আদি কবি মহাঋষি বাল্মীকি জীবনী Maharishi Valmiki Biography in Bengali
আদি কবি মহাঋষি বাল্মীকি জীবনী Maharishi Valmiki Biography in Bengali

দস্যু রত্নাকর থেকে আদি কবি মহাঋষি বাল্মীকির জীবনী – Maharishi Valmiki Biography in Bengali

আদি কবি মহাঋষি বাল্মীকি জীবনী – Maharishi Valmiki Biography in Bengali : মহাভারতের মত রামায়ণও ভারতবর্ষের আর একটি মহাকাব্য । মহাভারতে আছে পারিবারিক জীবনের বাইরের বিস্তৃত কর্মধারার নীতিসমূহ । আর রামায়ণে আছে পারিবারিক জীবনের আদর্শসমূহ । মহাঋষি বাল্মীকি হলেন হিন্দু মহাকাব্য রামায়ণের স্রষ্টা এবং আদিকবিও। বাল্মিকীর জন্ম তারিখ সম্বন্ধে তেমন কোনো তথ্য জানা যায়নি কিন্তু শোনা যায় তিনি আশ্মিন মাসের শারদ পূর্নিমা তিথিতে জন্মগ্রহণ করেন এক ব্রাহ্মন পরিবারে।

মহর্ষি বাল্মীকির পিতার নাম ছিলো প্রচেতা কিন্তু তাঁর মাতার নাম সম্বন্ধে তেমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়না।

মহাঋষি বাল্মীকি সংক্ষেপে তথ্য (Maharishi Valmiki Information)

নাম (Name) মহাঋষি বাল্মীকি – Maharishi Valmiki
আসল নাম (Original Name) রত্নাকর (Ratnakar)
ধর্ম (Religion) হিন্দু (Hinduism)
পিতার নাম (Father Name) প্রচেতা (Pracheta)
জন্ম দিবস (Birthday) আশ্বিন মাসের শারদ পূর্নিমা তিথি
সম্মান (Honors) আদি কবি, মহাঋষি (Adi Kavi, Maharishi)
পেশা (Profession) ডাকাত, মহাকবি (Robber, Epic poet)
রচনা (Notable work) রামায়ণ (Ramayana)

মহর্ষি বাল্মীকি কে ছিলেন? (Who is Maharishi Valmiki in Bengali) :

মহর্ষি বাল্মীকি এক দস্যু ছিলেন। শৈশবে তিনি রত্নাকর নামে পরিচিত ছিলেন। মহর্ষি বাল্মীকি রামায়ণ রচনা করেন। একজন দস্যু কিভাবে মহর্ষি মহামুনিতে পরিণত হয় তা বাল্মীকির জীবন কাহিনীতে আমরা দেখতে পাই।

বাল্মীকির প্রথম জীবন (Maharishi Valmiki Early life in Bengali) :

উত্তরকাণ্ডে বাল্মীকির প্রথম জীবনের একটি কাহিনী পাওয়া যায় । রামায়ণ মহাকাব্যের রচয়িতা হলে মহর্ষি বাল্মীকি । তিনি এই মহাকাব্যের প্রাণপুরুষ ও অন্যতম চরিত্র । বাল্মীকির জীবন কাহিনী খুবই আশ্চর্যজনক । মানুষের জীবনে ভাল – মন্দ , দোষ – গুণ , শুভ – অশুভ সবই আছে । মানুষের জীবনে শুভবােধ যে কিভাবে আমূল পরিবর্তন এনে দিতে পারে , তার একমাত্র উদাহরণ হতে পারে বাল্মীকির জীবন।

একজন দস্যু কিভাবে মহামুনিতে রূপান্তরিতহতে পারেন , তার জলজ্যান্ত প্রমাণ হলেন মহাঋষি বাল্মীকি।

মহর্ষি বাল্মীকির শৈশব (Maharishi Valmiki Childhood in Bengali) :

 শৈশবে বাল্মীকি দস্যু রত্নাকর নামে পরিচিত ছিলেন । পরবর্তীকালে তিনি মহাঋষি হিসেবে স্বীকৃতিলাভ করেন।

প্রাচীনকালে দেবদ্বিজে ভক্তিমান এক ব্রাহ্মণ ছিলেন । তার নাম সুমতি । তার একমাত্র পুত্র হলেন রত্নাকর । 

ব্রাহ্মণ পরিবারের সদস্য হলেও রত্নাকরের দেবদ্বিজে কোন ভক্তি ছিল না । নিয়মিত শাস্ত্রপাঠ , আচার – অনুষ্ঠান পালন ইত্যাদি ব্রাহ্মণদের দৈনন্দিন ক্রিয়া কর্মগুলাে রত্নাকর মােটেও পালন করতেন না । তিনি পিতামাতার খুবই অবাধ্য সন্তান ছিলেন । সংসারের যাবতীয় কাজ ও দায় তার পিতাকেই পালন করতে হত।

 ব্রাহ্মণ সুমতি যেখানে পরিবার নিয়ে বাস করতেন , সেখানে একবার ভয়ানক আকারে দূর্ভিক্ষ দেখা দেয় । সংসার পালন করা খুবই দূরহ হয়ে পড়ল সুমতির কাছে । বাধ্য হয়ে তিনি পরিবারের সবাইকে নিয়ে ঘর ছেড়ে অন্য জায়গায় থাকবেন বলে চলে গেলেন।

দেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে অবশেষে ক্লান্ত হয়ে তারা এক গভীর অরন্যে এসে পৌছালেন । সেখানেই তাঁরা কুটির তৈরি করে বসবাস করতে শুরু করেন । এভাবেই নতুন জীবন শুরু হল সুমতির।

সংসার চালানাের জন্য কেন দস্যুবৃত্তিকেই বেছে নিলেন রত্নাকর :

ছােটবেলা থেকেই রত্নাকরের সঙ্গে লেখাপড়ার কোন যােগাযােগ ছিল না। ফলে তার পক্ষে সংসার চালানাে কঠিন হয়ে পড়ল। কোন উপায় না দেখে দস্যুবৃত্তিকেই বেছে নিলেন রত্নাকর।

 যে জঙ্গলে তারা বাস করতেন তার মধ্য দিয়ে পথিকদের যাতায়াত করার জন্য একটি পথ ছিল । রত্নাকর সারাদিন সেই পথের ধারে গাছের আড়ালে লুকিয়ে থাকতেন। কোন পথিক সেই পথে এলেই তার উপর ঝাপিয়ে পড়ে সর্বস্ব লুঠ করে তাকে হত্যা করতেন।

 এভাবেই চলল রত্নাকরের জীবনযাত্রা । রত্নাকর থেকে দস্যু রত্নাকরে রূপান্তরিত হলেন । সংসারের দায়ও মেটাতেন দস্যু বৃত্তি করে। বহু বছর এভাবেই চলল দস্যু রত্নাকরের কর্মকাণ্ড। নানা দেশের নানা জায়গায় ছড়িয়ে পড়ল তার বিভীষিকাময় দস্যু বৃত্তির কাহিনী ।

দস্যু রত্নাকর থেকে আদি কবি মহাঋষি বাল্মীকি হওয়ার কাহিনী :

দেবলােকেও এই সংবাদ গিয়ে পৌছাল । বিধাতাপুরুষের ইচ্ছে এই বিভীষিকাময় আদর্শ থেকে এক মহান আদর্শে রূপান্তর । তাই তার আদেশে দুইজন ঋষি ছদ্মবেশে ঐ জঙ্গলের মধ্য দিয়ে তীর্থযাত্রা করলেন ।

 দস্যু রত্নাকর যথারীতি গাছের আড়ালে লুকিয়ে ছিলেন । ঐ দুইজনকে দেখতে পেয়েই হুংকার দিয়ে তাদের পথ রােধ করে দাঁড়ালেন ।

 দস্যু রত্নাকর তাদের একবার দেখে নিয়ে বললেন , তােমাদের কাছে যা ধনসম্পদ আছে , তা এখুনি বের করে দাও । তারপর তােমাদের হত্যা করব । তার আগে ভগবানের কাছে প্রার্থনার কাজটুকু সেরে নাও । রত্নাকরের সঙ্গে এ পথে যারই একবার দেখা হত তাকে আর প্রাণ নিয়ে ফিরে যেতে হত না ।

 ঐ দুই ঋষির মধ্যে ঋষি অত্রি রত্নাকর দস্যুকে বললেন , শােন দস্যু , আমাদের হত্যা করার আগে আমার দুটো কথা তােমাকে শুনতে হবে । দেখ , আমরা তীর্থযাত্রী । আমাদের কাছে যৎসামান্যই ধনসম্পদ আছে । এই সামান্য ধনের জন্য তুমি ঋষি হত্যার পাপ বহন করবে । কেন ?

 রত্নাকর অবজ্ঞাভরে বললেন , দেখুন , আমি পাপকে মােটেও ভয় করি না । তার কারণ , এই বৃত্তি পালন করে আমি আমার সংসার প্রতিপালন করি । কেবলমাত্র আমার নিজের জন্য একাজ করি না। 

ঋষি অত্রি বললেন , তাহলে কার জন্য তুমি এপথ বেছে নিয়েছ ? দস্যু বললেন , আমি পথিকদের হত্যা করে যে ধনসম্পদ লুঠ করি তা দিয়ে আমার পিতামাতা, স্ত্রী – পুত্রের ভরণপােষণ করি । অতএব তারাও এইপাপের দায় বহন করবেন নিশ্চয়ই । 

ঋষি অত্রি বললেন , তুমি ভুল করছ । এই পাপের দায় একান্তই তােমাকে বহন করতে হবে । তােমার সংসারের আর কোনও সদস্য এই পাপের দায় বহন করবেন না । 

 দস্যু এর প্রতিবাদ করলে ঋষি অত্রি বললেন , ঠিক আছে , তুমি আমাদের দুইজনকে গাছের সঙ্গে বেঁধে রেখে বাড়িতেগিয়ে তােমার পিতা – মাতা ও স্ত্রী – পুত্রকে জিজ্ঞাসা কর যে , তারা তােমার এই পাপের বােঝা বহন করতে স্বীকার করবেন কি ?

 দস্যু রত্নাকর পড়লেন মহা সমস্যায় । দস্যু হলেও তিনি ব্রাহ্মণের সন্তান । তাই জন্মগতভাবে নিজ নিজ কর্মফলের চিন্তা ও পাপের ভয় তার মনে উকিঝুকি মারছিল । তিনি গভীর চিন্তায় পড়লেন ।এরপর তিনি ঐ দুইজন ঋষিকে গাছের সঙ্গে বেঁধে রেখে নিজের বাড়িতে দৌড়ে গেলেন ।

 প্রথমেই পিতার কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন , পিতা , আমি দস্যুবৃত্তির দ্বারা আপনাদের ভরণপােষণ নির্বাহ করছি । তাই দস্যুবৃত্তির জন্য যে পাপ আমার হচ্ছে , তার দায় আপনি নেবেন তাে ?

 ছেলের কথা শুনে বৃদ্ধ পিতা বললেন , দেখ পুত্র বৃদ্ধ পিতামাতার ভরণপােষণ করা প্রতিটি পুত্রেরই কর্তব্য । আমার পুত্র হিসাবে তােমার থেকে সেবা গ্রহণ করা পাপ নয় । কিন্তু দস্যুবৃত্তি করে তুমি যে পাপ সঞ্চয় করেছ তার কোন দায় আমি গ্রহণ করতে পারি না । পিতার কথা শুনে রত্নাকর ব্যথিত চিত্তে গেলেন স্ত্রীর কাছে । স্ত্রী ও তাঁর পিতার মতেই সায় দিলেন ।এরপর রত্নাকর মা ও পুত্রকে একই কথা বললেন । তারাও জানালাে যে তারা কেউ তার এই পাপের দায় বহন করতে পারবেন ।

দস্যু রত্নাকরের অন্তদৃষ্টি লাভ :

 দস্যু রত্নাকরের অন্তদৃষ্টি লাভ হল । তিনি যথার্থই বুঝলেন যে , এই সংসারে তিনি একেবারেই একা । দিনের পর দিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তিনি সংসারের জন্য যে পাপ কাজ করেছেন , তার দায় একান্তই তার । কেউ তাঁকে সাহায্যের জন্য এগিয়ে এল না ।

 ঘর থেকে দ্রুত বেরিয়ে গেলেন দস্যু রত্নাকর । আবার সেই জঙ্গলে ফিরে গেলেন যেখানে ঐ দুই ঋষি গাছের সঙ্গে বাঁধা আছে । তিনি ঐ দুইজন ঋষির বাঁধন খুলে দিয়ে ঋষি অত্রির পদতলে লুটিয়ে পড়লেন । আর কাতর স্বরে পাপমুক্তির পথ বলে দিতে অনুরােধ করলেন ।

 ঋষি অত্রি তাকে সান্তনা দিয়ে বললেন , তুমি পাপমুক্ত হতে পার কেবলমাত্র পবিত্র রাম নাম জপ করলেই । তিনি রত্নাকরকে রাম নাম জপ করতে পরামর্শ দিয়ে বিদায় নিলেন ।

 এবার ঋষি অত্রির কাছ থেকে রামনাম মহামন্ত্র লাভ করে রত্নাকর । বসলেন রাম নাম মহামন্ত্র জপ করতে । তার চিত্ত চঞ্চল হয়ে উঠেছে । কিভাবে তার আত্মশুদ্ধি হবে তাই তাঁর একমাত্র চিন্তা ।

মহর্ষি বাল্মীকি একমনে রামনাম মহামন্ত্র জপ :

 একটা গাছের নিচে একাসনে তিনি রাম নাম মহামন্ত্র জপ করে চললেন দিনের পর দিন , মাসের পর মাস , বছরের পর বছর , ক্ষুধা তৃষ্ণা ভুলে একমনে রামনাম মহামন্ত্র জপ করে চলেছিল ।এভাবে জপ করতে করতে তার চারপাশে নানা আগাছা গজিয়ে  উঠল । তার সারা শরীর ঢেকে গেল বল্মীক বা উইপােকায় । বল্মীকে তার দেহ ঢেকে গিয়েছিল বলে তার নাম হয়েছিল বাল্মীকি ।

 ‘ রাম – নাম মহামন্ত্র জপ করে আত্মজ্ঞান লাভ করে মহর্ষি হিসেবে বরণীয় হলেন । বল্মীকের মতই ঝড়ে পড়ে গেল তার দস্যুবৃত্তির নৃশংসতা ।

 তমসা নদীর তীরে মহর্ষি বাল্মীকি আশ্রম স্থাপন করলেন । অপূর্ব সুন্দর সেই প্রাকৃতিক পরিবেশ । এবার তিনি হলেন আশ্রমবাসী । ভরদ্বাজ মুনি তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করলেন ।

 বাল্মীকির আশ্রমে একদিন দেবর্ষি নারদ এলেন ধর্মালােচনা করতে । বাল্মীকি তাকে বললেন , হে ঋষিবর , ত্রিভূবনের সব খবর আপনি জানেন । অনুগ্রহ করে আমাকে বলুন , পৃথিবীর মধ্যে গুণবান , ধর্মজ্ঞ , সত্যবাদী , বীর্যবান আদর্শ পুরুষ কে ? তাঁর নাম ও পরিচয় আমাকে বিস্তারিতভাবে জানান ।

 দেবর্ষি নারদ বললেন , হে মহামুনি , আপনি যে মহান পুরুষের সম্পর্কে জানতে চাইছেন , সেরকম পুরুষ খুবই দুর্লভ । কেবল ইক্ষাকু বংশের অযােধ্যার রাজা দশরথের পুত্র রাম এখন পৃথিবীতে বাস করছেন । তার কাহিনী আপনাকে বলছি ।

 রাজা দশরথের মৃত্যুর পর রাম রাজা হন । তিনি বাল্মীকির সমসাময়িক ছিলেন । অযােধ্যার দক্ষিণে প্রবাহিতগঙ্গার দুই উস্কুলে ‘ বিশাল অরণ্য । সেই অরণ্যের মাঝখান দিয়ে প্রবাহিত তমসা নদী ।

 দেবর্ষি নারদ বিদায় নেবার পর বাল্মীকিতমসা নদীতে স্নান করতে গেলেন । সঙ্গে চললেন গুরুর বল্কল হাতে শিষ্য ভরদ্বাজ । বাল্মীকির মন – প্রাণ জুড়ে আছে কেবলমাত্র রামের কথা ।

 ঘন অরণ্যের পথ ধরে যখন তারা যাচ্ছেন নদীর দিকে , তখন একজোড়া ক্রৌঞ্চ ( বক ) গাছের শাখায় মনের আনন্দে মিথুনে ব্যস্ত ছিল ।

 জঙ্গলের আড়াল থেকে এক ব্যাধ ঐ ক্রৌঞ্চকে দেখতে পেল । সে তীর ছুঁড়ে ঐ ক্রৌঞ্চকে বধ করল । প্রচণ্ড যন্ত্রণায় মাটিতে ছিটকে পড়ে কাতরাতে লাগল । ক্রৌঞ্চী এই করুণ দৃশ্য দেখে বিরহে কাতর হয়ে চিৎকার করতে লাগল ।

 এই করুণ দৃশ্য দেখে বাল্মীকির মনে যেমন ক্রোধ তেমনি করুণার উদয় হল । সেই মুহুর্তে শােকার্ত ক্রৌঞ্চীর বেদনায় তার অন্তরের অন্তস্থল থেকে মুখ দিয়ে নিজের অজান্তে বেরিয়ে এল এক ছন্দময় কবিতা:

“মা নিষাদ ! প্রতিষ্ঠাং ত্বমগমঃ শাশ্বতী সমাঃ । 

 যৎ ক্রৌঞ্চমিথুনাদেকমবধীঃ কামমােহিত ।।” 

অর্থাৎ হে নিষাদ ( ব্যাধ ) , ক্রৌঞ্চের মিথুনের সময় তুই তাকেবধ করে যে জঘন্য কাজ করলি , তার জন্য সমাজে চিরকাল নিন্দিত হয়ে থাকবি ।

 বাল্মীকি নিজেই তার এই শ্লোক শুনে বিস্মিত হলেন । কিভাবে তিনি এই ছন্দোবদ্ধ কবিতা আবৃত্তি করলেন । শিষ্য ভরদ্বাজকে তিনি বললেন , শােন ভরদ্বাজ , আমার মুখ দিয়ে যে ছন্দোবদ্ধ কবিতা আবৃত্তি হল , তা শােক থেকে উৎপন্ন হয়েছে । তাই এটি শ্লোক নামে জগতে খ্যাত হবে ।

 মহামুনি বাল্মীকির মুখ থেকে যে ছন্দোবদ্ধ কবিতা আবৃত্তি হল , সেটিই আজশ্লোক । রামের সমস্ত ঘটনা এই শ্লোকের মাধ্যমে বিবৃত ছিল বলে বাল্মীকিকে বলা হয় আদি কবি ।

 শিষ্য ভরদ্বাজের সঙ্গে আলােচনার সময় সেখানে প্রজাপতি ব্রহ্ম আবির্ভুত হলেন । তিনি বাল্মীকিকে বললেন , হে মহামুনি , তুমি যে অবৃত্তি করে শ্লোক তৈরি করলে তা আমারই ইচ্ছায় সম্পন্ন হয়েছে । দেবর্ষি নারদের কাছে তুমি রামের ঘটনা সব শুনেছ । আমার ইচ্ছা , তুমি তা শ্লোকবদ্ধ করে রচনা কর ।

বাল্মীকির রামায়ণ মহাকাব্য রচনা :

 প্রজাপতি ব্রহ্মার আদেশে মহামুনি বাল্মীকি এরপর রামায়ণ মহাকাব্য রচনা করলেন । এই মহাকাব্যে প্রায় চব্বিশ হাজার শ্লোকে অনুষ্টুপ ছন্দে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে সেই কাহিনী । সেই কাহিনী রামায়ন নামে খ্যাত হয়েছে ।

বাল্মীকি জয়ন্তী কখন পালিত হয় :

আশ্বিন মাসের পূর্ণিমাতে বাল্মীকি জন্মগ্রহণ করেছিলেন, এই দিনটিকে হিন্দু বর্ষপঞ্জিতে বাল্মীকি জয়ন্তী বলা হয়।

বাল্মীকি জয়ন্তীর গুরুত্ব :

বাল্মীকি  ছিলেন আদি কবি।  তিনি শ্রোকার প্রবর্তক হিসাবে বিবেচিত, তিনি সংস্কৃতের প্রথম শ্লোক রচনা করেছিলেন।  এই জন্মবার্ষিকীটি প্রকাশ্য দিন হিসাবেও পরিচিত।

বাল্মীকি জয়ন্তী কিভাবে পালিত হয়?

 বাল্মীকি জয়ন্তী উদযাপিত হয় ভারতে।  বিশেষত উত্তর ভারতে এর গুরুত্ব। 

  • বিভিন্ন ধরণের ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
  • শোভাযাত্রা সাজানো
  • মিষ্টি, ফল, বাসন বিতরণ করা হয়।

বাল্মীকির জীবনের জ্ঞান প্রত্যেককে দেওয়া হয় যাতে এর থেকে অনুপ্রেরণা নেওয়ার যেতে পরে, মানুষ খারাপ কর্ম ছেড়ে এবং তার মনকে এই কাজের প্রতি মনোনিবেশ করে।

মহর্ষি বাল্মীকি সম্পর্কে অজানা তথ্য – Facts About Maharshi Valmiki in Bengali :

  1. মহর্ষি বাল্মীকি যেই রামায়ণ লিখেছিলেন, সেটা সম্পূর্ণ সংস্কৃত ভাষায় ছিলো। আর সেটা কিন্তু গল্পের আকারে মোটেই লেখা ছিলো না, সেটা সম্পূর্ণ ছিলো কবিতার আকারে লেখা।
  2. বাল্মীকির রচিত “রামায়ণই” হলো পৃথিবীর প্রথম লেখা কোনো সংস্কৃত কবিতা, যা আদিকাব্য (First Poem) নামেও পরিচিত।
  3. মহর্ষি বাল্মীকিকে আদিকবি (First Poet) বলা হয়ে থাকে।
  4. “বাল্মীকা” এর সংস্কৃত নামের বাংলা অর্থ হলো পিপড়ের ঢিবি। মহর্ষি নারদমুনির সৌজন্যে দস্যু রত্নাকর, এই “বাল্মীকা” নামের থেকেই “বাল্মীকি” নামটা পেয়েছিলেন।
  5. মহর্ষি বাল্মীকি ও ভগবান রাম সমসাময়িক সময়ে জন্মগ্রহণ করেন। আর হিন্দু পুরান অনুসারে সেই যুগ ছিলো “ত্রেতা যুগ” নামে পরিচিত।

আদি কবি মহাঋষি বাল্মীকি জীবনী – প্রশ্ন ও উত্তর | Maharishi Valmiki Biography in Bengali – Question and Answer or QNA

  1. মহর্ষি বাল্মীকি কবে জন্মগ্রহণ করেন?

Ans : আশ্বিন মাসের পূর্ণিমাতে বাল্মীকি জন্মগ্রহণ করেছিলেন।

  1. শৈশবে বাল্মীকি কি নামে পরিচিত ছিলেন?

Ans : দস্যু রত্নাকর নামে পরিচিত ছিলেন ।

  1. কে রামায়ণ রচনা করেন?

Ans : মহর্ষি বাল্মীকি রামায়ণ রচনা করেন।

  1. রত্নাকর এর নাম বাল্মীকি হয়েছিল কেন?

Ans : বল্মীকে তার দেহ ঢেকে গিয়েছিল বলে তার নাম হয়েছিল বাল্মীকি।

  1. কোন নদীর তীরে মহর্ষি বাল্মীকি আশ্রম স্থাপন করেছিলন?

Ans : তমসা নদীর তীরে মহর্ষি বাল্মীকি আশ্রম স্থাপন করেছিলন।

  1. কার আদেশে মহামুনি বাল্মীকি রামায়ণ মহাকাব্য রচনা করেছিলেন?

Ans : প্রজাপতি ব্রহ্মার আদেশে মহামুনি বাল্মীকি রামায়ণ মহাকাব্য রচনা করেছিলেন ।

  1. রামায়ণ মহাকাব্যে কতগুলি শ্লোকে আছে?

Ans : রামায়ণ মহাকাব্যে প্রায় চব্বিশ হাজার শ্লোকে আছে।

  1. বাল্মীকি জয়ন্তী কবে পালন করা হয়?

Ans : আশ্বিন মাসের পূর্ণিমাতে বাল্মীকি জন্মগ্রহণ করেছিলেন, এই দিনটিকে হিন্দু বর্ষপঞ্জিতে বাল্মীকি জয়ন্তী বলা হয়।

  1. বাল্মীকির বাবার নাম কি ছিল?

Ans : রত্নাকর।

  1. কোনকাণ্ডে বাল্মীকির প্রথম জীবনের একটি কাহিনী পাওয়া যায়?

Ans : উত্তরকাণ্ডে বাল্মীকির প্রথম জীবনের একটি কাহিনী পাওয়া যায়।

মহাঋষি বাল্মীকি জীবনী – Maharishi Valmiki Biography in Bengali 

        অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই ” আদি কবি মহাঋষি বাল্মীকি জীবনী – Maharishi Valmiki Biography in Bengali  ” পােস্টটি পড়ার জন্য। এই ভাবেই BhugolShiksha.com ওয়েবসাইটের পাশে থাকো যেকোনো প্ৰশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলাে করো এবং নিজেকে  তথ্য সমৃদ্ধ করে তোলো , ধন্যবাদ।