কাশীরাম দাসের জীবনী - Kashiram Das Biography in Bengali
কাশীরাম দাসের জীবনী - Kashiram Das Biography in Bengali

কাশীরাম দাসের জীবনী – Kashiram Das Biography in Bengali

কাশীরাম দাসের জীবনী – Kashiram Das Biography in Bengali : বাংলা ভাষায় মহাভারতের শ্রেষ্ঠ অনুবাদক কাশীরাম দাস একটি সংক্ষিপ্ত জীবনী। কাশীরাম দাসের জীবনী সম্পর্কে নীচে আলোচনা করা হল। A short biography of the famous Novelist Kashiram Das. A short information of Kashiram Das Birth, Place, Biography in Bengali are given below.

কাশীরাম দাস কে ছিলেন? (Who is Kashiram Das)

কাশীরাম দাস সংস্কৃত ভাষায় সুপণ্ডিত ছিলেন। তিনি অধুনা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার আবাসগড়ের জমিদার বাড়ির আশ্রয়ে থেকে শিক্ষকতা করতেন। কথিত আছে, উক্ত জমিদার বাড়িতে কথক ও সংস্কৃত পণ্ডিতদের মুখে মহাভারতের কাহিনী শুনে তিনি বাংলা ভাষায় মহাভারত অনুবাদে উদ্বুদ্ধ হন।

         “ মহাভারতের কথা অমৃত সমান । 

            কাশীরাম দাস কহে শুনে পুণ্যবান ।। ” 

ভারতের সর্বশ্রেষ্ঠ মহাকাব্য মহাভারত । এটি কেবল পুণ্যকাহিনীই নয় । জ্ঞান – বিজ্ঞানের আকর স্বরূপ । ভারত তথা মানবজাতির সর্বজনীন বিধি নীতির আধার। প্রাচীন ভারতের বেদ উপনিষদসহ সমস্ত পুরাণের মূল উৎস হল মহাভারত মহাগ্রন্থ । তাই তাকে বলা হয় পঞ্চম বেদ । 

কাশীরাম দাসের সংক্ষিপ্ত জীবনী – Kashiram Das Short Biography in Bengali

নাম (Name) কাশীরাম দাস (Kashiram Das)
জন্ম (Birthday) প্রায় ১৬০০ খ্রিঃ
অভিভাবক (Guardian)  কমলাকান্ত (বাবা)
পেশা (Career) ঔপন্যাসিক
উল্লেখযোগ্য কর্ম মহাভারত, সত্যনারায়ণের পুঁথি, স্বপ্নপর্ব, জলপর্ব ও নলোপাখ্যান।
মৃত্যু (Death) প্রায় ১৬৫০ খ্রিঃ

কাশীরাম দাসের জন্ম (Kashiram Das’s Birthday) :

কবির বাস্তুভিটা তার পুত্র ১০৮৫ খ্রিঃ তাদের কুলপুরােহিতকে দান করেন । এই দানপত্র থেকে অনুমান করা হয় কাশীরাম প্রায় ১০০০ খ্রিঃ কিছুকাল পরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন ।

কাশীরাম দাসের পিতৃপরিচয় (Kashiram Das’s Family) :

কাশীরামের প্রপিতামহের নাম ছিল প্রিয়ঙ্কর । পিতামহের নাম সুধাকর এবং পিতার নাম কমলাকান্ত । কাশীরাম ছিলেন পিতার মধ্যম পুত্র । তার অগ্রজের নাম কৃষ্ণদাস ও কনিষ্ঠের নাম গদাধর । জ্যেষ্ঠ কৃষ্ণদাস ভাগবতের বঙ্গানুবাদ করে শ্রীকৃষ্ণবিলাস কাব্য রচনা করেন । কনিষ্ঠপুত্র গদাধর জগন্নাথ মঙ্গল কাব্যের রচয়িতা । 

কাশীরাম দাসের বাসস্থান :

কাশীরামের বাসস্থান সিদ্ধিগ্রাম বর্তমানে সিঙ্গিগ্রাম নামে পরিচিত । অনুমান করা হয় সিদ্ধি গ্রামের পার্শ্ববর্তী গ্রামের জমিদার এই গ্রাম নিজ গ্রামের সঙ্গে যুক্ত করায় সিদ্ধিগ্রাম নামটি লােপ পায় । অনেকের মতে দাইহাটের নিকট সিদ্ধিগ্রাম অঞ্চলেই কবির পৈতৃক ভিটা বর্তমান ছিল । কবি কাশীরামদাস মেদিনীপুর জেলার আবাসগড়ের রাজার আশ্রয়ে একটি পাঠশালা স্থাপন করে শিক্ষকতা করতেন । 

প্রায়ই রাজবাড়িতে কথক – গায়কদের সেই সময় আগমন ঘটত এবং তারা মহাভারত পুরাণাদি পাঠ করতেন । কথকদের মুখে কথকতা শুনেই কবির মনে বাংলা ভাষায় । মহাভারত রচনার আগ্রহ জন্মে । পরবর্তী কালে তার রচিত মহাভারতেই কালােত্তীর্ণ হয়ে বাঙালীর ঘরে ঘরে স্থান লাভ করে । 

কাশীরাম দাসের জীবনকাহিনী Kashiram Das’s Life-history : 

পুণ্যশ্লোক কাশীরাম দাসের জীবনকাহিনী আজও রয়েছে অতীতের অন্ধকার আবর্তে । কবি নিজের পরিচয় মহাভারত মহাকার্যে নিজেই লিপিবদ্ধ করে গেছেন : 

ইন্দ্রানী নামেতে দেশ পূৰ্ব্বাপর স্থিতি । 

দ্বাদশ তীর্থেতে যথা বৈসে ভাগীরথী । 

কায়স্থ – কুলেতে জন্ম বাস সিদ্ধিগ্রাম । 

প্রিয়ঙ্কর দাসসুত সুধাকর নাম ।। 

তৎপুত্র কমলাকান্ত কৃষ্ণদাস পিতা । 

কৃষ্ণদাসানুজ গদাধর জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা ।। 

পাঁচালী প্রকাশি কহে কাশীরাম দাস । 

অলি হব কৃষ্ণপদে মনে অভিলাষ ।। 

এ থেকে জানা যায় , ইন্দ্রানী পরগণার অন্তর্গত সিদ্ধি নামে এক গ্রামে তার জন্ম হয় এবং ভাগীরথীর তীরে তার বাসস্থান ছিল । সেখানে বারােটি তীর্থও ছিল । এই তথ্য সম্বন্ধে একটি কবিতা প্রচলিত আছে । যেমন : 

বার ঘাট , তের ঘাট , তিন চণ্ডী , তিন ঈশ্বর । 

এই যে বলিতে পারে তার ইন্দ্রানীতে ঘর ।। 

আজও সিদ্ধিগ্রামের কাছে গঙ্গার তীরে বারােটি তীর্থ অর্থাৎ ঘাটের ধ্বংসাবশেষ দেখা যায় । ইন্দ্রেশ্বর নামে এক শিব মন্দিরের চিহ্ন আজও বিদ্যমান । অতএব , বর্ধমান জেলার কাটোয়া মহকুমার অন্তর্গত ইন্দ্রানী পরগনায় সিদ্ধিগ্রাম যে কবি কাশীরাম দাসের জন্মস্থান তাতে কোন সন্দেহ নেই । এখানে তিনি একটি পুকুর খনন করান , যা আজও ‘ কেশেপুকুর ’ নামে পরিচিত । সিদ্ধি গ্রাম এখন সিঙ্গিগ্রাম নামে পরিচিত । 

মহাভারতের শ্লোক সংখ্যা :

ষাট লক্ষ শ্লোকে মহাভারত প্রথম রচনা করেন মহামুনি কৃষ্ণ দ্বৈপায়ন বেদব্যাস । এই ষাট লক্ষ শ্লোকের মধ্যে ত্রিশ লক্ষ দেবলােকে , পনের লক্ষ পিতৃলােকে , চৌদ্দ লক্ষ গন্ধর্বলােকে এবং বাকি লক্ষ শ্লোক মর্তলােকে প্রচারিত হয়েছিল । এই লক্ষ শ্লোক পরবর্তীকালে ভারতবর্ষের প্রাজ্ঞ পন্ডিতমন্ডলী মূল সংস্কৃত থেকে বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ করেন । বাংলা ভাষায় যে অনুবাদটি সর্বজন প্রিয় ও বহুল প্রচলিত তা রচনা করেছিলেন কাশীরাম দাস । 

কাশীদাসী মহাভারত : 

কাশীরাম দাস রচিত অনুবাদটি কাশীদাসী মহাভারত নামে জনপ্রিয়। যদিও কবি এটির নামকরণ করেছিলেন ভারত-পাঁচালী

কাশীদাসী মহাভারতে বিরাট পর্বের শেষে কবি একটি ভণিতায় বিরাট পর্ব অনুবাদের সমাপ্তি কাল নির্দেশ করেছেন –

              চন্দ্র বাণ পক্ষ ঋতু শক সুনিশ্চয়।

           বিরাট হইল সাঙ্গ কাশীদাস কয়।।”

কাশীরাম দাসের মহাভারত জনসমাজে স্বীকৃতি:

অনেককবি মহাভারতের বঙ্গানুবাদ করেছিলেন , কিন্তু কালজয়ী হয়েছেন নিঃসন্দেহে কাশীরাম দাসের মহাভারত । 

কাশীরামের পূর্ববর্তী অনুবাদকগণ পান্ডিত্যপূর্ণ ভাষায় মূল গ্রন্থের আক্ষরিক অনুবাদ করেছিলেন । ভক্তি ও ভাবধারা তাদের চিন্তাধারাকে সঞ্জীবিত করেনি ।

সরল , প্রাঞ্জল অথচ সুন্দর সরস ভাষায় পয়ার ছন্দে রচিত কাশীরাম দাসের মহাভারত যুগের পর যুগ বাংলার গ্রামে গঞ্জে , নগরে , বন্দরে ভক্ত ও রসিক নরনারীর কণ্ঠে ঝঙ্কৃত হয়ে চলেছে। 

কাশীরাম দাসের রচিত পুস্তকাদি :

কাশীরাম দাস বাংলায় মহাভারত মহাকাব্য অনুবাদ ভারত পাঁচালী কাব্য রচনা করে গেছেন। এছাড়াও, তার রচিত অপর গ্রন্থগুলাে হল সত্যনারায়ণের পুঁথি, স্বপ্নপর্ব, জলপর্ব ও নলোপাখ্যান কাব্যগ্রন্থের উল্লেখ পাওয়া যায়।

কাশীরাম দাসের অকালমৃত্যু :

কাশীরাম মহাভারতের আদি , সভা , বন ও বিরাট পর্ব পর্যন্ত রচনা করেছিলেন বলে জানা যায় । ইতিমধ্যেই তার অকালমৃত্যু ঘটলে মহাভারতের অবশিষ্ট পর্বের অনুবাদ করে যেতে পারেননি । গদাধরের পুত্র নন্দরামকে অন্তিম সময় তিনি তার আরব্ধ কাজ সম্পূর্ণ করার আদেশ করে যান । জ্যেষ্ঠতাতের আদেশে নন্দরাম মহাভারতের অনুবাদ সম্পূর্ণ করেন । 

কাশীরামের মহাভারতের প্রথম চার পর্ব সর্বপ্রথম শ্রীরামপুর মিশন প্রেস থেকে ১৮০১ – ০৩ খ্রিঃ ছাপা হয় । ১৮৩৬ খ্রিঃ এই প্রেস থেকেই জয়গােপাল তর্কালঙ্কারের সম্পাদনায় মহাভারতের সম্পূর্ণ সংস্করণ প্রকাশিত হয় । 

কাশীরাম দাসের জীবনী – Kashiram Das Biography in Bengali FAQ

  1. কাশীরাম দাস কে ছিলেন?

Ans: সংস্কৃত পণ্ডিতদের মুখে মহাভারতের কাহিনী শুনে তিনি বাংলা ভাষায় মহাভারত অনুবাদে উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন।

  1. ভারতের সর্বশ্রেষ্ঠ মহাকাব্য কোনটি?

Ans: ভারতের সর্বশ্রেষ্ঠ মহাকাব্য মহাভারত ।

  1. কাশীরাম দাসের প্রপিতামহের নাম কি ছিল?

Ans: কাশীরাম দাসের প্রপিতামহের নাম ছিল প্রিয়ঙ্কর। 

  1. কাশীরাম দাসের পিতামহের নাম কি?

Ans: কাশীরাম দাসের পিতামহের নাম সুধাকর।

  1. কাশীরাম দাসের পিতার নাম কি?

Ans: কাশীরাম দাসের পিতার নাম কমলাকান্ত । 

  1. কাশীরাম দাস কয় ভাই ও নাম কি?

Ans: কাশীরাম দাস তিন ভাই ছিল । কাশীরাম ছিলেন পিতার মধ্যম পুত্র । তার অগ্রজের নাম কৃষ্ণদাস ও কনিষ্ঠের নাম গদাধর । 

  1. কৃষ্ণদাস কোন কাব্য রচনা করেন?

Ans: কৃষ্ণদাস ভাগবতের বঙ্গানুবাদ করে শ্রীকৃষ্ণবিলাস কাব্য রচনা করেন । 

  1. জগন্নাথ মঙ্গল কাব্যের রচয়িতা করেন কে?

Ans: গদাধর জগন্নাথ মঙ্গল কাব্যের রচয়িতা । 

  1. কাশীরাম দাসের রচিত গ্রন্থগুলাে কি কি?

Ans: কাশীরাম দাসের রচিত গ্রন্থগুলাে হল সত্যনারায়ণের পুঁথি, স্বপ্নপর্ব, জলপর্ব ও নলোপাখ্যান।

  1. কাশীরাম দাস রচিত অনুবাদটি কি নামে জনপ্রিয়?

Ans: কাশীরাম দাস রচিত অনুবাদটি কাশীদাসী মহাভারত নামে জনপ্রিয়।

কাশীরাম দাসের জীবনী – Kashiram Das Biography in Bengali 

      অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই ” আদি কবি কাশীরাম দাসের জীবনী – Kashiram Das Biography in Bengali  ” পােস্টটি পড়ার জন্য। এই ভাবেই BhugolShiksha.com ওয়েবসাইটের পাশে থাকো যেকোনো প্ৰশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলাে করো এবং নিজেকে  তথ্য সমৃদ্ধ করে তোলো , ধন্যবাদ।