মুকুন্দ দাস জীবনী - Mukunda Das Biography in Bengali
মুকুন্দ দাস জীবনী - Mukunda Das Biography in Bengali

মুকুন্দ দাস জীবনী

Mukunda Das Biography in Bengali

মুকুন্দ দাস জীবনী – Mukunda Das Biography in Bengali : মুকুন্দ দাস একজন চারণকবি । তিনি ছিলেন একজন সুগায়ক । মুকুন্দদাসের সংগীতের জনপ্রিয়তা আজও এতটুকু কম হয়নি । লােকসাধারণের কথা শুনেই নিত মুখে মুকুন্দ দাস (Mukunda Das) গান রচনা করতেন ।

 চারণ কবি মুকুন্দ দাসের একটি সংক্ষিপ্ত জীবনী । মুকুন্দ দাস জীবনী – Mukunda Das Biography in Bengali বা মুকুন্দ দাসের আত্মজীবনী বা মুকুন্দ দাস (Mukunda Das Jivani) জীবন রচনা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

মুকুন্দ দাস কে ছিলেন ? Who is Mukunda Das ?

মুকুন্দ দাস (Mukunda Das) ছিলেন একজন বাঙালি কবি যাকে চারণ কবি বলেও অভিহিত করা হয়। মুকুন্দ দাস স্বদেশী ও অসহযোগ আন্দোলনের সময় বহু স্বদেশী বিপ্লবাত্মক গান ও নাটক রচনা করে খ্যাতি অর্জন করেন। মুকুন্দ দাস (Mukunda Das) ছিলেন স্বদেশী যাত্রার প্রবর্তক। প্রকৃতপক্ষে মুকুন্দ দাস (Mukunda Das) একজন চারণকবি ছিলেন।

চারণ কবি মুকুন্দ দাসের জীবনী – Mukunda Das Biography in Bengali :

নাম (Name) মুকুন্দ দাস (Mukunda Das)
জন্ম (Birthday) ২২ ফেব্রুয়ারি ১৮৭৮ (22 February 1878)
জন্মস্থান। (Birthplace) ঢাকা, বাংলাদেশ
অভিভাবক (Parents)/পিতামাতা  গুরুদয়াল দাস ও শ্যামসুন্দরী দেবী 
পেশা (Occupation) নাট্যকার, সুরকার, কবি
দাম্পত্য সঙ্গী সুভাষিনী দেবী 
জাতীয়তা ব্রিটিশ ভারতীয়
মৃত্যু (Death) ১৮ মে ১৯৩৪ (18th May 1934)

মুকুন্দ দাসের জন্ম ও পরিবার – Mukunda Das’s Birthday and His Family :

 ২২ শে ফেব্রুয়ারি ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে মুকুন্দদাসের জন্ম । জন্মস্থান ঢাকার বানরী গ্রামে । তার পিতার নাম ছিল গুরুদয়াল দে । মুকুন্দরামের পিতৃদত্তনাম যজ্ঞেশ্বর ।

 তার পিতা গুরুদয়াল কর্মরত ছিলেন বরিশালে এক ডেপুটির আদালতে । তাই কর্মউপলক্ষে তাঁকে বরিশালেই থাকতে হয় । তিনি সপরিবারে এই বরিশালেই বসবাস করতেন । ফলে মুকুন্দদাসের বাল্য জীবন কাটে এখানে । আর এখানকার স্কুলে তার পড়াশুনা আরম্ভ হয় । 

মুকুন্দ দাসের শৈশবকাল – Mukunda Das’s Childhood :

 মুকুন্দদাসের পারিবারিক অবস্থা খুবই খারাপ ছিল । দারিদ্র অভাব অনটনের মধ্যে তাদের দিন চলত । পড়াশুনা করানাের মত আর্থিক স্বচ্ছলতা তাদের ছিল না বলে , মুকুন্দরাম পড়াশুনাকে খুব বেশি দূর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে নি । 

 কিশাের বয়স থেকে তিনি কাজে নিযুক্ত হন । ফলে পিতার সাথে তিনি মুদি দোকানে বসতে শুরু করেন । 

 ছেলেবেলা থেকেই ছিলেন স্বাধীনচেতা আর অত্যন্ত দুরন্ত । গানের গলা ছিল মিষ্টি । শুনে শুনেই গান তুলতে পারতেন ।

মুকুন্দ দাসের কর্মজীবন – Mukunda Das’s Work Life :

 বরিশালের তৎকালীন নায়েব বীরেশ্বর গুপ্ত একটি কীর্তনের দল । করেছিলেন । মুকুন্দ সেই কীর্তনেরদলে যােগ দেন ১৯ বছর বয়সে । পরে নিজেই একটি দল গড়েন ।

 নানা পূজাপার্বণে কীর্তনের দল নিয়ে বরিশালের বিভিন্ন স্থানে যেতে হত । এইভাবে অনেককীর্তনীয়া দলের সঙ্গে যােগাযােগ হয় ।

মুকুন্দ দাসের কীর্তন সঙ্গীত গ্রন্থ :

 তিনি পছন্দমত গান অন্য কর্তনীয়াদের কাছ থেকে টুকে রাখতেন । পরে এই সব উপাদান ও তার নিজস্ব সৃষ্টি কিছুগান একটি গ্রন্থে । লিপিবদ্ধ করেন । গ্রন্থটির নাম দেন “কীর্তন সঙ্গীত” ।

 মুকুন্দ দাস ১৯০২ খ্রিঃ বৈষ্ণবমন্ত্রে দীক্ষা গ্রহন করেন । দীক্ষাগ্রহণের পর তার নাম হয় মুকুন্দ দাস । পরবর্তীকালে এই নামেই তিনি দেশবিখ্যাত হন । 

চারণ কবি মুকুন্দ দাস :

 বরিশালের মুকুটহীন সম্রাট বলে আখ্যাত মনস্বী অশ্বিনীকুমার দত্তের সংস্পর্শে এসে মুকুন্দ দাস স্বদেশ মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ হন । তারই প্রেরণায় মুকুন্দ দাস হয়ে ওঠেন বাংলার চারণকবি । 

 সম্প্রদায়গত কোনপ্রকার গোড়ামিতার মধ্যে ছিল না । বৈষ্ণব ও শাক্তর ভেদাভেদ যেমন তিনি মানতেন না তেমনি মন্দির মসজিদের পার্থক্যও কখনাে করেন নি । তার সাধন সঙ্গীতগুলিতে এই ভাবসমন্বয়ের প্রকাশ ঘটেছিল । 

 মুকুন্দ দাস নিজেই যাত্রাপালা ও গান রচনা করতেন । গানে সুর সংযোজনও তিনি নিজেই করতেন । মনােমােহন চক্রবর্তী , হেমচন্দ্র মুখােপাধ্যায় এবং অশ্বিনীকুমার দত্তের রচিত সকল গানও করতেন তিনি । একসময় বরিশাল হিতৈষী পত্রিকায় লিখতে আরম্ভ করেন ।

 মুকুন্দ দাসের দলের যাত্রাগান এমনই জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল । যে সারা বরিশাল তাকে গানের দল নিয়ে ঘুরতে হত । সেই সময়ে বিভিন্ন দেশবরেণ্য নেতা এবং স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ তাঁর গান শুনে মুগ্ধ হন। তার মাতৃপূজা যাত্রাপালাটি যুবকদের স্বদেশচেতনায় উদ্বুদ্ধ করত । 

স্বদেশী আন্দোলনে মুকুন্দ দাসের ভূমিকা – The role of Mukunda Das in the Swadeshi movement :

 স্বদেশী আন্দোলনে বিশেষ করে বিদেশী বর্জন আন্দোলনে মুকুন্দ দাস বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন । “ বঙ্গনারী রেশমীচুড়ি ও দুহাতে আর পরােনা ” তার এই গানটি সেইসময়ে সারা গ্রাম বাংলায় লােকের মুখে মুখে শােনা যেত ।

 অশ্বিনীকুমারের নিকট স্বদেশমন্ত্রে দীক্ষিত হবার পরে মুকুন্দ দাস থামে গ্রামে দেশাত্ববােধক গান ও স্বদেশী যাত্রাভিনয় করে বেড়াতেন । ফলে তিনি বরিশালে ইংরাজসরকারের কোপদৃষ্টিতে পড়েন । ১৯০৮ খ্রিঃতাকে একবার গ্রেপ্তার করা হয় । পরে জামিনে মুক্ত হন ।

মুকদ দাসের কারাদণ্ড – Imprisonment of Mukunda Das :

 মুকুন্দদাস এমন একটি গান সংকলন করেছিলেন যার ফলে তাঁর জরিমানা হয় । গানটি মাতৃপূজার জন্য রচনা করা হয়েছিল।

 সেই গানটি ছিল “ ছিল ধান গােলা ভরা , শ্বেত ইদুরে করল সারা । ” তাকে এর জন্য তিন বছর কারাদণ্ড ভােগ করতে হয় ।

স্বাধীনতা আন্দোলনে মুকুন্দ দাসের যোগদান – Mukunda Das joined the freedom movement :

 ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলনে তিনি যােগদান করেছিলেন । এবং এই আন্দোলনের সঙ্গে সঙ্গে যাত্রাগান ও স্বদেশী গান গাইতেন । এই গানের মধ্যে দিয়েই মানুষের মধ্যে স্বাধীনতার চেতনা জাগ্রত করাই ছিল এর একমাত্র উদ্দেশ্য । স্বদেশী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সকল মানুষই এতে যােগদান করতেন । 

 এই চেতনার সূত্র ধরে তিনি দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন ও নেতাজী সুভাষচন্দ্র বােসের সংস্পর্শে এসেছিলেন । আর এরই জন্য বাংলায় আপামর জনসাধারণ এই কারণে চারণ কবি হিসাবে আখ্যা দিয়েছিলেন । 

মুকুন্দ দাসের পুরস্কার – Mukunda Das’s Prizes :

 গান গেয়ে ও রচনা করে তিনি জীবনব্যাপী বহু পুরস্কার অর্জন করেছিলেন এবং সাত শত মেডেলও লাভ করেছিলেন । 

[আরও দেখুন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জীবনী – Rabindranath Tagore Biography in Bengali]

মুকুন্দ দাসের উল্লেখযোগ্য রচনাবলী – Mukunda Das’s Notable Works :

 মুকুন্দ দাসের উল্লেখযােগ্য রচনা ছিল — পল্লীসেবা , ব্রহ্মচারিণী , সাধন সঙ্গীত , পথ সাথী , সমাজ , কর্মক্ষেত্র প্রভৃতি।

মুকুন্দদাস গান গাইতেন :

 “ গাইব কি , শুনবে কে রে দেশ – বিদেশে ঘুরে ফিরে আছে কি কারাে কান ? কতভাবে গাইনু গান পাবাে কিরে তেমন ছেলে । সে গান শুনল না কেউ দেশের তরে দিবে প্রাণ ? বুঝল না কেউ গাইবকি .. কোন সুরেতে ধরছি তান গাইব কি শুনবে কে রে …. 

 আজো বাংলাদেশের আনাচেকানাচে অনেক প্রবীণ কৃষক ও তাতী আছেন , আছেন কিছু কিছু শিক্ষক ও অন্য ব্যবসায়ী মুকুন্দ দাসের কিছু কিছু গান যাদের মুখস্ত আছে । সুযােগ পেলে তারা মুকুন্দ দাসের গান গেয়ে প্রাণ জুড়ান , অপরকেও আনন্দ দিয়ে থাকেন । 

 বরিশাল শহরে ব্রজমােহন কলেজের বিপরীত দিকে আজো তার । বাড়িটি অক্ষত অবস্থায় আছে ।

মুকুন্দ দাসের মৃত্যু – Mukunda Das’s Death :

 বাংলা মায়ের এই দামাল চারণ সন্তান কবি মুকুন্দদাস ১৯৩৪ খ্রি : ১৮ ই মে লােকান্তরিত হন । 

মুকুন্দ দাসের জীবনী (প্রশ্ন ও উত্তর) – Mukunda Das’s Biography in Bengali (FAQ):

  1. মুকুন্দ দাসের জন্ম কবে হয়?

Ans : ২২ ফেব্রুয়ারি ১৮৭৮ সালে।

  1. মুকুন্দ দাসের পিতার নাম কী?

Ans : গুরুদয়াল দাস ।

  1. মুকুন্দ দাসের মায়ের নাম কী?

Ans : শ্যামাসুন্দরী দেবী ।

  1. মুকুন্দ দাস কত বছর বয়সে কীর্তন দল গড়েন ?

Ans : ১৯ বছর বয়সে ।

  1. মুকুন্দ দাসের উল্লেখযোগ্য রচনাবলী কী ?

Ans : পল্লীসেবা , ব্রহ্মচারিণী , সাধন সঙ্গীত , পথ সাথী , সমাজ , কর্মক্ষেত্র প্রভৃতি ।

  1. মুকুন্দ দাস কতগুলি পুরস্কার পান ?

Ans : গান গেয়ে তিনি অনেক পুরস্কার ও সাতশো মেডেল পান ।

  1. মুকুন্দ দাস কে ছিলেন?

Ans : নাট্যকার, সুরকার ও কবি ।

  1. মুকুন্দ দাসের জন্ম কোথায় ?

Ans : ঢাকায় ।

  1. কী গান গাওয়ার জন্য তাকে কারাদণ্ড দিয়েছিলেন ?

Ans :  “ ছিল ধান গােলা ভরা , শ্বেত ইদুরে করল সারা ” ।

  1. মুকুন্দ দাসের মৃত্যু কবে হয় ?

Ans : ১৯৩৪ খ্রি : ১৮ ই মে ।

[আরও দেখুন, জহরলাল নেহেরু জীবনী – Jawaharlal Nehru Biography in Bengali

আরও দেখুন, জহরলাল নেহেরু জীবনী – Jawaharlal Nehru Biography in Bengali

আরও দেখুন, জীবনানন্দ দাশ জীবনী – Jibanananda Das Biography in Bengali

আরও দেখুন, দীনবন্ধু মিত্র জীবনী – Dinabandhu Mitra Biography in Bengali]

🔘 প্রতিদিন আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করুন 🔘
Join Our Telegram Channel Click Here
Subscribe Our YouTube Channel Click Here
Like Our Facebook Page Click Here

মুকুন্দ দাস জীবনী – Mukunda Das Biography in Bengali

   অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই ” মুকুন্দ দাস জীবনী – Mukunda Das Biography in Bengali  ” পােস্টটি পড়ার জন্য। এই ভাবেই BhugolShiksha.com ওয়েবসাইটের পাশে থাকো যেকোনো প্ৰশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলাে করো এবং নিজেকে  তথ্য সমৃদ্ধ করে তোলো , ধন্যবাদ।