মাও সে তুং এর জীবনী
Mao Zedong Biography in Bengali
মাও সে তুং এর জীবনী – Mao Zedong Biography in Bengali : রুশ অক্টোবর বিপ্লবের পরে পৃথিবীর যে দেশে সাম্যবাদী সরকার স্থাপিত হয়েছে , সেটি হল চিন । দীর্ঘদিন ধরে চিনকে বিভিন্ন বিদেশি শক্তি নানাভাবে শাসন করেছে । চিনের সাধারণ মানুষের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য নষ্ট করার চেষ্টা করেছে । চিনের সাংস্কৃতির বুকে ঘটিয়েছে একটির পর একটি ধ্বংসাত্মক আক্রমণ ৷
যে মানুষটি মনের দৃঢ়তাকে সম্বল করে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে সমর্থ হয়েছিলেন , তিনি হলেন মাও সে তুং ।
জারতন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে সোভিয়েত রাশিয়ার বুকে লেনিন সাম্যবাদী সরকার স্থাপন করেছিলেন । একইভাবে জাপানের বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং চিয়াং কাইশেক পরিচালিত ‘ কোত্তমিনটাং দলের প্রতিক্রিয়াশীল চক্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে চিনে শ্রমিক এবং কৃষকদের সমাজতান্ত্রিক শাসন স্থাপন করেছিলেন মাও সে তুং । তাই সারা পৃথিবী তাঁকে অন্যতম শ্রেষ্ঠ রাজনীতিবিদ হিসেবে সম্মান ও শ্রদ্ধা করে থাকে ।
নেতা হিসেবে মাও সে তুং এর সবচেয়ে বড়ো কৃতিত্ব হল যে , তিনি লেনিন এবং মার্কসবাদের অন্ধ সমর্থক ছিলেন না । তিনি চিনদেশের সাম্যবাদকে নতুন মোড়কে বন্দি করে ছিলেন । যাতে এই সাম্যবাদ চিনদেশের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠতে পারে, তার জন্য চেষ্টা করেছিলেন ।
সাম্যবাদী মহান নেতা মাও সে তুং এর একটি সংক্ষিপ্ত জীবনী । মাও সে তুং এর জীবনী – Mao Zedong Biography in Bengali বা মাও সে তুং এর আত্মজীবনী বা (Mao Zedong Jivani Bangla. A short biography of Mao Zedong. Mao Zedong Birth, Place, Life Story, Life History, Biography in Bengali) মাও সে তুং এর জীবন রচনা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
মাও সে তুং কে ছিলেন ? Who is Mao Zedong ?
মাও সে তুং (Mao Zedong) ছিলেন একজন চীনা বিপ্লবী মার্কসবাদী তাত্ত্বিক ও রাজনৈতিক নেতা। ১৯৪৯ সালে সমাজতন্ত্রী চীনের প্রতিষ্ঠার পর থেকে ১৯৭৬ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মাও সে তুং (Mao Zedong) চীন শাসন করেন নেতা ছিলেন। মাও সে তুং (Mao Zedong) চীনের কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন। মার্কসবাদ-লেনিনবাদে তাঁর তাত্ত্বিক অবদান, সমর কৌশল এবং তাঁর কমিউনিজমের নীতি এখন একত্রে মাওবাদ নামে পরিচিত।
সাম্যবাদী মহান নেতা মাও সে তুং এর জীবনী – Mao Zedong Biography in Bengali :
নাম (Name) | মাও সে তুং (Mao Zedong) |
জন্ম (Birthday) | ২৬ ডিসেম্বর ১৮৯৩ (26th December 1893) |
জন্মস্থান (Birthplace) | শাওশান, হুনান |
অভিভাবক | মাও জেন শেং |
জাতীয়তা | চীনা |
দাম্পত্য সঙ্গী (Spouse) | Luo Yixiu (1907–1910)
Yang Kaihui (1920–1930) He Zizhen (1930–1937) চিয়াং চিং (1939–1976) |
রাজনৈতিক দল | চীনের কমিউনিস্ট পার্টি |
সন্তান | ১০ |
পেশা (Occupation) | বিপ্লবী, রাষ্ট্রনায়ক |
মৃত্যু (Death) | ৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭৬ (9th September 1976) |
মাও সে তুং এর জন্ম ও শৈশবকাল – Mao Zedong Birthday and Childhood :
চিন বিপ্লবের মহানায়ক মাও সে তুং – এর জন্ম হয়েছিল ১৮৯৩ সালের ২৬ শে ডিসেম্বর হুনানের এক কৃষক পরিবারে । ছোটো থেকেই কৃষিকাজে তাঁকে যোগ দিতে হয়েছে । সকাল থেকে সন্ধ্যে পর্যন্ত অক্লান্ত পরিশ্রম করতে হত । পড়াশুনার প্রতি আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও স্কুলে যাবার সময় পেতেন না । বাবাকে একথা বলেও কোনো লাভ হত না । বাবা ছিলেন বাস্তববাদী মানুষ । তিনি বারবার বলতেন স্কুলে গিয়ে কী হবে , সেই সময়টা কৃষিকাজে মন দাও !
সেদিনের বিষণ্ণ মাও সে তুং ভবিষ্যতের সুখস্বপ্ন দেখতেন , আবার ভাবতেন , যদি সময় ও সুযোগ আসে , তাহলে পড়াশুনায় আত্মনিয়োগ করবেন । শেষ পর্যন্ত এক ধনী ব্যক্তি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন । তাঁর কাছ থেকে পাওয়া টাকা নিয়ে মাও সে তুং স্কুলে ভর্তি হলেন ।
মাও সে তুং এর শিক্ষাজীবন – Mao Zedong Education Life :
স্কুলে ভরতি হওয়ার পর চোখের সামনে এক বন্ধ দুয়ার খুলে গেল । এত মনীষীর ছড়াছড়ি , এত বুদ্ধির বিচ্ছুরণ , দেখে মাও সে তুং অবাক হয়ে গেলেন । পাঠ্যবইয়ের বাইরে বিভিন্ন বই পড়ার চেষ্টা করতেন । তাঁকে আকর্ষণ করত প্রাচীন সভ্যতার ইতিহাস এবং সমাজ বিজ্ঞানের বই ।
চিনের ইতিহাস পাঠ করে মাও জানতে পারলেন যে , ১৮৫০ ১৮৬৫ সাল পর্যন্ত চিনদেশে যে বিপ্লব সংগঠিত হয়েছিল , সেটি হল তাইপে বিপ্লব ।
এই সূত্রে জানতে পারলেন জাতীয়তাবাদী গণতন্ত্রী মহান নেতা সান – ইয়াৎ – সেনের নাম । চিনে তাঁর নেতৃত্বে কৃষক বিপ্লব হয় । এইভাবে মাঞ্চু রাজবংশের প্রজা নিপীড়নের পালা শেষ হয়ে যায় ।
চীনের কমিউনিস্ট পার্টি : China’s Communist party :
১৯৪৯ সালে কমিউনিস্ট পার্টি যখন ক্ষমতা দখল করেছিল , তখন মাও সে তুং তাইপে বিদ্রোহ এবং সান ইয়াৎ – সেনের আন্দোলনের কথা মনে রেখেছিলেন ।
সেই অবস্থাতেই মাও সে তুং সাধারণ মানুষদের সাথে মিশতে শুরু করেন । পিকিং – এ এসে পরিচিত হন চিও সু চিউ – এর সঙ্গে । এই ভদ্রলোক ছিলেন একজন পণ্ডিত এবং রাজনৈতিক বুদ্ধিজীবী । তার উদ্যোগেই চিনের বুকে কমিউনিস্ট পার্টি স্থাপিত হয়েছিল ।
মাও সে তুং এর ছাত্র আন্দোলনে অংশ গ্রহণ : Mao Zedong Join Student Movement :
১৯১৪ সালে চিন সফরে বেরিয়ে মাও এলেন সাংহাইতে । ছাত্র আন্দোলনে অংশ গ্রহণ করলেন ।
[আরও দেখুন, আলবার্ট আইনস্টাইন জীবনী – Albert Einstein Biography in Bengali]
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ – First WorldWar :
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ বেঁধে গেল । ব্রিটেন ও ফ্রান্সের বন্ধুরাষ্ট্র হিসেবে চিন যুদ্ধে যোগ দিল । যুদ্ধ শেষ হবার পর চিনের রাজনৈতিক স্বার্থ বিঘ্নিত হল । জাপান তখন চিনকে অধিকার করতে উদ্যত হয়েছে , চিনে ঘটে গেল জাপানের অনুপ্রবেশ । সমস্ত চিনে ব্যাপক প্রতিবাদী আন্দোলন দেখা দিল । এগিয়ে এলেন সান – ইয়াৎ – সেন । ক্যান্টনের কুত্তমিনটাং শক্তি সান – ইয়াৎ – সেনের নেতৃত্বে জাপানের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠে ।
মাও সে তুং এর কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগদান – Mao Zedong Join Communist party :
এই জাতীয়তাবাদী গণ আন্দোলন সেদিনের সদ্য তরুণ মাওকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করেছিল । ১৯২০ সালে তিনি কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো পাঠ করে নিজেকে কমিউনিস্ট বলে ঘোষণা করেন । ১৯২১ সালে গেলেন সাংহাইতে কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠা উৎসবে যোগ দিতে ।
তিরিশের দশকে মাও এক অসাধারণ শক্তিশালী সাম্যবাদী দল গড়ে তুলতে সমর্থ হয়েছিলেন । ইতিমধ্যে সারা পৃথিবীতে প্রথম শ্রেণির রাজনৈতিক নেতা হিসেবে স্বীকৃতি অর্জন করেছেন । লেনিনকে আদর্শ করে এগিয়ে গেলেন শ্রেণি সংগ্রামে । শেষ অব্দি তাঁর স্বপ্ন সফল হল । ১৯৩৬ সালে মাও এর নেতৃত্বে ছয় হাজার সমর্থক ১২ হাজার বর্গমাইল পায়ে হাঁটলেন । তারা অতিক্রম করলেন দক্ষিনের হুনান , ফুকেন , ইয়াংসি থেকে উত্তর পশ্চিমের শেনানি প্রদেশে পিছিয়ে যান । পশ্চাদপদসরনের এই ঘটনা মানুষের ইতিহাসে এক স্মরণীয় অধ্যায় । এই দীর্ঘ পদযাত্রাকেই বলা হয় লং মার্চ এইভাবে বিশ্বের ইতিহাসে এক নবচেতনার উদ্ভব ঘটে গেল ।
বিরুদ্ধ শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করতে বহু নদী , বরফ ঢাকা পাহাড় , জনহীন প্রাত্তর , জলাভূমি অতিক্রম করে মাও অসাধারণ সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছিলেন । চূড়ান্ত সাফল্যের সঙ্গে চিনে সাম্যবাদ স্থাপন করলেন । পরবর্তীকালে তিনি বিশ্বের একজন অসাধারণ সংগঠক ও অসামান্য সমর বিশারদ নেতা হিসেবেও স্বীকৃতী লাভ করেন ।
মহান এই নেতা চিনকে একটি আধুনিক রাষ্ট্রে পরিণত করতে চেয়েছিলেন । তবে মাও থাকার সময়েই চিনে নানা ধরনের অন্তর্দ্বন্দ্ব দেখা যায় । পার্টির মধ্যে দেখা দেয় তীব্র মতবিরোধ । সংস্কারকামী উদারপন্থী নেতৃবর্গ জনসমর্থন লাভ করেন ।
সংস্কারপন্থী নেতৃবর্গের এই আদর্শ ও পদক্ষেপের বিরোধিতা করতে গিয়ে মাদাম মাও সে তুং থেকে শুরু করে মাওপন্থী কট্টর নেতৃবর্গ কারারুদ্ধ হন । চিনের সাধারণ মানুষ ও কমিউনিস্ট পার্টির কাছে এই নেতৃবর্গ গ্যাং অব ফোর নামে ধিকৃত হন ।
[আরও দেখুন, উইলিয়াম শেকসপিয়র এর জীবনী – William Shakespeare Biography in Bengali]
মাও সে তুং এর মৃত্যু – Mao Zedong Death :
চিনের এই অবিসংবাদিত মহান নেতা ১৯৭৬ সালের ৯ ই সেপ্টেম্বর ৮৩ বছর বয়সে পরলোক গমন করেন । তাঁর মরদেহ চিনে মমি করে একটি কাচের শবাধারে রক্ষিত আছে ।
মাও সে তুং – কিংবদন্তির এক মহান চরিত্র । মাও সে তুং – এর ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে যত কথা বলা হোক না কেন , বিপ্লবের ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন আপোসহীন সত্তা । জীবনে যা সত্য এবং শাশ্বত বলে মনে করেছেন , তার জন্য জীবনের সবকিছু উৎসর্গ করতে রাজি ছিলেন ।
বর্তমানে মাও – এর চীন দেশে কমিউনিস্ট পার্টি সর্ববাদী সম্মত সিদ্ধান্তের দ্বারা দেশে বিদেশী পুঁজির আহ্বান ও মুক্ত বাণিজ্য নীতি সার্থক ভাবে অনুসরণ করে চলেছে ।
মাও সে তুং এর জীবনী – Mao Zedong Biography in Bengali FAQ :
- মাও সে তুং কে ছিলেন ?
Ans: মাও সে তুং ছিলেন চীনা বিপ্লবী মার্কসবাদী তাত্ত্বিক ও রাজনৈতিক নেতা ।
- মাও সে তুং এর জন্ম কবে হয় ?
Ans: মাও সে তুং এর জন্ম হয় ২৬ ডিসেম্বর ১৮৯৩ সালে।
- মাও সে তুং এর পিতার নাম কী ?
Ans: মাও সে তুং এর পিতার নাম মাও জেন শেং ।
- মাও সে তুং কবে চীনের কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগদান করেন ?
Ans: মাও সে তুং ১৯২১ সালে চীনের কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগদান করেন ।
- মাও সে তুং এর জন্ম কোথায় হয় ?
Ans: মাও সে তুং এর জন্ম হয় শাওশান, হুনান এ ।
- মাও সে তুং কত সালে নিজেকে কমিউনিস্ট বলে ঘোষণা করেন ?
Ans: মাও সে তুং ১৯২০ সালে নিজেকে কমিউনিস্ট বলে ঘোষণা করেন ।
- কত সালে কমিউনিস্ট পার্টি ক্ষমতা দখল করে ?
Ans: ১৯৪৯ সালে কমিউনিস্ট পার্টি ক্ষমতা দখল করে ।
- মাও সে তুং এর কতগুলি সন্তান ছিল ?
Ans: মাও সে তুং এর ১০ টি সন্তান ছিল ।
- মাও সে তুং এর জন্ম কবে হয় ?
Ans: মাও সে তুং এর জন্ম হয় ২৬ ডিসেম্বর ১৮৯৩ সালে।
- মাও সে তুং এর মৃত্যু কবে হয় ?
Ans: মাও সে তুং এর মৃত্যু হয় ১৯৭৬ সালের ৯ ই সেপ্টেম্বর ।
[আরও দেখুন, আর্কিমিডিস এর জীবনী – Archimedes Biography in Bengali
আরও দেখুন, জেমস ওয়াট এর জীবনী – James Watt Biography in Bengali
আরও দেখুন, লুই পাস্তুর এর জীবনী – Louis Pasteur Biography in Bengali
আরও দেখুন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জীবনী – Rabindranath Tagore Biography in Bengali
আরও দেখুন, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর জীবনী – Ishwar Chandra Vidyasagar Biography in Bengali]
মাও সে তুং এর জীবনী – Mao Zedong Biography in Bengali
অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই ” মাও সে তুং এর জীবনী – Mao Zedong Biography in Bengali ” পােস্টটি পড়ার জন্য। মাও সে তুং এর জীবনী – Mao Zedong Biography in Bengali পড়ে কেমন লাগলো কমেন্টে জানাও। আশা করি এই মাও সে তুং এর জীবনী – Mao Zedong Biography in Bengali পোস্টটি থেকে উপকৃত হবে। এই ভাবেই BhugolShiksha.com ওয়েবসাইটের পাশে থাকো যেকোনো প্ৰশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলাে করো এবং নিজেকে তথ্য সমৃদ্ধ করে তোলো , ধন্যবাদ।