ডিরোজিও এর জীবনী – Henry Louis Vivian Derozio Biography in Bengali
ডিরোজিও এর জীবনী – Henry Louis Vivian Derozio Biography in Bengali : নবাব সিরাজউদ্দৌলার আমল শেষ হবার সাথে সাথে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়েছিল। এরপর কিছুদিন ইংরেজদের প্রায় অধীনেই নবাবি করলেন পর মীর কাশিম। তারপরেই ইংরেজদের প্রত্যক্ষ শাসনে চলে এলো বাঙালিরা, তখনকার ভারতবাসীরা। আর ইংরেজরা প্রবেশ করতে লাগলো ভারতের সর্বক্ষেত্রে। প্রায় সব ইংরেজই যখন কোনো না কোনোভাবে বাঙালিকে হাতিয়ে নিতে চাচ্ছে, এর মধ্যে পশ্চিমা কিছু মানুষ ব্যতিক্রম ছিলেন, যারা বাঙালির উন্নতিই চেয়েছিল। এরই মধ্যে অন্যতম হলেন এই হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও।
নববঙ্গের দীক্ষাগুরু ডিরোজিওর একটি সংক্ষিপ্ত জীবনী । ডিরোজিও জীবনী – Henry Louis Vivian Derozio Biography in Bengali বা ডিরোজিওর আত্মজীবনী বা ডিরোজিও (Henry Louis Vivian Derozio Jivani) জীবন রচনা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
ডিরোজিও কে ছিলেন ? Who is Derozio ?
হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও (Henry Louis Vivian Derozio) ছিলেন একজন ইউরেশীয় কবি, যুক্তিবাদী চিন্তাবিদ ও শিক্ষক। হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও (Henry Louis Vivian Derozio) ইংরেজি সাহিত্য ও ইতিহাস পড়াতেন এবং তাঁর পাঠদানের পদ্ধতি ছিল তার ধ্যান-ধারণার মতোই গতানুগতিকতামুক্ত।
নববঙ্গের দীক্ষাগুরু হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও এর জীবনী – Henry Louis Vivian Derozio Biography in Bengali :
নাম (Name) | হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও (Henry Louis Vivian Derozio) |
জন্ম (Birthday) | ১৮ এপ্রিল ১৮০৯ (18th April 1809) |
জন্মস্থান (Birthplace) | কলকাতা, ভারত |
অভিভাবক (Parents)/পিতামাতা | ফ্রান্সিস ডিরোজিও ও সোফিয়া জনসন ডিরোজিও |
ছদ্মনাম | জুডেনিস |
নাগরিকত্ব | ব্রিটিশ ভারত |
পেশা (Occupation) | শিক্ষক, কবি ও নৃত্যশিল্পী |
পরিচিতির কারণ | কবি, যুক্তিবাদী, চিন্তাবিদ ও শিক্ষক |
মৃত্যু (Death) | ২৬ ডিসেম্বর ১৮৩১ (26th December 1831) |
ডিরোজিও এর জন্ম – Derozio Birthday :
১৮০৯ খ্রি : ১৮ ই এপ্রিল এক ফিরিঙ্গি পর্তুগীজ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন নববঙ্গের দীক্ষাগুরু হেনরীলুই ভিভিয়ান ডিরােজিও ।
ডিরোজিও এর শৈশবকাল – Derozio Childhood Life :
ধর্মতলা একাডেমিতে ছয় বছর বয়সে ডিরােজিও ভর্তি হন । তিনি হেঁটে হেঁটেইস্কুলে যেতেন । কারণ তখন যানবাহনের বিশেষ কোনও বন্দোবস্ত ছিল না । ঘােড়ায় চড়েই লােক যাতায়াত করত । তখনও ঘােড়ায় চড়ার বয়স ডিরােজিওর হয়নি । ডিরােজিও নিয়মিত স্কুলে যেতেন । পড়াশুনার প্রতি তার খুব ঝোক ছিল । তাই তিনি বাড়ির সবার প্রিয় ছিলেন । তার স্বভাব ছিল কোমল ও স্নেহপ্রবণ ।
ডিরোজিও এর শিক্ষাজীবন – Derozio Education Life :
১৮১৫ খ্রিঃ ডিরােজিও ডেভিড ড্রামন্ডের প্রতিষ্ঠিত ধর্মতলা একাডেমিতে ভর্তি হন এবং ওখানে পড়েছিলেন ১৮২০ খ্রিঃ পর্যন্ত । ড্রামন্ডের শিক্ষা ডিরােজিওঁর জীবনে বিশেষ প্রভাব বিস্তার করেছিল । ড্রামন্ড ছিলেন স্বাধীনচেতা ও প্রগতিপন্থী।তার মতবাদ ছিল পৃথিবীতে মানুষের চেয়ে বড় সত্যি আর কিছু নেই । মানুষের কল্যাণ চিন্তা ঈশ্বর চিন্তার নামান্তর । ডিরােজিওর ভবিষ্য জীবন গঠিত হয়েছিল । ড্রামন্ডের এই শিক্ষা ও মতবাদকে কেন্দ্র করে । আট বছর বয়সে যখন ডিরােজিও স্কুলে পড়াশুনায় ব্যস্ত ছিলেন রামমােহন তখন ধীরে ধীরে নবযুগের সংগ্রামে অবতীর্ণ হচ্ছিলেন । সেটা ছিল ধর্মতলা একাডেমিতে ডিরােজিওর শিক্ষা জীবনের শেষ বছর । বার্ষিক পরীক্ষায় পাশ করার পরই ঘনিয়ে এল বিদায় লগ্ন । ডিরােজিও ছিলেন শিক্ষকদের খুব প্রিয় ছাত্র । তাকে যেদিন অন্যান্য উত্তীর্ণ ছাত্রদের সঙ্গে বিদায় অভিনন্দন জানানাে হয় সেদিন শিক্ষক ও অন্যান্য ছাত্রদের সবার চোখ অশ্রুসজল হয়ে উঠেছিলাে । এমনকি ড্রামন্ডও সেদিন চোখের জল সংবরণ করতে পারেন নি ।
ডিরোজিও এর হিন্দুকলেজে শিক্ষকতা গ্রহণ – Derozio Teacher of The Hindu College :
স্কুলের পড়া শেষ করে ডিরােজিও খুব নিঃসঙ্গ বােধ করতে লাগলেন । কিন্তু তিনি ড্রামন্ডের সঙ্গ ত্যাগ করেননি । হিন্দু কলেজে ডিরােজিওর শিক্ষকতা গ্রহণের এক বছর যেতে যেতেই তার অনুগামীরা এক ঘন সন্নিবিষ্ট দলে পরিণত হলে এতে রক্ষনশীল ব্যক্তিরা ডিরােজিওর উপরে ক্ষেপে গেলেন । রাজা রামমােহন রায়ের উপরও তাদের আক্রোশ দিনে দিনে বাড়তে লাগল । সতীদাহ প্রথা বন্ধ করতে রামমােহন যেমন সরকারকে দিয়ে আইন করিয়েছেন । আবার গোড়া হিন্দুরা তা না মেনে সতীদাহ প্রথা চালু রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছেন । রামমােহন ও হিন্দু কলেজের ডিরােজিওপন্থীরা এদের বাধা দিতে লাগলেন । এবার গোঁড়া হিন্দু ও ধর্ম সভার সদস্যরা । ডিরােজিওর উপর ভীষণভাবে ক্ষেপে গেল । হিন্দু কলেজের কোন কোন কর্মকর্তারাও ডিরােজিওর উপর ক্ষেপে যায় । তাদের ধারণা । হল ডিরােজিও ছাত্রদের বিধর্মী করে তুলছে । হিন্দু ধর্মের উপর আঘাত হানছে । তাই তাকে হিন্দু কলেজ থেকে তাড়াতে হবে ।
ডিরোজিও এর টু ইন্ডিয়া মাই নেটিভ ল্যান্ড কাব্যগ্রন্থ – Derozio “TO INDIA MY NATIVE LAND” Poetry :
হিন্দু কলেজের এক জরুরী সভায় কলেজের সভ্যরা মিলিত হয়ে ডিরােজিওর শাস্তির বিধান করার চেষ্টা করল । অধিকাংশ সভ্য ডিরােজিওর পক্ষে কথা বলায় সেই সভায় কিছুই হল না । কিন্তু পরের সভায় ডিরােজিওকে পদত্যাগ করতে বলা হল । ডিরােজিও পদত্যাগ করলেন ভীষণভাবে যুক্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করে । চারদিকে এই অন্যায় সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ উঠল । ডিরােজিওর কণ্ঠে বিদ্রোহের সুর । অত্যাচারী মানুষের প্রতি ঘৃণার প্রতিধ্বনি । ডিরােজিও বিদেশী হলেও নিজেকে বিদেশী বলে কখনও ভাবতেন না । তিনি নিজেকে ভারতীয় বলেই ভাবতেন । তিনি অখন্ড ভারতে বিশ্বাসী ছিলেন । কাব্যচর্চার প্রথম পর্বেই তিনি লিখেছিলেন “ টু ইন্ডিয়া মাই নেটিভ ল্যান্ড ।
ডিরোজিও এর কর্মজীবন – Derozio Work Life :
ডিরােজিওর বাবা এই সময় তার অফিসে ছেলের জন্য একটি চাকরি ঠিক করে দিলেন । সেখানে ডিরােজিও মাত্র দুই বছর চাকরি করেন । তার চিন্তাশীল ভাববিলাসী মনকে তিনি কিছুতেই কাজের মধ্যে বেঁধে রাখতে পারলেন না । তারপর ভাগলপুরে ডিরােজিও তাঁর মেসােমশাইয়ের ব্যবসা দেখাশােনার জন্য চলে গেলেন । সেখানে যেহেতু চাকরির উপস্থিতির কড়াকড়ি নেই তাই সেখানে তিনি কিছুটা মুক্তির স্বাদ পেলেন ।
ডিরোজিও এর কবিতা লেখা – Derozio Writing Poetry :
অবসর সময়ে তিনি এখানে বসেকবিতা লিখতে আরম্ভ করলেন । নিজের লেখা একটি কবিতা তিনি ইন্ডিয়া টাইমস্ এ পাঠিয়ে দিলেন । পত্রিকার সম্পাদক কবিতাটি পড়ে মুগ্ধ হলেন কিন্তু কবিতাটিতে লেখকের নাম না থাকায় কবিতাটি কে লিখেছে , তা জানতে পারলেন না।
ডিরোজিও এর ছদ্মনাম – Derozio Pseudonym Name :
‘জুডেনিস ’ এই ছদ্ম নামে কবিতাটি পত্রিকা । প্রকাশিত হওয়ায় ডিরােজিওর মনে খুব উৎসাহ দেখা দিল । ওই পত্রিকায় তিনি এরপর অনেক প্রবন্ধ পাঠালেন । প্রবন্ধগুলি প্রকাশিত হওয়ার পর সবার মনে কৌতূহল হল ‘ জুডেনিস ‘ ছদ্ম নামের আড়ালে । কে এই লেখক ? কিছুদিনের মধ্যেই তার ছদ্মনাম প্রকাশিত হল । ডক্টর গ্রান্ট আনন্দে জড়িয়ে ধরলেন ডিরােজিওকে । ভাগলপুর ছেড়ে আসার পর গ্রান্ট তাকে ওই পত্রিকার সম্পাদক করে দিলেন ।
ডিরোজিও হিন্দু কলেজে চতুর্থ শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত :
এরপর ডিরােজিও হিন্দু কলেজে শিক্ষক নিয়ােগের খবর পেয়ে আবেদন করলেন । তার আবেদন মঞ্জুর হল । ১৮২৬ খ্রিঃ তিনি হিন্দু কলেজে চতুর্থ শিক্ষক হিসাবে নিযুক্ত হলেন । ডিরােজিও হিন্দু কলেজে যােগদান করার সঙ্গে সঙ্গে সেখানে যেন বিদ্যুৎশক্তির মত আলােড়ন পড়ে গেল ।
তার ব্যক্তিত্ব , প্রতিভা ও মাধুর্যপূর্ণ ব্যবহার কলেজের ছাত্রদের চুম্বকের মত আকর্ষণ করতে লাগল । সব শ্রেণীর ছাত্ররাই ডিরােজিওর কাছে আসত । তার কাছ থেকে অনেক কিছু জানতে চাইত ।
ছাত্রদের এত ভিড় দেখে ডিরােজিও তাদের দু’দলে ভাগ করলেন । তারপর তাদেরতযুদ্ধে আহ্বান করতেন । এইভাবেতাদের মনে স্বাধীন চিন্তাধারার বিকাশ ঘটত । হিন্দু কলেজে তিনি ইংরাজি ও ইউরােপের ইতিহাস পড়াতেন শিক্ষকতার ইতিহাসে তিনি ছিলেন এক ব্যতিক্রম ।
ডিরোজিও অ্যাকাডেমিক এ্যাসােসিয়েশন্ এর সভাপতি – President of Academic Association :
ডিরােজিও হিন্দু কলেজের সেরা ছাত্রদের নিমন্ত্রণ করে নিজের । বাড়িতে নিয়ে যেতেন । এই মধুর আপ্যায়নে তারা মুগ্ধ হয়ে যায়।তার । সাথে আলাপচারিতার মধ্যদিয়ে সেখানে গড়ে ওঠে ‘ অ্যাকাডেমিক এ্যাসােসিয়েশন্ । সবাই মিলে ডিরােজিওকে করলেন সভাপতি । উমাচরণ বসুকে করলেন সম্পাদক । এখানে নানা বিষয়ে আলােচনা হত । যেসব যুবকরা এইসভায় যােগ দিতেন তাদের বলা হত Young lion of Bengal অর্থাৎ বাংলার তরুণ সিংহ শিশু ।
ডিরোজিও এর মৃত্যু – Derozio Death :
অতিরিক্ত পরিশ্রমে ডিরােজিওর শরীর ভেঙ্গে পড়তে লাগল । মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে মহান বিপ্লবী ও নববঙ্গের দীক্ষাগুর ডিরােজিও চলে গেলেন ১৮৩১ খ্রিঃ ২৬ শে ডিসেম্বর ।
ডিরোজিও এর জীবনী (প্রশ্ন ও উত্তর) – Derozio Biography in Bengali (FAQ):
- ডিরোজিও এর জন্ম কবে হয় ?
উ:- ১৮ এপ্রিল ১৮০৯ সালে ।
- ডিরোজিও এর পিতার নাম কী ?
উ:- ফ্রান্সিস ডিরোজিও ।
- ডিরোজিও এর মায়ের নাম কী ?
উ:- সোফিয়া জনসন ডিরোজিও ।
- ডিরোজিও জন্ম কোথায় হয় ?
উ:- কলকাতা তে ।
- ডিরোজিও কবে হিন্দু কলেজের শিক্ষক হন ?
উ:- ১৮২৬ খ্রিস্টাব্দে ।
- ডিরোজিও এর ছদ্মনাম কী ?
উ:- জুডেনিস ।
- ডিরোজিও এর শিক্ষাজীবন কোথায় ?
উ:- ধর্মতলা একাডেমী ।
- ডিরোজিও এর জন্ম কবে হয় ?
উ:- ১৮ এপ্রিল ১৮০৯ সালে ।
- কত সালে ডিরোজিও ধর্মতলা একাডেমীতে ভর্তি হন ?
উ:- ১৮১৫ সালে ।
- ডিরোজিও কবে মারা যান ?
উ:- ২৬ ডিসেম্বর ১৮৩১ সালে ।
[আরও দেখুন, আর্কিমিডিস এর জীবনী – Archimedes Biography in Bengali
আরও দেখুন, আলবার্ট আইনস্টাইন জীবনী – Albert Einstein Biography in Bengali
আরও দেখুন, জেমস ওয়াট এর জীবনী – James Watt Biography in Bengali
আরও দেখুন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জীবনী – Rabindranath Tagore Biography in Bengali]
ডিরোজিও জীবনী – Henry Louis Vivian Derozio Biography in Bengali
অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই ” ডিরোজিও জীবনী – Henry Louis Vivian Derozio Biography in Bengali ” পােস্টটি পড়ার জন্য। এই ভাবেই BhugolShiksha.com ওয়েবসাইটের পাশে থাকো । যেকোনো প্ৰশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলাে করো এবং নিজেকে তথ্য সমৃদ্ধ করে তোলো , ধন্যবাদ।