জরথুশস্ত্র এর জীবনী - Zoroaster Biography in Bengali
জরথুশস্ত্র এর জীবনী - Zoroaster Biography in Bengali

জরথুশস্ত্র এর জীবনী – Zoroaster Biography in Bengali

জরথুশস্ত্র এর জীবনী – Zoroaster Biography in Bengali : পার্সী ধর্ম মতবাদের প্রবর্তক জ্ঞানসাধক জরথুশস্ত্র বর্তমান ইরানের প্রাচীন নাম পারস্য । প্রাচীন পারস্যে প্রায় দেড় – দু’হাজার বছর ধরে একটি ধর্মমত প্রচলিত ছিলো জরথুশস্ত্র (Zoroaster) নাম ছিলো পাসী ধর্ম । এই পার্সী ধর্মের যিনি প্রবর্তক ছিলেন তিনিই হলেন জ্ঞানসাধক মহাপুরুষ জরথুশস্ত্র । জরথুশস্ত্র (Zoroaster) এর ইংরেজি উচ্চারণ জরোয়াষ্টার । 

 প্রাচীন পারসিক ধর্ম প্রচারক জরথুশস্ত্র এর একটি সংক্ষিপ্ত জীবনী । জরথুশস্ত্র এর জীবনী – Zoroaster Biography in Bengali বা জরথুশস্ত্র এর আত্মজীবনী বা (Zoroaster Jivani Bangla. A short biography of Zoroaster. Zoroaster Birth, Place, Life Story, Life History, Biography in Bengali) জরথুশস্ত্র এর জীবন রচনা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

জরথুশস্ত্র কে ছিলেন ? Who is Zoroaster ?

জরথুশস্ত্র (Zoroaster) ছিলেন একজন প্রাচীন পারসিক ধর্ম প্রচারক এবং জরথুস্ত্রীয় ধর্ম মতের প্রবর্তক। জরথুস্ত্রের ধর্ম এক সময় হয়ে ওঠে হাখশামানেশী, পার্থীয় এবং সাসানীয় রাজত্বকালে প্রাচীন পারস্যের জাতীয় ধর্ম, যা মূলত বর্তমানে আধুনিক ইরান ও ভারতের জরথুস্ত্রীয় সম্প্রদায় কর্তৃক পালিত হয়।

জরথুশস্ত্র এর জীবনী – Zoroaster Biography in Bengali :

নাম (Name) জরথুশস্ত্র (Zoroaster)
জন্ম (Birthday) ২৬০০ – ২৭০০ বছর আগে
অভিভাবক (Parents)/পিতামাতা পরুসাস্পা স্পিতামা, দুগদভা 
পরিচিতির কারণ জরাথ্রুস্টবাদ ধর্মের প্রবর্তক
দাম্পত্য সঙ্গী হভভি
সন্তান ফ্রেনি, পরুসিস্তা, ট্রিটি;

ইসাত ভাসটার, উরুভাত-নারা, হভেরে সিϑরা

জরথুশস্ত্র এর জন্ম – Zoroaster Birthday :

 জরথুশস্ত্রের আবির্ভাবকাল অনুমান করা হয় আজ থেকে ২৬০০-২৭০০ বছর আগে । অর্থাৎ যীশু খ্রীষ্টের জন্মের প্রায় সাত – আটশো বছর পূর্বে ।

জরথুশস্ত্র এর শৈশবকাল – Zoroaster Childhood :

 জরথুশস্ত্র সম্বন্ধে কথিত আছে জন্মের পর থেকেই জরথুশস্ত্র (Zoroaster) নাকি শুধু হাসতেন । কারণে অকারণে হাসতেন । তাঁর মাথাও নাকি সবসময় কাপতো । 

জরথুশস্ত্র এর গৃহত্যাগ – Zoroaster Leave Home :

 বয়স কিছু বাড়ার পর জরথুশস্ত্র একদিন কাউকে কিছু না বলেই গৃহত্যাগ করে বেরিয়ে পড়েন । বহুদিন পর্যন্ত তার কোনো খোঁজখবর পাওয়া যায়নি । তারপর কেটে গেল কুড়িটা বছর । দীর্ঘ এতোদিন জরথুশস্ত্র (Zoroaster) কোথায় ছিলেন , কেউ বলতে পারে না । বহু বছর পর জরথুশস্ত্র (Zoroaster) নেমে এলেন এক পাহাড় থেকে । সঙ্গে সঙ্গে আকাশ থেকে ঝরতে লাগলো অগ্নিস্ফুলিঙ্গ । জরথুশস্ত্র (Zoroaster) আগুনের মধ্য দিয়েই হেঁটে এগিয়ে গেলেন । তাতে তাঁর কিছুই হলো না । হয়তো তিনি দীর্ঘ এই কুড়িটা বছর পাহাড়ের গুহায় ঈশ্বরের ধ্যানমগ্ন ছিলেন । অবশেষে ঈশ্বরের সন্ধান পেয়েছিলেন । সাধনায় সিদ্ধিলাভ করেছিলেন ।

জরথুশস্ত্র এর সিদ্ধিলাভ – Zoroaster Accomplishment :

 কুড়ি বছর পর জরথুশস্ত্র ঈশ্বর সাধনায় সিদ্ধিলাভ করে পুনরায় মনুষ্যসমাজে ফিরে আসেন তাঁর ধর্মমত প্রচারের জন্য । জরথুশস্ত্র (Zoroaster) সকলকে শুনিয়েছিলেন ঈশ্বরের কাছ থেকে প্রাপ্ত সত্যবাণী । মহাপুরুষরা অরণ্যে গুহায় পাহাড়ের উচ্চদেশে ঈশ্বরের সন্ধান পান —— ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় এই সত্য। 

জরথুশস্ত্র এর ধর্ম – Zoroaster Religion :

 জরথুশস্ত্র প্রচারিত ধর্মমতে ঈশ্বর এক ও অদ্বিতীয় । তাঁর নাম ‘ অহ্বরমজদা ‘ , হোরমুজদ বা ওরমুজ । তিনি এই বিশ্বব্রহ্মান্ডের স্রষ্টা । এই স্রষ্টা হলেন সর্বশক্তিমান এবং মঙ্গলময় । শুধুই ভালোত্ব তার মধ্যে । আর ভালো মানেই আলো । সূর্য হলো আলোর প্রতীক । স্রষ্টা বা ঈশ্বর সূর্য আর আলোর রূপ ধরে আবির্ভূত হন বা দেখা দেন ৷ ভালোর এবং আলোর একটি বিপরীত দিক বা সত্তা আছে — সেটা হলো মন্দ অর্থাৎ অন্ধকার দিক । এই মন্দ বা অন্ধকারের নাম হলো আহরিমান । এই মন্দ শয়তান বা আহরিমানকে দমন করার জন্য আলোর দেবতা সর্বক্ষণ যুদ্ধরত আছেন ।

 জরথুশস্ত্রর ধর্মমত বা দর্শন আরো বলে , মানুষকে সব সময় মন্দের সঙ্গে লড়াই করে ভালোর দিকে আলোর দিকে থাকতে হয় । নইলে মন্দের দেবতা আহরিমান তাকে দুঃখ – কষ্ট ও বিপদের পথে ফেলে দেয় । তারপর মৃত্যুর পরও তাকে নিয়ে যায় দুঃখময় নরকের অন্ধকারে । পার্সী ধর্মে তাই আগুনকে পবিত্র ও শক্তির প্রতীক বলে মনে করা হয় । এইজন্য তারা আগুনকে পূজাও করে । তারা মনে করে সূর্য আর আগুনকে পূজা করা হলে অঙ্কুরমজদা তথা ঈশ্বর তাদেরকে দুষ্টুমতি শয়তান আহরিমানের হাত থেকে রক্ষা করবেন। 

জরথুশস্ত্র এর পাঁচটি গাথা – Zoroaster five ballads : 

 জরথুশস্ত্র তাঁর ধর্মমত এবং উপলব্ধি পাঁচটি গাথাতে প্রকাশ করেছেন । এই ‘ গাথা ‘ হলো জিজ্ঞাসা ও উপলব্ধিময় বাণী । পার্সীদের মধ্যে একটি নিয়ম প্রচলিত আছে । এদের ধর্মে কেউ মারা গেলে মৃতদেহ পোড়ানোও হয় না , কবরও দেওয়া হয় না । কারণ তারা বিশ্বাস করে এতে আগুন আর পৃথিবীর পবিত্রতা নষ্ট হবে । এজন্যে তারা গোল মঞ্চের মতো উঁচু বাড়ির মতো তৈরি করে এরই ছাদের উপর রেখে দেয় মৃতদেহ । পরে শকুনে এসে খেয়ে যায় । এই ধরনের গোলাকার মঞ্চবিশিষ্ট বাড়িকে বলা হয় টাওয়ার অব সাইলেন্স ( নৈঃশব্দের উচ্চবেদী ) ।

 সকল ধর্মেই মতভেদ , দলাদলি , গোষ্ঠীভেদ আছে । পার্সী ধর্মীয়দের মধ্যেও আছে দুটো দল । একটার নাম সাহানশাহী , অন্যটার নাম কাদসি ৷ পারস্যে তথা ইরানে ইসলাম ধর্ম সম্প্রসারিত হওয়ার পর পারসীদের অনেকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে মুসলমান হয়ে যায় । অনেকে আবার প্রাণভয়ে চলে আসে ভারতবর্ষে । এরা ভারতে এসে মহারাষ্ট্রে ও গুজরাটে বসতি স্থাপন করে । এখনো ওখানে এদের বংশধরেরা আছে । এদের উপাসনালয়ে সারাক্ষণ আগুন জ্বালিয়ে রাখা হয় । এদের ধর্মীয় নেতাদের বলা হয় দস্তর । এরা অগ্নিউপাসক।

[আরও দেখুন, যীশু খ্রীষ্টের জীবনী – Yesu Biography in Bengali]

জরথুশস্ত্র এর ধর্মগ্রন্থ – Zoroaster Holy Book :

 মহাত্মা জরথুশস্ত্রের অমরবানী লিপিবদ্ধ হয়েছে যে পবিত্র গ্রন্থে তার নাম জেদ আবেস্তা । এই গ্রন্থে বহু অমূল্য উপদেশ রয়েছে । 

 এই গ্রন্থ আরও বলেছে , জগৎপিতা আহুর মাজদার মহিমা প্রকাশ করে সমুদ্র , চন্দ্র , সূর্য । এরা হল তার উপাসনার প্রশস্ত মাধ্যম । অগ্নিই তাঁর উপাস্য দেবতা ।

 অগ্নিই সর্বপ্রথম তাঁর সামনে আবির্ভূত হয়েছিলেন । তাই অগ্নিকে তিনি বলেছেন আহুর মাজাদার পুত্ৰ ৷ পার্সী সমাজে ভিক্ষাবৃত্তি হল অভিশাপ । ফলে এই সমাজ পরনির্ভরশীলতা থেকে মুক্ত ৷

 জরথুশস্ত্রের মতে মৃত্যুতেই জীবনের শেষ নয় । মৃত্যুর পরেও আত্মার অস্তিত্ব থাকে । সৎ বা অসৎ কর্ম অনুসারেই মানুষের পরম গতি হয় ।

[আরও দেখুন, গৌতম বুদ্ধের জীবনী – Gautam Buddha Biography in Bengali]

 পবিত্র জেন্দ আবেস্তা গ্রন্থে পরিপূর্ণ মনুষ্যত্ব লাভের সকল উপাদানই রয়েছে । পরবর্তী যুগের বহু ধর্মগুরু জরথুশস্ত্রের পথই অনুসরণ করেছেন ।

 মধ্যযুগে মুসলমানদের আক্রমণে ও ইসলাম ধর্মের ব্যাপক প্রসারের ফলে জরথুশস্ত্রের ধর্মের প্রভাব অনেকাংশে হ্রাস পেয়েছে । কিন্তু কবি হাফিজ প্রমুখ বহু মুসলিম মনীষী জরথুশস্ত্রের ধর্মগ্রন্থ পাঠ করে উচ্চ প্রশংসা করেছেন । 

 ইউরোপেও বহু মনীষী জরথুশস্ত্র ও তাঁর মহান আদর্শের প্রভূত প্রশংসা করেছেন । মহাদার্শনিক প্লেটো জরথুশস্ত্রকে বলেছেন পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা জ্ঞানী মানুষ। 

জরথুশস্ত্র এর মৃত্যু – Zoroaster Death :

 জরথুশস্ত্র – এর মৃত্যু নিয়েও কিংবদন্তী প্রচলিত আছে । জরথুশস্ত্র (Zoroaster) যেদিন সিদ্ধি লাভ করে পাহাড়ের উপর থেকে নেমে এসেছিলেন সেদিন আকাশ থেকে আগুনের বৃষ্টি হয়েছিল । তারপর আর একদিন শুরু হলো অগ্নিবৃষ্টি — সেই অগ্নিবৃষ্টির মধ্যেই সহসা অদৃশ্য হয়ে গেলেন মহামানব জরথুশস্ত্র । এভাবেই ঈশ্বর তাঁকে পৃথিবী থেকে তুলে নিলেন । মৃত্যু হলো তার। 

জরথুশস্ত্র এর জীবনী – Zoroaster Biography in Bengali FAQ :

  1. জরথুশস্ত্র কে ছিলেন ?

Ans: জরথুশস্ত্র ছিলেন একজন প্রাচীন পারসিক ধর্ম প্রচারক এবং জরথুস্ত্রীয় ধর্ম মতের প্রবর্তক ।

  1. জরথুশস্ত্র এর জন্ম কবে হয় ?

Ans: জরথুশস্ত্র এর জন্ম হয় আনুমানিক ২৬০০ – ২৭০০ বছর আগে ।

  1. জরথুশস্ত্র এর স্ত্রীর নাম কী ?

Ans: জরথুশস্ত্র এর স্ত্রীর নাম হভভি ।

  1. জরথুশস্ত্র এর প্রচরিত ধর্মমতে ঈশ্বরের নাম কী ?

Ans: জরথুশস্ত্র এর প্রচরিত ধর্মমতে ঈশ্বরের নাম – ‘ অহ্বরমজদা ‘ , হোরমুজদ বা ওরমুজ ।

  1. জরথুশস্ত্র এর ধর্মগরন্থের নাম কী ?

Ans: জরথুশস্ত্র এর ধর্মগরন্থের নাম জেদ আবেস্তা ।

  1. জরথুশস্ত্র কত বছর পর সিদ্ধিলাভ করেন ?

Ans: জরথুশস্ত্র কত বছর পর সিদ্ধিলাভ করেন ২০ বছর পর ।

  1. জরথুশস্ত্র এর সন্তানদের নাম কী কী ?

Ans: জরথুশস্ত্র এর সন্তানদের নাম ফ্রেনি, পরুসিস্তা, ট্রিটি;ইসাত ভাসটার, উরুভাত-নারা, হভেরে সিϑরা।

[আরও দেখুন, এ.পি.জে. আবদুল কালাম এর জীবনী – A.P.J. Abdul Kalam Biography in Bengali

আরও দেখুন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জীবনী – Rabindranath Tagore Biography in Bengali

আরও দেখুন, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর জীবনী – Ishwar Chandra Vidyasagar Biography in Bengali

আরও দেখুন, শচীন টেন্ডুলকারের জীবনী – Sachin Tendulkar Biography in Bengali

আরও দেখুন, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের জীবনী – Sourav Ganguly Biography in Bengali]

জরথুশস্ত্র এর জীবনী – Zoroaster Biography in Bengali

   অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই ” জরথুশস্ত্র এর জীবনী – Zoroaster Biography in Bengali  ” পােস্টটি পড়ার জন্য। জরথুশস্ত্র এর জীবনী – Zoroaster Biography in Bengali পড়ে কেমন লাগলো কমেন্টে জানাও। আশা করি এই জরথুশস্ত্র এর জীবনী – Zoroaster Biography in Bengali পোস্টটি থেকে উপকৃত হবে। এই ভাবেই BhugolShiksha.com ওয়েবসাইটের পাশে থাকো যেকোনো প্ৰশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলাে করো এবং নিজেকে  তথ্য সমৃদ্ধ করে তোলো , ধন্যবাদ।