মহাবীরের জীবনী - Mahavira Biography in Bengali
মহাবীরের জীবনী - Mahavira Biography in Bengali

মহাবীরের জীবনী – Mahavira Biography in Bengali

মহাবীরের জীবনী – Mahavira Biography in Bengali : বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থগুলিতে মহাবীরকে ‘নিগন্থ জ্ঞাতপুত্ত’ নামে অভিহিত করা হয়েছে। ‘নিগন্থ’ শব্দের অর্থ ‘যাঁর বন্ধন, পিছুটান বা রজ্জু নেই’। ‘জ্ঞাতপুত্ত’ শব্দটি (‘‘নতসে’র পুত্র’) তার ‘জ্ঞাত’ বা ‘নয়’ (প্রাকৃত) নামক বংশ-নামের দ্যোতক। মহাবীরকে ‘শ্রমণ’ (‘অনুসন্ধানকারী’) নামেও অভিহিত করা হয়।

  জৈন ধর্মের প্রবর্তক বর্ধমান মহাবীর এর একটি সংক্ষিপ্ত জীবনী । মহাবীর এর জীবনী – Mahavira Biography in Bengali বা মহাবীর এর আত্মজীবনী বা (Mahavira Jivani Bangla. A short biography of Mahavira. Mahavira Birth, Place, Life Story, Life History, Biography in Bengali) মহাবীর এর জীবন রচনা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

মহাবীর কে ছিলেন ? Who is Mahavira ? 

 মহাবীর (Mahavira) বা শ্রী মহাবীর জৈন, বর্ধমান নামে পরিচিত, ত্রিশ চতুর্থ তীর্থংকর (ফোর্ড-রচয়িতা) যিনি জৈনধর্মকে পুনরুজ্জীবিত করেছিলেন। দূরবর্তী প্রাক-বৈদিক যুগের পূর্ববর্তী তীর্থঙ্কারগুলির আধ্যাত্মিক, দার্শনিক ও নৈতিক শিক্ষাগুলি মহাবীর (Mahavira) ব্যাখ্যা করেছিলেন। জৈন ঐতিহ্যতে, বিশ্বাস করা হয় যে মহাবিরা খৃস্টপূর্ব ৬ষ্ঠ শতকের গোড়ার দিকে ভারতের বর্তমান বিহারের রাজকীয় ক্ষত্রিয় পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। মহাবীর (Mahavira) ৩০ বছর বয়সে সমস্ত বিশ্বস্ত সম্পদ পরিত্যাগ করেছিলেন এবং আধ্যাত্মিক জাগরণ সাধনের জন্য বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন এবং এক সাস্ত্র হয়ে উঠছিলেন। 

বর্ধমান মহাবীরের জীবনী – Mahavira Biography in Bengali :

নাম (Name) বর্ধমান মহাবীর বা মহাবীর (Mahavira)
জন্ম (Birthday) ৫৯৯ খ্রীষ্টপূর্ব
জন্মস্থান (Birthplace) বৈশালী
পিতামাতা  সিদ্ধার্থ (পিতা)

ত্রিশলা (মাতা)

দীক্ষার তারিখ কার্তিক বাদ ১০
দীক্ষার স্থান বৈশালী
মোক্ষের তারিখ আসো বাদ অমাস (কার্তিক অমাবস্যা / দীপাবলি)
মোক্ষের স্থান পাবাপুরী , বিহার 
প্রতিক সিংহ

মহাবীর এর জন্ম – Mahavira Birthday :

 জৈন ধর্মের প্রবর্তক বর্ধমান মহাবীর জৈন – দৰ্শন তথা জৈনধর্মের প্রতিষ্ঠাতা বর্ধমান মহাবীর ৫৯৯ খ্রীষ্টপূর্বাব্দে প্রাচীন পাটনার উত্তরে কুন্দ নামে একটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন । অবশ্য মহাবীর (Mahavira) এর জন্মকাল নিয়ে পণ্ডিতদের মধ্যে কিছু মত পার্থক্য আছে । এই মহান জ্ঞানসাধক মহাবীরের এমন এক সময়ে জন্ম যে সময়ে ভারতের সামাজিক অবস্থা ছিলো খুব খারাপ । জাতিভেদ প্রথা তখন চরমে পৌঁছেছিলো । উচ্চবর্ণ ব্রাহ্মণ ক্ষত্রিয় এবং বৈশ্যরাই ছিলো সকল সামাজিক সুবিধাবাদি ও সুখের একচ্ছত্র ভাগীদার । ধর্মকর্মে ব্রাহ্মণদেরই কেবল একচেটিয়া অধিকার ছিলো । প্রচার করা হতো , ব্রাহ্মণ ব্যতীত অন্য যারা ধর্মগ্রন্থ পাঠ করবে তাঁরা নরকে যাবে । রাজশাসনের সকল অধিকার ছিলো ক্ষত্রিয়দের হাতে । তারা মত্ত থাকতো আরাম – আয়েশ আর বিলাসব্যাসনে । আর ব্যবসা বাণিজ্যের একচেটিয়া সুবিধাভোগী ছিলো বৈশ্যরা । নিম্নশ্রেণীর শুদ্রদের অবস্থা ছিলো সবচেয়ে করুণ । তারা ছিলো মূলতঃ দাসশ্রেণীর অর্ন্তভূক্ত । বৃহত্তর এই জনগোষ্ঠীর কোনো সামাজিক মর্যাদা ও আর্থিক অধিকারই ছিলো না । এমনি এক অন্ধকার যুগে এবং পরিবেশেই খ্রীষ্টপূর্ব ৫৯৯ অব্দে মহাবীরের জন্ম । 

মহাবীরের পরিচয় : Mahavira Introduction :

 মহাবীর ছিলেন গাঁয়ের এক উচ্চবর্ণ ও ধনাঢ্য ব্যক্তির দ্বিতীয় পুত্র । শৈশবকাল কেটেছে বিপুল বিত্তবৈভব ও ভোগ – বিলাসের মধ্য দিয়ে ৷ পাঁচজন সেবিকা সর্বক্ষণ নিয়োজিত ছিলো তাঁর আরাম আয়েশ পরিচর্যায় । 

মহাবীরের বিবাহ জীবন – Mahavira Marriage Life :

 যৌবনে বিয়ে করলেন এক পরমাসুন্দরী রমণীকে সংসার হলো । এক কন্যাসন্তানের জনকও হলেন । কিন্তু তারপরই তাঁর মধ্যে এক ভাবান্তর দেখা গেল । সারাক্ষণ কী যেন গভীর ভাবনায় ডুবে থাকেন । মহাবীর (Mahavira) সংসার – ধর্ম ও ভোগ – বিলাসী জীবনের বাইরে প্রত্যক্ষ করলেন সত্যজীবনের এক উজ্জ্বল আলোকশিখাকে । মহাবীর (Mahavira) পিতার মৃত্যুর পর – পরই সংসারের মায়া ত্যাগ করে পথে বেরিয়ে পড়লেন চলে গেলেন অরণ্যে । 

মহাবীরের সিদ্ধিলাভ – Mahavira Accomplishment :

 গভীর অরণ্যে চলে গিয়ে মহাবীর একটানা বারো বছর সেখানে গভীর তপস্যা ও ধ্যানমগ্নতায় কাটালেন । সত্যের সন্ধানে মহাবীর (Mahavira) এমন গভীর ধ্যানে মগ্ন থাকতেন যে , আহার – নিদ্রার কথা তাঁর মনে থাকতো না । এভাবেই অরণ্যের গভীর নির্জনতায় মহাবীর (Mahavira) সিদ্ধিলাভ করেন সত্যের সন্ধান পান । সংসার জীবনের সবরকম লোভলালসা , হিংসা – বিদ্বেষ , ভোগ – বিলাসের প্রবৃত্তি তাঁর অন্তর থেকে অন্তর্হিত হয়ে যায় । এমন কি মহাবীর (Mahavira) জন্ম – মৃত্যু – জরা সম্পর্কে নির্মোহ হয়ে পড়েন ।

মহাবীরের জৈন ধর্মের প্রচার – Mahabir preached Jainism :

 এরপরই মহাবীর তাঁর নিজের ধর্মমত জৈনধর্ম প্রচার করতে শুরু করেন । যদিও বলা হয় মোট চব্বিশজন তীর্থঙ্কর জৈনধর্ম প্রতিষ্ঠা করেছেন । প্রথম তীর্থঙ্করের নাম ঋষভ । তিনি ছিলেন রাজা ঋষভ । তিনিই সর্বপ্রথম জৈনধর্মের মতবাদ প্রচার করেন । কিন্তু মহাবীরকে বলা হয় সর্বশ্রেষ্ট তীর্থঙ্কর এবং জৈনধর্মের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা ।

জৈন ধর্মের মূল কথাগুলি :

 জৈনধর্মের মূল কথা হলো অহিংসা এবং সৎ আচরণ । জৈনধর্ম মতে সবচেয়ে বড় পাপ হলো জীবহত্যা । জৈন ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করেন সবকিছুর মধ্যেই আত্মা বিদ্যমান । তাই আগুন জ্বাললেও যেমন জীব হত্যা করা হয় , তেমনি আগুন নির্বাপিত করলেও জীবহত্যা করা হয় । জীবহত্যা মহাপাপ । 

জৈন ধর্মের বৈশিষ্ট্য – Characteristics of Jainism :

 জৈনধর্মের আরেকটি বড় বৈশিষ্ট্য হলো — ঈশ্বর বলে কোনো কিছু নেই । সর্বশক্তিমান কোনো সত্তায় বিশ্বাস নেই জৈন ধর্মাবলম্বীদের । জৈন ধর্মের মূল ঈশ্বরআরাধনা বা স্বর্গপ্রাপ্তি নয় , মূল হলো তিনটি – সৎবিশ্বাস , সংজ্ঞান , সৎআচরণ । 

 জৈন ধর্মের প্রবর্তক বর্ধমান মহাবীর প্রায় ৭২ বছর বেঁচে ছিলেন বলে অনুমান করা হয় । তিনি শেষ জীবনে সর্বক্ষণ বনে বনে ঘুরে বেড়াতেন । পারতপক্ষে কখনো লোকালয়ে আসতেন না । কারো সাথে খুব একটা কথা বলতেন না । কোথাও বেশিক্ষণ স্থির হয়ে থাকতে পারতেন না । কোথাও এক রাতের বেশি কাটাতেন না । কথিত আছে জঙ্গলে পথ চলার সময় তিনি ঝাড় দিতে দিতে চলতেন , যাতে তার পায়ের নিচে পড়ে কোনো কীট – পতঙ্গ না মারা যায় ।

মহাবীরের পরিনির্বান লাভ :

 মোক্ষলাভের পর ত্রিশ বছর ধর্ম প্রচারে ব্রতী ছিলেন মহাবীর । অবশেষে বিহারের অন্তর্গত পাবা নগরে খ্রিঃ পূঃ ৫২৭ অব্দে তিনি পরিনির্বাণ লাভ করেন ।

মহাবীর ও বুদ্ধদেব :

 মহাবীর যেই সময়ে দেশে দেশে তার ধর্মমত প্রচার করে বেড়িয়েছেন , সেই সময়ে বুদ্ধদেবও তাঁর ধর্মমত প্রচারে রত ছিলেন । কিন্তু আশ্চর্য এই যে , সমসাময়িক কালে আবির্ভূত হয়েও তাঁদের প্রত্যক্ষ সাক্ষাৎকার কখনো ঘটেনি ।

[আরও দেখুন, গৌতম বুদ্ধের জীবনী – Gautam Buddha Biography in Bengali]

চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যও ছিলেন জৈনধর্মের পৃষ্ঠপোষক :

 মহাবীর ও বুদ্ধদেব প্রচারিত ধর্মমত অনেকাংশেই ছিল হিন্দুধর্মের মতবাদের ওপরে প্রতিষ্ঠিত । তাই উভয় ধর্মমতই ভারতের জনগণের সমর্থন লাভ করেছিল । সমসাময়িককালে অজাতশত্রুর পুত্র উদরি এবং নন্দরাজগণের পৃষ্ঠপোষকতায় মহাবীর প্রচারিত ধর্মমত বৌদ্ধধর্ম অপেক্ষা অধিক প্রসারলাভ করে । চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যও ছিলেন জৈনধর্মের পৃষ্ঠপোষক ।

শ্বেতাম্বর ও দিগম্বর :

 আচরণগত মতভেদের দরুণ খ্রিঃ পূঃ তৃতীয় শতকে জৈনগণ শ্বেতাম্বর ও দিগম্বর নামে দুটি সম্প্রদায়ে বিভক্ত হয়ে পড়েন । 

 শ্বেতাম্বরগণ বিশ্বাস করতেন ধর্মলাভে স্ত্রী পুরুষ উভয়েরই অধিকার রয়েছে । সাধনার দ্বারা সকলেই মোক্ষলাভ করতে পারে ৷ আর তারা পরিধান করতেন শ্বেতবস্ত্র । 

 দিগম্বরগণ কোনপ্রকার বস্ত্র ধারণের পক্ষপাতী ছিলেন না এবং তাঁরা মনে করতেন , একমাত্র পুরুষরাই মোক্ষলাভের অধিকারী হতে পারে ।

[আরও দেখুন, যীশু খ্রীষ্টের জীবনী – Yesu Biography in Bengali]

জৈন ধর্মগ্রন্থ কল্পসূত্র :

 শ্বেতাম্বরগণের নেতৃপদে ছিলেন স্থূলভদ্র । জৈন ধর্মগ্রন্থ কল্পসূত্র রচয়িতা ভদ্রবাহু ছিলেন দিগম্বরদের নেতা । মহাবীরের উপদেশাবলী দ্বাদশ অঙ্গ বা সিদ্ধান্ত নামক গ্রন্থে সংকলিত হয়েছে । কিন্তু দিগম্বরগণ এই গ্রন্থকে প্রামাণ্য মনে করেন না ।

মহাবীরের জীবনী – Mahavira Biography in Bengali FAQ :

  1. মহাবীর কে ছিলেন ?

Ans: মহাবীর ছিলেন জৈন ধর্মের প্রবর্তক ।

  1. মহাবীরের জন্ম কোথায় হয় ?

Ans: মহাবীরের জন্ম হয় বৈশালীতে ।

  1. মহাবীরের জন্ম কবে হয় ?

Ans: মহাবীরের জন্ম হয় খ্রীষ্টপূর্ব ৫৯৯ অব্দে মহাবীরের জন্ম । 

  1. মহাবীরের পিতার নাম কী ?

Ans: মহাবীরের পিতার নাম সিদ্ধার্থ ।

  1. মহাবীরের মাতার নাম কী ?

Ans: মহাবীরের মাতার নাম ত্রিশলা ।

  1. মহাবীর কবে পরিনির্বাণ লাভ করেন ?

Ans: মহাবীর খ্রিঃ পূঃ ৫২৭ অব্দে পরিনির্বাণ লাভ করেন।

  1. জৈন ধর্মের মূল কথা গুলি কী ?

Ans: জৈনধর্মের মূল কথা হলো অহিংসা এবং সৎ আচরণ ।

  1. শ্বেতাম্বরগণের নেতৃপদে কে ছিলেন ?

Ans: শ্বেতাম্বরগণের নেতৃপদে ছিলেন স্থূলভদ্র ।

[আরও দেখুন, আলবার্ট আইনস্টাইন জীবনী – Albert Einstein Biography in Bengali

আরও দেখুন, অ্যাডলফ হিটলার এর জীবনী – Adolf Hitler Biography in Bengali

আরও দেখুন, রাজা রামমোহন রায় জীবনী – Ram Mohan Roy Biography in Bengali

আরও দেখুন, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর জীবনী – Ishwar Chandra Vidyasagar Biography in Bengali

আরও দেখুন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জীবনী – Rabindranath Tagore Biography in Bengali]

মহাবীর এর জীবনী – Mahavira Biography in Bengali

   অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই ” মহাবীর এর জীবনী – Mahavira Biography in Bengali  ” পােস্টটি পড়ার জন্য। মহাবীর এর জীবনী – Mahavira Biography in Bengali পড়ে কেমন লাগলো কমেন্টে জানাও। আশা করি এই মহাবীর এর জীবনী – Mahavira Biography in Bengali পোস্টটি থেকে উপকৃত হবে। এই ভাবেই BhugolShiksha.com ওয়েবসাইটের পাশে থাকো যেকোনো প্ৰশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলাে করো এবং নিজেকে  তথ্য সমৃদ্ধ করে তোলো , ধন্যবাদ।