গিরিশচন্দ্র ঘোষ জীবনী - Girish Chandra Ghosh Biography in Bengali
গিরিশচন্দ্র ঘোষ জীবনী - Girish Chandra Ghosh Biography in Bengali

গিরিশচন্দ্র ঘোষ জীবনী

Girish Chandra Ghosh Biography in Bengali

গিরিশচন্দ্র ঘোষের জীবনী – Girish Chandra Ghosh Biography in Bengali : গিরিশচন্দ্র ঘোষ (Girish Chandra Ghosh) ছিলেন একজন প্রখ্যাত নাট্যকার, কবি, অভিনেতা ।

 নাট্যকার, কবি ও অভিনেতা গিরিশচন্দ্র ঘোষের একটি সংক্ষিপ্ত জীবনী । গিরিশচন্দ্র ঘোষ জীবনী – Girish Chandra Ghosh Biography in Bengali বা গিরিশচন্দ্র ঘোষের আত্মজীবনী বা গিরিশচন্দ্র ঘোষ (Girish Chandra Ghosh Jivani) জীবন রচনা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

গিরিশচন্দ্র ঘোষ কে ছিলেন ? Who is Girish Chandra Ghosh ?

গিরিশচন্দ্র ঘোষ (Girish Chandra Ghosh) ছিলেন একজন বিশিষ্ট বাঙালি সংগীতস্রষ্টা, কবি, নাট্যকার, ঔপন্যাসিক, নাট্যপরিচালক ও নট। বাংলা থিয়েটারের স্বর্ণযুগ মূলত তারই অবদান।

নাট্যকার, কবি ও অভিনেতা গিরিশচন্দ্র ঘোষ এর জীবনী – Girish Chandra Ghosh’s Biography in Bengali :

নাম (Name) গিরিশচন্দ্র ঘোষ (Girish Chandra Ghosh)
জন্ম (Birthday) ২৮ ফেব্রুয়ারি ১৮৪৪ (28th February 1844)
জন্মস্থান (Birthplace) কলকাতা, ভারত
অভিভাবক (Parents)/পিতামাতা নীলকমল ঘোষ
জাতীয়তা ব্রিটিশ ভারতীয়
পরিচিতির কারণ প্রবন্ধকার এবং লেখক

গিরিশচন্দ্রের জন্ম ও পরিবার – Girishchandra’s Birthday and Family :

 প্রখ্যাত নাট্যকার , কবি , অভিনেতা সাধারণ রঙ্গমঞ্চের প্রতিষ্ঠাতা গিরিশচন্দ্রের জন্ম হয়েছিল কলকাতার বাগবাজারে ১৮৪৪ খ্রিঃ ২৮ শে ফেব্রুয়ারী । পিতার নাম নীলকমল ঘােষ । 

গিরিশচন্দ্র ঘোষের শৈশবকাল – Girish Chandra Ghosh’s Childhood :

 বাল্যবয়সেই পিতা মাতাকে হারিয়ে গিরিশচন্দ্র এক প্রকার অভিভাবকহীন হয়ে পড়েন । ফলে পড়াশােনার বেশিরভাগ সময়টাই কাটাতাে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায় ও হুল্লোড়বাজিতে । তবে স্বভাবজাত প্রতিভা বলে মুখে মুখে কবিতা রচনা করতে পারতেন । পাড়ার ছেলেদের সঙ্গে মিলে নাটকে ভাল অভিনয়ও করতেন ।

গিরিশচন্দ্র ঘোষের শিক্ষাজীবন – Girish Chandra Ghosh’s Education Life :

 পড়াশােনা শুরু হয়েছিল পাইকপাড়া স্কুলে । কিন্তু উজ্জ্বল প্রকৃতির জন্য বেশিদূর এগােতে পারেন নি । ১৮৬২ খ্রিঃ এন্ট্রান্স পরীক্ষা । দিয়ে অকৃতকার্য হন ।

গিরিশচন্দ্র ঘোষের কর্মজীবন – Girish Chandra Ghosh’s Work Life :

 কুড়ি বছর বয়সে অ্যাটিকিনসন টিলকন কোম্পানিতে বুক – কিপার এর কাজ দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন । এই সময় বন্ধু ব্রজবিহারী । সােমের উৎসাহে দেশী ও বিদেশী সাহিত্য পাঠে আগ্রহ জন্মে এবং প্রচুর পড়াশােনা করেন ।

 কৈশােরে কিছুকাল হাফ – আখড়াই গানের দলের সঙ্গে যুক্ত থাকার । সুবাদে সঙ্গীত ও অভিনয়ের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন । সেই সময় বাগবাজাৱেকয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে একটি থিয়েটারের দল গঠন করেন ।

গিরিশচন্দ্র ঘোষের নাত্তজগতে আবির্ভাব – Girishchandra in Drama World :

 ১৮৬৭ খ্রিঃ এই দলের প্রযােজনায় মধুসূদনের শর্মিষ্ঠা নাটক মঞ্চস্থ হয় । গিরিশচন্দ্র এই নাটকের জন্য সঙ্গীত রচনা করেন । এই ভাবেই ভাবীকালের শ্রেষ্ঠ নট ও নাট্যকারের নাট্যজগতে আবির্ভাব ঘটে ।

 ১৮৬৮ খ্রিঃ বাগবাজার থিয়েটার দল দীনবন্ধু মিত্রের সধবার একাদশী অভিনয় করে । সপ্তমী পূজার রাত্রে বাগবাজারের প্রাণকৃষ্ণহালদারের বাড়িতে স্টেজ বেঁধে অভিনয় হয়েছিল । গিরিশচন্দ্র এই নাটকের নিমাদের ভূমিকায় অভিনয় করে প্রশংসা লাভ করেছিলেন । 

 এই নাট্যসংস্থার নাম পরে ন্যাশনাল থিয়েটার হয় । ১৮৫৫ খ্রিঃ ডিসেম্বর মাসে গিরিশচন্দ্রের নেতৃত্বে সেই সর্বপ্রথম পেশাদারী রঙ্গ মঞ্চ প্রতিষ্ঠিত হয় । 

 তিনিই সর্বপ্রথম নাট্যাভিনয়কে সুচারু শিল্পরূপে এদেশে প্রতিষ্ঠা করেন । নিজের অভিনয় প্রতিভা বলে অভিনয় ক্ষেত্রে একটি বিশেষ রীতির প্রবর্তন করেন । গিরিশচন্দ্র ছিলেন নট ও নাট্যকার রুপে কে দুর্লভ প্রতিভার সমন্বয় ।

 অভিনয় রজনীতে টিকিট বিক্রির প্রনো গিরিশচন্দ্র ন্যাশনাল থিয়েটারের সংশ্রব ত্যাগ করেন । কিছুকাল পরে গ্রেট ন্যাশনাল থিয়েটার প্রতিষ্ঠিত হলে গিরিশচন্দ্র তাতে যােগ দেন ও অবৈতনিকভাবে অভিনয় করেন । 

গিরিশচন্দ্র ঘোষের প্রথম নাটক – Girish Chandra Ghosh’s First Drama :

 পরবর্তীকালে তিনি এই প্রতিষ্ঠানেই একশ টাকা বেতনে ম্যানেজার নিযুক্ত হন । এই সময় থেকেই তিনি নিয়মিত নাট্যরচনা আরম্ভ করেন । তাঁর রচিত প্রথম মৌলিক নাটক “ আগমনী ‘ গ্রেট ন্যাশনালের মঞ্চেই ১৮৭৭ খ্রিঃ অভিনীত হয় । 

 জীবনের পরবর্তী বিভিন্ন সময়ে গিরিশচন্দ্র স্টার , এমারেল্ড , মিনার্ভা , ক্লাসিক , কোহিনুর প্রভৃতি রঙ্গশালায় পরিচালনার কাজ করেন । পরে ১৯০৮ খ্রিঃ মিনার্ভা থিয়েটারে অধ্যক্ষ পদে আসীন হন এবং আমৃত্যু এই পদে নিযুক্ত ছিলেন । 

 গিরিশচন্দ্র রচিত চৈতন্যলীলা নাটকের অভিনয় দেখতে ১৮৮৪ খ্রিঃ ২০ শে সেপ্টেম্বর ঠাকুর শ্রীশ্রী রামকৃষ্ণ স্টার থিয়েটারে আসেন । এবং চৈতন্য চরিত্রের অভিনেত্রী বিনােদিনী দাসীকে আশীর্বাদ করে যান । 

 এই সময় থেকেই স্বেচ্ছাচারী গিরিশচন্দ্রের জীবনে পরিবর্তনের সূচনা হয় । ক্রমে তিনি শ্রীরামকৃষ্ণদেবের অনুগ্রহ লাভ করেন এবং স্বামী বিবেকানন্দকে বন্ধুরূপে পান । শ্রীরামকৃষ্ণ সংঘের সংস্পর্শে এসেগিরিশচন্দ্র তার বেপরােয়া জীবনকে সংযত করেন ; ঠাকুরের প্রতি অচলা ভক্তিতার জীবনের মােড় ঘুরিয়ে দেয় । 

 তার জীবনে ঠাকুরের প্রভাব এক বিচিত্র অধ্যায় । তারই প্রকাশ ।ঘটে তার পৌরাণিক ও ভক্তিরসের নাটকনাটিকায় । চৈতন্যলীলা ও বিশ্বমঙ্গল গিরিশচন্দ্রের আদর্শভক্তিরসের সেরনাটকরূপে চিহ্নিত । ভারতীয় পুরাণের প্রধান নৈতিক আদর্শ ভক্তি নিষ্ঠা প্রভৃতি তত্ত্বগুলিকে তিনি অতিদক্ষতার সঙ্গে পৌরাণিক ভক্তিমূলক নাটকে ফুটিয়ে তুলেছেন । 

 গিরিশচন্দ্র বিংশ শতকের প্রথমদিকের পৌরাণিক নাট্যকার হলেও সমসাময়িকরাজনৈতিকও স্বাদেশিক অনুরাগে কয়েকটি ঐতিহাসিক নাটকও রচনা করেন । সিরাজদ্দৌলা , মীরকাশিম , ছত্রপতি শিবাজী , অশােক , সনাম প্রভৃতি তার ইতিহাসাশ্রিত নাটক । 

গিরিশচন্দ্রের নাটক ও গীতিনাট্য :

 গিরিশচন্দ্রের পূর্ণাঙ্গনাটকের সংখ্যা প্রায় পঞ্চাশ । প্রহসন , রূপক , গীতিনাট্য প্রভৃতির সংখ্যাও প্রায় একই রকম । অভিনয় , নাট্যালয় । পরিচালনা , অভিনয় শিক্ষা প্রভৃতি কাজে ব্যস্ত থাকা সত্ত্বেও তিনি যে শতাধিক নাটক রচনা করেছেন এতেই তার অসামান্য প্রতিভার বিচ্ছুরণ প্রমাণ করে । 

 গিরিশচন্দ্র পৌরাণিক নাটকগুলিতে অমিত্রাক্ষর ধরনের এক অভিনব ছন্দ ব্যবহার করেন । এই ছন্দতারই নামে গৈরিশছন্দ নামে । স্বীকৃতি লাভ করেছে । তিনি নাট্যমঞ্চের প্রয়ােজনে এবং নট – নটীদের যােগ্যতানুযায়ী তার অধিকাংশ নাটক রচনা করেছেন । 

 শেক্সপীয়রের ম্যাকবেথ নাটকের সার্থক বাংলা অনুবাদ ছাড়াও বঙ্কিমচন্দ্রের মৃণালিনী , বিষবৃক্ষ , দুর্গেশনন্দিনী উপন্যাস এবং মধুসূদনের মেঘনাদবধ ও নবীনচন্দ্রের পলাশীর যুদ্ধ কাব্যেরনাট্যরূপ দান করেছিলেন । 

 মেঘনাদ বধ কাব্যে রাম ও মেঘনাদ উভয় ভূমিকাতেই অভিনয় করে গিরিশচন্দ্র বাংলার নাট্যামােদিদের চমৎকৃত করেছিলেন । অভিনয় ক্ষমতা বলে সেকালে তিনি জীবন্ত কিংবদন্তীতে পরিণত হয়েছিলেন । 

গিরিশচন্দ্র ঘোষের উল্লেখযোগ্য নাটক – Girish Chandra Ghosh’s Famous Dramas :

 গিরিশচন্দ্রের অন্যান্য উল্লেখযােগ্য নাটক দক্ষযজ্ঞ , পাণ্ডবের অজ্ঞাতবাস , জনা , পাণ্ডবগৌরব , প্রফুল্ল , হারানিধি , কালাপাহাড় , আবুহােসেন প্রভৃতি । 

গিরিশচন্দ্র ঘোষের মৃত্যু – Girish Chandra Ghosh’s Death :

 ১৯১২ খ্রিঃ ৮ ই ফেব্রুয়ারী গিরিশচন্দ্র ৬৮ বছর 

বয়সে জীবনের রঙ্গমঞ্চ থেকে চিরপ্রস্থান করেন ।

গিরিশচন্দ্র ঘোষের জীবনী (প্রশ্ন ও উত্তর) – Girish Chandra Ghosh’s Biography in Bengali (FAQ):

  1. গিরিশচন্দ্র ঘোষের জন্ম কবে হয় ?

Ans. ২৮ ফেব্রুয়ারি ১৮৪৪ সালে ।

  1. গিরিশচন্দ্রের পিতার নাম কী?

Ans. নীলকমল ঘোষ ।

  1. গিরিশ চন্দ্র ঘোষের উল্লেখযোগ্য নাটক গুলি কী ?

Ans. দক্ষযজ্ঞ , পাণ্ডবের অজ্ঞাতবাস , জনা , পাণ্ডবগৌরব , প্রফুল্ল , হারানিধি , কালাপাহাড় , আবুহােসেন প্রভৃতি ।

  1. গিরিশ চন্দ্র ঘোষের নাটক ও গীতিনাট্য এর সংখ্যা কত ?

Ans. ৫০ টি ।

  1. গিরিশ চন্দ্র ঘোষের প্রথম নাটক কী?

Ans. আগমনী ।

  1. গিরিশ চন্দ্র ঘোষের জন্ম কোথায় হয় ?

Ans. কলকাতার বাগবাজার ।

  1. গিরিশ চন্দ্র ঘোষের নাটক দেখতে স্টার থিয়েটার এ কে আসেন ?

Ans. শ্রী শ্রী চৈতন্য দেব ।

  1. গিরিশ চন্দ্র ঘোষের মৃত্যু কবে হয় ?

Ans. ১৯১২ সালে ৮ ফেব্রুয়ারি ।

[আরও দেখুন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জীবনী – Rabindranath Tagore Biography in Bengali

আরও দেখুন, কাজী নজরুল ইসলাম জীবনী – Kazi Nazrul Islam Biography in Bengali

আরও দেখুন, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় জীবনী – Bankim Chandra Chatterjee Biography in Bengali

আরও দেখুন, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় জীবনী | Sarat Chandra Chattopadhyay Biography in Bengali]

গিরিশচন্দ্র ঘোষ জীবনী – Girish Chandra Ghosh Biography in Bengali

   অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই ” গিরিশচন্দ্র ঘোষ জীবনী – Girish Chandra Ghosh Biography in Bengali  ” পােস্টটি পড়ার জন্য। এই ভাবেই BhugolShiksha.com ওয়েবসাইটের পাশে থাকো । যেকোনো প্ৰশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলাে করো এবং নিজেকে  তথ্য সমৃদ্ধ করে তোলো , ধন্যবাদ।