চৈতন্য মহাপ্রভুর জীবনী - Chaitanya Mahaprabhu Biography in Bengali
চৈতন্য মহাপ্রভুর জীবনী - Chaitanya Mahaprabhu Biography in Bengali

চৈতন্য মহাপ্রভুর জীবনী

Chaitanya Mahaprabhu Biography in Bengali

চৈতন্য মহাপ্রভুর জীবনী – Chaitanya Mahaprabhu Biography in Bengali : বৈষ্ণব ধর্মের প্রচারক শ্রীচৈতন্যদেব ভারত ইতিহাসের এক সংকটাপন্ন সময়ে পরিত্রাতা রূপে আবির্ভূত হয়েছিলেন শ্রীচৈতন্য বা চৈতন্য মহাপ্রভু (Chaitanya Mahaprabhu) । তাই চৈতন্য মহাপ্রভুকে (Chaitanya Mahaprabhu) বলা হয় যুগাবতার । অর্থাৎ যুগের প্রয়োজনে অবতীর্ণ মহামানব ।

  বৈষ্ণব ধর্মের প্রচারক চৈতন্য মহাপ্রভু এর একটি সংক্ষিপ্ত জীবনী । চৈতন্য মহাপ্রভু এর জীবনী – Chaitanya Mahaprabhu Biography in Bengali বা চৈতন্য মহাপ্রভু এর আত্মজীবনী বা (Chaitanya Mahaprabhu Jivani Bangla. A short biography of Chaitanya Mahaprabhu. Chaitanya Mahaprabhu Birth, Place, Life Story, Life History, Biography in Bengali) চৈতন্য মহাপ্রভু এর জীবন রচনা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

চৈতন্য মহাপ্রভু কে ছিলেন ? Who is Chaitanya Mahaprabhu ?

চৈতন্য মহাপ্রভু (Chaitanya Mahaprabhu) ছিলেন পূর্ব এবং উত্তরভারতের এক বহু লোকপ্রিয় বৈষ্ণব সন্ন্যাসী ও ধর্মগুরু এবং ষোড়শ শতাব্দীর বিশিষ্ট সমাজ সংস্কারক। চৈতন্য মহাপ্রভু (Chaitanya Mahaprabhu) গৌড়বঙ্গের নদিয়া অন্তর্গত নবদ্বীপে (অধুনা পশ্চিমবঙ্গের নদিয়া জেলা) হিন্দু ব্রাহ্মণ পণ্ডিত শ্রীজগন্নাথমিশ্র ও শ্রীমতী শচীদেবীর গৃহে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। বৈষ্ণব সমাজে তাঁকে শ্রীরাধাকৃষ্ণের যুুুগল প্রেমাবতার বলে মনে করা হয়। শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য বা চৈতন্য মহাপ্রভু (Chaitanya Mahaprabhu) ছিলেন শ্রীমদ্ভাগবত পুরাণ ও শ্রীমদ্ভগবদ্গীতায় উল্লিখিত দর্শনের ভিত্তিতে ভক্তিযোগ ভাগবত দর্শনের একজন বিশিষ্ট প্রবক্তা ও প্রচারক।

বৈষ্ণব ধর্মের প্রচারক চৈতন্য মহাপ্রভুর এর জীবনী – Chaitanya Mahaprabhu Biography in Bengali :

নাম (Name) গৌরাঙ্গ চন্দ্র দেব বা শ্রীচৈতন্য বা শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য বা চৈতন্য মহাপ্রভু (Chaitanya Mahaprabhu)
জন্ম (Birthday) ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৪৮৬ (18th February 1486)
জন্মস্থান (Birthplace) নবদ্বীপ, নদিয়া, ভারত
অভিভাবক (Parents)/পিতামাতা জগন্নাথ মিশ্র ও শচী দেবী
ধর্ম হিন্দু ধর্ম
দাম্পত্য সঙ্গী লক্ষ্মীপ্রিয়া দেবী , বিষ্ণুপ্রিয়া দেবী
যে জন্য পরিচিত গৌরীও বৈষ্ণব ধর্ম , কীর্তন
প্রতিষ্ঠাতা গৌড়ীয় বৈষ্ণবধর্ম
দর্শন অচিন্ত্য অদ্বৈতাদ্বৈত (ভেদাভেদ) বেদান্ত দর্শন, শ্রীব্রহ্মসূত্র-গোবিন্দভাষ্যম্, ভক্তিযোগ গৌড়ীয় ভাগবত(বৈষ্ণব) মত
গুরু স্বামী ঈশ্বরপুরী (মন্ত্র প্রদাতা গুরু)

স্বামী কেশব ভারতী (সন্ন্যাস দীক্ষা গুরু)

শিষ্য রূপা গোস্বামী, সনাতন গোস্বামী, গোপাল ভট্ট গোস্বামী, রঘুনাথ ভট্ট গোস্বামী, রঘুনাথ দাস গোস্বামী , জীব গোস্বামী, অন্যান্য
মৃত্যু (Death) ১৪ জুন ১৫৩৪ (14th June 1534)

চৈতন্য মহাপ্রভুর জন্ম ও পিতামাতা – Chaitanya Mahaprabhu Birthday and Parents :

চৈতন্য মহাপ্রভু (Chaitanya Mahaprabhu) জন্মগ্রহণ করেন ১৪৮৬ খ্রিঃ ১৯ শে ফেব্রুয়ারী । ফাল্গুনী পূর্ণিমার পুণ্য তিথি । নবদ্বীপের আকাশে আর গঙ্গার বুকে জোছনার জোয়ার উথূলে উঠেছে । সেদিন আবার চন্দ্রগ্রহণের যোগ । ভিড়ের তাই অন্ত নেই । কোলাহল আর হরিধ্বনিতে আকাশ – বাতাস ভরপুর । এমন সময় মায়াপুর পল্লীতে শ্রীহট্টিয়া পাড়ায় নারীকণ্ঠের ঘন ঘন উলুধ্বনি শোনা গেল । শাঁখ বেজে উঠলো চারিদিকে । কি ব্যাপার ? – শোনা গেল এইমাত্র পণ্ডিত জগন্নাথ মিশ্রের ঘরে তার স্ত্রী শচীদেবী একটি পুত্র সস্তানের জন্ম দিয়েছেন ।

 নীলাম্বর চক্রবর্তী শচীদেবীর পিতা । মস্ত পণ্ডিত তো বটেই জ্যোতিষ শাস্ত্রেও তাঁর খ্যাতি কম নয় । দৌহিত্রের জন্ম – সংবাদ পেয়েই তিনি নবজাতকের ভাগ্য গণনায় বসে গেলেন । গণনা শেষে বললেন , এ জাতকের কোষ্ঠী অপূর্ব । এ শুধু অসামান্য মনীষী ও বিদ্যার অধিকারী হবে না , ধর্মজগতের এক মস্তবড় নেতা হবে । বহু লোক দেবতা জ্ঞানে তাঁকে পূজো করবে ।

 দাদামহাশয়ের ভবিষ্যদ্বাণী সত্য প্রমাণিত হয়েছিল । নিমাই শুধু অগাধ পাণ্ডিত্যের অধিকারী হন নি , ধর্মজগতে এনেছিলেন এক বিরাট বিপ্লব । সমাজের ও ধর্মজীবনের কলুষ দূর করবার জন্যে দেশে ভক্তির বন্যা বইয়ে দেবার জন্যে তাঁর আবির্ভাব ঘটেছিল । এই জন্যে তাকে বলা হয় যুগাবতার ।

 জগন্নাথ মিশ্রের প্রথম ছেলের নাম বিশ্বরূপ । পরপর কয়েকটি ছেলে – মেয়ের মৃত্যুর পর এই ছেলের জন্ম । মা শচীদেবী তাই নবজাতকের নাম রাখলেন নিমাই । কোষ্ঠীর নাম ‘ বিশ্বম্ভর ।

নিমাইয়ের শৈশবকাল – Nimai Childhood :

 ডুবনভোলানো রূপ নিমাইয়ের । একবার দেখলে চোখ ফেরানো কঠিন । বাপ – মায়ের তো বটেই , পাড়া – পড়শীদেরও সে নয়নের মণি । দিনে দিনে বাড়ে চাঁদের কলার মত । শচীমার বুকের ধন , চোখের মণি আঙিনায় খেলা করে । মা যশোদা যেমন তাঁর নয়নমণি শ্রীকৃষ্ণকে সাজাতেন তেমনি ক’রে শচীমাতাও সাজিয়ে দেন নিমাইকে । চঞ্চল অস্থির শিশু কারও কথা শোনে না । লেখাপড়ায় তার এতটুকুও মন নেই । সারাদিন , শুধু খেলা করে আর নেচে বেড়ায় । 

নিমাইয়ের শিক্ষাজীবন – Niami Education Life :

 পাঁচ বছরে নিমাইয়ের হাতে খড়ি হলো । হাতে খড়ির দিন দেখা গেল , বালকের মেধা ও প্রতিভা দুই – ই বিস্ময়কর । বিদ্যালয়ের পাঠ অনায়াসেই সে আয়ত্ত করে । পুত্র গৌরবে মায়ের মন খুশিতে ভরে ওঠে ।

নিমাই এর বড় ভাই বিশ্বরূপ এর সন্ন্যাস গ্রহণ :

 নিমাইয়ের বয়স যখন প্রায় সাত বছর , তখন তার বড় ভাই বিশ্বরূপ ষোল বছর বয়সে সন্ন্যাস গ্রহণ করে সংসার ছেড়ে চলে যান । জগন্নাথ মিশ্র ভেঙ্গে পড়েন । চোখের জলে বুক ভাসাতে থাকেন শচীমা । নিমাই বলেনঃ “ কেঁদো না মা । দাদা সন্ন্যাসী হয়েছেন কিন্তু আমি তো আছি । আমি তোমাদের দেখব । ” 

 পাছে বড় ছেলের মত নিমাইও লেখাপড়া শিখে গৃহত্যাগ করে সন্ন্যাসী হয়ে চলে যায় এই ভয়ে জগন্নাথ মিশ্র নিমাইয়ের লেখাপড়া বন্ধ ক’রে দিলেন । কিন্তু লেখাপড়া বন্ধ করে দেওয়াতে বালক নিমাই এক দুরন্ত বালকে পরিণত হলেন । তাঁর অত্যাচারে ও দুরত্তপনায় নবদ্বীপের সকলেই অতিষ্ঠ হয়ে উঠলেন ।

নিমাইয়ের যৌবনকাল – Nimai Young Age :

 সাত বছরের ছেলে নিমাই কখনও কলাবাগান থেকে পাকা কলা চুরি করে খান , কখনও বা গঙ্গার জল তোলপার করে সাঁতার কাটেন । গঙ্গায় স্নানরত ব্রাহ্মণদের কাপড় – চাদর জলে ভিজিয়ে দেন , কখনও লুকিয়ে রাখেন । আবার কখনও বা কারও পূজার আসনে গিয়ে বসে নৈবেদ্যের ফলমূল খেয়ে পালিয়ে যান । গঙ্গাতীরে শিবলিঙ্গ সামনে রেখে কোন ব্রাহ্মণ হয়তো ধ্যানে বসেছেন । নিমাই নিঃসাড়ে সেখানে গিয়ে সেই শিবলিঙ্গ চুরি করে পালিয়ে যান । এমনি আরও অনেক অপকর্ম করে বেড়ান নিমাই ।

 নিমাইয়ের এমনিতর উৎপীড়নে ব্যতিব্যস্ত হয়ে নবদ্বীপবাসীরা জগন্নাথ পণ্ডিতের কাছে গিয়ে অভিযোগ করেন । বলেন , দুরস্ত ছেলেটাকে একটু সামলান । ওর দুষ্টামির জ্বালায় আমরা যে অতিষ্ঠ হয়ে উঠলাম ।

 পাড়া – প্রতিবেশীদের কথায় বাপ মায়ের চৈতন্য হলো । তারা বুঝলেন — লেখাপড়া করতে না দেওয়াতে ছেলে এমন দুরস্ত হয়ে উঠেছে । জগন্নাথ মিশ্র ও শচীদেবী তখন বাধ্য হয়ে ছেলেকে গঙ্গাদাস পন্ডিতের টোলে লেখাপড়া শিখতে পাঠিয়ে দিলেন ।

নিমাইয়ের গুরুর কাছে শিক্ষা গ্রহন :

 গঙ্গাদাস , বিষ্ণুদাস ও সুদর্শন — এই তিন পণ্ডিতের চতুষ্পাঠীর পড়া যখন নিমাই শেষ করলেন তখন তার বয়স আঠারো বছর । বেশ কয়েক বছর আগেই জগন্নাথ মিশ্র দেহত্যাগ করেছেন । অসাধারণ তাঁর প্রতিভা ও বিদ্যাবত্তা । নানা কূট প্রশ্ন তুলে লোককে বিব্রত করা , অপদস্ত করে রঙ্গ দেখা এখন তাঁর বিলাস । নবদ্বীপের নবীন ও প্রবীণ পণ্ডিতেরা এখন তাঁর ভয়ে ভীত , সবাই তাকে এড়িয়ে চলেন ।

 নবদ্বীপ শহরে মুকুন্দসঞ্জয় নামে একজন বর্ধিষ্ণু লোক ছিলেন । তার বাড়ির চণ্ডীমণ্ডপে নিমাই টোল খুলে অধ্যাপনা করতে বসলেন । নিমাইয়ের প্রতিভা ও পাণ্ডিত্যের খ্যাতি চারিদিকে প্রচারিত হতে লাগলো । দূর দূর থেকে ছাত্ররা আসতে লাগলো নিমাই পণ্ডিতের টোলে । টোল জমে উঠতে দেরি হলো না । ধনী ও প্রতিপত্তিশালী নাগরিকদের পৃষ্ঠপোষকতায় অচিরে নিমাই বেশ গণ্যমান্য হয়ে উঠলেন ।

নিমাইয়ের বিবাহ জীবন – Nimai Marriage Life :

 নবদ্বীপের ব্রাহ্মণ বল্লভাচার্যের মেয়ে লক্ষ্মীদেবীর সঙ্গে নিমাইয়ের বিয়ে হয়েছিল ।

 বিয়ের কিছুকাল পরে নিমাই গেলেন পূর্ববঙ্গে । সুপন্ডিত ও প্রতিভাবান পুরুষ বলে সে অঞ্চলে তিনি যথেষ্ট মর্যাদা পেলেন । কিছুকাল পরে নবদ্বীপে ফিরে এসে শুনলেন লক্ষ্মীদেবী সাপের কামড়ে মারা গেছেন । শোক ভুলে থাকবার জন্যে অধ্যাপনার ওপর জোর দিলেন । 

 তিনি আর সেই পরিহাসপ্রিয় চঞ্চল যুবক নন । রাতারাতি হয়ে উঠেছেন গাম্ভীর্যের প্রতিমূর্তি ।

নিমাইয়ের দ্বিতীয় বিবাহ –  Nimai 2nd Marriage :

 কিছুকাল পরে শচীদেবী আবার ছেলের বিয়ে দিলেন । নবদ্বীপের সনাতন পণ্ডিতের মেয়ে বিষ্ণুপ্রিয়ার সঙ্গে । সংসারে আবার আনন্দের বন্যা বয়ে গেল । কিন্তু আনন্দময় এই জীবন কয়েক বছর পর হঠাৎ একদিন বিপর্যস্ত হয়ে গেল । আর সে বিপর্যয় এল নিমাইয়ের অলৌকিক ভাবমত্তার মধ্য দিয়ে দমকা হাওয়ার মত । 

শ্রী কৃষ্ণসাধক নিমাই :

 বিবাহের অল্পকাল পরে নিমাই স্বর্গত পিতার পিণ্ডদান করতে গেলেন গয়াধামে । সেখানে শ্রীবিষ্ণুর পাদপদ্ম দর্শনের পর তাঁর মধ্যে অভূতপূর্ব পরিবর্তন দেখা দিল । তাঁর মধ্যে জন্ম হল শ্রীকৃষ্ণ অনুরাগী এক প্রেমিক সাধকের । অহঙ্কারী পন্ডিত নিমাই হলেন শ্ৰীকৃষ্ণসাধক।

নিমাইয়ের কৃষ্ণ মন্ত্রে দীক্ষা :

 গয়ায় ওই সময় বৈষ্ণবধর্মের প্রবর্তক মাধবেন্দ্র পরীর শিষ্য ঈশ্বরপুরী নামে এক শ্রীবিষ্ণুভক্ত সাধু ছিলেন । নিমাই তাঁকে দেখে তাঁর পায়ে লুটিয়ে পড়ে বললেনঃ “ প্রভু আমাকে দীক্ষা দিন । ” ঈশ্বরপুরী জানতেন — নিমাই একজন পরম ভক্ত । তিনি নিমাইকে কৃষ্ণমন্ত্রে দীক্ষা দিলেন ।

নিমাইয়ের নবদ্বীপে আসা – Nimai Comes To Navdeep :

 নিমাই এরপর ফিরে এলেন নবদ্বীপে । কিন্তু তখন তিনি আর আগের নিমাই নন , যেন অন্য মানুষ । সারা মন তার কৃষ্ণনামে ভরা । কৃষ্ণনাম করতে করতে তিনি কাঁদেন , কখনও বা মূর্ছিত হয়ে পড়েন ।

[আরও দেখুন, আদি কবি মহাঋষি বাল্মীকি জীবনী – Maharishi Valmiki Biography in Bengali]

নবদ্বীপে নিমাইয়ের শ্রী হরির কীর্তন প্রচার :

 নবদ্বীপের শাসনকর্তা তখন একজন মুসলমান কাজী । বৈষ্ণবদের কীর্তন নিয়ে এই মাতামাতি হৈ – হুল্লোড় তিনি ভাল চোখে দেখতেন না । তিনি আদেশ জারী করলেন , নবদ্বীপে সমবেতভাবে কীর্তন করা চলবে না।

 তাই শুনে নিমাই ক্রোধে রুদ্রমূর্তি ধারন করলেন । সেই দিনই তিনি হাজার হাজার ভক্ত নিয়ে শ্রীহরির নাম গান করতে করতে পথে বেরলেন । সারা শহর প্রদক্ষিণ করে অবশেষে কাজীর বাড়িতে উপস্থিত হলেন । নিমাইয়ের ভগবদ্ভক্তি ও মধুর নাম গান শুনে কাজীর মনের পরিবর্তন হলো । তিনি তাঁর আদেশ তুলে নিলেন । সারা নবদ্বীপ কৃষ্ণনাম গানে ভরে গেল ।

নিমাইয়ের কেশব ভারতীর কাছে দীক্ষা ও শ্রী কৃষ্ণচৈতন্য নাম :

 এরপর নিমাইয়ের অন্তরাত্মায় এলো আর এক নতুন আহ্বান । বিশ্বমানবের কল্যাণের জন্য তাঁকে এই প্রেমভক্তির প্রবাহকে সঞ্চালিত করতে হবে । গৃহত্যাগ না করলে সেই বৃহত্তর কর্মক্ষেত্রে ঝাপ দেওয়া যাবে না । তাই মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের এক রাতে নিমাই গৃহত্যাগ করলেন । ছুটে গেলেন কাটোয়ায় । সেখানে পন্ডিত কেশব ভারতীর কাছে দীক্ষা নিলেন । নিমাই তখন থেকে পরিচিত হলেন শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য নামে । তখন তাঁর বয়স মাত্র চব্বিশ বছর ।

[আরও দেখুন, গৌতম বুদ্ধের জীবনী – Gautam Buddha Biography in Bengali]

চৈতন্য মহাপ্রভুর বাণী :

 জাতিবর্ণ ধর্ম নির্বিশেষ সকল মানুষের মধ্যে প্রেমের বাণী প্রচার করেছিলেন শ্রীচৈতন্য । এর বাইরে তিনি অন্য কোন ধর্মতত্ত্ব প্রতিষ্ঠা করেননি । কোন ধর্মগ্রন্থও রচনা করেন নি । মানবীয় চেতনার পূর্ণবিকশিত , রূপবিগ্রহ ছিলেন তিনি । মানুষে মানুষে বিভেদ মুছে দেবার ব্রতই ছিল তাঁর জীবনসাধনা । সন্ন্যাসী হলেও তিনি আত্মমুক্তিকামী বা মানবতা বিমুখী ছিলেন না । সেই আকর্ষণেই হাজার হাজার মানুষ তার কাছে ছুটে আসত , লাভ করত জীবনের আলো ।

 তিনি সকল মানুষের জন্য যে মহানাম প্রচার করে গেছেন তা হলো –

 ” হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে, হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে ।”

চৈতন্য মহাপ্রভুর মৃত্যু – Chaitanya Mahaprabhu Death :

 জীবনের শেষ আঠারোটি বছর শ্রীচৈতন্যদেব পুরীধামে কাটিয়েছিলেন । পুরীধামে ১৫৩৪ খ্রীষ্টাব্দের ১৪ শে জুন ( আষাঢ় মাসে ) শ্রীচৈতন্যদেব চিরতরে অন্তর্হিত হয়ে যান । হিন্দুধর্মের এক দুর্যোগপূর্ণ সময়ে শ্রীচৈতন্য দেবের আবির্ভাব হয়েছিলো । তিনি সেই সময় প্রচার করেন— “ ঈশ্বরের আরাধনায় সকলের সমান অধিকার । প্রাণে ভক্তি নিয়ে ঈশ্বরকে ডাকলে তাকে পাওয়া যায় । ভক্তিতেই মুক্তি । ” 

চৈতন্য মহাপ্রভুর জীবনী – Chaitanya Mahaprabhu Biography in Bengali FAQ :

  1. চৈতন্য মহাপ্রভু কে ছিলেন ?

Ans: চৈতন্য মহাপ্রভু ছিলেন পূর্ব এবং উত্তরভারতের এক বহু লোকপ্রিয় বৈষ্ণব সন্ন্যাসী ও ধর্মগুরু এবং ষোড়শ শতাব্দীর বিশিষ্ট সমাজ সংস্কারক ।

  1. চৈতন্য মহাপ্রভুর জন্ম কোথায় হয় ?

Ans: চৈতন্য মহাপ্রভুর জন্ম হয় নবদ্বীপে ।

  1. চৈতন্য মহাপ্রভু কবে জন্মগ্রহন করেন ?

Ans: চৈতন্য মহাপ্রভু জন্মগ্রহন করেন ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৪৮৬ সালে ।

  1. চৈতন্য মহাপ্রভুর পিতার নাম কী ?

Ans: চৈতন্য মহাপ্রভুর পিতার নাম জগন্নাথ মিশ্র ।

  1. চৈতন্য মহাপ্রভুর মাতার নাম কী ?

Ans: চৈতন্য মহাপ্রভুর মাতার নাম শচী দেবী ।

  1. চৈতন্য মহাপ্রভু কার কাছে দীক্ষা নেন ?

Ans: চৈতন্য মহাপ্রভু কেশব ভারতীর কাছে কাছে দীক্ষা নেন ।

  1. চৈতন্য মহাপ্রভুর স্ত্রীর নাম কী ?

Ans: চৈতন্য মহাপ্রভুর স্ত্রীর নাম লক্ষ্মীপ্রিয়া ও বিষ্ণুপ্রিয়া।

  1. চৈতন্য মহাপ্রভুর মহানাম প্রচার করে গেছেন তা কী ?

Ans: চৈতন্য মহাপ্রভুর মহানাম প্রচার করে গেছেন তা হলো – ” হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে, হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে ।”

  1. চৈতন্য মহাপ্রভু কবে মারা যান ?

Ans: চৈতন্য মহাপ্রভু মারা যান ১৪ জুন ১৫৩৪ সালে।

[আরও দেখুন, মহাত্মা গান্ধীর জীবনী – Mahatma Gandhi Biography in Bengali

আরও দেখুন, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের জীবনী – Sourav Ganguly Biography in Bengali

আরও দেখুন, শচীন টেন্ডুলকারের জীবনী – Sachin Tendulkar Biography in Bengali

আরও দেখুন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জীবনী – Rabindranath Tagore Biography in Bengali

আরও দেখুন, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর জীবনী – Ishwar Chandra Vidyasagar Biography in Bengali]

চৈতন্য মহাপ্রভু এর জীবনী – Chaitanya Mahaprabhu Biography in Bengali

   অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই ” চৈতন্য মহাপ্রভু এর জীবনী – Chaitanya Mahaprabhu Biography in Bengali  ” পােস্টটি পড়ার জন্য। চৈতন্য মহাপ্রভু এর জীবনী – Chaitanya Mahaprabhu Biography in Bengali পড়ে কেমন লাগলো কমেন্টে জানাও। আশা করি এই চৈতন্য মহাপ্রভু এর জীবনী – Chaitanya Mahaprabhu Biography in Bengali পোস্টটি থেকে উপকৃত হবে। এই ভাবেই BhugolShiksha.com ওয়েবসাইটের পাশে থাকো যেকোনো প্ৰশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলাে করো এবং নিজেকে  তথ্য সমৃদ্ধ করে তোলো , ধন্যবাদ।