লুই পাস্তুর এর জীবনী
Louis Pasteur Biography in Bengali
লুই পাস্তুর এর জীবনী – Louis Pasteur Biography in Bengali : লুই পাস্তুর নিজে চিকিৎসক ছিলেন না , কিন্তু চিকিৎসা জগতে রেখে গেছেন সবচেয়ে অমূল্য অবদান । লুই পাস্তুর জলাতঙ্ক রোগের কারণ এবং তার টিকা আবিষ্কার করে অমর হয়ে আছেন । এই টিকা আবিষ্কার করে লুই পাস্তুর (Louis Pasteur) পৃথিবীর সর্বকালের সর্বাধিক মানুষের কল্যাণ সাধন করে গেছেন ।
জলাতঙ্ক রোগের টিকা আবিষ্কারক লুই পাস্তুর এর একটি সংক্ষিপ্ত জীবনী । লুই পাস্তুর এর জীবনী – Louis Pasteur Biography in Bengali বা লুই পাস্তুর এর আত্মজীবনী বা (Louis Pasteur Jivani Bangla. A short biography of Louis Pasteur. Louis Pasteur Birth, Place, Life Story, Life History, Biography in Bengali) লুই পাস্তুর এর জীবন রচনা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
লুই পাস্তুর কে ছিলেন ? Who is Louis Pasteur ?
লুই পাস্তুর (Louis Pasteur) ছিলেন একজন ফরাসি অণুজীববিজ্ঞানী ও রসায়নবিদ। লুই পাস্তুর (Louis Pasteur) প্রথম আবিষ্কার করেন যে অণুজীব অ্যালকোহলজাতীয় পানীয়ের পচনের জন্য দায়ী। জীবাণুতত্ত্ব ও বিভিন্ন রোগ নির্মূলে বিভিন্ন ধরনের প্রতিষেধক আবিষ্কার করে স্মরণীয় হয়ে রয়েছেন লুই পাস্তুর (Louis Pasteur)।
জলাতঙ্ক রোগের টিকা আবিষ্কারক লুই পাস্তুর এর জীবনী – Louis Pasteur Biography in Bengali :
নাম (Name) | লুই পাস্তুর (Louis Pasteur) |
জন্ম (Birthday) | ২৭ ডিসেম্বর ১৮২২ (27th December 1822) |
জন্মস্থান (Birthplace) | ফ্রান্স |
জাতীয়তা | ফরাসি |
কর্মক্ষেত্র | রসায়ন
অণুজীববিজ্ঞান |
প্রতিষ্ঠান | স্ট্রাসবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয়
Lille University of Science and Technology একোল নর্মাল সুপেরিয়র Pasteur Institute |
উল্লেখযোগ্য পুরস্কার | রামফোর্ড মেডেল (১৮৫৬, ১৮৯২)
কপলি মেডেল (১৮৭৪) Albert Medal (১৮৮২) Leeuwenhoek Medal (১৮৯৫) |
মৃত্যু (Death) | ২৮ সেপ্টেম্বর ১৮৯৫ (28th September 1895) |
লুই পাস্তুর এর জন্ম – Louis Pasteur Birthday :
বিজ্ঞানী লুই পাস্তুর ১৮২২ খ্রীষ্টাব্দে ফ্রান্সে জন্মগ্রহণ করেন । লুই পাস্তুর (Louis Pasteur) এর পিতা ছিলেন একজন ধনী চামড়ার ব্যবসায়ী । পাস্তুর পড়াশুনায় মেধাবী ছিলেন ।
লুই পাস্তুর এর শিক্ষাজীবন – Louis Pasteur Education Life :
বাবার ইচ্ছা ছিলো ছেলে বড় হয়ে অধ্যাপক হবে । পিতার ইচ্ছা পূরণ হলো লুই পাস্তুর রসায়নশাস্ত্রের উপর মৌলিক গবেষণা করে ডক্টরেট ডিগ্রী লাভ করলেন । পাউসেট নামক জনৈক বিজ্ঞানী পরীক্ষা করে বললেন – ‘ জীব থেকেই জীবের জন্ম । জীবাণু থেকেই জীবাণুর উৎপত্তি । ‘ কিন্তু লুই পাস্তুর বললেন নয় । জীব বা জীবাণু আপনা থেকেই জন্মাতে পারে । ‘ তিনি এটা পরীক্ষা করেও দেখালেন ।
লুই পাস্তুর এর জলাতঙ্ক রোগের টিকা আবিষ্কার – Louis Pasteur Invention The rabies vaccine :
সেবার স্কুল থেকে ফেরার পথে জোসেফ মিস্টার নামক এক ছেলেকে পাগলা কুকুরে কামড়ালো । ছেলের বাবা এলেন লুই পাস্তুরের কাছে । লুই পাস্তুর (Louis Pasteur) নিজের আবিষ্কৃত একটা ওষুধের ইনজেকশন দিলেন ছেলেটাকে । ছেলেটার আর জলাতঙ্ক রোগ হলো না । অথচ এর আগে পাগলা কুকুরে কামড়ালে মানুষের জলাতঙ্ক রোগ হতো এবং সে মারা যেতো । এভাবে লুই পাস্তুর আবিষ্কার করলেন জলাতঙ্ক রোগের প্রতিষেধক । সারা বিশ্বে লুই পাস্তুরের নাম ছড়িয়ে পড়লো । লুই পাস্তুর (Louis Pasteur) সবার কাছে পরিচিত হলেন জলাতঙ্ক রোগের ডাক্তার হিসাবে । অথচ লুই পাস্তুর (Louis Pasteur) কোনোদিনই ডাক্তারী পড়েননি । তবে রসায়নশাস্ত্রে ছিলেন পণ্ডিত ।
ফ্রান্সের ঘটনা – France Story :
ফ্রান্সে একবার এক ঘটনা ঘটলো । ফ্রান্সের গুটিপোকার চায়ের খামারে মড়ক লাগলো । ডাকা হলো লুই পাস্তুরকে । লুই পাস্তুর দেখালেন এক ধরনের জীবাণুই হলো এই মড়কের মূল উৎস । লুই পাস্তুর (Louis Pasteur) জীবাণু ধ্বংসের ব্যবস্থা করলেন । মড়ক বন্ধ হলো রক্ষা পেলো কোটি টাকা মূল্যের গুটিপোকা চাষের খামার ।
এ্যানথ্রাক্স রোগের প্রতিষেধক আবিষ্কার – Anthrax Vaccine Invention :
এর আগে দেখা যেতো এ্যানথ্রাক্স নামে এক বিচিত্র রোগে প্রতি বছর হাজার হাজার জীবজন্তু মারা যেতো । লুই পাস্তুর গবেষণায় লক্ষ্য করলেন মৃত পশুর শরীরের রক্তে এক ধরনের জীবাণু রয়েছে -এর জন্যেই এই রোগ হয় । লুই পাস্তুর (Louis Pasteur) পরীক্ষায় লক্ষ্য করলেন যদি এই রোগের জীবাণু অল্প পরিমাণে কোনো পশুর শরীরে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় , তবে সেই পশুটি হয়তো সেই রোগে সামান্য পরিমাণে আক্রান্ত হবে , তবে এর ফলে দেহে প্রতিরোধ ক্ষমতাও বৃদ্ধি পাবে , ফলে তার আর ঐ রোগটি হবে না । লুই পাস্তুর দেশের বহু বিজ্ঞানীকে চ্যালেঞ্জ করে তাদের সকলের সামনে এই পরীক্ষা করে তাঁর আবিষ্কৃত তথ্যের প্সত্যতা প্রমাণ করলেন ।
লুই পাস্তরের পদ্ধতি অনুসরণ করে এভাবে পরবর্তীকালে চিকিৎসাবিজ্ঞানে বহু প্রতিষেধক ও ঔষধ ইত্যাদি আবিষ্কৃত হয়েছে ।
[আরও দেখুন, আলবার্ট আইনস্টাইন জীবনী – Albert Einstein Biography in Bengali]
লুই পাস্তুর এর জনপ্রিয়তা – Louis Pasteur Famous in Public :
দেশে লুই পাস্তুরের জনপ্রিয়তা ছিলো বিস্ময়কর । একবার ফ্রান্সে লুই পাস্তুরের জনপ্রিয়তার পরিসংখ্যান নেওয়া হয় । সেই পরিসংখানে তিনি পেয়েছিলেন সর্বাধিক সংখ্যক ভোট । দ্বিতীয় ও তৃতীয় হয়েছিলেন যথাক্রমে সম্রাট নেপোলিয়ান ও ভিক্টর হুগো ৷
বিদেশেও লুই পাস্তুর অসম্ভব জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন । ১৮৮২ খ্রীষ্টাব্দে পাস্তুর জাতীয় কংগ্রেসের এক অধিবেশনে ফ্রান্সের প্রতিনিধি হয়ে লন্ডনে যান । লুই পাস্তুর (Louis Pasteur) যখন অধিবেশন হলে গিয়ে পৌঁছলেন তখন লোকে একেবারে ভেঙে পড়েছে । চারিদিকে লোকে লোকারণ্য লুই পাস্তুর ভাবছিলেন , রাজা বোধ হয় আসছেন সম্মেলন কক্ষে অধিবেশন উদ্বোধন করতে । লুই পাস্তুর পাশে বসা সভাপতিকে বললেন , নিশ্চয় এখন রাজা আসছেন , তাই সবাই এমন জয়ধ্বনি করছে ।
সভাপতি জানালেন , না রাজা আসছেন না । ওরা আপনাকেই অভিনন্দন জানাচ্ছেন । ওরা আপনাকেই এক নজর দেখার জন্য এতো ভিড় করেছে । আপনি এ অধিবেশনে আসছেন , এ সংবাদ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে ।
পৃথিবীতে সর্বকালে সর্বযুগে যে মানুষটি মানবসমাজের সর্বাধিক কল্যাণ সাধন করে গেছেন , তিনি হলেন বিজ্ঞানী লুই পাস্তর ।
লুই পাস্তরের উল্লেখযোগ্য অবদান –
লুই পাস্তুর (Louis Pasteur) বায়োজেনেসিস তত্ত্বের প্রবক্তা । এই তত্ত্বানুসারে ‘ জীব থেকেই জীব সৃষ্টি হয় ’ লুই পাস্তুর (Louis Pasteur) তা বিশ্লেষণ করেন । পাস্তুরাইজেশন পদ্ধতির উদ্ভাবক । এই পদ্ধতিতে দুধকে নির্দিষ্ট উষ্ণতায় গরম করে দুধকে নষ্ট হয়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করা হয় ।
[আরও দেখুন, উইলিয়াম শেকসপিয়র এর জীবনী – William Shakespeare Biography in Bengali]
লুই পাস্তুর এর আবিষ্কার গুলি – Louis Pasteur Inventions :
গুটিপোকার মড়ক রোধ , অ্যানথ্রাক্স রোগের প্রতিষেধক , চিকেন কলেরার টীকা আবিষ্কার এবং সর্বোপরি জলাতঙ্ক রোগের প্রতিষেধক আবিষ্কার ।
লুই পাস্তুর এর মৃত্যু – Louis Pasteur Death :
১৮৯৫ খ্রীষ্টাব্দের ২৮ শে সেপ্টেম্বর ৭৩ বছর বয়সে এই মনীষীর মৃত্যু হয় । ফ্রান্সে তাঁর নামে প্রতিষ্ঠিত একটি গবেষণা কেন্দ্রের চত্বরেই লুই পাস্তরকে সমাহিত করা হয় । আজো লাখো ভক্ত লুই পাস্তুরকে (Louis Pasteur) প্রতিদিন শ্রদ্ধা জানায় ।
লুই পাস্তুর এক মহান দার্শনিক বিজ্ঞান তার অধীত বিদ্যা হলে কী হবে , জীবনদর্শনে তিনি ছিলেন মানবিকতাবাদী । তাই লুই পাস্তুর (Louis Pasteur) বলেছিলেন — ‘ মানুষের মনে যতদিন অসীমের রহস্য অজ্ঞাত থাকবে ততদিন অসীমের উদ্দেশে মন্দির গড়ে উঠবে , তাকে ব্রহ্মা , আল্লা , জিহোবা বা জিশু যে নামেই ডাকা হোক না কেন । ‘ তাঁর এই উক্তির মাধ্যমে তিনি প্রমাণ করেছেন , ধার্মিক গোঁড়ামি থেকে অনেক দূরে ছিল তাঁর অবস্থান । তিনি যে মানুষের বন্ধু , তিনি মুমূর্ঘু মানুষের হাতে রাখবেন হাত , তাঁর চোখে এঁকে দেবেন মৃত্যু জয়ের স্বপ্ন !
লুই পাস্তুর এর জীবনী – Louis Pasteur Biography in Bengali FAQ :
- লুই পাস্তুর এর জন্ম কবে হয় ?
Ans: লুই পাস্তুর এর জন্ম হয় ২৭ ডিসেম্বর ১৮২২ সালে।
- লুই পাস্তুর এর জাতীয়তা কী ছিল ?
Ans: লুই পাস্তুর এর জাতীয়তা ছিলেন ফরাসি ।
- লুই পাস্তুর এর জন্ম কোথায় হয় ?
Ans: লুই পাস্তুর এর জন্ম হয় ফ্রান্স এ ।
- লুই পাস্তুর কে ছিলেন ?
Ans: লুই পাস্তুর ছিলেন একজন ফরাসি অণুজীববিজ্ঞানী ও রসায়নবিদ ।
- লুই পাস্তুর এর আবিষ্কার কী কী ?
Ans: লুই পাস্তুর এর আবিষ্কার গুলো হলো – গুটিপোকার মড়ক রোধ , অ্যানথ্রাক্স রোগের প্রতিষেধক , চিকেন কলেরার টীকা আবিষ্কার এবং সর্বোপরি জলাতঙ্ক রোগের প্রতিষেধক আবিষ্কার ।
- লুই পাস্তুর কবে রামফোর্ড মেডেল পান ?
Ans: লুই পাস্তুর ১৮৫৬ সালে রামফোর্ড মেডেল পান।
- লুই পাস্তুর কবে কপলি মেডেল পান ?
Ans: লুই পাস্তুর ১৮৭৪ সালে কপলি মেডেল পান ।
- লুই পাস্তুর কবে মারা যান ?
Ans: লুই পাস্তুর মারা যান ২৮ সেপ্টেম্বর ১৮৯৫ সালে ।
[আরও দেখুন, জেমস ওয়াট এর জীবনী – James Watt Biography in Bengali
আরও দেখুন, আর্কিমিডিস এর জীবনী – Archimedes Biography in Bengali
আরও দেখুন, আন্তন চেখভের জীবনী – Anton Chekhov Biography in Bengali
আরও দেখুন, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর জীবনী – Ishwar Chandra Vidyasagar Biography in Bengali
আরও দেখুন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জীবনী – Rabindranath Tagore Biography in Bengali]
লুই পাস্তুর এর জীবনী – Louis Pasteur Biography in Bengali
অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই ” লুই পাস্তুর এর জীবনী – Louis Pasteur Biography in Bengali ” পােস্টটি পড়ার জন্য। লুই পাস্তুর এর জীবনী – Louis Pasteur Biography in Bengali পড়ে কেমন লাগলো কমেন্টে জানাও। আশা করি এই লুই পাস্তুর এর জীবনী – Louis Pasteur Biography in Bengali পোস্টটি থেকে উপকৃত হবে। এই ভাবেই BhugolShiksha.com ওয়েবসাইটের পাশে থাকো যেকোনো প্ৰশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলাে করো এবং নিজেকে তথ্য সমৃদ্ধ করে তোলো , ধন্যবাদ।