বাঘা যতীনের জীবনী - Bagha Jatin Biography in Bengali
বাঘা যতীনের জীবনী - Bagha Jatin Biography in Bengali

বাঘা যতীনের জীবনী

Bagha Jatin Biography in Bengali

বাঘা যতীনের জীবনী – Bagha Jatin Biography in Bengali : বীপ্লবী বীর । যতীন্দ্রনাথ মুখােপাধ্যায় ( বাঘাযতীন ) নদীয়া জেলার একটি গ্রাম । সন্ধ্যের অন্ধকারে গ্রামের পথঘাট জনশূন্য হয়ে যায় । মনে হয় বুঝি শ্মশানের নিঝুমতা নেমে এসেছে । কিন্তু কেন ? বিরাট এক রয়াল বেঙ্গল টাইগার গ্রামে হানা দিতে শুরু করেছে । বাঘটা ভীষণ হিংস্র । গরিব চাষীদের গােরু – বাছুর গােয়াল । থেকে টেনে নিয়ে যায় । চাষিরা কান্নাকাটি শুরু করে দিল । কেতাদের । বাঘের অত্যাচার থেকে বাঁচাবে ? 

 তখন ওই গ্রামে এসেছিলেন যতীন মুখােপাধ্যায় । কলকাতার , সরকারি চাকুরে । এই গ্রামে মামার বাড়িতে তার ছােটোবেলার দিনগুলাে কেটে ছিল । গ্রামের অনেকের সাথে সুন্দর সম্পর্ক , বিশেষ করে শ্রমজীবী সাধারণ মানুষদের তিনি খুবই ভালােবাসেন যতীন । মুখার্জী ঠিক করলেন তিনি বাঘের সঙ্গে লড়াই করবেন । কিন্তু কীভাবে ? যতীনের কোনাে বন্দুক ছিল না । একটা ভােজালি নিয়ে বাঘের মুখােমুখি দাঁড়াবার জন্য প্রস্তুত হলেন ।

 অন্য কেউ এভাবে লড়াইতে অবতীর্ণ হলে গ্রামবাসীরা তাকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করত । কিন্তু সেদিনের তরুণ যতীনকে তারা ভালােভাবেই চিনত । তারা জানত , যতীনের মধ্যে অসম্ভব সাহস আছে । দেহে আছে অদ্ভুত শক্তি । হৃদয়ে আছে প্রবল পরােপকার করার বৃত্তি । যতীনের এই অলৌকিক ক্ষমতার পরিচয় গ্রামবাসীরা অনেকবার পেয়েছিল । যতীন বর্ষার দুরন্ত নদী সাঁতরে পারাপার করতেন । চলন্ত ট্রেন থেকে নেমে পড়তেন । পথে পরিত্যক্ত কলেরা রােগীর দিকে সহযােগিতার হাত বাড়িয়ে দিতেন । শেষ অব্দি এই বীর যুবক যতীন্দ্রনাথ বাঘ মারার সঙ্কল্প গ্রহণ করায় গ্রামবাসীরা । হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছিল । যতীনকেতারা ত্রাণকর্তা বলেই মনে করল ।

যতীনের মামাতাে ভাইয়ের একটি বন্দুক ছিল । মামাতাে ভাই বন্দুক নিয়ে যতীনের সঙ্গী হলেন । অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পর বাঘের সঙ্গে দেখা হল । মামাতাে ভাই বন্দুকের গুলিতে বাঘটাকে বধ করার চেষ্টা করলেন । লক্ষ্যভ্রষ্ট হল গুলিটা । বাঘটা আহত হল । আহত বাঘ ভয়ংকর হয়ে ওঠে , গুলি খেয়ে বাঘটা যতীন্দ্রনাথের দিকে ছুটে এল । যতীন্দ্রনাথকে আক্রমণ করল । 

 যতীন্দ্রনাথ কোনাে বিপদের মুখে পিছপা হটেননি এবারও হটলেন না । তিনি অসীম বিক্রমে বাঘের গলা বা বগলে চেপে ধরলেন । তার মাথায় ভােজালি দিয়ে বারবার আঘাত করতে থাকলেন । বাঘ তাকে কামড়াবার চেষ্টা করল । তিনিও বাঘকে জাপটে ধরে থেকে বারবার ভােজালি মারলেন । জড়াজড়ি করে বাঘকে নিয়ে মাটিতে পড়ে গেলেন । বাঘ তার দুটি হাঁটুতে কামড় বসাল । নখে ক্ষত বিক্ষত করল সমস্ত শরীর । রক্তাক্ত যতীন তখনও উন্মত্তের মতাে বাঘটার সঙ্গে লড়াই করছেন । পশুশক্তি শেষ পর্যন্ত মানুষের শক্তির কাছে হার মানতে বাধ্য হল । নিজের দেহের আঘাত অগ্রাহ্য করে হিঐেভয়ংকর বাঘকে মাটিতে চেপে ধরলেন । শেষ অব্দি ভােজালিটা । বাঘের পেটে বসিয়ে দিতে সমর্থ হয়েছিলেন । সেই আঘাতেই বাঘটা শেষ হয়ে গেল । আর সেদিন থেকে সকলের কাছে তিনি পরিচিত হলেন বাঘাযতীন হিসেবে ।

 যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় (Jatindranath Mukherjee) বা বাঘা যতীন এর একটি সংক্ষিপ্ত জীবনী । বাঘা যতীন এর জীবনী – Bagha Jatin Biography in Bengali বা বাঘা যতীন এর আত্মজীবনী বা (Bagha Jatin Jivani Bangla. A short biography of Bagha Jatin. Bagha Jatin Birth, Place, Life Story, Life History, Biography in Bengali) বাঘা যতীন এর জীবন রচনা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

বাঘা যতীন কে ছিলেন ? Who is Bagha Jatin ?

বাঘা যতীন (Bagha Jatin) ছিলেন একজন বাঙালি ব্রিটিশ-বিরোধী বিপ্লবী নেতা। তার ভালো নাম যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় (Jatindranath Mukherjee) কিন্তু তিনি বাঘা যতীন নামেই সকলের কাছে সমধিক পরিচিত। বাঘাযতীন শুধুমাত্র বাঘ মেরেই জীবন কাটাননি । বাঘা যতীন (Bagha Jatin) লড়াই করেছিলেন বৃটিশ – সিংহের সঙ্গে । এই ব্রিটিশ – সিংহকে সম্মুখ সমরে হারিয়ে দেবার স্বপ্ন দেখেছিলেন ।

যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় (বাঘা যতীন) এর সংক্ষিপ্ত জীবনী – Jatindranath Mukherjee (Bagha Jatin) Short Biography in Bengali :

নাম (Name) যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় বা বাঘা যতীন – Jatindranath Mukherjee or Bagha Jatin
জন্ম (Birthday) ৭ ডিসেম্বর ১৮৭৯ (7th December 1979)
জন্মস্থান (Birthplace) কয়াগ্রাম 
অভিভাবক (Parents)/পিতা ও মাতা উমেশচন্দ্র মুখােপাধ্যায় (বাবা)

শরৎশশী দেবী (মা)

অন্যান্য নাম বাঘা যতীন
প্রতিষ্ঠান দল যুগান্তর দল
আন্দোলন ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন, হিন্দু-জার্মান ষড়যন্ত্র, বড়দিন ষড়যন্ত্র
মৃত্যু (Death) ১০ সেপ্টেম্বর ১৯১৫ (10th September 1915)

বাঘা যতীনের জন্ম – Bagha Jatin Birthday :

 ১৮৭৯ খ্রিস্টাব্দের ৮ ই ডিসেম্বর নদীয়া জেলার কুষ্টিয়া মহকুমার ছােট্টশান্ত কয়া গ্রামে মামার বাড়িতে যতীন্দ্রনাথ মুখােপাধ্যায়ের জন্ম হয় । বর্তমানে এই গ্রামটি বাংলাদেশের অন্তর্গত ।

বাঘা যতীনের পিতামাতা – Bagha Jatin Parents :

 তার পিতার নাম উমেশচন্দ্র মুখােপাধ্যায় ও মাতা শরৎশশী দেবী ।

 যতীন্দ্রনাথের পৈত্রিক বাসস্থান ছিল যশাের জেলার ঝিনাইদহ মহকুমার রিসখালি গ্রামে । মাত্র পাঁচ বছর বয়সে তার পিতার মৃত্যু হয় । ছেলের হাত ধরে মা এলেন মামার বাড়িতে । মামার বাড়িতে যতীন্দ্রনাথ মানুষ হয়েছিলেন ।

বাঘা যতীনের শৈশবকাল – Bagha Jatin Childhood :

 ছােটোবেলা থেকেই ছিলেন দুরন্ত প্রকৃতির । বন্ধু – বান্ধবদের সঙ্গে মিশে নানা ধরনের দুষ্টুমি করে বেড়াতেন । আমবাগান থেকে আম চুরি করতেন । পুকুরের মাছ তুলে নিয়ে যেতেন । রাতের অন্ধকারে ফুল চুরি করতেন । গ্রামবাসীরা । তার দাপটে অস্থির হয়ে উঠেছিল । মাঝে মধ্যে যতীন্দ্রনাথের মামার কাছে তারা নালিশ করত । মামা কিন্তু ভাগ্নেকে খুবই ভালােবাসতেন । ভাগের মধ্যে একটা সহজ সরল মনােভাব লুকিয়ে আছে । মামা ছিলেন জাতীয়তাবাদের এক আদর্শ কর্মী । মনে – প্রাণে চাইতেন , ইংরেজরা একদিন এদেশ থেকে দুরে চলে যাবে । ভাগনেকে রামায়ণ মহাভারতের অনেক কাহিনি শােনাতেন । তখন থেকেই যতীন্দ্রনাথ জাতীয়তাবাদের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন । 

বাঘা যতীনের শিক্ষাজীবন – Bagha Jatin Education Life :

 পড়াশুনায় খুব একটা তুখােড় ছিলেন না , তবে মন দিয়ে পড়ার বই পড়তেন । পড়াশােনার চেয়ে নানান খেলা , শরীরচর্চা , প্রভৃতিতেই ছিল তার বেশি উৎসাহ । স্কুলে পড়বার সময়েই একদিন পাগলা ঘােড়াকে কজ্জা করে অসমসাহসিকতার পরিচয় দিয়েছিলেন । কৃষ্ণনগরের এ ভি স্কুল । থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেন ।

বাঘা যতীনের কলেজ জীবন – Bagha Jatin College Life :

 এলেন কলকাতায় , কলেজে ভর্তি হলেন । কিন্তু তখন থেকেই যতীন্দ্রনাথ ছিলেন স্বাধীনচেতা মানুষ । তিনি ঠিক করলেন যে , পড়াশুনায় আর সময় নষ্ট করবেন না । শর্টহ্যান্ড ও টাইপ রাইটিং শিখলেন।তখনকার দিনে এ দুটি বৃত্তি শিক্ষার খুবই দাম ছিল । ১৯০৪ সালে সরকারি চাকরি লাভ করলেন । এই চাকরিতে যােগ দেবার আগে থেকেই বিপ্লবী দলের সঙ্গে তার যােগাযােগ ঘটে গিয়েছিল । ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশাত্মবােধ প্রেরণায় । জেগে উঠল সারাদেশ , সেই আবর্তে যতীন্দ্রনাথ ভেসে গেলেন । অনুশীলন সমিতিতে যােগদান করলেন ।

 একদিকে অফিসের কাজ , অন্যদিকে সংগঠনের দায়িত্ব । তখন যতীন্দ্রনাথকে ব্যস্ত প্রহর কাটাতে হচ্ছে । তার ওপর বেশ কয়েকটি কাজ দেওয়া হয়েছিল । তিনি তরুণ বিপ্লবীদের গীতার মহামন্ত্রে উদ্বুদ্ধ করতেন । তরুণদের কাছে অত্যন্ত শ্রদ্ধার পাত্র ছিলেন যতীন্দ্রনাথ। 

 ১৯০৮ সালে ক্ষুদিরামের বােমা নিক্ষেপের পর ইংরেজরা কঠিন কঠোর আঘাত করতে থাকে । ইংরেজরা মনে করল যে , আলিপুর বােমার মামলার আসামিদের দ্বীপান্তরে পাঠিয়ে তারা স্বাধীনতা সংগ্রামকে ব্যর্থ করে দেবে । তখন বেশির ভাগ জাতীয় নেতা কারাগারে দিন কাটাচ্ছেন । এই সময় এগিয়ে এলেন বাঘা যতীন । তিনি ওইসংগ্রামকে অব্যাহত রেখেছিলেন ।

বাঘা যতীনের বিরুদ্ধে হাওড়া ষড়যন্ত্র মামলা :

 বাঘা যতীনের বিরুদ্ধে হাওড়া ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করা হল । একবছর ধরে বাঘা যতীনকে নির্জন কারাকক্ষে থাকতে হল । তার । বিরুদ্ধে অভিযােগ করা হয়েছিল যে , তিনি ভারত সম্রাটের বিরুদ্ধে । যুদ্ধ প্রচেষ্টায় অংশ নিয়েছেন , সরকারি কর্মীকে হত্যা করেছেন । এই যড়যন্ত্র মামলা থেকে বাঘা যতীন শেষ পর্যন্ত মুক্তি পেয়েছিলেন । কিন্তু সরকারি চাকরি চলে গেল । তখন বাঘা যতীন ঠিকাদারির কাজ শুরু করলেন । তার গতিবিধির ওপর ব্রিটিশ গুপ্তচররা তী নজর রাখত।তবে তাকে অনুসরণ করা সম্ভব ছিল না । তিনি পঁচাত্তর মইল সাইকেল চালাতে পারতেন।চলন্ত মেল ট্রেনে ওঠানামা করতে পারতেন । অসাধারণ শক্তি ছিল বাঘা যতীনের । রূপকথার এক বিস্ময়কর নায়ক ছিলেন তিনি ।

গেরিলা লড়াই :

 প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হল , বাঘা যতীন গেরিলা লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত হলেন । তিনি সর্বভারতীয় বৈপ্লবিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে গােপনে । চুক্তিবদ্ধ হয়ে জাপান ও জার্মানি থেকে অস্ত্রাদি আমদানি করে সশস্ত্র বিপ্লবের পরিকল্পনা করেন । ঠিক হয় ‘ মেভারিক ‘ নামক জার্মান । জাহাজে অস্ত্র এনে বালেশ্বরে রেললাইন অধিকার করে ইংরেজের যাতায়াতপথ অবরােধ করবেন । বাঘা যতীনতার চারজন সহকর্মীকে নিয়ে চলে গেলেন বালেশ্বরের কাছে কোপাতপােদা গ্রামে । সন্ন্যাসী সেজে আশ্রম গড়লেন । কবে জার্মান যুদ্ধ – জাহাজ পৌঁছােবে তার জন্য প্রতীক্ষার প্রহর শুরু হল ।

 এইজাহাজ শেষ পর্যন্ত ভারতবর্ষে পৌঁছােতে পারেনি । বিপ্লবীদের প্রতীক্ষা ব্যর্থ হল । তবুও বাঘা যতীন বিন্দুমাত্র হতাশ হলেন না । তিনি আবার অস্ত্র আমদানির পরিকল্পনা করলেন ।

 দ্বিতীয়বারেও অস্ত্র পেছােল না।বিপ্লবীরা পথে ধরা পড়ে গেলেন । শুরু হল পুলিশের তল্লাশি । পুলিশ জানতে পারল যে , বিপ্লবীদের একটা দল বালেশ্বরে লুকিয়ে আছে ।

 সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ কমিশনার টেগার্ট বালেশ্বরে পৌছে গেলেন । সেখানে এক সাংকেতিক লিপি পাওয়া গেল । ওই লিপিতে বলা হয়েছে — রামানন্দ স্বামী যেন তার শিষ্যদের নিয়ে এখনই তীর্থভ্রমণে । চলে যান । এখানে অনেকে আশ্রমবাসী হয়েছে ।

 গ্রামবাসীদের মুখ থেকে বাঘা যতীন ওই ভয়ংকর দুঃসংবাদটা । শুনতে পেলেন — বিরাট পুলিশবাহিনী ছুটে আসছে তাকে গ্রেপ্তার করার জন্য । 

 বাঘা যতীন তার কিশাের চারসঙ্গী – চিত্তপ্রিয় , মনােরঞ্জন , নীরেন ও জ্যোতিষকে বললেন , তাঁর সঙ্গ ত্যাগ করে অন্যত্র চলে যেতে । পুলিশরা এঁদের কাউকে চেনে না । তাই তারা পালাতে পারবেন । বিপ্লবী কিশােররা নেতাকে ত্যাগ করতে রাজী হলেন না । তারা বললেন যে , আমরা সম্মুখ সমরে প্রাণ বিসর্জন দেব , তবু আপনাকে ত্যাগ করব না ।

 বাঘা যতীন সহকর্মীদের এই সাহস দেখে অবাক হয়ে গেলেন । ১৯১৫ সালের ৯ ই সেপ্টেম্বর – বুড়িবালাম নদীর ধারে চাষখন্ড নামে একটা জায়গায় বাঘা যতীন তার চার কিশাের সঙ্গীকে নিয়ে । খাদের মধ্যে লুকিয়ে রইলেন । একদিকে মাত্র পাঁচজন , অন্যদিকে অসংখ্য সৈন্য । বিপ্লবীদের কাছে দেশি পিস্তল ব্রিটিশদের হাতে দূরপাল্লার রাইফেল শুরু হল গুলিবর্ষণ । বিপ্লবীরা একসঙ্গে গুলি ফায়ার করলেন । যাতে শত্রুপক্ষ বুঝতে না পারে , সংখ্যায় তারা কতজন আছেন বেশ কিছু ব্রিটিশ সৈন্য হতাহত হল । শেষ অব্দি বিপ্লবীদের গুলি ফুরিয়ে গেল ।

 হঠাৎ একটি গুলি লেগে আহত হলেন চিত্তপ্রিয় যন্ত্রণা কাতর কণ্ঠে তিনি বললেন – বড়দা , আমি চললাম । 

 বাঘাযতীনের গায়ে গুলি লেগেছিল তবুও তিনি লড়াই করে চলেছেন । তিনি সঙ্কল্প নিয়েছিলেন শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাবেন । মৃত্যুপথযাত্রী চিত্তপ্রিয়কে একফোটা জলের জন্য ছটফট করতে দেখলেন । বাঘাযতীন বুঝতে পারলেন , আর লড়াই করা সম্ভব নয় । নিজের গায়ের রক্তমাখা সাদা শার্ট উড়িয়ে যুদ্ধ বিরতির সংকেত জানিয়ে আত্মসমর্পণ করলেন ।

 টেগার্ট কাছে এগিয়ে এলেন । বাঘাযতীন দৃপ্তকণ্ঠে বললেন শুধু এর মুখে এক ফোটা জল দেবার জন্য আমি যুদ্ধ বন্ধ করে ধরা দিচ্ছি । 

 টেগার্ট স্বহস্তে জল এনে আহতদের পান করিয়েছিলেন । চিত্তপ্রিয় তখনই মারা গেলেন সম্মুখ সমরে প্রথম কিশাের শহিদ তিনি ।

বাঘা যতীনের মৃত্যু – Bagha Jatin Death :

 আহত বাঘাযতীনকে লাশের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হল । ১৯১৫ সালের ৯ ই সেপ্টম্বর সেখানেই তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন । মনােরঞ্জন এবং নীরেনকে ফাসি দেওয়া হল । জ্যোতিষকে যাবজ্জীবন দ্বীপান্তর দণ্ড দিয়ে পাঠানো হল ‘ আন্দামানে । সেখানে তার ওপর অমানুষিক অত্যাচার করা হল । এই ভয়ঙ্কর অত্যাচারে তিনি পাগল হয়ে গিয়েছিলেন । তখন তাকে বহরমপুর জেলে রাখা । হয় । বন্দি অবস্থাতেই জ্যোতিষের মৃত্যু হয় ।

 এইভাবে শেষ হয়ে গেল বুড়িবালামের তীরে স্বাধীনতার লড়াই । যুদ্ধটি বুড়িবালামের ধারে কোপাতপােদার যুদ্ধ নামে খ্যাত ।

 বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম অন্তরের শ্রদ্ধা নিবেদন করেছিলেন প্রশস্তি রচনা করে –

 “ বাঙ্গালীর রন দেখে যারে তােরা রাজপুত , শিখ মারাঠী জাত বালাশাের , বুড়ি – বালামের তীরনব ভারতের হলদিঘাট ।

 যতীন্দ্রনাথের মৃত্যুর পর পুলিশ কমিশনার টেগার্টতার প্রতিশ্রদ্ধা প্রকাশ করে বলেছিলেন , “ I have met the bravest In dian . I have the greatest regard for him but I had to do my duty .

বাঘা যতীনের জীবনী (প্রশ্ন ও উত্তর) – Bagha Jatin Biography in Bengali (FAQ):

  1. বাঘা যতীনের জন্ম কবে হয় ?

Ans: বাঘা যতীনের জন্ম হয় ৭ ডিসেম্বর ১৮৭৯ সালে।

  1. বাঘা যতীনের পিতার নাম কী ?

Ans: বাঘা যতীনের পিতার নাম উমেশচন্দ্র মুখােপাধ্যায়।

  1. বাঘা যতীনের মায়ের নাম কী ?

Ans: বাঘা যতীনের মায়ের নাম শরৎশশী দেবী ।

  1. বাঘা যতীনের জন্ম কোথায় হয় ?

Ans: বাঘা যতীনের জন্ম হয় কয়াগ্রমে ।

  1. বাঘা যতীনের আসল নাম কী ?

Ans: বাঘা যতীনের আসল নাম যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়।

  1. বাঘা যতীন কে ছিলেন ?

Ans: বাঘা যতীন ছিলেন একজন বাঙালি ব্রিটিশ-বিরোধী বিপ্লবী নেতা ।

  1. যতীন্দ্রনাথ মুখােপাধ্যায় (Jatindranath Mukherjee) কবে জন্মগ্রহণ করেন?

Ans: যতীন্দ্রনাথ মুখােপাধ্যায় (Jatindranath Mukherjee) ৭ ডিসেম্বর ১৮৭৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন।

  1. বাঘা যতীনের মৃত্যু কবে হয় ?

Ans: ১৯১৫ সালের ৯ ই সেপ্টেম্বর ।

[আরও দেখুন, বিধানচন্দ্র রায়ের জীবনী – Bidhan Chandra Ray Biography in Bengali

আরও দেখুন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জীবনী – Rabindranath Tagore Biography in Bengali

আরও দেখুন, গোপালচন্দ্র ভট্টাচার্যের জীবনী – Gopal Chandra Bhattacharya Biography in Bengali

আরও দেখুন, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর জীবনী – Ishwar Chandra Vidyasagar Biography in Bengali

আরও দেখুন, হরগোবিন্দ খোরানার জীবনী – Har Gobind Khorana Biography in Bengali]

বাঘা যতীন এর জীবনী – Bagha Jatin Biography in Bengali

   অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই ” বাঘা যতীন এর জীবনী – Bagha Jatin Biography in Bengali  ” পােস্টটি পড়ার জন্য। বাঘা যতীন এর জীবনী – Bagha Jatin Biography in Bengali পড়ে কেমন লাগলো কমেন্টে জানাও। আশা করি এই বাঘা যতীন এর জীবনী – Bagha Jatin Biography in Bengali পোস্টটি থেকে উপকৃত হবে। এই ভাবেই BhugolShiksha.com ওয়েবসাইটের পাশে থাকো যেকোনো প্ৰশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলাে করো এবং নিজেকে  তথ্য সমৃদ্ধ করে তোলো , ধন্যবাদ।