
বিশ্বায়ন (তৃতীয় অধ্যায়) দ্বাদশ শ্রেণীর রাষ্ট্রবিজ্ঞান বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর
HS Class 12 Political Science Bisnayon Question and Answer
বিশ্বায়ন (তৃতীয় অধ্যায়) দ্বাদশ শ্রেণীর রাষ্ট্রবিজ্ঞান বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | HS Class 12 Political Science Bisnayon Question and Answer : বিশ্বায়ন (তৃতীয় অধ্যায়) দ্বাদশ শ্রেণীর রাষ্ট্রবিজ্ঞান বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | HS Class 12 Political Science Bisnayon Question and Answer নিয়ে আলোচনা করা হলো। এই বিশ্বায়ন (Bisnayon) থেকে যে SAQ ও রোচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর গুলি স্টার মার্ক করা হয়েছে সেগুলো আগামী West Bengal HS Class 12th Twelve XII Political Science 4th Semester Examination – পশ্চিমবঙ্গ উচ্চমাধ্যমিক রাষ্ট্রবিজ্ঞান চতুর্থ সেমিস্টার পরীক্ষার জন্য (VVI) খুব ইম্পর্টেন্ট। উচ্চমাধ্যমিক রাষ্ট্রবিজ্ঞান পরীক্ষাতে এই সাজেশন বা কোশ্চেন বিশ্বায়ন (তৃতীয় অধ্যায়) দ্বাদশ শ্রেণীর রাষ্ট্রবিজ্ঞান বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | HS Class 12 Political Science Bisnayon Question and Answer গুলো আসার সম্ভাবনা খুব বেশি।
তোমরা যারা বিশ্বায়ন (তৃতীয় অধ্যায়) দ্বাদশ শ্রেণীর রাষ্ট্রবিজ্ঞান বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | HS Class 12 Political Science Bisnayon Question and Answer খুঁজে চলেছ, তারা এই প্রশ্ন ও উত্তর গুলো ভালো করে পড়ো এবং নীচে দেওয়া লিঙ্ক থেকে ডাউনলোড করে নাও।
| রাজ্য (State) | পশ্চিমবঙ্গ (West Bengal) |
| বোর্ড (Board) | WBCHSE, West Bengal |
| শ্রেণী (Class) | উচ্চমাধ্যমিক দ্বাদশ শ্রেণী (WB HS Class 12th) |
| বিষয় (Subject) | দ্বাদশ শ্রেণীর রাষ্ট্রবিজ্ঞান (HS Class 12 Political Science) |
| তৃতীয় অধ্যায় (3rd Chapter) | বিশ্বায়ন (Bisnayon) |
[দ্বাদশ শ্রেণীর সমস্ত বিষয়ের প্রশ্নউত্তর Click Here]
বিশ্বায়ন (তৃতীয় অধ্যায়) দ্বাদশ শ্রেণীর রাষ্ট্রবিজ্ঞান বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | West Bengal WBCHSE HS Class 12th Political Science Bisnayon 3rd Chapter Question and Answer
সংক্ষিত | বিশ্বায়ন (তৃতীয় অধ্যায়) দ্বাদশ শ্রেণীর রাষ্ট্রবিজ্ঞান বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | WB HS Class 12 Political Science Bisnayon SAQ Question and Answer:
- বিশ্বায়ন বলতে কী বোঝো? ***
Ans: বিশ্বায়ন হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে সারা বিশ্বের অর্থনীতি, সমাজ, সংস্কৃতি, প্রযুক্তি ও শাসনব্যবস্থা পারস্পরিকভাবে সংযুক্ত হয় এবং একক বৈশ্বিক ব্যবস্থায় পরিণত হয়। এটি মূলত মুক্ত বাজারনীতি, পুঁজি ও তথ্যের অবাধ প্রবাহ এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ভিত্তিতে পরিচালিত হয়।
- বিশ্বায়নের দুটি বৈশিষ্ট্য লিখো। ***
Ans: বিশ্বায়নের দুটি বৈশিষ্ট্য হলো—
- মুক্ত বাজারনীতি: পুঁজি, পণ্য, প্রযুক্তি ও সেবার আন্তর্জাতিক আদান-প্রদান বৃদ্ধি।
- যোগাযোগ বিপ্লব: উন্নত যোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহারে বিশ্ব এক সুগঠিত নেটওয়ার্কে যুক্ত।
- সাংস্কৃতিক বিশ্বায়ন বলতে কী বোঝো? ***
Ans: সাংস্কৃতিক বিশ্বায়ন হলো বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতি, ভাষা, জীবনযাত্রা ও মূল্যবোধের পারস্পরিক বিনিময়। এর ফলে বিশ্বে এক সাধারণ সংস্কৃতি গড়ে উঠছে। যেমন—ফাস্টফুড, ইংরেজি ভাষার ব্যবহার, আন্তর্জাতিক ফ্যাশন ট্রেন্ড ইত্যাদি।
- অর্থনৈতিক বিশ্বায়ন বলতে কী বোঝো? **
Ans: অর্থনৈতিক বিশ্বায়ন হলো আন্তর্জাতিক বাজারব্যবস্থার মাধ্যমে পুঁজি, পণ্য, প্রযুক্তি ও শ্রমের অবাধ চলাচল নিশ্চিত করা। এর ফলে দেশগুলো আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, বিদেশি বিনিয়োগ ও বহুজাতিক কোম্পানির প্রভাবের অধীনে আসে।
- বিশ্বায়নের ফলে রাষ্ট্রীয় ভূমিকার কী পরিবর্তন হয়েছে? **
Ans: বিশ্বায়নের ফলে রাষ্ট্রের ভূমিকা কল্যাণমূলক রাষ্ট্র থেকে ন্যূনতম রাষ্ট্রে রূপান্তরিত হয়েছে। রাষ্ট্র অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সরাসরি নিয়ন্ত্রণ কমিয়ে বেসরকারি ও বৈদেশিক সংস্থাকে সুযোগ প্রদান শুরু করেছে।
- ‘বহুজাতিক সংস্থা’ বলতে কী বোঝো? ***
Ans: যেসব সংস্থার উৎপাদন, বিপণন ও বিনিয়োগ একাধিক দেশে বিস্তৃত এবং যাদের সদর দফতর এক দেশে হলেও ব্যবসা আন্তর্জাতিক স্তরে পরিচালিত হয়, তাদের বহুজাতিক সংস্থা (MNC/Transnational Company) বলে। যেমন—গুগল, অ্যামাজন, টাটা, কোকা-কোলা।
- বিশ্বায়নের ফলে ভারতে কর্মসংস্থানের কী পরিবর্তন হয়েছে?
Ans: বিশ্বায়নের ফলে বিদেশি কোম্পানির আগমন, আউটসোর্সিং ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতের বিকাশ হওয়ায় ভারতে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে। আইটি, BPO, ব্যাংকিং, টেলিকম, রিটেইল ইত্যাদি খাতে চাকরি বৃদ্ধি পেয়েছে।
- বিশ্বায়নের ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থায় কী পরিবর্তন এসেছে?
Ans: বিশ্বায়নের ফলে ইন্টারনেট, মোবাইল নেটওয়ার্ক, উপগ্রহ প্রযুক্তি ও সোশ্যাল মিডিয়ার বিস্তারে যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিপ্লব ঘটেছে। এর ফলে পৃথিবী ‘ভুবন গ্রাম’-এ পরিণত হয়েছে।
- উদারীকরণ বলতে কী বোঝো? **
Ans: উদারীকরণ হলো অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সরকারি নিয়ন্ত্রণ শিথিল করে ব্যক্তিখাত, বিদেশি প্রতিষ্ঠান ও বাজার শক্তিকে স্বাধীনভাবে কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ প্রদান করা।
- ভারতে বিশ্বায়ন কখন শুরু হয় এবং কে এর সূচনা করেন?
Ans: ভারতে বিশ্বায়ন ১৯৯১ সালে শুরু হয়। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পি. ভি. নরসিমা রাও ও অর্থমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং অর্থনৈতিক উদারীকরণ, বেসরকারিকরণ ও বৈদেশিক বিনিয়োগ গ্রহণের নীতি চালু করেন।
রচনাধর্মী | বিশ্বায়ন (তৃতীয় অধ্যায়) দ্বাদশ শ্রেণীর রাষ্ট্রবিজ্ঞান বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | WB HS Class 12 Political Science Bisnayon Descriptive Question and Answer:
1. বিশ্বায়নের বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা করো। ***
Ans: বিশ্বায়নের বৈশিষ্ট্য:
বিশ্বায়ন এমন একটি প্রক্রিয়া যা বহুমাত্রিক (Multidimensional) অর্থাৎ এর প্রভাব জনজীবনের সর্বক্ষেত্রে পরিব্যাপ্ত। বিশ্বায়নের বৈশিষ্ট্যগুলি হল-
① মুক্ত বাজার অর্থনীতি: বিশ্বব্যাপী পুঁজির গমনাগমন বা আর্থিক লেনদেনই হল বিশ্বায়ন। মুক্ত বাজার অর্থনীতির ধারণার উপর বিশ্বায়নের প্রক্রিয়া নির্ভরশীল। এটি এমন এক বৈশ্বিক মুক্ত বাজার যেখানে পণ্য, পুঁজি, প্রযুক্তি ও পরিসেবার গমনাগমন রাষ্ট্রীয় সীমার দ্বারা আবদ্ধ নয়। এ ছাড়া এই নীতি অনুসরণ করার ফলে শুল্কের হার কমানো, শেয়ার বাজারের উপর সরাসরি নিয়ন্ত্রণ শিথিল এবং একচেটিয়া বেসরকারি সংস্থাগুলিকে নানা সুযোগসুবিধা ও অধিকার প্রদান করা ইত্যাদির প্রবণতা দেখা যায়।
② উদারীকরণ, বেসরকারিকরণ ও বিলগ্নিকরণ: বিশ্বায়নের অবশ্যম্ভাবী ফল হল উদারীকরণ, বেসরকারিকরণ ও বিলগ্নিকরণ। যেসমস্ত রাষ্ট্র মিশ্র অর্থনীতির অনুসারী ছিল তারা উদারীকরণের পথে অগ্রসর হতে বাধ্য হয়। পূর্বেকার সংরক্ষণবাদের অবসান ঘটে এবং জাতীয় বাজারগুলি আন্তর্জাতিক বাজারের প্রয়োজনে নিজেদের উন্মুক্ত করতে বাধ্য হয়।
③ রাষ্ট্রীয় সীমানার উন্মুক্তকরণ: বিশ্বায়নের সংরক্ষণবাদের বিরোধিতা করে এবং বিদেশি পণ্য ও পরিসেবার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় সীমানা উন্মুক্ত করার কথা বলে। জাতীয় বাজার ও দেশীয় পণ্যের বিকাশের জন্য রাষ্ট্র কর্তৃক আরোপিত সংরক্ষণমুখী বিধিনিষেধকে অকাম্য বলে মনে করা হয়। স্কট বার্চিল-এর মতো তাত্ত্বিকেরা সংরক্ষণবাদকে জাতীয় স্বার্থবিরোধী বলে মনে করেন।
④ বহুজাতিক সংস্থার আধিপত্য প্রতিষ্ঠা: বিশ্বায়ন জাতীয় সীমানা অতিক্রমকারী আন্তঃরাষ্ট্রীয় নজরদারিমূলক ও নিয়ন্ত্রণমূলক প্রতিষ্ঠানগুলির প্রভাব বৃদ্ধি করেছে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানগুলি যেমন-GATT, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা, বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক অর্থভান্ডার ইত্যাদির গুরুত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে এবং অনেকসময় এরা উন্নয়নশীল দেশের রাজস্ব নীতি, এমনকি প্রশাসনিক সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করছে। এপ্রসঙ্গে বিশ্বব্যাংকের কাঠামোগত সমঝোতার নীতির উল্লেখ করা যায় যা তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলির উপর ঋণদানের শর্ত হিসেবে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে।
⑤ সরকারি ভূমিকাকে চ্যালেঞ্জ: অনেকের মতে বিশ্বায়ন রাষ্ট্রীয় সীমানার পরম্পরাগত অলঙ্ঘনীয়তার ধারণাকে অসার প্রতিপন্ন করেছে। বিশ্বায়ন বিশ্বব্যাপী চাহিদা ও দাবির সর্বজনীনতার মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রের বহুমুখী কার্যসম্পাদনকারী ভূমিকাকে চ্যালেঞ্জও জানিয়েছে।
⑥ উদারীকরণ : বিশ্বায়নের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল উদারীকরণ। উদারীকরণের মূল কথা হল দেশের অর্থনৈতিক কার্যক্রমকে সরকারি প্রভাব থেকে মুক্ত রাখা। এটি ছাড়া বিশ্বায়ন অসম্পূর্ণ বা অসফল। এর মাধ্যমে বানিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে রাষ্ট্র সরকারি নিয়ন্ত্রণ ও বিধিনিষেধ শিথিল করে বা অপসারণ করে। ফলত বিশ্বের উন্নত রাষ্ট্রগুলি বহুজাতিক সংস্থার মাধ্যমে উন্নয়নশীল দেশগুলির বাজার দখল করতে বিশেষভাবে উদ্যোগী। যা জাতীয় অর্থনীতিকে বিশ্ব বাজারের সঙ্গে যুক্ত করতে সহায়তা করে।
⑦ ভুবন গ্রাম প্রতিষ্ঠা: বিশ্বায়নের ফলে যোগাযোগ বিপ্লব সাধিত হয়েছে। বৈদ্যুতিন যোগাযোগ ব্যবস্থার বিপ্লব দূরত্ব ও সময়ের ব্যবধান। বেশ অনেকটাই হ্রাস করেছে এবং ভুবন গ্রাম প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হয়েছে।
পরিশেষে উল্লেখ্য যে, বিশ্বায়ন বিশ্বব্যাপী মুক্ত বাজার অর্থনীতি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে একদিকে যেমন প্রতিটি দেশের পণ্য ও পরিসেবা নীতির পরিবর্তন এনেছিল, তেমনি অন্যদিকে বিভিন্ন দেশের সাংস্কৃতিক সম্পদ ও জ্ঞানের আদানপ্রদানের মাধ্যমে একটা বৈশ্বিক নাগরিক সমাজের রূপরেখা নির্মাণ করেছিল।
2. রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্বের উপর বিশ্বায়নের প্রভাব আলোচনা করো। ***
Ans: রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্বের উপর বিশ্বায়নের প্রভাব:
বিশ্বায়নের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমিকতার বিষয়টি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাই রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্বের উপর বিশ্বায়নের প্রভাব নিম্নে আলোচনা করা হল-
রাষ্ট্রীয় সার্বাভৗমিকতার অপসারণ: রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব বা সার্বভৌম ক্ষমতার উপরে বিশ্বায়ন কতটা প্রভাব ফেলেছে, এই বিষয়টি বিশ্লেষণ করে প্রথমেই বলা যায়, বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ার পূর্বে পৃথিবীতে জাতিরাষ্ট্রের (Nation State) যে অসীম সার্বভৌম ক্ষমতা ছিল, বিশ্বায়ন পরবর্তী সময়ে তা অনেকটাই খর্ব হয়েছে। সারা পৃথিবী জুড়ে ‘কল্যাণমূলক রাষ্ট্র’ বা ‘Welfare state’-এর কাঠামো বদলে গিয়ে বিশ্বায়নের যুগে রাষ্ট্র ‘ন্যূনতম রাষ্ট্রে’ পরিণত হয়েছে। এই নতুন রাষ্ট্র এখন তার কাজকর্মের পরিধিকে অনেকটা গুটিয়ে ফেলেছে। আগে নাগরিকদের জন্য রাষ্ট্র যে বহুরকমের সামাজিক ও অর্থনৈতিক কর্মসূচি রূপায়িত করত এখন তা সীমিত। কারণ আজকের দিনে কোনো রাষ্ট্র এককভাবে চলতে পারে না। একমেরুকেন্দ্রিক বিশ্বে পারস্পরিক নির্ভরশীলতা ও আঞ্চলিকীকরণের প্রভাব বৃদ্ধি পেয়েছে। যার সঙ্গে তাল মিলিয়ে রাষ্ট্রগুলিকে চলতে হয়।
উন্মুক্ত বাজার এ অবাধ বাণিজ্য: বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে রাষ্ট্রের জায়গা নিয়েছে বাজার। সারা বিশ্বের বহুজাতিক কোম্পানিগুলি যেভাবে তাদের কর্তৃত্ব বাড়িয়ে চলেছে তাতে কর্পোরেট দুনিয়ায়। রাষ্ট্রের ক্ষমতা অনেকটা হ্রাস পেয়েছে।
আন্তর্জাতিক সম্পর্কের লেখকরা মনে করেন। বিশ্বায়ন জাতিরাষ্ট্রের সাবেকি সার্বভৌম ক্ষমতাকে খর্ব করে তাকে একটি ‘বাজারকেন্দ্রিক সংগঠনে পরিণত করতে চায়। অবশ্য জাতিরাষ্ট্রের বিলুপ্তি ঘটিয়ে ‘বিশ্বরাষ্ট্র’ প্রতিষ্ঠার কোনো উদ্যোগ বিশ্বায়নে দেখা যায় না। কিন্তু পণ্যের অবাধ বাজার, রাষ্ট্রীয়করণের জায়গায় বেসরকারিকরণ, উদারীকরণ, বিদেশি পুঁজি লগ্নি, বিদেশি বহুজাতিক কোম্পানিগুলিকে ব্যাবসা করার অনুমতি প্রদান ইত্যাদি পদক্ষেপ গ্রহণে রাষ্ট্র বাধ্য হয়েছে।
অর্থনৈতিক আগ্রাসন: বিশ্বায়নের ফলে নয়া বিশ্বব্যবস্থা চালু হওয়ার পরে পুঁজি বা শ্রমের অবাধ চলাচল অনুমোদিত হয়েছে, তথ্যপ্রযুক্তি বা আউটসোর্সিং-এর মাধ্যমে এক দেশ থেকে অন্য দেশে কাজ হচ্ছে, এক দেশের দক্ষ শ্রমিক অন্য দেশে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে সরকারের বা রাজ্যের তেমন কোনও ভূমিকা নেই। এই কারণে অনেকে মনে করেন, সার্বভৌম জাতিরাষ্ট্রের স্বাধীন অর্থনৈতিক নীতি গ্রহণের ক্ষমতা কর্পোরেট দুনিয়ার দাপটে যথেষ্ট ক্ষুণ্ণ হয়েছে।
বহুজাতিক সংস্থার প্রভাব: সারা বিশ্বজুড়ে উন্মুক্ত বাণিজ্য নীতি গ্রহণের ফলে বিভিন্ন বহুজাতিক সংস্থাগুলি তাদের উদ্যোগ আয়োজন সম্প্রসারিত করেছে। বহুজাতিক সংস্থার উদ্যোগপতিরা খুব সহজেই বিপুল পরিমাণ পুঁজি বিনিয়োগ করতে পারে যা উন্নয়নশীল দেশের কোনো শিল্পনীতির পক্ষে যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। ফলে একপ্রকার বাধ্য হয়েই অনেক দেশ তাদের পররাষ্ট্রনীতি এবং জাতীয় নীতি নির্ধারণের বিষয়ে বহুজাতিক সংস্থার মতামত গ্রহণ করে।
পারমাণবিক ভীতি: বর্তমান যুগ হল পারমাণবিক অস্ত্রের যুগ। বিশ্বের বহু দেশ আজ পারমাণবিক শক্তিতে বলীয়ান। ফলে সাবেকি সমরাস্ত্রে কোনো রাষ্ট্র শক্তিশালী হলেও তাকে সহজেই পরমাণু অস্ত্রের আঘাতে ধ্বংস করে দেওয়া যায়। বর্তমানে পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্রগুলির কাছে আন্তর্জাতিক ক্ষেপণাস্ত্র, পারমাণবিক বোমা প্রভৃতি রয়েছে। এই অস্ত্রশস্ত্রের মাধ্যমে তারা বিভিন্ন দুর্বল রাষ্ট্রকে ভীতি প্রদর্শন করতে এবং তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাজ করিয়ে নিতে সক্ষম হয়। তাই বলাই যায় প্রযুক্তিগত উন্নতি ভূখণ্ডগত রাষ্ট্রব্যবস্থাকে অপ্রাসঙ্গিক করে তুলেছে।
কাঠামোগত পুনর্বিন্যাস: দ্বিমেরুকেন্দ্রিক বিশ্বে দরকষাকষির মাধ্যমে উন্নয়নশীল দেশগুলি কিছু পরিমাণে স্বাধীনভাবে অভ্যন্তরীণ নীতি নির্ধারণ ও কার্যকর করতে পারত। কিন্তু বিশ্বায়নের ফলে এবং বর্তমানে একমেরুকেন্দ্রিক বিশ্বে উন্নয়নশীল দেশগুলি স্বাধীনভাবে অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক নীতি অনুসরণ করতে পারছে না। উন্নত রাষ্ট্রসমূহ ছাড়াও আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডার, বিশ্বব্যাংক এবং বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নির্দেশে উন্নয়নশীল দেশসমূহকে কাঠামোগত পুনর্বিন্যাস সাধন করতে বাধ্য করা হয়েছে। মূলত কাঠামোগত পুনর্বিন্যাসের ফলে দারিদ্র্য, বেকারত্ব এবং সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা প্রভৃতি বৃদ্ধি পেয়েছে। অর্থাৎ বিশ্বায়নের ফলে কাঠামোগত পুনর্বিন্যাসে বাধ্য হওয়ায় রাষ্ট্রগুলির অভ্যন্তরীণ রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমিকতা যথেষ্ট পরিমাণে ক্ষুণ্ণ হয়েছে।
উক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় বিশ্বায়ন নিঃসন্দেহে রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমিকতাকে ক্ষুণ্ণ করেছে।
3. ভারতে বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ার বিবর্তন সম্পর্কে লেখো। ***
Ans: ভারতে বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ার বিবর্তন:
ভারতে বিশ্বায়ন প্রক্রিয়া ১৯৯০-এর দশক থেকে গৃহীত হয়েছে। এরপর দীর্ঘ তিন দশক অতিক্রম করে বর্তমান রূপ লাভ করেছে। সংক্ষেপে এই বিবর্তন সম্পর্কে আলোচনা করা হল-
স্বাধীনতার পূর্বে বিশ্বায়ন: ঠান্ডাযুদ্ধের পরবর্তীকালে ভারতে বিশ্বায়ন আনুষ্ঠানিকভাবে গৃহীত হলেও প্রাচীন ভারতেও বিশ্ব বাণিজ্যের সন্ধান পাওয়া যায়। রেশম পথ, আন্তঃসাহারান বাণিজ্য পথ, ভারত মহাসাগরের মাধ্যমে রেশম, মশলা, সোনা, হাতির দাঁত ইত্যাদি পণ্যের আদানপ্রদান সম্ভব হয়েছিল। এ ছাড়া সাংস্কৃতিক ও ধর্মগত আদানপ্রদানও গড়ে উঠেছিল। আবার ব্রিটিশ শাসনকালের ঔপনিবেশিক যুগে ভারত থেকে কাঁচামাল ও অন্যান্য দ্রব্য বিদেশে রফতানি হত। বিদেশ থেকেও মিলে উৎপাদিত বস্ত্র ও অন্যান্য পণ্য ভারতে আমদানি করা হত। এইভাবে বিশ্ব বাণিজ্য চলত।
স্বাধীন ভারতে বিশ্বায়ন: তবে স্বাধীন ভারতে বিদেশি নির্ভরতা হ্রাস করতে আমদানি বিকল্প শিল্প গড়ে তোলার ব্যবস্থা করা হয়। ফলে স্বাধীন ভারতে দেশীয় শিল্প স্থাপনের চেষ্টা শুরু হয়। স্বাধীনতার পরবর্তী সময় থেকে প্রায় দীর্ঘ ৪০ বছর শিল্পক্ষেত্রে এক চরম ও ব্যাপক সরকারি নিয়ন্ত্রণ বিদ্যমান ছিল (লাইসেন্স রাজ বা পারমিট রাজ)। যে-কোনো ব্যক্তি মালিকানাধীন শিল্প পরিচালনা করার জন্য ব্যক্তিকে সরকারের থেকে লাইসেন্স বা পারমিট গ্রহণ করতে হত। রাজীব গান্ধি এই বিষয়ে পরিবর্তন সাধন করেন এবং দেশীয় শিল্পপতিদের করের বোঝা কমানো, ব্যক্তি মালিকানাধীন শিল্পে নানা ধরনের অর্থনৈতিক সুযোগসুবিধা প্রদান করার কথা বলেন। এ ছাড়া টেলিকমিউনিকেশন ক্ষেত্রেও তাঁর হাত ধরে বিপ্লব আসে। অর্থাৎ ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধি সর্বপ্রথম দেশের জাতীয় অর্থনীতিতে পরিবর্তন আনার উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
রাজীব গান্ধির আমলে বিশ্বায়নের সূচনা হলেও ভারতে প্রকৃত বিশ্বায়ন ঘটে প্রধানমন্ত্রী নরসিমা রাও-এর আমলে। ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দে নরসিমা রাও প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তাঁর অর্থমন্ত্রী মনমোহন সিং বিশ্বায়নের শর্ত মেনে ভারতের শিল্প ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বিশ্ববাজারের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলার উদ্যোগ নেন। ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দের জাতীয় শিল্পনীতিতে তার প্রমাণ পাওয়া যায়। এই পর্বে ভারতের অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে বিশ্বায়নের প্রভাব স্পষ্ট হতে থাকে। উদারীকরণ, বেসরকারিকরণ ও পরিসেবা ক্ষেত্রে সরকারি ব্যয় সংকোচের ফলে ভারতের অর্থনীতির ক্ষেত্রে সমৃদ্ধি এবং প্রযুক্তিগত বিকাশ ঘটে।
এই সময় পরম্পরাগত সংরক্ষরণবাদী, রাষ্ট্র নির্দেশিত অর্থনীতির পরিবর্তে ভারত সরকার ‘মুক্ত’ বা ‘অবাধ বাজার’ ভিত্তিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার দিকে অগ্রসর হতে শুরু করে। এর ফলস্বরূপ ভারতে একদিকে যেমন প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (Foreign Direct Investment বা FDI)-এর দ্বার উন্মুক্ত হয়, তেমনই অন্যদিকে ভারতের জাতীয় অর্থনীতির সঙ্গে বিশ্ব অর্থনীতির বন্ধন দৃঢ়তর হয়।
পরবর্তীকালে বিজেপির নেতৃত্বে NDA জোট ক্ষমতায় এলে অটলবিহারী বাজপেয়ী ভারতের প্রধানমন্ত্রী হন। এই সময় বিশ্বায়নের প্রভাবে ভারতে প্রচুর পরিমাণে বিদেশি বিনিয়োগ হতে থাকে। বিশেষ করে বিমা, ব্যাংক, বিমান প্রভৃতি ক্ষেত্রগুলি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। শুধু তাই নয় বিদেশি পুঁজিপতিরা ভারতকে আকর্ষণ করার জন্য নানান উদ্যোগ গ্রহণ করে এবং পুঁজি বিনিয়োগের আহবান জানায়। সরকার সবকিছুতেই চুক্তিভিত্তিক কর্মী নিয়োগ করে জনগণের জন্য সরকারি পরিসেবা প্রদান কমিয়ে ফেলে।
4. ভারতে অর্থনৈতিক বিশ্বায়নের ইতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে আলোচনা করো।
অথবা, ভারতে অর্থনৈতিক বিশ্বায়নের সুফলগুলি লেখো। ***
Ans: ভারতে অর্থনৈতিক বিশ্বায়নের সুফল:
বিশ্বায়ন একটি অর্থনৈতিক প্রক্রিয়া। এটি মূলত অর্থনৈতিক একীকরণের উদ্দেশ্যকে কেন্দ্র করে আবির্ভূত হয়। বিশ্বায়নের ফলে সামাজিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষাগত, পরিবেশগত এবং রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নানা প্রভাব পরিলক্ষিত হলেও অর্থনৈতিক প্রভাব সর্বাধিক। ভারতে অর্থনৈতিক বিশ্বায়নের ইতিবাচক প্রভাবগুলি হল-
① অর্থানতিক সমৃদ্ধি: বিশ্বায়নের প্রভাবে ১৯৯০-এর দশকের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ, মুক্ত বাণিজ্য এবং আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন ভারতের আর্থিক বৃদ্ধির গতিকে ত্বরান্বিত করেছিল।
সরাসরিভাবে বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাওয়ায় ভারতীয় অর্থনীতির সাবেকি চেহারায় বদল এসেছে। নাগরিকদের ভোগ্যপণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশের জিডিপি বা মোট জাতীয় উৎপাদনের ক্রমবর্ধমানতা লক্ষ করা যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডার এবং নীতি আয়োগ প্রদত্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী ভারত বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনৈতিক দেশ।
② বাণিজ্যিক সম্প্রসারণ: বিশ্বায়নের ফলে ভারতের বাণিজ্যিক ক্ষেত্রটি সম্প্রসারিত হয়েছে। অর্থাৎ বিশ্বব্যাপী ভারতীয় পণ্যের রফতানি বৃদ্ধি পেয়েছে। দৃষ্টান্তস্বরূপ ওষুধ, বস্ত্র, কৃষিপণ্য ইত্যাদি রফতানির কথা বলা যায়। বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার সুযোগে বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী রফতানির ক্ষেত্রে ভারত আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগীমূলক হতে পেরেছে।
③ বিনিয়োগ বৃদ্ধি: বিশ্বায়নের মাধ্যমে ভারতের শিল্প খাতে বিদেশি বিনিয়োগ তথা FDI-এর পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং বিদেশি পুঁজি প্রবাহ সহজতর হয়েছে। আবার ভারতও বিভিন্ন দেশে বিনিয়োগ করে কলকারখানা স্থাপন করেছে। যেমন- টাটা গোষ্ঠী শ্রীলঙ্কায় তাজ হোটেল স্থাপন করেছে। তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা ইনফোসিস টিসিএস (TCS)-ও বর্তমানে MNC কোম্পানিতে। পরিণত হয়েছে।
④ কৃষিব্যবস্থার উন্নয়ন: বিশ্বায়নের কারণে কৃষির উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে কৃষকরা আন্তর্জাতিক বাজারে ফসল বিক্রয় করে তাদের আয় বৃদ্ধি করতে সমর্থ হয়েছে। এজন্য তাদের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নতি ঘটেছে। পাশাপাশি, ভারত সরকার বিশ্বায়নের প্রভাব মোকাবিলা করার জন্য কৃষি ভরতুকি, কৃষির সরঞ্জাম কেনার জন্য। ঋণপ্রদান, কৃষি প্রযুক্তিজ্ঞান প্রদানের ব্যবস্থা করেছে।
⑤ শ্রমবাজার ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি: বিশ্বায়নের ফলস্বরূপ বহু বিদেশি কোম্পানি বা বহুজাতিক সংস্থাগুলি ভারতে তাদের ইউনিট স্থাপন করেছে। ফলে ভারতের শ্রমবাজারে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। যেমন- মার্কিন কোম্পানি অ্যাপেল ব্যাঙ্গালোরে কারখানা স্থাপন করেছে, এ ছাড়া গুগল, মাইক্রোসফ্ট, অ্যামাজন, টেসলা, সুইস কোম্পানি নেস্টলে ইত্যাদির কথা বলা যায়।
⑥ প্রযুক্তিগত অগ্রগতি ও উদ্ভাবন: বিশ্বায়ন ভারতের প্রযুক্তিগত অগ্রগতি ও উদ্ভাবনকে আরও বিকশিত করেছে। ভারত বিশ্বব্যাপী তথ্যপ্রযুক্তি পরিসেবায় নিজেকে পাওয়ার হাউস হিসেবে তুলে ধরেছে। বর্তমানে ভারত বিশ্বের বৃহত্তম আই টি (IT) আউটসোর্সিং হাব। ২০২২-২০২৩ সালে অর্থবর্ষে ভারতের আই টি রফতানি ১৯৪ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছে গেছে। এর ফলে আউটসোর্সিং এবং বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং (BPO)-এর মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে।
বর্তমানে ভারত মহাকাশ প্রযুক্তিতেও ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে। উদাহরণ হিসেবে ‘ইসরো’ (ISRO)-র চন্দ্রযান ৩-এর সফল উৎক্ষেপণের কথা বলা যায়। অন্যদিকে বিশ্বায়নের ফলে ভারতে ব্যাংকিং ও আর্থিক ক্ষেত্রে উন্নতি হয়েছে। নেট বা মোবাইল ব্যাংকিং, ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেম-এর মাধ্যমে আর্থিক লেনদেন বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে UPI-এর মাধ্যমে ‘ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেম’ ভারতকে আর্থিক প্রযুক্তির ক্ষেত্রে শীর্ষস্থানীয় দেশ হিসেবে তুলে ধরেছে।
⑦ বিশ্বব্যাপী সংযোগ ও বাজারের বিস্তার:
বিশ্বায়নের মাধ্যমে ভারত বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক, প্রযুক্তিগত ও কূটনৈতিক সম্পর্ক শক্তিশালী করেছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও দেশ ভারতের উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করছে। বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলিও ভারতীয় শিক্ষা বাজারে প্রবেশের সুযোগ পেয়েছে, ফলে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রেও পরিবর্তন এসেছে।
⑧ উদ্যোক্তা সৃষ্টি ও স্টার্ট-আপ সংস্কৃতি:
বিশ্বায়নের প্রভাবে ভারত আজ বিশ্বের অন্যতম স্টার্ট-আপ হাব। ডিজিটালাইজেশন, বিদেশি বিনিয়োগ, প্রযুক্তির সহজলভ্যতা এবং বৈশ্বিক বাজারে প্রবেশাধিকার উদ্যোক্তা বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়েছে। ভারত এখন “স্টার্ট-আপ নেশন” হিসেবে পরিচিত।
উপসংহার:
সার্বিকভাবে বিশ্বায়ন ভারতের অর্থনৈতিক কাঠামোকে পরিবর্তিত করেছে। বিদেশি পুঁজি, প্রযুক্তি, কর্মসংস্থান ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির মাধ্যমে ভারত একটি শক্তিশালী – উদীয়মান বৈশ্বিক অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছে।
5. বিশ্বায়ন কাকে বলে?
অথবা, বিশ্বায়নের অর্থ ও সংজ্ঞা লেখো। ***
Ans: বিশ্বায়নের সংজ্ঞা: Globalisation-এর বাংলা প্রতিশব্দ হল বিশ্বায়ন। ‘বিশ্বায়ন’ হল একটি বহুমাত্রিক শব্দ। যার ব্যাপ্তি রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ইত্যাদি ক্ষেত্রে লক্ষ করা যায়। বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানী তাঁদের তত্ত্বে বিশ্বায়ন সম্পর্কে বিভিন্ন মতামত প্রদান করেছেন। স্বভাবতই এর একমাত্রিক সংজ্ঞা নির্দেশ করা সহজসাধ্য নয়। নিম্নে বিশ্বায়নের সংজ্ঞা সম্পর্কে বিশদে আলোচনা করা হল।
অ্যান্টনি গিডেনস-এর অভিমত: সমাজবিজ্ঞানী অ্যান্টনি গিডেন্স (Anthony Giddens) বিশ্বায়নের সংজ্ঞা প্রসঙ্গে বলেছেন, এটি হল এমন একটি প্রক্রিয়া যা বিশ্বব্যাপী সম্পর্কের তীব্রতা বৃদ্ধি করে, যার পরিণতিতে বহুদূরের ঘটনা দ্বারা যেমন স্থানীয় ঘটনা প্রভাবিত হয়, তেমনি বিপরীতভাবে দূরের ঘটনাও স্থানীয় বিষয়ের দ্বারা প্রভাবিত হয়। গিডেন্স-এর মতে, বিশ্বায়নের মূল চালিকাশক্তি হল আধুনিকতাপ্রসূত চারটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা -পুঁজিবাদ, শিল্পায়ন, নজরদারি ও সামরিক নিয়ন্ত্রণ।
রোল্যান্ড রবার্টসন-এর অভিমত: বিশ্বায়নের ধারণার অন্যতম প্রবর্তক রবার্টসন (Roland Robertson) বলেছেন, বিশ্বায়ন হল বিশ্বের সংকোচন এবং বিশ্বজোড়া পরস্পর নির্ভরশীলতার অবস্থা। তাঁর মতে, বিশ্বায়ন হল পৃথিবীর বিভিন্ন রাষ্ট্রগুলির মধ্যে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, সামরিক ইত্যাদি ক্ষেত্রে পারস্পরিক নির্ভরশীলতার অবস্থা।
দীপক নায়ার-এর অভিমত: দীপক নায়ার (Deepak Nayyer) -এর মতে, বিশ্বায়ন হল এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক মুক্ত পরিবেশ এবং বিশ্ব অর্থনীতির অঙ্গীভূত দেশগুলির মধ্যে গভীর অর্থনৈতিক সমন্বয় জড়িত থাকে।
জোসেফ স্টিগলিৎজ-এর ভাভিমত: জোসেফ স্টিগলিৎজ (Joseph Stiglitz)-এর মতে, বিশ্বায়ন হল বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও জনগণের মধ্যে এক নিবিড় সংযোগসাধনের প্রক্রিয়া, যা পরিবহণ ও যোগযোগের ব্যয় ব্যাপকভাবে হ্রাস করেছে। একইসঙ্গে দ্রব্যসামগ্রী, পরিসেবা, পুঁজি, জ্ঞান এমনকি বিশ্বজুড়ে মানুষের অবাধ চলাচলের অধিকারের উপর আরোপিত কৃত্রিম প্রতিবন্ধকতাকেও দূর করেছে।
ডেভিড হেল্ড-এর অভিমত: ডেভিড হেল্ড (David Held) বিশ্বায়নের কার্যকলাপকে মিথস্ক্রিয়া ও ক্ষমতার আন্তর্মহাদেশীয় কিংবা আন্তঃআঞ্চলিক প্রবাহ নেটওয়ার্ক বলে বর্ণনা করেছেন।
পিটার মারকাস-এর অভিমত: পিটার মারকাস (Peter Marcus)-এর মতে বিশ্বায়ন হল পুঁজিবাদের এমন একধরনের বিশেষ রূপ যা ভৌগোলিক এবং মানবজীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ক্রমবর্ধমানভাবে পুঁজিবাদী সম্পর্কের সম্প্রসারণ ঘটায়।
গ্রহণযোগ্য সংজ্ঞা: সাধারণ অর্থে বিশ্বের এক প্রান্তের মানুষের সঙ্গে অন্য নানা প্রান্তের বা দেশের অবাধ বাণিজ্যিক, সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক যোগাযোগ, পারস্পরিক আদানপ্রদান-সহ বাজার অর্থনীতির প্রভাবপ্রতিক্রিয়াই হল বিশ্বায়ন।
6. বিশ্বায়নের কারণ সম্পর্কের আলোচনা করো। ***
Ans: বিশ্বায়নের কারণ:
বিশ্বায়ন হল একটি বিশ্বব্যাপী বহমান প্রক্রিয়া। নিম্নে বিশ্বায়নের কারণগুলি সম্পর্কে আলোচনা করা হল।
① বিশ্বব্যাপী মতাদর্শের আবির্ভাব : বিশ্বায়নের আবির্ভাবের একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হল-সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন। সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের পতনের পর বিশ্বে দ্বিমেরুর স্থান দখল করল একমেরু এবং বিশ্বব্যাপী একটিমাত্র মতাদর্শ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠল, সেটি হল পুঁজিবাদী দুনিয়ার মদতে গড়ে ওঠা নয়া উদারনীতিবাদ। বিশ্ববাসী আজ উপলব্ধি করতে পেরেছে যে, পুঁজিবাদী দুনিয়ার নেতৃত্বে পরিচালিত বিশ্বায়নের প্রভাব থেকে নিজেদেরকে সরিয়ে রাখা যাবে না। এই কারণেই বিশ্বায়নের ফলে মূলধনের সচলতা সহজেই উৎপাদিত দ্রব্যসমূহকে বিশ্ববাজারে উপস্থিত ও বিক্রয় করতে সক্ষম করে তুলেছে।
② রাষ্ট্রগুলির পরিবর্তে সংস্থাগুলির সদর্থক ভূমিকা: বিশ্বায়নের আবির্ভাবের অন্যতম একটি কারণ হল, রাষ্ট্রনেতা, রাজনীতিবিদ ও প্রশাসকগণের দৃষ্টিভঙ্গি ও চিন্তাধারার পরিবর্তন। এরা মনে করেন, উন্নয়নে রাষ্ট্রের ভূমিকা ক্রমাগত ক্ষীণ হয়ে আসছে । তার পরিবর্তে আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল (IMF) এবং উন্নয়ন ও পুনর্গঠনের নিমিত্ত আন্তর্জাতিক ব্যাংক (IBRD) প্রভৃতি সংস্থাগুলি বিশ্বের অর্থব্যবস্থার পুনরুজ্জীবন ও পুনর্গঠনের জন্য সদর্থক ভূমিকা পালন করেছে।
③ প্রযুক্তির উন্নতি: বিংশ শতকের ৮০-এর দশকে বা তার পরবর্তীকালে বিজ্ঞান, প্রযুক্তিবিদ্যা, কারিগরি কৌশল ইত্যাদি ক্ষেত্রে অভুতপূর্ব বিপ্লব এসেছিল। মূলধন ও প্রযুক্তিগত কৌশলের আদানপ্রদান আজ বিশ্বজনীন হয়েছে। মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট, ই-মেল ইত্যাদির মতো যোগাযোগ প্রযুক্তির দ্রুত অগ্রগতির ফলে বিশ্বব্যাপী জনগণের মধ্যে সহজ যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে। ফলে শিল্পসমৃদ্ধ দেশগুলির পক্ষে পুঁজি ও কারিগরি কৌশলকে ব্যবহার করে বিভিন্ন দেশে বাণিজ্য ও লোক নিয়োগ করা সহজ হয়েছে। এই প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে এবং কৃত্রিম উপগ্রহ যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলে বিশ্বায়নকে আরও বেশি গতিশীল করে তুলেছে।
④ রাজনৈতিক সম্পর্ক ও আন্তর্জাতিক চুক্তি: বিশ্বায়নের আবির্ভাবের অন্যতম একটি কারণ হল বিশ্বের রাষ্ট্রনেতা, প্রশাসক ও রাজনীতিবিদদের মধ্যে বহু আলোচনা ও আন্তর্জাতিক চুক্তি স্থাপন। যার ফলে বহুদেশ একে অপরের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি, অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও সাংস্কৃতিক বিনিময় ঘটাচ্ছে যা বিশ্বায়নের গতিকে আরও দ্রুততর করেছে।
⑤ অর্থনৈতিক উন্নয়ন: বিশ্বায়নের আবির্ভাবের গুরুত্বপূর্ণ কারণ হল অর্থনৈতিক উন্নতির বিকাশ। বিশ্বায়ন নামক বিশ্বব্যাপী প্রবহমান প্রক্রিয়ায় রাষ্ট্রগুলির উপর আরোপিত কৃত্রিম বাধানিষেধ শিথিল হয়েছে। ফলে রাষ্ট্রগুলি ন্যূনতম রাষ্ট্রে (Minimal state)-এ পরিণত হয়েছে। পাশাপাশি বিশ্ববাজারে পণ্য ও পরিসেবামূলক আদানপ্রদান বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে বহুজাতিক কোম্পানিগুলি আন্তর্জাতিক স্তরে ব্যবসা করছে। এর ফলে সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক বিশ্বায়ন দ্রুত প্রসারিত হয়।
⑥ সাংস্কৃতিক আদানপ্রদান : বর্তমানে প্রতিটি রাষ্ট্র তার সংস্কৃতি চর্চার নিজস্বতা দাবি করতে পারে না। এক্ষেত্রে একটি বিশ্বময়তার ছবি পরিলক্ষিত হতে দেখা গেছে। এক দেশের সংস্কৃতি অন্য দেশে খুব সহজেই ছড়িয়ে পড়ছে। নাচ, গান, চলচ্চিত্র, খবর, ফ্যাশান, বিজ্ঞাপন ইত্যাদির মাধ্যমে এক দেশের সংস্কৃতি অন্য দেশে ছড়িয়ে পড়ছে, ফলে সংস্কৃতিচর্চার ক্ষেত্রে কোন রাষ্ট্র আজ নিজস্বতা দাবি করতে পারছেন না। এক্ষেত্রে একটি বিশ্বগ্রাম ব্যবস্থায় সংস্কৃতি চর্চার একটি অভিন্ন পরিবেশ তৈরি হয়েছে। ফলে বলা যায় সংস্কৃতির আদান প্রদান বিশ্বায়নের আবির্ভাবের অন্যতম একটি কারণ।
7. বিশ্বায়নের বিভিন্ন দিকগুলি সম্পর্কে আলোচনা করো।
অথবা, বিশ্বায়নের বিভিন্ন রূপগুলির পর্যালোচনা করো।
অথবা, বিশ্বায়নের প্রকৃতি আলোচনা করো। ***
Ans: বিশ্বায়নের বিভিন্ন রূপ: বিশ্বায়ন হল একটি আন্তর্জাতিক তথা বিশ্বব্যাপী প্রক্রিয়া। রবসনের মতানুযায়ী, বিশ্বায়নের ধারণায় পৃথিবী ছোটো হয়ে আসে, সমগ্র দুনিয়া সম্পূর্ণ একটি একক হিসেবে গণ্য করার চেতনা সৃষ্টি হয়। নিম্নে বিশ্বায়নের বিভিন্ন রূপগুলি সম্পর্কে আলোচনা করা হল।
① অর্থনৈতিক বিশ্বায়ন: বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ার মূলে রয়েছে তার অর্থনৈতিক প্রকৃতি। বিশ্বায়নের অর্থনৈতিক প্রক্রিয়াকে বাস্তবায়িত করতে যে সংস্থাগুলি প্রধান ভূমিকা গ্রহণ করে তার মধ্যে রয়েছে আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডার, বিশ্বব্যাংক এবং বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ার মূল দিকগুলি হল-বিশ্বজুড়ে মুক্ত বাণিজ্যের দ্রুত প্রসার, লগ্নি পুঁজির অবাধ চলাচল, বহুজাতিক বাণিজ্য সংস্থাগুলির অবাধ বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, বিভিন্ন অঞ্চলের অধিবাসীদের মধ্যে অভিগমন ও নির্গমন, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তি ও যোগাযোগ মাধ্যমের অবাধ বিস্তার প্রভৃতি।
② রাজনৈতিক বিশ্বায়ন: ১৬৪৮ খ্রিস্টাব্দের ওয়েস্টফেলিয়ার শান্তিচুক্তির পরবর্তী পর্ব থেকে ভূখণ্ডভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থাকেই আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার প্রাথমিক একক বলে গণ্য করা হয়ে থাকে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যাপক উন্নতি এবং বিশ্ববাজার দখলের মধ্য দিয়ে যে আর্থসামাজিক বিশ্বায়নের সূচনা হয়েছিল তার প্রত্যক্ষ ফল হিসেবে রাষ্ট্রব্যবস্থায় পরিবর্তন এসেছিল। বিশেষ করে, রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমিকতা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে। তবে রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বিশ্বায়ন জাতিরাষ্ট্র ধারণার বিপরীতে অবস্থান করে। অবাধ পুঁজির মুনাফাকে গণতান্ত্রিক জাতিরাষ্ট্রগুলি কখনোই সমর্থন করেনি। আবার বিশ্বায়নের পাশ্চাত্যের প্রবক্তাগণ সম্পূর্ণরূপে জাতিরাষ্ট্রের বিলোপসাধন চান না, বরং তারা এমন এক বিশ্বব্যবস্থা আশা করেন যেখানে ধনতান্ত্রিক শ্রেণির স্বার্থে একচেটিয়া বাণিজ্যও রক্ষা পাবে আবার অপরপক্ষে স্বায়ত্তশাসনমূলক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলির অস্তিত্বও বজায় থাকবে। এই চিন্তার মূল উদ্দেশ্য হল-সর্বশক্তিসম্পন্ন জাতিরাষ্ট্রগুলি বৃহৎ পুঁজির সঙ্গে যতটা পাল্লা দিতে পারবে, স্বল্পক্ষমতাসম্পন্ন স্বায়ত্তশাসনমূলক প্রতিষ্ঠানগুলি তা পারবে না। তাই আঞ্চলিক স্তরে বৃহৎ পুঁজির অধীনে তারা চালিত হয়। এভাবে বিশ্বায়নের প্রেক্ষাপটে আঞ্চলিকতা লক্ষ করা যায়। রাজনৈতিক বিশ্বায়নের বাস্তবায়ন দেখা যায় বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠনের মধ্য দিয়ে। বর্তমানে সারা বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন দেখা যায়। এই সমস্ত সংগঠনগুলি জাতির সীমানাকে ছাড়িয়ে বৈশ্বিক স্তরে বিকশিত হয়েছে। দৃষ্টান্ত হিসেবে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ (UN), অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংগঠন (OECD), ইউরোপীয় ইউনিয়ন (EU) ইত্যাদির কথা বলা যায়।
③ সাংস্কৃতিক বিশ্বায়ন: সাংস্কৃতিক দিক থেকে বিশ্বায়নের মূল লক্ষ্য হল সারা বিশ্বজুড়ে একধরনের সমজাতীয় সংস্কৃতি গড়ে তোলা। বিশ্বায়ন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বহুমুখী সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যসমূহকে এক ছাঁচে ঢেলে যে সমজাতীয় সংস্কৃতি নির্মাণ করতে চায় তাকে অনেকে মার্কিনি ম্যাকডোনাল্ড সংস্কৃতি বলে আখ্যা দিয়েছেন। সাংস্কৃতিক বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পৃথিবীর একটি অংশের উৎপাদিত উদ্বৃত্ত পণ্যসামগ্রী, তথ্যপ্রযুক্তি, ধ্যানধারণা অন্য রাষ্ট্রে চালান করে দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে মানুষে মানুষে সাংস্কৃতিক ভেদাভেদ মুছে যাচ্ছে, আর এ কাজে সাহায্য করছে উন্নত প্রযুক্তি, যথা- ইন্টারনেট, টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা প্রভৃতি।
পরিশেষে বলা যায়, বিশ্বায়ন হল এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে সমগ্র বিশ্ব ‘ভুবন গ্রামে’ পরিণত হয়েছে। যার ফলে পৃথিবীব্যাপী পারস্পরিক সংযোগ সম্পর্ক এখন হাতের মুঠোয় চলে এসেছে।
8. বিশ্বায়নের অর্থনৈতিক প্রভাবগুলি আলোচনা করো।
অথবা, অর্থনৈতিক বিশ্বায়নের ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিকগুলি সম্পর্কে আলোচনা করো।
অথবা, বিশ্বায়ন কীভাবে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রকে প্রভাবিত করেছে তার মূল্যায়ন করো।
অথবা, অর্থনৈতিক বিশ্বায়নের ফলাফল সম্পর্কে আলোচনা করো।
Ans: বিশ্বায়নের অর্থনৈতিক প্রভাব: বিশ্বায়নের প্রক্রিয়ায় অর্থনীতির উপর যেই সমস্ত ইতিবাচক ও নেতিবাচক প্রভাবগুলি পড়েছে সেগুলি হল-
ইতিবাচক প্রভাব :
① বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সুযোগ বৃদ্ধি: বিশ্বায়নের ফলে এবং GATT চুক্তির দৌলতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের পরিমাণ বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছিল। বিভিন্ন দেশগুলিতে বিদেশি পুঁজির প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবিত হয়ে বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়েছে। বিশ্বায়নের ফলে দেশের বাইরে ব্যবসাবাণিজ্য ও বিনিয়োগের নতুন সুযোগ তৈরি হয়েছে। ফলে উন্নয়নশীল দেশ ও স্বল্পোন্নত দেশগুলি বিদেশি বিনিয়োগ ও বর্ধিত বাণিজ্যের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে পেরেছে।
② নতুন বাজারে পণ্য বিপণনের সুযোগ: বিশ্বায়নের ফলে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সদস্যভুক্ত দেশগুলি নিজেদের উৎপাদিত দ্রব্য বাইরের দেশের নতুন বাজারে বিনা বাধায় বিপণনের সুযোগ লাভকরেছে। এতে একদিকে যেমন তাদের পণ্যের বিক্রি বেড়েছে অন্যদিকে তেমনি মুনাফাও বৃদ্ধি পেয়েছে।
③ নতুন প্রযুক্তি ও জ্ঞানের প্রসার: বিশ্বায়ন সারা পৃথিবী জুড়ে যেভাবে নতুন প্রযুক্তি ও জ্ঞানের প্রসার ঘটিয়েছে তার ফলে বিভিন্ন দেশ একে অপরের কাছ থেকে সহযোগিতা পেয়ে অনেক সমৃদ্ধ হতে পেরেছে। এই সমৃদ্ধি আর্থিক ক্ষেত্রে দক্ষতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করেছে।
নেতিবাচক প্রভাব:
① ধনী দেশগুলির স্বার্থ ও বহুজাতিক কোম্পানিগুলির আধিপত্য: বিশ্বায়নের নেতিবাচক প্রভাব বিশ্লেষণ করতে গিয়ে এটা বলা হয় যে, বিশ্বায়ন ধনী দেশগুলির স্বার্থে কাজ করেছে এবং বহুজাতিক কর্পোরেট সংস্থাগুলির আধিপত্য বিস্তারে সাহায্য করেছে। ফলে স্থানীয় ছোটো কোম্পানিগুলি প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে না পেরে নিজেদের ব্যবসা বন্ধ করতে বাধ্য হচ্ছে।
② ধনী ও দরিদ্র বৈষম্য বৃদ্ধি: আন্তর্জাতিক সম্পর্কের লেখকরা অর্থনৈতিক বিশ্বায়নের নেতিবাচক ফলাফল বিশ্লেষণ করে এটা দেখিয়েছেন যে, এর ফলে ধনী বিশ্ব আরও ধনী হচ্ছে এবং দরিদ্র বিশ্ব দরিদ্রতর হচ্ছে। ১৯৯০-এর দশকের শেষার্ধে দক্ষিণপূর্ব এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকায় ব্যাপক উদারীকরণের ফলস্বরূপ অর্থনৈতিক মন্দা প্রমাণ করে যে, বিশ্বায়ন উন্নয়নশীল দেশগুলিতে অর্থনৈতিক স্থায়িত্ব ও প্রবৃদ্ধি এখনও সুনিশ্চিত করতে পারেনি।
③ পরিবেশের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সংকট: পরিবেশের ক্ষেত্রে বিশ্বায়ন এক আন্তর্জাতিক সংকট তৈরি করেছে। বিশ্বায়নের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কর্পোরেট সংস্থাগুলি উন্নয়নশীল বিশ্বে আধিপত্য বিস্তার করেছে ফলে প্রাকৃতিক পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি প্রাকৃতিক পরিবেশকে কর্পোরেট সংস্থাগুলি পণ্যায়িত করেছে। এ ছাড়া বসুন্ধরা সম্মেলনের সিদ্ধান্তকে উপেক্ষা করার ফলে বিশ্ব উন্নায়ন কিংবা জলবায়ু পরিবর্তনের মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
উপসংহার: একুশ শতকে বিশ্বায়ন একটি অপরিহার্য আন্তর্জাতিক প্রক্রিয়া। কোনো দেশের পক্ষে এই প্রক্রিয়াকে উপেক্ষা করা সম্ভব নয়। ফলে উন্নয়নশীল দেশগুলির ক্রমাগত উন্নত দেশগুলির উপর নির্ভরশীলতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
9. বিশ্বায়নের রাজনৈতিক প্রভাবগুলি আলোচনা করো।
অথবা, রাজনৈতিক বিশ্বায়নের ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিকগুলি লেখো।
অথবা, বিশ্বায়ন কীভাবে রাজনৈতিক ক্ষেত্রকে প্রভাবিত করেছে তার মূল্যায়ন করো।
অথবা, রাজনৈতিক বিশ্বায়নের ফলাফল সম্পর্কে ব্যাখ্যা করো।
Ans: বিশ্বায়নের রাজনৈতিক প্রভাব:
রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বিশ্বায়নের ইতিবাচক ও নেতিবাচক উভয় প্রভাবই লক্ষণীয়। যথা-
ইতিবাচক দিক:
① বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে সংহতিসাধন: বিশ্বায়ন বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে নিবিড় সংহতি গড়ে তুলেছে। আধুনিক বিশ্বে কোনো রাষ্ট্রের পক্ষে একাকী বিচ্ছিন্নভাবে টিকে থাকা সম্ভব নয়। বিশ্বায়ন এই বাস্তবতাকে তুলে ধরে রাষ্ট্রগুলির মধ্যে একটি অভিন্ন যোগসূত্র গড়ে তোলার সুযোগ করে দিয়েছে।
② সক্ষমতা বৃদ্ধি: অনেকে মনে করেন, বিশ্বায়নের ফলে রাষ্ট্রগুলি উন্নতমানের তথ্যপ্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের কাজে দক্ষতা বৃদ্ধি করেছে। একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ও উন্নত প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে সারা বিশ্বকে জানা ও বোঝার কাজও অনেক সহজ হয়ে গেছে। এর ফলে আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশেষ করে বিদেশনীতি নির্ধারণের কাজে রাষ্ট্রের সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
③ শান্তি স্থাপন: বিশ্বায়ন যুদ্ধের ধ্বংসাত্মক পরিণতি সম্পর্কে সমস্ত জনগণকে সচেতন করে যুদ্ধের প্রতি জনগণের অনীহা বৃদ্ধি করেছে। যার ফলে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে রাষ্ট্রগুলির মধ্যে যুদ্ধের সম্ভাবনা হ্রাস পেয়েছে এবং শান্তির পরিবেশ গড়ে উঠেছে। এ ছাড়া সন্ত্রাসবাদ দমনের ক্ষেত্রে সমস্ত রাষ্ট্র ঐক্যবদ্ধ হয়েছে।
নেতিবাচক দিক:
① জাতিরাষ্ট্রের সংকট: রাজনৈতিক দিক থেকে বিশ্বায়ন জাতিরাষ্ট্রের সংকট সৃষ্টি করেছে বলে অনেকে মনে করেন। জাতিরাষ্ট্রগুলির সাবেকি রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমিকতার ধারণা বিশ্বায়নের যুগে বহুলাংশে অচল হয়ে পড়েছে। বিশ্বায়নের যুগে রাষ্ট্রকে তার জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নীতি নির্ধারণের আগে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নির্দেশিকার সঙ্গে ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে অন্যান্য বিধিনিয়মের সঙ্গে সামঞ্জস্য বিধান করে চলতে হয়। কাজেই চরম সার্বভৌমত্বের ক্ষমতা রাষ্ট্র এখন আর আগের মতো ভোগ করতে পারে না।
② নয়া এলিট শ্রেণি দৃষ্টি: বিশ্বায়নের ফলে বিদেশের বহুজাতিক সংস্থাগুলির দেশীয় অংশীদারিত্ব সৃষ্টি হয়। এক্ষেত্রে বহুজাতিক সংস্থাগুলি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত রাজনীতিবিদদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলে কর্পোরেট পুঁজিবাদের ভিত্তি রচনা করে। এই নয়া এলিট শ্রেণি বর্তমানে অধিকাংশ উন্নয়নশীল দেশের রাষ্ট্র তথা রাজনীতির নির্ণায়ক।
③ সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ বৃদ্ধি: বিশ্বায়নের স্রোতে সন্ত্রাসবাদের আতঙ্ক দেশ-বিদেশ নির্বিশেষে ছড়িয়ে পড়েছে। তথ্যপ্রযুক্তির উন্নতি, যে-কোনো রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে অবাধে প্রবেশ এবং নতুন নতুন মারণাস্ত্রের সৃষ্টি বিশ্ববাসীর মনে ভয় ও ত্রাস বাড়িয়েছে।
উপসংহার: তবে মনে রাখা উচিত রবার্ট হলটন প্রমুখ মনে করেন, রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্বের উপর সাম্প্রতিককালের বিধিনিষেধ কেবল বিশ্বায়নের ফসল নয়। ১৯৫০-এর দশক থেকেই ক্রমশ রাষ্ট্রীয় চরম ক্ষমতার ধারণা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়। জগদীশ ভগবতীও মনে করেন নারী অনুন্নয়ন, শিশুশ্রম কিংবা অপুষ্টি যা উপ-সাহারীয় অঞ্চলগুলিতে প্রকট, সেগুলির জন্য বিশ্বায়ন দায়ী নয়। বরং বিশ্বায়ন এশিয়া ও লাতিন আমেরিকার অনেক দেশে রাষ্ট্রকাঠামোর গণতন্ত্রীকরণের পরিবেশে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
10. সাংস্কৃতিক বিশ্বায়নের প্রভাবগুলি লেখো।
অথবা, সাংস্কৃতিক বিশ্বায়নের ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিকগুলি সম্পর্কে আলোচনা করো।
অথবা, সাংস্কৃতিক বিশ্বায়নের সুফল ও কুফলগুলি লেখো।
অথবা, সাংস্কৃতিক বিশ্বায়নের ফলাফল সম্পর্কে আলোচনা করো।
অথবা, বিশ্বায়ন কীভাবে সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রকে প্রভাবিত করেছে তার মূল্যায়ন করো।
Ans: সাংস্কৃতিক বিশ্বায়নের প্রভাব :
সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে বিশ্বায়নের ইতিবাচক ও নেতিবাচক উভয় প্রভাবই লক্ষণীয়। যথা-
ইতিবাচক দিক :
① দেশীয় অর্থনীতির বিকাশ: সাংস্কৃতিক বিশ্বায়নের ফলে বিভিন্ন দেশের স্থানীয় সংস্কৃতিকে জানা ও বোঝার জন্য বৈশ্বিক পর্যটকদের মধ্যে আগ্রহ বা কৌতূহল দেখা দিয়েছে। তার ফলে সাংস্কৃতিক ভ্রমণ, স্থানীয় শিল্পীদের তৈরি হস্তশিল্পের সামগ্রীর আন্তর্জাতিক বিপণন ইত্যাদির ফলে দেশীয় অর্থনীতির বিকাশ ঘটে।
② সৃজনশীলতার ডিজিটাল রূপান্তর: বিশ্বায়ন অনলাইন প্ল্যাটফর্ম এবং স্ট্রিমিং পরিসেবার মধ্য দিয়ে সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রের সৃজনশীলতাকে ডিজিটালাইজড্ করে তাকে সারা দুনিয়ার মানুষের কাছে সহজলভ্য করে পৌঁছে দিচ্ছে। ইউটিউব, নেটফ্লিক্স, স্পটিফায়ের মতো প্ল্যাটফর্মগুলির ব্যবহারকারীদের কাছে খুব সহজেই বিভিন্ন ধরনের সিনেমা, সঙ্গীত, টিভি শো, সাক্ষাৎকার ইত্যাদি সহজলভ্য হয়ে উঠেছে।
③ বহুসংস্কৃতিবাদ: বিশ্বায়ন তথাকথিত ‘অপর’ সংস্কৃতির সঙ্গে আদানপ্রদানের দ্বার উন্মুক্ত করার ফলে বিশ্বের মানুষ অন্যদেশের মূল্যবোধ, ধারণা জীবনচর্চা, শিল্প দক্ষতা ইত্যাদি সম্পর্কে সচেতন হওয়ার ফলে বর্তমানে সব দেশেই বহুসংস্কৃতিবাদ গড়ে উঠেছে। উদাহরণ হিসেবে বিদেশি পোশাক পরিচ্ছদের জনপ্রিয়তা, ইংরেজি ভাষার প্রাধান্য সহ খাদ্যাভ্যাসের ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী ম্যাকডোনাল্ড কিংবা কেএফসি, ডমিনো’স, পিৎজা হাট-এর অনুপ্রবেশের কথা বলা যায়।
নেতিবাচক দিক:
① জাতীয় সংস্কৃতির বিলুপ্তি: বিশ্বায়ন সারা পৃথিবী জুড়ে যে একই ধরনের ভোগবাদী পণ্যসংস্কৃতি গড়ে তুলতে চাইছে তার ফলে উন্নয়নশীল দেশগুলির বৈচিত্র্যপূর্ণ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অবক্ষয় দেখা যাচ্ছে। সেইসঙ্গে বৈচিত্র্যপূর্ণ আঞ্চলিক জাতীয় সংস্কৃতির স্বাতন্ত্র্য ক্ষুণ্ণ হতে বসেছে। ফলে বর্তমানে সব দেশেই জাতীয় সংস্কৃতি ক্রমশ বিলুপ্ত হতে বসেছে।
② পাশ্চাত্য সংস্কৃতির প্রসার: উন্নত তথ্যপ্রযুক্তির প্রসারের ফলে যে বিশ্বজনীন সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে তা নিয়ে দ্বিমত নেই। তবে উন্নয়নের নাম করে মূলত বাণিজ্যিক স্বার্থে পশ্চিমি দেশগুলি ভোগবাদী সংস্কৃতি উন্নয়নশীল দেশগুলির উপর চাপিয়ে দিচ্ছে। টিভি, সিনেমা, সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে হিংসা, পশ্চিমি সংস্কৃতির ছোঁয়া, অনলাইন গেমস্ এবং নারী সৌন্দর্যের পণ্যায়ন ও বিজ্ঞাপন কিশোর-কিশোরীদের হৃদয়ে বিকৃত মানসিকতার জন্ম দিচ্ছে এবং তাদের আদর্শ থেকে বিচ্যুত করে বিপথে চালিত করছে। এর ফলস্বরূপ জাতীয় চেতনা, সুস্থ চিন্তার বিকাশ বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে।
③ নারী সমাজের বিপন্নতা: বিশ্বায়নের ফলে মহিলাদের জন্য কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পেয়েছে ঠিকই তবে তাদের প্রকৃত অর্থে ক্ষমতায়ন ঘটেনি। বিজ্ঞাপন জগতে, বিমান, হোটেল, সোশ্যাল মিডিয়া, ফ্যাশন প্রভৃতি ক্ষেত্রে কর্মসংস্থান তৈরি হলেও এই ক্ষেত্রগুলি নারী সৌন্দর্যকে একপ্রকার পণ্যায়নে পরিণত করেছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের মর্যাদাহানিকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। অভাবের তাড়নায় নারীরা বিভিন্ন প্রলোভনের শিকার হচ্ছে। তারা নানান অমর্যাদাকর পেশায় নিযুক্ত হয়ে পড়েছে। তাই নারী পাচার, নারী নির্যাতন, শিশু পাচারের মতো ঘটনা এই বিশ্বায়নের যুগেও উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিভিন্ন বহুজাতিক সংস্থা কর্তৃক নিযুক্ত মহিলা শ্রমিকরাও অস্থায়ীভাবে এবং অনিশ্চয়তার মধ্যে কাজ করছে। শ্রম আইন না মানার ফলে বিভিন্ন শিল্প অফিসগুলি দ্বারা মহিলা কর্মচারীরা শোষণ ও বৈষম্যের শিকার হচ্ছে।
উপসংহার: বস্তুত বিশ্বায়ন জাতীয় মূল্যবোধ ও জাতীয় চরিত্রের সাবেকি ধারণাকে পরিবর্তিত করেছে। বর্তমানে একদিকে যেমন বৈশ্বিক নাগরিক সমাজের ধারণা গড়ে উঠেছে, তেমনই জাতীয় সীমানা অতিক্রম করে বিশ্বনাগরিকতার ধারণা জনপ্রিয় হয়েছে। তবে অধ্যাপক কে এম পানিক্কর-এর মতে, তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিতে বর্তমানে যে সাংস্কৃতিক আক্রমণ চলেছে সেটি আসলে সাংস্কৃতিক সাম্রাজ্যবাদ প্রতিষ্ঠার একটি প্রচেষ্টা।
11. বিশ্বায়ন কীভাবে বিশ্বের অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রকে প্রভাবিত করেছে তার মূল্যায়ন করো।
Ans: ভূমিকা: বিশ্বায়ন হল একটি আন্তর্জাতিক প্রক্রিয়া। বিশ্বায়ন বলতে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের দেশ ও জনগণের মধ্যে এক নিবিড় সংযোগসাধনের প্রক্রিয়াকে বোঝায়। অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে বিশ্বায়নের প্রভাব খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নিম্নে এই সম্পর্কে বিশদে আলোচনা করা হল।
অর্থনৈতিক ক্ষেত্র: বিশ্বায়ন মূলত একটি অর্থনৈতিক ধারণা। আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডার, বিশ্বব্যাংক এবং বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা প্রভৃতি অর্থনৈতিক সংস্থা বিশ্বায়নের প্রক্রিয়াকে বাস্তবায়িত করেছে। এর ফলে একদিকে যেমন অর্থনৈতিক বাণিজ্যের দ্রুত প্রসার ঘটেছে বিশেষ করে, উন্নয়নশীল দেশ ও স্বল্পোন্নত দেশগুলি বিদেশি বিনিয়োগ ও বর্ধিত বাণিজ্যের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে পেরেছে। অন্যদিকে আবার বহুজাতিক সংস্থা কর্তৃক গৃহীত বৈষম্যমূলক নীতির ফলে উন্নয়নশীল দেশগুলির উন্নত দেশগুলির উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। যার ফলে ধনী দেশগুলি তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিকে অবাধে শোষণ করে চলেছে। যার পরিণামস্বরূপ ধনী আরও ধনী হচ্ছে এবং দরিদ্র আরও দরিদ্রতর হচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, অর্থনৈতিক বিশ্বায়নের একটি নীতি হল কাঠামোগত পুনর্বিন্যাস কর্মসূচি বা ‘Structural Adjustment Program’ এই নীতির সহজ অর্থ হল বিশ্বায়নের নয়া বিশ্বব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রয়োজনে দেশের সাবেকি অর্থনৈতিক কাঠামোকে সংস্কার করতে বা সংশোধন করতে হবে। বিশ্বায়নের কাঠামোগত পুনর্বিন্যাসকে কার্যকরী করার দায়িত্বে থাকা তিনটি আন্তর্জাতিক সংস্থা বিশ্বব্যাংক, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা, আন্তর্জাতিক অর্থভান্ডার এই নির্দেশিকা মেনে চলার ফরমান জারি করে। এর ফলে উন্নয়নশীল দেশগুলি কলকারখানায় ও রাষ্ট্র পরিচালিত সংস্থাগুলিতে ব্যাপক কর্মীছাঁটাই, কর্মী সংকোচন, লক আউট, রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্রে বেসরকারিকরণ এবং বেসরকারি পুঁজির লগ্নিকরণ এবং জাতীয় ব্যয়ের সংকোচন ইত্যাদি করতে হয়। এর ফলে স্বল্পোন্নত বা উন্নয়নশীল দেশগুলিতে বেকারত্ব, দারিদ্র্য, আর্থিক ও সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা বহুগুণ বেড়ে যায়। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হন সমাজের অনগ্রসর ও দুর্বল শ্রেণির গরিব মানুষেরা।
সাংস্কৃতিক ক্ষেত্র : সাংস্কৃতিক দিক থেকে বিশ্বায়নের মূল লক্ষ্য হল সারা বিশ্বজুড়ে একধরনের সমজাতীয় সংস্কৃতি গড়ে তোলা। এর ফলে একদিকে যেমন-দেশীয় অর্থনীতির বিকাশ ও সৃজনশীলতার ডিজিটাল রূপান্তর ঘটছে তেমনি ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ইত্যাদি সামাজিক মাধ্যমের সাহায্যে বিশ্বের মানুষ অপর সংস্কৃতির মূল্যবোধ ঐতিহ্য ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে পারছে এবং অন্য দেশের সামাজিক ইস্যুতে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে পারছে। এ ছাড়া বিভিন্ন দেশের পোশাকের ক্ষেত্রে সহজলভ্যতা, ভাষাগত বৈচিত্র্য এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভাষা সংরক্ষণের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করেছে। অন্যদিকে আবার বিশ্বায়ন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বহুমুখী সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যসমূহকে এক ছাঁচে ঢেলে যে সমজাতীয় সংস্কৃতি নির্মাণ করতে চায় তাকে অনেকে মার্কিনি ম্যাকডোনাল্ড সংস্কৃতি বলে আখ্যা দিয়েছেন। এই নতুন সংস্কৃতির প্রত্যয়ে বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলির নিজস্ব সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য ক্রমশ বিলুপ্ত হতে বসেছে। যার প্রভাবে ভাষা, পোশাক ও খাদ্যরুচির বদল ঘটেছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়-তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিতে দেশীয় খাদ্যের পরিবর্তে পিৎজা, বার্গার ইত্যাদি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
উপসংহার: উক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় বাজার অর্থনীতির উদারীকরণ, বেসরকারিকরণ, এবং সামাজিক মাধ্যমের ব্যাপক ব্যবহারের দ্বারা বিশ্বায়ন প্রক্রিয়াটি প্রসারিত হয়েছে। এই প্রক্রিয়া একদিকে যেমন বিশ্বজুড়ে মানুষের সামনে অগ্রগতির সম্ভাবনাকে তুলে ধরেছে, অন্যদিকে তেমনি নানাভাবে বিপদের সম্ভাবনাকেও ডেকে এনেছে।
HS Class 12 3rd Semester (Third Unit Test) Question and Answer :
- HS Class 12 Bengali 3rd Semester Question Click here
- HS Class 12 English 3rd Semester Question Click here
- HS Class 12 Geography 3rd Semester Question Click here
- HS Class 12 History 3rd Semester Question Click here
- HS Class 12 Education 3rd Semester Question Click here
- HS Class 12 Political Science 3rd Semester Question Click here
- HS Class 12 Philosophy 3rd Semester Question Click here
- HS Class 12 Sociology 3rd Semester Question Click here
- HS Class 12 Sanskrit 3rd Semester Question Click here
- HS Class 12 All Subjects First Semester Question Click here
HS Class 12 4th Semester (Forth Unit Test) Question and Answer :
- HS Class 12 Bengali 4th Semester Question Click here
- HS Class 12 English 4th Semester Question Click here
- HS Class 12 Geography 4th Semester Question Click here
- HS Class 12 History 4th Semester Question Click here
- HS Class 12 Education 4th Semester Question Click here
- HS Class 12 Political Science 4th Semester Question Click here
- HS Class 12 Philosophy 4th Semester Question Click here
- HS Class 12 Sociology 4th Semester Question Click here
- HS Class 12 Sanskrit 4th Semester Question Click here
- HS Class 12 All Subjects 4th Semester Question Click here
Higher Secondary All Subject Suggestion – উচ্চমাধ্যমিক সমস্ত বিষয়ের সাজেশন
আরোও দেখুন:-
HS Bengali Suggestion Click here
আরোও দেখুন:-
Class 12 English Suggestion Click here
আরোও দেখুন:-
Class 12 Geography Suggestion Click here
আরোও দেখুন:-
Class 12 History Suggestion Click here
আরোও দেখুন:-
Class 12 Political Science Suggestion Click here
আরোও দেখুন:-
Class 12 Education Suggestion Click here
আরোও দেখুন:-
Class 12 Philosophy Suggestion Click here
আরোও দেখুন:-
Class 12 Sociology Suggestion Click here
আরোও দেখুন:-
Class 12 Sanskrit Suggestion Click here
আরোও দেখুন:-
Class 12 All Subjects Suggestion Click here
◆ উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার প্রস্তুতি: বিনামূল্যে নোটস, সাজেশন, PDF ও সমস্ত আপডেটের জন্য আমাদের WhatsApp Group এ Join হয়ে যাও।
| Class 12 WhatsApp Groups | Click Here to Join |
দ্বাদশ শ্রেণীর রাষ্ট্রবিজ্ঞান বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | West Bengal HS Class 12th Political Science Question and Answer / Suggestion / Notes Book
আরোও দেখুন :-
দ্বাদশ শ্রেণীর রাষ্ট্রবিজ্ঞান সমস্ত অধ্যায়ের প্রশ্নউত্তর Click Here
FILE INFO : বিশ্বায়ন (তৃতীয় অধ্যায়) দ্বাদশ শ্রেণীর রাষ্ট্রবিজ্ঞান বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | HS Class 12 Political Science Bisnayon Question and Answer with FREE PDF Download Link
| PDF File Name | বিশ্বায়ন (তৃতীয় অধ্যায়) দ্বাদশ শ্রেণীর রাষ্ট্রবিজ্ঞান বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | HS Class 12 Political Science Bisnayon Question and Answer PDF |
| Prepared by | Experienced Teachers |
| Price | FREE |
| Download Link | Click Here To Download |
| Download PDF | Click Here To Download |
বিশ্বায়ন (তৃতীয় অধ্যায়) অধ্যায় থেকে আরোও বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর দেখুন :
Update
[আরও দেখুন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবন রচনা – Rabindranath Tagore Biography in Bengali]
[আমাদের YouTube চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন Subscribe Now]
Info : বিশ্বায়ন (তৃতীয় অধ্যায়) দ্বাদশ শ্রেণীর রাষ্ট্রবিজ্ঞান সাজেশন বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর
HS Class 12 Political Science Suggestion | West Bengal WBCHSE Class Twelve XII (HS Class 12th) Political Science Question and Answer Suggestion
” বিশ্বায়ন (তৃতীয় অধ্যায়) দ্বাদশ শ্রেণীর রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রশ্ন উত্তর “ একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ টপিক দ্বাদশ শ্রেণীর পরীক্ষা (West Bengal Class Twelve XII / WB HS Class 12 / WBCHSE / HS Class 12 Exam / West Bengal Council of Higher Secondary Education – WB HS Class 12 Exam / HS Class 12th / WB HS Class 12 / HS Class 12 Pariksha ) এখান থেকে প্রশ্ন অবশ্যম্ভাবী । সে কথা মাথায় রেখে Bhugol Shiksha .com এর পক্ষ থেকে দ্বাদশ শ্রেণীর রাষ্ট্রবিজ্ঞান পরীক্ষা প্রস্তুতিমূলক সাজেশন এবং বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর ( দ্বাদশ শ্রেণীর রাষ্ট্রবিজ্ঞান সাজেশন / দ্বাদশ শ্রেণীর রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রশ্ও উত্তর । Class-11 Political Science Suggestion / HS Class 12 Political Science Bisnayon Question and Answer / HS Class 12 Political Science Suggestion / Class-11 Pariksha Political Science Suggestion / Political Science HS Class 12 Exam Guide / MCQ , Short , Descriptive Type Question and Answer / HS Class 12 Political Science Suggestion FREE PDF Download) উপস্থাপনের প্রচেষ্টা করা হলাে। ছাত্রছাত্রী, পরীক্ষার্থীদের উপকারে লাগলে, আমাদের প্রয়াস দ্বাদশ শ্রেণীর রাষ্ট্রবিজ্ঞান পরীক্ষা প্রস্তুতিমূলক সাজেশন এবং বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর (HS Class 12 Political Science Suggestion / West Bengal Twelve XII Question and Answer, Suggestion / WBCHSE HS Class 12th Political Science Suggestion / HS Class 12 Political Science Bisnayon Question and Answer / HS Class 12 Political Science Suggestion / HS Class 12 Pariksha Suggestion / HS Class 12 Political Science Exam Guide / HS Class 12 Political Science Suggestion 2024, 2025, 2026, 2027, 2028, 2029, 2030 / HS Class 12 Political Science Suggestion MCQ , Short , Descriptive Type Question and Answer. / Class-11 Political Science Suggestion FREE PDF Download) সফল হবে।
বিশ্বায়ন (তৃতীয় অধ্যায়) বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর
বিশ্বায়ন (তৃতীয় অধ্যায়) বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | বিশ্বায়ন (তৃতীয় অধ্যায়) HS Class 12 Political Science Bisnayon Question and Answer Suggestion দ্বাদশ শ্রেণীর রাষ্ট্রবিজ্ঞান বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – বিশ্বায়ন (তৃতীয় অধ্যায়) বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর।
বিশ্বায়ন (তৃতীয় অধ্যায়) SAQ সংক্ষিপ্ত বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | দ্বাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান
বিশ্বায়ন (তৃতীয় অধ্যায়) SAQ সংক্ষিপ্ত বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | বিশ্বায়ন (তৃতীয় অধ্যায়) HS Class 12 Political Science Bisnayon Question and Answer Suggestion দ্বাদশ শ্রেণীর রাষ্ট্রবিজ্ঞান বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – বিশ্বায়ন (তৃতীয় অধ্যায়) SAQ সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর।
উচ্চমাধ্যমিক রাষ্ট্রবিজ্ঞান বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | দ্বাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – বিশ্বায়ন (তৃতীয় অধ্যায়) প্রশ্ন উত্তর | HS Class 12 Political Science Bisnayon Question and Answer Question and Answer, Suggestion
উচ্চমাধ্যমিক রাষ্ট্রবিজ্ঞান বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – বিশ্বায়ন (তৃতীয় অধ্যায়) | দ্বাদশ শ্রেণীর রাষ্ট্রবিজ্ঞান বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – বিশ্বায়ন (তৃতীয় অধ্যায়) | পশ্চিমবঙ্গ দ্বাদশ শ্রেণীর রাষ্ট্রবিজ্ঞান বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – বিশ্বায়ন (তৃতীয় অধ্যায়) | দ্বাদশ শ্রেণীর রাষ্ট্রবিজ্ঞান সহায়ক – বিশ্বায়ন (তৃতীয় অধ্যায়) বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর । HS Class 12 Political Science Bisnayon Question and Answer, Suggestion | HS Class 12 Political Science Bisnayon Question and Answer Suggestion | HS Class 12 Political Science Bisnayon Question and Answer Notes | West Bengal HS Class 12th Political Science Question and Answer Suggestion.
উচ্চমাধ্যমিক দ্বাদশ শ্রেণীর রাষ্ট্রবিজ্ঞান বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – বিশ্বায়ন (তৃতীয় অধ্যায়) প্রশ্ন উত্তর | Higher Secondary Class 12 Political Science Question and Answer, Suggestion
দ্বাদশ শ্রেণীর রাষ্ট্রবিজ্ঞান বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – বিশ্বায়ন (তৃতীয় অধ্যায়) প্রশ্ন উত্তর বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | বিশ্বায়ন (তৃতীয় অধ্যায়) । HS Class 12 Political Science Bisnayon Question and Answer Suggestion.
WBCHSE HS Class 12th Political Science Bisnayon Suggestion | দ্বাদশ শ্রেণীর রাষ্ট্রবিজ্ঞান বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – বিশ্বায়ন (তৃতীয় অধ্যায়)
WBCHSE HS Class 12 Political Science Bisnayon Suggestion দ্বাদশ শ্রেণীর রাষ্ট্রবিজ্ঞান বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – বিশ্বায়ন (তৃতীয় অধ্যায়) প্রশ্ন উত্তর বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর । বিশ্বায়ন (তৃতীয় অধ্যায়) | HS Class 12 Political Science Bisnayon Suggestion দ্বাদশ শ্রেণীর রাষ্ট্রবিজ্ঞান বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – বিশ্বায়ন (তৃতীয় অধ্যায়) প্রশ্ন উত্তর বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর ।
HS Class 12 Political Science Bisnayon 4th Semester Question and Answer Suggestions | দ্বাদশ শ্রেণীর রাষ্ট্রবিজ্ঞান বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – বিশ্বায়ন (তৃতীয় অধ্যায়) | দ্বাদশ শ্রেণীর রাষ্ট্রবিজ্ঞান বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর
HS Class 12 Political Science Bisnayon 4th Semester Question and Answer দ্বাদশ শ্রেণীর রাষ্ট্রবিজ্ঞান বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – বিশ্বায়ন (তৃতীয় অধ্যায়) দ্বাদশ শ্রেণীর রাষ্ট্রবিজ্ঞান বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর HS Class 12 Political Science Bisnayon Question and Answer দ্বাদশ শ্রেণীর রাষ্ট্রবিজ্ঞান বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – বিশ্বায়ন (তৃতীয় অধ্যায়) সংক্ষিপ্ত, রোচনাধর্মী বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর ।
WB HS Class 12 Political Science Bisnayon Suggestion | দ্বাদশ শ্রেণীর রাষ্ট্রবিজ্ঞান বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – বিশ্বায়ন (তৃতীয় অধ্যায়) সাজেশন
HS Class 12 Political Science Bisnayon Question and Answer Suggestion দ্বাদশ শ্রেণীর রাষ্ট্রবিজ্ঞান বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – বিশ্বায়ন (তৃতীয় অধ্যায়) সাজেশন । HS Class 12 Political Science Bisnayon Question and Answer Suggestion দ্বাদশ শ্রেণীর রাষ্ট্রবিজ্ঞান বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর।
West Bengal HS Class 12 Political Science Suggestion Download WBCHSE HS Class 12th Political Science short question suggestion . HS Class 12 Political Science Bisnayon Suggestion download HS Class 12th Question Paper Political Science. WB HS Class 12 Political Science suggestion and important question and answer. HS Class 12 Suggestion pdf.পশ্চিমবঙ্গ দ্বাদশ শ্রেণীর রাষ্ট্রবিজ্ঞান পরীক্ষার সম্ভাব্য সাজেশন ও শেষ মুহূর্তের বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর ডাউনলোড। দ্বাদশ শ্রেণীর রাষ্ট্রবিজ্ঞান পরীক্ষার জন্য সমস্ত রকম গুরুত্বপূর্ণ বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর।
Get the HS Class 12 Political Science Bisnayon Question and Answer by Bhugol Shiksha .com
HS Class 12 Political Science Bisnayon Question and Answer prepared by expert subject teachers. WB HS Class 12 Political Science Suggestion with 100% Common in the Examination .
Class Twelve XII Political Science Bisnayon Suggestion | West Bengal Council of Higher Secondary Education (WBCHSE) HS Class 12 Exam
HS Class 12 Political Science Bisnayon Question and Answer, Suggestion Download PDF: West Bengal Council of Higher Secondary Education (WBCHSE) HS Class 12 Twelve XII Political Science Suggestion is provided here. HS Class 12 Political Science Bisnayon Question and Answer Suggestion Questions Answers PDF Download Link in Free here.
বিশ্বায়ন (তৃতীয় অধ্যায়) দ্বাদশ শ্রেণীর রাষ্ট্রবিজ্ঞান বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | HS Class 12 Political Science Bisnayon Question and Answer
অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই ” বিশ্বায়ন (তৃতীয় অধ্যায়) দ্বাদশ শ্রেণীর রাষ্ট্রবিজ্ঞান বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | HS Class 12 Political Science Bisnayon Question and Answer ” পােস্টটি পড়ার জন্য। এই ভাবেই Bhugol Shiksha ওয়েবসাইটের পাশে থাকো যেকোনো প্ৰশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলাে করো এবং নিজেকে তথ্য সমৃদ্ধ করে তোলো , ধন্যবাদ।





















