কেন এল না (কবিতা) দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর

HS Class 12 Bengali Keno Elo Na Question and Answer

কেন এল না (কবিতা) দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | HS Class 12 Bengali Keno Elo Na Question and Answer : কেন এল না (কবিতা) দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | HS Class 12 Bengali Keno Elo Na Question and Answer নিচে দেওয়া হলো। এই West Bengal WBCHSE HS Class 12th Bengali Keno Elo Na Question and Answer, Suggestion, Notes | দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – কেন এল না (কবিতা) থেকে রোচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর (Descriptive Question and Answer) গুলি আগামী West Bengal HS Class 12th Twelve XII Bengali 4th Semest Examination – পশ্চিমবঙ্গ দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা চতুর্থ সেমিস্টার পরীক্ষার জন্য খুব ইম্পর্টেন্ট। দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা পরীক্ষা তে এই সাজেশন বা কোশ্চেন কেন এল না (কবিতা) দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | HS Class 12 Bengali Keno Elo Na Question and Answer গুলো আসার সম্ভাবনা খুব বেশি।

তোমরা যারা কেন এল না (কবিতা) দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | HS Class 12 Bengali Keno Elo Na Question and Answer খুঁজে চলেছ, তারা এই প্রশ্ন ও উত্তর গুলো ভালো করে পড়ো এবং নীচে দেওয়া লিঙ্ক থেকে ডাউনলোড করে নাও।

রাজ্য (State) পশ্চিমবঙ্গ (West Bengal)
বোর্ড (Board) WBCHSE, West Bengal
শ্রেণী (Class) দ্বাদশ শ্রেণী (WB HS Class 12th)
বিষয় (Subject) দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা (HS Class 12 Bengali)
কবিতা (Kobita) কেন এল না (Keno Elo Na)
লেখক (Writer) সুভাষ মুখোপাধ্যায় (Subhas Mukhopadhyay)

[দ্বাদশ শ্রেণীর সমস্ত বিষয়ের প্রশ্নউত্তর Click Here]

কেন এল না (কবিতা) দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | West Bengal WBCHSE HS Class 12th Bengali Keno Elo Na Kobita Question and Answer 

রচনাধর্মী | কেন এল না (কবিতা) দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | WB HS Class 12 Bengali Keno Elo Na Kobita Descriptive Question and Answer:

1. “কেন এল না” কবিতায় কবি ‘রাজনৈতিক সহিংসতা’-কে কীভাবে প্রতীকায়িত করেছেন তা উদাহরণ সহযোগে বুঝিয়ে দাও। 

Ans: ‘কেন এল না’ কবিতায় কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় সরাসরি রাজনৈতিক সহিংসতার প্রসঙ্গ তুলে ধরেননি। প্রতীকী চিত্র ও ইঙ্গিতের ব্যবহারে তৎকালীন সময়ের হিংস্র রাজনীতির ছবিটি ফুটিয়ে তুলেছেন কবি।

ডিড় ও একটা কালো গাড়ি: ছেলেটি দরজা খুলে বাইরে বেরিয়েই রাস্তার মোড়ে ভিড় লক্ষ করে। তার সামনে এসে দাঁড়ায় একটি কালো গাড়ি। কৌতূহলী হয়ে সেদিকেই এগিয়ে যায় সে। রাস্তার মোড়ে সেই ভিড় ছিল আন্দোলনকারীদের জটলা যা সমাজ-রাজনীতির উত্তাল সময়ের চিহ্ন। আর ছেলেটির সামনে এসে দাঁড়ানো সেই কালো গাড়িটি আন্দোলনকারীদের বিক্ষোভ থামাতে আসা অস্ত্রধারী পুলিশ বাহিনীর গাড়ি। সঙ্গে ছিল বাজির শব্দ যা থেকে বোঝা যায় সশস্ত্র দু-পক্ষের মধ্যে প্রকাশ্যে চলছিল গুলিবর্ষণ, বোমা বিস্ফোরণ। যুদ্ধের এই অচেনা আবহকে উৎসব বলে ভ্রম হয় নিষ্পাপ ছেলেটির, তাই সে নির্দ্বিধায় এগিয়ে যায় সেদিকেই ফলত, রাজনৈতিক হিংসার শিকার হতে হয় নিরপরাধ ছেলেটিকে।

বাবুদের গন্ধে ভরা রাস্তা: কবিতার শেষে অনেক রাতে ছেলেটির বাবাকে বারুদের গন্ধে ভরা রাস্তা দিয়ে বাড়ি ফিরতে দেখা যায়। বারুদের গন্ধ স্পষ্টতই সহিংসতা, বোমা বিস্ফোরণ, দাঙ্গার চিহ্ন বহন করে। অর্থাৎ, সংঘর্ষ থেমেছে বেশিক্ষণ হয়নি আর সেই মারণ-সংঘর্ষের রেশ বহন করছে বারুদের গন্ধে ভরা রাস্তা। যে রাস্তায় কিছুক্ষণ পূর্বেই নেমে এসেছিল ছেলেটি। তারপর সেই অস্থির সময়ের হিংস্র থাবা কেড়ে নিয়েছিল একটা নিষ্পাপ প্রাণ। সামরি

“ছেলে এল না/বাবা এল: কবিতায় বাবা হলেন এমন এক প্রজন্মের মুখপাত্র যাদের কাঁধেই ভবিষ্যৎ প্রজন্মের দায়িত্বভার অথচ দিনের শেষে সে প্রাণ বাঁচিয়ে, সুরক্ষিত অবস্থায় বাড়ি ফিরতে পারলেও, নিরপরাধ-নিষ্পাপ ছেলেটির আর বাড়ি ফেরা হয়নি। এখানেই ফুটে উঠেছে রাজনৈতিক সহিংসতার ভীষণ কদর্য রূপ আর রাষ্ট্রব্যবস্থার ব্যর্থতা।

কবি এই সকলপ্রতীকী চিত্র দ্বারা বুঝিয়ে দিতে চান যে রাজনৈতিক অস্থিরতা কেবল শাসকবিরোধী বা আন্দোলনকারী আর পুলিশের সংঘর্ষ নয়, তা সাধারণ মানুষের গতানুগতিক জীবনকেও চিরতরে বদলে দেয়। রাজনৈতিক সহিংসতার শিকার হতে হয় নিরপরাধ প্রাণগুলিকেই, যাদের কোনো পক্ষ নেই তাদেরকেও ধ্বংস হয়ে যেতে হয়- বিনা দোষে হারিয়ে যেতে হয় চিরতরে।

2. ‘কেন এল না’ কবিতায় ‘ছেলেটি’-র চরিত্র কীভাবে ফুটে উঠেছে, তা আলোচনা করো।

Ans: ‘কেন এল না’ কবিতার ছেলেটিকে ঘিরেই কার্যত কবিতাটি আবর্তিত হয়েছে। ছেলেটির প্রতীক্ষা থেকে শুরু করে তার করুণ পরিণতি পর্যন্ত কবিতার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে থেকে গিয়েছে সে-ই।

উচ্ছল প্রাণের প্রতীক: কবিতায় বর্ণিত ছেলেটি এক ছাপোষা মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। পুজোর জামা কেনার আনন্দে উদ্বেল হয়েই সে নেচে নেচে বেড়ায় সারাদিন। তার সেই সাবলীল নাচের মধ্যে উদ্‌গ্রীব প্রাণের স্পর্শ পাওয়া যায়। ছেলেটিকে নিষ্পাপ এক প্রাণের প্রতীক রূপেই গড়ে তুলেছেন কবি যাতে তার করুণ পরিণতি পাঠকের হৃদয় বিদীর্ণ করে সময়ের নির্মমতাকে স্পষ্টভাবে তুলে ধরতে পারে।

অন্তহীন অপেক্ষার মূর্তি: ‘বাবা কেন এল না, মা?’- এই প্রশ্নের মধ্যেই বাঁধা পড়ে থাকে ছেলেটির সমস্ত দিন। অপেক্ষার প্রতিমূর্তি হয়ে ওঠে সে- পিতার জন্য তার অপেক্ষা কখনও শেষ হয় না। প্রতীক্ষা করতে করতে অধীর হয়ে রাস্তায় নেমে আসতেই এক হিংস্র সময় কেড়ে নেয় তার প্রাণ। তার দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটে এভাবেই। বাবার জন্য অপেক্ষা করতে করতে নিজেই ‘না ফেরার’ দলে চলে যায় সে।

কৌতূহলী, অবুঝ ও নিষ্পাপ এক প্রাণ: ছেলেটির বয়স অল্প, তৎকালীন সময়-রাজনীতি সম্পর্কে স্বাভাবিকভাবেই অনভিজ্ঞ ছিল সে। তাই বাবা কখন আসবে সেই প্রশ্নে ছেলেটি অতিষ্ঠ করে তোলে তার মাকে। তার মধ্যে বাবা না ফেরার যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছিল, পুজোর জামা না পাওয়ার অস্থিরতাই তার কারণ। বাইরের পরিস্থিতি সম্পর্কে সচেতন হয়ে যে সে পিতার জন্য ভাবিত হয়েছে তা নয়, বরং বাবা ফিরে কখন তাকে পুজোর জামা কিনতে নিয়ে যাবে সেই কথা ভেবেই উৎকণ্ঠায় জর্জরিত হয়ে শেষপর্যন্ত দাঙ্গা পরিস্থিতির মধ্যে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে গিয়েছে সে।

কৌতূহলী হয়ে আন্দোলনকারী ও পুলিশি সংঘর্ষের মুখে পড়ে প্রাণ হারিয়েছে নিরপরাধ ছেলেটি। ছেলেটির কৌতূহলী স্বভাব বা অবুঝের ন্যায় আচরণ তাকে বিশেষ করে তোলে না। তার বয়সের ছেলেরা নতুন জামার স্বপ্ন বুনবে, তাদের আবদার পূরণ না হওয়া অবধি অবুঝের মতো অস্থির হয়ে উঠবে, বাবার ফিরতে দেরি হলে তাকে খুঁজতে সাহসী ছেলের মতো বেরিয়ে পড়বে একাই, সব খুঁটিনাটি বিষয় নিয়েই তার প্রশ্ন থাকবে, যেদিকে যেতে বারণ করা হবে কৌতূহলী হয়ে সেদিকেই সে পা বাড়াবে- এসবই তো তার বয়সোপযোগী সাধারণ কার্যকলাপের ছবি। কিন্তু ছেলেটির পরিণতি সাধারণ নয়, তার নির্মম পরিণতি একটি অস্থির সময়ের, একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রব্যবস্থার, উগ্র রাজনীতির স্বাক্ষর। কবিতায় ছেলেটির মৃত্যুকে কার্যত ছিন্নভিন্ন এক ভবিষ্যতের প্রতীক রূপে প্রতিষ্ঠা করেছেন কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়। ছেলেটির মৃত্যু কেবল এক শিশুর হারিয়ে যাওয়া নয়, এটি সমগ্র একটি জাতির সম্ভাবনার মৃত্যু, একটি অপেক্ষার চিরস্থায়ী পরিসমাপ্তি।

3. কেন এল না’ কবিতা অবলম্বনে মায়ের চরিত্রটি বিশ্লেষণ করো।

Ans: সুভাষ মুখোপাধ্যায় রচিত ‘কেন এল না’ কবিতায় বাবার জন্য প্রতীক্ষারত ছেলেটির জীবন তার মাকে আবর্তন করেই অতিবাহিত হয়। অবুঝ, প্রাণচঞ্চল, সদা কৌতূহলী ছেলেটির সর্বক্ষণের ছায়াসঙ্গী তার মা। পাঠ্য কবিতায় মায়ের চরিত্রটি একাধারে-

দায়িত্বশীলা গৃহিণী: কবিতায় গৃহকর্তার বাড়ি ফিরতে দেরি হওয়ায় চরম দুশ্চিন্তাগ্রস্ত গৃহিণী। কিন্তু সংসারের কর্ত্রী হওয়ার দরুণ নিজ দায়িত্বে অটল সে। যেহেতু স্বামী এসে পড়লেই তাদের পুজোর কেনাকাটা করতে বেরিয়ে পড়তে হবে তাই যথাসময়ে ঘরের সব কাজ সেরে স্বামীর পথ চেয়ে প্রতীক্ষমান গৃহিণী।

স্বামীর যোগ্য স্ত্রী: ঘরের মধ্যে সব কাজ সারতে সারতে মাঝে মাঝেই অন্যমনস্ক হয়ে পড়তে দেখা যায় গৃহকর্ত্রীকে। গৃহকর্তার মাইনের দিনে হিসেবের পাহাড় জমা হয় তার স্ত্রীর মনে। কীভাবে সংসারে সুষমভাবে অর্থবণ্টন করে গোটা মাস স্বল্প মাইনের টাকাতে চালাবে, এই হিসেবের টাকা থেকেই কীভাবে পুজোর কেনাকাটার বাড়তি খরচ করা হবে- এসব ভাবনা তার মাথায় ঘনিয়ে এসেছিল, উপরন্তু স্বামীর ফিরতে দেরি হওয়ার দুশ্চিন্তা আরও উতলা করে তুলেছিল মধ্যবিত্ত সংসারের গৃহিণীটিকে। কড়াইয়ের গায়ে ঘন ঘন খুন্তি নাড়ার শব্দ তার সেই অস্থিরতারই ৪ বহিঃপ্রকাশ, যা সে ঘরের কাজে নিজেকে ব্যস্ত রেখে যথাসম্ভব আড়াল করার চেষ্টা করেছিল।

ছেলেটির কর্তব্যপরায়ণ মা: বাবার ঘরে ফিরতে দেরি হওয়ায় পুজোর জামা কিনতে যাওয়ার জন্য উদ্‌গ্রীব হয়ে বসে থাকা ছেলেটি যারপরনাই অস্থির হয়ে উঠেছিল। এদিকে স্বামী বাড়ি না ফেরায় দুশ্চিন্তাগ্রস্ত মা তাই ছেলেটিকে বাইরের বিপজ্জনক পরিস্থিতি টের পেতে না দিয়ে গতানুগতিকভাবে ঘরের দৈনন্দিনের কাজ সারতে থাকে। ছেলের ঘন ঘন একই প্রশ্নে নিজের দুশ্চিন্তা চেপে নীরব থাকে মা। ছেলেকে সে বুঝতে ৪ দিতে চায় না যে বাইরের পরিস্থিতি সংকটজনক, তার বাবার বাড়ি ফিরতে দেরি হওয়ার পিছনে থাকতে পারে ভয়ংকর কোনো কারণ। ছোটো ছেলেটিকে সেসব টের পেতে না দিয়ে ইতিহাস বই খুলে পড়তে বসিয়ে দেয় মা। ঘর-সংসার-সন্তান একা হাতে সামলে স্বামীর অপেক্ষায় প্রহর গুনতে থাকে ছেলেটির মা।

সমাজ ও রাজনীতি সচেতন: সাধারণ মধ্যবিত্ত ঘরের গৃহবধূটি বহির্জগত সম্পর্কে সচেতন। তাই স্বামীর ঘরে ফিরতে দেরি হওয়ায় সে অভিমানী হয়নি বরং সময় যতই অতিবাহিত হয়েছে দুশ্চিন্তা গ্রাস করেছে তাকে। পুজোর কেনাকাটা করতে যাওয়ার তৎপরতা ম্লান হয়ে গিয়েছে স্বামীর ঘরে না ফেরার উদ্বেগে। বাইরে তখন নাগরিক আন্দোলনে উত্তাল গোটা শহর। আন্দোলনকারী ও পুলিশের সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছে বহু নিরপরাধ সাধারণ মানুষ। এই দাঙ্গা পরিস্থিতির মধ্যেই গৃহকর্তা মাইনে আনতে বেরিয়েছে, স্বাভাবিকভাবেই আশঙ্কাগ্রস্ত গৃহিণী, কারণ সে জানে যে সময়টা ভালো নয়।

আশা ও আশঙ্কার দ্বন্দ্বে জর্জরিত: কবিতায় মায়ের চরিত্রটি যেন আশা ও আশঙ্কার মধ্যে এক সেতু রচনা করেছে। ঘরের মানুষের ঘরে ফেরার প্রতীক্ষা কীভাবে আশঙ্কায় পরিণত হয় তা মায়ের আচরণেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে। একদিকে স্বামী ফিরবে এবং তাদের কেনাকাটা করতে বেরোতে হবে সেই কথা ভেবে সে দ্রুত ঘরের কাজ সেরে তৈরি হয়ে মনে আশা নিয়ে বসে থাকে। আবার স্বামীর কোনো ক্ষতি হয়ে গিয়েছে এই দুশ্চিন্তায় দৈনন্দিন কাজে ভুল করে ফ্যালে। ফ্যান গালতে গিয়ে পুড়িয়ে ফ্যালে পা। স্বামীর দুশ্চিন্তায় উলের ঘর বুনতে ভুল করে, আবার ছিটকিনি খোলার শব্দ পেতেই স্বামীর ঘরে ফেরার আশায় বুক বাঁধে সে। বাইরের বিপজ্জনক অস্থির পরিস্থিতি সম্বন্ধে সব জানা সত্ত্বেও ছেলের পথ আটকায়নি মা কারণ সে আশাবাদী, সমাজ-রাজনীতির নির্মমতা যে নিরপরাধ শিশুহত্যা অবধি পর্যবসিত হতে পারে তা হয়তো সে দুঃস্বপ্নেও কল্পনা করতে পারেনি, তাই ছেলের জন্য আশঙ্কা করতে দেখা যায়নি মা-কে।

সব মিলিয়ে, চরম অস্থিরতার প্রতিবেশে কবিতার ‘মা’ চরিত্রটি, কবির সচেতনভাবে গড়ে তোলা একটি স্থিতধী চরিত্র।

4. কেন এল না’ কবিতায় প্রতীক্ষাকে কীভাবে প্রতীকায়িত করে তোলা হয়েছে, তা আলোচনা করো।

Ans: ভূমিকা: সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের লেখা ‘কেন এল না’ কবিতাটি আদ্যন্ত একটি প্রতীক্ষার কবিতা, যার শেষে প্রতীক্ষার অতি করুণ অবসান চোখে পড়ে। নাতিদীর্ঘ কবিতাটির ছত্রে ছত্রে ছড়িয়ে আছে প্রিয়জনের জন্য দীর্ঘায়িত প্রতীক্ষার উদ্বেগ। যে প্রতীক্ষাকে কিছু টুকরো টুকরো ঘটনার মধ্য দিয়ে প্রতীকায়িত করা হয়েছে।

মানসিক অস্থিরতার প্রতিফলন: স্বামীর বাড়ি ফিরতে দেরি হচ্ছে বলে উদ্বিগ্ন স্ত্রীর রান্নার সময় কড়ার গায়ে খুন্তির অকারণ চাঞ্চল্য বা দৈনন্দিন কাজে ভুল করে ফেলা তার মানসিক অস্থিরতাকেই নির্দেশ করে। ভাতের ফ্যান গালতে গিয়ে অভ্যস্ত হাতেও কম্পন ধরে, আর সেই গরম ফ্যান পড়ে গৃহিণীর পা পুড়ে যায়। তবে উদ্বেগের মধ্যেও নিয়মমাফিক ঘরের সমস্ত কাজকর্ম সেরে প্রতীক্ষার দীর্ঘ সময়কে কোনো কাজের মাধ্যমে অতিবাহিত করার উদ্দেশ্যেই উল কাঁটা নিয়ে বুনতে বসে স্ত্রী কিন্তু সেখানেও ঘর ভুল হয়ে যায়। কারণ সৃষ্টিশীল কাজ করার মতো মানসিক শান্তি তখন প্রতীক্ষারত স্ত্রীর মনে ছিল না। এসব অন্যমনস্কতার মাধ্যমেই স্ত্রীর প্রতীক্ষাকে প্রতীকায়িত করেছেন কবি।

তেমনই পুত্রের অপেক্ষার প্রতীক হয়ে এসেছে বেশ কিছু ব্যঞ্জনা। পড়তে বসে বইয়ের অক্ষরগুলোর বোধগম্যতা হারিয়ে ফেলা, বাবার জন্য ছেলেটির প্রতীক্ষাকেই চিহ্নিত করে। পড়তে বসেও পড়ায় তার মন নেই। বইয়ের অক্ষরের বাবার আদরে বখে যাওয়া ছেলের মতো অবাধ্য হয়ে ওঠা, ঘড়ির একঘেয়ে টিকটিক শব্দ, কল থেকে জল পড়ার ক্লান্তিকর বহমানতা, গোঁফওয়ালা বিড়ালের পাঁচিল থেকে লাফ দিয়ে পড়া- এইসব খণ্ডচিত্রগুলির মাধ্যমে পুত্রের উদ্বেগ জারিত প্রতীক্ষার প্রহরকে কবি প্রতীকায়িত করেছেন। অতি সাধারণ এবং দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে অধিক মাত্রায় সম্পর্কিত রূপক ব্যবহারের কারণেই কেবল মা ও ছেলে নয়, এই প্রতীক্ষায় সামিল হয়ে পড়েন পাঠকও।

প্রশ্নবোধক বাক্যের পুনরাবৃত্তি: ‘কেন এল না’ কবিতাটির নামটিই একটি প্রশ্ন, আর কবিতাজুড়েও বারংবার উদ্বিগ্ন কিছু প্রশ্নই ঘুরে ফিরে এসেছে। ছেলেটির ‘বাবা কেন এল না মা?’- প্রশ্নের পুনরাবৃত্তি আর মায়ের নিজের মনের মধ্যেই ‘মানুষটা এখনও কেন এল না?’- এই প্রশ্নের ঘুরপাক খাওয়া তাদের প্রতীক্ষারই প্রতীক রূপে কবিতায় ফুটে উঠেছে।

5. ‘কেন এল না’ কবিতায় গৃহকর্তার ফিরতে দেরি হওয়াকে কোন্ রূপক দিয়ে বোঝানো হয়েছে?

Ans: রূপকের ব্যবহার: ‘কেন এল না’ কবিতায় গৃহকর্তার ঘরে ফিরতে দেরি হওয়াকে দুটি রূপকের মাধ্যমে পাঠকের কাছে স্পষ্ট করে তুলেছেন কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়। কবিতার দ্বিতীয় পঙ্ক্তি থেকেই আমরা জানতে পারি- ‘রাস্তার আলো জ্বলছে অনেকক্ষণ…’ সাধারণত বিকেল থেকে সন্ধে নামার মুখেই শহরের বাতিস্তম্ভগুলি জ্বলে ওঠে। তাই রাস্তার আলো জ্বলে ওঠার অর্থ হল অন্ধকার নেমেছে। আর ‘অনেকক্ষণ’ শব্দের মধ্য দিয়ে বোঝানো হয়েছে সন্ধে গড়িয়ে রাত হতে চলেছে তখনও গৃহকর্তা বাড়ি ফেরেনি।

দ্বিতীয়ত, একটি পঙ্ক্তিতে কবি জানিয়েছেন- ‘এখন রেডিওয় খবর বলছে।’ সেই সময়ে সাধারণত দিনে দু’বারই দূরদর্শন ও রেডিয়োতে সংবাদ পরিবেশিত হত। সেই সংবাদ পাঠের শব্দ শুনে ঘড়ি মিলিয়ে নেওয়া যেত। এখানে সাধ্যখবর শুরু হয়ে গিয়েছে- অর্থাৎ দিনের শেষে খবর পরিবেশিত হচ্ছে। কিন্তু গৃহকর্তা তখনও বাড়ি ফেরেনি। তার বাড়ি ফেরার নির্ধারিত সময় বহুক্ষণ পূর্বেই অতিক্রান্ত হয়ে গিয়েছে।

প্রাসঙ্গিকতা: সচেতন পাঠক অবশ্যই পূর্বোক্ত দুটি রূপক লক্ষ করবেন। ঘরের মানুষ যথা সময়ে ঘরে না ফেরার উদ্বেগ সকল ভুক্তভোগী মানুষই অনুভব করতে পারেন। প্রতীক্ষার সময় যত দীর্ঘ হয়, ততই আশঙ্কার মেঘ ঘনাতে থাকে মনে। আশেপাশের প্রতিটি নড়াচড়া, প্রতিটি ঘটনাপ্রবাহ উৎকণ্ঠাকে প্রতি মুহূর্তে বাড়িয়ে তোলে। সেই পরিস্থিতিতে বাইরের রাস্তার আলো জ্বলে ওঠা, রেডিয়োয় সংবাদপাঠ, হুলো বিড়ালের প্রাচীর থেকে দেওয়া লাফ অথবা দরজায় খুট করে হওয়া শব্দ- এ সবকিছুই টানটান হয়ে থাকা স্নায়ুর তারে ধরা পড়ে। কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় তাই ঘরের মানুষ ঘরে ফিরতে দেরি করায় পরিবারের বাকি সদস্যদের মনের চাপা উদ্বেগকে প্রকাশ করতে সচেতনভাবেই এই অনুষঙ্গগুলি কবিতায় এনেছেন, যাতে পাঠক অনায়াসেই ঘরের লোকের ঘরে ফিরতে দেরি হওয়া এবং তার জন্য তার পরিবারের সেই অপেক্ষার প্রহরের দৈর্ঘ্য টের পান।

6. কেন এল না’ কবিতায় গৃহকর্তার ঘবে না ফেরা কবিতায় কীভাবে ধীরে ধীরে দমচাপা দুর্ভাবনার আবহ সৃষ্টি করেছে, তা বুঝিয়ে দাও।

Ans: বিশ্লেষণ: কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় তাঁর ‘কেন এল না’ কবিতাটিকে সচেতনভাবেই বাইরের সরল সোজা খোলসের আড়ালে লুকানো বিস্ফোরকের মতো করে গড়ে তুলেছেন। কবি সময়ের অস্থিরতা বা দাঙ্গার অনুষঙ্গেই কবিতাটি রচনা করতে পারতেন কিন্তু তা তিনি করেননি। একটি সাধারণ পরিবারের দৈনন্দিন জীবনকে অবলম্বন করেই ঘরের মানুষ ঘরে না ফেরার উদ্বেগ মিশ্রিত অস্বস্তি কবি ঘনিয়ে তুলেছেন পাঠকের মনে, পাঠককে চালিত করেছেন তৎকালীন অস্থির সামাজিক-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের দিকে। কবিতার শুরুতেই দেখা যায় যে পুত্র, পিতার জন্য প্রতীক্ষারত। আপাতদৃষ্টিতে তা ছিল পুজোর কেনাকাটা করতে যাওয়ার মতো আনন্দমাখা প্রতীক্ষা। বালক বয়সে নতুন জামার জন্য এই আকুলতা খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু যত সময় যায় ততই ঘরের পরিবেশ গুমোট হয়ে আসে। বারবার মায়ের কাছে ছেলেটি প্রশ্ন করতে থাকে, ‘বাবা কেন এল না, মা?’

ছেলেটির মা অর্থাৎ গৃহকর্ত্রীর কাছে এ প্রশ্ন ধীরে ধীরে বড়ো হয়ে দেখা দেয়। তার দৈনন্দিন কাজে ভুল হতে থাকে, হৃৎস্পন্দন দ্রুততর হয়। কড়াইয়ে ঘন ঘন খুন্তি নাড়ার শব্দ, ভাতের ফ্যান গালতে গিয়ে পা পোড়ানোর মত ঘটনা মায়ের মনের চাপা দুশ্চিন্তার কথা জানান দেয়। কারণ পুত্রের থেকেও মা বহির্জগতের বিপজ্জনক পরিস্থিতি সম্পর্কে অধিক সচেতন। যত সময় যায় এই উদ্বেগ ক্রমে আশঙ্কায় পরিণত হয়, আশঙ্কা রূপ নেয় আতঙ্কের। এই আতঙ্কের অবসান ঘটার আশায় পাঠকও দমচাপা উৎকণ্ঠা নিয়ে এগিয়ে যান কবিতার শেষ চরণগুলির দিকে। সেখানেই আনাকাঙ্খিতভাবে ঘুরে যায় ঘটনার মোড়। পিতাকে খুঁজতে গিয়ে ছেলেটির চিরকালীন হারিয়ে যাওয়া পাঠকের মনে আকস্মিক অভিঘাত হানে। কবিতার শুরু থেকে শেষ অবধি পিতাকে নিয়ে উৎকণ্ঠার আবহ খুব ধীরে ধীরে. শিকড় বিস্তার করেছে। কিন্তু ছেলেটিকে নিয়ে পাঠকমনে কোনো দুশ্চিন্তা সঞ্চার করার আগেই কবিতার আকস্মিক পরিণতিতে তাদের পৌঁছে দেন কবি। এর ফলেই যেন সেই আঘাত আরও দীর্ঘস্থায়ী হয়। কবিতাজুড়ে উৎকণ্ঠার আবহ সৃষ্টিতে এবং সেই আবহের রেশকে দীর্ঘক্ষণ বজায় রাখতে কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় যে অনবদ্য তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

7. “নেচে নেচে বেড়িয়েছে”- কে, কেন নেচে নেচে বেড়িয়েছে?

Ans: যে: কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় রচিত ‘কেন এল না’ কবিতায় যে ছেলেটির কথা সমগ্র কবিতা জুড়ে আছে সে-ই সারাটা দিন নেচে নেচে বেড়িয়েছে।

নেচে বেড়ানোর কারণ: কবিতায় বর্ণিত মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেটি স্বভাবতই খুব স্বল্পে খুশি হতে জানে। কারণ যে সংসারে রোজগেরে মানুষ মাত্র একজন সেই সংসারে শখপূরণের অবকাশ কালেভদ্রেই আসে। সেরকমই এক স্বপ্নপূরণের দিন ছিল সেটি। ছেলেটির বাবা মাইনে আনতে যাওয়ার আগে তাকে কথা দিয়ে গিয়েছে, মাইনে নিয়ে সে তাড়াতাড়ি ফিরবে আর ফিরেই সপরিবারে পুজোর কেনাকাটা করতে বেরোবে। ছেলেটির আনন্দের তাই কোনো সীমা নেই। নতুন জামা পাবে সেই আনন্দেই আত্মহারা হয়ে সে সারাদিন নেচে নেচে বেড়ায়। এই নাচ কোনো প্রথাগত নাচ নয়- মহানন্দে হাত-পা ছোড়া, শিশুসুলভ নাচ যা ছেলেটির বাঁধভাঙা খুশির প্রতীক। স্বল্প কিছু প্রাপ্তির আভাসেই প্রচণ্ড অভিভূত হয়ে পড়ায় ছেলেটি সারাটা দিন নেচে নেচে বেড়ায়।

8. “রাস্তায় আলো জ্বলছে অনেকক্ষণ; এখনও”- পঙ্ক্তিটি কোন্ ইঙ্গিত বহন করে তা কবিতা অবলম্বনে লেখো।

Ans: যে ইঙ্গিত বহন করে: আলোচ্য অংশটি কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় রচিত ‘কেন এল না’ কবিতার অন্তর্গত। আমরা জানি শহরে সন্ধ্যা নামলেই জ্বলে ওঠে রাস্তার ধারের বাতিস্তম্ভগুলি। কবিতায় অনেকক্ষণ ধরে রাস্তার আলো জ্বলার অর্থ হল বহুক্ষণ আগেই সন্ধে নেমে গিয়েছে। অর্থাৎ কবিতায় বলা ছেলেটির বাবার মাইনে নিয়ে ফেরার নির্ধারিত সময় অতিক্রান্ত হয়েছে। বাবা কথা দিয়েছিল যে মাইনে নিয়ে ‘সকাল-সকাল’ অর্থাৎ তাড়াতাড়ি ফিরবে, তারপর সপরিবারে পুজোর কেনাকাটা করতে বেরোবে তারা। ছেলেটিও তাই সেই আনন্দে সারাদিন নেচে নেচে বেড়িয়েছে। রাস্তার জ্বলে ওঠা আলো যেন তার সেই আনন্দকে খানিক ফিকে করে দেয়, বোঝা যায় ছেলেটির অপেক্ষার প্রহর কতখানি দীর্ঘ।

তবে, রাস্তার আলো জ্বলে উঠতেই যে ছেলেটির আশাভঙ্গ হয়েছে তা নয়। বরং তার উৎকণ্ঠা বেড়েছে। অবুঝ বালকটি ভেবেছে দেরি করে হলেও বাবা ফিরলেই সে বেরিয়ে পড়বে পুজোর নতুন জামা কিনতে। পরিস্থিতির গাম্ভীর্য সম্পর্কে সে অজ্ঞ, তাই পিতার জন্য তেমন দুশ্চিন্তা করে না সে। বরং পিতার পথ চেয়ে থাকে তার নতুন জামার স্বপ্নে বিভোর দুটি চোখ। লক্ষণীয়, রাস্তার আলোগুলি ‘এখনও’ জ্বলছে অর্থাৎ সন্ধে নামলেও রাত ততোটা গভীর হয়নি তাই রাস্তার আলোমাখা পথের দিকেই চেয়ে থাকে সে। বেলা গড়িয়ে সন্ধে নামলেও ‘ছেলেটি’-র বাবা মাইনে নিয়ে ফেরেনি তাই রাস্তার আলোগুলি কার্যত বাবার তাড়াতাড়ি ফেরার অঙ্গীকারের ব্যর্থতাকেই চিহ্নিত করে।

9. “এখনও বাবা কেন এল না, মা?”- ‘এখনও’ বলতে কোন্ সময়কে বোঝানো হয়েছে? ছেলেটির এমন প্রশ্নের কারণ কী?

Ans: যে সময়: কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের লেখা ‘কেন এল না’ কবিতার উদ্ধৃত পঙ্ক্তিটিতে ‘এখনও’ বলতে সন্ধের সময়কে বোঝানো হয়েছে যখন শহরের রাস্তার ল্যাম্পপোস্টের আলোগুলো জ্বলে উঠেছে এবং কবিতায় বর্ণিত সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের গৃহকর্তাটি তখনও বাড়ি ফেরেনি। বাবার বাড়ি ফেরার এই বিলম্বকেই ছেলেটি ‘এখনও’ বলে নির্দেশ করেছে।

কারণ: ছেলেটির বাবা তাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে তাড়াতাড়ি মাইনে নিয়ে ফিরবে সে, আর তারপরেই তারা পুজোর কেনাকাটা করতে বেরোবে। ছেলেটি তাই সকাল থেকে পুজোর জামা কেনার খুশিতে ডগমগ ছিল কিন্তু বেলা গড়িয়ে যেই না সন্ধে নামল, জ্বলে উঠল রাস্তার ধারের আলো তখনই অস্থির হয়ে উঠল সে। বয়স কম হওয়ার কারণেই তার বাস্তবজ্ঞান ও প্রকৃত অভিজ্ঞতার পরিসরটি কম। বাইরে চলতে থাকা নাগরিক আন্দোলন ও পুলিশের পালটা আক্রমণের জেরে যে বোমা-গুলি-হত্যালীলা চলছে সেই বিষয়ে সে অবগত নয়। তাই বাবার ফিরতে দেরি হওয়ায় ছেলেটি অবুঝের মতো মাকে প্রশ্ন করে চলে, ‘এখনও বাবা কেন এল না, মা?’ ছেলেটির বারেবারে একই প্রশ্ন করে মাকে ব্যস্ত করে তোলা আসলে শিশুমনের চাঞ্চল্য ও ছেলেটির উদ্‌গ্রীব হয়ে ওঠাকেই চিহ্নিত করে। অপেক্ষায় অস্থির হয়েই ছেলেটি কৌতূহলের বশে মায়ের কাছে বাবার না আসার কারণ জানতে চেয়েছে।

10. “বাবা কেন এল না, মা?”- কে, কাকে এই প্রশ্ন করেছে? ছেলেটির বাবার বাড়ি না আসার কারণ কী?

Ans: প্রশ্নকর্তা: কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় রচিত ‘কেন এল না’ কবিতায়, যে ছোটো ছেলেটি তার বাবা অফিস থেকে মাইনে নিয়ে ফিরলে তার নতুন জামা কেনা হবে ভেবে অপেক্ষায় অধীর হয়ে গিয়েছিল সে-ই উদ্ধৃত প্রশ্নটি করেছে।

উদ্দিষ্ট ব্যক্তি: বাবার মাইনে নিয়ে ঘরে ফেরার নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে গেলেও বাবা না ফেরায় ছেলেটি, বাবার না আসার কারণ জানতে চেয়ে তার মাকে উদ্ধৃত প্রশ্নটি করেছে।

বাবার না আসার কারণ: রাজনৈতিক সংঘর্ষে উত্তপ্ত সময়ের বুকে সন্ত্রাসের গ্রাসে সামাজিক সুস্থিতি বিনষ্ট হয়েছিল। শহরের নানা প্রান্তে প্রতিবাদ-প্রতিরোধ গড়ে উঠেছিল, আর সেই আন্দোলনকে দমন করার জন্য শুরু হয়েছিল নানাবিধ কার্যকলাপ। স্বাভাবিক জীবনের চেনা ছন্দ হারিয়ে গিয়েছিল, চেনা পথ হয়ে উঠেছিল অচেনা। কবিতায় বর্ণিত ছেলেটির বাড়ির কাছেই সৃষ্টি হয়েছিল এক অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি, চলছিল গুলি আর হচ্ছিল বোমাবর্ষণ, ফলে তার বাবা প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে সোজা পথে না ফিরে, পরিস্থিতি কিছুটা অনুকূল এবং স্বাভাবিক হওয়ার জন্য প্রতীক্ষা করছিল। গভীর রাতে অন্য পথে, অনেক গলিপথ ঘুরে বাড়ি ফিরতে হয়েছিল তাকে।

এই কারণে নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে গেলেও সে বাড়ি ফেরেনি।

11. “বলে গেল”- কে, কাকে, কী বলে গিয়েছিল?

Ans: যে, যাকে বলেছিল: কবিতায় বর্ণিত গৃহকর্তা তথা ছেলেটির বাবা, তার স্ত্রী ও সন্তানকে বলে গিয়েছিল সে মাইনে নিয়ে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরবে ও তারপর যাবে পুজোর কেনাকাটা করতে।

যা বলেছিল: অন্যান্য মধ্যবিত্ত সংসারের মতো কবিতায় বর্ণিত পরিবারটিতেও রোজগেরে সদস্য একজনই, তাই পুজোর কেনাকাটার জন্য তার মাইনের উপরই নির্ভর করে থাকতে হয়। স্বল্প আয়ের সংসারে কোনো শখ পূরণ করতে হলেও বিস্তর হিসেব-নিকেশ করতে হয়। তাই মাইনে পেয়েই প্রথমে পুজোর কেনাকাটা সারার পরিকল্পনা করেছিল তারা। সংসারে বিভিন্ন খাতে টাকা খরচ হয়ে যেতে পারে তাই মাইনে পেয়ে সেই বেলাতেই পুজোর কেনাকাটা সেরে রাখতে চেয়েছে গৃহকর্তা। উপরন্তু, পুজোয় নতুন জামা পাওয়া, বাচ্চা ছেলেটির কাছে স্বপ্নপূরণের মতো। কারণ নতুন জামা পরার সুযোগ সে সচরাচর পায় না, অপেক্ষা করতে হয় উপলক্ষ্যর জন্য, দুর্গাপুজো তেমনই এক উপলক্ষ্য। বাবা মাইনে নিয়ে তাড়াতাড়ি ফিরবে বলে গিয়েছে, ছেলেকে নতুন জামা কিনে দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে কিন্তু বেলা গড়িয়ে সন্ধে নামলেও বাড়ি ফেরেনি ছেলেটির বাবা।

12. ‘সেই মানুষ এখনও এল না।”- মানুষটি কে? তার জন্য কারা, কেন প্রতীক্ষা করে ছিল?

অথবা, “সেই মানুষ এখনও এল না।”- ‘সেই মানুষ’ বলতে কার কথা বলা হয়েছে? ‘এখনও এল না’ বাক্যাংশের মধ্যে দিয়ে বক্তার কোন্ উপলব্ধি প্রকাশ পেয়েছে?

Ans: যে মানুষ: সুভাষ মুখোপাধ্যায় রচিত ‘কেন এল না’ কবিতায় ‘সেই মানুষ’ বলতে একজন ছাপোষা, মধ্যবিত্ত, পারিবারিক মানুষের কথা বলা হয়েছে। মানুষটি কারো স্বামী, কারো পিতা- তার রোজগারের উপর নির্ভরশীল গোটা পরিবার। সে মাইনে নিয়ে ঘরে এলে তবেই পুজোর কেনাকাটা হবে। কোনো রাজনৈতিক মতাদর্শ, দাবি বা দলের সঙ্গে তার সম্পর্ক নেই। সে বাড়ি ফিরতে দেরি করলে প্রিয়জনেরা উৎকণ্ঠায় সময় কাটায়। রাজনৈতিক টানাপোড়েনের জেরে সৃষ্ট বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে নিজের প্রাণ বাঁচিয়ে ঘরে ফেরাটাই যার জীবনের আদর্শ- তেমনই এক অতি সাধারণ, ছাপোষা মানুষ সে। কিন্তু যাবতীয় ঝামেলা থেকে যথাসম্ভব গা বাঁচিয়ে চলার পরেও, আন্দোলনকারী ও পুলিশের সংঘর্ষে যাকে সন্তানহারা হতে হয়, তেমনই এক হতভাগ্য পিতা কবিতার ‘সেই মানুষ’-টি।

প্রতীক্ষার কারণ: অফিস থেকে সঠিক সময়ে বাড়ি না ফেরায় প্রতীক্ষারত ছিল কবিতায় বর্ণিত সেই মানুষটির ছেলে এবং স্ত্রী। আসলে মধ্যবিত্ত জীবনে সাধ এবং সাধ্যের ব্যবধান দুস্তর। গৃহকর্তা মাইনের টাকা নিয়ে ফিরলে সেই টাকায় সব সাধপূরণ হবে। পূজোর কেনাকাটা সম্ভব হবে, নতুন জামা পরতে পারবে ছেলেটি, সেই আনন্দে সে চঞ্চল হয়ে উঠেছিল। বাবার অফিস থেকে ফিরে আসার জন্য তার আগ্রহ আর উদ্দীপনাও তাই ছিল বেশি। কিন্তু ছেলেটির মায়ের মনের মধ্যে একদিকে আশঙ্কা ছিল, চারপাশের আতঙ্ক আর ত্রাসের আবহে মানুষটি কখন সাবধানে বাড়ি ফিরতে পারবে তা নিয়ে- অন্যদিকে সংসারের নানা চাহিদা, সীমিত আয়, মাইনের টাকা এলে তা দিয়ে আর্থিক সংকট কতটা মেটানো যাবে সেসব ঘিরেও ঘনিয়ে উঠেছিল চিন্তার মেঘ। আন্দোলনের কালে ক্রমশ বাড়তে থাকা চাল-ডালের দাম, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের অগ্নিমূল্য ভয়াবহ সংকটের মুখে এনে ফেলেছিল মধ্যবিত্ত মানুষের জীবনকে। মাইনের দিনটি তাই মধ্যবিত্ত সংসারে বহু প্রতীক্ষিত হয়ে উঠেছিল, এই কারণে তাড়াতাড়ি ফিরে আসবে বলেও যে ফিরছিল না বাড়িতে তার জন্য ছেলেটি এবং তার মা দুজনেই প্রতীক্ষা করছিল।

13. কড়ার গায়ে খুন্তিটা আজ একটু বেশি রকম নড়ছে।”- ‘আজ’ বলতে কোন্ দিনের কথা বলা হয়েছে? কড়ার গায়ে এভাবে খুন্তি নড়ার কারণ কী?

Ans: যে দিনের কথা: কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের ‘কেন এল না’ কবিতায় ‘আজ’ বলতে সন্ত্রাস কবলিত অস্থির সময়ের বুকে যেদিন ছেলেটির বাবার মাইনে নিয়ে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে আসার কথা ছিল, সেই দিনটির কথা বলা হয়েছে। সে সময়ে প্রতিটি দিনই ছিল সন্ত্রাসমুখর। সংঘর্ষ, গুলি, বোমা বিস্ফোরণ, গণহত্যা ছিল প্রত্যহের খুবই স্বাভাবিক একটি চিত্র, সেদিনও ছিল এমনই এক দিন।

যুক্তির বেশি রকম নড়ার কারণ: সমস্যা-সংকটে পূর্ণ অস্থির সময়ে বাজার ছিল অগ্নিমূল্য, চালের দাম আকাশ ছুঁয়েছিল- ফলে সীমিত আয়ের মধ্যবিত্ত জীবনে নানা শঙ্কার মেঘ ঘনীভূত হয়েছিল। অন্যদিকে খাদ্য আন্দোলনে পথে নামা প্রতিবাদী মানুষের প্রতিরোধ, সেই আন্দোলন দমনে পুলিশের অতি সক্রিয়তা এবং আক্রমণে-প্রতিআক্রমণে জ্বলে ওঠা হিংসার আগুনে ত্রস্ত হয়ে উঠেছিল সাধারণ মানুষের প্রাত্যহিক জীবন। স্বাভাবিকভাবে স্বামীর জন্য প্রতীক্ষায় থাকা ছেলেটির মা ব্যাকুল হয়ে উঠেছিল, নানা আশঙ্কায়। দোলায়িত মন চেয়েছিল তাড়াতাড়ি রান্না শেষ করে ফেলতে, তাই কড়ার গায়ে খুন্তি নড়ছিল দ্রুত। আবার স্বামী ফিরলে কেনাকাটা করতে যাওয়ার চিন্তা তার দৈনন্দিন কাজের গতিকে বাড়িয়ে দিয়েছিল। ধৈর্য রাখতে পারছিল না সে। ভাবছিল স্বামী মাইনের টাকা নিয়ে ফিরে এলে হিসাব করে ফেলতে হবে, পুজোর কেনাকাটা কীভাবে করবে, কী কী জরুরি অত্যাবশ্যক জিনিস কিনতে হবে, কীভাবে সামঞ্জস্যবিধান হবে সাধ আর সাধ্যের। উপরন্তু, স্বামী না ফেরার উদ্বেগ নানা দুশ্চিন্তার জন্ম দিচ্ছিল তার মনে, বারবার অন্যমনস্ক হয়ে পড়ছিল সে।

14. “ফ্যান গালতে গিয়ে/পা-টা পুড়ে গেল।”- কার পা পুড়ে গিয়েছিল এবং তার পা পুড়ে যাওয়ার কারণ কী?

Ans: যার: সুভাষ মুখোপাধ্যায় রচিত পাঠ্য ‘কেন এল না’ কবিতাটিতে আমরা দেখি অন্যমনস্কভাবে ভাতের ফ্যান গালতে গিয়ে গৃহকর্ত্রীর তথা ছেলেটির মায়ের পা পুড়ে গিয়েছিল।

কারণ: রাজনৈতিক অস্থিরতার সময়ে বাহ্যিক অশান্তি যে চৌকাঠ পেরিয়ে সাধারণ মানুষের গৃহস্থালিতে ঢুকে পড়েছিল এবং প্রভাবিত করেছিল তাদের জীবনকে, সেই কথাটিই কবিতায় তুলে ধরেছেন কবি। বাড়ির গৃহকর্তা মাইনে আনতে গিয়েছে, ঘরে অপেক্ষারত তার স্ত্রী-র মাথায় নানান চিন্তার পাহাড়। মধ্যবিত্ত সংসারে মাইনের দিন একটি বিশেষ দিন, সঞ্চয়হীন জীবনে একমাত্র রোজগেরে সদস্যের মাইনের উপরেই নির্ভর করে থাকে তাদের আগামীদিনের যাপন। উপরন্তু, সেটি ছিল পুজোর মাস ফলত পুজোর কেনাকাটার বাড়তি খরচ মেটাতে হবে স্বল্প মাইনে থেকেই। তাই সেইসব হিসাব-নিকাশের চিন্তা করতে করতেই গৃহকর্ত্রী ঘরের যাবতীয় কাজ দ্রুত সেরে রাখতে থাকেন, কারণ স্বামী মাইনে নিয়ে ফিরেই পুজোর কেনাকাটা করতে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এইসবের মধ্যেই গৃহকর্তার বাড়ি ফেরার নির্ধারিত সময় অতিক্রান্ত হয়েছে- গৃহিণী, স্বামীর দুশ্চিন্তায় যারপরনাই অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছে। অন্যমনস্কতার কারণেই ভাতের ফ্যান গালতে গিয়ে পা পুড়িয়ে ফেলেছে সে। একদিকে সংসারের অর্থনৈতিক অবস্থাজনিত চিন্তাভাবনা, অপর দিকে পুজোর কেনাকাটা করতে যাওয়ার আগে ঘরের সব কাজ সেরে ফেলার তাড়াহুড়ো- আবার বাইরে জ্বলতে থাকা রাজনৈতিক দাঙ্গার আগুন ও আন্দোলনকারী এবং পুলিশের আক্রমণ-প্রতিআক্রমণের আবহে স্বামীর বাড়ি ফিরতে দেরি হওয়ার দুশ্চিন্তা- এইসব মিলিয়ে গৃহকর্ত্রীর উদ্বেগ ও অন্যমনস্কতা ব্যক্ত করতেই ফ্যান পড়ে গৃহিণীর পা পুড়ে যাওয়ার ঘটনাটির উল্লেখ করেছেন কবি।

15. একটি সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের ‘রান্নাঘর’ কীভাবে অস্থির সময়ের প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠল তা ‘কেন এল না’ কবিতা অবলম্বনে ব্যাখা করো।

Ans: ব্যাখ্যা: ‘কেন এল না’ কবিতায় কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় যে সময়ের ছবি এঁকেছেন সেটি ছিল নাগরিক আন্দোলনে মুখর, পুলিশি অত্যাচারে সন্ত্রস্ত, গণহত্যায় দগ্ধ এক বিদ্ধস্ত সময়। যে অস্থির সময়ের আঁচ পড়েছিল সাধারণ, মধ্যবিত্ত গৃহস্থালিতেও। ঘরের চৌকাঠ পেরিয়ে রান্নাঘর অবধি এসে পৌঁছেছিল জ্বলন্ত সময়ের আগুন, প্রভাবিত করেছিল জনজীবনের স্বাভাবিক যাপনকে।

রান্নাঘর হল কোনো সংসারের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ, পরিবারেরর সদস্যদের একটি সংবেদনের জায়গা। যে গৃহিণী পরিবারের সকলকে এক সুতোয় বেঁধে রাখেন কবিতায় সেই গৃহিণীর সর্বাধিক সময় কাটে রান্নাঘরেই। রান্নাঘর সংসারের শান্তির আধার আর গৃহিণী সেই শান্তির প্রতিমূর্তি। তবে, ঘরের মানুষ ঘরে ফিরতে দেরি করায় গৃহিণীর মনেই জমেছে দুশ্চিন্তার মেঘ, সেই মেঘ ছেয়ে ফেলেছে রান্নাঘরের পরিবেশকেও।

গৃহিণীর দৈনন্দিন কাজের গতিতে ছেদ পড়েছে। বাইরের বিপদমুখর পরিস্থিতিতে স্বামী সুরক্ষিত আছেন কি না সেই কথা ভাবতে ভাবতে আশঙ্কাগ্রস্ত গৃহিণী অকারণে কড়ার গায়ে সজোরে খুন্তির শব্দ করে ফ্যালে। গৃহকর্তার চিন্তায় অন্যমনস্ক হয়ে ভাতের ফ্যান গালতে গিয়ে গরম ফ্যান পায়ে পড়ে তার, সময়ের আগুন যেন বহিরঙ্গের সঙ্গে দগ্ধ করে তার মনকেও।

কবিতার গৃহকর্ত্রী একজন কর্তব্যপরায়ণ গৃহবধূ, দায়িত্বশীলা স্ত্রী ও স্নেহপরায়ণ মা। সে তার সংসারে বাহ্যিক অশান্তির আঁচ পড়তে দিতে চায় না। বাড়ির দৈনন্দিন কাজের মধ্য দিয়ে সবকিছু স্বাভাবিক রাখার প্রচেষ্টা করলেও ব্যর্থ হয় সে। কাজে ভুল হয়ে যায় তার। যখন সমগ্র সমাজ ও সময়টাই উত্তাল হয়ে উঠেছে তখন নিরপেক্ষ, অরাজনৈতিক, সাধারণ একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের চিরাচরিত শান্তিও বজায় রাখা অসম্ভব হয়ে পড়ে। দাঙ্গার আগুন গ্রাস করে সাধারণ একটি পরিবারের রান্নাঘরটিকেও।

16. জানলার দিকে মুখ করে/ ছেলেটা বই নিয়ে বসল মাদুরে”-ছেলেটি কোন্ বই নিয়ে বসেছিল এবং কেন? বই নিয়ে বসার পর কী কী ঘটেছিল?

অথবা, “কেন এল না” কবিতায় ছেলেটি কোন্ বিষয়, কীভাবে পড়ার চেষ্টা করেছিল? তার সেই পড়া কতদূর সার্থক হয়েছিল?

Ans: যে বই: কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের ‘কেন এল না’ কবিতায় বর্ণিত ছেলেটি জানালার দিকে মুখ করে ইতিহাস বই নিয়ে বসেছিল।

কারণ: ছেলেটির বাবা অফিস থেকে মাইনে নিয়ে তাড়তাড়ি ফিরে পুজোর জামা কিনতে যাওয়ার কথা দিয়েছিল, তাই সারাদিন সে মহানন্দে নেচে নেচে বেরিয়েছে। কিন্তু যখন সন্ধে নেমে যাওয়ার পরেও বাবা বাড়ি ফিরল না তখন তার কাছে ঐ দিনটির বিশেষত্ব আর থাকল না। অগত্যা আর অপেক্ষায় সময় অতিবাহিত না করে বাকি সাধারণ দিনগুলোর মতোই বই খুলে পড়তে বসতে হয়েছে ছেলেটিকে।

ঘটনাবলি: অস্থির উদবিগ্ন মন নিয়ে পড়তে বসে ছেলেটি স্বভাবতই বইয়ের পাতায় মনোনিবেশ করতে পারছিল না, বাবার ফিরে আসার জন্য অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছিল সে। ফলত বাহ্যিক জগতের নানা ঘটনাপ্রবাহে তার বিক্ষুব্ধ মন বিচলিত হয়েছিল। ঘড়ির টিকটিক শব্দে সময়ের এগিয়ে চলা, ক্রমশ রাতের অন্ধকার ঘনিয়ে আসা, খোলা কলের মুখ থেকে জল পড়ে যাওয়ার শব্দ, গোঁফওলা বিড়ালের লাফিয়ে নেমে আসা- এসব তুচ্ছাতিতুচ্ছ বিষয়গুলিও তার মনোযোগ অধিকার করে নিয়েছিল। পাঠ্য বিষয়ের সঙ্গে তার কোনো সমযোজী বন্ধন ও আত্মিক যোগ তৈরি হয়নি বলে বইয়ের পাতায় আটকে থাকা অক্ষরগুলোকে তার মনে হচ্ছিল হিজিবিজি, অর্থহীন। তারা এতই একগুঁয়ে এবং অবাধ্য যে কিছুতেই বোধগম্য হবে না, মনে ও মননে প্রবেশ করতে চাইবে না, থেকে যাবে স্থবির হয়ে বইয়ের পাতাতেই। কারণ ছেলেটির মন আজ চঞ্চল, বাবা তাড়াতাড়ি মাইনে নিয়ে ফিরলে শুরু হবে পুজোর কেনাকাটা, নতুন জামা গায়ে দিতে পারবে সে, বহুদিনের শখ পূর্ণ হবে তার, তাই উৎসাহ আকাশ ছুঁতে চায়। স্বপ্নপূরণের প্রত্যাশায় মন কিছুতেই ইতিহাস বইয়ের পাতায় আটকে থাকতে চায় না, সে ডানা মেলে উড়ে যেতে চায়, আনন্দ আস্বাদের নানা সম্ভাব্য মুহূর্ত কল্পনা করে সে মশগুল হয়ে থাকে। একঘেয়ে ইতিহাসের প্রসঙ্গ আর তথ্যের মধ্যে নিমগ্ন থাকতে চায় না তার মন, যতক্ষণ না পুজোর জামা কেনা হচ্ছে, তার আশাপূরণ না হচ্ছে, ততক্ষণ তার মন শান্ত হবে না। ইতিহাস বইয়ের অক্ষরগুলো স্থানু হয়ে থেকে যাবে বইয়ের পাতাতেই। তা হৃদয়ের জগতে, বোধের জগতে প্রবেশ করতে পারবে না। তাই ছেলেটি ইতিহাস বই নিয়ে বসার পর, কেবল পড়াটুকুই হয়নি, তার অস্থির মন পড়েছিল বাবার ফেরার পথের দিকে। আর, অন্যমনস্ক থাকার কারণেই সমস্ত তুচ্ছ বিষয় তার চোখে পড়ছিল এবং একসময় অধৈর্য হয়ে পড়া ছেড়ে উঠে গিয়েছিল ছেলেটি।

17. সামনে ইতিহাসের পাতা খোলা-“- ‘ইতিহাসের পাতা খোলা কথাটির তাৎপর্য লেখো।

অথবা, ইতিহাস বই পড়ায় ছেলেটির মন নেই কেন?- ব্যাখ্যা করো।

Ans: প্রসঙ্গ: কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের লেখা ‘কেন এল না’ কবিতায় দেখা যায় বাবার জন্য অধীর আগ্রহে প্রতীক্ষারত ছেলেটি সন্ধে গড়িয়ে রাত নামলে অভ্যস্ত নিয়মে ইতিহাস বই নিয়ে পড়তে বসে। কিন্তু বইয়ের পাতা খোলাই রয়ে যায়, বইয়ের পাতার একঘেয়ে অক্ষরগুলি তার বোধগম্য হয় না।

তাৎপর্য: ‘ইতিহাস’ শব্দটি কবিতার ক্ষেত্রে এক অন্যতর ব্যঞ্জনা নিয়ে আসে। ইতিহাস তো কেবল অতীতের কাহিনি নয়, এ হল মানুষের সভ্যতার পর্ব থেকে পর্বান্তরের ধারাবাহিক কালানুক্রমিক বিবরণ। ইতিহাস সাম্রাজ্যবাদী শাসকের কৃতিত্ব আর রাজ্যজয়ের খতিয়ান লিখে রাখে, রাষ্ট্রবিপ্লব আর সংগ্রামের কারণ এবং ফলাফলের চুলচেরা বিশ্লেষণ করে, কিন্তু এই ইতিহাসের আড়ালে থেকে যায় সাধারণ মানুষের ছোটো ছোটো চাওয়া পাওয়ার না মেলা হিসেব। উপেক্ষিত থেকে যায় মনের অন্দরে ঘটে চলা নানা ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া। তাই সেই ইতিহাসের সঙ্গে বাবার ঘরে ফেরার জন্য অপেক্ষারত ছেলেটির অস্থির মনের উদ্বিগ্ন প্রহর কোনো সংযোগ রচনা করতে পারে না। সেই ইতিহাস ছেলেটির অশান্ত মনের অনন্ত জিজ্ঞাসা ‘বাবা ফিরে এল না কেন?’-কে মেটাতে পারে না। বাবা ফিরে এলে পুজোর নতুন জামা কিনে দেবে তাকে, আনন্দে ভেসে বেড়াবে সে, সেই স্বপ্নে বিভোর ছেলেটির মনে তাই পাঠ্য ইতিহাসের বিষয়গুলো কোনও নতুন আকর্ষণের জন্ম দিতে পারে না। মানব ইতিহাসের তথ্যপঞ্জি নয়, বাবার ফিরে আসাই তার সেই মুহূর্তের পরম আকাঙ্ক্ষা হয়ে দাঁড়ায়। পাঠ্য ইতিহাস, ছেলেটির অনুভূতির এই জগতে কোনো ভাবের উদ্রেক ঘটাতে অপারগ। ইতিহাসের খোলা পাতার সঙ্গে, বিষয়ের সঙ্গে তাই একাত্ম হতে পারে না ছেলেটি।

সেই ইতিহাসের সঙ্গে ছেলেটির চোখে দেখা বাস্তবের কোনো মিল নেই। ইতিহাস কেবলই বড়ো বড়ো যুদ্ধের কথা লেখে, স্বাধীনতা সংগ্রামী শহিদের কথা লেখে, মহান রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব-সমাজ বদলের কান্ডারিদের কথা লেখে তবে নিত্য আন্দোলনে, দাঙ্গায় প্রাণ হারানো সাধারণের কথা লেখে না। সেই ইতিহাস মনে রাখে কেবল তাদের প্রিয়জনেরা, যার সঙ্গে বইয়ের ইতিহাসের কোনো মিল নেই। যে ইতিহাসে সাধারণ মানুষের অসহায়তার কথা নেই, কিশোরসমাজের দুর্দশার কথা নেই, যে ইতিহাসে বাবার জন্য ছেলেটির উদ্বেগের চিত্র ফুটে ওঠেনি সেই ইতিহাস ছেলেটির কাছে প্রত্যাখ্যাত হয়। বাবার পথ চেয়ে বসে থাকা উদ্বিগ্ন ছেলেটির কাছে ইতিহাস বইয়ের লেখাগুলি কেবল কালো কালো অর্থহীন হিজিবিজি অক্ষর বলে প্রতীত হয় আর তাই পড়ায় তার মন বসে না।

সেই ইতিহাসের সঙ্গে ছেলেটির চোখে দেখা বাস্তবের কোনো মিল নেই। ইতিহাস কেবলই বড়ো বড়ো যুদ্ধের কথা লেখে, স্বাধীনতা সংগ্রামী শহিদের কথা লেখে, মহান রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব-সমাজ বদলের কান্ডারিদের কথা লেখে তবে নিত্য আন্দোলনে, দাঙ্গায় প্রাণ হারানো সাধারণের কথা লেখে না। সেই ইতিহাস মনে রাখে কেবল তাদের প্রিয়জনেরা, যার সঙ্গে বইয়ের ইতিহাসের কোনো মিল নেই। যে ইতিহাসে সাধারণ মানুষের অসহায়তার কথা নেই, কিশোরসমাজের দুর্দশার কথা নেই, যে ইতিহাসে বাবার জন্য ছেলেটির উদ্বেগের চিত্র ফুটে ওঠেনি সেই ইতিহাস ছেলেটির কাছে প্রত্যাখ্যাত হয়। বাবার পথ চেয়ে বসে থাকা উদ্বিগ্ন ছেলেটির কাছে ইতিহাস বইয়ের লেখাগুলি কেবল কালো কালো অর্থহীন হিজিবিজি অক্ষর বলে প্রতীত হয় আর তাই পড়ায় তার মন বসে না।

18. “হিজিবিজি অক্ষরগুলো একগুঁয়ে অবাধ্য/যতক্ষণ পুজোর জামা কেনা না হচ্ছে নড়বে না।”- কবি একথা কেন বলেছেন?

Ans: প্রসঙ্গ: কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের লেখা ‘কেন এল না’ কবিতায় ছেলেটি বাবার জন্য অপেক্ষা করে শেষ পর্যন্ত ইতিহাস বই খুলে বসে, সেই বইয়ের পাতার অক্ষরগুলোর কথাই এখানে বলা হয়েছে।

এ কথা বলার কারণ: নাগরিক মধ্যবিত্ত জীবনের চালচিত্রে কবি এক অসহায় নিষ্পাপ শিশুর নৃশংস হত্যালীলার ছবি এঁকেছেন ‘কেন এল না’ কবিতায়। যে ছেলেটি তার বাবার জন্য প্রতীক্ষায় অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিল, যে জানত তার বাবা মাইনের টাকা নিয়ে বাড়ি ফিরলে তার নতুন জামা কেনা হবে, পুজোয় সেই জামা পরে সে মহানন্দে ঠাকুর দেখবে। স্বাভাবিকভাবেই সেই ছেলেটি তাই অন্যান্য দিনের মত পড়াশোনায় মন বসাতে পারে না। একদিকে বাবা না ফেরার দুশ্চিন্তা অন্যদিকে নতুন জামা কেনার সাধ একত্রে তার মনকে আন্দোলিত করে তোলে। মন উড়ে যায় বহির্জগতের নানা ঘটনার দিকে ঘড়ির টিকটিক শব্দ, কলে জল পড়ার শব্দ, পাঁচিল থেকে লাফিয়ে নামা বিড়ালের পদক্ষেপ তার পড়ায় মনোনিবেশের পথ রোধ করে দাঁড়ায়, ইতিহাস বইয়ের পাঠ্য বিষয় নিয়ে লেশমাত্র আগ্রহ থাকে না তার মনে। ইতিহাস বইয়ের অক্ষরগুলো তার কাছে- ‘বাপের-আদরে-মাথা-খাওয়া ছেলের মত… একগুঁয়ে অবাধ্য’ বলে মনে হয়- যারা স্থানু, পাতা আঁকড়ে পড়ে থাকে, মনে বা মননে প্রবেশের সামান্য ইচ্ছেও যাদের জাগে না। তারা যেন আদুরে ছেলের মত জেদ ধরে আছে, বাবা না ফিরলে কিছুতেই নড়বে না- ঠিক যেন ছেলেটির প্রাণের দোসর তারা। পুজোর জামা না কেনা হলে বইয়ের পাতাতেই আটকে থেকে যাবে, পড়ার সব আয়োজন মিথ্যে হবে। ইতিহাসের ঘটনাবলি, তাৎপর্য, বিশ্লেষণ, সাম্রাজ্যজয়ের সার্থকতা স্থান পাবে না তার চেতনার জগতে। কারণ ইতিহাসের বিষয়সমূহ ছেলেটির জীবনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত নয়। পাঠ্য ইতিহাস বিষয়ের সঙ্গে ছেলেটির বর্তমানের বিস্তর ফারাক। সেই কারণেই বইয়ের পাতার একগুঁয়ে, অবাধ্য হয়ে ওঠা অক্ষরগুলির সঙ্গে ছেলেটির অস্থির চিত্ত এবং চরিত্রগত মিলগুলিকে চিহ্নিত করতেই কবি একথা বলেছেন।

19. রান্না কোন্কালে শেষ/গা ধোয়াও সারা।”- কার প্রসঙ্গে, কেন একথা বলা হয়েছে?

অথবা, “রান্না কোন্কালে শেষ/গা ধোয়াও সারা।”- কবিতার এই পঙ্ক্তি দুটি মায়ের চরিত্রের কোন্ দিকটি ফুটিয়ে তোলে?

Ans: প্রসঙ্গ: কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় রচিত ‘কেন এল না’ কবিতাটিতে বর্ণিত মা তথা গৃহকর্ত্রী সকাল-সকাল রান্না সেরে, গা ধুয়ে তৈরি হয়ে বসে আছে স্বামীর অপেক্ষায়। অপেক্ষারত গৃহিণীর ছবিই কবিতার উদ্ধৃত পড়ি। দুটিতে ধরা পড়েছে।

বলার কারণ: গৃহকর্তা মাইনে নিয়ে তাড়াতাড়ি ফিরে পুজোর কেনাকাটা করতে যাবে বলেছে তাই কবিতার শুরু থেকেই গৃহিণীর কাজের মধ্যে একটা তাড়াহুড়ো লক্ষ করা যায়। মধ্যবিত্ত পরিবারে মাইনে আসে নানান খরচের দীর্ঘ তালিকা-কে সঙ্গে করে, তাই মাইনে আসার খুশির থেকে গৃহিণীর মধ্যে সম্ভাব্য অর্থনৈতিক সংকটের দুশ্চিন্তা দেখা দেয় বেশি, উপরন্তু, সেটা পুজোর মাস, তাই বাড়তি খরচের চিন্তা তার মাথায় ঘোরে। এর মধ্যেই স্বামীর ঘরে ফেরার সময়টিও অতিক্রান্ত হয়। বাইরে চলা দাঙ্গার আবহ সম্বন্ধে সচেতন স্ত্রী-এর মনে এবার স্বামীর অমঙ্গলের চিন্তা দানা বাঁধে। এতসব চিন্তা মাথায় নিয়ে অন্যমনস্ক হয়ে কাজ করতে গিয়ে সে কড়ার গায়ে অযথা জোরে জোরে খুন্তি নাড়িয়ে ফ্যালে, ভাতের ফ্যান গালতে গিয়ে পুড়িয়ে ফ্যালে পা- তথাপি তার সাংসারিক কর্তব্যে অনড় সে। সে একজন অবুঝপ্রাণ ছেলের মা, অস্থির সময়ে ঘরে না ফেরা স্বামীর – স্ত্রী, মধ্যবিত্ত এক সংসারের গৃহবধূ- এই সবকটি সত্তাকে দায়িত্ব ভরে পালন করে সে। স্থিতধী এই নারী এত দুশ্চিন্তা সত্ত্বেও সময়ের পূর্বেই রান্না সেরে, গা ধুয়ে উল কাঁটা নিয়ে বুনতে বসে। বাইরের অস্থিরতা, মৃত্যুমিছিল দাঙ্গার পরিবেশ যাতে ঘরের ভিতরের শান্তিকে ছিন্ন করতে না পারে সেই চেষ্টাতেই ছেলেটির মা যথাসম্ভব স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করে, কার্যত একটা দেয়াল তুলে দিয়ে আপন পরিবারের শান্তি রক্ষা করতে চায়। সংসারের স্বাভাবিক গতি বজায় রাখতে গৃহকত্রীর যে অদম্য প্রচেষ্টা তা এই পরি দুটিতে ধরে রাখতে চেয়েছেন কবি।

20. “কেবলি ঘর ভুল করছে।” -। এমন হওয়ার কারণ কী? কোন্ প্রসঙ্গে একথা বলা হয়েছে?

Ans: প্রসঙ্গ: কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের লেখা ‘কেন এল না’ কবিতায় ছেলেটির মা তাড়াতাড়ি রান্না সেরে বসে থাকে স্বামীর ফেরার প্রতীক্ষায়। কিন্তু তার সেই প্রতীক্ষা ফুরোয় না। আশঙ্কা আর ভীতির মেঘ সঞ্চারিত হয় তার উদ্বিগ্ন মনে। অপেক্ষার সেই দীর্ঘ প্রহর অতিবাহিত করতেই উল কাঁটা নিয়ে বসে সে। তবে উল বুনতে বসে বারবার ঘর ভুল হয়, সোজা উলটোর হিসেবে গোলমাল হয়ে যায়, একাগ্রতা রক্ষা করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। এই প্রসঙ্গেই কবিতায় উদ্ধৃতাংশটি এসেছে।

ঘর ভুল করার কারণ: স্বামী মাইনে নিয়ে ফিরে এলে, পুজোর কেনাকাটা সেরে ফেলতে হবে এই চিন্তায় আচ্ছন্ন হয়ে থাকে ছেলেটির মা। তাড়াতাড়ি বাড়ি ফেরার কথা বলে যে বেরিয়েছিল, নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে গেলেও সেই মানুষ ঘরে ফেরে না। তাই নানা দুর্ভাবনায় বিচলিত হয়ে ওঠে তার স্ত্রী। উত্তাল রাজনৈতিক পরিস্থিতি, দ্রব্যমূল্যের লাগামছাড়া বৃদ্ধি চালের অগ্নিমূল্য- মধ্যবিত্ত সংসার জীবনে নানারকম সমস্যা সৃষ্টি করে মানসিক সুস্থিতি বিনষ্ট হয়, যার প্রভাব পড়েছিল প্রতিদিনের যাপনে।

উল বোনা একটি শৌখিন কাজ। আর যে-কোনো সৃষ্টিশীল কাজের জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন মানসিক শান্তি। বলা বাহুল্য, এক্ষেত্রে গৃহকত্রীর মনের শান্তি বিনষ্ট করেছে পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি। তাই, সংসারের অথ সংকটের চিন্তা, ছেলের শখপূরণের ভাবনা এবং সর্বোপরি দাঙ্গামুখর পরিস্থিতিতে স্বামীর বাড়ি ফিরতে দেরি হওয়ার দুশ্চিন্তা সব মিলিয়ে উল বোনার সময় ঘর ভুল হয়ে যায় গৃহকর্ত্রীর। সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের গৃহিণীর তার স্বামীর চিন্তায় উৎকণ্ঠা, উদবেগ প্রকাশ করতে এবং তৎকালীন অস্থিরতার সময়ে সৃষ্টিশীলতার ভাঙনকে চিহ্নিত করতেই কবি উল বুনতে { ঘর ভুল হওয়ার প্রসঙ্গটি এনেছেন।

21. ‘কেন এল না’ কবিতায় ছেলেটির মায়ের মানসিক অস্থিরতার চিত্রটি কীভাবে ফুটে উঠেছে লেখো।

Ans: ‘কেন এল না’ কবিতায় আমরা দেখি গৃহকর্তা যথাসময়ে ঘরে ফেরেনি। এদিকে বাইরের পরিস্থিতিও সুবিধাজনক নয়, তাই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত তার স্ত্রী। মধ্যবিত্ত সংসারের এই গৃহবধূটি এক ‘অবুঝ’ ছেলের মা, তাই ছেলেকে শান্ত রাখতে নিজের মনের শঙ্কাকে মনেই চেপে রাখে সে, ঘরের কাজের মাধ্যমে নিজেকে ভুলিয়ে রাখতে চায় সর্বংসহা মায়ের চরিত্রটি। তথাপি তার দৈনন্দিন গৃহকর্মের মধ্যেই তাঁর মানসিক অস্থিরতা প্রকাশ পেয়ে যায়।

কড়ার গায়ে সজোরে খুন্তি নাড়া: গৃহকর্ত্রী, স্বামীর মাইনে নিয়ে ফেরার পূর্বেই দ্রুত ঘরের কাজ সেরে রাখতে চায় কারণ স্বামী ফিরলেই পুজোর কেনাকাটা করতে বেরোতে হবে। তবে, স্বল্প মাইনেতে সংসার কীভাবে চলবে সেই চিন্তা গৃহিণীর মাথায় ঘুরপাক খেতেই থাকে। উপরন্তু গৃহকর্তা মাইনে নিয়ে ফিরতে দেরি করেছে, সেই দুশ্চিন্তাও গ্রাস করে গৃহকর্ত্রীকে। ফলত, তার মানসিক অস্থিরতা কড়াইয়ে দ্রুত খুন্তি নাড়ার শব্দের মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয়।

ফ্যান পড়ে পা পুড়ে যাওয়া: ছেলেটির মা মাথায় হাজার দুর্ভাবনা নিয়েও ঘরের কাজ চালিয়ে যায়। কাজে তার মন নেই। বাইরে উত্তাল পরিস্থিতি, গণহত্যার আবহে স্বামীর না ফেরা তাকে অস্থির করে তোলে। অন্যমনস্কভাবে ভাতের ফ্যান গালতে গিয়ে পা পুড়িয়ে ফ্যালে সে। দৈনন্দিন কাজে ভুল হয়ে যাওয়া মায়ের মানসিক অস্থিরতার প্রতীক।

উলের ঘর বুনতে ভুল হয়ে যাওয়া: দ্রুততার সঙ্গে ঘরের সব কাজ সেরে নিজেকে মানসিক শান্তি দিতে, অপেক্ষার দীর্ঘ প্রহর অতিবাহিত করতে এবং ঘরের ভিতরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে উল কাঁটা নিয়ে বুনতে বসে মা। কিন্তু অস্থিরচিত্তে উল বোনার মতো শৌখিন, সৃষ্টিশীল কাজ সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হয় সে। স্বামীর পথ চেয়ে, অন্যমনস্কভাবে উল বুনতে গিয়ে ঘর ভুল হয়ে যায় গৃহিণীর।

মায়ের মানসিক অস্থিরতার প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে বাইরের উত্তাল সময়কেই প্রচ্ছন্নভাবে নির্দেশ করেছেন কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়। সমাজ-রাজনীতির অশান্তি মিছিল-আন্দোলন-স্লোগানে সীমাবদ্ধ থাকেনি, রাজনৈতিক হিংসা সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন গতিকেও রোধ করেছে, বিনষ্ট করেছে গৃহের শান্তি।

22. “গলির দরজায় ছেলেটা দাঁড়িয়ে।”- গলির দরজায় ছেলেটি কেন, কখন গিয়ে দাঁড়িয়েছিল? ছেলেটির পরিণতি কী হয়েছিল, তা লেখো।

Ans: কারণ: সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের লেখা ‘কেন এল না’ কবিতার আলোচ্য অংশটি থেকে আমরা জানতে পারি ছেলেটি তার বাবার জন্য প্রতীক্ষা করছিল, তাই সে গলির দরজায় দাঁড়িয়ে দেখছিল তার বাবা বাড়ি ফিরছে কি না।

যে সময়: রেডিয়োতে যখন সংবাদপাঠক খবর পড়ছিলেন সেই সময় ছেলেটি বাবার প্রতীক্ষায় অধীর হয়ে গলির দরজায় দাঁড়িয়েছিল।

নির্মম পরিণতি: বাবার ফিরে আসার জন্য অপেক্ষা করছিল ছেলেটি, সে জানত মাইনে নিয়ে বাবা বাড়ি ফিরলেই তার জন্য কেনা হবে পুজোর নতুন জামা। সেই আনন্দে আত্মহারা হয়ে সে সারাদিন নেচে নেচে বেড়িয়েছে, পড়াতে মন বসাতে পারেনি। কিন্তু তার অপেক্ষা শেষ হয় না। দিনের শেষে, সন্ধে ফুরিয়ে রাত্রি নামলে আর নিজেকে ঘরে আটকে রাখতে না পেরে ছেলেটি, দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে দেখতে যায় তার বাবা আসছে কিনা। কিন্তু সে লক্ষ করে রাস্তার মোড়ে ভিড়, বাজি ফাটার শব্দ, কালো গাড়ি। সে ভাবে বুঝি কোথাও উৎসবের আয়োজন চলছে। তীব্র ঔৎসুক্য জাগে তার মনে, কৌতূহল মেটাতেই এগিয়ে দেখতে যায় কোন্ উৎসবের শোভাযাত্রা চলেছে সেখান দিয়ে। কিন্তু সে বুঝতে পারে না সেই কালো গাড়ি আসলে পুলিশের গাড়ি, শব্দের যে তাণ্ডব পাড়া কাঁপিয়ে দিচ্ছে তা আসলে বাজি নয়- বোমা বিস্ফোরণ, পুলিশের সঙ্গে ভয়ঙ্কর সংঘর্ষ চলছে প্রতিবাদী জনতার। চলছে গুলি। এ আনন্দের উৎসব নয় ৪ মৃত্যু- হত্যার উৎসব। অবুঝ অজ্ঞ ছেলেটি সরল মনে এগিয়ে যায় তার চেনা পাড়ার চেনা পথে, অচেনা এক ভয়ঙ্কর মৃত্যুফাঁদের দিকে। দুই পক্ষের যুযুধান লড়াইয়ের মধ্যে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে সে। সেই বারুদের গন্ধের মধ্যে মিশে থাকে তার শেষ নিঃশ্বাস। দুঃসহ সময়ের অস্থিরতা, হিংসাত্মক কার্যকলাপ কেড়ে নেয় সেই নিরপরাধ শিশুটির প্রাণ। বাবার অপেক্ষায় ৪ চঞ্চল ছেলেটি বুঝে উঠতে পারেনি যে মৃত্যু এসে দাঁড়িয়ে আছে তার ঘরের ৪ কাছেই, রাস্তার মোড়ে। এক নির্মম সময়ে জাত হতভাগ্য নাগরিকদের দুর্দশাগ্রস্ত জীবনের, বেদনাবহ পরিণতির কথাই সর্বসমক্ষে তুলে ধরেন কবি। একটি অনপেক্ষিত মৃত্যু দিয়ে কবিতাটি শেষ হয়। কবিতার শেষে – ‘বাবা এল/ছেলে এল না’ পঙ্ক্তি দুটি তৎকালীন সময়ের মানবতাহীন নির্মমতাকে দৃঢ়ভাবে পরিস্ফুট করে তোলে। ছেলেটির আকস্মিক মৃত্যু, হঠাৎ ৪ হারিয়ে যাওয়া, তার না ফেরা পাঠককে কার্যত স্তব্ধ করে দেয়। সাধারণ ৪ মানুষের দুর্ভাগ্যকে ব্যক্ত করতেই কবিতার শেষে ছেলেটির এরূপ নির্মম পরিণতির চিত্র এঁকেছেন কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়।

23. ছেলেটা রাস্তায় পা দিল।”- ছেলেটি কেন রাস্তায় পা দিয়েছিল? সে রাস্তায় নামার পর কী কী ঘটেছিল?

Ans: ছেলেটির রাস্তায় পা দেওয়ার কারণ: কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় রচিত ‘কেন এল না’ কবিতায় ছেলেটি সারাদিন তার বাবার বাড়ি ফেরার অপেক্ষা করেছে। রেডিয়োতে সাধ্যখবর বেজে উঠতেই অস্থির হয়ে উঠেছে সে, বুঝতে পেরেছে যে বাবার বাড়ি ফেরার সময় পেরিয়ে আরও বহুক্ষণ – অতিক্রান্ত হয়েছে- তাই এবার সহ্যের বাঁধ ভাঙে তার। তাই বাবা এল কি না তা দেখতে ঘরের দরজার ছিটকিনি খুলে রাস্তার দিকে পা বাড়ায় ‘অবাধ্য’ ছেলেটি।

রাস্তায় নামার পরের ঘটনা: ফেলে আসা বিশ শতকের পাঁচের দশকে ঘটা বিভিন্ন নাগরিক আন্দোলন ও খাদ্য আন্দোলনে উত্তাল কলকাতায় বিক্ষোভ প্রতিবাদ মুখরিত সন্ত্রস্ত প্রহরে ছেলেটি রাস্তায় নেমে দেখেছিল চেনা শহরের এক অচেনা ছবি। তার চেনা পাড়ার মোড়ের মাথায় সে দেখেছিল বহু মানুষের ভিড়, তার সামনে এসে থেমেছিল একটা কালো গাড়ি, আর ছেলেটির কান বিদীর্ণ করে ফেলেছিল ‘বাজি’ ফাটার তীব্র আওয়াজ। সে ভেবেছিল হয়তো কোনো পুজো হচ্ছে, উৎসবে মেতে উঠেছে মানুষ তাই উল্লাসে বাজি পোড়ানোর ধুম লেগেছে, সেই আনন্দেই মাতোয়ারা হয়ে আছে সকলে। সরল মনে তাই সে এগিয়ে যায় সেই ভিড়ের দিকে যেখানে আসলে আন্দোলনরত জনতার সঙ্গে পুলিশের খন্ডযুদ্ধ চলছিল, চলছিল গুলি আর বোমার অসম লড়াই। প্রাণঘাতী সেই লড়াইয়ের চক্রব্যূহের মধ্যে অসহায়, অবুঝ ছেলেটি কৌতূহল নিরসনে এগিয়ে যায়। সে এগিয়ে যায় মৃত্যুর দিকে। হিংসা সন্ত্রাস কেড়ে নেয় ছেলেটির প্রাণ। অনেক রাত্রে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে, ছেলেটির বাবা প্রাণ বাঁচিয়ে অন্য পথে সাবধানে বাড়ি ফেরে, কিন্তু ছেলেটি ফেরে না। বারুদ, বিস্ফোরণ, হত্যা রচনা করে এক অন্ধকার হাহাকারের ইতিহাস। প্রাণবন্ত, নেচে বেড়ানো, ভাবনাহীন, নিষ্পাপ ছেলেটি হারিয়ে যায় চিরতরে।

24. “ছেলেটা দেখে আসতে গেল।”- বাড়ি থেকে অদূরে কৌতূহলী হয়ে দেখতে যাওয়া ছেলেটির আর বাড়ি ফেরা হয় না কেন?

Ans: ব্যাখা: কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় রচিত ‘কেন এল না’ কবিতায় আমরা দেখি বাবার জন্য প্রতীক্ষা করতে করতে ছেলেটি অধৈর্য হয়ে ওঠে। অবশেষে রেডিয়োতে সান্ধ্যখবর পড়া শুরু হলে ছেলেটি আর ঘরের চৌহদ্দিতে নিজেকে আটকে রাখতে না পেরে ঘরের দরজা খুলে বেরিয়ে আসে রাস্তায়। রাস্তার মোড়ে মানুষের ভিড়, কালো গাড়ি ও ‘বাজি’-র শব্দ তাকে কৌতূহলী করে তোলে তাই সে এগিয়ে দেখে আসতে যায় যে সেখানে কী হচ্ছে। সেই যে যায় আর তার ফেরা হয় না। না ফেরার মধ্যেই ছেলেটির প্রতীক্ষার অবসান ঘটে।

বিশ শতকের পাঁচের দশকে বিবিধ নাগরিক আন্দোলনে তখন উত্তাল কলকাতা। একদিকে বিক্ষোভে প্রতিবাদে মুখর মানুষের প্রতিরোধ, অন্যদিকে তাকে দমন করতে পুলিশি তৎপরতা চেনা শহরের পরিবেশ-পরিস্থিতিকে মুহূর্তে বদলে দিয়েছিল। সেই সন্ত্রস্ত প্রহরে ছেলেটি তার চেনা পাড়ার মোড়ের মাথায় বহু মানুষের ভিড়, একটা কালো গাড়ি দেখে আর বাজি পোড়ানোর আওয়াজ শুনে ভেবেছিল হয়তো কোনো পুজোর আয়োজন হয়েছে, উৎসবে মেতে ওঠা মানুষ তাই উল্লাসে বাজি পোড়াচ্ছে। আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে আছে সকলে। সরল মনে তাই সে এগিয়ে গিয়েছিল সেই ভিড়ের দিকে। যেখানে আদতে আন্দোলনরত জনতার সঙ্গে পুলিশের খণ্ডযুদ্ধ চলছিল। সেই প্রাণঘাতী লড়াইয়ের মধ্যে ঘাতক মৃত্যু থাবা উঁচিয়ে দাঁড়িয়েছিল তার জন্য। আর সেসব না জেনেই সেদিকে পা বাড়িয়েছিল ছেলেটি। হিংসা, সন্ত্রাস অধ্যুষিত সেই ভয়াবহ কালবেলাই কেড়ে নিয়েছিল তার তরতাজা প্রাণ। তাই তাকে আর ফিরতে দেখা যায় না। অনেক রাত্রে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে, ছেলেটির বাবা প্রাণ বাঁচিয়ে অন্য পথে সাবধানে বাড়ি ফেরে, কিন্তু ছেলেটির আর ফেরা হয় না। সে হারিয়ে যায় চিরতরে।

তৎকালীন অস্থির সময়ে রাজনৈতিক দাঙ্গা ঢুকে পড়েছিল সাধারণের গৃহস্থালিতে। সেই রাজনৈতিক আন্দোলন, গণ অভ্যুত্থানের রূপ নিয়েছিল। চলেছিল গণহত্যা, আর এই পরিস্থিতির শিকার হয়েছিল বহু সাধারণ মানুষ, সর্বোপরি কিশোর প্রজন্ম- রাজনৈতিক জটিলতার সঙ্গে যাদের বিন্দুমাত্র সম্পর্ক ছিল না। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষা করার দায়ভার ছিল যাদের হাতে, তাদেরই দোষে হারিয়ে গিয়েছিল বহু নিষ্পাপ, তরতাজা প্রাণ। এক্ষেত্রে, অত্যাচারী, ব্যর্থ রাষ্ট্রব্যবস্থা ও রাজনৈতিক হিংসাত্মক আন্দোলনই যে ছেলেটির বাড়ি না ফেরার কারণ তা বুঝে নিতে হয় পাঠককে।

HS Class 12 3rd Semester (Third Unit Test) Question and Answer :

  • HS Class 12 Bengali 3rd Semester Question Click here
  • HS Class 12 English 3rd Semester Question Click here
  • HS Class 12 Geography 3rd Semester Question Click here
  • HS Class 12 History 3rd Semester Question Click here
  • HS Class 12 Education 3rd Semester Question Click here
  • HS Class 12 Political Science 3rd Semester Question Click here
  • HS Class 12 Philosophy 3rd Semester Question Click here
  • HS Class 12 Sociology 3rd Semester Question Click here
  • HS Class 12 Sanskrit 3rd Semester Question Click here
  • HS Class 12 All Subjects First Semester Question Click here

HS Class 12 4th Semester (Forth Unit Test) Question and Answer :

  • HS Class 12 Bengali 4th Semester Question Click here
  • HS Class 12 English 4th Semester Question Click here
  • HS Class 12 Geography 4th Semester Question Click here
  • HS Class 12 History 4th Semester Question Click here
  • HS Class 12 Education 4th Semester Question Click here
  • HS Class 12 Political Science 4th Semester Question Click here
  • HS Class 12 Philosophy 4th Semester Question Click here
  • HS Class 12 Sociology 4th Semester Question Click here
  • HS Class 12 Sanskrit 4th Semester Question Click here
  • HS Class 12 All Subjects 4th Semester Question Click here

Class 12 All Subject Suggestion – উচ্চমাধ্যমিক সমস্ত বিষয়ের সাজেশন

আরোও দেখুন:-

HS Bengali Suggestion Click here

আরোও দেখুন:-

Class 12 English Suggestion Click here

আরোও দেখুন:-

Class 12 Geography Suggestion Click here

আরোও দেখুন:-

Class 12 History Suggestion Click here

আরোও দেখুন:-

Class 12 Political Science Suggestion Click here

আরোও দেখুন:-

Class 12 Education Suggestion Click here

আরোও দেখুন:-

Class 12 Philosophy Suggestion Click here

আরোও দেখুন:-

Class 12 Sociology Suggestion Click here

আরোও দেখুন:-

Class 12 Sanskrit Suggestion Click here

আরোও দেখুন:-

Class 12 All Subjects Suggestion Click here

◆ উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার প্রস্তুতি, বিনামূল্যে নোটস, সাজেশন, PDF ও সমস্ত আপডেটের জন্য আমাদের WhatsApp Group এ Join হয়ে যাও।

Class 12 WhatsApp Groups Click Here to Join

দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | West Bengal HS Class 12th Bengali Question and Answer / Suggestion / Notes Book

আরোও দেখুন :-

দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা সমস্ত অধ্যায়ের প্রশ্নউত্তর Click Here

FILE INFO : কেন এল না (কবিতা) দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | HS Class 12 Bengali Keno Elo Na Question and Answer with FREE PDF Download Link

PDF File Name কেন এল না (কবিতা) দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | HS Class 12 Bengali Keno Elo Na Question and Answer PDF
Prepared by Experienced Teachers
Price FREE
Download Link  Click Here To Download
Download PDF Click Here To Download

কেন এল না (কবিতা) অধ্যায় থেকে আরোও বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর দেখুন :

Update

[আরও দেখুন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবন রচনা – Rabindranath Tagore Biography in Bengali]

[আমাদের YouTube চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন Subscribe Now]

Info : কেন এল না (কবিতা) দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা সাজেশন বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর

 HS Class 12 Bengali Suggestion | West Bengal WBCHSE Class Twelve XII (HS Class 12th) Bengali Question and Answer Suggestion 

” কেন এল না (কবিতা) দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা প্রশ্ন উত্তর “ একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ টপিক দ্বাদশ শ্রেণীর পরীক্ষা (West Bengal Class Twelve XII / WB HS Class 12 / WBCHSE / HS Class 12 Exam / West Bengal Council of Higher Secondary Education – WB HS Class 12 Exam / HS Class 12th / WB HS Class 12 / HS Class 12 Pariksha ) এখান থেকে প্রশ্ন অবশ্যম্ভাবী । সে কথা মাথায় রেখে Bhugol Shiksha .com এর পক্ষ থেকে দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা পরীক্ষা প্রস্তুতিমূলক সাজেশন এবং বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর ( দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা সাজেশন / দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা প্রশ্ও উত্তর । Class-11 Bengali Suggestion / HS Class 12 Bengali Keno Elo Na Question and Answer / HS Class 12 Bengali Suggestion / Class-11 Pariksha Bengali Suggestion / Bengali HS Class 12 Exam Guide / MCQ , Short , Descriptive Type Question and Answer / HS Class 12 Bengali Suggestion FREE PDF Download) উপস্থাপনের প্রচেষ্টা করা হলাে। ছাত্রছাত্রী, পরীক্ষার্থীদের উপকারে লাগলে, আমাদের প্রয়াস দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা পরীক্ষা প্রস্তুতিমূলক সাজেশন এবং বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর (HS Class 12 Bengali Suggestion / West Bengal Twelve XII Question and Answer, Suggestion / WBCHSE HS Class 12th Bengali Suggestion / HS Class 12 Bengali Keno Elo Na Question and Answer / HS Class 12 Bengali Suggestion / HS Class 12 Pariksha Suggestion / HS Class 12 Bengali Exam Guide / HS Class 12 Bengali Suggestion 2024, 2025, 2026, 2027, 2028, 2029, 2030 / HS Class 12 Bengali Suggestion MCQ , Short , Descriptive Type Question and Answer. / Class-11 Bengali Suggestion FREE PDF Download) সফল হবে।

কেন এল না (কবিতা) বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর 

কেন এল না (কবিতা) বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | কেন এল না (কবিতা) HS Class 12 Bengali Keno Elo Na Question and Answer Suggestion দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – কেন এল না (কবিতা) বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর।

কেন এল না (কবিতা) SAQ সংক্ষিপ্ত বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা 

কেন এল না (কবিতা) SAQ সংক্ষিপ্ত বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | কেন এল না (কবিতা) HS Class 12 Bengali Keno Elo Na Question and Answer Suggestion দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – কেন এল না (কবিতা) SAQ সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর।

উচ্চমাধ্যমিক বাংলা বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – কেন এল না (কবিতা) প্রশ্ন উত্তর | HS Class 12 Bengali Keno Elo Na Question and Answer Question and Answer, Suggestion 

উচ্চমাধ্যমিক বাংলা বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – কেন এল না (কবিতা) | দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – কেন এল না (কবিতা) | পশ্চিমবঙ্গ দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – কেন এল না (কবিতা) | দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা সহায়ক – কেন এল না (কবিতা) বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর । HS Class 12 Bengali Keno Elo Na Question and Answer, Suggestion | HS Class 12 Bengali Keno Elo Na Question and Answer Suggestion | HS Class 12 Bengali Keno Elo Na Question and Answer Notes | West Bengal HS Class 12th Bengali Question and Answer Suggestion.

দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – কেন এল না (কবিতা) প্রশ্ন উত্তর | WBCHSE HS Class 12 Bengali Question and Answer, Suggestion 

দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – কেন এল না (কবিতা) প্রশ্ন উত্তর বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | কেন এল না (কবিতা) । HS Class 12 Bengali Keno Elo Na Question and Answer Suggestion.

WBCHSE HS Class 12th Bengali Keno Elo Na Suggestion | দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – কেন এল না (কবিতা)

WBCHSE HS Class 12 Bengali Keno Elo Na Suggestion দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – কেন এল না (কবিতা) প্রশ্ন উত্তর বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর । কেন এল না (কবিতা) | HS Class 12 Bengali Keno Elo Na Suggestion দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – কেন এল না (কবিতা) প্রশ্ন উত্তর বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর ।

HS Class 12 Bengali Keno Elo Na 4th Semester Question and Answer Suggestions | দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – কেন এল না (কবিতা) | দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর 

HS Class 12 Bengali Keno Elo Na 4th Semester Question and Answer দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – কেন এল না (কবিতা) দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর HS Class 12 Bengali Keno Elo Na Question and Answer দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – কেন এল না (কবিতা) সংক্ষিপ্ত, রোচনাধর্মী বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর ।

WB HS Class 12 Bengali Keno Elo Na Suggestion | দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – কেন এল না (কবিতা) সাজেশন 

HS Class 12 Bengali Keno Elo Na Question and Answer Suggestion দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – কেন এল না (কবিতা) সাজেশন । HS Class 12 Bengali Keno Elo Na Question and Answer Suggestion দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর।

West Bengal HS Class 12 Bengali Suggestion Download WBCHSE HS Class 12th Bengali short question suggestion . HS Class 12 Bengali Keno Elo Na Suggestion download HS Class 12th Question Paper Bengali. WB HS Class 12 Bengali suggestion and important question and answer. HS Class 12 Suggestion pdf.পশ্চিমবঙ্গ দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা পরীক্ষার সম্ভাব্য সাজেশন ও শেষ মুহূর্তের বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর ডাউনলোড। দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা পরীক্ষার জন্য সমস্ত রকম গুরুত্বপূর্ণ বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর।

Get the HS Class 12 Bengali Keno Elo Na Question and Answer by Bhugol Shiksha .com

HS Class 12 Bengali Keno Elo Na Question and Answer prepared by expert subject teachers. WB HS Class 12 Bengali Suggestion with 100% Common in the Examination .

Class Twelve XII Bengali Keno Elo Na Suggestion | West Bengal Council of Higher Secondary Education (WBCHSE) HS Class 12 Exam 

HS Class 12 Bengali Keno Elo Na Question and Answer, Suggestion Download PDF: West Bengal Council of Higher Secondary Education (WBCHSE) HS Class 12 Twelve XII Bengali Suggestion is provided here. HS Class 12 Bengali Keno Elo Na Question and Answer Suggestion Questions Answers PDF Download Link in Free here.

কেন এল না (কবিতা) দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | HS Class 12 Bengali Keno Elo Na Question and Answer 

অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই ” কেন এল না (কবিতা) দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | HS Class 12 Bengali Keno Elo Na Question and Answer ” পােস্টটি পড়ার জন্য। এই ভাবেই Bhugol Shiksha ওয়েবসাইটের পাশে থাকো যেকোনো প্ৰশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলাে করো এবং নিজেকে তথ্য সমৃদ্ধ করে তোলো , ধন্যবাদ।

WhatsApp Channel Follow Now
Telegram Channel Follow Now