ধারণাকে আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা সপাটে মিথ্যা প্রমাণ করায় চার্চ কর্তৃপক্ষ ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে এবং নতুন ধারণার ধারক তাঁদের কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা শুরু করে।

[৪] চার্চের প্রতিশোধ: নিজেদের ব্যর্থতাকে ঢাকতে চার্চ ও পোপতন্ত্র কয়েকজন জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের ওপর অত্যাচার শুরু করে। ধর্মদ্রোহিতার অভিযোগে জিওরদানো ব্রুনোকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করে চার্চ। গ্যালিলিও গ্যালিলিকে অত্যাচার করে নিজের তত্ত্বকে ‘ভুল’ বলে স্বীকার করিয়ে নেওয়া হয়। তিনি নির্জন নির্বাসনে একাকী শেষজীবন কাটাতে বাধ্য হন। কেপলারের মাকে ডাকিনীবিদ্যা চর্চার অভিযোগে কারারুদ্ধ করা হয়।

[৫] ধর্মসংস্কারের পটভূমি তৈরি: পঞ্চম-ষোড়শ শতকে যুক্তিগ্রাহ্য মহাবিশ্বের ধারণার প্রসার এবং বিজ্ঞানচর্চা মানুষের মন থেকে চার্চ ও পোপতন্ত্রের ভুল বোঝানোকে অস্বীকার করতে শেখায়। চার্চের দুর্নীতি, কুসংস্কার সর্বস্বতার বিরুদ্ধে মানুষের মনে নানা প্রশ্ন বা জিজ্ঞাসা তৈরি হয়, যা ধর্মসংস্কার আন্দোলনের পথ প্রস্তুত করে।

[৬] বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধিৎসা তৈরি: বিভিন্ন জ্যোতির্বিজ্ঞানীর আবিষ্কার ও নতুন তত্ত্ব প্রচার মানুষকে অন্ধবিশ্বাসের বেড়াজাল ভেঙে নতুনভাবে বিজ্ঞানচর্চায় উৎসাহী করে তোলে।

[৭] বিজ্ঞানের সামগ্রিক অগ্রগতি: নতুন জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চা যে বিজ্ঞানমনস্কতা তৈরি করতে সক্ষম হয় তার ফলে বিজ্ঞানের সব শাখা ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে নতুন চর্চা ও পরীক্ষানিরীক্ষা শুরু হয়।

মূল্যায়ন: বিশ্বব্রহ্মান্ডের সঠিক ধারণা ও তাকে প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে বিভিন্ন বিজ্ঞানীর আত্মবলিদান বৃথা যায়নি। বর্তমান পৃথিবী সেই ধারণার ওপর ভিত্তি করেই অত্যাধুনিক যুগে প্রবেশ করেছে।

6. পোর্তুগালের ভৌগোলিক অভিযানের বিবরণ দাও।

Ans: ভূমিকা: পঞ্চদশ থেকে সপ্তদশ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত সময়কালে পোর্তুগাল, স্পেন, হল্যান্ড, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স প্রভৃতি ইউরোপের বিভিন্ন দেশ দুঃসাহসিক সামুদ্রিক অভিযান পরিচালনা করে। এই অভিযানগুলির ফলে অনেক নতুন নতুন জলপথ এবং নতুন দেশ ও মহাদেশ আবিষ্কৃত হয়। এই ভৌগোলিক আবিষ্কারের সঙ্গে যুক্ত দেশগুলির মধ্যে সর্বাপেক্ষা অগ্রগণ্য ছিল পোর্তুগাল।

[১] শুরুর কথা: ইউরোপের দুই প্রতিবেশী দেশ পোর্তুগাল ও স্পেনের মধ্যে সামুদ্রিক অভিযানের ক্ষেত্রে যথেষ্ট দ্বন্দু ও বিরোধ ছিল। ১৪৯৩ খ্রিস্টাব্দে পোপ ষষ্ঠ আলেকজান্ডারের বুল বা নির্দেশনামা দ্বারা এবং ১৪৯৪ খ্রিস্টাব্দে টর্ভেসিল্লাস-এর চুক্তির (Treaty of Tordesillas) মাধ্যমে সেই বিরোধের নিষ্পত্তি হয়। স্থির হয় যে, আটলান্টিক মহাসাগরের পশ্চিম দিক হবে স্পেনের এবং পূর্ব দিক হবে পোর্তুগালের নৌঅভিযানের এলাকা।

[২] নাবিক হেনরির অভিযান: পোর্তুগালের রাজকুমার ইনফ্যান্টি হেনরি ভৌগোলিক অভিযানের প্রাণপুরুষ। মূলত তাঁরই উদ্যোগে পোর্তুগাল প্রথম ভৌগোলিক অভিযানে লিপ্ত হয়। তাই তাঁকে হেনরি দ্য নেভিগেটর (Henry the Navigator) আখ্যা দেওয়া হয়। তিনি প্রাচ্যে আসার জলপথ আবিষ্কারের চেষ্টা করেন এবং গিনি, মাদেইরা, অ্যাজোর্স প্রভৃতি স্থান আবিষ্কার করেন। ১৪২১ খ্রিস্টাব্দে তিনি দুর্গম বোজাডোর (Cape Bojador) অন্তরীপে পৌঁছোন। নাবিক হেনরি সমুদ্রপথের একটি মানচিত্র তৈরি করেন এবং পোর্তুগালের আলগার্ভ নামক স্থানে সাগ্রেস নামে একটি নৌবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।

[৩] বার্থেলোমিউ দিয়াজের অভিযান: ১৪৮৬ খ্রিস্টাব্দে নাবিক বার্থেলোমিউ দিয়াজ সমুদ্র অভিযানে বেরিয়ে আফ্রিকা মহাদেশের দক্ষিণ-তম প্রান্তে এসে পৌঁছোন। যাত্রাপথে প্রচন্ড ঝড়বৃষ্টির বাধা অতিক্রম করে এখানে পৌঁছোন বলে তিনি এর নাম দেন ঝড়ের অন্তরীপ (Cape of Storm)। কিন্তু রাজা দ্বিতীয় জন ‘ঝড়ের অন্তরীপ’-এর আবিষ্কার থেকে ধারণা করেন যে, এই পথ ধরেই ভারতে পৌঁছোনো সম্ভব হবে। তাই তিনি ঝড়ের অন্তরীপের নাম পরিবর্তন করে নাম দিলেন উত্তমাশা অন্তরীপ (Cape of good hope)।

[৪] পাইভা ও ক্যাওরের অভিযান: নাবিক আলফানসো ডি পাইভা ১৪৮৭ খ্রিস্টাব্দে জলপথে ইথিওপিয়ায় যেতে সমর্থ হন, যা ভারতে আসার জলপথের আবিষ্কারের সম্ভাবনা তৈরি করে। দিওগো ক্যাওর ১৪৮২ খ্রিস্টাব্দে আফ্রিকার কঙ্গো আবিষ্কার করেন। তিনি ১৪৮৬ খ্রিস্টাব্দে নামিবিয়া পর্যন্ত পৌঁছোন।

[৫] ভাস্কো-দা-গামার অভিযান: ১৪৯৭ খ্রিস্টাব্দে পোর্তুগিজ নাবিক ভাস্কো-দা-গামা পোর্তুগাল থেকে যাত্রা শুরু করে উত্তমাশা অন্তরীপ অতিক্রম করে ভারতের কালিকট বন্দরে এসে পৌঁছোন ১৪৯৮ খ্রিস্টাব্দের ১৭ মে। এইভাবে ভাস্কো-দা-গামা ভারতে আসার জলপথ আবিষ্কার করেন। এই আবিষ্কার ইউরোপের নাবিকদের সমুদ্র অভিযানে প্রেরণা ও দিনির্দেশের কাজ করে।

[৬] আলবুকার্ক-এর অভিযান: ১৫০৭ খ্রিস্টাব্দে আলফানসো ডি আলবুকার্ক ইথিওপিয়ার কাছে হরমুজ বন্দরটি দখল করেন এবং উত্তমাশা অন্তরীপ অতিক্রম করে ভারতের গোয়ায় আসতে সমর্থ হন ১৫১০ খ্রিস্টাব্দে। ১৫১১ খ্রিস্টাব্দে তিনি ভারতমহাসাগরের নিকটবর্তী মালাক্কা দখল করেন। আলবুকার্ক চিনের ম্যাকাও বন্দরে পৌঁছে পোর্তুগিজ বাণিজ্যকেন্দ্র স্থাপন করেন।

[৭] কেব্রালের অভিযান: ১৫০৯ খ্রিস্টাব্দে পেড্রো আলভারেজ কেব্রাল আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দিয়ে ব্রাজিল আবিষ্কার করেন। তিনি দক্ষিণ আমেরিকার উত্তর-পূর্ব উপকূলে অভিযান করে সেখানে পোর্তুগিজ আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেন। কেব্রাল ভারতের কোচিন বন্দরে পৌঁছে পোর্তুগিজ বাণিজ্যকুঠি স্থাপন করেন।

[৮] পোর্তুগালের সাফল্যের কারণ: সামুদ্রিক অভিযান ও ভৌগোলিক আবিষ্কারে পোর্তুগিজ নাবিকদের অসাধারণ সাফল্যের পিছনে বেশ কেছু কারণ ছিল-

(i) পঞ্চদশ-ষোড়শ শতকের পোর্তুগালের শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক স্থিতাবস্থা ভৌগোলিক অভিযানের সহায়ক হয়েছিল।

(ii) ভৌগোলিক অভিযানে নতুন নতুন দেশ-মহাদেশের বিশেষত আফ্রিকার সোনা ও সম্পদ আহরণ করে নিজ দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ঘটানোর আকাঙক্ষায় এদেশের রাজশক্তি ভৌগোলিক অভিযানে সক্রিয় সহযোগিতা করেছিল।

(iii) ভৌগোলিক অবস্থানজনিত কারণে পোর্তুগালের নৌপ্রযুক্তি অন্যান্য দেশের থেকে উন্নত ছিল।

মূল্যায়ন: ঐতিহাসিক জন হোরেস প্যারির মতে, পঞ্চদশ-ষোড়শ শতকে ভৌগোলিক অভিযানের ‘প্রাথমিক নিরীক্ষণের যুগ’-এ সর্বাধিক সাফল্যের অধিকারী দেশ ছিল পোর্তুগাল। মূলত পোর্তুগালের সামুদ্রিক অভিযানের ফলেই আফ্রিকার দ্বার ইউরোপের কাছে উন্মুক্ত হয় এবং জলপথে ভারতে আসার দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টা সফল হয়।

7. ভৌগোলিক অভিযানের ফলাফল বা গুরুত্ব কী হয়েছিল?

Ans: ভূমিকা: পঞ্চদশ শতক থেকে শুরু করে পোর্তুগাল, স্পেন প্রভৃতি ইউরোপের বিভিন্ন দেশগুলি যে দুঃসাহসিক ভৌগোলিক অভিযান পরিচালনা করেছিল। ভৌগোলিক অভিযানগুলি ইউরোপ তথা সমগ্র বিশ্বের ওপর বহুমুখী প্রভাব ফেলেছিল। ভৌগোলিক আবিষ্কারের ফলাফলগুলিকে নিম্নলিখিতভাবে আলোচনা করা যেতে পারে-

[১] নতুন বাণিজ্যপথ আবিষ্কার: ভৌগোলিক অভিযানের ফলাফল হিসেবে নতুন আবিষ্কৃত অঞ্চলের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক স্থাপিত হয় এবং নতুন নতুন বাণিজ্যপথ উন্মুক্ত হয়। ফলে বাণিজ্য ক্ষেত্রে ১৪৫৩ খ্রিস্টাব্দের পূর্বেকার ভূমধ্যসাগরীয় পথের ওপর নির্ভরতা আর রইল না।

[২] ইতালীয় বাণিজ্যে ঘাটতি: ভূমধ্যসাগরীয় বাণিজ্যে মূলত ইতালীয় নগরকেন্দ্রিক (ভেনিস, মিলান, ফ্লোরেন্স) বাণিজ্যই প্রধান ছিল। বিকল্প বাণিজ্যপথ বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠলে ভূমধ্যসাগরীয় পথনির্ভর ইতালীয় বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

[৩] সোনা-রুপো আমদানি: নব-আবিষ্কৃত আমেরিকা মহাদেশ থেকে সোনা-রুপোর প্রভূত আমদানি ইউরোপের অর্থনীতিকে অত্যন্ত সবল করে তোলে।

[৪] ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থার সৃষ্টি: বহুমুখী বাণিজ্যের বিকাশ ঘটার ফলে ইউরোপের বাণিজ্যিক ব্যবস্থায় আগেকার ‘মহাজনি ব্যবস্থা’-র অবসান ঘটে এবং বণিকদের উদ্যোগে বিভিন্ন যৌথ বাণিজ্যিক সংস্থা গড়ে ওঠে। এগুলি থেকেই ধীরে ধীরে ব্যাংকিং ব্যবস্থার প্রসার ঘটে।

[৫] মর্যাদা বৃদ্ধি: ভৌগোলিক অভিযানে যে দেশগুলি সাফল্য লাভ করেছিল, তারা ইউরোপে বিশেষ মর্যাদার অধিকারী হয়।

[৬] ক্রীতদাসে পরিণত করা: নব-আবিষ্কৃত আফ্রিকা ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে অসংখ্য মানুষকে বলপূর্বক ধরে এনে স্পেন, পোর্তুগাল, ইংল্যান্ড প্রভৃতি দেশের নাবিকরা তাদের ক্রীতদাসে পরিণত করত। এই প্রবণতা ক্রমশ বাড়তে থাকে এবং ইউরোপে ক্রীতদাস নিয়ে ব্যাবসা এক লাভজনক ব্যবসায় পরিণত হয়।

[৭] মধ্যবিত্ত শ্রেণির উত্থান: ভৌগোলিক অভিযানের সফলতার হাত ধরে শিল্প-বাণিজ্য-অর্থনীতির বিকাশ ঘটলে এক নতুন শিক্ষিত-উদ্যোগী-সচ্ছল শ্রেণির উত্থান ঘটে। এরা মধ্যবিত্ত বা বুর্জোয়া শ্রেণি বলে পরিচিত হয়।

মূল্যায়ন: পরিশেষে বলা যায়, ভৌগোলিক অভিযানগুলির ফলে বহু নতুন নতুন দেশ, মহাদেশ ও জলপথ আবিষ্কৃত হয়। সমুদ্র অভিযাত্রীরা বিভিন্ন প্রাচীন সভ্যতা ধ্বংস করে, যা মানবতার পক্ষে লজ্জার। এ প্রসঙ্গে কোর্টেসের অ্যাজটেক সভ্যতা ধ্বংস ও পিজারোর ইনকা সভ্যতা ধ্বংসের কথা বলা যায়।

8. ভৌগোলিক আবিষ্কারের পটভূমি লেখো। এর গুরুত্ব আলোচনা করো।

Ans: ভূমিকা: মানুষের অজানাকে জানার আগ্রহ চিরন্তন। খ্রিস্টীয় পঞ্চদশ শতক থেকেই স্পেন, পোর্তুগাল, হল্যান্ড প্রভৃতি দেশ সহ ইউরোপের বেশ কিছু দেশের নাবিকরা অজানা-অচেনা ভূখণ্ড আবিষ্কারের উদ্দেশ্যে দুঃসাহসিক সামুদ্রিক অভিযানে বেরিয়ে পড়েন। ফলে নতুন নতুন দেশ ও মহাদেশ ইউরোপীয়দের কাছে পরিচিত হয়। এই ভৌগোলিক অভিযানগুলির পিছনে নানা কারণ বা উদ্দেশ্য ছিল। সেগুলি হল-

[১] বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার: দিনির্ণয়কারী কম্পাস, অক্ষাংশ-দ্রাঘিমাংশ নির্দেশকারী অ্যাস্ট্রোলেব যন্ত্রের আবিষ্কার সমুদ্রযাত্রাকে অনেকটাই সহজ করে তোলে। এ ছাড়া, বিজ্ঞানী গ্যালিলিওর তত্ত্ব (যে পৃথিবী গোলাকার) নাবিকদের মনে অসীম সমুদ্রে বিলীন হয়ে যাওয়ার ভয় থেকে মুক্ত করে। তাঁরা নিশ্চিত হন যে গোলাকার পৃথিবীতে তাঁরা অবশ্যই নিজ দেশে ফিরে আসতে পারবেন।

[২] ভ্রমণবৃত্তান্ত: নবজাগরণের হাত ধরে ইউরোপে বিভিন্ন রকমের ভ্রমণকাহিনি বা ভ্রমণবৃত্তান্ত প্রকাশিত হয়। এগুলি পাঠ করে ইউরোপের মানুষের মধ্যে অজানা-অচেনা দূরবর্তী দেশকে দেখা ও জানার আগ্রহ তৈরি হয়। এ প্রসঙ্গে মার্কোপোলো, জুরারা প্রমুখের ভ্রমণকাহিনি উল্লেখযোগ্য। মার্কোপোলোর ভ্রমণবৃত্তান্ত ইউরোপের নাবিকদের সামুদ্রিক অভিযানে বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত করে।

[৩] শাসকবর্গের উৎসাহ ও সাহায্যদান: এই সময়পর্বে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের বিশেষ করে পোর্তুগাল ও স্পেনের শাসকবর্গ ভৌগোলিক অভিযানে পৃষ্ঠপোষকতা করেছিলেন। এ বিষয়ে স্পেনের রানি ইসাবেলা, রাজা ফার্দিনান্দ, পোর্তুগালের প্রিন্স হেনরি প্রমুখের ভূমিকা ছিল বিশেষভাবে উল্লেখ্য।

[৪] বাণিজ্য বিস্তারের প্রতিদ্বন্দ্বিতা: পঞ্চদশ শতক নাগাদ ইউরোপে কৃষিবিপ্লব ঘটলে রপ্তানি পণ্য ও বাণিজ্যিক ফসলের উদ্বৃত্ত উৎপাদন ইউরোপের বাইরে রপ্তানি করায় নতুন বাজার খুঁজে কোন্ দেশ কত বেশি মুনাফা অর্জন করতে পারে তার প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু হয়। নতুন অঞ্চলের নতুন পণ্য আমদানি করাও এই উদ্দেশ্যের মধ্যেই ছিল।

[৫] বিকল্প বাণিজ্যপথের সন্ধান: ১৪৫৩ খ্রিস্টাব্দে তুর্কিদের হাতে কনস্ট্যান্টিনোপলের পতন ঘটলে প্রাচ্য-পাশ্চাত্য বাণিজ্যের ভূমধ্যসাগরীয় পথটি ইউরোপীয় বণিকদের কাছে রুদ্ধ হয়ে যায়। ফলে বিকল্প বাণিজ্যপথের সন্ধানের আশু প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়।

[৬] খ্রিস্টান চার্চের আগ্রহ: সেলজুক তুর্কিদের আক্রমণে কনস্ট্যান্টিনোপলের পতন ঘটে। ফলে ইউরোপে মুসলিমদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা প্রবেশ খ্রিস্টান চার্চকে ভীতগ্রস্ত করে তোলে। ফলে ইসলামের প্রসারকে প্রতিহত করে খ্রিস্টান ধর্ম-কে’ শ্রেষ্ঠ ধর্ম বলে প্রমাণ করার তাগিদে চার্চ নতুন ভূখণ্ড আবিষ্কারে উৎসাহ দেয়। অর্থাৎ খ্রিস্টান ধর্মের প্রচার ও প্রসার ভৌগোলিক অভিযানের একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হিসেবে বিবেচিত হয়।

গুরুত্ব: পঞ্চদশ শতক থেকে শুরু করে পোর্তুগাল, স্পেন প্রভৃতি ইউরোপের বিভিন্ন দেশগুলি যে দুঃসাহসিক ভৌগোলিক অভিযান পরিচালনা করেছিল। ভৌগোলিক অভিযানগুলি ইউরোপ তথা সমগ্র বিশ্বের ওপর বহুমুখী প্রভাব ফেলেছিল। ভৌগোলিক আবিষ্কারের – ফলাফলগুলিকে নিম্নলিখিতভাবে আলোচনা করা যেতে পারে-

[১] নতুন বাণিজ্যপথ আবিষ্কার: ভৌগোলিক অভিযানের ফলাফল হিসেবে নতুন আবিষ্কৃত অঞ্চলের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক স্থাপিত হয় এবং নতুন নতুন বাণিজ্যপথ উন্মুক্ত হয়। ফলে বাণিজ্য ক্ষেত্রে ১৪৫৩ খ্রিস্টাব্দের পূর্বেকার ভূমধ্যসাগরীয় পথের ওপর নির্ভরতা আর রইল না।

[২] ইতালীয় বাণিজ্যে ঘাটতি: ভূমধ্যসাগরীয় বাণিজ্যে মূলত ইতালীয় নগরকেন্দ্রিক (ভেনিস, মিলান, ফ্লোরেন্স) বাণিজ্যই প্রধান ছিল। বিকল্প বাণিজ্যপথ বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠলে ভূমধ্যসাগরীয় পথনির্ভর ইতালীয় বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

[৩] সোনা-রুপো আমদানি: নব-আবিষ্কৃত আমেরিকা মহাদেশ থেকে সোনা-রুপোর প্রভূত আমদানি ইউরোপের অর্থনীতিকে অত্যন্ত সবল করে তোলে।

[৪] ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থার সৃষ্টি: বহুমুখী বাণিজ্যের বিকাশ ঘটার ফলে ইউরোপের বাণিজ্যিক ব্যবস্থায় আগেকার ‘মহাজনি ব্যবস্থা’-র অবসান ঘটে এবং বণিকদের উদ্যোগে বিভিন্ন যৌথ বাণিজ্যিক সংস্থা গড়ে ওঠে। এগুলি থেকেই ধীরে ধীরে ব্যাংকিং ব্যবস্থার প্রসার ঘটে।

[৫] মর্যাদা বৃদ্ধি: ভৌগোলিক অভিযানে যে দেশগুলি সাফল্য লাভ করেছিল, তারা ইউরোপে বিশেষ মর্যাদার অধিকারী হয়।

[৬] ক্রীতদাসে পরিণত করা: নব-আবিষ্কৃত আফ্রিকা ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে অসংখ্য মানুষকে বলপূর্বক ধরে এনে স্পেন, পোর্তুগাল, ইংল্যান্ড প্রভৃতি দেশের নাবিকরা তাদের ক্রীতদাসে পরিণত করত। এই প্রবণতা ক্রমশ বাড়তে থাকে এবং ইউরোপে ক্রীতদাস নিয়ে ব্যাবসা এক লাভজনক ব্যবসায় পরিণত হয়।

[৭] মধ্যবিত্ত শ্রেণির উত্থান: ভৌগোলিক অভিযানের সফলতার হাত ধরে শিল্প-বাণিজ্য-অর্থনীতির বিকাশ ঘটলে এক নতুন শিক্ষিত-উদ্যোগী-সচ্ছল শ্রেণির উত্থান ঘটে। এরা মধ্যবিত্ত বা বুর্জোয়া শ্রেণি বলে পরিচিত হয়।

মূল্যায়ন: পরিশেষে বলা যায়, ভৌগোলিক অভিযানগুলির ফলে বহু নতুন নতুন দেশ, মহাদেশ ও জলপথ আবিষ্কৃত হয়। সমুদ্র অভিযাত্রীরা বিভিন্ন প্রাচীন সভ্যতা ধ্বংস করে, যা মানবতার পক্ষে লজ্জার। এ প্রসঙ্গে কোর্টেসের অ্যাজটেক সভ্যতা ধ্বংস ও পিজারোর ইনকা সভ্যতা ধ্বংসের কথা বলা যায়।

Class 11 First (1st) Unit Test Question and Answer :

Class 11 Second (2nd) Unit Test Question and Answer :

Class 11 Suggestion – একাদশ শ্রেণীর সাজেশন

আরোও দেখুন:-

Class 11 Bengali Suggestion Click here

আরোও দেখুন:-

Class 11 English Suggestion Click here

আরোও দেখুন:-

Class 11 Geography Suggestion Click here

আরোও দেখুন:-

Class 11 History Suggestion Click here

আরোও দেখুন:-

Class 11 Political Science Suggestion Click here

আরোও দেখুন:-

Class 11 Education Suggestion Click here

আরোও দেখুন:-

Class 11 Philosophy Suggestion Click here

আরোও দেখুন:-

Class 11 Sociology Suggestion Click here

আরোও দেখুন:-

Class 11 Sanskrit Suggestion Click here

আরোও দেখুন:-

Class 11 All Subjects Suggestion Click here

◆ একাদশ শ্রেণীর পরীক্ষার প্রস্তুতি, বিনামূল্যে নোটস, সাজেশন, PDF ও সমস্ত আপডেটের জন্য আমাদের WhatsApp Group এ Join হয়ে যাও।

Class 11 WhatsApp Groups Click Here to Join

একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | West Bengal Class 11th History Question and Answer / Suggestion / Notes Book

আরোও দেখুন :-

একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস সমস্ত অধ্যায়ের প্রশ্নউত্তর Click Here

FILE INFO : দিগন্তের প্রসার (ষষ্ঠ অধ্যায়) একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | Class 11 History Digonter Prosar Question and Answer with FREE PDF Download Link

PDF File Name দিগন্তের প্রসার (ষষ্ঠ অধ্যায়) একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | Class 11 History Digonter Prosar Question and Answer PDF
Prepared by Experienced Teachers
Price FREE
Download Link  Click Here To Download
Download PDF Click Here To Download

দিগন্তের প্রসার (ষষ্ঠ অধ্যায়) অধ্যায় থেকে আরোও প্রশ্ন ও উত্তর দেখুন :

  • দিগন্তের প্রসার – একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর Click here

[আরও দেখুন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবন রচনা – Rabindranath Tagore Biography in Bengali]

[আমাদের YouTube চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন Subscribe Now]

Info : দিগন্তের প্রসার (ষষ্ঠ অধ্যায়) একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস সাজেশন প্রশ্ন ও উত্তর

 Class 11 History Suggestion | West Bengal WBCHSE Class Eleven XI (Class 11th) History Question and Answer Suggestion 

” দিগন্তের প্রসার (ষষ্ঠ অধ্যায়) একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস প্রশ্ন উত্তর “ একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ টপিক একাদশ শ্রেণীর পরীক্ষা (West Bengal Class Eleven XI / WB Class 11 / WBCHSE / Class 11 Exam / West Bengal Council of Higher Secondary Education – WB Class 11 Exam / Class 11th / WB Class 11 / Class 11 Pariksha ) এখান থেকে প্রশ্ন অবশ্যম্ভাবী । সে কথা মাথায় রেখে Bhugol Shiksha .com এর পক্ষ থেকে একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস পরীক্ষা প্রস্তুতিমূলক সাজেশন এবং প্রশ্ন ও উত্তর ( একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস সাজেশন / একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস প্রশ্ও উত্তর । Class-11 History Suggestion / Class 11 History Digonter Prosar Question and Answer / Class 11 History Suggestion / Class-11 Pariksha History Suggestion / History Class 11 Exam Guide / MCQ , Short , Descriptive Type Question and Answer / Class 11 History Suggestion FREE PDF Download) উপস্থাপনের প্রচেষ্টা করা হলাে। ছাত্রছাত্রী, পরীক্ষার্থীদের উপকারে লাগলে, আমাদের প্রয়াস একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস পরীক্ষা প্রস্তুতিমূলক সাজেশন এবং প্রশ্ন ও উত্তর (Class 11 History Suggestion / West Bengal Eleven XI Question and Answer, Suggestion / WBCHSE Class 11th History Suggestion / Class 11 History Digonter Prosar Question and Answer / Class 11 History Suggestion / Class 11 Pariksha Suggestion / Class 11 History Exam Guide / Class 11 History Suggestion 2025, 2026, 2027, 2028, 2029, 2030 / Class 11 History Suggestion MCQ , Short , Descriptive Type Question and Answer. / Class-11 History Suggestion FREE PDF Download) সফল হবে।

দিগন্তের প্রসার (ষষ্ঠ অধ্যায়) প্রশ্ন ও উত্তর 

দিগন্তের প্রসার (ষষ্ঠ অধ্যায়) প্রশ্ন ও উত্তর | দিগন্তের প্রসার (ষষ্ঠ অধ্যায়) Class 11 History Digonter Prosar Question and Answer Suggestion একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – দিগন্তের প্রসার (ষষ্ঠ অধ্যায়) প্রশ্ন ও উত্তর।

দিগন্তের প্রসার (ষষ্ঠ অধ্যায়) MCQ প্রশ্ন ও উত্তর | একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস 

দিগন্তের প্রসার (ষষ্ঠ অধ্যায়) MCQ প্রশ্ন ও উত্তর | দিগন্তের প্রসার (ষষ্ঠ অধ্যায়) Class 11 History Digonter Prosar Question and Answer Suggestion একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – দিগন্তের প্রসার (ষষ্ঠ অধ্যায়) MCQ প্রশ্ন উত্তর।

দিগন্তের প্রসার (ষষ্ঠ অধ্যায়) SAQ সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর | একাদশ শ্রেণির ইতিহাস 

দিগন্তের প্রসার (ষষ্ঠ অধ্যায়) SAQ সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর | দিগন্তের প্রসার (ষষ্ঠ অধ্যায়) Class 11 History Digonter Prosar Question and Answer Suggestion একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – দিগন্তের প্রসার (ষষ্ঠ অধ্যায়) SAQ সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর।

দিগন্তের প্রসার (ষষ্ঠ অধ্যায়) MCQ প্রশ্ন উত্তর – একাদশ শ্রেণি ইতিহাস | Class 11 History Digonter Prosar 

একাদশ শ্রেণি ইতিহাস (Class 11 History Digonter Prosar) – দিগন্তের প্রসার (ষষ্ঠ অধ্যায়) প্রশ্ন ও উত্তর | দিগন্তের প্রসার (ষষ্ঠ অধ্যায়) | Class 11 History Digonter Prosar Suggestion একাদশ শ্রেণি ইতিহাস – দিগন্তের প্রসার (ষষ্ঠ অধ্যায়) প্রশ্ন উত্তর।

একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | একাদশ শ্রেণির ইতিহাস প্রশ্ন ও উত্তর – দিগন্তের প্রসার (ষষ্ঠ অধ্যায়) প্রশ্ন উত্তর | Class 11 History Digonter Prosar Question and Answer Question and Answer, Suggestion 

একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – দিগন্তের প্রসার (ষষ্ঠ অধ্যায়) | একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – দিগন্তের প্রসার (ষষ্ঠ অধ্যায়) | পশ্চিমবঙ্গ একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – দিগন্তের প্রসার (ষষ্ঠ অধ্যায়) | একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস সহায়ক – দিগন্তের প্রসার (ষষ্ঠ অধ্যায়) প্রশ্ন ও উত্তর । Class 11 History Digonter Prosar Question and Answer, Suggestion | Class 11 History Digonter Prosar Question and Answer Suggestion | Class 11 History Digonter Prosar Question and Answer Notes | West Bengal Class 11th History Question and Answer Suggestion.

একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – দিগন্তের প্রসার (ষষ্ঠ অধ্যায়) MCQ প্রশ্ন উত্তর | WBCHSE Class 11 History Question and Answer, Suggestion 

একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – দিগন্তের প্রসার (ষষ্ঠ অধ্যায়) প্রশ্ন উত্তর প্রশ্ন ও উত্তর | দিগন্তের প্রসার (ষষ্ঠ অধ্যায়) । Class 11 History Digonter Prosar Question and Answer Suggestion.

WBCHSE Class 11th History Digonter Prosar Suggestion | একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – দিগন্তের প্রসার (ষষ্ঠ অধ্যায়)

WBCHSE Class 11 History Digonter Prosar Suggestion একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – দিগন্তের প্রসার (ষষ্ঠ অধ্যায়) প্রশ্ন উত্তর প্রশ্ন ও উত্তর । দিগন্তের প্রসার (ষষ্ঠ অধ্যায়) | Class 11 History Digonter Prosar Suggestion একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – দিগন্তের প্রসার (ষষ্ঠ অধ্যায়) প্রশ্ন উত্তর প্রশ্ন ও উত্তর ।

Class 11 History Digonter Prosar Question and Answer Suggestions | একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – দিগন্তের প্রসার (ষষ্ঠ অধ্যায়) | একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর 

Class 11 History Digonter Prosar Question and Answer একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – দিগন্তের প্রসার (ষষ্ঠ অধ্যায়) একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর Class 11 History Digonter Prosar Question and Answer একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর প্রশ্ন ও উত্তর – দিগন্তের প্রসার (ষষ্ঠ অধ্যায়) MCQ, সংক্ষিপ্ত, রোচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর ।

WB Class 11 History Digonter Prosar Suggestion | একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – দিগন্তের প্রসার (ষষ্ঠ অধ্যায়) MCQ প্রশ্ন উত্তর প্রশ্ন ও উত্তর 

Class 11 History Digonter Prosar Question and Answer Suggestion একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – দিগন্তের প্রসার (ষষ্ঠ অধ্যায়) MCQ প্রশ্ন ও উত্তর । Class 11 History Digonter Prosar Question and Answer Suggestion একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর।

West Bengal Class 11 History Suggestion Download WBCHSE Class 11th History short question suggestion . Class 11 History Digonter Prosar Suggestion download Class 11th Question Paper History. WB Class 11 History suggestion and important question and answer. Class 11 Suggestion pdf.পশ্চিমবঙ্গ একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস পরীক্ষার সম্ভাব্য সাজেশন ও শেষ মুহূর্তের প্রশ্ন ও উত্তর ডাউনলোড। একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস পরীক্ষার জন্য সমস্ত রকম গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তর।

Get the Class 11 History Digonter Prosar Question and Answer by Bhugol Shiksha .com

Class 11 History Digonter Prosar Question and Answer prepared by expert subject teachers. WB Class 11 History Suggestion with 100% Common in the Examination .

Class Eleven XI History Digonter Prosar Suggestion | West Bengal Council of Higher Secondary Education (WBCHSE) Class 11 Exam 

Class 11 History Digonter Prosar Question and Answer, Suggestion Download PDF: West Bengal Council of Higher Secondary Education (WBCHSE) Class 11 Eleven XI History Suggestion is provided here. Class 11 History Digonter Prosar Question and Answer Suggestion Questions Answers PDF Download Link in Free here.

দিগন্তের প্রসার (ষষ্ঠ অধ্যায়) একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | Class 11 History Digonter Prosar Question and Answer 

অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই ” দিগন্তের প্রসার (ষষ্ঠ অধ্যায়) একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | Class 11 History Digonter Prosar Question and Answer ” পােস্টটি পড়ার জন্য। এই ভাবেই Bhugol Shiksha ওয়েবসাইটের পাশে থাকো যেকোনো প্ৰশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলাে করো এবং নিজেকে তথ্য সমৃদ্ধ করে তোলো , ধন্যবাদ।

WhatsApp Channel Follow Now
Telegram Channel Follow Now