শ্রীরামকৃষ্ণ এর জীবনী - Ramakrishna Biography in Bengali
শ্রীরামকৃষ্ণ এর জীবনী - Ramakrishna Biography in Bengali

শ্রীরামকৃষ্ণ এর জীবনী

Ramakrishna Biography in Bengali

শ্রীরামকৃষ্ণ এর জীবনী – Ramakrishna Biography in Bengali : হুগলি জেলার কামারপুকুর গ্রামের এক সামান্য ব্রাহ্মণ সন্তান ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna) মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাসে অবতার রূপে স্বীকৃত । শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna) এর অলৌকিক জীবন । শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna) এর অলৌকিক কর্মধারা ও অপার্থিব অবদান ভারতবর্ষের আধ্যাত্মিক ইতিহাসের এক অত্যাশ্চর্য অধ্যায় ।

 যুগের প্রয়োজনে আবির্ভূত হয়েছিলেন শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna) । ধর্মীয় বিভেদ যখন চরম আকার ধারণ করেছে , মানুষে মানুষে বিভেদ প্রকট রূপ নিয়েছে , সেই সংকটকালে ধর্ম সমন্বয়ের বাণী প্রচার করেছিলেন শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)

 প্রতিটি ধর্মাদর্শনকেই শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna) নিজ জীবনে গ্রহণ করে তা সাধনা করেছিলেন । বিচিত্র এই সাধনার মধ্যদিয়ে শ্রীরামকৃষ্ণের জীবনে ঘটেছে দিব্যদর্শন — সম্পূর্ণ হয়েছে বিভিন্ন ধর্মীয় অবতার পুরুষদের দর্শন ও মিলন।

 দক্ষিণেশ্বর কালীমন্দিরের পাঁচটাকা মাইনের পূজক ছিলেন শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna) । লেখাপড়া বলতে ছিল নামমাত্র । কিন্তু তৎকালীন সময়ের সমাজের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিদের সমাগম ঘটেছিল শ্রীরামকৃষ্ণের কাছে । 

আধ্যাত্মিক ভারতে ‘ শিব জ্ঞানে জীব সেবা’র যে ভাবান্দোলনের সূত্রপাত শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna) করেছিলেন , জগৎকে তা নতুন চেতনায় উদ্বুদ্ধ করেছে । যার তরঙ্গধারা সমান বেগে আজও প্রবাহিত ।

  ভারতীয় বাঙালি যোগসাধক, দার্শনিক ও ধর্মগুরু শ্রীরামকষ্ণ এর একটি সংক্ষিপ্ত জীবনী । শ্রীরামকষ্ণ এর জীবনী – Ramakrishna Biography in Bengali বা শ্রীরামকষ্ণ এর আত্মজীবনী বা (Ramakrishna Jivani Bangla. A short biography of Ramakrishna. Ramakrishna Birth, Place, Life Story, Life History, Biography in Bengali) শ্রীরামকষ্ণ এর জীবন রচনা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

শ্রীরামকষ্ণ কে ছিলেন ? Who is Ramakrishna ?

শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna) ছিলেন ঊনবিংশ শতকের এক প্রখ্যাত ভারতীয় বাঙালি যোগসাধক, দার্শনিক ও ধর্মগুরু। শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna) তার প্রচারিত ধর্মীয় চিন্তাধারায় রামকৃষ্ণ মিশন প্রতিষ্ঠা করেন তার প্রধান শিষ্য স্বামী বিবেকানন্দ। তারা উভয়েই বঙ্গীয় নবজাগরণের এবং ঊনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীর হিন্দু নবজাগরণের অন্যতম পুরোধাব্যক্তিত্ব। শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna) এর শিষ্যসমাজে, এমনকি তার আধুনিক ভক্তসমাজেও তিনি ঈশ্বরের অবতাররূপে পূজিত হন।

রামকৃষ্ণ পরমহংস বা শ্রীরামকৃষ্ণ এর জীবনী – Ramakrishna Biography in Bengali :

নাম (Name) রামকৃষ্ণ পরমহংস বা শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)
জন্ম (Birthday) ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৮৩৬ (18th February 1836)
জন্মস্থান (Birthplace) কামারপুকুর, হুগলী, ভারতবর্ষ
অভিভাবক (Parents)/পিতামাতা ক্ষুদিরাম চট্টোপাধ্যায় মাতা চন্দ্রমণি দেবী 
আখ্যা পরমহংস
বিশিষ্ট শিষ্য(সমূহ) স্বামী বিবেকানন্দ
উদ্বৃতি আমার ধর্ম ঠিক, আর অপরের ধর্ম ভুল – এ মত ভাল না। ঈশ্বর এক বই দুই নাই। তাঁকে ভিন্ন ভিন্ন নাম দিয়ে ভিন্ন ভিন্ন লোকে ডাকে। কেউ বলে গড, কেউ বলে আল্লাহ, কেউ বলে কৃষ্ণ, কেউ বলে শিব, কেউ বলে ব্রহ্ম। যেমন পুকুরে জল আছে – একঘাটের লোক বলছে জল, আর-একঘাটের লোক বলছে ওয়াটার, আর-একঘাটের লোক বলছে পানি – হিন্দু বলছে জল, খ্রীষ্টান বলছে ওয়াটার, মুসলমান বলছে পানি, – কিন্তু বস্তু এক। মত-পথ। এক-একটি ধর্মের মত এক-একটি পথ, – ঈশ্বরের দিকে লয়ে যায়। যেমন নদী নানাদিক থেকে এসে সাগরসঙ্গমে মিলিত হয়।
দর্শন অদ্বৈত বেদান্ত, ভক্তি, তন্ত্র
মৃত্যু (Death) ১৬ আগস্ট ১৮৮৬ (16th August 1886)

শ্রীরামকৃষ্ণ এর জন্ম – Ramakrishna Birthday :

 বাংলা ফাল্গুন মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথি বুধবার । ইংরাজি ১৮৩৬ খ্রিঃ ১৮ ই ফেব্রুয়ারী যুগাবতার শ্রীরামকৃষ্ণের জন্ম । শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna) এর ডাকনাম ছিল গদাধর বা গদাই ।

শ্রীরামকৃষ্ণ এর পিতামাতা – Ramakrishna Parents :

 ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের পিতার নাম ক্ষুদিরাম চট্টোপাধ্যায় । মাতা চন্দ্রমণিদেবী । 

শ্রীরামকৃষ্ণ এর শিক্ষাজীবন – Ramakrishna Education Life :

 কামারপুকুর গ্রামে জমিদার লাহা বাবুদের পাঠশালায় বাল্য বয়সে সামান্য লেখাপড়ার সুযোগ পেয়েছিলেন শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna) । মোটামুটি লিখতে পড়তে শিখেছিলেন । ‘ চাল কলা বাঁধা বিদ্যেতে ‘ বিশ্বাস ছিল না বলে পাঠশালার পড়ার ছয় বছর বয়সেই ইতি পড়েছিল । 

শ্রীরামকৃষ্ণ এর শৈশবকাল – Ramakrishna Childhood :

 কিন্তু বাল্য বয়সেই নানা গুণের সমাবেশ শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna) এর মধ্যে পরিলক্ষিত হয় । শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna) ভাল গান গাইতে পারতেন । অভিনয় করতে পারতেন শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna) । ছবিও আঁকতেন । মাটি দিয়ে কুমোরদের মতো সুন্দর মূর্তি গড়তে পারতেন শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)

 লাহাবাবুদের অতিথিশালায় প্রায়ই ভ্রাম্যমাণ সাধুদের সমাবেশ হত । তাঁদের কাছে ও গ্রামের পথিকদের কাছে রামায়ণ মহাভারত শুনে ধর্মজগতের অনেক গূঢ় তত্ত্ব তিনি জেনেছিলেন । পুরাণের গল্প সুন্দর করে শোনাতে পারতেন ।

 ছয় থেকে আট বছর বয়সের মধ্যেই দুবার ভাবসমাধি হয় শ্রীরামকৃষ্ণের । জগতের অন্যান্য অবতার পুরুষদের মতো তিনিও শিশুকাল থেকেই অবতার বলে পূজিত হয়েছিলেন । 

শ্রীরামকৃষ্ণ কে ভগবান রূপে পূজা :

 কামারপুকুর গ্রামে চিনু শাঁখারী নামে একজন বয়স্ক ভক্তিমান ব্যক্তি ছিলেন । তিনি একদিন গদাধরকে পুজো করে বলেছিলেন , ‘ গদাই , জগৎ যেদিন তোমাকে পূজা করবে , তখন এই পৃথিবীতে আমি থাকব না । ‘ 

 এই চীনু শাঁখারীই শ্রীরামকৃষ্ণকে প্রথম ভগবানরূপে আরাধনা করেছিলেন ।

শ্রীরামকৃষ্ণ এর যৌবনকাল – Ramakrishna Young Age :

 অদ্ভুত ছেলে গদাধর । ছেলেবেলায় যেমনি ছিলেন দুরন্ত তেমনি খামখেয়ালী । পড়াশুনোয় মন নেই , শুধু ঘুরে বেড়ানোই শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna) এর কাজ। 

 দলবেঁধে ছেলেদের সঙ্গে যাত্রা করে , কখনও সাজে শিব , কখনও কৃষ্ণ । গ্রামের মেয়ে বউদের চোখের মণি । সকল বাড়িতেই অবাধ গতি শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna) এর ।

 একদিন বিকেলবেলা গদাই রামায়ণ পাঠ করছে । বৃদ্ধ বৃদ্ধারা শুনছে মনোযোগ দিয়ে । 

 কাছেই আমগাছের ওপর বসেছিল একটা হনুমান । হঠাৎ সে লাফ দিয়ে নেমে ঠিক গদাধরের কাছে এসে বসল ।

 হনুমান পা জড়িয়ে ধরল গদাধরের । হইচই করে হনুমানের ভয়ে যে যেদিকে পারল শ্রোতারা পালিয়ে যেতে লাগল ।

 গদাধর কিন্তু একটুও নড়ল না । সে হাসিমুখে হনুমানের মাথায় হাত বুলিয়ে দিল । বুঝি শ্রীরামচন্দ্রের আশীর্বাদ পেয়েই খুশি হয়ে রামভক্ত হনুমান আবার লাফ দিয়ে গাছে উঠে গেল ।

 কামারপুকুর থেকে দু’মাইল দূরে আনুড় গ্রাম । সেখানে বিশাল এক গাছের তলায় দেবী বিশালাক্ষীর প্রসিদ্ধ থান ।

 প্রান্তরের মধ্যে খোলা আকাশতলেই দেবীর অবস্থান । আশপাশের গ্রামের লোকেরা ভক্তিভরে বিশালাক্ষীতলায় পুজো মানত করে । 

 একবার কামারপুকুর গ্রামের মেয়েরা দলবেঁধে চলেছে বিশালাক্ষী দেবীর পুজো দিতে । হঠাৎ কোত্থেকে ছুটে এসে গদাধর সেই দলে ঢুকে পড়ল । আর ঠাকুর দেবতার গল্প ও গান করতে করতে সকলের সঙ্গে চলতে লাগল ।

 বিশালাক্ষী থানের কাছাকাছি যেতেই হঠাৎ গদাইয়ের গান থেমে গেল । দুচোখ বেয়ে পড়তে লাগল জলের ধারা । অবশ আরষ্ট হয়ে গেছে তার শরীর ।

 প্রসন্ন নামে মেয়েটি এগিয়ে এসে তাকে ধরতেই তার কোলে অবসন্ন হয়ে ঢলে পড়ল গদাই ।

 তার এই অবস্থা দেখে মেয়েরা ব্যাকুল হয়ে পড়ল । কি করবে বুঝতে পারে না । সকলে গদাইকে ঘিরে বসে কখনও হাওয়া করে , কখনও চোখেমুখে জলের ঝাপটা দেয় । 

 অবশেষে বালকের ওপর দেবীর ভর হয়েছে বিবেচনা করে মেয়েরা দেবীজ্ঞানে গদাইকেই সম্বোধন করে বলতে লাগল , মা বিশালাক্ষী , প্রসন্ন হও , মা রক্ষা কর । মা মুখ তুলে চাও । 

 আশ্চর্য । মেয়েরা কয়েকবার ওই রকম দেবীর নাম করতে না করতেই গদাইয়ের সম্বিত ফিরে এল । সে হাসিমুখে উঠে বসল । 

 প্রসন্ন তখন মেয়েদের ডেকে বলল , ওরে গদাইকে কিছু খেতে দে ।

 কিন্তু কি খেতে দেবে গদাইকে ? কারও সঙ্গে ভোগের সামগ্রী ছাড়া আর কিছু নেই ।

 প্রসন্ন বলল , ভোগের জিনিসই আলাদা করে ওকেদাও । ওকে খাওয়ালেই তোমাদের পুণ্যি হবে । 

 তখন অনেকে সরল বিশ্বাসে পুজোর জন্য আনা নৈবেদ্য থেকে কলা , দুধ , বাতাসা গদাইয়ের মুখে তুলে দেয় ৷ 

 আট বছরের গদাই সকলকে বলল যে দেবীর চিন্তা করতে করতে তার পাদপদ্মে মন লয় হয়ে তার ওরকম অবস্থা হয়েছিল। 

 আর একবার শিবরাত্রির ব্রত উপলক্ষে গ্রামের সীতানাথ পাইনের বাড়িতে শিবের মহিমাসূচক যাত্রাভিনয়ের বন্দোবস্ত হয়েছে ।

 সন্ধ্যার সময় খবর পাওয়া গেল , যাত্রার দলে যে ছেলেটি শিব সাজে , সহসা সে অসুখে পড়েছে । ফলে যাত্রা পালা বন্ধ হবার জোগাড় । 

 শিব না হলে শিবের পালা হয় কি করে ? কাজেই শিব সাজার লোকের খোঁজ পড়ল ।

 তখন সকলে বলতে লাগল , গদাইয়ের বয়স অল্প হলেও সে অনেক শিবের গান জানে । শিব সাজলে তাকে দেখাবেও ভাল৷ 

 সকলের আগ্রহে গদাইকে শিব সাজিয়ে দেওয়া হল । তারপর এক সময়ে তার আসরে ডাক পড়ল । 

 গদাই উন্মনা ভাবে কোনও দিকে লক্ষ্য না করে ধীর মন্থর গতিতে আসরে উপস্থিত হল । তখন তার সেই জটাজুটমণ্ডিত , বিভূতিলব্ধ বেশ , ধীরস্থির পদক্ষেপ ও পরে অচল অটল অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকা , আর অন্তর্মুখী নির্নিমেষ দৃষ্টি ও ঠোটের কোণে ঈষৎ হাসির রেখা , সব মিলিয়ে এক অপার্থিব রূপ ফুটে উঠল ।

 ওই রূপ দেখে লোকে আনন্দ ও বিস্ময়ে মোহিত হয়ে পল্লীগ্রামের প্রথামতো সহসা উচ্চৈঃস্বরে হরিধ্বনি করে উঠল । মেয়েরা কেউ কেউ উলুধ্বনি ও শঙ্খধ্বনি করতে লাগল ।

 গদাধর কিন্তু নির্বিকার । একইভাবে আসরে দন্ডায়মান রয়েছে । অনেকক্ষণ পরেও সে স্থান পরিবর্তন করছে না বা কথাও বলছে না দেখে সকলে বিস্মিত হল ।

 দেখা গেল দন্ডায়মান অবস্থাতেই গদাধর সংজ্ঞা হারিয়েছে । তার শরীর আড়ষ্ট । 

 শেষ পর্যন্ত যাত্রা ভেঙ্গে গেল । আর কয়েকজনে মিলে গদাইকে কাধে তুলে কোনওরকমে বাড়িতে পৌঁছে দিল৷

 সে রাত্রে অনেক সেবা – যত্নেও গদাইয়ের সেইভাব ভঙ্গ হল না শেষে সূর্যোদয় হলে সে প্রকৃতিস্থ হল ।

 সাত বছর বয়সে গদাধরের পিতৃবিয়োগ হয় । নয় বছর বয়সে দাদা রামকুমার তার উপনয়নের ব্যবস্থা করলেন।

 কামারপুকুরের কামার বাড়ির মেয়ে ধনী ছিল গদাইয়ের ধাইমা । সে গদাইকে খুব স্নেহ করত । গদাই তাকে ধাইমা বলে সম্বোধন করত ।

 ধনীর মনের সাধ ছিল , উপনয়নের সময় গদাই মাতৃসম্বোধন করে তার কাছ থেকে প্রথম ভিক্ষা গ্রহণ করবে । 

সে কথা জানতে পেরে গদাই ধনীর অভিলাষ পূর্ণ করবে বলে অঙ্গীকার করেছিল ।

 বালকের কথায় বিশ্বাস করে ধনী তার সাধ্যমতো কিছু অর্থ সংগ্রহ করে সেই শুভদিনটির প্রতীক্ষা করছিল । 

 এখন উপনয়নের সময় উপস্থিত হলে গদাধর তার প্রতিশ্রুতির কথা অগ্রজ রামকুমারকে জানাল । তাদের বংশে এমন অশাস্ত্রীয় অনুষ্ঠান আগে কখনও হয়নি । ফলে রামকুমার ঘোরতর আপত্তি জানালেন ।

 গদাধর জেদ ধরে বলল , তাকে ধনী কামারনীর কাছে ভিক্ষে নিতে না দিলে সে সত্যভঙ্গের অপরাধে অপরাধী হবে । গদাধর মিথ্যাবাদী ব্রাহ্মণ হতে পারবে না ।

 শেষ পর্যন্ত গদাধরের জেদই জয়ী হল । উপনয়ন কালে সন্ন্যাসী অবস্থায় গদাই ধনীকে মা সম্বোধন করে হাত পেতে প্রথম ভিক্ষা গ্রহণ করল । 

 উপনয়নের পরে গদাই পূজা ও ধ্যানে মনোনিবেশ করলো । ক্রমে ভাবসমাধির অধিকারী হয়ে তার জীবনে নানা দিব্যদর্শন হতে থাকে । তারই পরিপূর্ণ রূপ ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ ।

[আরও দেখুন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জীবনী – Rabindranath Tagore Biography in Bengali]

শ্রীরামকৃষ্ণ দক্ষিণেশ্বর কালী মন্দিরের পূজারী :

 বড় ভাই – এর মৃত্যুর পর তিনি হন রানী রাসমণির দক্ষিণেশ্বরের কালীমন্দিরের পূজারী ।

 গদাধর ছিলেন তোতাপুরীর শিষ্য । রামকৃষ্ণ পরমহংস নাম তিনিই দেন । শ্রীরামকৃষ্ণ মা কালীর পরমভক্ত ছিলেন ।

ঠাকুরের অপরূপ ভক্তির কথা শুনতে সারা দেশ থেকে ভক্তিপ্রাণ নরনারীরা এলো ছুটে :

 শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna) শেখালেন জীবনের মহামন্ত্র । শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna) এর সাধনার পতাকাতলে এলো দলে দলে ভক্তপ্রাণ নর – নারী । ঠাকুরের বাণী আর উপদেশ শুনে ধন্য হলো জগতের প্রতিটি মানুষ । শ্রী শ্রীমা সারদামণি এলেন দক্ষিণেশ্বরে । আরও অনেকে এলেন । এলেন নরেন্দ্রনাথ যিনি পরে হলেন জগৎজয়ী বিবেকানন্দ । এলেন ব্রহ্মানন্দ , প্রেমানন্দ , সারদানন্দ এই সব সন্ন্যাসীরা । সে আমলের বিখ্যাত লোকেরাও সব আসতেন শ্রীরামকৃষ্ণের কাছে । তাঁদের মধ্যে কেশবচন্দ্র সেন , শিবনাথ শাস্ত্রী , বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী এঁরা প্রধান । গৃহী ভক্তরাও এলেন অনেকে । আর এলেন নাট্যকার গিরিশচন্দ্র , ঋষি বঙ্কিমচন্দ্র প্রভৃতি বিখ্যাত ব্যক্তিরা । ঠাকুরের অপরূপ ভক্তির কথা শুনে সারা দেশ থেকে ভক্তিপ্রাণ নরনারীরা এলো ছুটে । 

[আরও দেখুন, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর জীবনী – Ishwar Chandra Vidyasagar Biography in Bengali]

শ্রীরামকৃষ্ণ এর বাণী :

 ঠাকুর সকলকে বললেন – “ সৎ পথে থেকো — তোমাদের চৈতন্য হোক । ” আর সব সময় তাঁর সঙ্গে আছেন আদর্শ স্ত্রী পরমাপ্রকৃতি শ্রী শ্রী মা সারদামণি — সবার মা সারদা , সকলের মা তিনি । তাঁর দান আর কাজের মহিমা বলে শেষ করা যায় না । টাকা পয়সা , ধনরত্ন এসব ঠাকুর কখনো হাত দিয়েও ছুঁতেন না । তাঁর কাছে যে সবই ছিল সামান্য মাটির মতো । একমাত্র কালী মাতা ছাড়া কোন কিছুরই কোনও দাম ছিল না তার কাছে।

 অবশেষে ঘনিয়ে এলো শেষের দিন । ঠাকুর কর্কট রোগে শয্যাশায়ী । চিরবিদায় নেবার আগে তিনি প্রিয় শিষ্য বিবেকানন্দকে ডেকে বললেন – “ নরেন , আমার সব ছেলেরা রইলো । তুই সকলের চেয়ে বুদ্ধিমান — ওদের দেখিস । ” 

 শ্রীশ্রীমা সারদাদেবীর কাছে বিদায় নিলেন ১৮৮৬ খ্রিঃ ১৬ আগস্ট । বললেন , “ মনে হচ্ছে , জলের মধ্যে দিয়ে অনেক দূর চলে যাচ্ছি । ” 

শ্রীরামকৃষ্ণ এর মৃত্যু – Ramakrishna Death :

 ১৮৮৬ খ্রিঃ ১৬ আগস্ট রাত একটা ২ মিনিটে ঠাকুর মহাসমাধিতে প্রবেশ করেন । পরদিন সন্ধ্যা ছটায় কাশীপুর মহাশ্মশানে ঠাকুরের পবিত্র ভাগবতী তনু চিতাগ্নিতে আহুতি দেওয়া হয় ।

শ্রীরামকৃষ্ণ এর জীবনী – Ramakrishna Biography in Bengali FAQ :

  1. শ্রীরামকৃষ্ণ কে ছিলেন ?

Ans: শ্রীরামকৃষ্ণ ছিলেন ঊনবিংশ শতকের এক প্রখ্যাত ভারতীয় বাঙালি যোগসাধক, দার্শনিক ও ধর্মগুরু ।

  1. শ্রীরামকৃষ্ণ এর জন্ম কোথায় হয় ?

Ans: শ্রীরামকৃষ্ণ এর জন্ম হয় কামারপুকুর, হুগলী ।

  1. শ্রীরামকৃষ্ণ কবে জন্মগ্রহন করেন ?

Ans: শ্রীরামকৃষ্ণ জন্মগ্রহন করেন ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৮৩৬ সালে ।

  1. শ্রীরামকৃষ্ণ এর পিতার নাম কী ?

Ans: শ্রীরামকৃষ্ণ এর পিতার নাম ক্ষুদিরাম চট্টোপাধ্যায় ।

  1. শ্রীরামকৃষ্ণ এর মাতার নাম কী ?

Ans: শ্রীরামকৃষ্ণ এর মাতার নাম চন্দ্রমণি দেবী ।

  1. শ্রীরামকৃষ্ণ এর শিষ্য কে ছিলেন ?

Ans: শ্রীরামকৃষ্ণ এর শিষ্য ছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ ।

  1. শ্রীরামকৃষ্ণ কোথাকার পূজারী ছিলেন ?

Ans: শ্রীরামকৃষ্ণ দক্ষিণেশ্বর কালী মন্দিরের পূজারী ছিলেন ।

  1. শ্রীরামকৃষ্ণ কবে মারা যান ?

Ans: শ্রীরামকৃষ্ণ মারা যান ১৬ আগস্ট ১৮৮৬ সালে ।

[আরও দেখুন, ইন্দিরা গান্ধীর জীবনী – Indira Gandhi Biography in Bengali

আরও দেখুন, কাজী নজরুল ইসলাম জীবনী – Kazi Nazrul Islam Biography in Bengali

আরও দেখুন, মহাত্মা গান্ধীর জীবনী – Mahatma Gandhi Biography in Bengali

আরও দেখুন, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের জীবনী – Sourav Ganguly Biography in Bengali

আরও দেখুন, শচীন টেন্ডুলকারের জীবনী – Sachin Tendulkar Biography in Bengali]

শ্রীরামকষ্ণ এর জীবনী – Ramakrishna Biography in Bengali

   অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই ” শ্রীরামকষ্ণ এর জীবনী – Ramakrishna Biography in Bengali  ” পােস্টটি পড়ার জন্য। শ্রীরামকষ্ণ এর জীবনী – Ramakrishna Biography in Bengali পড়ে কেমন লাগলো কমেন্টে জানাও। আশা করি এই শ্রীরামকষ্ণ এর জীবনী – Ramakrishna Biography in Bengali পোস্টটি থেকে উপকৃত হবে। এই ভাবেই BhugolShiksha.com ওয়েবসাইটের পাশে থাকো যেকোনো প্ৰশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলাে করো এবং নিজেকে  তথ্য সমৃদ্ধ করে তোলো , ধন্যবাদ।